পাঠ প্রতিক্রিয়া‬ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
পাঠ প্রতিক্রিয়া‬ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

সোমবার, এপ্রিল ১৭, ২০১৭

পাঠ প্রতিক্রিয়া - দারবিশ




অদ্ভুত এক বইয়ের নাম 'দারবিশ'। অদ্ভুত বলছি কারণ বইটির নামই আমাকে বইটি পড়ার জন্যে আগ্রহী করেছিল। তবে বই পড়বার পর যদি জিজ্ঞাস করা হয় এখনো কেন বইটিকে 'অদ্ভুত' বলছি? তার জবাবে বলতে হবে- অদ্ভুত এক জীবন দর্শন নিয়ে লেখা একটি উপন্যাস ছিল এই 'দারবিশ'। যা শুধু নাম দিয়েই নয়, বরং গল্পের ভেতরের কথা গুলি দিয়ে তার জায়গা তৈরি করেছে।

কেমন ভাবে জীবনকে এখানে ব্যাখ্যা করেছে তার একটা ধারণা পাবার জন্যে একটু অংশ কোট করছি-

আমার এক স্কয়ার মিটারের মধ্যে যা আছে এর বাইরে কোনকিছুই আমার না। তোমার জমিন সেটুকুই যেটুকুর উপরে তুমি দাড়িয়ে বা বসে আছ। তোমার টাকা সেটুকুই যেটুকু এখন তোমার পকেটে আছে। যদিও তোমার ব্যাংকে তোমার হাজার কোটি টাকা আছে-তোমার খাদ্য সেটুকুই যেটুকু তোমার পেটে চলে গিয়েছে-যদিও তোমার টেবিল ভরা খাবার। তোমার পোশাক সেইটুকুই যা এই মুহূর্তে তুমি পরে আছ, যদিও তোমার ওয়ারড্রোব ভরা জামাকাপড়। অনেক কিছুর মালিকানা আসলে সেন্স অফ ওনারশিপ। তোমার অনেক কিছু আছে এই অনুভূতিটা বা এই স্মৃতিটা যদি কোনভাবে তোমার মাথা থেকে নাই হয়ে যায় তা হলে চিন্তা করো তো তোমার ভাগে আসলে কী থাকল?


হ্যাঁ, এমন কিছু চমৎকার দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নেশায় বুদ করে রাখবার মতই গল্প ছিল এই দারবিশের। যেখানে এক বৃদ্ধের মাঝে দিয়ে দেখা যাবে এক তরুণের উপস্থিতি আর উপস্থিতি আপনাকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসবে আমেরিকার এক
উন্মত্ত সময়ে। যেখানে যুদ্ধ বন্ধ করতে আরেক অদ্ভুত জীবনকে দেখা যাবে একদম কাছ থেকে। জানা যাবে হিপ্পিদের সংগ্রাম সম্পর্কে। বোঝা যাবে তাদের প্রতিবাদের ভাষা, আর তার প্রয়োগের প্রকাশ দিয়ে।


আরও কিছু অংশ কোট করলাম বইটি থেকে-

আদর্শের নাম দিয়ে তুমি যদি কারো স্বাধীনতা হরণ করো, কারো দেশ দখল করো, কারো সম্পদ লুট করো, তবে সেটা অবশ্যই আদর্শবাদ নয়। আদর্শ সেই শক্তির নাম যেটা দিয়ে তুমি আমার সাথে কথা বলবে, বিতর্ক করবে, আমার ভুলগুলো তোমার আদর্শিক বুদ্ধিমত্তা দিয়ে শুধরে দেবে। আর দিনশেষে আমি ভালোবেসে তোমাকে গ্রহণ করতে পারি অথবা বাতিল করে দিতে পারি। দেশ দখলের চেয়ে হৃদয় দখল করা অনেক কঠিন।


