অবর্জাভেটরি প্যানেলে বসে থাকার মত বিরক্তিকর কাজ দ্বিতীয় আরেকটা নেই। হাজার বছরেও কোন পরিবর্তন হবে কি না তার কোন নিশ্চয়তা নেই, অথচ তোমাকে বসে বসে মনিটরিং করে যেতেই হবে। হুট করেই যদি কোন সেন্সর চিৎকার করে উঠে তখনও বিচলিত হওয়ার মত কোন কারণ থাকে না। হঠাৎ এমন করে সেন্সর গুলি। মাঝে মাঝে মনে হয় সেন্সর গুলিও বিরক্ত হয়ে গেছে এভাবে বসে বসে সময় নষ্ট করে। তাই হঠাৎ হুট হাট করে চিৎকার করে নিজেদের করুন অবস্থার জানান দেয়। আবার অন্যদিকে এর থেকে শান্তি দায়ক চাকরিও নেই বাজারে। পরিশ্রম বলতে কিছুই নেই, অথচ মাথার ঘাম পায়ে ফেলেও যা উপার্জন করা যায় না এখানে তার চেয়ে পরিমাণে অনেক বেশিই বেতন পাওয়া যায়।
স্যাম এখনো দ্বিধাগ্রস্ত এই ব্যাপারটা নিয়ে। যদিও এখানে আসার কারণ নিয়ে তার কোন দ্বিধা নেই। সে নক্ষত্রকে ভালবাসে, আর ভালোবাসে বলেই এমন একটা কাজের জন্যে ছুটে এসেছে এতদূর। সখ মেটানো আর অর্থপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা যেখানে আছে সেখানে কে আসতে চাইবে না! তবে দ্বিধা হচ্ছে, এখনো কেন সে এখানে আটকে আছে, এই নিয়ে। এমন নয় যে তার সখ মিটে গেছে। তবে একঘেয়েমির একটা ব্যাপার চলে এসেছে। কাজে যোগদানের পর সে প্রথম দুই মাস স্বস্তি নিয়ে ঘুমাতেও পারেনি উত্তেজনায়। বলতে গেলে পুরো সময়টাই জেগে কাটিয়েছে। অবর্জাভেটরিতে যতক্ষণ থাকত ততক্ষণ এইটা ঐটা নিয়ে ভালো ভাবে জানার চেষ্টা করত। আর বাকি পুরোটা সময় এখানকার বিশাল অনলাইন লাইব্রেরি থেকে জানা না জানা নক্ষত্র সম্পর্কে যে তথ্যগুলি জমা আছে তা মাথায় ঢোকাবার চেষ্টা করত। কিন্তু আগ্রহ ধীরে ধীরে কমে আসে। এখানে আছে এখন প্রায় দেড় বছর হতে চলল। ইতোমধ্যে সে বুঝে নিয়েছে এখানে আরও কিছুদিন থাকলে হয় উন্মাদ হয়ে যাবে, নয়তো আগের অপারেটরটার মত আত্মহত্যা করে বসবে। যদিও এই তথ্যটা ক্লাসিফাইড ছিল, তবে স্যাম ঠিকই বের করে নিয়েছে।
এই স্পেস অবর্জারটরির মূল কাজ যদিও মহাবিশ্বের অবস্থানগত পরিবর্তন গুলি রেকর্ড করা। তবে এটা ছাড়াও এখানে আরও কাজ হয়। এটা অবশ্য খুব গোপন কিছু নয়, কমবেশি সবাই জানে। মহাবিশ্বে ছাড়িয়ে থাকা কোন কোণে বুদ্ধিমান কোন প্রাণী রয়েছে কি না তা বের করার চেষ্টা করা হয়। প্রচলিত ব্যবস্থাতেই কাজটা চলে। একটা সিগনালে করে বেশ কিছু সম্ভাষণ আর বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষা করার সাধারণ কিছু তথ্য প্রচার করা হয়। সেই সিগন্যাল প্রতিনিয়ত মহাবিশ্বের অজানা প্রান্তের উদ্দেশ্যে ছড়িয়ে যাচ্ছে তাদের স্যাটেলাইট কম্যুনিক্যাশন প্যানেল থেকে। যদি কোন বুদ্ধিমান প্রাণী কোথাও থাকে তবে তারা সেই সিগন্যাল রিসিভ করতে পারবে এমনটা ধারণা করা হয়। আর যারা এমন সিগন্যালকে রিসিভ করতে পারবে আশা করা যায় তারা সেই সিগন্যালের বিপরীতে তাদের সিগন্যাল ব্রডকাস্টও করতে পারবে।
