ভুলে যাই গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছুই। এর কারণে কথাও কম শুনতে হয়নি এই জীবনের পার করা সময় গুলিতে। প্রতিবার ভুল যাবার পরপরই নানা কথা শুনতে শুনতে এখন সব গা'সওয়া হয়ে গেছে। তবুও কিছু জিনিষ ভুলে যাবার পর যখন মনে পড়ে কিংবা ভুল হবার পর যখন বুঝতে পারি তখন নিজেকেই অনেকটা অবাক হতে হয় সেই ভুলটার জন্যে।
সবচেয়ে বেশি ভুল হয় আমার চোখের সামনে, নাকের ডগায় বসে থাকা চশমাটাকে নিয়ে। বেশ অনেকটা সময় ধরে এই বস্তুটার উপর নির্ভর করার কারণে এখন এইটাকে আর শরীরের বাইরে আলাদা কিছু মনে হয় না। বরং নিজের অংশ বলেই বিশ্বাস করে মন। আর তাই ভুলটাও একেই নিয়ে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে করে।
মাঝে মাঝে বিছানায় যাবার পরও ভুলে যাই এটা চোখ থেকে খুলে রাখার কথা। এমনও হয়েছে অনেক যে রাতভর ঘুম ভেঙ্গে সকালে যখন মুখের উপর হাত রেখেছি তখন সেখানে আমার চশমার অবস্থান জানতে পেরেছি। আমি ঘুম দিলেও তাকে ঘুমোতে দিতে পারি নি রাত ভরে। তারপর যখন ব্রাশ করে চোখ মুখে পানি ছুড়ে দিচ্ছি তখন তার গ্লাস ভেজার পর তাকে তার কাজ থেকে অব্যাহতি না দেয়া আর আমার কাজের খামখেয়ালিপনা নজরে পড়েছে। আর গোসল করার সময়ের কথা আর নাই বা বললাম। এই ভুলটা তো অন্যগুলির চেয়ে বেশি বেশি ঘটে।
আমার এই খামখেয়ালিপনার জন্যে ভুগতেও হয়েছে বেশ অনেকবার। প্রথম যেই চশমাটা ব্যবহার করতাম সেটা হ্যারি পটারের চশমার মত ছিল। প্রথম জিনিষের মূল্যায়ন একটু অন্যরকমই থাকে সকলের কাছে। আমার কাছেও ছিল। পড়তে বসার আগে কিংবা যখন মাথা ব্যথা হবে বা চোখে জ্বালা করছে বুঝতে পারতাম তখন সেই ব্যথা বা চোখ জ্বালা নিয়েই তাকে খুব সুন্দর করে চশমার সাথে দেয়া কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করতাম। তারপর সেটা নাকের ডগায় বসাতাম খুব সাবধানে। বারবার এদিক সেদিক করে তাকিয়ে দেখতাম সব ঠিকঠাক মত হয়েছে কিনা।
বহু সাধের সেই চশমাটাও একদিন অসাবধানতায় ভেঙ্গে ফেলি বইয়ের চাপা দিয়ে। আর ভেঙ্গে ফেলেই নিজের ভেতর অপরাধ বোধ আর ভয় কাজ করতে শুরু করে। কাকে বলে বকা শুনতে হবে সেই চিন্তা করে আমি আর সেটা কাউকে জানাই নি। প্রথমে কিছুদিন চুপচাপ করেই থাকতাম। মাথা ব্যথা আর চোখ জ্বালা হলে যতটা সম্ভব সহ্য করে থাকার চেষ্টা করতে থাকি। কিন্তু এভাবে বেশি দিন থাকা যায় না, ধরা পড়তেই হয়। আমিও ধরা পড়লাম। আব্বা খুব রাগ হলেও কিছু বলেনি। ভাঙ্গা চশমাটা নিয়ে দু'দিন বাদে নতুন চশমা নিয়ে এসেছিল (তখন ২ দিন সময় লাগাত একটা চশমার অর্ডার ডেলিভারি দেবার জন্যে)। সে যাত্রায় আব্বা কিছু না বললেও আম্মা প্রচুর বকা দিয়েছিল।
মাঝে অল্প কিছুদিন আমাকে হোস্টেল কিংবা ছাত্র-মেসে থাকতে হয়েছে। সেখানেও সমবয়সী রুমমেট আমার এই চশমা পড়ে ঘুমিয়ে যাওয়া আর আনুষঙ্গিক খামখেয়ালি ব্যাপার গুলি দেখে বার বার অবাক হয়েছে, মাঝে মাঝে বিরক্ত ও হয়েছে। এখন যখন মাঝে মাঝে তাদের কারো সাথে দেখা হয় কিংবা কথা হয় তখনও কথার এক পর্যায়ে জিজ্ঞাস করে ফেলে "তুমি কি এখনো চশমা চোখেই ঘুমাও"। নিজের ভুল গুলির জন্যে ঐ সময়টাতে খুব মজা পাই।
জানিনা এই ভুল গুলি শোধরাতে পারবো কি না। কিন্তু এখন এই ভুল গুলির জন্যেই মনে হয় বেঁচে আছি, ভালো আছি.....