বুধবার, মে ০৭, ২০১৪

কেমিস্ট্রি বই.........


খাইরুল গতকাল থেকে খুব অস্বস্তিতে আছে। রাতে এক ফোটা ঘুমাতে পারেনি। এদিক সেদিক আর ভিন্ন রঙ্গের চিন্তা করেই সময়টাকে পার করেছে। ফলাফল, সকালের কোচিং আধা ঘণ্টা লেট। কোচিং এ ঢুকে বিব্রত বোধ করলেও কিছু সময়ে সেটা কেটে যায়। পড়ালেখার প্রতি বেশ অনেকটা সিরিয়াসনেস এখনো আছে তার। সামনেই পরীক্ষা, আর বয়সটাই রঙ্গিন চশমা লাগিয়ে ঘুরতে চাওয়ার মত। তবুও খাইরুল পরীক্ষাটাকেই গুরুত্ব দিয়ে এসেছে এতদিন ধরে। কিন্তু গতকাল থেকে সেটার একটু গরমিল হয়েছে।

দশটার দিকে কোচিং ছুটি হল। দ্রুত বাসায় গিয়ে ফ্রেস হয়ে নাকে মুখে কিছু গুজেই ১১টার মধ্যে আবার বের হতে হবে স্কুলের জন্যে। স্কুলটা খুব বেশি দূরে না আবার একেবারেই কাছেও না। আর পথটা হেটেই যেতে হয়। তাই প্রায় সময় একেবারে পিটি স্যরের ঘড়ি ধরা টাইমের শেষ সময় গিয়ে পৌছায় সে। দুই একদিন অবশ্য স্যরের টাইম লিমিট অতিক্রমও হয়ে যায়। তখন এই রোদের মাঝেই ঘড়ি ধরে ২০ মিনিট দাড়িয়ে থাকতে হয়।

এই বিশ মিনিটে অনেক কিছু ঘটে। প্রথমে স্কুলের মর্নিং শিফটের মেয়ে গুলি তাদের সামনে দিয়ে স্কুল ত্যাগ করে, আর তাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসে। আর হাসেবেই তো, কান ধরে কিছু ছেলে একসাথে লজ্জায় মুখ নিচু করে থাকলে তারা হাসবে না তো আর কি করবে? এর পর পিটি স্যরের তাণ্ডব চলে রোদের মাঝে। ছেলে গুলির শরীর চর্চার নামে এক ধরণের অবিচার চালাতে থাকে এই রোদে দাড় করিয়ে। তারপর তার তাণ্ডব শেষে ছেলেগুলিকে ছেড়ে দেবার সময় ওদের ওয়ার্নিং দিয়ে ছেড়ে দেয়। মাঝে মাঝে বেত্রাঘাতও চলে, তবে সেটা প্রতিদিন নয়। যেদিন ড্রেস আপ এর গড়মিল একটু বেশি ঘটে সেদিন বেত্রাঘাত মোটামুটি সবার কপালেই জোটে।

আজ কিন্তু খাইরুল পিটি স্যরের হাতে ধরা খায় নি। তবে মনে হচ্ছিল আজ ধরা খেলেই বরং ভালো হতো। স্যরের তাণ্ডব শেষ হবার পর ক্লাসে যায় সে। ইংরেজি ক্লাসটার পরই আজ "কেমিস্ট্রি" ক্লাস। সাবজেক্টটাও খাইরুলের খুব ভালো লাগে। বইটার নমুনা দেখলেই তা বোঝা যায়। পাতায় পাতায় বিভিন্ন রঙ্গে রাঙ্গিয়ে নোট আর বুকমার্ক তৈরি করা আছে। সংজ্ঞা খোজার জন্যে সবাই যখন আতিপাতি করে তখন খাইরুলের বইটায় আশেপাশের অনেকেই চোখ বুলায়। সংজ্ঞার বুকমার্কের অংশটাও তো তার বইতে হাইলাইট করা থাকে।

কিন্তু আজ খাইরুল বইটা ব্যাগ থেকে বের করছে না। একটু ভয়ও পাচ্ছে মনে মনে। কেউ যদি বইটা দেখেই কিছু আচ করে ফেলে। তাই ইমনের বইটা আজ সে ধার করে নিয়েছে। ইমন একটু অবাক হলেও কিছু বলল না। ইমনেরই লাভ, স্যর কি বলল সেটা খেয়াল না করলেও খাইরুলের মার্কিং এর বদৌলতে তা সে বইতেই পেয়ে যাবে। টিফিন টাইমেই আজ ছুটি। বৃহস্পতি বার হাফ স্কুল তাই বেলা ২টায় ছুটির ঘণ্টা বাজতে শুরু করলো। হই হই করে নিচের ক্লাসের ছেলেগুলি বের হচ্ছে ক্লাস থেকে। ফরহাদ, শফিক, মামুন, ইমন আর খাইরুল বসে কথা বলছে ক্লাস। আসলে খাইরুল কিছু বলছে না, শুনছে। বাকি সবাই আজকে বিকেলে ক্রিকেট ম্যাচটার আলোচনা করছে। খাইরুলও সেই দলের একজন খেলোয়াড়।

