শনিবার, অক্টোবর ১২, ২০১৩

নিঃশব্দের গল্প...

- এই ছেলে এখানে কিভাবে আসলে? কাকে চাও?
কোন উত্তর নেই। একটু তাকিয়ে আবার তার দৃষ্টি মাটিতে নিয়ে গেল।

- এই ছেলে! আমি তোমাকে কি জিজ্ঞাস করলাম??
এইবার ছেলেটা ভাল করে তাকাল আর একটু হাসি দিল; যেন এটাই তার উত্তর।

- এখানে দাড়িয়ে আছো কেন?? কাকে চাই?? সমস্যা কি তোমার, কথার জবাব দিচ্ছ না কেন??

ছেলেটা কিছু না বলে পকেট থেকে ছোট্ট এতটা নোটবই আর একটা পেন্সিল বের করলো। তারপর নোটবই টা খুলে তাতে কিছু একটা লিখে বাড়িয়ে দিল। তাতে লিখা "দুঃখিত, আমি কথা বলতে পারি না। তবে শুনতে আর লিখতে পারি।"

এটা দেখে রাকিব সাহেবের হঠাৎ মনটা খারাপ হয়ে গেল। রাজপুত্রের মত একটা ছেলে, কিন্তু কত বড় অন্যায় করেছে বিধাতা তার সাথে। মনের কথা গুলি মুখে নিয়ে আসতে পারে না বেচারা। এটা ভাবতে ভাবতেই অন্য একটা ছেলের কথাও মনে পরে গেল। তার নিজের ছেলে, আবির। আবিরও কথা বলতে পারতো না এই ছেলেটির মত। ঠিক এই ছেলেটির মতই কথা শুনতে আর বুঝতে পারতো। হাসির শব্দ করতে পারতো না। তবুও মুখে সবসময় একটা মায়া-মাখানো হাসি ঝুলিয়ে রাখতো।

আবিরের কথা মনে পরেনা সেই কবে থেকে। হঠাৎ করেই খুব জ্বর হল। ঐ সময় ছেলেকে ডাক্তার পর্যন্ত দেখানোর সামর্থ্য ছিল না তার। দুইদিন ভোগার পর হঠাৎ করেই জ্বর ভাল হয়ে গেল। খুব দুষ্টামি করলো সারাদিন। সন্ধ্যায় ক্লান্ত হয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়েও পড়লো। কিন্তু রাতে ঘুমিয়ে ছেলেটা আর সকালে উঠলো না, ঘুমিয়েই থাকলো। কত ডাকাডাকি করলো কিন্তু ছেলেটা তার ডাক যেন গা'ই করলো না। ঘুমিয়েই থাকলো নিজের মত করে।

ঐদিন থেকে বিধাতার উপর একটা আক্রোশ জন্মে গেছে মনে। আক্রোশ জন্মেছে দারিদ্রতার প্রতি। তার আক্রোশ তাকে এখন পাজেরো গাড়িতে চলার মত অবস্থা করে দিয়েছে। বিরাট এসি রুমে বসে বসে সময় কাটানোর সুযোগ করে দিয়েছে। এখন ইচ্ছে করলেই দেশের বাইরে চেকআপের জন্যে যেতে পারে সে।

ভুল করেও এত বছর সে আবিরের কথা মনে করে নি। কিন্তু আজ মনে হয়েই গেল। সাথে মেজাজটাও খারাপ হয়ে গেল তার। একটু রুক্ষ স্বরেই জিজ্ঞাস করলো ছেলেটিকে,
- তা এখানে দাড়িয়ে আছো কেন? কাকে চাই??
ছেলেটি আবারও একটা হাসি দিয়ে নোটবইটাতে লিখে তাকে দেখালো। সেখানে লেখা আছে, "আপনার সাথে"

