এলোমেলো লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
এলোমেলো লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২২

প্রণয়িনী, তোমায় ঘিরে আমার ভাবনা...

প্রণয়িনী,

এই যে এত বিশাল মহাবিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড, এর মাঝ থেকে যদি কোন কেন্দ্র তৈরী হয় কেবলই আমার জন্যে; তবে সেই কেন্দ্র হচ্ছ তুমি। এই মহাবিশ্বের যে কোণেই আমাকে ছেড়ে দেয়া হোক না কেন, ফের তোমার পানে ফিরে আসবার তাগিদে ছুটে চলবো গ্রহ থেকে গ্রহান্তর। আর সেই যাত্রার বিরতি হবে শুধুমাত্র তোমার মনের আঙ্গিনায়। 

আমি জানি, এই সবই অতিরঞ্জন মনের কল্পনা। বাস্তবতার চাকা যখন তপ্ত মরুর পথ ধরে চলতে শুরু করে, তখন এই আবেগ অনেকটাই উবে যায় স্বেদ-বাষ্পে। কিন্তু তবুও যখন কোন মরুদ্যানের ছায়াতলে শীতল হয় মন, তখন সে শুধু তোমাকেই কল্পনা করে; তোমার কথাই ভাবে। রোদের তাপে তপ্ত এ শরীর যেমনি শীতল পানি পানের সময় তার বয়ে চলা অনুভব করতে পারে; একই ভাবে এই অতৃপ্ত লোভী হৃদয় তোমার কিছুমাত্র স্পর্শ পেলে পুরো অনুভূতি জুড়ে তোমার আনাগোনা অনুভব করে।

ভালোবাসা নামের অনুভূতিটা যবে থেকে বুঝতে শিখেছি, সেই তখন থেকেই আমি বুঝি, 'ভালোবাসা'র মানে হচ্ছো 'তুমি'। বিশাল এক সময় সমুদ্র পার করে যখন তোমার হাতটি ধরেছিলাম, তখনই বুঝেছিলাম 'ভালোবাসা'র বীজটির অঙ্কুরোদগম শুরু হয়ে গেছে। তারপর ঠিক বুঝে উঠবার আগেই সেটি বীজ থেকে চারা, আর চারা থেকে মহীরুহে রূপ নিয়েছে। তবুও নিজেকে ঢাল বানিয়ে আমি কিছু কাল সেই মহীরুহ ঢেকে রাখবার চেষ্টা করে গিয়েছিলাম। কিন্তু হৃদয় আঙ্গিনায় তোমার আনাগোনায় যে হিম বাতাস বয়ে চলতো, তাতেই ভেঙ্গে গুড়িয়ে পড়েছিল আমার ঢাল। ভাঙ্গা ঢাল পেরিয়ে সেই মহীরুহ ধীরে ধীরে আমাকেই ঢেকে দিয়েছে তার মায়া মেশানো ভালোবাসার ছায়ায়। আমি দেখেছি, মহীরুহের প্রতিটি পাতায় তোমার নাম, তোমার স্পর্শ, তোমার উপস্থিতি। এরপর আমি আর কোনদিন সেই মহীরুহের ছায়াতল থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করি নি। হয়তো ক্ষনিকের জন্যে অভিমানে মহীরুহ পেরিয়ে সামনে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রেখেছিলাম। কিন্তু তোমাকে ঘীরে ছায়ার মায়া আবারও আমাকে সেই মহীরুহের দিকেই ফিরিয়ে নিয়েছে। 

কেউ একজন বলেছিল, ভালোবাসা দিনে দিনে ভাগ হয়। আজ যাকে ভালোবাসো, যাকে ছাড়া ভালোবাসা শব্দটাই অচল মনে হয়, চিন্তায় চেতনায় শুধুমাত্র যার অনুভূতিই আজ তুমি অনুভব কর; কাল সেখানে অন্য কেউ আসবে, তোমার সমস্ত অনুভূতি সে চুরি করে মনোযোগ আকর্ষনী মুকুটটা মাথায় দিয়ে তোমার হৃদয় সিংহাসনটা দখল করে নিবে। সে মুহুর্তে কথাটির সত্যতা নিয়ে সন্দেহ করলেও, আজ আমি জানি; কথাটা মোটেই মিথ্যে নয়। শূন্য থেকে তিলে তিলে নিজের মধ্যে ধারণ করে, সুদীর্ঘ ক্লিষ্ট পথটি পাড়ি দিয়ে যে উপহারটি তুমি আমার জন্যে নিয়ে এসেছ; সেটি এসেই আমার হৃদয় সিংহাসনটি দখল করেছে, কেড়ে নিয়ে মাথায় দিয়েছে হৃদয় আকর্ষনী মুকুটখানি। হ্যাঁ, আমি সেই উপহারটিও ভালোবাসি। নিজের চেয়ে অধিক নয়, বরং নিজের সমান ভালোবাসি। কিন্তু যার নামে পুরো রাজ্য গড়ে উঠেছে। যে রাজ্যের প্রতিটি নিশানায়, প্রতিটি পতাকায় কেবল তোমার নাম লেখা। সেখানে কেউ মুকুট মাথায় দিলেই ভালোবাসার পূর্ণ দাবিদার হয়ে উঠে না। বরং তার জন্যে ভালোবাসার নতুন হালখাতা তৈরি হয়, তৈরি হয় উপরাজ্য। তোমার জন্যে যে হৃদয় ব্যাকুল করা ভালোবাসা, সেটি ঠিক আগের মতই আছে। অধিকন্তু দিনকে দিন তা ফুলে ফেপে হৃদয় আঙ্গিনা ভরিয়ে তুলছে।

দিনকে দিন কত শত রূপে যে আমি তোমাকে আবিস্কার করেছি, তা কেবল আমিই জানি। আলসে তোমাকে আবিস্কার করেছি,  যে সারাটি দিন বিছানায় নিজেকে বন্দী করে নেয়। আবার কর্মঠ কর্মী রূপেও তোমাকে দেখেছি, যে ভোর হতে গভীর রাত পর্যন্ত নিজেকে বিলিয়ে দেয়। বিরক্ত তোমাকে দেখেছি, যে সবকিছু ছুড়ে ফেলে ভেঙ্গে ফেলতে চায়। আবার মায়াময় তোমাকেই আবিস্কার করেছি, যে সবকিছু আগলে নিয়ে মুঠিতে জমায়। দেখেছি মায়াময় জননী রূপে, দেখেছি সেবিকায়, দেখেছি সুনাম প্রতিষ্ঠায়। দেখেছি অন্যায়ের বিরুদ্ধে তেজস্বী তোমার প্রতিবাদী রূপ, আবার তার বিপরীতে দেখেছি কারো কোন ছোট অন্যায় নিজের ভালোবাসার চাদর দিয়ে ঢেকে দিতে। বিশ্বাস কর, তোমার তোমার এই প্রতিটি রূপকেই আমি আমার মত করে ভালোবেসেছি।

তোমাকে হারাবার যে ভয় শুরু থেকে ছিলো; জানো কি, আমি আজও সেই ভয় কাটিয়ে উঠতে পারি নি। আজও মনে হয় কোন এক দমকা হাওয়াতে আমি তোমায় হারিয়ে ফেলব। প্রায়ই মনে হয়, নিঝুম রাতটি শেষ করে যে ভোরটি নতুন দিন নিয়ে আসবে; সেই দিনটিতে তুমি হারিয়ে যাবে। যে বাগান ভর ফুলেল ঘ্রাণে আমি বিমোহিত হয়ে থাকি, সেই বাগান শুদ্ধ তুমি হারিয়ে যাবে। পড়ে থাকবে কেবল উদ্যান, আর পড়ে থাকব কেবল এই একলা আমি। আমি এই ভয়টা কোন ভাবেই কাটিয়ে উঠতে পারি না। তবুও ভোর হলে যখন তোমাকে দেখতে পাই, তবুও দমকা হাওয়ার তোড় কমলে যখন শক্ত মুঠিতে তোমাকে পাই, তবুও চোখ বুজে ফুলেল ঘ্রানে ফুসফুস পূর্ণ করে যখন চোখ মেলে দেখি তুমি এখনো রয়েছ দৃষ্টির সীমানায়। কেবল তখনই মনকে সান্তনা দেই এই বলে, "আজ নয়, আজ আর হারাবে না তুমি"।

আমার এই অর্থহীন আবেগী শব্দের স্রোত তোমাকে কতটুকু স্পর্শ করবে, তা আমি জানি না। জানি না বাক্যের এই মালা আদৌ তোমার মনকে গলাতে পারবে কি না। তবে আমি জানি, এইসব বর্ণের বাইরেও যে ভালোবাসা আছে তা আমার হৃদয়ে অনন্তকাল ধরেই থাকবে। সময়ের গর্ভে আমি বিলিন হবার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত তোমাকে নিয়ে এইসব অনুভূতি আমি ধারন করে যাবো। আর আমি বিশ্বাস রাখি, এই নশ্বর জগত পার করে যে অনন্ত জগতে গিয়ে পৌছবো, সেখানেও আমি তোমারই অপেক্ষা করবো, তোমাকেই চাইবো। প্রার্থনা থাকবে সমস্ত ইচ্ছে পূরণকারী সেই মহান স্বত্তা যেন আমার এই চাওয়াকে পূর্ণতা দেন। এই জগতের সকল ভালোবাসার অপূর্ণতা তিনি যেন ঐ জগতে পরিপূর্ণরূপে পূরন করে দেন। 



ইতি
তুমিহীন অপূর্ণ যুবক

ছবিঃ kellerdoll ( মূল ), ractapopulous ( মূল ), ঘষামাজা ( !?! )

বুধবার, জুলাই ১৫, ২০২০

ফিরে যায় আলোর মশাল



শয়তানের দোসর হয়ে ওরা এসেছিলো সর্স্তপণে
মুঠি মুঠি শাপ-সন্দেশ বিলিয়েছিলো সমাগমে
কেউ হাত বাড়িয়ে নিয়েছিলো, তো কেউ লুকিয়ে
আর বাকিরা নিয়েছিলো অজান্তে, অনিচ্ছায় আর অসতর্কে

অতঃপর সবাই মিলে সন্দেশের মিঠাই চেটেপুটে খেয়েছিলো।

যতক্ষণে ঐ সন্দেশ তাদের পেটে পাক ধরিয়েছিলো
ততক্ষণে ওরা বিনিময়ের বিপণি খুলে বসেছিলো
হাজার হাজার বিনিময় ছিলো সেখানে,
রূপ, যৌবন, বিত্ত কিংবা বৈভব --কোনটারই কমতি ছিলো না

ওরা জনে জনে, আর গুনে গুণে এইসবই বিনিময় করে যাচ্ছিলো।

এরমাঝেই এক সাধু ধ্যান ভেঙ্গে ফিরেছিলো
উচ্ছাসে, উশৃঙ্খলে, আর অহংকারে অন্ধ অমানুষ সে দেখেছিলো
পড়ে থেকে গলে যাওয়া ভাববাদীর লাশ সে পেয়েছিলো
মোড়ে মোড়ে ডেকে যাওয়া খাদিমের আহ্বান সে শুনেছিলো

সাবধানে, নিঃশব্দে আর নিস্তব্দে সাধু ঐ লোকালয় ছেড়েছিলো।

এরা সব অন্তর পচে যাওয়া অর্ধমৃত নরকের পোকা
এরা সব ধর্ম-পিতার অন্তর খুবলে খাওয়া লোভী কীড়া
এরা সব পয়গম্বরকে নিজ পায়ে পিষে মারা পাপী
এরা সব মুন্ড ছাড়া লাফিয়ে চলা বোকচন্দর জাতী

আর এদের কৃতকর্মে ত্যাক্ত হয়েই আলোর মশাল সেবারে আলো না ছড়িয়েই ফিরেছিলো।
 
  

শুক্রবার, জুন ২১, ২০১৯

চাঁদের পথে...



