আত্মকথন লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
আত্মকথন লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

বুধবার, মার্চ ০৬, ২০১৯

প্রণয়িনী, কিছু অনুভূতি তোমার জন্য...



কিছু রাত বিভীষিকার ভয়ে জোৎস্নায় নিজেকে ভাসিয়ে দেয় না,
কিছু মেঘ উন্মাদনার ভয়ে অঝোরে বর্ষণ ঝড়িয়ে যায় না।
কিছু বাতাস লাগাম হারাবার ভয়ে ঝড়ো বেগে বয়ে যায় না,
কিছু তারা অনিষ্টের ভয়ে আপন আলোয় দিশা দেখায় না।

কিছু উত্তাপ পুড়ে যাবার তিব্রতায় আপন গণ্ডি অতিক্রম করে না,
কিছু ধোঁয়া অহেতুক অন্ধকারে তোমার দুনিয়া ভাসিয়ে দেয় না।
কিছু জলোচ্ছাস আঙ্গীনা ভাসিয়ে দেবার ভয়ে সমুদ্র ছেড়ে ডাঙ্গায় চড়ে না,
কিছু বর্জপাত আতঙ্ক ছড়াবার ভয়ে মেঘের আড়াল ছেড়ে দৃশ্যমান হয় না।

কিছু ফুল হিংস্রতার ভয়ে কলি ছাড়িয়ে ফুটে উঠে না,
কিছু সুবাস তীব্রতার ভয়ে নিজেকে ছড়িয়ে বিলীন হয় না।
কিছু মায়া কাঁদাবে বলে কখনো নিজেকে প্রকাশ করে না,
কিছু মমতা আকড়ে ধরার ভয়ে আপন শাখা মেলে ধরে না।

কিছু শব্দ কলঙ্কতার ভয়ে জনসম্মুখে উচ্চারিত হয় না,
কিছু ছন্দ সময়ের উন্মত্ততার ভয়ে শব্দরূপে সামনে আসে না।
কিছু সুর কাতরতার মাত্রা ছাড়াবে বলে বাদ্য রূপে বেজে উঠে না,
কিছু গান অশ্রুশিক্ত করার ভয়ে কারো গলায় ধরা দেয় না।


প্রণয়িনী,
তেমনি করে তোমার অনুযোগের ভয়ে আপন অনুভূতির প্রকাশ করি না...



ছবিঃ অরুন শিবপ্রসাদ (মূল), ঘষামাজায় অধম

বুধবার, জুলাই ০৮, ২০১৫

আত্মকথন - ০৮ জুলাই'১৫

কাছের বন্ধুর সংখ্যা বরাবরই কম ছিল। হাতের কড় গুনলে দুই আঙ্গুলের মাঝেই কাজ হয়ে যাবে এমন অবস্থা। আর সেই হাতের কড়ে গুনে ফেলা বন্ধুদের সাথে সময় আমাকে বরাবরই দূরত্ব এনে দিয়েছে। নিবিড় ঘনিষ্ঠতা আমি কারও সাথেই ধরে রাখতে পারি নি। তবুও এই বন্ধুরা হাল ছেড়ে দেয়নি কখনো। বলতে গেলে, তাদের আগ্রহের কারণেই তাদের সাথে এখনো  আমার 'বন্ধুত্ব'টা টিকে আছে।

এইসব বন্ধুদের মাঝে একজন প্রায় কথার প্রসঙ্গে এভাবে বলত-
"তুমি এভাবে কিভাবে পারো? তোমার অবস্থানে আমি থাকলে প্রতিটা প্রয়োজন যেভাবেই হোক আদায় করে ছাড়তাম। আর তুমি শুধু চিন্তাই কর, ছাড় দিতে থাকো.."