রাকিব সাহেব এইবার আরো একটু বিরক্তি নিয়ে বললেন
- আমার সাথে মানে কি? তুমি কি জানতে আমি এই সময়ে এখানে আসবো? আর এখানে কেন আমার জন্যে অপেক্ষা করতে হবে?
ছেলেটা আবারও নোটবইতে লিখে দেখালো "আমি এখানে প্রতিদিন অপেক্ষা করছি, গত ২মাস ধরে আপনার জন্যে"

এইবার রাকিব সাহেব একটু অবাক হয়ে বললেন
- টানা দুইমাস ধরে অপেক্ষা করছো আমার জন্যে? তাও আমার গ্যারেজের আড়ালে? ঠিক কি কারণে জানতে পারি?

ছেলেটা আবারও লিখলো, আর আস্তে করে তার চোখের সামনে ধরলো নোটবইটা। সেখানে স্পষ্ট করে লিখা
"বাবা আমি আবির"

রাকিব সাহেব এতটুকু পড়েই জ্ঞান হারালেন।

পরের দিন পেপারে একটা শোকবার্তা ছাপা হলো। সেটা স্বনামধন্য শিল্পপতি রাকিব সাহেবের মৃত্যু সংবাদ। সন্ধ্যায় তার ড্রাইভার তাকে গ্যারেজের পাশে মাটিতে পড়ে থাকা অবস্থায় আবিস্কার করে। সাথে সাথে হাসপাতালেও নেয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। সবাই ধারনা করলো হঠাৎ করেই হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন তিনি। কিন্তু কেউ জানতে পারলো নিঃশব্দ ঐ ছেলেটির কথা।







বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ১০, ২০১৩

আমার আব্বার রসিকতা...

আব্বা প্রায় রাত্রেই দেরি করে আসে। আসেতে আসতে প্রায়ই রাত ১২টা বেজে যায়। আর দিনে আর যাই হোক রাতের খাবারটা আব্বার সাথে একসাথে না খেলে কেমন জানি অপূর্ণতা থেকে যায় ঐদিন। তাই প্রতিদিনই আব্বা আসলে তার সাথেই একত্রে খেতে বসি। আমার দাদী এখনো জীবিত আছে। আমাদের সাথেই ভাল-খারাপ সময়ের সাথী হয়েই আছেন। শারীরিক এবং মানুষিক ভাবে বলতে গেলে আমার দাদী এখনো অনেক ফিট রয়েছে। দাদী এত দেরী করে খেতে পারে না। রাত্র ৯টা নাগাদ খেয়ে নেয়। আর বলতে গেলে নিয়ম করেই রাত ১১টার মধ্যে ঘুমাতে চেষ্টা করেন। ছোট্ট পরিবারে সবাই নিজেদের খোঁজখবর রাখতে পারে। আব্বা প্রায়ই খেতে বসে আম্মাকে জিজ্ঞাস করে দাদী খেয়েছে কিনা। যদিও সে জানে দাদী ঠিকই সময় মত খেয়ে নিয়েছে।

ঐদিনও আব্বার আসতে ১২টা বেজে গেল। তবে দাদী ঐদিন কোন কারণে সময় মত ঘুমাতে যায়নি। আব্বা এসে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং এ খেতে বসেছে। আর তখন দাদী ঘুমানোর জন্যে রুমে যাচ্ছিল। আব্বাকে দেখতে গম্ভীর মনে হলেও আব্বা মাঝে মাঝে ছোটখাটো দুষ্টামি করে আমাদের নিয়ে। ঐদিন সেরকমই একটা করলো। দাদী শুতে যাবার সময় তাকে ডেকে জিজ্ঞাস করলো- "আম্মা খেয়েছেন?" দাদী উত্তরে বললো "হ্যাঁ, খেয়েছি" এইবার আব্বা আবার জিজ্ঞাস করলো "কি খেয়েছেন?" আব্বা কিন্তু ততক্ষণে ঐদিনের খাবার মেন্যু সব জেনে গেছে। তবুও দুষ্টামিটা করার জন্যেই জিজ্ঞাস করলো। দাদী জানালো আজ কি খেয়েছে।

এইবার আব্বা আসল দুষ্টামি শুরু করলো। বললো-
"হয়নি আম্মা। জিদ করে বলতে হবে"

আমার দাদী তো পুরো অবাক আব্বার ঐ কথা শুনে। জিদ করে কিভাবে আবার বলে এই কথা? সে বললো-
"কি বলবো কি করে??"

