বৃহস্পতিবার, মে ১২, ২০১৬

মুভি কথনঃ Les Misérables



ভিক্টর হুগো সাহেবের লেখা 'লা মিজারেবল' উপন্যাসটা পড়েছিলাম প্রায় বছর খানিক আগে। উপন্যাসটিতে জাঁ ভালজাঁর জীবনের সাথে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার মোড় তুলে ধরেছেন তিনি। আমি সাধারণত কথায় কথায় 'চমৎকার' শব্দটা ব্যবহার করি, কিন্তু ভালজাঁর ঘটনা গুলিকে তুলে ধরাকে আমি চমৎকার বলতে পারছি না। কারণ, শুধু মাত্র "চমৎকার" বলে যদি উপমাও দিতে যাই তবে সেটা ঘোরতর অন্যায় হয়ে যাবে।

তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে ভিক্টর হুগো সাহেবের এই উপন্যাসের আলোকে ২০১২ সালে তৈরি করা Les Miserables মুভিটি আমি উপন্যাসটি পড়ার পূর্বেই দেখেছিলাম। সাধারণত একটা উপন্যাস থেকে কোন মুভি তৈরি করা হলে সর্বোচ্চ ঐ উপন্যাসের মাত্র ২০ শতাংশ ঐ মুভিতে ডিরেক্টর, এবং অভিনেতা, অভিনেত্রীরা তুলে ধরতে পারে। আর তার উপর ভিক্টর হুগো সাহেবের এই 'লা মিজারেবল' উপন্যাসটিতে এত বেশি ঘটনার বর্ণনা রয়েছে যে, কেউ যদি একে হুবহু কোন মুভিতে তুলে ধরতে চায় তবে তাকে ঐ মুভি কেবলমাত্র স্বপ্নেই তৈরি করতে হবে।

IDMB'র সেরা মুভি গুলির লিস্ট দেখতে দেখতে Les Misérables মুভিটি আজ আবারও সামনে চলে আসে। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই একই টাইটেল দিয়ে সাতটি ফুলটাইম মুভি এবং দুইটি টেলিফ্লিম গোছের মুভি সহ মোট নয়টি মুভি তৈরি হয়েছে (IMDB'র তথ্যানুসারে*)। প্রথমে অনলাইনেই ১৯৯৮ সনে তৈরি হওয়া মুভিটি দেখতে বসেছিলাম। সেখানে উপন্যাসে বর্ণিত ভালজাঁর বোনের পরিবারের অল্প কিছু দুর্দশা আর তারপর ভালজাঁ'র রুটি চুরি করা হতে মুভিটির শুরু হয়। তারপর সেটাকে রেখে আবারও দেখা শুরু করলাম ২০১২ সালে নির্মিত হওয়া মুভিটি। ভিক্টর হুগো সাহেবের মূল লেখাটি উপন্যাস হলেও এই মুভিতে ডায়লগ গুলিকে ছন্দ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে। গুটি কয়েক ডায়লগ বাদ দিলে পুরো মুভির কথোপকথনই ছিল ছন্দ নির্ভর।

উপন্যাসে বর্ণিত ঘটনার অনেক ঘটনাই মুভিতে অনুপস্থিত। এখানে শুরুটাই হয়েছে ভালজাঁ'র দণ্ড দিবসের শেষ দিন দিয়ে, যেখানে জেলার জাভেয়া তাকে শর্তসহ মুক্তির কাগজ ধরিয়ে দেয়। তারপর উপন্যাসে বর্ণিত ঘটনার মতই এগিয়ে চলে ঘটনা। মুভিতে ব্যবহৃত কিছু ভালোলাগা ছন্দময় উক্তি এখানে তুলে ধরলাম।






কয়েদীর উপর নির্যাতন এবং তাদের দিয়ে অমানুষিক কাজ করিয়ে নেয়ার একটা চিত্র এখানে স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে একই সাথে কয়েদীদের ভীতিকর জীবনও চলে এসেছে ছন্দময় উক্তিতে। তারা তাদের দৃষ্টিকে উপরে না উঠবার তাগিদ দিচ্ছে। যাতে একই সাথে কোন প্রহরীর কাছে তাদের ঐ দৃষ্টি ক্রোধের দৃষ্টি হিসেবে মনে না হয় এবং উপরের দিকে তাকিয়ে জীবনের স্বাধীনতা খোঁজার স্বপ্ন না দেখে -সেই ব্যাপারটাই বোঝানো হয়েছে।

Look down, look down
You'll always be a slave
Look down, look down
You're standing in your grave.




শর্তসাপেক্ষে মুক্তি মিলল, মিলল নতুন স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকবার আশা। সে আশাই মন থেকে বের হয়ে আসল ছন্দ রূপে-


Freedom at last-
How strange the taste!
Never forget the years- the waste,
Nor forgive them
for what they’ve done.
They are the guilty-
Everyone!
The day begins
And now lets see
What this new world


Will do for me!




মুক্তি পেয়েও মুক্ত হতে পারে নি জাঁ ভালজাঁ। সমাজে তার কোন অবস্থান নেই, নেই সাধারণের মত বেঁচে থাকবার সুযোগ। দাড়ে দাড়ে গিয়ে কুকুরের মত তাড়া খেয়ে বেড়াতে থাকে সে। অবশেষে এক গির্জায় আশ্রয় মেলে। কিন্তু অভাব যে স্বভাব নষ্ট করেছে তার সেই স্বভাবই তাকে দিয়ে করিয়ে নেয় আরেক ভুল। রাতের অন্ধকারে তার ভয় আবারও তাকে চোর বানিয়ে দেয়। চুরি করে জাঁ ভালজাঁ। ধরাও পড়ে যায় সকাল নাগাদ। সত্যতা জানার জন্যে যখন গির্জায় ফিরিয়ে নিয়ে আসে পুলিশ তখন গির্জার যাজক জানায় চুরি যাওয়া সকল জিনিষই সে ভালজাঁকে দান করেছে। এই ঘটনায় অনুতপ্ত হয়ে ভালজাঁ হাঁটু গেড়ে বসে সৃষ্টিকর্তার সামনে -


What have I done,
Sweet Jesus, what have I done?
Become a thief in the night
Become a dog in the run!
Have I Fallen s Far
And is the hour so late
That nothing remain
but the cry of my hate?
The cries in the dark
that nobody hears


Here where I stand at the turning of the years.




অনুতপ্ত হয়েও নিজের জীবনকে এভাবেই বর্ণনা করে যায় ভালজাঁ-


If there's another way to go,
I missed it twenty long years ago.
My life was a war that could never be won.
They gave me a number and murdered Valjean.
When they chained me and left me for dead
Just for stealing a mouthful of bread!




যাপিত জীবনে নিজের বিশ্বাসকে তুলে ধরে এই লাইন কয়েক দিয়ে-


Take an eye for an eye!
Turn your heart into stone!
This is all I have lived for!
This is all I have known!









যাজকের কথা আর নিজের অনুতপ্ত মনকে ভীত ধরে নতুন জীবন গড়ার উদ্দেশ্য তৈরি করে ভালজাঁ। নতুন মানুষ হয়ে বাঁচার শপথ নিতে থাকে-










I'll escape now from that world-
From the world for Jean Valjean.
Jean Valjean is nothing now!
Another story must begin!











সময়ের দরিদ্রতা তুলে আসে নিচের ছন্দগুলিকে ভর করে-


At the end of the day
you’re another day older
And that’s all you can say
for the life of the poor.
It’s a struggle!
It’s a war!

And there’s nothing
that anyone’s giving.
One more day standing about- What is it for?
One day less to be living.
At the end of the day
you’re another day colder
And the shirt on your back
doesn’t keep out the chill.

And the righteous hurry past
They don’t hear
the little ones crying
And the plague is coming on fast
Ready to kill-

One day nearer to dying!

At the end of the day
there’s another day dawning
And the sun in the morning is waiting to rise
Like the waves crash on the sand
Like a storm that’ll break any second
There’s a hunger in the land
And there’s gonna be hell to pay
At the end of the day!