এর বাইরেও আরও তিনটি চরিত্র গল্পে রয়েছে। তাদের একজন রোদেলা। সময়ের সাহসী নারী বলতে যাকে কল্পনা করতে যায় তার একটা পরিষ্কার ছায়া দেখা যাবে এই চরিত্রটির মধ্যে। দেখা যাবে তার মনের ভেতরের অবস্থাটাকে। সে একই সময় সঞ্জু'র প্রেয়সী আর একজন কঠিন জুয়ারি। যে তার আত্মমর্যাদাকে, তার সিদ্ধান্তকে বাজিতে তুলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছে। সঞ্জু চরিত্রটির মাঝে ফুটে উঠবে আমাদের গড়পড়তা চিন্তাভাবনা আর চেতনার প্রকাশ। ক্ষণেই আবেগী আবার ক্ষণেই বদমেজাজি হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটবে তার। কিন্তু দিন শেষে ভালোবাসার সামনে ঝুঁকে যাবে নতমস্তকে। আরও আছে টুটুল, নির্লোভ আর বিশ্বাসের প্রশান্তিতে ভরপুর এক চরিত্র।

সবশেষে প্রকৃত বিশ্বাসেরই জয় হয়। যে বিশ্বাসে বিশ্বস্ত হওয়া যায় আপন বোধের সাথে, যে বিশ্বাসে নির্ভর করা যায় আপন সিদ্ধান্তের।






--------------------------------------------------
দারবিশ
লেখকঃ লতিফুল ইসলাম শিবলী
প্রকাশনিঃ নালন্দা
প্রকৃতিঃ সমকালীন উপন্যাস
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১১০
মূল্যঃ ৩০০
অনলাইন শপঃ রকমারি


ব্যক্তিগত রেটিং - ৩.৮/৫

মঙ্গলবার, জানুয়ারী ০৩, ২০১৭

পাঠ প্রতিক্রিয়া - তমিস্রা



পড়লাম লেখক জাবেদ রাসিন সাহেবের 'তমিস্রা'

ছোট বেলাতে অতি-প্রাকৃতিক কিংবা ভৌতিক গল্পগুলোতে আকর্ষণ থাকলেও একটা সময় পর সে আকর্ষণ কমে আসে। আর সেই স্থানটাতে জায়গা করে নিয়েছিল কিশোর থ্রিলার। এরপর তো একে একে সায়েন্স ফিকশন, উপন্যাস, হিমু, মিসির আলি, মাসুদ রানা সহ আরও অনেকেই চলে আসে সেখানে, আসতে থাকে অনুবাদ গল্প গুলো।

সেদিক থেকে হিসেব করলে বেশ অ....নে,,,,ক দিন পর কোন অতি-প্রাকৃতিক একটি গল্প পড়লাম। সম্ভবত থ্রিলার গল্পে পড়ার আধিক্যের কারণে হালকা ধরণের থ্রিলার লেখাগুলি এখন আর খুব একটা আকর্ষণ করে না। অতি-প্রাকৃতিক গল্প হলেও এখানে লেখক অনেক চেষ্টা করেছেন একটা থ্রিল ভাব নিয়ে আসবার জন্যে। কিন্তু তবুও কেন জানি তমিস্রা শুরু করার ২৫/২৬ পৃষ্ঠা যাবার পরপরই মূল গল্পটা জানা হয়ে যায়। ঐ সময়ই গল্পের শেষ পরিণতি কি ধরণের হতে পারে তার একটা ধারণা পেয়ে গিয়েছিলাম। এরপরেও গল্পটাকে শেষ পর্যন্ত ধৈর্য(!) সহকারে পড়ে গেছি।

গল্পটা নিঃসন্দেহে ইন্টারেস্টিং, আরও ভালো করে বলতে গেলে লেখক যেভাবে গল্পটাকে গড়ে তুলেছেন সেই অবস্থা থেকেই এর সিক্যুয়াল তৈরি করা যেতে পারে। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বার বার ইরফান আর সোহেলকে বিভিন্ন ঘটনাতে ব্যবহার করা যেতে পারে। লেখক তা করবেন কি না তা সম্পর্কে তিনিই ভালো জানেন।