চাঁদের সাথে পথ ধরে হেটে যেতে নেই কোন বাধা। বরং যুগে যুগে বহু মানুষ এই চাঁদের মায়ায় ডুবে সংসার ছেড়ে পথ হেঁটেছে চাঁদের পেছনে পেছনে। কেউ হয়েছে বৈরাগি, কেউ সন্যাসী আবার কেউ গিয়ে ঠেকেছে নির্জনে-মৃত্যুতে। গল্পে, কবিতায়, ভালোবাসা কিংবা অক্ষমতার আক্ষেপের বিক্ষিপ্ত বহিঃপ্রকাশে চাঁদ বরাবরই মানুষকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করেছে। সেই অনাদিকাল থেকে এখন অব্দি মানুষ চাঁদকে দেখে নিজের ভেতরকার উদাসীনতা অনুভব করে। নিজের মনের কোমলতাকে চাঁদের কোমল আলোর সাথে তুলনায় মেপে দেখে। ২ লক্ষ ৩৮ হাজার ৮৫৫ মাইল দূরে থেকেও কি অদ্ভুত মায়াতেই না চাঁদ আমাদের বিমুগ্ধ করে রেখেছে।

সবার মত আমিও চাঁদের সাথে পথ হেটে হারাতে চেয়েছিলাম। চেয়েছিলাম চাঁদের মায়ায় ডুবে লোকান্তর ত্যাগ করে সন্যাসী হতে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, চাঁদ তার নেশা ধরিয়ে তার পিছু পিছু হাটিয়ে নিলেও কখনো হারিয়ে যাবার পথ বলে দেয় না। সে যেখানে নিয়ে যায় তারও একটা না একটা পরিচয় থাকে। সেখানেও কোন না কোন ভাবে অন্য কারও পৌছবার পথ জানা থাকে। ভিন পথে হাটিয়ে ভিন্ন করেও শেষ পর্যন্ত আবারও মিলের খাতায় ঠিকই জুড়ে দেয় সে। চাই তার ঠিকানা হোক মরু কিংবা মেরুতে। কেউ না কেউ ঠিকই সেখানে পৌছে যাবে। এই ভেবেই আর শেষ পর্যন্ত চাঁদের পেছনে আমার হারানো হয়নি।

তবে কি তাই ভেবে চাঁদের পিছু ছোটায় মানুষ খ্যান্ত দিবে? না, তা মোটেই হবার নয়। চাঁদে যে পথে হাটিয়ে নিয়ে যায় সে পথ সে প্রতিটা মানুষের জন্যেই আলাদা করে রাখে। দু'জন মানুষ একই পথে চাঁদের পিছু হেঁটেও কখনো এক পথের পথিক হয় না। তার প্রতিটি পথেই দেখা মেলে নতুন কোন নক্ষত্রের, যার প্রজ্বলনে মুসাফিরের অন্তর প্রজ্জলিত হয়। পথের প্রতিটা মোড়েই কোন না কোন কৃষ্ণগহবর তার গল্প নিয়ে দাড়িয়ে থাকে। যারা শোনার, তারা ঠিকই সেই গল্প শুনতে পায়। সেই গল্পের ভাব তাদের অন্তরকে আরও প্রসস্ত করে, করে তোলে আরও গভীরতর।  আর ঐ গল্প ঐ একটি মাত্র মানুষ ছাড়া দ্বিতীয় কেউ কোনদিন কোনকালে শুনতে পায় না।

এখানেই কি শেষ? না, এখানেও তাদের অন্তর তৃষ্ণা তৃপ্ত হয় না। তারা ছুটে যায় চাঁদের কাছে। খুব কাছ থেকে, একদম নিবিড় ভাবে তারা অনুভব করতে চায় চাঁদকে। কিন্তু সেখানেও নিয়েও চাঁদ মুচকি হাসে। তারা তো চাঁদে ছুয়ে দেখে ঠিকই, কিন্তু তার কোমলতার পেছনে যে রহস্য, তার আকর্ষণের পেছনে যে হাতছানি; তার হিসেব তারা কোন ক্যালকুলেশনেই মিলাতে পারে না। শেষ পর্যন্ত মনে আরও বেশি আক্ষেপ নিয়ে, অভিমানে মনকে পূর্ণ করে ফিরে আসে ধরণীর বুকে। অথচ নিজের বুকের মাঝে তখনও চাঁদের পিছুনে ছুটে যাবার ইচ্ছাকে দমন রাখতে পারে না।

তবুও আমি কিংবা আমরা বেহায়াপনার চুড়ান্ত করে বারংবার চাঁদের পিছনে হেঁটেছি। চাঁদের পূর্ণতায় নিজের পূর্ণতার রূপ খুঁজেছি, চাঁদের হারিয়ে যাওয়ায় নিজের মাঝে নিজেকে হারিয়ে দেখেছি। ফের যখন গোস্বা ছেড়ে চাঁদ আবারও আকাশের বুকে উঁকি দিয়েছে, আমরাও আমাদের মাঝে হারিয়ে ফেলা আসল আমিটাকে খুঁজে ধরে আবারও চাঁদের সাথে মিলিয়ে দেখেছি। আর বারংবারই নতুন চাঁদের মত নিজের মধ্যে নতুন কিছুই খুঁজে পেয়েছি। অবাক হয়েছি, যেমন করে প্রতিবারই পুরানো চাঁদকে নতুন করে দেখেও কিছু দেখা অপূর্ণ রয়ে গেছে, তেমনি নিজের মধ্যে নিজেকে আবিস্কার করতে গিয়ে প্রতিবারই বুঝতে শিখেছি আমার মধ্যে আমাকে দেখাও এখনো অপূর্ণই রয়ে গেছে।

তারপর? তারপর চাঁদের কাছে শিখেছি জীবনটার জোয়ার-ভাটার প্রয়োজনীয়তা। চাঁদ যেমন করে জোড়ারে দুনিয়ার সবকিছু নিজের দিকে টেনে নিয়ে যাবার চেষ্টা করে। তেমনি আমরাও আনন্দ আর উল্লাসের তিব্রতায় আমাদের সবকিছু নিয়েই ব্যাকুল হয়ে পড়ি। আমাদের জোয়ারের ঐ সময়টাতে সবচেয়ে তুচ্ছ ব্যাপারও আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে। অযথাই হাসি ঠাট্টায় সব দুরুত্ব ঘুচিয়ে কাছে টেনে নিতে থাকি প্রিয়জনদেরকে। আবার ঠিক ভাটার মত করে তার উল্টোটাও করতে থাকি। তখন মনের ভেতর ঘাপটি মেরে থাকা বিদ্বেষে সব দূর-দূর করে তাড়িয়ে দিতে থাকে। গোছানো সব জিনিষই তখন ছুড়ে দিয়ে তছনছ করার ইচ্ছে জেগে উঠে। হয়তো মাঝে মাঝে মনের ভাটার পরিমানও বেড়ে যায়। আর তখন ইচ্ছেটা কেবল ইচ্ছেতে সীমাবদ্ধ থাকে না, তখন সেই ইচ্ছে আমাদের রাগ, আমাদের বদমেজাজ রূপে প্রকাশ পেতে থাকে। ছুড়ে ছিটিয়ে কটু কথার বানে দূর থেকে দূরে সরিয়ে দেয় প্রিয় মুখ গুলোকে।

এরপর? এরপর হয়তো কোনদিন সকল পিছুটান উপেক্ষা করে একদিন চাঁদের পিছু তার পথে হেঁটে বেড়াবো। কিংবা বাকি সবার মতই আমৃত্যু আক্ষেপ নিয়ে সময়ের স্রোতে হারিয়ে যাবো...



বুধবার, মার্চ ০৬, ২০১৯

প্রণয়িনী, কিছু অনুভূতি তোমার জন্য...



কিছু রাত বিভীষিকার ভয়ে জোৎস্নায় নিজেকে ভাসিয়ে দেয় না,
কিছু মেঘ উন্মাদনার ভয়ে অঝোরে বর্ষণ ঝড়িয়ে যায় না।
কিছু বাতাস লাগাম হারাবার ভয়ে ঝড়ো বেগে বয়ে যায় না,
কিছু তারা অনিষ্টের ভয়ে আপন আলোয় দিশা দেখায় না।

কিছু উত্তাপ পুড়ে যাবার তিব্রতায় আপন গণ্ডি অতিক্রম করে না,
কিছু ধোঁয়া অহেতুক অন্ধকারে তোমার দুনিয়া ভাসিয়ে দেয় না।
কিছু জলোচ্ছাস আঙ্গীনা ভাসিয়ে দেবার ভয়ে সমুদ্র ছেড়ে ডাঙ্গায় চড়ে না,
কিছু বর্জপাত আতঙ্ক ছড়াবার ভয়ে মেঘের আড়াল ছেড়ে দৃশ্যমান হয় না।

কিছু ফুল হিংস্রতার ভয়ে কলি ছাড়িয়ে ফুটে উঠে না,
কিছু সুবাস তীব্রতার ভয়ে নিজেকে ছড়িয়ে বিলীন হয় না।
কিছু মায়া কাঁদাবে বলে কখনো নিজেকে প্রকাশ করে না,
কিছু মমতা আকড়ে ধরার ভয়ে আপন শাখা মেলে ধরে না।

কিছু শব্দ কলঙ্কতার ভয়ে জনসম্মুখে উচ্চারিত হয় না,
কিছু ছন্দ সময়ের উন্মত্ততার ভয়ে শব্দরূপে সামনে আসে না।
কিছু সুর কাতরতার মাত্রা ছাড়াবে বলে বাদ্য রূপে বেজে উঠে না,
কিছু গান অশ্রুশিক্ত করার ভয়ে কারো গলায় ধরা দেয় না।


প্রণয়িনী,
তেমনি করে তোমার অনুযোগের ভয়ে আপন অনুভূতির প্রকাশ করি না...