তবে স্যামের এখানে কিছু দ্বিমত রয়েছে। সে অবশ্য আশা করে মহাবিশ্বের কোন কোণে বুদ্ধিমান প্রাণীর বসবাস রয়েছে। তবে তার মানে এই নয় যে তারা সরাসরি আমাদের মতই প্রযুক্তি ব্যবহার করে। যেহেতু প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত নয় সেই হিসেবে আমাদের জ্ঞানের সাথে তাদের জ্ঞানের তফাত থাকতেই পারে। আমরা যেভাবে জ্ঞানের ব্যবহার করছি তাদের জ্ঞানের ব্যবহার তারচেয়ে ভিন্ন কিছু হওয়া খুব অস্বাভাবিক নয়। আর তাই যদি হয় তবে কয়েকটি ঘটনা ঘটতে পারে। প্রথমত, সিগন্যালটি তাদের পর্যন্ত পৌছলেও সেটা তারা ধারণ করবে না। দ্বিতীয়ত, যদি ধারণ করেও তবে তারা তা ডিকোড করতে বা বুঝতে পারবে না। আবার যদি তারা ডিকোড করতেও পারে তবে সেই কোডের অর্থ তারা বুঝবে সেটা হয়ত সম্ভবও হবে না। আবার এই নিয়ে তার একটা নেতিবাচক ধারণাও রয়েছে। যদি ধরা হয় তাদের পুরো সভ্যতাটাই সিগন্যাল নির্ভর হয় তবে মানুষ যে সিগন্যাল ব্রডকাস্ট করছে সেটা তাদের প্রচলিত সিগন্যাল সিস্টেমকে ধ্বংসের মুখে ফেলে দিতে পারে। আর এটা যদি বাস্তব হয় তবে তারা কিছু বোঝার আগেই হয়ত ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।
কিছুদিন আগে অবশ্য স্যম তার এই থিউরিটা নিয়ে ড. আলভিনের সাথে কথা বলেছিল। ড. আলভিন তার এই থিউরি শুনে তো হেসেই খুন! লোকটা যে এমন ভাবে হাসতে পারে সেটা হয়ত স্যামকে এমনিতে কেউ বললে বিশ্বাসই করত না। একান্তই নিজের চোখে দেখেছে বলেই বিশ্বাস করতে পেরেছে। ড. স্যাম হাসির পরে অবশ্য তার ধারণার একটা ভুলও তাকে ধরিয়ে দিয়েছিল। ভুলটা হল, যদি এমন কোন সভ্যতার উপস্থিতি সত্যিই থেকে থাকে তবে আমাদের পাঠানো সিগন্যাল পাওয়ার অনেক পূর্বেই তারা বিলীন হবে। তার ভাষ্যমতে আরও অনেক ওয়েভ লেন্থের সিগনাল ইতোমধ্যে মহাবিশ্বে চলাচল করছে। যদিও সেগুলি অর্থবহ কোন সিগন্যাল নয়। তবে যদি সিগন্যালের কারণেই অন্য কোন সিগন্যাল ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, তবে ঐ সব সভ্যতা অনেক আগেই মৃত্যুবরণ করেছে। স্যাম তার পরেও আরও একটা কিছু বলতে চাচ্ছিল। কিন্তু ড. আলভিনের সময় না থাকায় আর বলা হয়নি। এরপর অবশ্য ড. আলভিনের সাথে কথা বলবার সুযোগও হয়নি আর। ক’দিন বাদেই ড. আলভিন স্পেস অবর্জাভেটরি থেকে পৃথিবীতে চলে যান। তার পরিবর্তে যিনি আসেন তার স্যাম সাথে ভাব জমানোর মত সাহস করে উঠতে পারেনি।
স্যামের চাকরির চুক্তিটা বেশ লম্বা সময়ের। আর এই লম্বা সময়ের পুরোটাই একরকম এই স্পেস অবর্জাভেটরিতে কাটাতে হবে তা আগেই জানানো হয়েছিল তাকে। পৃথিবীতে অবশ্য তার জন্যে অপেক্ষায় আছে তেমন কেউ নেই। তাই এই নিয়ে তার কোন আক্ষেপও তৈরি হয় না। যদিও মাঝে মধ্যে মুক্ত জীবনের কথা মনে পড়ে। তখন কিছুটা দুঃখবোধ হয়। কিন্তু সেটা ঐ পর্যন্তই। নিজের কাজ আর সখের সমন্বয় করার আনন্দটাকে মনে করেই দিন পার করতে থাকে সে।