তার এই ডায়লগ বা কথাটা কখনোই ঐরকম করে চিন্তা করি নি। আসলে একত্রে থাকার সময় তার এমন অনেক কথাতেই আমি মজা পেতাম, এটাও তার মধ্যে একটা ছিল। কিন্তু ধারণা পাল্টাতে বাধ্য করলো কোন একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা।

আমি যতটা জানি, কিংবা আমার যতটুকু মনে আছে তাতে 'ছেলেটিকে' তার পরিবার সবচেয়ে বেশি আদর করতো বলেই জানতাম। আরও একটু ভালো করে বলতে গেলে বাকিদের তুলনায় তার আদর সবসময়ই সবার কাছে আলাদা ছিল। তার চাহিদা একটু ভিন্ন ভাবে হলেও বরাবরই পূরণ করার চেষ্টা করেছে তার পরিবার।

ঘটনা প্রসঙ্গে সেই "ছেলে"-ই যখন তার পরিবারকে উদ্দেশ্য করে বলে-
"আপনাদের দেখে মনে হয় আমি আপনাদের কাছে বোঝা হয়ে গিয়েছি" তখন নিজের সাথে তুলনা করে বন্ধুর বলা কথা গুলিকেই সত্যি মনে হয়। মনে হয় সত্যিই নিজের ইচ্ছের চাইতে পরিবেশ, পরিস্থিতি আর সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তির অবস্থা বুঝে নিজের প্রয়োজন চিন্তা করাটাই জীবনের সবচেয়ে বড় বোকামি হয়ে গেছে.....



সোমবার, জুন ০৯, ২০১৪

ইরেজার থেকে আত্ম উপলব্ধি


ছোটবেলা চাচার সাথে লাইব্রেরি স্ট্যাশনারি থেকে খাতা, পেন্সিল, ইরেজার, সার্পনার এই সব কিনতে যেতাম (পড়ালেখার দেখভালের সকল দায়িত্ব ছিল এই কাকার উপর)। ঐ সময় সাধারণ মানের HB পেন্সিলের দাম ছিল ৪ টাকা। আর ইরেজার ছিল দুই ধরণের। একটার দাম ছিল ৩ টাকা আর অন্যটার দাম ছিল ৫ টাকা।

দুইটাই কিন্তু ইরেজার, তবুও দামের তফাতের কারণটা বুঝতাম না। কাকা অবশ্য আমার জন্যে ৫ টাকা দামের ইরেজারটাই সবসময় কিনত। আমি তার কাছে একবারদোকানে গিয়ে জিজ্ঞাস করলাম- "যদি একই জিনিষ কম দামে পাওয়া যায় তাহলে কেন আমরা বেশি দামের টা নেই?" কাকা হুট করে কোন জবাব দেয়নি, প্রশ্নটা শুনে সুন্দর করে হেসেছিল শুধু। তারপর দোকানিকে একটা ৩ টাকার ইরেজার আরেকটা ৫ টাকার ইরেজার দিতে বলল। আর দুইটাই কিনে নিয়ে আসল।

এইবার আমাকে ব্যবহার করার জন্যে ঐ ৩ টাকার ইরেজারটা দিল। লেখা ভুল হবার পর যখন ইরেজার দিয়ে লেখার উপর ঘষলাম তখন দেখলাম এই ইরেজারটা আগে ব্যবহৃত ইরেজার থেকে অনেকটা ভিন্ন, যদিও দেখতে প্রায় একই রকম। এটি আগে ব্যবহৃত ইরেজারটা থেকে অনেকটা শক্ত আর যখন লেখার উপর ঘষছি তখন আগের ইরেজারটার মত খুব সহজেই দাগ মুছতে পারছে না। উপরন্তু যতটুকু জায়গায় ঘষছি ততটুকু জায়গা কেমন কালো হয়ে যাচ্ছে। আর বার বার ঘসার ফলে লেখা কাগজটা ছিঁড়ে যাবার মত অবস্থায় গিয়ে পৌঁছেছে।

এরপর কাকা ৩ টাকার ইরেজারটা নিয়ে সেই ৫ টাকার ইরেজারটা আবার দিলেন। ইরেজারটা ধরার সাথে সাথেই বুঝলাম এটা কতটা নরম। আর এখন প্রয়োজনের সময় ইরেজার ব্যবহার করতে আর বেগও পেতে হচ্ছে না। খুব সহজেই ভুল গুলি মুছে ফেলতে পারছি। খাতার পৃষ্ঠারও কোন ক্ষতি হচ্ছে না, যেখানে মোছার জন্যে ঘষা দিয়েছিলাম ঐ স্থানেও কোন কালো দাগ থাকছে না।

আমার সেই প্রশ্নের উত্তরটা কাকা মুখে মুখে না দিয়ে একেবারে আমাকে দিয়েই অনুধাবন করিয়ে ছিলেন।