ছবিঃ অরুন শিবপ্রসাদ (মূল), ঘষামাজায় অধম

রবিবার, মার্চ ০৩, ২০১৯

সুরের যাদু


সুরের মাঝে কি জাদু আছে কে জানে? কেউ সুরের এই যাদুর মোহে পড়ে হারিয়ে যায় আজানায়। আবার কেউ কেউ কেউ নিজেকে খুঁজে পায় এই সুরের মাঝেই। সেই অনাদিকালের শুরু থেকে মানুষ সুরের মুর্ছনায় হারাতে শিখেছিল। লক্ষ কোটি বছর পরেও সেই হারিয়ে যাবার আগ্রহে মানুষ সুরের পেছনে অন্ধের মত ছুটে বেড়ায়।

কি অসম্ভব ক্ষমতা এই সুরের! হ্যামিলনের ইঁদুর থেকে শুরু করে বাচ্চারাও দল বেঁধে হারিয়ে গেছে এই সুরের মোহনীয় লাইন ধরে। আজ অব্দি কেউ আর তাদের খুঁজে পায়নি। না কোন নগরে, না কোন বন্দরে। তারা যেন সুরের মতই সুরের মাঝে হারিয়ে গেছে, মিশে গেছে বাতাসে।

ক্ষমতা, লোভ, লালসা -এই সবই হার মেনেছে এই সুরের সামনে। আহংকার, আত্মগরিমা, দাম্ভিকতা - সবই ধুলিসাৎ হয়েছে এই সুরের কারণে। যে মন কোন বাঁধনে জড়ায় না, সেই মনও কোন না কোন এক গলিতে অখ্যাত কোন রেস্তোরায় বেঁজে যাওয়া কোন এক নাম না জানা বাদ্যযন্ত্রের টুং টাং শব্দতে নিজের পাথরসম হৃদয়টাকে বেঁধেছে। হয়তো স্বীকার করেনি কোন কালে, তবুও সেই সুর কখনো কানে ভেসে আসলে তাতে নিজের তৃষ্ণা মিটিয়েছে খুব সর্ন্তপণে।

উল্লাস, আনন্দ, বিজয় - এই সবই প্রকাশ পেয়েছে সুরে। কৃতজ্ঞতা, মহানুভবতা, দয়া - এরাও নিজেদের প্রকাশ আর প্রচার ঘটিয়েছে এই সুরের পথে হেটে। প্রতিটা শোক কিংবা প্রতিটা আনন্দের উল্লাস সুরের এই অলিগলির পথ ধরে অন্ধকার পথের কোণ থেকে উঠে গেছে রাজপ্রাসাদে। কখনো শোকের অশ্রু ঝড়িয়ে আবার কখনো আনন্দ অশ্রু বিসর্জনের মাধ্যমে মনের গহীন থেকে ভাব গুলিকে প্রকাশ করিয়েছে জনসমুদ্রে।

সুরের এই মাদকতা কাউকেই ছেড়ে কথা বলেনি। মোয়াজ্জিনের আজান থেকে শুরু করে কোরআনের তেলাওয়ালে রয়েছে তার উপস্থিতি। মন্দিরের ঘন্টা থেকে পুজার মন্ত্র পাঠের পড়তে পড়তে রয়েছে তার অবস্থান। গির্জার ঘন্টা থেকে শুরু করে সান্তাক্লোজের স্লেজ গাড়িতে রয়েছে তার বিস্তৃতি।

কেউ তার কন্ঠে ধারণ করেছে সুর আর কেউ তা নিয়ে এসেছে তাদের হাতের আঙ্গুলে। কেউ কথার পর কথাকে সাজিয়ে গেছে সুরে, আর কেউ কেউ সেতারার তার ধরে গুঞ্জন তুলতে তুলতে সৃষ্টি করেছে ঝড়। আর তাদের সেই ঝড়ে, সৃষ্টির গহীন তলে মানুষ বিভোর হয়ে হারিয়েছিল, হারাচ্ছে আর হারাতেই থাকবে নিজেকে।

এই সুরের ভেলায় চড়ে কত ভালোবাসার গল্প পার করেছে কত শত নীল নদ। শত শত বেহালার তারে প্রকাশ ঘটেছে ছড়িয়েছে বেদনার গল্প। একতারার কম্পনে সৃষ্ট সুরে প্রকাশ পেয়েছে হাজারো মূল্যবোধ। দোতারার সুর ছড়িয়েছে কত কাব্যকথা। পিয়ানো গুলো শব্দের কম্পনে শত শত মানুষের অস্তিত্বকে নাড়িয়ে গেছে। আর গিটারের তার গুলো আপন উন্মাদনার সুর ছড়িয়ে ছিটিয়ে উন্মত্ততায় আগুন জ্বালিয়েছে যুব হৃদয় গুলিতে। শত অবজ্ঞাতেও কেউ মুক্তি পায়নি এই সুরের কবল থেকে।

কত হঠকারী সুরের এই চিৎকারে নিজের কুৎসিত কর্মমকে সংবরণ করেছে। কত যালিমের মনে এই সুর সৃষ্টি করেছে ভয়। কত মুক্তিকামী মানুষের মনে সাহস যুগিয়েছে এই সুর। কত ভীত সম্প্রদায়কে আগ্রগামী করে দিয়েছে সে সময়-অসময়ে। কত রাজত্বের সৃষ্টি হয়েছে এই সুরের সিড়ি বেঁয়ে, আবার কত রাজত্ব ধ্বংস হয়ে বালিতে মিশে গেছে এই সুরের তেজস্বীয়তার সামনে। কত পরিচয় লুটেছে এই সুরে আর কত পরিচয় গড়েছে এই সুরের শেষে। সুরের এই অবদানের হিসেব কখনো বলে কয়ে শেষ করার নয়।

এইসব সুর ভেসে চলুক মানুষের মনে, ভাসিয়ে নিয়ে যাক মানুষকে তেপান্তরে। যুগ যুগান্তরের সুর এগিয়ে চলুক তার আপন গতিতে। ধ্বংসে, সৃষ্টে আর ভালোবাসায় জড়িয়ে রাখুক সবাইকে....


পরিশেষে সুরের যাদুতে ঘেরা একটি পরিবেশনা..







রবিবার, জুলাই ২৯, ২০১৮

অস্তিত্বের অনুধাবন



একটি কলম আর আপনার মাঝে পার্থক্য কি? আরও ভালো করে বললে- আপনার মাঝে আর আপনাকে ঘিরে রাখা পরিবেশের যে কোন বস্তুর সাথে আপনার মৌলিক পার্থক্যটা কোথায়? 

প্রশ্নটার উত্তর আপনি অনেক উপায়ে কিংবা ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দিতে পারবেন। আর দশ জনকে প্রশ্ন করা হলে সম্ভাবনা রয়েছে যে উত্তরটারও দশ রকমেরই হবে। কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তরের যতই রকমফের হোক না কেন, উত্তরের মূলকথা সমসময় একটা বিষয়কে কেন্দ্র করেই হবে। আর সেটি হলো আপনার অস্তিত্ব।

হ্যাঁ, আপনার অস্তিত্ব। যেটা একদম খুব ভেতর থেকে আপনি অনুভব করতে পারেন। আর যার উপর ভিত্তি করেই আপনার ব্যক্তিত্ব, চিন্তাভাবনা, চলাফেরা, আচার-আচরণ তথা আপনার বাহ্যিক প্রকাশ ঘটে সেটি হলো আপনার অস্তিত্ব। আপনি আপনার অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন বলেই দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজ গুলো র্নিদ্বিধায় করে যেতে পারছেন। 

কিন্তু কেউ যদি আপনার ভেতর থেকে আপনার অস্তিত্বটাকে আলাদা ফেলে, তখন?
তখন আপনি যে আপনাকে নিয়ে এত গর্ব আর দম্ভ করে চলাফেরা করেন তার অবস্থান আর একটি কলমের অবস্থান ঠিক একই স্থানে এসে পৌঁছবে। মূলত ঐ সময়টাতে আপনার দেহ কিংবা বলা চলে একটা 'মৃতদেহ' আর একটা জড় বস্তুর মাঝে বিশেষ কোন পার্থক্য থাকে না। দুটো বস্তুই অসাড়,  ব্যবহার ছাড়া দুটো বস্তুই মূল্যহীন।

মানুষের সবচেয়ে বড় ভয় যদি চিন্তা করা হয় তাহলে তাতে নানা ধরণের বিষয় উঠে আসবে। আর এইসব বিষয় গুলোর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত আর বড় কারণটাই হবে 'মৃত্যু' বা মরণ। আর মানুষের এই মৃত্যু ভীতিকে আরও একটু বিশ্লেষণ করলেই বের হয়ে আসবে যে বিষয় সেটি হলো আমাদের মহামূল্যবান ঐ অস্তিত্ব।

তবে এতকিছুর পরেও মানুষ তার অস্তিত্বকে নিয়ে নানা ধরণের কার্যক্রম চালিয়ে গেছে। কেউ কেউ নিজের অস্তিত্বকে দূরে ঠেলে ফেলার জন্যে নেশায় ডুবে গেছে আবার কেউ তার অস্তিত্বের তীক্ষ্ণতা বোঝার জন্যে নিজেকে মৃত্যুর কোলে সপে দিয়েছে। এ তো গেলো ব্যক্তি বিশেষের কথা, কিন্তু এর বাইরেও অস্তিত্বকে নিয়ে এক বিশাল জনগোষ্ঠি কাজ করেছে। তারা তাদের ধর্ম আর রীতিনীতিকে নিজ নিজ বিশ্বাসের সাথে জুড়ে দিয়ে নানা উপায়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে। আর সে কারণেই কেউ কেউ নেশাকে ধরে নিয়েছে আত্মার দুষণ রূপে, আর কেউ নেশায় বুদ হয়েই আত্মার পরিশুদ্ধতা করার চেষ্টা করছে।