তেমনি একদিন সে বসেছিল অবর্জাভেটরি প্যানেলের সামনে। মুখের সামনে রিডার ধরে সেখানে দুই আলোকবর্ষ দূরের একটা গ্রহের উপাদান গুলি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ছিল। ব্যাপারটা তখনই ঘটল, একটা সেন্সর হুট করেই তার স্বরে চিৎকার জুড়ে দিল। যদিও এমন চিৎকার শুনে স্যাম অভ্যস্ত, কারার মত তেমন কিছুই নেই। তবুও রিডারটা রেখে উঠে দাঁড়াল। তারপর প্যানেলের সেন্সর মনিটরটার দিকে এগিয়ে গেল সে। রিডিং দেখেই বুঝল হঠাৎ করেই একটা লাইট রিসিভার কিছু সময়ের জন্যে কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল। সেটা যেমন হঠাৎ করেই নিজের কাজ বন্ধ করেছিল, তেমনি আবার নিজে নিজেই স্বয়ংক্রিয় কাজ করতে শুরু করে দিয়েছে। যদিও নিয়ম অনুযায়ী এটা নিয়ে রিপোর্ট করা উচিৎ। তবে সিস্টেমে এমন অনেক গ্লিচই থাকে, সে নিয়ে এত উত্তেজিত হওয়ার কিছু নেই। রিডিং আবার আগের মতই নিচ্ছে দেখে নিজের স্থানে ফিরে আসছিল স্যাম।
চেয়ারটার কাছাকাছি পৌছতেই আবার আরেকদিকের প্যানেলে আরেকটা সেন্সর চিৎকার করে উঠল। এবার একটু বিরক্ত হল সে। মনে হচ্ছে সব সেন্সরই বোধহয় আজ এক সাথে চিৎকার করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঘুরে আবার যে সেন্সর শব্দ করেছিল সেটার মনিটরের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। এটা হিট সিগনাল প্রসেস করার সেন্সর। এখানেও একই ঘটনা। লাইট সেন্সরের মত এই সেন্সরটাও অল্প কিছু সময়ের জন্যে থেমে গিয়েছিল। তারপর তার আসার আগেই আবার কাজ শুরু করে দিয়েছে। রিডিংটা দেখে নিয়ে যখন বুঝল আর কোন সমস্যা হচ্ছে না তখন ফিরে গেল নিজের অবস্থানে। রিডারটা আবার মুখের সামনে তুলে ধরে ডুবে যেতে লাগল তথ্যের সমুদ্রে।
হঠাৎ কি মনে করে অবর্জাভেটরির বাইরে থাকা ভিডিও রিসিভারের রেকর্ড করা ভিডিও চালু করল। বর্তমান সময়ের প্রায় সাথে সাথেই সেটা ভিডিও ক্যাপচার করে পাঠাতে পারে। তবুও ট্রান্সমিশন আর প্রসেসিং করার জন্যে কিছু সময় এর মাঝে ব্যয় হয়। তবে সেটা এতই ক্ষুদ্র যে না বলে দিলে বোঝার উপায় নেই। মনে মনে হিসেব করে যে সময়টাতে লাইট সেন্সরটা এলার্ম দিচ্ছিল সেই সময়ের কিছু পূর্বের ভিডিও আর্কাইভ চালু করল। নাহ্, সব ঠিকঠাকই চলছে। কোন সমস্যা চোখে পড়ছে না। তবুও ভিডিও দেখতে থাকল।
ভিডিও দেখতে দেখতে স্যামের শিরদাঁড়া বেয়ে একটা ঠাণ্ডা স্রোত নেমে গেল। এটাকেও কি সিস্টেম গ্লিচ বলবে?! কিন্তু আর কি ব্যাখ্যা হতে পারে? যা দেখছে সেটা হলেও বেশ বড় ধরণের বিপদে পড়তে যাচ্ছে তারা। তবে প্রশ্ন হচ্ছে শুধুই কি তারা? এবার আর অবহেলা না করে দ্রুত রিপোর্ট করল। তারপর বেশ উত্তেজনা নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকল। বার বার ঘড়ি দেখে সময় পার করছিল। আর কোন রিপ্লাই পাচ্ছিল না বলে হাতের রিডারের মেসেজ বক্সে চোখ বোলাচ্ছিল। কিন্তু শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কোন রিপ্লাই না পেয়ে চরম হতাশ হয়ে পড়ল। আরও কিছু সময় অপেক্ষা করে শেষে নিজের রুমে ফিরে গেল।
কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও মন থেকে ব্যাপারটাকে ঝেড়ে ফেলতে পারল না। অন্তত ভিডিও ফিডে যা দেখেছে তার পর তো সম্ভবই নয়। স্পষ্ট দেখেছে সে, সূর্যের ঠিক উপরিভাগে হঠাৎ করেই একটা গর্তের মত তৈরি হল যেন। আর সেই গর্ত সূর্যের আলোগুলি যেন টেনে গিলে খাচ্ছিল! অথচ এত অল্প সময়ের জন্যে ব্যাপারটা ঘটেছে যে ভিডিও ফিডে স্লো মোশনে না দেখলে সেটা বিশ্বাসই করা যায় না!! ঘুমানোর সময়টাতেও এই ঘটনার উত্তেজনায় ঘুম হল না। ঘুম আসছে না বলে শেষে রিডারটা টেনে নিয়ে কৃষ্ণগহ্বর গুলি নিয়ে পড়তে শুরু করল। যদিও নিশ্চিত করে কোথায় কোথায় এই গহ্বর আছে তা কেউ বলতে পারছে না। যতটুকু ধারণা দেয়া হয়েছে তা সবই অনুমান নির্ভর। আবার এটাও প্রচলিত যে কৃষ্ণগহ্বর বলতে আসলে কিছুই নেই, এটা একটা ধারণা মাত্র। তবুও মোটামুটি যা পাওয়া গেল তার প্রায় সবই দেখা হয়ে গেল স্যামের।
অবর্জাভেটরিতে দিনরাত বলে কোন ব্যাপার নেই, তবুও সময় এখানে মেনে চলতে হয়। আর তাদের সময় হিসেবে এখন সকাল ধরে নেয়া যায়। সেই সকালেই সে ছুটে চলল ড. ডোনাল্ড টোরেস এর দিকে। ড. আলভিনের চলে যাবার পরই এখনকার অবর্জাভেটরির দায়িত্বে এসেছেন ড. ডোনাল্ড টোরেস। তার গম্ভীর স্বভাবের কারণে তাকে কিছুটা রাগীও মনে হয়। আর এই কারণেই তার সাথে পরিচিত হবার জন্যে খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি স্যাম। ড. টোরেসও যে ঐরকম কোন চেষ্টা করেছেন তাও নয়। আসার পর টুকিটাকি দুই একটা অফিসিয়াল কথা ছাড়া সে তেমন কোন বাক্যব্যয়ই করেন নি।
স্যাম যদিও এতদিন ড. ডোনাল্ড টোরেস থেকে দূরত্বে থাকবার চেষ্টা করে গেছে, তবুও গতকালের ঘটনার উত্তেজনায় আজ সব রাখঢাক বাদ পড়ে গেছে। তার রুমের সামনে দাড়িয়ে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি চাইল। অল্প কিছুক্ষণের মাঝেই মুখের সামনে থেকে দরজা খুলে গেল। ভেতরে প্রবেশ করল স্যাম। সম্ভবত ড. টোরেসও রাতে ঘুমান নি। রুমের ভেতরে কেন্দ্রীয় কম্পিউটারের মডিউলটির সচল অবস্থা আর ড. টোসের এর ব্যবহৃত মনিটরটিতে ভেসে উঠা বিভিন্ন ফাইল সেটাই প্রমাণ করে। ড. টোরেস স্যামের দিকে না তাকিয়েই বলতে শুরু করলেন, আমি আপনার মেসেজটি গতকাল যথাসময়েই পেয়েছি মি. স্যাম। তবে আপনাকে তার উত্তরে দ্রুত সময়ে উত্তর না দেবার জন্যে দুঃখ প্রকাশ করছি। তবে এটার পেছনেও কিছু কারণ আছে।
স্যাম সাথে সাথেই উত্তর দিল, ড. টোরেস, আমি কিছু মনে করি নি। তবে আপনার উত্তর না পেয়ে আমি আসলে বুঝতে পারছিলাম না আসলে কি করা উচিৎ।
– আসলে মি. স্যাম আমাদের আর কিছুই করার নেই এই মুহূর্তে।
– কি বলছেন ডক্টর! আপনি কি রিডিং গুলি দেখেন নি? সাথে ঐ সময়ের ভিডিও ফিডের রেকর্ডিংটা?!