ওদিকে ভাগ্যহত এক মা তার সন্তানকে দত্তক দিয়ে তার ভরণপোষণের জন্যে কাজ করে যাচ্ছিল ভালজাঁর প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু ঘটনা বসত সে ঐ প্রতিষ্ঠান থেকে বিতাড়িত হয়। সন্তানের খচর বহন করতে নিজের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সাথে সাথে নিজেকেও বিকিয়ে দেয়। তাতেও দায় মেটে না। আরও অর্থের প্রয়োজন! আরও আরও অর্থ! দেরিতে হলেও ঘটনাটা জানতে পারে জা ভালজাঁ। মৃত্যুপথযাত্রী ঐ মা'কে কথা দেয় তার সন্তানকে ভালজাঁ নিজের দায়িত্ব হিসেবে তুলে নিলো। কিন্তু ততদিনে আবারও বিপদে পড়েছে ভালজাঁ। সার্জেন্ট জাভেয়া চলে আসে তাকে ধাওয়া করে। পালায় ভালজাঁ।



দত্তকে দিলেও সেখানে কাজের মেয়ে হিসেবেই থাকতে হচ্ছিল কজেটকে। কজেটের দিন যাপনের দুঃখ আর স্বপ্নের ভুবনটা তার ছন্দেই উঠে আসে-










There is a castle on a cloud
I like to go there in my sleep.
Aren’t any floors for me to sweep,
Not in my castle on a cloud.

There is a lady all in white
Holds me and sings a lullaby.
She’s nice to see and she’s soft to touch
She says, Cosette, I love you very much.

I know a place where no one’s lost
I know a place where no one cries.
Crying at all is not allowed,
Not in my castle on a cloud.







কজেটকে নিয়ে পালায় ভালজাঁ। সার্জেন্ট জাভেয়া পাগলের মত খুঁজতে থাকে তাকে। এভাবেই সময় পার হতে থাকে। সময়ের সাথে চলে আসে সমসাময়িক অবস্থার বর্ণনা। বিদ্রোহ তখন শহর জুড়ে। তেমনই এক বিদ্রোহীর কথায় উঠে আসে ঐ সময়ের অবস্থার বর্ণনা-








There was a time we killed the King
We tried to change the world too fast.
Now we have got another King,
He is no better than the last.
This is the land that fought for liberty-
Now when we fight we fight for bread!
Here is the thing about equality-
Everyone’s equal when they’re dead.
Take your place! Take your chance!
Vive la France! Vive la France!










তেমনই এক বিদ্রোহী মারিয়াস। সেই মারিয়াসের সাথেই শহরের এক প্রান্তে দেখা হয় কজেটের সাথে। কজেট ততদিনে অবশ্য প্রাপ্তবয়স্ক এক মেয়েতে পরিণত হয়েছে। কজেটও দেখতে পায় মারিয়াসকে। মারিয়াস আর কজেট দুজনেই দুজনের প্রতি আকর্ষণ অনুভব করে প্রথম দিন থেকেই। এই আকর্ষণে কিছুটা হলেও বিদ্রোহ থেকে মন ছুটিয়ে নেয় মারিয়াসের। তার প্রমাণ মেলে তার কথায়। যেখানে বিদ্রোহীদের কাছে লাল আর কালো রঙ এর মানে-


– Red!
– The blood of angry men!
– Black!
– The dark of ages past!
– Red
– a world about to dawn!
–Black
– the night that ends at last!




সেখানে মারিয়াসের কাছে লাল আর কালো রঙ এর মানে হয়ে যায় এমন-

– Red!
– I feel my soul on fire!
– Black!
– My world if she’s not there!
– Red!
– The colour of desire!
– Black!
– The colour of despair!





ভীরের মাঝেই কজেটকে হারিয়ে ফেলে মারিয়াস। মরিয়া হয়ে উঠে তার দেখা পাবার জন্যে। বান্ধবী এপনিকে অনুরোধ করে হারিয়ে ফেলা কজেটের খোঁজ নিয়ে আসার জন্যে। মারিয়াস জানত না এই এপনিই হচ্ছে কজেটকে দত্তক নেয়া দম্পতির সন্তান। আরও জানত না যে এমপনি তার মনে মারিয়াসকে অনেক আগেই স্থান দিয়ে বসে আছে। তবুও এপনি মারিয়াসের অনুরোধে খুঁজে বের করে কজেটের ঠিকানা। পৌঁছে দেয় মারিয়াসকে কজেটের বাড়ির বাগানের প্রান্তে।



বিদ্রোহীরা অংশগ্রহণ করে শোক প্রদর্শনে। সেখানেই তাদের বিক্ষোভ শুরু করে তাদের ছন্দে-











Do you hear the people sing
Singing the song of angry men?
It is the music of a people
Who will not be slaves again!
When the beating of your heart
Echoes the beating of the drums
There is a life about to start
When tomorrow comes!



উপস্থিত জনতাকে আহ্বান জানাতে থাকে বিদ্রোহীরা-

Will you join in our crusade?
Who will be strong and stand with me?
Beyond the barricade
Then join in the fight
Is there a world you long to see?
To be free!

That will give you the right



শুরু হয়ে যায় বিদ্রোহ। এর মাঝে গেভ্রোস বের করে দেয় তাদের মাঝেই লুকিয়ে থাকা ইন্সপেক্টর জাভেয়াকে। জাভেয়া চেয়েছিল ভুল তথ্য দিয়ে সহজেই বিদ্রোহীদের কাবু করতে। কিন্তু সেই উদ্দেশ্য ধরা পরে যায় চতুর বাচ্চা গেভ্রোসের কারণে। তাকে বন্দী করা হয়। এদিকে জাঁ ভালজাঁ জানতে পারে তার মেয়ে কজেট প্রেমে পড়েছে মারিয়াসের। আরও জানতে পারে তার জীবন এখন সংকটময় মুহূর্তে আছে। মেয়ের ভালোবাসাকে বাঁচাতে ছুটে যায় ভালজাঁ। বিদ্রোহীদের সাথে বন্ধু হয়ে যোগদান করে। কৌশলে মুক্ত করে দেয় ইন্সপেক্টর জাভেয়াকে।




এপনির আকস্মিক মৃত্যুতে কিছুটা মনোবল হারায় বিদ্রোহীরা। বারুদ শেষ হয়ে আসলে বারুদের সংগ্রহে বাইরে যেতে ভীত হয়ে থাকে সবাই। সাহস যোগাতেই ঐ ছোট বিদ্রোহী বাচ্চা গেভ্রোস কণ্ঠে ছন্দ নিয়ে উৎসাহ দিতে থাকে সঙ্গীদের।



There is a life about to start
Do you here the people sing
Singing the song of angry men
It is the music of the people
When the beating of your heart
Who will not be slaves again.
When tomorrow comes!
Echoes the beating of the drums






সৈন্যদের তোয়াক্কা না করে ঐ বিদ্রোহী বাচ্চা গেভ্রোস এগিয়ে যায় বারুদ সংগ্রহে, প্রাণ হারায় সেখানেই। গেভ্রোসকে হারিয়ে তাদের বিদ্রোহী চেতনা আরও দৃঢ়টা লাভ করে। যদিও সৈন্যদের কামানের সামনে তারা বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারে না। তবুও নিজেদের শেষ সময় পর্যন্ত তারা আক্রমণ চালিয়ে যায়। সাহসের সাথেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে।

এদিকে গুরুতর আহত অবস্থায় মারিয়াসকে নিয়ে সুড়ঙ্গপথে সেখান থেকে বের হয়ে যায় জাঁ ভালজাঁ। সুরঙ্গ মুখে শেষ প্রান্তে এসে আবারও দেখা মেলে ইন্সপেক্টর জাভেয়ার। অনেক দেরিতে হলেও জাভেয়া বুঝতে পারে ভালজাঁকে নিয়ে তার ভুল ধারণাটাকে। নিজেকেই প্রশ্ন করে উত্তর খুঁজে বেড়ায় জাভেয়া-





And he gave me back my life!
Who is this man?
What sort of devil is he?
To have caught me in a trap
And choose to let me go free?
It was his hour at last
Wipe out the past
To put a seal on my fate
All it would take Was
And wash me clean off the slate! a flick of his knife
Vengeance was his



আত্মদহন সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করে জাভেয়া...




ওদিকে নিজের বাসায় ধীরে ধীরে সুস্থ হতে থাকে মারিয়াস। মোটামুটি সুস্থ অবস্থায় ফিরে যায় তাদের আড্ডা-স্থলে। বুলেট আর কামানের গেলায় শত ছিন্ন সেই আড্ডার সেই শূন্য চেয়ার টেবিল তাকেও তার মনটাকেও দহনে জ্বালাতে থাকে। বন্ধুদের সৃতিতে কাতর হয়ে তার কণ্ঠে চলে আসে ছন্দ-

There’s a grief that can’t be spoken
There’s a pain goes on and on
Empty chairs at empty tables
Now my friends are dead and gone.
Here they talked of revolution
Here it was they lit the flame
Here they sang about tomorrow
And tomorrow never came…

From the table in the corner
They could see a world reborn
And they rose with voices ringing
And I can hear them now!
The very words that they had sung
Became their last communion
On the lonely barricade…... at dawn.