প্রতিটা নেশাজাত দ্রব্যই মানুষের অস্তিত্বটাকে নাড়া দেয় কিংবা কিছু সময়ের জন্যে তাকে আচ্ছন্ন করে রাখে। আর এতে করে নিজের বিশ্বাসটা লোপ পেয়ে যায়। আর ঐ সময়টাতে জাগতিক নিয়ম-কানুন আর তার কাছে কোন মূল্যবহন করে না। এ কারণেই অনেক বিপথগামী নেশায় বুদ হয়ে থাকে, কারণ সে যে অস্তিত্বের উপর নিজেগে গড়েছে তুলেছে তা নিজে মেনে নিতে পারে না, আর তা পারে না বলেই সেই অস্তিত্বকে সে নেশার মাধ্যমে ভুলে থাকবার চেষ্টা করে। 

নিজের অস্তিত্বকে ক্ষণিক সময়ের জন্যে হারিয়ে ফেলবার তেমনই একটি দ্রব্য হলো 'আইওয়াসকা' (Ayahuasca)। সঙ্গত কারণেই এই দ্রব্যটি নিষিদ্ধ। এটি তৈরি হয় স্থানীয়ভাবে, কিন্তু সকল স্থানে এটি সহজপ্রাপ্য নয়।

এই দ্রব্যটি একজন মানুষের ভেতর তার যে অস্তিত্ব রয়েছে তাকে এমন ভাবে নাড়িয়ে দেয় যে সে নিজেকে একদম পারিপার্শিক সকল বিষয় থেকে আলাদা মনে করতে শুরু করে। নির্দিষ্ট পরিমানে এই দ্রব্য গ্রহণ করলে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এর কার্যকারিতা বহাল থাকে। এই সময়টাতে তার স্মৃতি দারুণ ত্বীক্ষ্ণ অবস্থায় থাকে। কিন্তু প্রতিটা বিষয় এতটাই এলোমেলো আর গতিসম্পন্ন থাকে যে তখন তাল মিলিয়ে চলাটা এক অসম্ভব কাজ বলেই মনে হয়। আর ঐ সময়টাতে নিজের বিশ্বাসের উপর অটল না থাকতে পারলে ভয়াবহ রকমের বিপত্তিও ঘটে যেতে পারে। 

তবে মজার  ব্যাপার হলো, যতক্ষণ দ্রব্যটি মানুষের শরীরে কিংবা তার রক্তে সচল থাকে, ততক্ষণ তার মস্তিস্কে তাকে চালিয়ে নেয়া অস্তিত্ব অনুধাবণের অংশটি বিকল হয়ে পড়ে থাকে। কিন্তু যখন দ্রব্যটির কার্যক্রম হ্রাস পেতে পেতে একদম বিলিন হয়ে যায় তখন মস্তিস্কের ঐ অংশটি নব-উদ্দ্যোমে একদম নতুনের মত করে নিজের অস্তিত্বকে অনুধাবন করতে পারে। দ্রব্যটি গ্রহণের পূর্বে তার এই অস্তিত্বের অবস্থানটি বিক্ষিপ্ত হলেও দ্রব্যটির আবেশ থেকে বের হয়ে আসলে অস্তিত্বের ঐ টুকরোগুলো কেন্দ্রীভুত অবস্থানে জমা পড়ে। ফলে নিজেকে এবং নিজের চিন্তাভাবনাকে আরও সুক্ষ্ণভাবে সে অনুভব করতে পারে। ব্যাপারটাকে লম্বা সময় ধরে চলতে থাকা একটি মোবাইল ফোনের সাথে তুলনা করা যায়, যেটি লম্বা সময় ধরে চলার কারণে কিছুটা ধীর গতি সম্পন্ন হয়ে আসে কিন্তু রিস্টার্ট করার পর পুনরায় একদম পুরোদমে নিজের কাজ শুরু করতে পারে। 

তো আপনি, নিজের অস্তিত্বটাকে কতটুকু অনুভব করতে পারেন? নিজের অস্তিত্ব আর সেই অস্তিত্বকে ভর করে গড়ে উঠা আপন বিশ্বাসকে কিভাবে মূল্যায়ণ করেন? অন্ধকরে তলিয়ে যাবার আগে কিংবা বিষন্নতায় ডুবতে বসলে কতটুকু নিয়ন্ত্রণ করে পুনরায় নিজের অস্তিত্বটাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেন? 

তার থেকেও বড় প্রশ্ন- 'আদৌ কি আপনি আপনার অস্তিত্বের এই কেন্দ্রীভূত শক্তি ব্যবহার করতে পারেন?'





বুধবার, জুলাই ১১, ২০১৮

কাগজ ও কালি



তুমি অভিন্ন চেনা জানা; আমি সময়, পরিস্থিতি, আর চেতনায় কিছুটা খাপছাড়া। তুমি তোমাকে মেলে ধর মানুষের ইচ্ছে মত ব্যবহারের তরে। আর আমি! আমি তাদের ইশারায়, ইচ্ছায় আর খেয়ালে ছুটে চলি দিক-বিদিকে। আমাকে এক একজন এক এক খেয়ালে ছোটায়, এক এক রূপে তাদের চিত্ত বর্ণনায় ঘুরিয়ে বেড়ায়। আর তুমি! তুমি সেই সব চিত্ত বর্ণনা আপন কায়ায় ধারণ করে নাও। প্রকাশ কর, পৌছে দাও এক জনা থেকে অন্য জনায়। যদিও এই চিত্তের প্রকাশে তোমার আমার অবদান একদমই অনস্বীকার্য। অথচ তারা প্রায়ই আমাদের এই অবদানকে মূল্যায়নের হিসেবে ধরতে চায় না। তারা কেবল চিত্তের প্রকাশটাকেই মূল্যায়নের ময়দানে তুলে নেয়। অতঃপর, তুমি আর আমি হারিয়ে যাই, আর তারাও ভুলে যায় আমাদের। 

আমরা কারও হৃদয় স্পর্শ করতে পারি না, তবুও তাদের হৃদয়ে লোহিত কনিকার যে উত্তাল প্রবাহের সৃষ্টি হয়, যে ঝড় বয়ে যায় আমাদের আমাদের গড়ে তোলা সম্মিলিত রূপে, যে আনন্দে উৎফুল্ল হয় তাদের অন্তর কিংবা যে হতাশায়, ক্লান্তি অথবা পরিতাপে তাদের ভীত নড়ে উঠে; তা কিন্তু মোটেই হেলায় ছুড়ে ফেলবার মত কোন ব্যাপার নয়। 

তবে তাদের মাঝেই কেউ কেউ মূল্যায়ন করতে জানে। হয়তো আমার চেয়েও অধিক তোমাকে, কিংবা তোমার আমার একাত্বতায় সৃষ্ট তাদের স্মৃতিকে। কেউ কেউ তোমার পৃষ্ঠে আমার লেপন ছুঁয়ে দেয়, কেউ আবেগের লোনা জল ফেলে আমাদের মাঝে হারাতে চায়। কেউ চায় তোমার মাঝে আমাকে দিয়ে প্রতিফলণ ঘটানো বিষয়টাকে তার আপন আত্মায় ধারণ করতে, আবার কেউ চায় তোমার আর আমার সৃষ্ট দুর্বোদ্ধতা ঘুঁচাতে।  আবার কেউ কেউ হাজার বছর ধরে লুকিয়ে রাখা গোপন কথাটিকে সবার থেকে অন্তরাল করে কেবল তোমাকে আর আমাকে দেয় সংরক্ষণ করতে। 

এই যে অবহেলা কিংবা পরম ভালোবাসা, তার কোনটিই উপেক্ষিত নয়। এই যে লাঞ্ছনা কিংবা সম্মান, কোনটিই ফেলে দেবার মত নয়। তুমি আর আমি, আমরা তাদের চিন্তার ধারক। আমরাই তাদের বয়ে নিয়ে যাই এক শতাব্দী থেকে অন্য আরেক শতাব্দীতে। আমরাই তাদের পরিচয় করিয়ে দেই এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে। আমাদের মাঝেই তারা হারায় আর আমরাই তাদের এই নশ্বর সময়ে বাঁচিয়ে রাখি অবিনশ্বর করে। 

প্রিয় 'কাগজ', তুমি জানো এই ব্যাপারগুলোই বাকি সব কিছু থেকে আমাদের আদালা এক অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে। তোমার পৃষ্ঠে তাদের চিত্তের প্রবাহকে ধারণ করাই যেমন তোমার দায়িত্ব। তেমনি 'কালি' হয়ে তাদের চেতনা তোমার পৃষ্ঠে ফুটিয়ে তোলাই আমার নিয়তি। আর এটা এমন এক নিয়তি যাকে তারা চাইলেও অস্বীকার করা যাবে না, এটা এমন এক দায়িত্ব যা এড়িয়ে চলাও সম্ভব না।

তাই তোমার তরে আমার অনুরোধ, এদের হেলায় কষ্ট পেয়ে নিজের পৃষ্ঠ তেকে তাদের চেতনাকে বিলিন করে দিও না। এই চেতনার প্রকাশে যতটা অধিকার তাদের, ততটা আমাদেরও। তুমি বরং আমার আচড় গুলো তোমার পৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখ। নিদেনপক্ষে, তোমার কাছে আমার এইটুকুই প্রত্যাশা....