– হ্যাঁ, আমি সবই দেখেছি মি. স্যাম। তবে তা নিয়ে আমাদের বিচলিত কিংবা চিন্তিত হবার কোন কারণ আর নেই।
– এমনটা কেন বলছেন ডক্টর? এর মানে কি ধরে নেব আমরা সকল আশা ইতোমধ্যে হারিয়েছি?
– না, আশা হারাই নি। তবে তুমি যা ধারণা করছিলে তার থেকে এখন আমরা শঙ্কা মুক্ত আছি।
– ড. টোরেস, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। আমি যতটুকু বুঝেছি তাতে ব্যাপারটা যদি সত্যি হয় তাহলে আমারদের অস্তিত্ব রক্ষা করা নিয়েই আমরা সমস্যায় পড়ে যাব।
– হ্যাঁ, আপনার ধারণা সত্যি স্যাম। তবে তেমন আর কিছুই হবে না। অন্তত গতকাল যাদের দ্বারা ব্যাপারটা ঘটেছিল তাদের দ্বারা আর না।
– ড. টোরেস যদি সমস্যা না থাকে তাহলে কি আমি বিস্তারিত জানতে পারি এই ব্যাপারে?
– হ্যাঁ, অবশ্যই। তার আগে আপনাকে আপনারই একটা ধারণার কথা মনে করিয়ে দেই যা আপনি আমার আগে অবস্থানরত ড. আলভিনের সাথে শেয়ার করেছিলেন। তিনি তার রেগুলার রিপোর্ট অংশে সেটি রেখে গিয়েছিলেন বলে আমি তা জানতে পেরেছি।
– আমার সিগন্যাল নিয়ে যে ধারণাটা ড. আলভিনের সাথে শেয়ার করেছিলাম, সেটা?
– হ্যাঁ, আমি সেটার কথাই বলছি।
গতকাল তুমি যেই সময়ের লাইট এবং হিট ট্যাম্পারেচার সিগনালের অসঙ্গতি আর ভিডিও ফিড এর রেকর্ডিং পাঠালে সেই একই সময় আরও একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটেছিল।
– কি ব্যাপার ডক্টর?
– আমরা যে উন্নত বুদ্ধিমত্তার প্রাণী খোঁজার জন্যে সিগন্যাল প্রেরণ এবং গ্রহণ করার আরও একটি প্রোগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি সেটা তো তুমি নিশ্চই জানো।
– হ্যাঁ, ওটা জানা আছে। তবে আমার সেখানে কোন এক্সেস নেই।
– হ্যাঁ, তোমার ওখানে কোন এক্সেস নেই। এর এক্সেস সরাসরি আমাদের কেন্দ্রীয় কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করে। আর সেটার রিপোর্ট সবার আগে আমাকেই সে প্রদান করে। তুমি গতকাল যে সময়ের অসঙ্গতি রিপোর্ট করেছিলে, সেই একই সময়ে আরও একটা অদ্ভুত সিগন্যাল আমরা রিসিভ করি। আসলে বলতে গেলে এটাই প্রথম একটা সিগন্যাল যা আমাদের এই উন্নত বুদ্ধিমত্তা প্রোগ্রাম প্রথম রিসিভ করে। প্রাথমিক অবস্থায় সিগনালটার কোন অর্থই আমরা বুঝতে পারি নি। কাল মাঝ রাত পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কম্পিউটার সেই সিগনালকে প্রসেস করেছে। এবং মাঝ রাতের কিছু পরেই সে সেই সিগনালকে ডিকোড করতে সক্ষম হয়েছে।
– কি ছিল সেই সিগন্যালে ডক্টর?
– আত্ম-চিৎকার!
– কি!!
– হ্যাঁ, আত্ম-চিৎকার। মাত্র ৩ শব্দ, মরে গেলাম, বাঁচাও।
– এর অর্থ কি?