Oh my friends, my friends, forgive me
That I live and you are gone
There’s a grief that can’t be spoken
There’s a pain goes on and on…

Phantom faces at the window
Phantom shadows on the floor
Empty chairs at empty tables
Where my friends will meet no more.
Oh my friends, my friends...... don’t ask me

What your sacrifice was for
Empty chairs at empty tables

Where my friends will sing…... no more.





শেষ পর্যন্ত দায়বদ্ধতা থেকে মুক্ত হয় জাঁ ভালজাঁ। প্রাণের চেয়ে প্রিয় কন্যা সমতুল্য কজেটকে তার প্রিয়পাত্রের হাতে তুলে দিয়ে তাদের জীবন থেকে অনেক দূরে চলে আসে। প্রার্থনা করতে থাকে কজেটের সুখী জীবনের জন্যে, ক্ষমা প্রার্থনা করে তার পাপের জন্যে। একদম অন্তিম মুহূর্তে কজেটের উপস্থিতি ঘটে আবার। নিজের জীবনের কথাগুলিকে অক্ষরে বন্দী করে বিদায় নেই ভালজাঁ।






অভিনয় নিয়ে বলার মত তেমন কিছুই নেই। প্রতিটা চরিত্র চেষ্টা করেছে তাদের সত্তাটাকে ঢেলে দিতে। উপন্যাসের সাথে তুলনা করলে হয়ত অনেক কিছুই অনুপস্থিত, তবে অভিনেতা আর অভিনেত্রীদের অভিনয় সেই অংশটুকুকে পূর্ণতা দান করেছে। Wolverine খ্যাত Hugh Jackman এর Real Steel এ তার অভিনয়টাকেই এতদিন তার ভালো কাজ হিসেবে ধরে নিয়েছিলাম। আজকের পর সেই ধারণা অবশ্যই পাল্টে গেছে।  Les Misérables তার সবচেয়ে ভালো কাজগুলির মধ্যে অন্যতম এটা বলতে আমার মোটেও কোন দ্বিধা নেই। 

এছাড়াও Russell Crowe এর অভিনয় বরাবরের মতই চমৎকৃত করেছে। খল একটা চরিত্র দেখার পর অভিনয়ের মাঝেই যখন তার প্রতি বিদ্বেষ মনে না আসে ততক্ষণ পর্যন্ত খল চরিত্রটা কোনভাবেই সার্থক হতে পারে না। Russell Crowe সেই হিসেবে অতিমাত্রায় সার্থক অভিনেতা। মুভিতে কিছু কিছু সময় তার অভিনয় সার্জেন্ট জাভেয়া চরিত্রটাকে এত বেশি পারফেকশন দিয়েছে যে প্রায়ই মন বিদ্বেষে ভরে উঠত। 




 মুভিটি নিয়ে অনেক গুলি মিউজিক্যাল কনসার্ট শো হয়েছে। ইউটিউবে তাদের অনেকগুলি লিংক পাওয়া যাবে। তবুও কেউ আগ্রহী হলে এই লিংক হতে মিউজিক্যাল কনসার্ট শো'টি দেখতে পারেন।





এছাড়া কেউ সরাসরি মুভিটি দেখতে চাইলে এই লিংকে গিয়ে অনলাইন স্ট্রিম হিসেবে দেখতে পারবেন।
Les Misérables - Online Stream



 ঘটনার বর্ণনায় পুরোটাই স্পয়লার হয়ে গেছে। তবুও নিজের ভালোলাগা অংশগুলিকে প্রকাশ না করে থাকা যাচ্ছিল না। তাই কিবোর্ডকে অত্যাচার করে লিখেই ফেললাম। যারা সময় নিয়ে পড়লেন তাদের জন্যে বেশ অনেক অনেক অসমবেদনা রইল :p







শুক্রবার, মে ০৬, ২০১৬

অসম্ভব কল্পনা - গেটস্‌ এবং জব্‌স এর অলীক গল্প!



ধরুন মাইক্রোসফট এর প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস এবং এ্যাপল ইন্‌ক এর প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জব্‌স একদম প্রাথমিক পর্যায়ে তাদের আইডিয়া গুলি নিয়ে একত্রে কাজ করতে শুরু করল। তারপর ব্যাপারটা কি ঘটতে পারত?

তাহলে দুইটি ব্যাপার ঘটতে পারত-

১ম ঘটনাঃ
মাইক্রোসফট এর বিল গেটস এবং এপল এর স্টিভ জব্‌স মিলে তাদের আইডিয়া প্রতিষ্ঠা করতে পারল। এবং তারা তাদের আইডিয়ার ব্যবসায়িক নাম দিল "মাইক্রো এ্যাপল"। প্রযুক্তি দুনিয়াতে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী আর কেউ কোনভাবেই টিকতে পারল না!

২য় ঘটনাঃ
মাইক্রোসফট এর বিল গেটস এবং এপল এর স্টিভ জব্‌স মিলে তাদের আইডিয়া প্রতিষ্ঠা করতে কাজ করতে শুরু করল। কিছুদিন পর স্টিভ জবস বিল গেট্‌স এর একটা কোর প্রোগ্রামের ডিজাইন বাতিল করে তার কোর ডিজাইন তাদের সিস্টেমে ইনপ্লান্ট করল। এর কিছুদিন পর বিল গেটস স্টিভ জবস এর তৈরি করা ইন্টারফেস প্রোগ্রামটা ফেলে দিয়ে তার পছন্দের ইন্টারফেস প্রোগ্রাম ইন্টিগ্রিট করল।
ফলাফল, বছর না ঘুরতেই তাদের মাঝে প্রচণ্ড দ্বন্দ্ব দেখা দিল। এবং অবস্থা এমন দাঁড়াল যে তাদের কোন আইডিয়াই তারা বাস্তবায়ন করতে না পেরে সব ছেড়ে ছুড়ে নতুন করে ভিন্ন কিছুর দিকে ঝুঁকে পড়ল।



উভয় ঘটনার ফলাফল হচ্ছে-
"বিশ্ব বঞ্চিত হল চমৎকার দুই অপারেটিং সিস্টেমের প্রাপ্তি হতে"




আরও একটি ঘটনা হতে পারত। তবে সেই ঘটনাটা ঘটিবার জন্যে তাদের উভয়কে জন্মসূত্রে বাঙ্গালী হওয়া প্রয়োজন। যেহেতু তারা কেউই জন্মসূত্রে বাংলাদেশী নন, তাই আপাতত সেই কল্পনা শেয়ার করা থেকে বিরত থাকলাম।






বুধবার, এপ্রিল ২৭, ২০১৬

চালু না করেই একাধিক PDF থেকে কাঙ্ক্ষিত টপিকটি খুঁজে বের করুন

বার্ষিক প্রতিবেদন, ম্যানুয়াল, গবেষণাপত্র, একাডেমিক ফাইল, স্টেটমেন্ট কিংবা নোট অথবা ফর্ম সহ আরও নানা ডকুমেন্ট হিসেবেই এখন Portable Document Format বা PDF ফাইল বেশ সমাদৃত। সাধারণত আমরা কোন টপিক কোন PDF থেকে বের করতে PDF Reader এ ফাইলটি চালু করে তার সার্চ সিস্টেম ব্যবহার করে টপিকটি খুঁজে থাকি। কিন্তু যারা অফিসিয়াল কিংবা গবেষণার কাজে অনেক সংখ্যক PDF ফাইল ব্যবহার করে থাকেন তাদের জন্যে এই কাজটা বেশ ঝামেলাপূর্ণ। অনেক বেশি PDF হলে কাঙ্ক্ষিত টপিকটি কোন PDF ফাইলটিতে রয়েছে তা চট করেই বের করা সম্ভব হয় না। তখন প্রায় প্রতিটি ফাইল চালু করেই তা খুঁজতে হয়।