গল্পের যে অংশটা ভালো লেগেছে তা হল এর সমাপ্তি। গতানুগতিক ধারায় অতি-প্রাকৃতিক রহস্য গল্প গুলিতে 'সত্যের জয়, মন্দের পরাজয়'-ধরণের একটা সমাপ্তি দেখানো হয়। সেখানে তমিস্রা'য় একই ব্যাপার একটু ভিন্ন ভাবে দেখানো হয়েছে। এখানে একই সাথে 'সত্য' এবং 'মন্দ' কে জয় এবং পরাজয়ের মাঝে আটকে রেখে গল্পের সমাপ্তি টানা হয়েছে।

গল্পের যে অংশগুলি খারাপ লেগেছে তার মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত স্মৃতি চারণ করা। গল্পে বার বার করে প্রতিটি চরিত্রের পেছনের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। আর এই ব্যাপারটা মূল গল্পের জন্যে কতটুকু সহায়ক হয়েছে তা মোটেও আমার বোধগম্য হয়নি। খারাপ লাগার আরও একটা কারণ গল্পের আকার। কেন জানি মনে হয়েছে গল্পকার ইচ্ছে করেই গল্পটাকে টেনে হিঁচড়ে ২৫৪ পৃষ্ঠায় নিয়ে যাবার চেষ্টা করেছেন। চাইলে আরও কম শব্দ খচর করে তিনি গল্পটাকে উপস্থাপন করতে পারতেন, আর তাতে গল্পের আকর্ষণ বিন্দুমাত্রও কমে যেত না।

তবে আবারও বলছি, গল্পকার খুব চমৎকার ভাবে গল্পের সমাপ্তি টেনেছেন। শেষে এসেও নতুন আরেকটা গল্পের হাতছানি খুব স্পষ্ট করে বোঝা যায়। আসগর মাহতাব এর পরে কি করতে পারে সে ব্যাপারে পাঠকদের একটা তৃষ্ণা ঠিকই থেকে যাবে। আরও অপেক্ষা থাকবে ইফ্রিত আর তার আংটিটার পরিণতি জানবার একটা আকাঙ্ক্ষার।


ব্যক্তিগত রেটিং - ২.৭/৫





বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ০১, ২০১৬

ইনফার্নোঃ উপন্যাস বনাম চলচ্চিত্র

ধরুন চোখ মেলে আপনি নিজেকে আবিষ্কার করলেন কোন এক হসপিটালের বিছানায়। স্মৃতি আঁকড়ে ধরে মনে করার চেষ্টা করছেন ঠিক কি কারণে আপনি কখন হসপিটালে আসলেন। কিন্তু চেষ্টা করেও কিছু মনে করতে পারলেন না। তখনই হঠাৎ করে হসপিটালের জানালা গলে আপনার দৃষ্টি ছড়িয়ে পড়ল। বুঝতে পারলেন আপনি আছেন ভিন্ন কোন এক শহরের অজানা কোন এক হসপিটালের বিছানার উপর।

বলুন তো, ঠিক এমন একটা পরিস্থিতিতে কতটা অসহায় বোধ হবে আপনার?

এমন একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গল্পের শুরু হবে রবার্ট ল্যাংডনের সাথে। একজন প্রখ্যাত সিম্বলিষ্ট হঠাৎই নিজেকে আবিষ্কার করবেন এক হসপিটালের বেডে যে হসপিটালটি তার নিজের দেশে নয়, বরং রয়েছে ভিন্ন আরেক দেশে। সাথে রয়েছে মাথার যন্ত্রণা আর টুকরো টুকরো স্মৃতি ও স্বপ্নের মিশ্রণ। যদিও এই স্বপ্নটাকে আপনি কোনভাবেই সাধারণ স্বপ্ন বলতে পারবেন না, তারচেয়ে বরং স্বপ্ন গুলোকে দুঃস্বপ্ন বলা যেতে পারে।