আব্বা বললো-
"এইভাবে বলেন।
হুহ! কি দিয়ে আর খাবো? ডাল আর ভর্তা ছাড়া আর কি রান্না হয়েছে আজ ??"

দাদী আব্বার এই কথা শুনে কিছু না বলেই হাসতে হাসতে তার রুমে চলে গেল। আম্মা আর আমি ছিলাম খাবার টেবিলে। জোরে শব্দ করে না হাসতে পারলেও আমরা দুইজনই মনে মনে হাসছিলাম ঐ মুহূর্তে...






বুধবার, অক্টোবর ০৯, ২০১৩

সময়ের স্মৃতি...

মাঝে মাঝে ছোটখাটো ঝড় এসে জীবনের অনেক কিছুই পরিবর্তন করে দিয়ে যায়। পরিবর্তন করে দেয় মানুষের মানুষিকতা, সম্পর্ক আর বিশ্বাস...

আরো পরিবর্তন করে দেয় জীবনের গতিপথ। তৈরি করে দেয় কাছের মানুষের সাথে বিশাল দূরত্ব...

তবে, যা কখনোই পরিবর্তন করতে পারে না তা হল স্মৃতি। জীবনের চলার পথ যতই পরিবর্তন হোক না কেন; দূরত্ব যতই থাকুক না কেন; বিশ্বাস যতই ভাঙ্গুক না কেন। পাশাপাশি থেকে কাটানো ভাল সময়ের স্মৃতিগুলোকে কখনোই পরিবর্তন করতে পারে না এই ঝড়গুলো...







শনিবার, অক্টোবর ০৫, ২০১৩

নিজেকে বুঝতে না পারা সময়ের কথা...

মাঝে মাঝে কিছু সময় আসে যখন কোন আবেগ থাকে না, থাকে না নিজের কিছু বলার। আর মনটা থাকে তখন একেবারেই ফাঁকা। সময়টা আনন্দের নাকি বিষাদের সেটাও বুঝে উঠা যায় না। বোঝা যায় না কি করতে হবে কিংবা কি করা উচিৎ।

নিজেকে অনেক অচেনা লাগে সেই সময়টাতে। অবাক হয়ে ভাবতে হয়- "এমন কেন আমি?"

দুরন্তপনা গুলি মন থেকে গায়েব হয়ে যায়। ঠাট্টা গুলি তখন আর মনকে আনন্দ দেয় না। কষ্টগুলি দিতে পারে না মানুষিক যন্ত্রণা। জড় বস্তুতে পরিণত হয়ে যায় মানুষ সেই সময়টাতে।


আমি এখন একটা জড় বস্তু। নিজের আবেগ গুলিকে বুঝতে পারছি না। তারা নিজেদের মত হাত পা গুটিয়ে বসে আছে। আর আমি তাদের পুনরায় জেগে উঠার অপেক্ষায় আছি...





বুধবার, সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৩

অচেনা সেই মেয়েটি...

