বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২২

প্রণয়িনী, তোমায় ঘিরে আমার ভাবনা...

প্রণয়িনী,

এই যে এত বিশাল মহাবিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড, এর মাঝ থেকে যদি কোন কেন্দ্র তৈরী হয় কেবলই আমার জন্যে; তবে সেই কেন্দ্র হচ্ছ তুমি। এই মহাবিশ্বের যে কোণেই আমাকে ছেড়ে দেয়া হোক না কেন, ফের তোমার পানে ফিরে আসবার তাগিদে ছুটে চলবো গ্রহ থেকে গ্রহান্তর। আর সেই যাত্রার বিরতি হবে শুধুমাত্র তোমার মনের আঙ্গিনায়। 

আমি জানি, এই সবই অতিরঞ্জন মনের কল্পনা। বাস্তবতার চাকা যখন তপ্ত মরুর পথ ধরে চলতে শুরু করে, তখন এই আবেগ অনেকটাই উবে যায় স্বেদ-বাষ্পে। কিন্তু তবুও যখন কোন মরুদ্যানের ছায়াতলে শীতল হয় মন, তখন সে শুধু তোমাকেই কল্পনা করে; তোমার কথাই ভাবে। রোদের তাপে তপ্ত এ শরীর যেমনি শীতল পানি পানের সময় তার বয়ে চলা অনুভব করতে পারে; একই ভাবে এই অতৃপ্ত লোভী হৃদয় তোমার কিছুমাত্র স্পর্শ পেলে পুরো অনুভূতি জুড়ে তোমার আনাগোনা অনুভব করে।

ভালোবাসা নামের অনুভূতিটা যবে থেকে বুঝতে শিখেছি, সেই তখন থেকেই আমি বুঝি, 'ভালোবাসা'র মানে হচ্ছো 'তুমি'। বিশাল এক সময় সমুদ্র পার করে যখন তোমার হাতটি ধরেছিলাম, তখনই বুঝেছিলাম 'ভালোবাসা'র বীজটির অঙ্কুরোদগম শুরু হয়ে গেছে। তারপর ঠিক বুঝে উঠবার আগেই সেটি বীজ থেকে চারা, আর চারা থেকে মহীরুহে রূপ নিয়েছে। তবুও নিজেকে ঢাল বানিয়ে আমি কিছু কাল সেই মহীরুহ ঢেকে রাখবার চেষ্টা করে গিয়েছিলাম। কিন্তু হৃদয় আঙ্গিনায় তোমার আনাগোনায় যে হিম বাতাস বয়ে চলতো, তাতেই ভেঙ্গে গুড়িয়ে পড়েছিল আমার ঢাল। ভাঙ্গা ঢাল পেরিয়ে সেই মহীরুহ ধীরে ধীরে আমাকেই ঢেকে দিয়েছে তার মায়া মেশানো ভালোবাসার ছায়ায়। আমি দেখেছি, মহীরুহের প্রতিটি পাতায় তোমার নাম, তোমার স্পর্শ, তোমার উপস্থিতি। এরপর আমি আর কোনদিন সেই মহীরুহের ছায়াতল থেকে বের হয়ে আসার চেষ্টা করি নি। হয়তো ক্ষনিকের জন্যে অভিমানে মহীরুহ পেরিয়ে সামনে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রেখেছিলাম। কিন্তু তোমাকে ঘীরে ছায়ার মায়া আবারও আমাকে সেই মহীরুহের দিকেই ফিরিয়ে নিয়েছে। 

কেউ একজন বলেছিল, ভালোবাসা দিনে দিনে ভাগ হয়। আজ যাকে ভালোবাসো, যাকে ছাড়া ভালোবাসা শব্দটাই অচল মনে হয়, চিন্তায় চেতনায় শুধুমাত্র যার অনুভূতিই আজ তুমি অনুভব কর; কাল সেখানে অন্য কেউ আসবে, তোমার সমস্ত অনুভূতি সে চুরি করে মনোযোগ আকর্ষনী মুকুটটা মাথায় দিয়ে তোমার হৃদয় সিংহাসনটা দখল করে নিবে। সে মুহুর্তে কথাটির সত্যতা নিয়ে সন্দেহ করলেও, আজ আমি জানি; কথাটা মোটেই মিথ্যে নয়। শূন্য থেকে তিলে তিলে নিজের মধ্যে ধারণ করে, সুদীর্ঘ ক্লিষ্ট পথটি পাড়ি দিয়ে যে উপহারটি তুমি আমার জন্যে নিয়ে এসেছ; সেটি এসেই আমার হৃদয় সিংহাসনটি দখল করেছে, কেড়ে নিয়ে মাথায় দিয়েছে হৃদয় আকর্ষনী মুকুটখানি। হ্যাঁ, আমি সেই উপহারটিও ভালোবাসি। নিজের চেয়ে অধিক নয়, বরং নিজের সমান ভালোবাসি। কিন্তু যার নামে পুরো রাজ্য গড়ে উঠেছে। যে রাজ্যের প্রতিটি নিশানায়, প্রতিটি পতাকায় কেবল তোমার নাম লেখা। সেখানে কেউ মুকুট মাথায় দিলেই ভালোবাসার পূর্ণ দাবিদার হয়ে উঠে না। বরং তার জন্যে ভালোবাসার নতুন হালখাতা তৈরি হয়, তৈরি হয় উপরাজ্য। তোমার জন্যে যে হৃদয় ব্যাকুল করা ভালোবাসা, সেটি ঠিক আগের মতই আছে। অধিকন্তু দিনকে দিন তা ফুলে ফেপে হৃদয় আঙ্গিনা ভরিয়ে তুলছে।

