বাস স্টপেজে বসে ছিলাম। আসলে জ্যামের কারণে এখন প্রায় ঘণ্টা খানেক হতে চলল বাসের দেখা নেই। রাস্তায় নাকি পানি উঠে কোথায় ভেঙ্গে গেছে তাই বিশাল জ্যাম লেগেছে। আর এমন জায়গায় এসেছি যে রিক্সা বা টেম্পো যোগে একটু এগিয়ে গিয়ে বাসে উঠবো তা ও না। যেখানেই যাই না কেন আমাকে অপেক্ষা করতে হবে এই স্টপেজ থেকে ছাড়ে যাওয়া বাসের জন্যে। তাই বসে আছি, পাশে আরো প্রায় ১২জন আছে বসে। আর সামনে আছে আরো ২০-২৫জনের মত দাড়িয়ে। আর সবাই অপেক্ষা করছি একটা নির্দিষ্ট বাসের জন্যে।
অপেক্ষা করছি আর নিজের উপর বিরক্ত হচ্ছি। কি দরকার ছিল আজ বেরুনোর! খালামনি তো বার বার করে বলল আরো একটা দিন থেকে যা। থেকে গেলেই পারতাম। কিন্তু তখন শুধু বাড়ির কথা আর আসাদ, সুমনের সাথে আড্ডা দেবার চিন্তাই বার বার মাথায় আসছিলো। তাই খালামনির অমতেই বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। আর এখন এতদূর এসে বাসের জন্যে বসে থাকতে হচ্ছে। কোন মানে হয়?
সময় কাটাতে না পেরে শেষে একটা পত্রিকা নিলাম হকারের কাছ থেকে। আমাদের মত এই হকারও আজ অপেক্ষা করছে বাসটির। চুপ করে বসে আছে হাতে পেপারের বোঝা নিয়ে। আমি তার কাছ থেকে পেপার চাইলাম, তাতে তার একটু আনন্দিত হবার কথা, বসে থেকেও সে পেপারটা বিক্রি করতে পারছে বলে। কিন্তু সে পেপার চাওয়ায় কিছুটা বিরক্তই হল মনে হয়। তবুও বের করে দিল একটা পেপার তার হাতে রাখা পেপারের বোঝা থেকে। আমি দাম মিটিয়ে দিয়ে পেপার পড়তে মনোনিবেশ করলাম।
প্রথমে পেইজের রাজনীতির আলাপ আলোচনা দেখতে ইচ্ছে করলো না, তাই চলে গেলাম খেলার খবরের অংশে। সেখান থেকে একটু দেখে আবার গেলাম বিনোদন পেইজে। সেখানেই ছিলাম, হঠাৎ একটা কণ্ঠ শুনে পেপার থেকে বাইরে নজর দিতে হল। একটা মেয়ে, রিকসাওয়ালার সাথে কথা কাটাকাটি করছে। পরনে স্কুল ড্রেস আর হাতে ব্যাগ। রিকশাওয়ালার সাথে ভাড়া বেশি চাওয়ার জন্যে কথা কাটাকাটি করছে সে। সবাই দেখছে, তবে কেউ কিছু বলছে না। আর আমিও এখানকার ভাড়া নিয়ে এত জানি না তাই আবার পেপার পড়ার চেষ্টা করলাম।
কিন্তু কোথায় যেন আটকে গেছি। পেপারের দিকেই চেয়ে আছি তবুও কি পড়ছি তা বুঝতে পারছি না। আবার প্রথম থেকে নিউজটা পড়তে চেষ্টা করলাম। নাহ, হচ্ছে না। একটা কথাও মাথায় ঢুকছে না। মন অন্যকোথাও আটকে গেছে। আর কোথায় আটকে গেছে তা বুঝতে পেরে একটু নিজের ভেতরেই লজ্জা হল। একটা মেয়েকে একবার দেখাতেই মাথায় ঢুকে গেল এই ভেবেই লজ্জাটা পাচ্ছি। একটু রাগও লাগছে নিজের উপর। তবে মেয়েটার চেহারায় একটা কিছু আছে। যা আমাকে আবার মেয়েটার দিকে তাকাতে বাধ্য করলো।