দায়িত্বরত ডক্টরের কাছ থেকে জানতে পারলেন আপনাকে কোন এক ক্যাব হসপিটালের ইমার্জেন্সি সেকশনে ছেড়ে গেছে, কিন্তু যখন ছেড়ে গিয়েছিল তখন আপনি ছিলেন আপনার নিজেরই রক্তে চপচপে ভেজা! জানতে পারলেন এই রক্তের উৎস আপনার মাথার চামড়া কেটে যাওয়াতেই হয়েছে। কিন্তু খুব সাধারণ ভাবে চামড়া কেটে রক্ত বের হয়নি, বরং হয়েছে কোন একটা বুলেট শুধুমাত্র চামড়াটা ছুঁয়ে যাবার কারণে! আর দুই এক মিলিমিটার এদিক-সেদিক হলে হয়তো আপনার ভবলীলা সাঙ্গ হতো। আর এই আঘাতের কারণেই আপনার স্মৃতির কিছু অংশ ভ্রষ্ট হয়েছে। তবে আশার কথা হল সেসব স্মৃতি খুব দ্রুতই ফিরে পাবেন আপনি।

কিন্তু এতটাই সহজ যদি গল্পের শুরু হবে তবে সেটা কিভাবে এক উপন্যাসে রূপ নেবে? হ্যাঁ, এবারে আবারও শুরু হবে জটিলতার। হঠাৎ করেই গোলাগুলির শব্দ! কর্তব্যরত চিকিৎসকদের একজন আপনার সামনেই সেই গুলির আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন, তার রক্ত মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ছে খুবই দ্রুত। শুরু হল ছুটোছুটি আর এই ছুটোছুটি চলবে একদম উপন্যাসের শেষ পর্যন্ত। শুধু ল্যাংডন যে তার নিজের জীবন বাঁচানোর জন্যেই ছুটবেন তা কিন্তু নয়, বরং এ ছুটো-ছুটি চলবে পুরো মানব গোত্রকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে। বলতে পারেন মানব সমাজকে বাঁচিয়ে রাখার একমাত্র ক্লু’টি রয়েছে রবার্ট ল্যাংডনের হাতে।




এতক্ষণ যে গল্পের প্লট নিয়ে কথা বলছিলাম তা ছিল একজন সফল রোমাঞ্চ উপন্যাস লেখক 'ড্যান ব্রাউন' রচিত 'ইনফার্নো' উপন্যাসটির একদম প্রাথমিক অংশ। 'ডা ভিঞ্চি কোড', 'দ্যা লস্ট সিম্বল' এবং 'ইনফার্নো'; এই তিনি উপন্যাসে লেখক ড্যান ব্রাউন আমাদের সামনে নিয়ে এসেছেন তার বিখ্যাত চরিত্র রবার্ট ল্যাংডন সাহেবকে। আর প্রতিবারই দারুণ এক উত্তেজনার সাগরের তলদেশ হতে ঘুরিয়ে নিয়ে এসেছেন তার পাঠকদের।

ইতোপূর্বে 'ডা ভিঞ্চি কোড' এবং 'দ্যা লস্ট সিম্বল' উপন্যাস দুটোকে চলমান চিত্রে রূপ দান করা হয়েছে। সেখানে ল্যাংডনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন আরেক কালজয়ী অভিনেতা 'টম হ্যাংক্‌স'। আর সত্যি কথা বলতে গেলে এই চরিত্রটির জন্যে টম হ্যাংক্‌সের চেয়ে ভালো কেউ হতে পারত বলে মনে করি না। মাঝে মাঝে মনে হয় ড্যান ব্রাউন সাহেব সম্ভবত ল্যাংডন চরিত্রটিকে রূপদান করার পূর্বে তার কল্পনাতেও টম হ্যাংক্‌স সাহেবকে নিয়ে এসেছিলেন। 'ডা ভিঞ্চি কোড' এবং 'দ্যা লস্ট সিম্বল'-এ দারুণ অভিনয় গুণ ফুটিয়ে তোলার পুরস্কার স্বরূপ এবারেও ইনফার্নো চলচ্চিত্রে একই চরিত্রে দেখা মেলে হ্যাংক্‌স সাহেবের সাথে।