এর অনেকদিন পর আরেকটা ব্যাপার ঐ ছোট্ট ঘটনা থেকে বুঝতে পেরেছিলাম।
জীবনে চলতে গিয়ে অনেক ভাবেই অনেক স্থানে আমরা ভুল করে ফেলি। আর সেই ভুল গুলি অনেক সময় মোচন করেই তারপর সামনে এগুতে হয়। যখন আমরা ভুল গুলিকে সাধারণ ভাবে কম গুরুত্ব দিয়ে উপলব্ধি করার চেষ্টা করি তখন কিন্তু অবস্থাটা ঐ ৩ টাকার ইরেজারের মতই হয়। ভুলটা আদতে মোচন হয় না, কিন্তু জটিলতা আরও বাড়িয়ে দেয়।

কিন্তু যদি ভুলটার সত্যিকারের মর্ম বুঝতে পারি আর সেটাকে ততটুকুই গুরুত্ব দিয়ে উপলব্ধি করতে পারি তখন সেটা মোচন করাও অনেকটা সহজ হয়, আর পরিপার্শ্বিক ক্ষতিরও কোন সম্ভাবনা থাকে না। উল্টো ভুল না করে কিভাবে এরপর এগুতে হবে সেই ব্যাপারেও নিজের বিবেক অনেকটা সচেষ্ট হয়ে যায়।

মূল ব্যাপারটা হল আত্ম উপলব্ধি। কোনটা ৩ টাকার ইরেজারের মত আর কোনটা ৫ টাকার ইরেজারের সমমানের সেটা নির্ণয় করে তারপর কাজ করতে হবে....








বৃহস্পতিবার, মে ১৫, ২০১৪

আমার মা, আমার সবকিছু.....



স্নায়ু-চাপের খুব বড় ধরণের একটা অসুস্থতা দেখা দিয়েছিল একবার। তখন আমি সবে মাত্র প্রাইমারি থেকে হাই স্কুলে উঠেছি। সময়টাও বার্ষিক পরীক্ষার আগ দিয়ে। না স্নায়ু-চাপের কারণ পড়ালেখা কিংবা পরীক্ষার জন্যে নয়। কারণটা আমার পিতৃতুল্য কাউকে হারানো। খুব মনে আছে, আমি পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে খুব কষ্টে ঘাড়ের ব্যথা সহ্য করে বাড়ির সামনে পর্যন্ত পৌঁছেই "আম্মা" বলে চিৎকার দিয়েই জ্ঞানহারিয়েছিলাম। এরপর প্রায় ঘণ্টা ৩ আমার কোন ধরণের স্মৃতি নেই। ঘণ্টা তিন পর নিজেকে ঘরের খাটে আর আমার চারপাশ জুড়ে পুরো ঘর কানায় কানায় ভরা আত্মীয়-স্বজন আর পাড়া-প্রতিবেশী সমেত আবিষ্কার করি।

এর মধ্যেই আব্বা ঢাকা থেকে ডাক্তার ডেকে নিয়ে এসেছেন (ঐ সময় মোবাইল ফোন ছিল না, আর যোগাযোগ একমাত্র ল্যান্ডফোন দিয়ে করতে হতো। সেটাও তখন আমাদের নেই। বাজারে থেকেই ঢাকায় অবস্থিত স্বল্পপরিচিত এক চাচাকে ফোন করে তাকে ডাক্তার নিয়ে আসার অনুরোধ করেন আব্বা)। ডাক্তার আমার পালস কিছুক্ষণ পরপর চেক করছে আর ফ্যাকাসে মুখ করে বার বার ঘড়ি দেখছে। জেগে উঠার মিনিট ১০ পার হবার আগেই আবার ব্যথা শুরু হয়, আর প্রায় সাথে সাথেই জ্ঞান হারাই ২য় বারের জন্যে। এর পর জ্ঞান ফিরে অনেক পরে, প্রায় এশার আজান হয়ে যাবার পর। এই সময়ের মাঝে ভিটামিন আর বিভিন্ন ঔষধ সহকারে স্যালাইন দেয়া হয় আমাকে। ঐদিন রাতে আর কোন সমস্যা হয়নি, সে যাত্রায় এতটুকুতেই পার পেয়েছিলাম।