কিন্তু একটু চেষ্টা করলেই এই ঝামেলাপূর্ণ কাজটিকে আরও একটু সহজ ভাবে করা যায়। আর এই সহজ পদ্ধতিতে করার কাজটি করার জন্যে আপনাকে ব্যবহার করতে হবে Foxit Reader নামের চমৎকার এক PDF রিডার। সাধারণত যে সকল PDF Reader দিয়ে আমরা PDF ফাইল গুলি পড়ি বা দেখি তার একটা সাধারণ ফিচারের মধ্যে Search ফিচার থাকলেও তা কেবলমাত্র সচল ফাইলটির মাঝে টপিক খুঁজে বের করে।

Foxit Reader এ এই Search ফিচারটির আরও একটু উন্নত করেছে। তারা শুধুমাত্র সচল ফাইলটির পরিবর্তে বর্ধিত সুবিধা হিসেবে একটি ডাইরেক্টরির অন্তর্গত সকল PDF ফাইল থেকে উক্ত টপিক খুঁজে বের করার সুবিধা যুক্ত করেছে। তাই কেউ যদি নির্দিষ্ট একটি ফোল্ডারে কিছু সংখ্যক PDF ফাইলের মধ্যে কোন কোন ফাইলে তার কাঙ্ক্ষিত টপিকটি রয়েছে তা বের করতে চায় তবে সে সকল PDF ফাইল চালু না করে শুধুমাত্র ডাইরেক্টরি সার্চ সুবিধা ব্যবহার করেই জানতে পারবে কোন কোন PDF ডকুমেন্টে তার ঐ কাঙ্ক্ষিত টপিকটি রয়েছে।




ডাইরেক্টরি বা ফোল্ডারের অন্তর্গত PDF ফাইলগুলি হতে আপনার টপিকটি খুঁজতে প্রথমে Foxit Reader টি চালু করুন। এরপর এর উপরে মেনু বারের ডান দিকে যে Find বারটি রয়েছে তার বাম পাশের ফোল্ডারের আইকনটিতে ক্লিক করুন, নতুন একটি সাইড পপ-আপ চালু হবে। 

এখানে "Where would you like to search?" এর ড্রপ-ডাউন বক্স হতে সিলেক্ট করুন 'All PDF Document in' এবং এর নিচের বক্স হতে আপনার PDF অবস্থিত ডাইরেক্টরি বা ফোল্ডারটি সিলেক্ট করুন। এরপর ৩য় বক্সে আপনার কাঙ্ক্ষিত টপিকটি লিখে Search বাটনে ক্লিক করুন।




কিছুক্ষণের মধ্যেই আপনার কাঙ্ক্ষিত টপিক যে সকল ডকুমেন্টে রয়েছে তার একটি লিস্ট সেখানে চলে আসবে। সার্চ সুবিধা আরও সুবিধাজনক করার জন্যে এই সার্চ রেজাল্টেই ডকুমেন্ট গুলিতে উক্ত টপিক কোথায় কোথায় অবস্থিত তা হাইপার লিংক তৈরি হয়ে যাবে। ফলে আপনার ঐ ডকুমেন্টে উক্ত টপিক যেখানে যেখানে রয়েছে তার পেইজ নম্বর এবং অবস্থান সহকারে একটি লিংক সেখানে পেয়ে যাবেন। লিংক সমূহে ক্লিক করলেই ডকুমেন্টটি রিডারে চালু হয়ে আপনাকে আপনার টপিকে সরাসরি নিয়ে যাবে। 

তবে এই সুবিধা শুধুমাত্র Text based PDF ডকুমেন্টের বেলায় প্রযোজ্য। আপনার PDF ডকুমেন্টটি যদি ছবি কিংবা স্ক্যান করা পেইজ দিয়ে তৈরি হয়ে থাকে তাহলে কোন PDF Reader এর পক্ষে সম্ভব হবে না সেই টপিক ঐ ছবি থেকে খুঁজে বের করা।











আপনার Google Account এ সংরক্ষণ করুন প্রয়োজনীয় সকল ওয়েব লিংক

     বিভিন্ন প্রয়োজনেই আমরা বিভিন্ন সাইটের লিংক বুকমার্ক হিসেবে সংরক্ষণ করি। পূর্বে এই সুবিধা কেবলমাত্র ব্রাউজার কেন্দ্রিক হলেও এখন তার পরিধির ব্যাপ্তি ঘটেছে। এখন ব্রাউজারের মেমরি ব্যবহারের সুবিধার পাশাপাশি রয়েছে ক্লাউড বুকমার্কিং পদ্ধতি। সে লক্ষে ভিন্ন ভিন্ন এ্যাপ ডেভেলপার ভিন্ন ভিন্ন ফিচার সমৃদ্ধ এ্যাপ ইতোমধ্যে তৈরি করেছেন। তেমনই কিছু পরিচিত এ্যাপের মাঝে আছে Pocket, Raindrop.io, Dropmark, Dragdis, Pinterest সহ আরও অনেক। 

Google Chrome ব্রাউজার অনেক আগে থেকেই ব্রাউজারের বুকমার্ক নিজেদের ক্লাউড সার্ভারে সংরক্ষণ এবং হালনাগাদ করার সুবিধা দিয়ে আসছিল। ঐ সুবিধার আলতায় Google Chrome ব্রাউজার ব্যবহারকারী যে সকল সাইট বা লিংক ব্রাউজারের বুকমার্ক সিস্টেমে সংরক্ষণ করতেন তা ঐ ব্যবহারকারীর Google একাউন্টে স্বয়ংক্রিয় ভাবে সংরক্ষণ হয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অনেক লিংক বুকমার্ক করা হয়ে গেলে সেখান থেকে প্রয়োজনীয় লিংকটি খুঁজে পেতে কিছুটা সময় লেগে যায়, আর বুকমার্ক বারটিও বেশ হিজিবিজি দেখা যায়। আর যারা অনেক বেশি লিংক এভাবে সংরক্ষণ করেন তাদের ব্রাউজার কিছুটা স্লো কাজ করতে থাকে। 






এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসার জন্যে গুগল "Save to Google" নামে নতুন একটি এ্যাপ ডেভেলপ করেছে। এই এ্যাপ আপনার সমস্ত লিংক গুগলের সার্ভারে সংরক্ষণ করবে এবং অন্য সকল বুকমার্কিং এ্যাপের মত এটিও আপনাকে লিংক কন্টেন্টের ভিত্তিতে ট্যাগ ব্যবহারের সুবিধা প্রদান করবে। সেখানে ইচ্ছে করলে আপনি পোষ্ট প্রদত্ত ছবি গুলি যে কোন একটিকে Thumb বা প্রিভিউ হিসেবে পছন্দ করতে পারবেন এবং ইচ্ছে হলে লিংকটির সাথে ট্যাগ যুক্ত করে দিতে পারবেন।

Google এর এই সুবিধাটি পেতে আপনাকে প্রথমে আপনার Google Chrome ব্রাউজারে "Save to Google" এক্সটেনশনটি ইন্সটল করতে হবে। এরপর এক্সটেনশনটি আপনার একাউন্ট এক্সেস করার অনুমতি চাইবে। অনুমতি প্রদান করলেই সে কাজ করার উপযোগী হয়ে যাবে। 




এরপর যখনই আপনি কোন সাইট বা কোন পেইজের লিংক সংরক্ষণ করতে চাইবেন তখন উক্ত সাইট বা পেইজটি ব্রাউজারে লোড হবার পর শুধুমাত্র এক্সটেনশন বার হতে হলুদ স্টার চিহ্নিত এই "Save to Google"এক্সটেনশন বাটনে ক্লিক করতে হবে। ক্লিক করার পর পরই একটি pop-up উইন্ডো দেখতে পাবেন। এই উইন্ডোতে আপনি পোষ্ট সম্বলিত ছবি সমূহের মধ্য থেকে পছন্দসই ছবি Thumbs বা প্রিভিউ হিসেবে পছন্দ করতে পারবেন। পাশাপাশি পোষ্ট ক্যাটাগরি আলাদা করার জন্যে পছন্দমত Tag দিয়ে দিতে পারবেন।





আপনার সংরক্ষিত সাইট কিংবা লিংকগুলি দেখতে হলে Google এর My Save পেইজটিতে যান। সেখানে চমৎকার ভাবে আপনার লিংক গুলিকে ছোট প্রিভিউ সহ দেখতে পাবেন। আর অনেক লিংক হলে Google এর বিল্টইন সার্চ সুবিধার মাধ্যমে খুব সহজেই আপনার সংরক্ষিত লিংকটি খুঁজে পাবেন। এছাড়াও ক্যাটাগরি আকারে Tag সেকশনে একই ট্যাগের পোষ্ট গুলি আলাদা ভাবে দেখার সুযোগ তো থাকছেই।