বাস স্টপেজে বসে ছিলাম। আসলে জ্যামের কারণে এখন প্রায় ঘণ্টা খানেক হতে চলল বাসের দেখা নেই। রাস্তায় নাকি পানি উঠে কোথায় ভেঙ্গে গেছে তাই বিশাল জ্যাম লেগেছে। আর এমন জায়গায় এসেছি যে রিক্সা বা টেম্পো যোগে একটু এগিয়ে গিয়ে বাসে উঠবো তা ও না। যেখানেই যাই না কেন আমাকে অপেক্ষা করতে হবে এই স্টপেজ থেকে ছাড়ে যাওয়া বাসের জন্যে। তাই বসে আছি, পাশে আরো প্রায় ১২জন আছে বসে। আর সামনে আছে আরো ২০-২৫জনের মত দাড়িয়ে। আর সবাই অপেক্ষা করছি একটা নির্দিষ্ট বাসের জন্যে।

অপেক্ষা করছি আর নিজের উপর বিরক্ত হচ্ছি। কি দরকার ছিল আজ বেরুনোর! খালামনি তো বার বার করে বলল আরো একটা দিন থেকে যা। থেকে গেলেই পারতাম। কিন্তু তখন শুধু বাড়ির কথা আর আসাদ, সুমনের সাথে আড্ডা দেবার চিন্তাই বার বার মাথায় আসছিলো। তাই খালামনির অমতেই বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। আর এখন এতদূর এসে বাসের জন্যে বসে থাকতে হচ্ছে। কোন মানে হয়?

সময় কাটাতে না পেরে শেষে একটা পত্রিকা নিলাম হকারের কাছ থেকে। আমাদের মত এই হকারও আজ অপেক্ষা করছে বাসটির। চুপ করে বসে আছে হাতে পেপারের বোঝা নিয়ে। আমি তার কাছ থেকে পেপার চাইলাম, তাতে তার একটু আনন্দিত হবার কথা, বসে থেকেও সে পেপারটা বিক্রি করতে পারছে বলে। কিন্তু সে পেপার চাওয়ায় কিছুটা বিরক্তই হল মনে হয়। তবুও বের করে দিল একটা পেপার তার হাতে রাখা পেপারের বোঝা থেকে। আমি দাম মিটিয়ে দিয়ে পেপার পড়তে মনোনিবেশ করলাম।

প্রথমে পেইজের রাজনীতির আলাপ আলোচনা দেখতে ইচ্ছে করলো না, তাই চলে গেলাম খেলার খবরের অংশে। সেখান থেকে একটু দেখে আবার গেলাম বিনোদন পেইজে। সেখানেই ছিলাম, হঠাৎ একটা কণ্ঠ শুনে পেপার থেকে বাইরে নজর দিতে হল। একটা মেয়ে, রিকসাওয়ালার সাথে কথা কাটাকাটি করছে। পরনে স্কুল ড্রেস আর হাতে ব্যাগ। রিকশাওয়ালার সাথে ভাড়া বেশি চাওয়ার জন্যে কথা কাটাকাটি করছে সে। সবাই দেখছে, তবে কেউ কিছু বলছে না। আর আমিও এখানকার ভাড়া নিয়ে এত জানি না তাই আবার পেপার পড়ার চেষ্টা করলাম।

কিন্তু কোথায় যেন আটকে গেছি। পেপারের দিকেই চেয়ে আছি তবুও কি পড়ছি তা বুঝতে পারছি না। আবার প্রথম থেকে নিউজটা পড়তে চেষ্টা করলাম। নাহ, হচ্ছে না। একটা কথাও মাথায় ঢুকছে না। মন অন্যকোথাও আটকে গেছে। আর কোথায় আটকে গেছে তা বুঝতে পেরে একটু নিজের ভেতরেই লজ্জা হল। একটা মেয়েকে একবার দেখাতেই মাথায় ঢুকে গেল এই ভেবেই লজ্জাটা পাচ্ছি। একটু রাগও লাগছে নিজের উপর। তবে মেয়েটার চেহারায় একটা কিছু আছে। যা আমাকে আবার মেয়েটার দিকে তাকাতে বাধ্য করলো।