তবে এইবার কেন জানি সরাসরি তাকাতে সাহস পেলাম না। পেপারটাকে সামনে ধরেই একটু নিচু করলাম, আর আড়চোখে দেখলাম তাকে। সাদা স্কুল-ড্রেসে তাকে অন্যরকম সুন্দর লাগছে। তবে বেশিক্ষণ তাকাতে পারলাম না চোখাচোখি হয়ে যাবার ভয়ে। পেপারটা আবার চোখের সামনে ধরে নিলাম। কিন্তু আর পড়া হল না।
মেয়েটা এবার আমার দিকে পেছন ফিরে রাস্তার দিকে মুখ করে দাড়িয়ে আছে। তাই তার চেহারা আর আড়চোখেও দেখতে পরছি না। একটা লোভ লেগে গেছে মনে তার চেহারাটা আরেকবার দেখার জন্যে। তাই পেপারটাকে ভাজ করে ঘড়ি দেখলাম আর মাথা নাড়লাম। একটু অভিনয় করলাম অনেক সময় বসে থেকে বোর হয়ে গেছি কিন্তু বাস আসছে না, তাই দেখিয়ে। দাড়িয়ে আমার পায়ের কাছে রাখা ব্যাগটা কাঁধে ঝোলালাম। তারপর গিয়ে মেয়েটার থেকে একটু দূরত্ব রেখে দাড়িয়ে রাস্তার এদিক ওদিক দেখলাম যেন বাসটার দেখা পাওয়া যায় কিনা তাই দেখছি। আসলে তো মেয়েটার ঐ মায়া ভর্তি চেহারাটাই দেখতে এসেছি। আড়চোখে তাই দেখে নিলাম আরো একবার। তবে সুবিধা হল, মেয়েটা আমার বামে দাঁড়িয়ে আছে। আর সেদিক থেকেই বাসটা আসবে। আর আমি রাস্তার দিকে তাকালে তাকে দেখতে পারি অনায়াসেই।
একবার দুইবার দেখলাম ঠিকই। কিন্তু শেষে তার চোখে ধরাই পড়ে গেলাম। স্পষ্টই বুঝতে পারলো আমি তার দিকেই তাকিয়ে আছি। তবে সাথে সাথে দৃষ্টি অন্যদিকে নিয়ে গেলাম। কিন্তু ততক্ষণে মেয়েটা যা বোঝার বুঝে গেছে। আমি আর লজ্জায় ঐদিকে তাকাতে পারছি না। তাই অপরদিকে তাকিয়ে আছি। খুব ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তার দিকে বা রাস্তার দিকে তাকাতে পারছি না। এরই মধ্যে হুট করে বাসটা চলে আসলো।
সবাই গাড়িতে উঠার জন্যে হুড়মুড় করে বাসের গেইটে ভিড় জমালো। ছোট্ট একটা জটলা পাকিয়ে গেছে সেখানে। আমি এখনো দাড়িয়ে আছি, দাড়িয়ে আছে মেয়েটাও। বুঝতে পারছি না সে আসলে এতক্ষন এই বাসটার জন্যেই অপেক্ষা করছিলো কি না। যখন ভিড় প্রায় কমে এসেছে বাসের দরজার সামনে তখন ব্যাগ কাঁধে ঐদিকে এগুলাম।
নাহ মেয়েটা এগুচ্ছে না। তারমানে সে এই বাসটার জন্যে অপেক্ষা করছে না, সেটা নিশ্চিত। আমার আরো কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু সেটা সম্ভব না। বেহায়াপনারও একটা সীমা আছে, আর দাঁড়ালে সেটা অতিক্রম হয়ে যাবে। তাই বাসে চড়ে উঠলাম। মন চাইছিল মেয়েটার নাম-ঠিকানা জেনে আসতে। কিন্তু সেটা কি আদৌ সম্ভব? আর কেনই বা বলবে সে, আমার মত অপরিচিত একটা ছেলেকে তার নাম-ঠিকানা?
অপেক্ষা করছি আর নিজের উপর বিরক্ত হচ্ছি। কি দরকার ছিল আজ বেরুনোর! খালামনি তো বার বার করে বলল আরো একটা দিন থেকে যা। থেকে গেলেই পারতাম। কিন্তু তখন শুধু বাড়ির কথা আর আসাদ, সুমনের সাথে আড্ডা দেবার চিন্তাই বার বার মাথায় আসছিলো। তাই খালামনির অমতেই বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। আর এখন এতদূর এসে বাসের জন্যে বসে থাকতে হচ্ছে। কোন মানে হয়?