– আসলে আমি যতটুকু ধারণা করছি তাতে বলতে পারি গতকাল যে বা যারাই ঐ অদ্ভুত কাজটি করছিল তারা মূলত অত্যন্ত বুদ্ধিমান এক ধরণের প্রাণী কিংবা প্রাণী গোষ্ঠী। এবং আরও বলতে পারি যে তারা কোন সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজটি করেনি। আরও পরিষ্কার করে বললে তারা এই মহাবিশ্বের দস্যু। আমার ধারণা তারা সূর্যের শক্তি কিংবা আলো অথবা সূর্যটাকেই কব্জা করার চেষ্টা করছিল। তবে তাদের সেই হামলা বিফল হয় কিংবা তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় আমাদের এই উন্নত বুদ্ধিমত্তা খোঁজার সিগন্যালের মাধ্যমে।
– সেটা কিভাবে ডক্টর?
– আসলে যে কোন ভাবেই হোক, আমাদের সেন্সর গুলি যখনই কোন ফল্ট করে তখনই আমাদের এই বুদ্ধিমত্তা খোঁজ করা সিগন্যাল প্রেরণের প্রায়োরিটি বেড়ে যায়। সম্ভবত একে প্রোগ্রাম করাই হয়েছে এভাবে। যাতে কোন সম্ভাবনা এড়িয়ে না যায়। গতকালও সেটাই হয়েছিল। ওরা মূলত হামলা চালানোর উদ্দেশ্যে এক ধরণের কন্ট্রোল্ড ব্লাকহোল তৈরি করেছে। জিজ্ঞাস করো না কিভাবে করেছে, কিন্তু তারা করেছে। আর এই ধারণা থেকেই বলছি, তারা আমাদের থেকে অন্তত হাজার গুন বেশি উন্নত একটা গোষ্ঠী। আর তাদের তৈরি ঐ ব্লাক হোল যখন আমাদের সূর্যের আলোকে তার মধ্যে নিয়ে যাচ্ছিল ঠিক তখন লাইট সিগন্যাল রিসিভার সেন্সরটি নোটিফাই করে। আর এই নোটিফাই করার আগেই আমাদের বুদ্ধিমত্তা খোঁজ করা সিগন্যাল পাওয়ার ১০০ গুন বৃদ্ধি পায়।
ওরা মূলত আমাদের এই সিগন্যালকে রেগুলার সিগন্যাল ধরে এগিয়ে এসেছিল। আর এখানেই তোমার ধারনাটা ঠাই পেয়েছে স্যাম। ওদের পুরো সভ্যতাটাই গড়ে উঠেছে সিগন্যালকে কেন্দ্র করে। আমাদের ব্রডকাস্ট সিগন্যালকে ওরা অনেক আগেই ইন্টারসেপ্ট করেছিল। আর সেই রকম প্রস্তুতি নিয়েই ওরা হামলার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু যখনই আমাদের সিগন্যালের লেন্থ রেগুলার লেন্থ ছেড়ে ১০০ গুন বেড়ে গেল তখনই ওরা বিপত্তিতে পড়ল। তোমার ধারণা কাজ করা শুরু করে দিল সেখানেই। আমাদের সিগন্যালের কারণে ওদের সিগন্যালের পরিবর্তন ঘটল। আর সেই পরিবর্তনই ধ্বংস করল ওদের। আর সেই ধ্বসের মুখেই ওরা প্রচার করল ওদের প্রথম ব্রডকাস্ট!
এক নিশ্বাসে কথাগুলি বলে থামলেন ড. ডোনাল্ড টোরেস।
কথা শুনে স্যাম রীতিমত বোকাই বনে গেল। কত বড় একটা ব্যাপার! কত বিশাল এক ধ্বংসের মুখে পড়তে যাচ্ছিল তারা। অথচ যারা এই ধ্বংসের হোতা, সেই তারাই সামান্য একটা সিগন্যালের সামনে নিজেদের বিলীন করল!!
এতকিছু শোনার পরেও স্যাম ঘটনাকে হজম করতে পারছে না যেন! কিন্তু মানতে না চাইলেও তাকে বিশ্বাস করতেই হবে। ড. ডোনাল্ড টোরাসের কথা বাদ দিলেও সেন্ট্রাল কম্পিউটার তো আর মিথ্যে বলছে না.....