আপাতত Google -এর এই সুবিধাটি কেবলমাত্র Google Chrome বা Chrome নির্ভর ব্রাউজার গুলিতে ব্যবহার করা সম্ভব। Firefox বা অন্যান্য ব্রাউজার গুলির জন্যে এখনো কোন Add-on তৈরি হয়নি। তবে আশা করা হচ্ছে খুব দ্রুতই অন্য সকল ব্রাউজারের জন্যেও খুব দ্রুতই Add-on প্রকাশ করা হবে।








সোমবার, এপ্রিল ২৫, ২০১৬

Google Docs এর ডকুমেন্ট পাবলিশ করুন আরও পরিপাটি রূপে


যারা Google এর সাথে পরিচিত তারা Google Docs সুবিধাটির কথাও জানেন। বর্তমানে আমরা যে Google Drive ব্যবহার করছি সেটি Google Docs এর একটি বর্ধিত সুবিধার আলতায় পড়ে। কোন অতিরিক্ত ওয়ার্ড প্রসেসর কিংবা অফিস প্রোগ্রাম ছাড়াই অনলাইনে ডকুমেন্ট তৈরির জন্যে Google Docs সমাদৃত হয়। তবে এর আরও একটি ফিচার হচ্ছে Online Collaboration পদ্ধতি। এই ফিচার ব্যবহার করে একই ডকুমেন্ট একই সময় একাধিক স্থান হতে একাধিক নির্বাচিত ব্যবহারকারী দেখতে এবং পরিবর্তন সংরক্ষণ করতে পারে।

তবে শুধুমাত্র এক বা একাধিক ব্যক্তির ডকুমেন্ট তৈরির সুবিধা নয়, Google Docs এর আরও একটি ফিচার হচ্ছে  Document Publishing. Google Docs এ কোন ডকুমেন্ট লেখার পর ব্যবহারকারী সরাসরি সেই ডকুমেন্ট অনলাইনে সকলের সাথে শেয়ার করার সুবিধা পেয়ে থাকে। তবে সেক্ষেত্রে কেউ ডকুমেন্টটি আর পরিবর্তন করার সুযোগ পায় না, শুধুমাত্র ভিউয়ার হিসেবে ডকুমেন্টে অবস্থিত তথ্য গুলি দেখতে পারে। 



তবে ডকুমেন্ট পাবলিশ করার পর তার বাহ্যিক সাজসজ্জা আধুনিক যুগের ওয়েব সাইট কিংবা ব্লগ গুলির মত আকর্ষণীয় তাকে না, কিছুটা আদিম যুগের ওয়েব সাইটের মত দেখা যায়। যার দরুন অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলেও ডকুমেন্টটি অনেকেই পড়তে বিরক্ত বোধ করে থাকে। 


এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসার লক্ষেই কাজ করেছে Google Doc Publisher নামের একটি ওয়েব এ্যাপের ডেভেলপারগণ। তাদের স্লোগান হচ্ছে - "PUBLISH GOOD LOOKING GOOGLE DOCS"। তারা একটি চমৎকার এ্যাপ তৈরি করেছে যা গুগল ডকের সাজসজ্জায় অনেকটাই পরিবর্তন এনে দেয়। ডকুমেন্টটি তৈরি করার সময় যেমন সাজসজ্জায় থাকে, ডকুমেন্ট পাবলিশ করার পরও তার সাজসজ্জা তেমনই থেকে যায়। মোট কথা, পুরাতন যুগের ওয়েব ডিজাইনের মত পুরো স্ক্রিনটা Justify মুডের মত হয়ে যায় না।

চমৎকার এই এ্যাপটি ব্যবহার করে সহজেই আপনি আপনার ডকুমেন্ট গুলিকে আকর্ষণীয় রূপে পাবলিশ করতে পারবেন। এতে যেমন আপনার পাবলিশ করা ডকুমেন্টটি পাঠকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে, তেমনি আপনার মার্জিত ভঙ্গি আপনার লেখাতেই উঠে আসবে।



যেভাবে পাবলিশিং এর কাজটি করবেন____





  • কাজটি করার জন্যে প্রথমে আপনি আপনার ডকুমেন্টটি তৈরি করে নিন।




  • ডকুমেন্ট সম্পাদনার পর যখন পাবলিশ করার জন্যে File থেকে "Publish to the web..." অপশনটি সিলেক্ট করুন।




  • পাবলিশিং পারমিশন প্রদান করে পাবলিশ্‌ড লিংকটি কপি করে ক্লিপ-বোর্ডে নিন।




  • এরপর  Google Doc Publisher সাইটে চলে আসুন। এখানে একটি ইনপুট টেক্সট-বক্স দেখতে পাবেন। সেখানে আপনার পাবলিশ করা Google Docs এর লিংকটি পেস্ট করুন।


পেস্ট করার প্রায় সাথে সাথেই লিংকটি পরিবর্তন হয়ে যাবে। এখানে লক্ষ করে দেখবেন যেখানে আপনার Google Docs থেকে প্রাপ্ত পাবলিশিং লিংক ছিল কিছুটা এমন ফরমেটের-

https://docs.google.com/document/d/1lP8fDWJj8qD6R2SpYUc2g4eIWereIsTheLink1eAFrTSVWOBU/pub


সেখানে Google Doc Publisher এর লিংক ফরমেট হবে কিছুটা এমন-

http://gdoc.pub/1lP8fDWJj8qD6R2SpYUc2g4eIWereIsTheLink1eAFrTSVWOBU





  • এখন 'VIEW YOUR DOC' বাটনে ক্লিক করলেই নতুন একটি ট্যাবে পাবলিশ হওয়া আপনার ডকুমেন্টটি নতুন রূপে দেখতে পাবেন।




  • এখন শুধু আপনার কাজ হচ্ছে এই এ্যাপ থেকে প্রাপ্ত আপনার ডকুমেন্টের লিংকটি আপনার লেখাটির পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেয়া।



Google Doc Publisher এ পাবলিশ করা ডকুমেন্টটি যদি একাধিক পৃষ্ঠার হয়ে থাকে, তাতেও কোন সমস্যা নেই। Google Docs এবং Google Doc Publisher এ্যাপের মাধ্যমে যে লিংকটি আপনি পাচ্ছেন তাতে সকল পৃষ্ঠা স্বয়ংক্রিয় ভাবে একত্রিত হয়ে একদম ব্লগ পোষ্টের মত দেখাবে।






রবিবার, এপ্রিল ২৪, ২০১৬

কল্পগল্প - ওয়েভ লেন্থ



অবর্জাভেটরি প্যানেলে বসে থাকার মত বিরক্তিকর কাজ দ্বিতীয় আরেকটা নেই। হাজার বছরেও কোন পরিবর্তন হবে কি না তার কোন নিশ্চয়তা নেই, অথচ তোমাকে বসে বসে মনিটরিং করে যেতেই হবে। হুট করেই যদি কোন সেন্সর চিৎকার করে উঠে তখনও বিচলিত হওয়ার মত কোন কারণ থাকে না। হঠাৎ এমন করে সেন্সর গুলি। মাঝে মাঝে মনে হয় সেন্সর গুলিও বিরক্ত হয়ে গেছে এভাবে বসে বসে সময় নষ্ট করে। তাই হঠাৎ হুট হাট করে চিৎকার করে নিজেদের করুন অবস্থার জানান দেয়। আবার অন্যদিকে এর থেকে শান্তি দায়ক চাকরিও নেই বাজারে। পরিশ্রম বলতে কিছুই নেই, অথচ মাথার ঘাম পায়ে ফেলেও যা উপার্জন করা যায় না এখানে তার চেয়ে পরিমাণে অনেক বেশিই বেতন পাওয়া যায়।