সোমবার, আগস্ট ২১, ২০১৭

প্রণয়িনী



প্রণয়িনী,
        হৃদয় উজার করা ভালোবাসা নিও। যে অযুত শহস্র মায়ায় ডুবে আছে এই নক্ষত্রমণ্ডলী, সেই একই পরিমাণ মায়া জমা হয় তোমার নামে প্রতিটা মুহুর্ত এই অবুঝ হৃদয়ে। লাগামহীন এই মায়া, এই ভালোবাসা উন্মাদ করে দেয় আমায় মুহুর্তেই। পথ ছেড়ে প্রায়ই বিপথে হাটি তখন, ভুলে যাই উদ্দেশ্য, ভুলে যাই জীবনের লক্ষ্য। তখন কেবলমাত্র তুমিই থাকো আমার সামনে। কিন্তু থাকো ধরা ছোঁয়ার অনেক বাইরে। মরুভূমিতে পথ হারা পথিকের অনুভূতির মত তোমার মরিচিকার পিছনে ছুটে ফিরি তখন।

        জানি, শহস্রবার করে তোমাকে বলেছি 'তোমায় ভালোবাসি', এও জানি এইসব কথা তোমার কাছে মেকি মুদ্রার চেয়ে বেশি কিছু নয়। হয়তো এমন বারংবার "ভালোবাসি" বলায় তুমি হয়ে যাও বিরক্ত। হয়তো মাঝে মাঝে ঘৃণাও চলে আসে মনে। হয়তো আপত্তি থাকে এত শত বার করে "ভালোবাসি" শব্দটা তোমার শ্রবন ইন্দ্রীয়ে ছুঁয়ে যাওয়ায়। কিন্তু তুও বলি- তোমাকেই, শুধুমাত্র তোমাকেই ভালোবাসি। তুমি যখন বিরক্ত হও, তখন তোমার বিরক্তিকে ভালোবাসি। তুমি যখন ঘৃণা কর, তখন তোমার ঘৃণাকে ভালোবাসি। যখন এমন করতে করতে অতিষ্ট হয়ে যাও, তখন অতিষ্ট হওয়া ঐ তোমাকেই ভালোবাসি। এমন কোন মুহুর্ত নেই, তোমার এমন কোন অনুভূতি নেই- যে মুহুর্তটার ঐ অনুভুতি আমি ভালো না বেশে থাকতে পেরেছি। 

        তোমার প্রতিটি 'হুম', 'কিছু না', 'পরে' শব্দ গুলি কতটা রক্ত ক্ষরণ ঘটায় এই হৃদয়ে তা বোধ করি কোনদিনই তোমাকে বোঝাতে পারবো না। তোমার এক একটি 'হুম', এক একটি 'কিছু না', এক একটি 'পরে' শব্দগুলো আমাকে ছুড়ে ফেলে দেয় দিগন্ত সীমানায়। আমি বিকলঙ্গ মানুষের মত খোঁড়াতে খোঁড়াতে ফের এগিয়ে আসি তোমার দিকে। আবারও অব্যক্ত বাক্য ব্যায়ে তোমার নিরাপদ সীমান্ত পার করে তোমাকে ছুঁতে চাই। আবারও তোমার হৃদয় মন্দিরের ঘন্টা বাজিয়ে তোমাকে সজাগ করতে চাই। আবারও চাই তোমার দৃষ্টি সীমানায় নিজেকে নিয়ে আসতে। আর আবারও তুমি আমায় ছুড়ে ফেলো ঐ দিগন্ত সীমার শেষ প্রান্তে!

        তুমি প্রতিনিয়তই নিজেকে আড়াল করে খুব যত্নে তোমার মাঝেই তোমাকে আটকে রাখো। নিজেকে সংরক্ষণ করে রাখো কোন এক অজানা উদ্দেশ্যে, যা আজও আমার কাছে পরিস্কার নয়। তবুও একদিন সকালে অরক্ষিত তোমাকে দেখে বিমোহিত হয়েছিলাম। হয়তো ঘুমিয়ে ছিলে বলেই এত দীর্ঘ সময় তোমাকে দূর থেকেই দেখার সুযোগ পেয়ে বসেছিলাম। ঘুমন্ত তোমার স্নিগ্ধ মুখমণ্ডলের সেই মায়া আমি আজও কাটিয়ে উঠতে পারি নি। কতটা সময় তোমাকে ওভাবে দেখতে দেখতে পার করেছি তা হিসেব করে বলতে পারবো না। কিন্তু সময়টা আমার কাছে দীর্ঘ ছিল। মনে হচ্ছিল অন্ততকাল এভাবেই বুঝি পার করে দেয়া যাবে তোমার ঘুমন্ত চেহারাটা দেখতে দেখতে। 

        তারপর কোন একদিন যখন কোন এক উচ্ছাসের মুহুর্তে তোমার কণ্ঠে একবার, হয়তো ভুল করেই 'ভালোবাসি' উচ্চারণ করে ফেলো। যখন তোমার ঐ ঠোঁটকে স্পর্শ করে 'ভালোবাসি' শব্দটা আওয়াজে রূপান্তরিত হয়। যখন তোমার উচ্চারিত 'ভালোবাসি' শব্দটা বাতাসে কম্পন তুলে এগিয়ে আসতে শুরু করে। তখন আমার দুনিয়াটাতে ঝড় বয়ে যায়। জলোচ্ছাস তৈরি হয় আমার হৃদয় উপকূলে। আনন্দ স্রোতে ভেসে যাই আমি আপন ঠিকানা ভুলে। ঝড়ো বাতাসে উড়ে যাই আমি, অথচ আমার সবকিছু পড়ে থাকে দূর পেছনে। গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে ছুটে বেড়াই। তোমার ঐ এইটুকু কথায় আমি যে কতটা এলোমেলো হয়ে যাই তার হিসেব কখনোই তোমাকে দিতে পারবো না। শুধু জানি, ঐ মুহুর্তে যদি প্রাণ বায়ু ত্যাগ করতে হয় তবে সেটাও হবে আত্মতৃপ্তির!

        হাজার কথায় তোমাকে বিরক্ত করলাম। জানি এইটুকুও বিরক্ত করার অধিকার এখনো আমার হয়নি। তবুও অযাচিত অধিকার প্রয়োগ করে তোমাকে শব্দগুলি উপহার দিলাম। হয়তো শব্দের এতটা জোড় নেই যা আমার আবেগ গুলিকে তোমার পর্যন্ত পৌছে দিতে পারবে। কিন্তু তোমার পর্যন্ত পৌছে দেবার মত এরচেয়ে জোড়ালো কোন পথও আমার চেনা নেই। তবে জেনো, অজস্র নক্ষবিথি বিরামহীন ঘুরে চলেছে আমাদের চারপাশ; আমিও তোমার চারপাশে এভাবেই ঘুরছি। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে তোমার সামনে প্রতিনিয়ত নিজেকে উপস্থিত করে তোমার বিরক্ত করে যাবো। 

        হয়তো অশান্ত মনের উপর এখনো নিজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আসতে পারি নি। তবে একটা সময় ঠিকই নিজের নিয়ন্ত্রণ নিজের কাছেই নিয়ে আসবো। হয়তো সহসাই নয়, তবে খুব দ্রুতই। আর যেদিন নিজের উপর নিয়ন্ত্রণটা চলে আসবে, ঐদিন থেকে তোমার সামনে উপস্থিত হয়ে আর তোমাকে বিরক্ত করবো না। তোমার জন্যে ভালোবাসার কমতি কখনোই হবে না, তবে তোমার বিরক্তি কমাতে আমি নিজেকে কোন এক দূর নক্ষত্রে নিক্ষেপ করবো। এত দূরের নক্ষত্রে যেখান থেকে চাইলেও তোমাকে আর কখনোই বিরক্ত করা সম্ভব হবে না।



        ভালো থেকো প্রণয়িনী, নিজের মত করেই ভালো থেকো। সম্ভব হলে আমার এই বেহায়াপনাকে মন থেকে বাদ দিয়ে নিজেকে শান্তি দিও। তবে জেনো, তোমার শান্তিতেই আমার সকল শান্তি নিহীত। 





ইতি
বেহায়া  যুবক




শনিবার, জুন ০৩, ২০১৭

মুখোশ



মাঝে মাঝে হারিয়ে যাবার প্রচণ্ড তৃষ্ণা পায় আমার। হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে পরিচিত এই ভুবন ছেড়ে। কিন্তু এটা নিছকই এক ছেলেমানুষি ইচ্ছা। যেখানে ভুবন বলতে আমার জানা শোনা রয়েছেই কেবল এই একটাই, সেখানে আর কোথায় গিয়ে হারাবো?

কিন্তু তবুও হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। সমাজবদ্ধ হয়ে ভদ্র মুখোশের ভিড়ে আমি যেন দিনকে দিন কেবল হাঁপিয়ে উঠছি। দৈনন্দিন জীবনে এখানে কারও বেঁচে থাকার ছোঁয়া দেখি না আর আমি। আমি শুধু দেখি একদল মানুষ কেবলই একটা ঘোরে পড়ে ছুটছে। মানুষের চামড়ার আড়ালে এরা যেন এক একটা চলমান যন্ত্র-মানব। যেন কলকব্জা গুলোর উপরে স্তর স্তরে চামড়া জুড়ে দিয়ে মানুষের রূপে নিজেকে টিকিয়ে রাখছে। এদের ছুটোছুটি দেখলে মনে হয় নিশ্বাসটাও যেন এরা নিজের জন্যে নেয় না। কেবল পচে গলে পিছু পড়ে যাবে বলেই ভয়ে ভয়ে নিশ্বাস টেনে চলেছে নিয়ম করে।

এদের খাবার আছে, সেই খাবারও নিয়ম করে গ্রোগ্রাসে গিলছে, কিন্তু এদের খিদে নেই। খাবারের স্বাদ এদের জিহ্বাকে স্পর্শ করে না। এদের মনে স্বাদকে উপভোগের সখ জাগে না, আহ্লাদ করে এরা দু'টুকরো রুটিও চিবায় না। এরা কেবল নিয়ম করে তিন বেলা খাবার গিলতে পারে। কেবল পরে সকাল, সন্ধ্যা আর রাতে মেকি আয়োজনে নিজের ভাগের খাবার সাবাড় করতে। আর পারে খাওয়া শেষে ফের নিজেকে ঘোরে টেনে নিয়ে ছুটতে। 

তবে এদের জন্যে আমার আফসোস হয় না, দুঃখও হয় না। কেবল নিজের মনে বিষাদ জাগে। জীবনকে এরা কখনোই জীবনের মত করে দেখতে পারে না বলেই এই বিষাদ জাগে। সুশৃঙ্খল হতে গিয়ে এরা বিশৃঙ্খলার আনন্দ নিতে ভুলে গেছে বলে বিষাদ জাগে। ছন্দে চলার লোভে পড়ে ছন্দ পতনের বিরক্তি বোঝার ক্ষমতা হারিয়েছে বলে আমার বিষাদ জাগে। আমার বিষাদ লাগে, কারণ এরা উড়তে চায়, কিন্তু বাসাতকে স্পর্শ করতে চায় না বলে। বিষাদ লাগে, কারণ এরা সাতরে যায়, কিন্তু নিজেকে পানিতে ছোঁয়ায় না বলে। প্রকৃতির মাঝে কৃত্রিমতা যেন এদের গ্রাস করে নিয়েছে।