এর আগেও একটি লেখাতে আমি বলেছিলাম যে, যদি হাজারও চেষ্টা করা হয় তবুও কখনো কোন উপন্যাসের সমস্ত ঘটনা সমেত একটি মুভি একজন ডাইরেক্টর সাহেব কোনদিনই তৈরি করতে পারবেন না। কারণ ব্যাপারটা একেবারেই অসম্ভব। তবে অন্তত ৫০ থেকে ৬০ ভাগ পর্যন্ত উপন্যাসকে মুভিতে নিয়ে আসা সম্ভব বলে আমি মনে করি। কিন্তু এবারে ইনফার্নো মুভিটি যেভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে তাতে আমার কোন ভাবেই মনে হয়নি যে এখানে মূল উপন্যাসের ৪০ ভাগের বেশি উপস্থিত রয়েছে। বরং হিসেব করলে হয়তো তার থেকে অনেক কমই পাওয়া যাবে।

স্ক্রিপ্ট রাইটার মুভিটির স্ক্রিপ্ট তৈরি করার সময় উপন্যাস থেকে এত বেশি অংশ বাদ দিয়েছেন, আর এত বেশি নিজ থেকে যুক্ত করেছেন যে কেউ যদি মুভিটিকে ভিন্ন কোন নামে প্রকাশ করেন তবে সেটা আমার দিক থেকে মোটেও খুব অনুচিত কিছু মনে হবে না।



আবারও বলি, কারও সাথে যদি বইয়ের পাতাতে ইনফার্নোর সাথে পরিচয় হয়ে গিয়ে না থাকে তবে অবশ্যই আপনি মুভিটি দারুণ ভাবে উপভোগ করতে পারবেন। কিন্তু যদি ইতোমধ্যে ইনফার্নোর উপন্যাসটি আপনি পড়ে থাকেন আর আপনার স্মৃতিতে ইনফার্নোর ঘটনার বিবরণের রঙ এখনো কিছু বাকি থেকে থাকে তবে অবশ্যই মুভিটি দেখার পর আপনি বেশ অনেকটা হতাশ হবেন আর অনেক খানি বিরক্ত চলে আসবে আপনার মনে।

যদি এই ঘটনা পরিবর্তনের কারণ খুব ভালো করেই অনুমেয় তবুও পরিবর্তনটুকু ব্যক্তিগত ভাবে আমার কাছে মোটেই গ্রহণযোগ্য মনে হয় নি। উপন্যাসের স্রষ্টা খুব ভালো বুঝেই উপন্যাসটি রচনা করেছেন। এবং আন্তর্জাতিক ভাবে উপন্যাসটি 'বেস্ট সেল' র‌্যাংক প্রাপ্ত হয়েছে। তাই উপন্যাসের মত করে মুভিটিকে নিয়ে আসলে সেটা মানুষজনকে বিভ্রান্ত করবে, এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ তৈরি হবে কিংবা তার কারণে বড় ধরণের পরিবর্তন হয়ে যাবে মনে করে করা হয়ে থাকলে সম্ভবত ভুলই করা হয়েছে।

উপরন্তু উপন্যাসে বর্ণিত ঘটনা প্রবাহকে অনেক বেশি মর্ডানাইজেশন করা হয়েছে। মানছি সময়ের সাথে এমন পরিবর্তন হয়তো প্রয়োজন ছিল, তবুও যতটুকু না করলে আসলে সম্ভব ছিল না ততটুকু বাদ দিয়ে করলেই সম্ভবত তা আরও বেশি আকর্ষণীয় হতো। উপন্যাসে এক স্থানে ল্যাংডন ইনফার্নোর একটি হার্ড কপি বই ধার নিয়েছিলেন ভ্রমণকারীর কাছ থেকে। সে অংশটাকে মর্ডানাইজেশন প্রক্রিয়ায় বাদ দেয়া হয়েছে। এখানে দেখা যায় সিয়েনা ব্রুক্‌স চাওয়া মাত্রই নেট থেকে ইনফার্নোর একটি কপি বের করে নিয়ে আসেন তার চুরি করা সেলফোনে। এই অংশটা প্রযুক্তির ব্যবহারের অতিরিক্ত মনে হয়েছে আমার কাছে।