তবে এইবার কেন জানি সরাসরি তাকাতে সাহস পেলাম না। পেপারটাকে সামনে ধরেই একটু নিচু করলাম, আর আড়চোখে দেখলাম তাকে। সাদা স্কুল-ড্রেসে তাকে অন্যরকম সুন্দর লাগছে। তবে বেশিক্ষণ তাকাতে পারলাম না চোখাচোখি হয়ে যাবার ভয়ে। পেপারটা আবার চোখের সামনে ধরে নিলাম। কিন্তু আর পড়া হল না।

মেয়েটা এবার আমার দিকে পেছন ফিরে রাস্তার দিকে মুখ করে দাড়িয়ে আছে। তাই তার চেহারা আর আড়চোখেও দেখতে পরছি না। একটা লোভ লেগে গেছে মনে তার চেহারাটা আরেকবার দেখার জন্যে। তাই পেপারটাকে ভাজ করে ঘড়ি দেখলাম আর মাথা নাড়লাম। একটু অভিনয় করলাম অনেক সময় বসে থেকে বোর হয়ে গেছি কিন্তু বাস আসছে না, তাই দেখিয়ে। দাড়িয়ে আমার পায়ের কাছে রাখা ব্যাগটা কাঁধে ঝোলালাম। তারপর গিয়ে মেয়েটার থেকে একটু দূরত্ব রেখে দাড়িয়ে রাস্তার এদিক ওদিক দেখলাম যেন বাসটার দেখা পাওয়া যায় কিনা তাই দেখছি। আসলে তো মেয়েটার ঐ মায়া ভর্তি চেহারাটাই দেখতে এসেছি। আড়চোখে তাই দেখে নিলাম আরো একবার। তবে সুবিধা হল, মেয়েটা আমার বামে দাঁড়িয়ে আছে। আর সেদিক থেকেই বাসটা আসবে। আর আমি রাস্তার দিকে তাকালে তাকে দেখতে পারি অনায়াসেই।

একবার দুইবার দেখলাম ঠিকই। কিন্তু শেষে তার চোখে ধরাই পড়ে গেলাম। স্পষ্টই বুঝতে পারলো আমি তার দিকেই তাকিয়ে আছি। তবে সাথে সাথে দৃষ্টি অন্যদিকে নিয়ে গেলাম। কিন্তু ততক্ষণে মেয়েটা যা বোঝার বুঝে গেছে। আমি আর লজ্জায় ঐদিকে তাকাতে পারছি না। তাই অপরদিকে তাকিয়ে আছি। খুব ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তার দিকে বা রাস্তার দিকে তাকাতে পারছি না। এরই মধ্যে হুট করে বাসটা চলে আসলো।

সবাই গাড়িতে উঠার জন্যে হুড়মুড় করে বাসের গেইটে ভিড় জমালো। ছোট্ট একটা জটলা পাকিয়ে গেছে সেখানে। আমি এখনো দাড়িয়ে আছি, দাড়িয়ে আছে মেয়েটাও। বুঝতে পারছি না সে আসলে এতক্ষন এই বাসটার জন্যেই অপেক্ষা করছিলো কি না। যখন ভিড় প্রায় কমে এসেছে বাসের দরজার সামনে তখন ব্যাগ কাঁধে ঐদিকে এগুলাম।

নাহ মেয়েটা এগুচ্ছে না। তারমানে সে এই বাসটার জন্যে অপেক্ষা করছে না, সেটা নিশ্চিত। আমার আরো কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু সেটা সম্ভব না। বেহায়াপনারও একটা সীমা আছে, আর দাঁড়ালে সেটা অতিক্রম হয়ে যাবে। তাই বাসে চড়ে উঠলাম। মন চাইছিল মেয়েটার নাম-ঠিকানা জেনে আসতে। কিন্তু সেটা কি আদৌ সম্ভব? আর কেনই বা বলবে সে, আমার মত অপরিচিত একটা ছেলেকে তার নাম-ঠিকানা?





রবিবার, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৩

আপন পথে চলা...