কোন একদিন হুট করে যদি এদের মোহের অবসান ঘটে, তবে আমি নিশ্চিত এরা নিজ নিজ বিছানা ছাড়বার আগেই আত্মহত্যার পথ খুঁজবে। মায়ামরা এই প্রকৃতি দেখে নিজেরাই ডুকরে কাঁদবে। সু-শৃঙ্খল জীবনে বাঁচতে গিয়ে এরা যে শৃঙ্খলে বন্দী দাশ ছিল তা অনুধাবন করে এরা নিজেদের আফসোসের আগুনে পুড়িয়ে মারবে। 

এরা কখনো সূর্যোদয় দেখে না, এরা শুধু দিনের শুরু হতে দেখে। এরা কখনো সূর্যাস্তের কোমলতাও অনুভব করে না, এরা কেবলই দিনের সমাপ্তি দেখে। এরা সন্ধ্যার মায়ায় নিজেকে নিমজ্জিত করতে জানে না, রাতের নিস্তব্ধতার ছন্দ শুনতে পারে না। এরা জাগে না, এরা ঘুমায় না। এরা কেবলই ছোটে, শুধু ছুটেই চলে।

আর এসব দেখেই আমার হারিয়ে যাবার তৃষ্ণা বাড়ে। বাড়তে বাড়তে একদম অতিষ্ঠ করে তোলে। ছটফট করে, চিৎকার করে, ভাংচুর করে সেই তৃষ্ণা মেটাতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে ইকারাসের মত ডানা ছড়িয়ে দিগন্তের এই প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্ত পর্যন্ত দাপিয়ে বেড়াতে।

কিন্তু এসবের কিছুই আমার করা হয় না। আফসোসকে আবারও চেপে রেখে আমি সামনে এগিয়ে যাই। চুপিসারে আমিও আমার মিথ্যে মুখোশটা পড়ে নেই। সেই মুখোশের চোখ দিয়ে আমিও এক অদৃশ্য মোহের দেখা পাই। এটাই সেই মোহ, যা সবাইকে এই একঘেয়ে যান্ত্রিক গতিতে চালিয়ে নিচ্ছে। আর এভাবেই আমার আর হারিয়ে যাবার তৃষ্ণাটা মেটানো হয় না। অতৃপ্ত তৃষ্ণাকে মিথ্যে মুখোশে মুড়িয়ে আমিও বাকি সবার মত ছুটে চলি। ছুটে চলি এক মিথ্যে আশ্বাসের গন্তব্যে...





সোমবার, ডিসেম্বর ১২, ২০১৬

শক্তিশালী কিছু স্থিরচিত্র :: ২য় খণ্ড

          অনেক বড় একটা গল্পকে মাত্র এক পলকে বোঝাতে পারে শুধুমাত্র হাতে গোনা কিছু স্থিরচিত্র। অনেক সময় শত শত সেমিনার করেও যা মানুষকে বোঝানো যায় না তা নিমিষেই বুঝে নেয় একটি চিত্রের মাধ্যমে। 

পূর্বে "শক্তিশালী কিছু স্থিরচিত্র" শিরোনামের একটি পোষ্টে কিছু ছবি পোষ্ট করা হয়েছিল। সে ধরণের আরও কিছু ছবি নিয়ে আজকের আয়োজন।



ইথিওপিয়ার এ্যাবোর (Erbore) উপজাতি গোষ্ঠীর একটি শিশু


ইথিওপিয়ার মুরসি (Mursi) গোষ্ঠীর এক উপজাতি নারী প্রথমবারের মত Vouge ম্যাগাজিনে চিত্রায়িত ছবি দেখে বহির্বিশ্বের নারীদের আবিষ্কার করছে


কসভো যুদ্ধের শরণার্থীদের একটি ক্যাম্পের কাঁটাতারের ফোঁকর দিয়ে একটি শিশুকে তার প্রপিতামহের হাতে তুলে দেবার সময়কার ছবি

নেশায় বুদ হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা এক বাবাকে রাস্তা হতে তুলে বাড়ি নিয়ে যাবার আপ্রাণ চেষ্টায় লেগে থাকা এক সন্তানের চিত্র

সিরিয়ার শরণার্থী শিবিরে অবস্থানকারী শিশুরা নিজ নিজ পাত্রে তাদের পরিবারের জন্যে পানি সংগ্রহ করার কাজ করছে

রোমানিয়ার ব্যুকারেস্ট (Bucharest) শহরে দাঙ্গার সময়ে পুলিশ ব্যারিকেড তৈরি করে আক্রমণাত্মক অবস্থায় গেলে স্থানীয় এক শিশু 'হৃদয় আকৃতির (heart-shaped)' একটি বেলুন এক পুলিশ সদস্যের হাতে তুলে দেয়। পরবর্তীতে ঐ হৃদয় আকৃতির বেলুন হাতেই পুলিশ সদস্যকে ব্যারিকেড তৈরি করে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়

২০১২ সালে মিশরের কায়রোতে বিক্ষোভ চলাকালীন সময় এক তরুণ বিক্ষোভকারী নিরাপত্তা প্রহরীদের লক্ষ করে পাথর ছুড়ে মারছে

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ (Kiev)-এ পুলিশ এবং বিক্ষোভকারীদের মাঝে অবস্থিত এক জ্বলন্ত ব্যারিকেডের সামনে দাড়িয়ে আছে একজন বিক্ষোভকারী

২০১১ সালের এপ্রিল মাসে অ্যালাব্যামায় কনকর্ড শহরে টর্নেডোর আঘাতে ধ্বংস প্রাপ্ত নিজ বাড়ির সামনে দাড়িয়ে এক মা তার সন্তানকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন

২০১১ সালের আগস্ট মাসে লন্ডনের ক্রোয়িডন (Croydon) শহরে দাঙ্গার সময় আকস্মিক আগুন লেগে যাওয়া এক দালানের দ্বিতীয় তলা (first-floor) হতে ঝাপ দিচ্ছেন দালানে অবস্থানকারী এক মহিলা

২০১১ সালের অক্টোবর মাসে ব্যাংককের উপকণ্ঠে অবস্থিত র‍্যাঙ্গিট শহর বন্যার পানিতে প্লাবিত হলে এক মহিলা ল্যম্পপোষ্ট আঁকড়ে ধরে নিজেকে ভেসে যাওয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখবার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন

এক সন্তান প্রথমবারের মত ছুঁয়ে দেখছে তার বাবাকে। লোকটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের সামরিক বাহিনীর কাছে যুদ্ধবন্দী হিসেবে ছিলেন

জন এফ. কেনেডি জুনিয়র, সকলের সাথে নিজ বাবার কফিনের প্রতি স্যালুট দিয়ে বিদায়ী অভিবাদন জানাচ্ছে

১৯৪০ সালের ১লা অক্টোবর মাসে কানাডার নিউ ওয়েস্টমিনস্টার হতে চিত্রগ্রাহক ক্লড পি. ডেটলফ ((Claude P. Dettloff)) "আমার জন্যে দাড়াও বাবা / Wait For Me Daddy" - শিরোনামের এই ছবিটির তুলেছিলেন

এক ফ্রেমে বন্দী ফিদেল কাস্ত্রো ও চে-গুয়েভারা'র একটি হাস্যোজ্জ্বল ছবি


রিও ডি জানিয়েরো কাছাকাছি এক স্থানে সর্বনাশা ধ্বসে মারা যায় এক ব্যক্তি। তাকে সমাহিত করার পরের দিনেও তার পোষা কুকুরটিকে তার সমাধির পাশে বসে থাকতে দেখা যায়

════════════════════════════════════
চিত্র এবং তথ্যসূত্রঃ আন্তঃজালিকা হতে সংগ্রহীত

বুধবার, নভেম্বর ১৬, ২০১৬

Jetsons এবং হান্না-বারবারা


ছোটবেলায় কার্টুন নেটওয়ার্ক চ্যানেলে The Jetsons কার্টুন সিরিজটা দেখতাম। অত্যান্ত মজার কার্টুন গুলির মধ্যে সেটি ছিল একটি। কেউ যদি আমাকে তখন বলত নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে সারাদিন কার্টুন দেখতে হবে, সম্ভবত তার সেই শর্ত মেনে নিয়ে আমি সারাদিনই কার্টুন দেখতাম।


এ পৃথিবীতে অনেকেই এখন পর্যন্ত এমন অনেক ধারণা দিয়ে গেছে যার প্রয়োজন এবং বাস্তবায়ন বুঝতে আমাদের শতবছরেরও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। তেমনই দুজন মানুষ হলেন উইলিয়াম হান্না এবং জোসেফ বারবারা।


The Jetsons কার্টুন সিরিজটি যারা দেখেছেন তারা মনে করতে পারবেন কার্টুনে দেখানো তাদের জীবন যাপনের অবস্থা এবং ব্যবস্থা গুলি। সেখানে অত্যাধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা, ভাসমান যান, অটোমেটেড লোকেশন ট্রাকিং ডিভাইস, ভয়েস কমান্ড বেস্‌ড মডিউল, উড়ন্ত ডিসপ্লে সমেত কম্যুনিকেশন মডিউল, রোবট সেক্রেটারি এবং হোমকিপার, রোবট জন্তু সহ নানান ধরণের কাল্পনিক (ঐ সময় এসবের সবই শুধু কাল্পনিক নয়, অতিকাল্পনিক ছিল) জিনিষ দেখানো হয়েছে। অথচ ঐসব কাল্পনিক বস্তু গুলি ধীরে ধীরে আমাদের কাছে টেক-টয়(প্রযুক্তির খেলনা) হিসেবে চলে এসেছে। অল্প ক’দিন বাদেই হয়তো আমরা ঘরের কাজ করার জন্যে ইন্টিলিজেন্ট (অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা/সিদ্ধান্ত নিতে পারে এমন) রোবটও পেয়ে যাবো।


তবে সেখানে দেখানো সবচেয়ে সাধারণ একটা বস্তু ছিল তাদের বাড়ি। আমাদের সাধারণ বিল্ডিং গুলোর মত সেখানে দেখানো বিল্ডিং গুলি একদম গ্রাউন্ড থেকে শুরু হতো না। বরং গ্রাউন্ড থেকে লম্বা দুটো দন্ডের উপর একটি বেস এবং সেই বেসের উপর তাদের বিল্ডিং গুলি দেখা যেত।

হান্না-বারবারা নিশ্চিত ভাবেই দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। আমরা আমাদের এই পৃথিবীটাকে যেভাবে বসবাসের অযোগ্য করে তুলছি দিনকে দিন, তাতে অদূর ভবিষ্যতে হয়তো ভূমির কাছাকাছি কোথাও মানুষের টিকে থাকাটাই অসম্ভব হয়ে উঠবে। আর সেই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্যে আমাদেরও জেটসন কার্টুনের মত বেছে নিতে হবে ভূমি থেকে অনেক উঁচুতে বাড়ির মডেল।