সময় কাটাতে না পেরে শেষে একটা পত্রিকা নিলাম হকারের কাছ থেকে। আমাদের মত এই হকারও আজ অপেক্ষা করছে বাসটির। চুপ করে বসে আছে হাতে পেপারের বোঝা নিয়ে। আমি তার কাছ থেকে পেপার চাইলাম, তাতে তার একটু আনন্দিত হবার কথা, বসে থেকেও সে পেপারটা বিক্রি করতে পারছে বলে। কিন্তু সে পেপার চাওয়ায় কিছুটা বিরক্তই হল মনে হয়। তবুও বের করে দিল একটা পেপার তার হাতে রাখা পেপারের বোঝা থেকে। আমি দাম মিটিয়ে দিয়ে পেপার পড়তে মনোনিবেশ করলাম।
প্রথমে পেইজের রাজনীতির আলাপ আলোচনা দেখতে ইচ্ছে করলো না, তাই চলে গেলাম খেলার খবরের অংশে। সেখান থেকে একটু দেখে আবার গেলাম বিনোদন পেইজে। সেখানেই ছিলাম, হঠাৎ একটা কণ্ঠ শুনে পেপার থেকে বাইরে নজর দিতে হল। একটা মেয়ে, রিকসাওয়ালার সাথে কথা কাটাকাটি করছে। পরনে স্কুল ড্রেস আর হাতে ব্যাগ। রিকশাওয়ালার সাথে ভাড়া বেশি চাওয়ার জন্যে কথা কাটাকাটি করছে সে। সবাই দেখছে, তবে কেউ কিছু বলছে না। আর আমিও এখানকার ভাড়া নিয়ে এত জানি না তাই আবার পেপার পড়ার চেষ্টা করলাম।
কিন্তু কোথায় যেন আটকে গেছি। পেপারের দিকেই চেয়ে আছি তবুও কি পড়ছি তা বুঝতে পারছি না। আবার প্রথম থেকে নিউজটা পড়তে চেষ্টা করলাম। নাহ, হচ্ছে না। একটা কথাও মাথায় ঢুকছে না। মন অন্যকোথাও আটকে গেছে। আর কোথায় আটকে গেছে তা বুঝতে পেরে একটু নিজের ভেতরেই লজ্জা হল। একটা মেয়েকে একবার দেখাতেই মাথায় ঢুকে গেল এই ভেবেই লজ্জাটা পাচ্ছি। একটু রাগও লাগছে নিজের উপর। তবে মেয়েটার চেহারায় একটা কিছু আছে। যা আমাকে আবার মেয়েটার দিকে তাকাতে বাধ্য করলো।
তবে এইবার কেন জানি সরাসরি তাকাতে সাহস পেলাম না। পেপারটাকে সামনে ধরেই একটু নিচু করলাম, আর আড়চোখে দেখলাম তাকে। সাদা স্কুল-ড্রেসে তাকে অন্যরকম সুন্দর লাগছে। তবে বেশিক্ষণ তাকাতে পারলাম না চোখাচোখি হয়ে যাবার ভয়ে। পেপারটা আবার চোখের সামনে ধরে নিলাম। কিন্তু আর পড়া হল না।
মেয়েটা এবার আমার দিকে পেছন ফিরে রাস্তার দিকে মুখ করে দাড়িয়ে আছে। তাই তার চেহারা আর আড়চোখেও দেখতে পরছি না। একটা লোভ লেগে গেছে মনে তার চেহারাটা আরেকবার দেখার জন্যে। তাই পেপারটাকে ভাজ করে ঘড়ি দেখলাম আর মাথা নাড়লাম। একটু অভিনয় করলাম অনেক সময় বসে থেকে বোর হয়ে গেছি কিন্তু বাস আসছে না, তাই দেখিয়ে। দাড়িয়ে আমার পায়ের কাছে রাখা ব্যাগটা কাঁধে ঝোলালাম। তারপর গিয়ে মেয়েটার থেকে একটু দূরত্ব রেখে দাড়িয়ে রাস্তার এদিক ওদিক দেখলাম যেন বাসটার দেখা পাওয়া যায় কিনা তাই দেখছি। আসলে তো মেয়েটার ঐ মায়া ভর্তি চেহারাটাই দেখতে এসেছি। আড়চোখে তাই দেখে নিলাম আরো একবার। তবে সুবিধা হল, মেয়েটা আমার বামে দাঁড়িয়ে আছে। আর সেদিক থেকেই বাসটা আসবে। আর আমি রাস্তার দিকে তাকালে তাকে দেখতে পারি অনায়াসেই।
একবার দুইবার দেখলাম ঠিকই। কিন্তু শেষে তার চোখে ধরাই পড়ে গেলাম। স্পষ্টই বুঝতে পারলো আমি তার দিকেই তাকিয়ে আছি। তবে সাথে সাথে দৃষ্টি অন্যদিকে নিয়ে গেলাম। কিন্তু ততক্ষণে মেয়েটা যা বোঝার বুঝে গেছে। আমি আর লজ্জায় ঐদিকে তাকাতে পারছি না। তাই অপরদিকে তাকিয়ে আছি। খুব ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তার দিকে বা রাস্তার দিকে তাকাতে পারছি না। এরই মধ্যে হুট করে বাসটা চলে আসলো।
সবাই গাড়িতে উঠার জন্যে হুড়মুড় করে বাসের গেইটে ভিড় জমালো। ছোট্ট একটা জটলা পাকিয়ে গেছে সেখানে। আমি এখনো দাড়িয়ে আছি, দাড়িয়ে আছে মেয়েটাও। বুঝতে পারছি না সে আসলে এতক্ষন এই বাসটার জন্যেই অপেক্ষা করছিলো কি না। যখন ভিড় প্রায় কমে এসেছে বাসের দরজার সামনে তখন ব্যাগ কাঁধে ঐদিকে এগুলাম।
নাহ মেয়েটা এগুচ্ছে না। তারমানে সে এই বাসটার জন্যে অপেক্ষা করছে না, সেটা নিশ্চিত। আমার আরো কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করছিল। কিন্তু সেটা সম্ভব না। বেহায়াপনারও একটা সীমা আছে, আর দাঁড়ালে সেটা অতিক্রম হয়ে যাবে। তাই বাসে চড়ে উঠলাম। মন চাইছিল মেয়েটার নাম-ঠিকানা জেনে আসতে। কিন্তু সেটা কি আদৌ সম্ভব? আর কেনই বা বলবে সে, আমার মত অপরিচিত একটা ছেলেকে তার নাম-ঠিকানা?