যখন দৃষ্টি সীমানার সামনে কোন পথ থাকে না। আর পেছনে সব পথ হয় অবরুদ্ধ, তখন দুইটা কাজ করা যায়-

প্রথমটা হল, সেই স্থানেই আজীবন পথের জন্যে অপেক্ষা করা। ততক্ষণ, যতক্ষণ না পর্যন্ত নতুন পথের সন্ধান পাওয়া যায়।

আর দ্বিতীয়টা হল, নিজেই নিজের পথ তৈরি করে নেয়া। হ্যাঁ, এই তৈরি করাটা কঠিন, তবে অসম্ভব নয়। এতটুকু বিশ্বাস মনে রাখতে হবে যে- আপনি যেটা করছেন সেটা ভুল নয়, সেটা থামানোর নয়। আর আপনি থেমে গেলে আপনার পথ অনুসরণ করে যারা এসেছে বা আসবে বলে চিন্তা করছে তারা আশাহত ও দিক ভ্রষ্ট হয়ে পড়বে। আর আপনার এতদিনের শ্রম পণ্ডশ্রমে পরিণত হবে।

চলার পথে হয়তো অনেকেই কটূক্তি করবে, প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে। আপনাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে। আর এগুলো না পেরে আপনার নামে বদনাম ছড়াবে। আপনার পথের খারাপ দিক গুলো সবাইকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিবে।

এতকিছুর পরেও কিন্তু আপনার পথের পথিক থেমে থাকবেনা। তারা আপনাকে অনুসরণ করে চলবেই। তারাও তাদের ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন আনবে। তবে আপনার ধারা ভুলে যেয়ে নয়। বরং সেটিকে আদর্শ মেনেই নতুন পথ তৈরি করবে।

তাই বলছি, থেমে যাবেন না। এগুতে থাকুন। এক সময় নিজের পথের স্বীকৃতি আপনি অবশ্যই পাবেন...








মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৩

তোমাকে বলার কথা গুলো..... (২)

সেদিন অনেকক্ষণ তোমাদের বাড়ির সামনের রাস্তাটায় বসে ছিলাম বিকেলে। আমি জানি তুমি এই সময়টাতে তোমার ভার্সিটি থেকে বাড়িতে ফের। পাশেই বন্ধুরা বসে আড্ডা দিচ্ছিল। কিন্তু আড্ডাতে আমার মনটা ঢুকছিল না।

আমার মন তো পড়ে ছিল তোমারই পথের পানে। দেখছিলাম, এইতো ৪টা বেজে গেছে। এখনই যেকোনো মুহূর্তে এই পথ দিয়েই হেঁটে যাবে তুমি। আর আমি শুধু তোমাকে এক নজর দেখবো। এই একনজরেই বুঝে নিবো তোমার দিনটা কেমন কাটল। আমার বিশ্বাস এই একটু নজর দেয়া সময়টাই অনেক তোমার মনটা বুঝতে পারার জন্যে।

তবে আজ কেন দেরি হচ্ছে তোমার বুঝতে পারছিনা। তবে কি রাস্তায় অনেক জ্যাম? না কোন সমস্যা হল কোথায়ও! বারবার ঘড়িটার দিকে তাকাচ্ছি। আমার মনে হচ্ছে ঘড়িটাতেই কোন সমস্যা আছে। তাই আনোয়ারকে ৩ বার জিজ্ঞাসও করে ফেলেছি এই পর্যন্ত। আর তাতে কিছু টিটকারিও শুনতে হল আমায়।

পুরো ১০টা মিনিট পার হয়ে গেছে। তবুও তোমার দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। আমি খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছি। আর বসে থাকতে পারলাম না ওদের সাথে। একটু এগিয়ে গেলাম তোমার ফিরে আসার ঐ রাস্তাটা ধরে। মোড়টা পেরুলেই হয়তো দেখব তুমি আসছ এই আসায়। পেছন থেকে সানোয়ার আর আরিফ টিটকারি দিয়ে যাচ্ছে তখনো।

কিছুই বলার নেই তাদের। কি বলবো বল? যা বলছে তা তো তোমাকে নিয়েই বলছে। আমি তো তোমাকে নিয়ে যে কোন কথারই পাগল হয়ে আছি সেই কবে থেকে। শুধু তোমার মুখ থেকেই কখনো কোন কথা ওভাবে শোনা হয় নি আমার....