স্যাম এখনো দ্বিধাগ্রস্ত এই ব্যাপারটা নিয়ে। যদিও এখানে আসার কারণ নিয়ে তার কোন দ্বিধা নেই। সে নক্ষত্রকে ভালবাসে, আর ভালোবাসে বলেই এমন একটা কাজের জন্যে ছুটে এসেছে এতদূর। সখ মেটানো আর অর্থপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা যেখানে আছে সেখানে কে আসতে চাইবে না! তবে দ্বিধা হচ্ছে, এখনো কেন সে এখানে আটকে আছে, এই নিয়ে। এমন নয় যে তার সখ মিটে গেছে। তবে একঘেয়েমির একটা ব্যাপার চলে এসেছে। কাজে যোগদানের পর সে প্রথম দুই মাস স্বস্তি নিয়ে ঘুমাতেও পারেনি উত্তেজনায়। বলতে গেলে পুরো সময়টাই জেগে কাটিয়েছে। অবর্জাভেটরিতে যতক্ষণ থাকত ততক্ষণ এইটা ঐটা নিয়ে ভালো ভাবে জানার চেষ্টা করত। আর বাকি পুরোটা সময় এখানকার বিশাল অনলাইন লাইব্রেরি থেকে জানা না জানা নক্ষত্র সম্পর্কে যে তথ্যগুলি জমা আছে তা মাথায় ঢোকাবার চেষ্টা করত। কিন্তু আগ্রহ ধীরে ধীরে কমে আসে। এখানে আছে এখন প্রায় দেড় বছর হতে চলল। ইতোমধ্যে সে বুঝে নিয়েছে এখানে আরও কিছুদিন থাকলে হয় উন্মাদ হয়ে যাবে, নয়তো আগের অপারেটরটার মত আত্মহত্যা করে বসবে। যদিও এই তথ্যটা ক্লাসিফাইড ছিল, তবে স্যাম ঠিকই বের করে নিয়েছে।

এই স্পেস অবর্জারটরির মূল কাজ যদিও মহাবিশ্বের অবস্থানগত পরিবর্তন গুলি রেকর্ড করা। তবে এটা ছাড়াও এখানে আরও কাজ হয়। এটা অবশ্য খুব গোপন কিছু নয়, কমবেশি সবাই জানে। মহাবিশ্বে ছাড়িয়ে থাকা কোন কোণে বুদ্ধিমান কোন প্রাণী রয়েছে কি না তা বের করার চেষ্টা করা হয়। প্রচলিত ব্যবস্থাতেই কাজটা চলে। একটা সিগনালে করে বেশ কিছু সম্ভাষণ আর বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষা করার সাধারণ কিছু তথ্য প্রচার করা হয়। সেই সিগন্যাল প্রতিনিয়ত মহাবিশ্বের অজানা প্রান্তের উদ্দেশ্যে ছড়িয়ে যাচ্ছে তাদের স্যাটেলাইট কম্যুনিক্যাশন প্যানেল থেকে। যদি কোন বুদ্ধিমান প্রাণী কোথাও থাকে তবে তারা সেই সিগন্যাল রিসিভ করতে পারবে এমনটা ধারণা করা হয়। আর যারা এমন সিগন্যালকে রিসিভ করতে পারবে আশা করা যায় তারা সেই সিগন্যালের বিপরীতে তাদের সিগন্যাল ব্রডকাস্টও করতে পারবে।

তবে স্যামের এখানে কিছু দ্বিমত রয়েছে। সে অবশ্য আশা করে মহাবিশ্বের কোন কোণে বুদ্ধিমান প্রাণীর বসবাস রয়েছে। তবে তার মানে এই নয় যে তারা সরাসরি আমাদের মতই প্রযুক্তি ব্যবহার করে। যেহেতু প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত নয় সেই হিসেবে আমাদের জ্ঞানের সাথে তাদের জ্ঞানের তফাত থাকতেই পারে। আমরা যেভাবে জ্ঞানের ব্যবহার করছি তাদের জ্ঞানের ব্যবহার তারচেয়ে ভিন্ন কিছু হওয়া খুব অস্বাভাবিক নয়। আর তাই যদি হয় তবে কয়েকটি ঘটনা ঘটতে পারে। প্রথমত, সিগন্যালটি তাদের পর্যন্ত পৌছলেও সেটা তারা ধারণ করবে না। দ্বিতীয়ত, যদি ধারণ করেও তবে তারা তা ডিকোড করতে বা বুঝতে পারবে না। আবার যদি তারা ডিকোড করতেও পারে তবে সেই কোডের অর্থ তারা বুঝবে সেটা হয়ত সম্ভবও হবে না। আবার এই নিয়ে তার একটা নেতিবাচক ধারণাও রয়েছে। যদি ধরা হয় তাদের পুরো সভ্যতাটাই সিগন্যাল নির্ভর হয় তবে মানুষ যে সিগন্যাল ব্রডকাস্ট করছে সেটা তাদের প্রচলিত সিগন্যাল সিস্টেমকে ধ্বংসের মুখে ফেলে দিতে পারে। আর এটা যদি বাস্তব হয় তবে তারা কিছু বোঝার আগেই হয়ত ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।

কিছুদিন আগে অবশ্য স্যম তার এই থিউরিটা নিয়ে ড. আলভিনের সাথে কথা বলেছিল। ড. আলভিন তার এই থিউরি শুনে তো হেসেই খুন! লোকটা যে এমন ভাবে হাসতে পারে সেটা হয়ত স্যামকে এমনিতে কেউ বললে বিশ্বাসই করত না। একান্তই নিজের চোখে দেখেছে বলেই বিশ্বাস করতে পেরেছে। ড. স্যাম হাসির পরে অবশ্য তার ধারণার একটা ভুলও তাকে ধরিয়ে দিয়েছিল। ভুলটা হল, যদি এমন কোন সভ্যতার উপস্থিতি সত্যিই থেকে থাকে তবে আমাদের পাঠানো সিগন্যাল পাওয়ার অনেক পূর্বেই তারা বিলীন হবে। তার ভাষ্যমতে আরও অনেক ওয়েভ লেন্থের সিগনাল ইতোমধ্যে মহাবিশ্বে চলাচল করছে। যদিও সেগুলি অর্থবহ কোন সিগন্যাল নয়। তবে যদি সিগন্যালের কারণেই অন্য কোন সিগন্যাল ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, তবে ঐ সব সভ্যতা অনেক আগেই মৃত্যুবরণ করেছে। স্যাম তার পরেও আরও একটা কিছু বলতে চাচ্ছিল। কিন্তু ড. আলভিনের সময় না থাকায় আর বলা হয়নি। এরপর অবশ্য ড. আলভিনের সাথে কথা বলবার সুযোগও হয়নি আর। ক’দিন বাদেই ড. আলভিন স্পেস অবর্জাভেটরি থেকে পৃথিবীতে চলে যান। তার পরিবর্তে যিনি আসেন তার স্যাম সাথে ভাব জমানোর মত সাহস করে উঠতে পারেনি।

স্যামের চাকরির চুক্তিটা বেশ লম্বা সময়ের। আর এই লম্বা সময়ের পুরোটাই একরকম এই স্পেস অবর্জাভেটরিতে কাটাতে হবে তা আগেই জানানো হয়েছিল তাকে। পৃথিবীতে অবশ্য তার জন্যে অপেক্ষায় আছে তেমন কেউ নেই। তাই এই নিয়ে তার কোন আক্ষেপও তৈরি হয় না। যদিও মাঝে মধ্যে মুক্ত জীবনের কথা মনে পড়ে। তখন কিছুটা দুঃখবোধ হয়। কিন্তু সেটা ঐ পর্যন্তই। নিজের কাজ আর সখের সমন্বয় করার আনন্দটাকে মনে করেই দিন পার করতে থাকে সে।

তেমনি একদিন সে বসেছিল অবর্জাভেটরি প্যানেলের সামনে। মুখের সামনে রিডার ধরে সেখানে দুই আলোকবর্ষ দূরের একটা গ্রহের উপাদান গুলি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ছিল। ব্যাপারটা তখনই ঘটল, একটা সেন্সর হুট করেই তার স্বরে চিৎকার জুড়ে দিল। যদিও এমন চিৎকার শুনে স্যাম অভ্যস্ত, কারার মত তেমন কিছুই নেই। তবুও রিডারটা রেখে উঠে দাঁড়াল। তারপর প্যানেলের সেন্সর মনিটরটার দিকে এগিয়ে গেল সে। রিডিং দেখেই বুঝল হঠাৎ করেই একটা লাইট রিসিভার কিছু সময়ের জন্যে কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল। সেটা যেমন হঠাৎ করেই নিজের কাজ বন্ধ করেছিল, তেমনি আবার নিজে নিজেই স্বয়ংক্রিয় কাজ করতে শুরু করে দিয়েছে। যদিও নিয়ম অনুযায়ী এটা নিয়ে রিপোর্ট করা উচিৎ। তবে সিস্টেমে এমন অনেক গ্লিচই থাকে, সে নিয়ে এত উত্তেজিত হওয়ার কিছু নেই। রিডিং আবার আগের মতই নিচ্ছে দেখে নিজের স্থানে ফিরে আসছিল স্যাম।