দিনকে দিন কত শত রূপে যে আমি তোমাকে আবিস্কার করেছি, তা কেবল আমিই জানি। আলসে তোমাকে আবিস্কার করেছি,  যে সারাটি দিন বিছানায় নিজেকে বন্দী করে নেয়। আবার কর্মঠ কর্মী রূপেও তোমাকে দেখেছি, যে ভোর হতে গভীর রাত পর্যন্ত নিজেকে বিলিয়ে দেয়। বিরক্ত তোমাকে দেখেছি, যে সবকিছু ছুড়ে ফেলে ভেঙ্গে ফেলতে চায়। আবার মায়াময় তোমাকেই আবিস্কার করেছি, যে সবকিছু আগলে নিয়ে মুঠিতে জমায়। দেখেছি মায়াময় জননী রূপে, দেখেছি সেবিকায়, দেখেছি সুনাম প্রতিষ্ঠায়। দেখেছি অন্যায়ের বিরুদ্ধে তেজস্বী তোমার প্রতিবাদী রূপ, আবার তার বিপরীতে দেখেছি কারো কোন ছোট অন্যায় নিজের ভালোবাসার চাদর দিয়ে ঢেকে দিতে। বিশ্বাস কর, তোমার তোমার এই প্রতিটি রূপকেই আমি আমার মত করে ভালোবেসেছি।

তোমাকে হারাবার যে ভয় শুরু থেকে ছিলো; জানো কি, আমি আজও সেই ভয় কাটিয়ে উঠতে পারি নি। আজও মনে হয় কোন এক দমকা হাওয়াতে আমি তোমায় হারিয়ে ফেলব। প্রায়ই মনে হয়, নিঝুম রাতটি শেষ করে যে ভোরটি নতুন দিন নিয়ে আসবে; সেই দিনটিতে তুমি হারিয়ে যাবে। যে বাগান ভর ফুলেল ঘ্রাণে আমি বিমোহিত হয়ে থাকি, সেই বাগান শুদ্ধ তুমি হারিয়ে যাবে। পড়ে থাকবে কেবল উদ্যান, আর পড়ে থাকব কেবল এই একলা আমি। আমি এই ভয়টা কোন ভাবেই কাটিয়ে উঠতে পারি না। তবুও ভোর হলে যখন তোমাকে দেখতে পাই, তবুও দমকা হাওয়ার তোড় কমলে যখন শক্ত মুঠিতে তোমাকে পাই, তবুও চোখ বুজে ফুলেল ঘ্রানে ফুসফুস পূর্ণ করে যখন চোখ মেলে দেখি তুমি এখনো রয়েছ দৃষ্টির সীমানায়। কেবল তখনই মনকে সান্তনা দেই এই বলে, "আজ নয়, আজ আর হারাবে না তুমি"।

আমার এই অর্থহীন আবেগী শব্দের স্রোত তোমাকে কতটুকু স্পর্শ করবে, তা আমি জানি না। জানি না বাক্যের এই মালা আদৌ তোমার মনকে গলাতে পারবে কি না। তবে আমি জানি, এইসব বর্ণের বাইরেও যে ভালোবাসা আছে তা আমার হৃদয়ে অনন্তকাল ধরেই থাকবে। সময়ের গর্ভে আমি বিলিন হবার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত তোমাকে নিয়ে এইসব অনুভূতি আমি ধারন করে যাবো। আর আমি বিশ্বাস রাখি, এই নশ্বর জগত পার করে যে অনন্ত জগতে গিয়ে পৌছবো, সেখানেও আমি তোমারই অপেক্ষা করবো, তোমাকেই চাইবো। প্রার্থনা থাকবে সমস্ত ইচ্ছে পূরণকারী সেই মহান স্বত্তা যেন আমার এই চাওয়াকে পূর্ণতা দেন। এই জগতের সকল ভালোবাসার অপূর্ণতা তিনি যেন ঐ জগতে পরিপূর্ণরূপে পূরন করে দেন। 



ইতি
তুমিহীন অপূর্ণ যুবক

ছবিঃ kellerdoll ( মূল ), ractapopulous ( মূল ), ঘষামাজা ( !?! )

বৃহস্পতিবার, মার্চ ১৭, ২০২২

উবুন্তুর নতুন লোগো আর আমার ভাবনা

উবুন্তুর জন্যে নতুন লোগো তৈরি ও পাবলিশ করেছে ক্যানোনিকাল। উবুন্তুর ব্লগ পোস্ট আর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেল দুটোতেই নতুন লোগোটি প্রকাশ করা হয়েছে। 