এছাড়াও পালিয়ে বেড়ানোর অনেক অংশে নিয়ে আসা হয়েছে অনেক পরিবর্তন। উপন্যাসে ছুটোছুটির যেসব স্থানে স্থানে এসে প্রায় আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম পাঠক হিসেবে, আবার ঠিক তার পরমুহুর্তে সিয়েনা আর ল্যাংডন সাহেব যেভাবে সেই ঘটনা উৎরে যাবার রসদ খুঁজে বের করে নিচ্ছিল, যেখানে ধাঁধা আউরে বার বার সমাধান বের করার চেষ্টা চলছিল; সেখানে লাইট-ক্যামেরা-রোলিং এর গ্যাঁড়াকলে পড়ে তার প্রায় সব কিছুই বাদ পড়ে গেছে।

এ ছাড়াও চরিত্রায়নে ছিল অনেক বেশি গাফিলতি(!)। ড. সিন্সকিকে উপন্যাসে যেভাবে দেখানো হয়েছে, তার যে বর্ণনা সেখানে পাওয়া গেছে তার ঠিক বিপরীত রূপটাই এসেছে মুভিটিতে। অন্তত এই চরিত্রটিকে বেছে নেয়ার ব্যাপারে আরও একটু স্টাডি করার প্রয়োজন ছিল। একই ব্যাপার ঘটেছে সিয়েনা ব্রুকসের ব্যাপারে। তারপরও সিনেমার খাতিরে সিয়েনাকে মেনে নিয়েছিলাম। তবে চরিত্রায়নের পজিটিভ দিক বলতে গেলে বলতে হবে প্রভোস্টের চরিত্রটির কথা। প্রভোস্ট চরিত্রটি চরিত্রায়ন করেছেন ভারতীয় অভিনেতা 'ইরফান খান' এবং তার অভিনয় বেশ সাবলীল ছিল। এই একটি চরিত্রই মুভিটির জন্যে বেশ নিখুঁত মনে হয়েছে।

এরকম হাজারও পরিবর্তন দেখতে দেখতে মুভিটির প্রায় শেষ অংশে উপস্থিত হয়েছি। উপন্যাসের একদম শেষ দিকে সিয়েনার পালিয়ে যাওয়া, তারপর পুনরায় ফিরে আসা, আত্ম সমর্পণ করা, প্রভোস্টের চোপ-পুলিশ খেলায় নিজেই ধরা খাওয়া আর শেষ পরিস্থিতিতে পুরো ব্যাপারটার উপর নিয়ন্ত্রণ নেবার যে ব্যাপারগুলি উপন্যাসটিতে যে দারুণ সব উত্তেজনার সৃষ্টি করেছিল; মুভিতে সেই একই ব্যাপার গুলির অনুপস্থিতি, নতুন দৃশ্যপট সংযোজন আর বিয়োজনে সেই ব্যাপারগুলি একদম সাদামাটা ঠেকেছে। এখন মুভিটিকে আর ১০ টি সাধারণ এডভেঞ্চার মুভির মতই একটা সস্তা দরের এডভেঞ্চার মুভি মনে হয়েছে।



জানিনা বাকি সবার কাছে পরিবর্তিত এই মুভি কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা পাবে, তবে ব্যক্তিগত ভাবে ১০ এর স্কেলে আমি মুভিটিকে মাত্র ৪ পয়েন্ট দিয়ে রেট করব। টিজার আর ট্রেলার দেখার পর অনেক আশা নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম মুভিটি দেখার জন্যে। কিন্তু মুভিটি দেখার পর মনে হয়েছে, যদি দয়া করে ডাইরেক্টর সাহেব মুভিটিকে সৃষ্টি না করতেন তবেই কেবল ইনফার্নো উপন্যাসটির প্রতি তার সুবিচার করা হতো।