চেয়ারটার কাছাকাছি পৌছতেই আবার আরেকদিকের প্যানেলে আরেকটা সেন্সর চিৎকার করে উঠল। এবার একটু বিরক্ত হল সে। মনে হচ্ছে সব সেন্সরই বোধহয় আজ এক সাথে চিৎকার করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঘুরে আবার যে সেন্সর শব্দ করেছিল সেটার মনিটরের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। এটা হিট সিগনাল প্রসেস করার সেন্সর। এখানেও একই ঘটনা। লাইট সেন্সরের মত এই সেন্সরটাও অল্প কিছু সময়ের জন্যে থেমে গিয়েছিল। তারপর তার আসার আগেই আবার কাজ শুরু করে দিয়েছে। রিডিংটা দেখে নিয়ে যখন বুঝল আর কোন সমস্যা হচ্ছে না তখন ফিরে গেল নিজের অবস্থানে। রিডারটা আবার মুখের সামনে তুলে ধরে ডুবে যেতে লাগল তথ্যের সমুদ্রে।

হঠাৎ কি মনে করে অবর্জাভেটরির বাইরে থাকা ভিডিও রিসিভারের রেকর্ড করা ভিডিও চালু করল। বর্তমান সময়ের প্রায় সাথে সাথেই সেটা ভিডিও ক্যাপচার করে পাঠাতে পারে। তবুও ট্রান্সমিশন আর প্রসেসিং করার জন্যে কিছু সময় এর মাঝে ব্যয় হয়। তবে সেটা এতই ক্ষুদ্র যে না বলে দিলে বোঝার উপায় নেই। মনে মনে হিসেব করে যে সময়টাতে লাইট সেন্সরটা এলার্ম দিচ্ছিল সেই সময়ের কিছু পূর্বের ভিডিও আর্কাইভ চালু করল। নাহ্‌, সব ঠিকঠাকই চলছে। কোন সমস্যা চোখে পড়ছে না। তবুও ভিডিও দেখতে থাকল।

ভিডিও দেখতে দেখতে স্যামের শিরদাঁড়া বেয়ে একটা ঠাণ্ডা স্রোত নেমে গেল। এটাকেও কি সিস্টেম গ্লিচ বলবে?! কিন্তু আর কি ব্যাখ্যা হতে পারে? যা দেখছে সেটা হলেও বেশ বড় ধরণের বিপদে পড়তে যাচ্ছে তারা। তবে প্রশ্ন হচ্ছে শুধুই কি তারা? এবার আর অবহেলা না করে দ্রুত রিপোর্ট করল। তারপর বেশ উত্তেজনা নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকল। বার বার ঘড়ি দেখে সময় পার করছিল। আর কোন রিপ্লাই পাচ্ছিল না বলে হাতের রিডারের মেসেজ বক্সে চোখ বোলাচ্ছিল। কিন্তু শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কোন রিপ্লাই না পেয়ে চরম হতাশ হয়ে পড়ল। আরও কিছু সময় অপেক্ষা করে শেষে নিজের রুমে ফিরে গেল।

কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও মন থেকে ব্যাপারটাকে ঝেড়ে ফেলতে পারল না। অন্তত ভিডিও ফিডে যা দেখেছে তার পর তো সম্ভবই নয়। স্পষ্ট দেখেছে সে, সূর্যের ঠিক উপরিভাগে হঠাৎ করেই একটা গর্তের মত তৈরি হল যেন। আর সেই গর্ত সূর্যের আলোগুলি যেন টেনে গিলে খাচ্ছিল! অথচ এত অল্প সময়ের জন্যে ব্যাপারটা ঘটেছে যে ভিডিও ফিডে স্লো মোশনে না দেখলে সেটা বিশ্বাসই করা যায় না!! ঘুমানোর সময়টাতেও এই ঘটনার উত্তেজনায় ঘুম হল না। ঘুম আসছে না বলে শেষে রিডারটা টেনে নিয়ে কৃষ্ণগহ্বর গুলি নিয়ে পড়তে শুরু করল। যদিও নিশ্চিত করে কোথায় কোথায় এই গহ্বর আছে তা কেউ বলতে পারছে না। যতটুকু ধারণা দেয়া হয়েছে তা সবই অনুমান নির্ভর। আবার এটাও প্রচলিত যে কৃষ্ণগহ্বর বলতে আসলে কিছুই নেই, এটা একটা ধারণা মাত্র। তবুও মোটামুটি যা পাওয়া গেল তার প্রায় সবই দেখা হয়ে গেল স্যামের।

অবর্জাভেটরিতে দিনরাত বলে কোন ব্যাপার নেই, তবুও সময় এখানে মেনে চলতে হয়। আর তাদের সময় হিসেবে এখন সকাল ধরে নেয়া যায়। সেই সকালেই সে ছুটে চলল ড. ডোনাল্ড টোরেস এর দিকে। ড. আলভিনের চলে যাবার পরই এখনকার অবর্জাভেটরির দায়িত্বে এসেছেন ড. ডোনাল্ড টোরেস। তার গম্ভীর স্বভাবের কারণে তাকে কিছুটা রাগীও মনে হয়। আর এই কারণেই তার সাথে পরিচিত হবার জন্যে খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি স্যাম। ড. টোরেসও যে ঐরকম কোন চেষ্টা করেছেন তাও নয়। আসার পর টুকিটাকি দুই একটা অফিসিয়াল কথা ছাড়া সে তেমন কোন বাক্যব্যয়ই করেন নি।

স্যাম যদিও এতদিন ড. ডোনাল্ড টোরেস থেকে দূরত্বে থাকবার চেষ্টা করে গেছে, তবুও গতকালের ঘটনার উত্তেজনায় আজ সব রাখঢাক বাদ পড়ে গেছে। তার রুমের সামনে দাড়িয়ে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি চাইল। অল্প কিছুক্ষণের মাঝেই মুখের সামনে থেকে দরজা খুলে গেল। ভেতরে প্রবেশ করল স্যাম। সম্ভবত ড. টোরেসও রাতে ঘুমান নি। রুমের ভেতরে কেন্দ্রীয় কম্পিউটারের মডিউলটির সচল অবস্থা আর ড. টোসের এর ব্যবহৃত মনিটরটিতে ভেসে উঠা বিভিন্ন ফাইল সেটাই প্রমাণ করে। ড. টোরেস স্যামের দিকে না তাকিয়েই বলতে শুরু করলেন, আমি আপনার মেসেজটি গতকাল যথাসময়েই পেয়েছি মি. স্যাম। তবে আপনাকে তার উত্তরে দ্রুত সময়ে উত্তর না দেবার জন্যে দুঃখ প্রকাশ করছি। তবে এটার পেছনেও কিছু কারণ আছে।

স্যাম সাথে সাথেই উত্তর দিল, ড. টোরেস, আমি কিছু মনে করি নি। তবে আপনার উত্তর না পেয়ে আমি আসলে বুঝতে পারছিলাম না আসলে কি করা উচিৎ।

– আসলে মি. স্যাম আমাদের আর কিছুই করার নেই এই মুহূর্তে।

– কি বলছেন ডক্টর! আপনি কি রিডিং গুলি দেখেন নি? সাথে ঐ সময়ের ভিডিও ফিডের রেকর্ডিংটা?!

– হ্যাঁ, আমি সবই দেখেছি মি. স্যাম। তবে তা নিয়ে আমাদের বিচলিত কিংবা চিন্তিত হবার কোন কারণ আর নেই।

– এমনটা কেন বলছেন ডক্টর? এর মানে কি ধরে নেব আমরা সকল আশা ইতোমধ্যে হারিয়েছি?

– না, আশা হারাই নি। তবে তুমি যা ধারণা করছিলে তার থেকে এখন আমরা শঙ্কা মুক্ত আছি।

– ড. টোরেস, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। আমি যতটুকু বুঝেছি তাতে ব্যাপারটা যদি সত্যি হয় তাহলে আমারদের অস্তিত্ব রক্ষা করা নিয়েই আমরা সমস্যায় পড়ে যাব।

– হ্যাঁ, আপনার ধারণা সত্যি স্যাম। তবে তেমন আর কিছুই হবে না। অন্তত গতকাল যাদের দ্বারা ব্যাপারটা ঘটেছিল তাদের দ্বারা আর না।

– ড. টোরেস যদি সমস্যা না থাকে তাহলে কি আমি বিস্তারিত জানতে পারি এই ব্যাপারে?