মঙ্গলবার, অক্টোবর ২৫, ২০১৬

সামাজিক মূল্যায়ণঃ চটকদার অভিনেতা বনাম প্রকৃত সত্যপরায়ণ মানুষ



একবার এক ভদ্রলোক ফ্রান্সে ঘুরতে গেলে এক বিলবোর্ডে তার নজর আটকে যায়। সেটি ছিল এক প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠানের বিলবোর্ড। প্রতিযোগীতার বিষয়বস্তু ছিল, বিখ্যাত কৌতুকাভিনেতা স্যর চ্যারলি চ্যাপলিনকে অনুকরণের অভিনয় প্রতিযোগীতা (Charlie Chaplin Lookalike Contest)।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্যে অনেক প্রতিযোগীই ইতোমধ্যে সেখানে উপস্থিত হয়েছে। সকলেই চার্লি চ্যাপলিনের মত পোষাক পড়ে, আর তার মত মেকআপ নিয়ে সেখানে উপস্থিত। ভদ্রলোক ব্যাপারটি দেখে দ্রুত তার হোটেলে চলে গেলেন আর খুব দ্রুত সেজে-গুজে আবারও সেখানে ফিরে আসলেন; নাম লেখালেন ঐ প্রতিযোগীতায়।

নির্দিষ্ট সময় পর প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠান আরম্ভ হয়ে আবার শেষও হয়ে গেল। সকলেই নিজ নিজ প্রতিভা আর অভিনয় গুনকে কাজে লাগিয়ে মঞ্চে নিজেকে চার্লি চ্যাপলিনের রূপে উপস্থাপন করে গেল। তাদের অভিনয় দেখে মনেই হচ্ছিল না যে তারা আলাদা আলাদা কোন মানুষ। বরং মনে হচ্ছিল তারা বুঝি সকলেই এক একজন চার্লি চ্যাপলিন। তবুও যখন এটি একটি প্রতিযোগীতা, তাই তাদের মাঝে যারা ভালো করেছিলেন তাদেরকে বিজয়ী হিসেবে নির্বাচিত করা হচ্ছিল। একে একে সকল বিজয়ীদের নাম ঘোষনা করা হল। দেখা গেল ফ্রান্সে ঘুরতে আসা ঐ ভদ্রলোকটিও প্রতিযোগীতায় জিতে গেছেন। তবে তিনি প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় না হয়ে হয়েছেন সপ্তম স্থান অধিকারী। আর ঐ প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠানে কেবল ঐ সাতজনকেই বিজয়ী ঘোষনা করা হয়।

মজার ব্যাপার হল প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করে সপ্তম হওয়া ঐ ভদ্রলোক আর কেউ নন; সয়ং স্যর চার্লি চ্যাপলিন।

এমন ঘটনার পর স্যর চার্লি চ্যাপলিন ভাবতে বসলেন-
আসলেই কি তিনি নিজে প্রকৃত চার্লি চ্যাপলিন? নাকি যে ছয়জন অভিনয় গুণে তাকে টপকে গেছে তারাই এক একজন প্রকৃত চার্লি চ্যাপলিন?

এটা নিয়ে ভাবতে ভাবতেই তিনি অনুধাবন করলেন-
তারা সকলেই কেবল চার্লি চ্যাপলিনের বাহ্যিক রূপ, তার চালচলন, চলচিত্রে প্রদর্শত অভিব্যক্তিকেই নকল করে নিজেদের মাঝে ধারণ করতে পারে। ভেতর থেকে চার্লি চ্যাপলিনের অন্তর, তার ভাবনা কিংবা তার স্বাধীন চিন্তা-চেতনাকে কোনভাবেই কোনদিন নকল করতে পারবে না। আর এমনটা যে শুধু তার বেলায়তে ঘটবে তা কিন্তু নয়; বরং এ দুনিয়ার কারোর হৃদয়, চিন্তা-চেতনা, বিচারভঙ্গী অন্যকেউ এভাবে নকল করে নিজের মাঝে ধারণ করতে পারবে না। সেটা কোনভাবেই সম্ভব নয়।

কিন্তু আমারদের সমাজ, সমাজে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গী, এই দুনিয়া কোন কিছুই অন্তর দিয়ে চলে না; তারা চলে অভিনয় গুণে। যে ব্যক্তি যত বড় অভিনেতা, তার গ্রহনযোগ্যতা এ দুনিয়াতে তত বেশি।

আর সেই ভাবনার অনুধাবন থেকেই স্যর চার্লি চ্যাপলিন লিখেছিলেন-
We live in a world where showman succeed and the true man fail






¶ বর্ণিত ঘটনাটি গালগপ্প হিসেবেই প্রচলিত। স্যর চার্লি চ্যাপলিনের জীবন ঘটনা নিয়ে লেখা কোন বই কিংবা দলিলে উপরুক্ত ঘটনার গ্রহণযোগ্য কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। পাশাপাশি প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠানের স্থান নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। মূলত ঐ সময় খুব জনপ্রিয় একটি প্রতিযোগীতা ছিল এটা। প্রায় প্রতিটি বড় শহর আর উল্লেখযোগ্য প্রতিভা অন্বেষণ করা বিভিন্ন আয়োজকেরা এটি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে এমন প্রতিযোগীতার আয়োজন করছিলেন। একই সাথে প্রতিযোগীতায় স্যর চার্লি চ্যাপলিনের সপ্তম অবস্থান নিয়েও অনেক দ্বিমত রয়েছে। তবুও হাজার বিতর্কে ভরা এই গালগল্পটির বিষয়বস্তু কোনভাবেই 'গালগল্প' হিসেবে ধরে নেয়া সম্ভব নয়।






সোমবার, আগস্ট ২৯, ২০১৬

টোকা'র শব্দ



নীরবতার দরজায় হালকা টোকা দিয়ে যাচ্ছিল কেউ।
আমার প্রয়োজন অখণ্ড নীরবতা, সেখানে এই হালকা টোকার শব্দও আমার কাছে আল্ট্রাসনিক জেটের ইঞ্জিনের শব্দ মনে হচ্ছিল।

অখণ্ড নীরবতা প্রয়োজন আমার, চিৎকার করে তাড়িয়ে দিতে গেলে আমারই গড়া নীরবতার শীর্ণ কাঁচের দেয়াল ভেঙ্গে গুড়ো গুড়ো হয়ে ছড়িয়ে পড়বে আমার চারিপাশ। তাই অপেক্ষা শুরু করলাম, ক্লান্ত আর বিরক্ত হয়ে টোকার শব্দ সৃষ্টিকারী যদি আপন ইচ্ছেতেই দূর হয় -সেই আশায়। কিন্তু দীর্ঘ সময় পরেও তেমন কিছুই ঘটল না। মৃদু টোকার শব্দ বিরতিহীন ভাবে বেজেই চলছিল। ওদিকে আমার অপেক্ষার কাল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতরই হচ্ছিল কেবল।

তারপর একটা সময় আপনা-আপনিই টোকার শব্দ থেমে গেল। আনন্দ যেন ঠিক সে মুহূর্তেই আমাকে ঘিরে ধরল। অবশেষে ফিরে পেলাম আমি আমার অখণ্ড নীরবতা! কিন্তু ঐ আনন্দের আবেশ খুব বেশি সময় টিকে থাকল না। যদিও আমি এই অখণ্ড নীরবতা পাবার আশায় এতটা সময় বিরক্তি নিয়ে অপেক্ষা করে গেছি। তবুও এখন এই অখণ্ড নীরবতাকে আমি আর নিতে পারছি না।

দরজার ওপাশের শব্দ বন্ধ হলেও মনের গহীনে কোথাও মৃদু টোকার শব্দ বিরতিহীন ভাবে বেজে চলেছে। যে বাইরে ছিল, সে যেন আপন প্রস্থানেই তার অস্তিত্ব ফেলে গেছে আমার মনের গহীনে। এখন এই অখণ্ড নীরবতার কোন অর্থ নেই। বেজে যাওয়া টোকার শব্দেই ডুবে আছে মন....




মঙ্গলবার, জুলাই ১৯, ২০১৬

একজন হুমায়ূন আহমেদঃ চন্দ্র কারিগরের জীবন গল্প



হুমায়ূন আহমেদ বিংশ শতাব্দীর বাঙালি জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। তিনি ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১৩ই নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত নেত্রকোণা মহুকুমার কেন্দুয়ার কুতুবপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা ফয়েজ। তাঁর পিতা একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন এবং তিনি ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তৎকালীন পিরোজপুর মহকুমার এসডিপিও হিসেবে কর্তব্যরত অবস্থায় শহীদ হন।

হুমায়ূন আহমেদকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রেষ্ঠ লেখক গণ্য করা হয়। তিনি একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার। বলা হয় আধুনিক বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের তিনি পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও তিনি সমাদৃত। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা দুই শতাধিক। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক। তাঁর বেশ কিছু গ্রন্থ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে, বেশ কিছু গ্রন্থ স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জীবনে একটি নাতিদীর্ঘ উপন্যাস রচনার মধ্য দিয়ে হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্য জীবনের শুরু। এই উপন্যাসটির নাম "নন্দিত নরকে"। ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে উপন্যাসটি প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। ১৯৭২-এ কবি-সাহিত্যিক আহমদ ছফার উদ্যোগে উপন্যাসটি 'খান ব্রাদার্স' কর্তৃক গ্রন্থাকারে প্রথম প্রকাশিত হয়। প্রখ্যাত বাংলা ভাষাশাস্ত্র পণ্ডিত আহমদ শরীফ স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে এ গ্রন্থটির ভূমিকা লিখে দিলে বাংলাদেশের সাহিত্যামোদী মহলে কৌতূহল সৃষ্টি হয়।