রকমারি হতে ইনফার্নো উপন্যাসটির হার্ডকপি সংগ্রহ করতে পারেন
কিংবা এই লিংক হতে বইটির সফটকপি ডাওনলোড করতে পারেন।
মুভিটির অনলাইন স্ট্রিম এখানে পাবেন।

সোমবার, এপ্রিল ১১, ২০১৬

পাঠ প্রতিক্রিয়া - যে প্রহরে নেই আমি



গতকাল শেষ করলাম লেখক/ব্লগার 'রাসায়াত রহমান' এর লেখা "যে প্রহরে নেই আমি" বইটি।

গল্পটা বেশ ইন্টারেস্টিং। গল্পের মূল চরিত্র 'রাজু' তারচেয়েও বেশি ইন্টারেস্টিং। প্রথম দিকে অতি-ভৌতিক কিছু একটা ব্যাপার তার মাঝে আছে, এমন মনে হচ্ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত যার দেখা মিলল সেটাও কম চমৎকৃত করেনি। উত্তেজনাপূর্ণ ছিল "ইদ্রিস খা" এর প্রাপ্য বুঝিয়ে দেবার অংশটুকু। আর অবশ্যই আলাদা করে বলতে হবে 'নায়লা' চরিত্রটির ঘুরে দাঁড়াবার ব্যাপারটাকে। রাজুর জ্বালিয়ে দেয়া প্রেরণার প্রদীপ আর নিজের ইচ্ছাশক্তিকে ভর করে সে কতদূর পর্যন্ত এগিয়েছে তা জানতে হলে অবশ্যই আপনাকে পড়তে হবে গল্পটি।

তবে গল্পটা শেষ করার পরও ঠিক বুঝতে পারিনি গল্পগ্রন্থের নাম করণের উদ্দেশ্য বা সার্থকতা :(






রবিবার, ফেব্রুয়ারী ২৮, ২০১৬

পাঠ প্রতিক্রিয়া - জলেশ্বরী



ইব্রাহীম গাজীর খোঁজে বের হয়েছিল কাজল, গন্তব্য ছিল জলেশ্বরীর পানে। সেই খোঁজ দীর্ঘ এক ভ্রমণ অভিজ্ঞতা এনে দেয় তাকে। সেখানে সে সভ্যতার মুখোশের আড়ালে আদিম মানুষের প্রকৃত রূপ খুঁজে পায়। খুঁজে পায় লাজ, ইজ্জত আর অহংকার চূর্ণ হবার একমাত্র কারণ ‘ক্ষুধা’ কে। খুঁজে পায় তপসী নামের এক মানবীকে, খুঁজে পায় প্রাণের রক্ষাকারী বুজিকে। পরিচয় ঘটে এমন এক মানুষের সঙ্গে যে গোর খোঁড়ার জন্যে হন্যে হয়ে গ্রামের পর গ্রাম ছুটে বেড়াচ্ছে।

অতঃপর সেই গোর খোদক আসাদ উদ্দীনকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যায় মহামারির দিকে। সেখানে পৌঁছে দেখে তপসীর ভিন্ন আরেক রূপ। খুঁজে পায় ভিন্ন আরেক তপসীকে, জানতে পারে প্রকৃত তপসীকে। কত পরম মমতায় তপসী তাদের আপন হয়ে গিয়েছে সেখানে। আবার সেই প্রাণের আত্মীয়ই কিভাবে 'ধর্ম'কে ভর করে কুৎসিত রূপে রূপ লাভ করে, তা সে সেখানেই দেখতে পায়।

এত কিছুর পর যখন সে ইব্রাহীম গাজীকে খুঁজে পায় তখন বুঝতে পারে, কতই  মিথ্যে পরিচয়ে বেঁচে ছিল এতকাল….