এবার আম্মার কথায় আসি। আমি যখন দুপুরে "আম্মা" বলে চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে রাস্তার উপরই পড়ে যাই তখন বাড়িতে আম্মা আর দাদী ছাড়া কেউ ছিল না। চিৎকার শুনে আম্মাই দৌড়ে বেরিয়ে আসে আর রাস্তা থেকে ঘরে নিয়ে যায়। কেউ একজন আব্বাকে খবর দিতে বাজারে যায় আর আব্বা তখনই ডাক্তার আনার জন্যে চাচাকে ফোন করে বাসায় ফিরে আসে। ততক্ষণে আম্মা আমার মাথায় বালতি কয়েক পানি ঢেলে একাকার করে ফেলেছেন (ঐ সময় চাপকল দিয়ে পানি তুলে ব্যবহার করতে হতো)। তারপর তার কোলে আমার মাথা রেখে সেই যে বসেছেন তারপর একেবারে পরদিন সকালে আমার ঘুম ভাঙ্গার পর সেই বসা থেকে উঠেছেন।

এরপর কি করেছেন তার ছোট করে বলতে গেলেও অনেক বড় হয়ে যাবে। শুধু এতটুকু বলি, আম্মা এখনো যদি ভাত মাখিয়ে না দেয় তবে খেতে পারি না। এমন তো কিছু না সেই একই রান্না তবুও আম্মা যদি ভাত মাখিয়ে না দেয় তবে তা খেয়ে ঐ স্বাদ পাই না যেটা আম্মা মেখে দিলে পাই।

এখনো বাইরে কোথাও গেলে গড়ে ঘণ্টা খানিকের ভেতরে আম্মা একবার ফোন করেই। আর সেটা রিসিভ না করতে পারলে বাসায় আসলে ঝাড়ি এখনো শুনতে হয়। প্রতিটা প্রয়োজনের জিনিষ এখনো আম্মার কাছেই আবদার করি আর আম্মাও ছোটবেলার মত এখনো সেগুলি পূরণ করার যথাসাধ্য চেষ্টা করে। আমি সাধারণত কারো সাথে তর্ক করতে পারি না। তাই মাঝে মাঝে রাগ করে খাওয়া-দাওয়া কথা-বার্তা বন্ধ করে দেই। কিন্তু সেখানেও আম্মা হাজির। রাগটা যদি তার সাথেও করি বকা দিয়ে হোক আর রাগ ভাঙ্গানোর কথা দিয়েই হোক, আম্মাই সেটা করে।

জানিনা তার ত্যাগ আর ভালোবাসার ঋণী হয়ে কতটুকু কি করতে পারবো তার জন্যে, তবুও প্রার্থনা আল্লাহ যেন আমার দ্বারা কখনো তার মনে কোন কষ্ট না দেয়।
ভালো থাকুক আম্মা'রা, ভালোবাসায় থাকুক তাদের সন্তানেরা......


══════════════════════════

মা'য়ের সম্মান রক্ষার্থে কিছু পরিশ্রমী ছেলে-মেয়ে অনলাইনে কাজ করছে। তাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য জনপ্রিয় সার্চ-ইঞ্জিন গুলি থেকে পবিত্র "মা" শব্দটি নিয়ে নোংরামি গুলি দূর করা। সেই উদ্দেশ্যে তারা একটি ইভেন্ট খুলেছে। কিন্তু শুধু দূর করলেই তো আর দূর হবে না। আমাদের সেই খালি স্থান নিজেদের ভালো ভালো লেখা দিয়ে ভরাট করতে হবে। কত বিষয় নিয়েই তো প্রতিদিন কত-শত কিছু লিখি। মা'কে নিয়েও না হয় লিখলাম নিজেদের মত করে। তাতে মা'য়ের সম্মান ও কিছুটা রক্ষা করা হবে আর নিজের কাছে মা'য়ের মূল্যবোধও পরিষ্কার হবে।

ইভেন্ট লিংক__: http://goo.gl/YdXtEr
পেইজ লিংক__: https://www.facebook.com/ma.valobasi
ব্লগ লিংক_____: http://www.mayermomota.blogspot.com/

ইভেন্টে মা'কে নিয়ে লেখা গুলি পোষ্ট করলে তারা পেইজ আর ব্লগে তা পোষ্ট করবে আপনার নামেই। চলুন না দেখি ভালো কিছু করা যায় কিনা একসাথে....