সত্তর দশকের শেষভাগে থেকে শুরু করে মৃত্যু অবধি হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন বাংলা গল্প-উপন্যাসের অপ্রতিদ্বন্দ্বী কারিগর। এই কালপর্বে তাঁর গল্প-উপন্যাসের জনপ্রিয়তা ছিল তুলনারহিত। তাঁর সৃষ্ট হিমু ও মিসির আলি চরিত্রগুলি বাংলাদেশের যুবকশ্রেণীকে গভীরভাবে উদ্বেলিত করেছে। তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্রসমূহ পেয়েছে অসামান্য দর্শকপ্রিয়তা। তবে তাঁর টেলিভিশন নাটকগুলি ছিল সর্বাধিক জনপ্রিয়। সংখ্যায় বেশী না হলেও তাঁর রচিত গানগুলোও সবিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে। তাঁর অন্যতম উপন্যাস হলো নন্দিত নরকে, মধ্যাহ্ন, জোছনা ও জননীর গল্প, মাতাল হাওয়া ইত্যাদি। তাঁর নির্মিত কয়েকটি চলচ্চিত্র গুলোর মধ্যে দুই দুয়ারী, শ্রাবণ মেঘের দিন, ঘেঁটুপুত্র কমলা জনপ্রিয়তায় অন্যতম।

হুমায়ুন আহমেদ তাঁর অসংখ্য বহুমাত্রিক সৃষ্টির জন্য নানা পুরস্কারে ভূষিত হন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলি হলো- "বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৮১)", "শিশু একাডেমী পুরস্কার", "একুশে পদক (১৯৯৪)", "জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (শ্রেষ্ঠ কাহিনী ১৯৯৪, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ১৯৯৪, শ্রেষ্ঠ সংলাপ ১৯৯৪)", "লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩)", "মাইকেল মধুসুদন পদক (১৯৮৭)", "বাচশাস পুরস্কার (১৯৮৮)", "হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০)", "জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদক"।

জীবনের শেষভাগে ঢাকা শহরের অভিজাত আবাসিক এলাকা ধানমন্ডির ৩/এ রোডে নির্মিত দখিন হাওয়া ভবনের একটি ফ্লাটে তিনি বসবাস করতেন। খুব ভোর বেলা ওঠা অভ্যাস ছিল তাঁর, ভোর থেকে সকাল ১০-১১ অবধি লিখতেন তিনি। মাটিতে বসে লিখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। কখনো অবসর পেলে ছবি আঁকতেন। জীবনের শেষ এক যুগ ঢাকার অদূরে গাজীপুরের গ্রামাঞ্চলে ৯০ বিঘা জমির ওপর স্থাপিত বাগান বাড়ী 'নুহাশ পল্লীতে' থাকতে ভালোবাসতেন তিনি।

২০১১-এর সেপ্টেম্বের মাসে সিঙ্গাপুরে ডাক্তারী চিকিৎসার সময় তাঁর ক্যান্সার ধরা পড়ে। তিনি নিউইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোয়ান-কেটরিং ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। ১২ দফায় তাঁকে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের পর তাঁর কিছুটা শারীরিক উন্নতি হলেও, শেষ মুহূর্তে শরীরে অজ্ঞাত ভাইরাস আক্রমণ করায় তার অবস্থা দ্রুত অবনতির দিকে যায়। কৃত্রিমভাবে লাইভ সাপোর্টে রাখার পর ১৯ জুলাই ২০১২ তারিখে হুমায়ূন আহমেদ মৃত্যুবরণ করেন। তাকে নুহাশ পল্লীতে দাফন করা হয়। তাঁর মৃত্যুতে সারা বাংলাদেশে সকল শ্রেণীর মানুষের মধ্যে অভূতপূর্ব আহাজারির সৃষ্টি হয়। তাঁর মৃত্যুর ফলে বাংলা সাহিত্য ও চলচ্চিত্র অঙ্গনে এক শূন্যতার সৃষ্টি হয়।





ও কারিগর, দয়ার সাগর,
ওগো দয়াময়!
চাঁদনী পসর রাইতে যেন,
আমার মরণ হয় !


কথাঃ হুমায়ূন আহমেদ || কণ্ঠঃ এস. আই. টুটুল






▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
≡ ≡  তথ্যসূত্যঃ আন্তঃজালিকা হতে সংগ্রহীত ≡ 
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬

সোমবার, জুলাই ১৮, ২০১৬

শক্তিশালী কিছু স্থিরচিত্র

কথায় আছে, একটা ছবি হাজার হাজার লাইনের গল্প থেকেও বেশি কথা বলে। হাজারও আত্মা একাত্মায় রূপান্তরিত করতে পারে। গল্পের ভেতরের কথা আরও জীবন্ত-রূপে উপস্থাপন করতে পারে।

আজকের পোষ্টটি ঐরকম কিছু ছবি নিয়েই সাজানো।



  • ১৯৬৭ সালে ১৭ বছর বয়সী জান রোজ কাশ্মীর যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভে সৈন্যদের ফুল উপহার দেয়।



  • দুর্নীতি ও পুলিশের নৃশংসতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সময় ব্রাজিলের এক বিক্ষোভকারী বন্দুকের গুলির সামনে দাড়িয়ে যায়।




  • অতিবৃষ্টির ফলে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতিতে ফিলিপাইনে বসবাসকারী এক ছেলে তার কুকুরকে কাঁধে নিয়ে নিরাপদ অবস্থানের জন্যে ছুটছে।




  • কোরিয়ার অস্থায়ী পরিবার পুনর্মিলন অনুষ্ঠানের পর উত্তর কোরিয়ায় বাসিন্দা এক ভাই তার দক্ষিণ কোরিয়ায় বসবাসকারী ভাইকে বিদায় জানাচ্ছে।




  • সন্ন্যাসী এক বাঘের সাথে তার খাবার ভাগ করে নিচ্ছে।




  • ১৯৩৬ সালে গৃহযুদ্ধের সময় একজন সাংবাদিক এক শিশুকে উদ্ধার করতে দৌড়চ্ছেন। 




  • মৃত্যু শিবির থেকে মুক্তি পাবার পর এক রুয়ান্ডান ছেলের মুখে নির্যাতনের চিহ্ন।




  • ছোট্ট বালক তার বাঁশি বাজিয়ে বিড়ালের মনোযোগ ধরে রাখায় চেষ্টায় ব্যস্ত সময় পার করছে।




  • ক্যারোলিন জোয়ান পেক্সোটো, সিটি আর্টস এর ক্লাসিকাল ব্যালে শিক্ষার্থীদের স্থিরচিত্র। এই স্কুলটি কিগালি সম্প্রদায়কে গণহত্যার বিরুদ্ধে আশা সঞ্চারণ করতে কাজ করেছিল।




  • ক্যাপ্টেন ডোনাল্ড স্পিন্ডার ইন্ডিয়ানা অগ্নিকান্ড থেকে ৬ বছর বয়সী আলিয়া ফ্রেজিয়ার নামের এই শিশুকে উদ্ধার করেন।




  • লক্ষাধিক ভিক্ষু একটি উন্নত বিশ্বের জন্যে সমবেত প্রার্থনা করছেন।




  • ৩ বছর বয়সী এক শিশু তার কৃষ্ণাকার চাচাত ভাইয়ের সাথে ঘুমোচ্ছে।




  • এক আইরিশ যুবক উত্তর আয়ারল্যান্ডের অস্থিরতার সময় ব্রিটিশ সৈন্যদের বিরুদ্ধে চিৎকার করে প্রতিবাদ জানাচ্ছে।




  • ১৯৮৭ সালে ডঃ রেলিজা দীর্ঘ ২৩ ঘণ্টা সময় ব্যয়ে একটি সফল হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট অপারেশন করেন। অপারেশনের পর রোগীকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষণের জন্যে অপেক্ষা করছেন, ছবিতে দেখা যাচ্ছে অপারেশন থিয়েটারের এক কোনায় তার সহকারী ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছে।


ঐ অপারেশন শুধুমাত্র সফলই হয়নি, বরং ঐ রোগী ডঃ রেলিজা থেকেও বেশি সময় বেঁচে ছিলেন।



  • অনাহারী আর পরিপুষ্ট




  • অ্যাশউইচ (Auschwitz) গ্যাস চেম্বারের ভেতরকার চিত্র।




  • এক কৌতূহলী আফগান মেয়ে একজন আমেরিকান সৈনিকের হাত ধরে আছে।




  • ১৯৯২ সালে KKK গ্রুপের অনুসারীর এক শিশু আফ্রিকান-আমেরিকান পুলিশের ঢালে নিজের প্রতিফলন স্পর্শ করে দেখছে।




  • ১৯৯৪ সালে রাশিয়ান একজন সৈন্য চেচনিয়ায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা এক পিয়ানো বাজাচ্ছেন।




  • বেহালাবাদক ন্যান্সি ডিনোভো, ক্রন্দনরত অবস্থায় কেন্দ্রীয় ক্যাথিড্রালিক চার্চে সেপ্টেম্বর ১১'র নিহতদের স্মরণে বেহালা বাজাচ্ছিলেন।



  • দিয়েগো ফ্রাজা র্টোকিটো (Diego Frazão Torquato) নামের এই ১২ বছরের বালক তার শিক্ষকের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় বেহালা বাজিয়ে শোক প্রকাশ করছিল। তার এই শিক্ষকই তাকে সংগীতের মাধ্যমে দারিদ্র্যতার আর সহিংসতার পথ থেকে রক্ষা করেছিল। 




  • দীর্ঘ সাত মাস ইরাকে তার কাজের শেষে দেশে ফিরে মেয়েকে আলিঙ্গন করে কেঁদে ফেলে এই মার্কিন সৈন্য।




  • একজন ব্যক্তি ৯/১১-এ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দুর্যোগ থেকে বাঁচার জন্যে লাফ দেয়।




  • সহিংসতার বিরুদ্ধে ফুলের শক্তি।




  • ২০১১'র মার্চে এক মহিলা ভূমিকম্প এবং সুনামিতে তার সর্বস্ব হারিয়ে ধ্বংসাবশেষে বসে বিলাপ করছে।




  • ভারতের কাতাক শহরে ২০১১ তে ব্যাপক বন্যা-পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে একজন লোককে কিছু বিড়াল একটি ঝুড়িতে তার মাথায় নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দেখা যায়।




  • পেশোয়ারের এক গাড়ি বোমা হামলার পর পাকিস্তানি এক লোক একটি শিশুকে নিয়ে দৌড়ে নিরাপদ অবস্থান আসেন।




  • পিতা ও পুত্র (১৯৪৯ বনাম ২০০৯)




  • ভাইয়ের খুন হবার খবর শোনার পর অপর সহোদর।




  • ২০০৯ সালে অস্ট্রেলিয়ান একজন দমকলকর্মী উদ্ধারকাজের এক ফাঁকে একটি কোয়ালাকে নিজের পানি খেতে দেয়।






════════════════════════════════════
চিত্র এবং তথ্যসূত্রঃ আন্তঃজালিকা হতে সংগ্রহীত