হাটতে হাটতে মোড়টাও পেরুলাম। কিন্তু কোথায়? তোমার দেখা তো পাচ্ছি না! নাহ, আর ভাল লাগছে না। এমন কি হল, যে আসতে আজ পুরো ৩০ মিনিট দেরি হয়ে যাচ্ছে, তবুও আসছো না তুমি। আরও একটু এগুতে থাকলাম। মনে মনে ভাবছিলাম, হয়তো কোথাও তোমার বাস নষ্ট হয়ে গেছে, তাই পরের বাসটা ধরে আসতে দেরি হয়ে যাচ্ছে তোমার। এখুনি দেখা যাবে তোমকে এই পথ ধরে। দেখবো তুমি ক্লান্ত মুখে রিক্সার হুড উঠিয়ে চলে যাচ্ছো আমার পাশ দিয়ে।

আমাকে হয়তো তুমি খেয়ালই করবে না। কিন্তু ঐ অতটুকু দেখাই যে আমায় দিনের পরিপূর্ণতা এনে দিবে। সে কি তোমায় কখনো বলতে পারবো আমি...








(সংশোধন সহযোগীতায়: বর্ষা আপা )

সোমবার, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৩

তোমাকে বলার কথা গুলো.....

তোমাকে কিছু কথা প্রতিদিনই বলবো বলবো করে বলা হয় না। প্রতিদিনই কথা গুলো গোছাতে থাকি। কখনো এইভাবে তো কখনো ঐভাবে।

কখনো ভাবি আমার অসহায়ত্ব গুলো তোমাকে আগেভাগে বলে দিবো। বলে দিবো আমার দুর্বলতা গুলো তোমাকে নিয়ে। আর তারপর বলবো তোমাকে নিয়ে পথ চলার ইচ্ছের কথাটা।

আবার ভাবি, নাহ! এটা বললে হয়তো তুমি আমাকে পাত্তাই দিবে না। তাই তোমার সামনে নিজেকে তোমার মত করে নিজেকে উপস্থাপন করবো। হয়তো তাতে কিছুটা হলেও তোমার নজরে আসবো আমি।

কিন্তু কি করবো বল। তোমাকে দেখার পর পরই যে সব গুলিয়ে ফেলি।

প্রতিদিনই তোমাকে একনজর দেখার জন্যে রাস্তার মোড়ের চায়ের দোকানে বসে থাকতাম কাক ডাকা ভোর হতে। আমি জানি তুমি কখনোই এত সকালে বের হও না। এও জানি ঠিক ঘড়ি ধরে সাড়ে সাতটায় বাসা থেকে বের হও তুমি। তবুও আমি সেই ভোর বেলা থেকেই তোমার জন্যে অপেক্ষার করতাম। বসে বসে রিক্সার গ্যারেজের রিক্সা গুলোর মেরামত দেখতাম। আর চায়ের দোকানের বাসি পত্রিকাটায় চোখ বোলাতাম তোমার অপেক্ষায়। কিন্তু যখনই তুমি রাস্তা ধরে হেটে আসতে তখন আর তোমার ঐ রাস্তার পানে চোখ উঠিয়ে তাকাতে সাহস পেতাম না। কে জানে? বুঝতে পারলে হয়তো তুমি তোমার যাওয়ার পথটাই পাল্টে নিবে। আর তখন হয়তো তোমার জন্যে এই অপেক্ষা টুকুও করতে পারবো না....