– হ্যাঁ, অবশ্যই। তার আগে আপনাকে আপনারই একটা ধারণার কথা মনে করিয়ে দেই যা আপনি আমার আগে অবস্থানরত ড. আলভিনের সাথে শেয়ার করেছিলেন। তিনি তার রেগুলার রিপোর্ট অংশে সেটি রেখে গিয়েছিলেন বলে আমি তা জানতে পেরেছি।

– আমার সিগন্যাল নিয়ে যে ধারণাটা ড. আলভিনের সাথে শেয়ার করেছিলাম, সেটা?

– হ্যাঁ, আমি সেটার কথাই বলছি।
গতকাল তুমি যেই সময়ের লাইট এবং হিট ট্যাম্পারেচার সিগনালের অসঙ্গতি আর ভিডিও ফিড এর রেকর্ডিং পাঠালে সেই একই সময় আরও একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটেছিল।

– কি ব্যাপার ডক্টর?

– আমরা যে উন্নত বুদ্ধিমত্তার প্রাণী খোঁজার জন্যে সিগন্যাল প্রেরণ এবং গ্রহণ করার আরও একটি প্রোগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি সেটা তো তুমি নিশ্চই জানো।

– হ্যাঁ, ওটা জানা আছে। তবে আমার সেখানে কোন এক্সেস নেই।

– হ্যাঁ, তোমার ওখানে কোন এক্সেস নেই। এর এক্সেস সরাসরি আমাদের কেন্দ্রীয় কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করে। আর সেটার রিপোর্ট সবার আগে আমাকেই সে প্রদান করে। তুমি গতকাল যে সময়ের অসঙ্গতি রিপোর্ট করেছিলে, সেই একই সময়ে আরও একটা অদ্ভুত সিগন্যাল আমরা রিসিভ করি। আসলে বলতে গেলে এটাই প্রথম একটা সিগন্যাল যা আমাদের এই উন্নত বুদ্ধিমত্তা প্রোগ্রাম প্রথম রিসিভ করে। প্রাথমিক অবস্থায় সিগনালটার কোন অর্থই আমরা বুঝতে পারি নি। কাল মাঝ রাত পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কম্পিউটার সেই সিগনালকে প্রসেস করেছে। এবং মাঝ রাতের কিছু পরেই সে সেই সিগনালকে ডিকোড করতে সক্ষম হয়েছে।

– কি ছিল সেই সিগন্যালে ডক্টর?

– আত্ম-চিৎকার!

– কি!!

– হ্যাঁ, আত্ম-চিৎকার। মাত্র ৩ শব্দ, মরে গেলাম, বাঁচাও।

– এর অর্থ কি?

– আসলে আমি যতটুকু ধারণা করছি তাতে বলতে পারি গতকাল যে বা যারাই ঐ অদ্ভুত কাজটি করছিল তারা মূলত অত্যন্ত বুদ্ধিমান এক ধরণের প্রাণী কিংবা প্রাণী গোষ্ঠী। এবং আরও বলতে পারি যে তারা কোন সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজটি করেনি। আরও পরিষ্কার করে বললে তারা এই মহাবিশ্বের দস্যু। আমার ধারণা তারা সূর্যের শক্তি কিংবা আলো অথবা সূর্যটাকেই কব্জা করার চেষ্টা করছিল। তবে তাদের সেই হামলা বিফল হয় কিংবা তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় আমাদের এই উন্নত বুদ্ধিমত্তা খোঁজার সিগন্যালের মাধ্যমে।

– সেটা কিভাবে ডক্টর?

– আসলে যে কোন ভাবেই হোক, আমাদের সেন্সর গুলি যখনই কোন ফল্ট করে তখনই আমাদের এই বুদ্ধিমত্তা খোঁজ করা সিগন্যাল প্রেরণের প্রায়োরিটি বেড়ে যায়। সম্ভবত একে প্রোগ্রাম করাই হয়েছে এভাবে। যাতে কোন সম্ভাবনা এড়িয়ে না যায়। গতকালও সেটাই হয়েছিল। ওরা মূলত হামলা চালানোর উদ্দেশ্যে এক ধরণের কন্ট্রোল্‌ড ব্লাকহোল তৈরি করেছে। জিজ্ঞাস করো না কিভাবে করেছে, কিন্তু তারা করেছে। আর এই ধারণা থেকেই বলছি, তারা আমাদের থেকে অন্তত হাজার গুন বেশি উন্নত একটা গোষ্ঠী। আর তাদের তৈরি ঐ ব্লাক হোল যখন আমাদের সূর্যের আলোকে তার মধ্যে নিয়ে যাচ্ছিল ঠিক তখন লাইট সিগন্যাল রিসিভার সেন্সরটি নোটিফাই করে। আর এই নোটিফাই করার আগেই আমাদের বুদ্ধিমত্তা খোঁজ করা সিগন্যাল পাওয়ার ১০০ গুন বৃদ্ধি পায়।

ওরা মূলত আমাদের এই সিগন্যালকে রেগুলার সিগন্যাল ধরে এগিয়ে এসেছিল। আর এখানেই তোমার ধারনাটা ঠাই পেয়েছে স্যাম। ওদের পুরো সভ্যতাটাই গড়ে উঠেছে সিগন্যালকে কেন্দ্র করে। আমাদের ব্রডকাস্ট সিগন্যালকে ওরা অনেক আগেই ইন্টারসেপ্ট করেছিল। আর সেই রকম প্রস্তুতি নিয়েই ওরা হামলার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু যখনই আমাদের সিগন্যালের লেন্থ রেগুলার লেন্থ ছেড়ে ১০০ গুন বেড়ে গেল তখনই ওরা বিপত্তিতে পড়ল। তোমার ধারণা কাজ করা শুরু করে দিল সেখানেই। আমাদের সিগন্যালের কারণে ওদের সিগন্যালের পরিবর্তন ঘটল। আর সেই পরিবর্তনই ধ্বংস করল ওদের। আর সেই ধ্বসের মুখেই ওরা প্রচার করল ওদের প্রথম ব্রডকাস্ট!

এক নিশ্বাসে কথাগুলি বলে থামলেন ড. ডোনাল্ড টোরেস।

কথা শুনে স্যাম রীতিমত বোকাই বনে গেল। কত বড় একটা ব্যাপার! কত বিশাল এক ধ্বংসের মুখে পড়তে যাচ্ছিল তারা। অথচ যারা এই ধ্বংসের হোতা, সেই তারাই সামান্য একটা সিগন্যালের সামনে নিজেদের বিলীন করল!!


এতকিছু শোনার পরেও স্যাম ঘটনাকে হজম করতে পারছে না যেন! কিন্তু মানতে না চাইলেও তাকে বিশ্বাস করতেই হবে। ড. ডোনাল্ড টোরাসের কথা বাদ দিলেও সেন্ট্রাল কম্পিউটার তো আর মিথ্যে বলছে না.....





সোমবার, এপ্রিল ১১, ২০১৬

পাঠ প্রতিক্রিয়া - যে প্রহরে নেই আমি



গতকাল শেষ করলাম লেখক/ব্লগার 'রাসায়াত রহমান' এর লেখা "যে প্রহরে নেই আমি" বইটি।

গল্পটা বেশ ইন্টারেস্টিং। গল্পের মূল চরিত্র 'রাজু' তারচেয়েও বেশি ইন্টারেস্টিং। প্রথম দিকে অতি-ভৌতিক কিছু একটা ব্যাপার তার মাঝে আছে, এমন মনে হচ্ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত যার দেখা মিলল সেটাও কম চমৎকৃত করেনি। উত্তেজনাপূর্ণ ছিল "ইদ্রিস খা" এর প্রাপ্য বুঝিয়ে দেবার অংশটুকু। আর অবশ্যই আলাদা করে বলতে হবে 'নায়লা' চরিত্রটির ঘুরে দাঁড়াবার ব্যাপারটাকে। রাজুর জ্বালিয়ে দেয়া প্রেরণার প্রদীপ আর নিজের ইচ্ছাশক্তিকে ভর করে সে কতদূর পর্যন্ত এগিয়েছে তা জানতে হলে অবশ্যই আপনাকে পড়তে হবে গল্পটি।

তবে গল্পটা শেষ করার পরও ঠিক বুঝতে পারিনি গল্পগ্রন্থের নাম করণের উদ্দেশ্য বা সার্থকতা :(