উবুন্টুর সাথে পরিচয় হয় ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের কোন এক দিনে। যদিও সরাসরি উবুন্তু হিসেবে তার সাথে পরিচয় হয় নি, কিন্তু তখনই প্রথম আমি উবুন্তুর সাক্ষাত পাই। সেই সময়টাতে তিন রঙের তিনটি মানুষ হাত ধরে বৃত্ত হয়ে আছে এই ব্যাপারটি বুঝতে পেরে বেশ অনেকটা অবিভূত হয়েছিলাম। বিশ্ব জুড়ে হাজার রঙের মানুষ 'ভাতৃত্ববোধ' এর বন্ধনে একত্রিত হয়েছে একটি আইডিয়াকে উদ্দেশ্য করে —এই ব্যাপারটি যেন সেই লোগোটিতে স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছিলো। 

Image courtesy: OMG! Ubuntu

তারপর উবুন্ত নতুন রূপে লোগোটা নিয়ে আসলো। এবারে একটি বৃত্তে সেই তিনজন আছে ঠিকই, কিন্তু তারা সবাই একটি নির্দিষ্ট একটি রঙের অধিকারী। গোল বৃত্তটিকে যদি ধরনীর সাথে তুলনা করি তাহলে এই তিনটি সাদা আকৃতিকে মানুষের সিম্বল বুঝে নিলাম, আরও বুঝলাম তারা একই পরিচয়ে পরিচিত শুধুমাত্র মানুষ বা Human Being। তাদের মাঝে নেই কোন ভেদাভে; নেই বর্ণ, নেই গোত্র, নেই ভৌগলিক বেরিয়ার কিংবা নেই কোন মতের বিরোধ। তারা সকলে একই লক্ষে, একই উদ্দেশ্য পূরণে হাতে হাত রেখে কাজ করে যাচ্ছে। অন্তত আমি এমনটিই বুঝে নিয়েছিলাম।

গতকাল নতুন করে যে লোগোটি প্রকাশিত হলো তাতে দেখা যাচ্ছে তিনটি মানুষ সদৃশ্য আকৃতির হাতে হাত ধরে থাকার ব্যাপারটির মাঝে নেই কোন ফাঁকা স্থান। বরং সেই ফাঁকা স্থানটি অবস্থান নিয়েছে মানুষ সদৃশ্য আকৃতিটির ঠিক মস্তক বরাবরে!

নতুন লোগোটি দেখেই প্রথমে আমার যেই কথাটি মনে হয়েছে সেটি হলো- আরে! এটা দেখি এন্ড্রয়েড ফোনে ব্যবহৃত SHAREit এ্যাপের লোগো!



আরও কিছু পরিবর্তন রয়েছে মূল লোগোটিতে। পূর্বের লোগো গুলিতে ubuntu লেখাটি সবসময় লোয়ার কেস লেটারে বা ছোট হাতের অক্ষরে লেখা হতো। লোগোটির নতুন সংস্করনে ubuntu লেখাটির U বর্ণটি আপার কেস বা বড় হাতের বর্ণ ব্যবহার করা হয়েছে। এই ব্যপারটিও দারুণ ভাবে লক্ষণীয় একটা ব্যাপার। লোয়ার ক্লাস লেটার হিসেবে সকল বর্ণ ছিলো বলে ধরে নিতাম উবুন্তুর কাছে সবাই সমান। আর এইবারে U বর্ণটি আপার কেস হওয়ায় মনে হচ্ছে এটি যেন এর ডিমান্ডিং একটা পজিশন বোঝাতে, সবার থেকে নিজেকে আলাদা করতে, সবার মাঝে নিজের অবস্থানের উচ্চতার ভিন্নতা বোঝাতেই এমন করা হয়েছে।

এর বাইরে উবুন্তুর লোগোটি এইবার গোলাকার বৃত্ত ছেড়ে আয়তাকার ফ্রেমে যুক্ত হয়েছে। সেটিও ঠিক মাঝ বরাবর না হয়ে একটা নির্দিষ্ট অংশের দিকে মূল আকৃতিটি অবস্থান নিয়েছে।

সবশেষে উবুন্তুর মূল ফিলোসফি হিসেবে যে কথাটি আমার দারুণ পছন্দের ছিলো- "I am because we are", এই ব্যাপারটি দারুণ ভাবে অনুপস্থিত মনে হয়েছে। হয়তো ক্যানোনিকাল সামনের দিনে উবুন্তুর নতুন লোগোটির পজিটিভ দিক গুলি আমাদের সামনে তুলে ধরবে। হয়তো তখন নতুন করে উবুন্তুর নতুন এই লোগোটির অর্থ আমার বোধগম্য হবে। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে প্রথম দেখায় উবুন্তুর লোগোটি দেখে আমার নিজের যা মনে হয়েছে, তা-ই এখানে তুলে ধরলাম।