প্রায় সবাই যখন বের হয়ে গেছে তখন এই দলটাও স্কুল থেকে বের হল। ইমন আর খাইরুল একই এলাকায় পাশাপাশি থাকে। তারা এক সাথেই ফিরে যায় স্কুল শেষে। আর ভালো বন্ধুও তারা। ইমন কিছু পথ যাওয়ার পর খাইরুলকে জিজ্ঞাস করলো-

- তোর কি হয়েছে? এমন গুম হয়ে আছিস কেন? খালাম্মা বকেছে নাকি?
- আরে নাহ, কিছু হয়নি। এমনি ভালো লাগছে না।
- তুই আমাকে বুঝ দেস? এতদিনে তুই এই বুঝ আমাকে দিয়ে পার পেয়ে যাবি বলে তোর ধারনা?
- আরে! তোকে বুঝ দিবো কেন? আর কি নিয়ে বুঝ দিব?
- থাক। বলতে যখন চাস না তখন আর জিজ্ঞাস করবো না। কিন্তু মুডটা অন্তত পরিবর্তন কর। তোকে দেখে মনে হচ্ছে যেন কেউ মরে গেছে।

এরপর অনেকক্ষণ আর কেউ কোন কথা বলল না। প্রায় বাড়ির কাছাকাছি এসে খাইরুল বলল-

- তোর কোন কাজ আছে এখন?
- নাহ। গোসল দিয়ে খেয়ে একটু রেস্ট, তারপর তো ম্যাচে।
- একটু বাসায় আসবি আমার সাথে?
- কেন?
- এমনি, আম্মা বাসায় নেই আর আব্বা তো সেই দেড়টার দিকেই এসে চলে গেছে এতক্ষণে। বাসায় চল, একসাথেই বেরুবো ম্যাচের জন্যে।
- আন্টি কোথায় গেছে?
- আম্মা একটু ঢাকা গেছে খালার বাসায়। সন্ধ্যা হবে ফিরতে।
(ইমন একটু তেরছা ভাবে তাকিয়ে বলল)
- আচ্ছা চল। তবে ভালো কিছু খাওয়াতে হবে, মনে রাখিস।

বাসায় গিয়ে দু'জনেই ফ্রেস হয়ে খাওয়া-দাওয়ার পর্ব সারল। এর পর কনসোল গেম খেলা শুরু করলো। খেলার এক পর্যায়ে খাইরুল বলল-

- দোস্ত, একটা কথা বলবো?
- দেখ গেম খেলবি না আমার সাথে একদম। তুই কিছু একটা চেপে আছিস সেটা আমি ঠিকই বুঝতে পারছি। বলার হলে সোজা করে বল, আর না হয় এমন মুখ করে থাকবি না একদম।
- ক্ষেপিস না দোস্ত, আমি ব্যাপারটা নিয়ে একটু কনফিউশনে আছি। আসলে ব্যাপারটাতে গুরুত্ব দেয়া উচিৎ কিনা সেটাই আমি বুঝতে পারছি না। আবার যেটা মনে করছি সেটা ভুল কিনা সেও বোঝা যাচ্ছে না।
- দেখ ট্রেলার বলবি না, পুরা ঘটনা বল। কি নিয়ে তোর এত টেনশন সেইটা বল, পুরাটা বলবি। অর্ধেক করে বলবি না।
- তার আগে বল এটা কারো সাথে আলোচনা করতে যাবি না।
- ধুর! তুই এতদিনেও আমাকে এতটুকু বিশ্বাস করতে পারিস নাই? যা শালা শুনবোই না, তুই থাক। আমি বাসায় যাবো।
- দোস্ত থাম, শোন আমার কথা। টেনশন হচ্ছে এখন তুইও যদি এমন করিস তাহলে আর কাকে গিয়ে বলবো?
- ঢং করবি না। যা বলার বল এখন।
- আচ্ছা, শোন। আগে পুরাটা শুনবি তারপর যা বলার বলবি।
- হুম
- কয়দিন আগে অহনা কোচিং এর শেষে আমার কেমিস্ট্রি বইটা চেয়ে নেয়। বলে তার নাকি কি একটা নোট নিতে হবে। যেহেতু আমার বইটাতে হাইলাইট করা আছে আর প্রয়োজনীয় সূত্র গুলি প্রতি চ্যাপটার শেষেই লিখে রাখি তাই সেটা নাকি তার নোট করতে সুবিধা হবে। আমিও চাওয়ার পর বই দিয়েছিলাম। ঐখানে বসেই দাগাচ্ছিল প্রথমে। পরে বলল তার নোট করতে আসলে অনেক সময় লাগবে, তাই যদি বইটা তাকে দেই ঐদিনের জন্যে তবে খুব উপকার হয়। তুই যেহেতু বাড়ির কাছেই আছিস আর কোচিং এর নোট গুলি যেহেতু আমার কাছেও আছে তাই বইটা দিলাম তাকে।
- হুম। তো?
- আগে শোন পুরাটা। পরে কথা বল। পরের দিন সকালে কোচিং করে যখন স্কুলের দিকে আবার যাচ্ছি তখন এমনি অনেক লেট হয়ে গেছে। মনে নাই পরশু পিটির সময় আমি দেরি করার লাইনে দাড়িয়ে ছিলাম, ঐদিনের কথা বলছি। বাসা থেকেই লেট হয়ে গেছে, তাই একরকম দৌড়েই আসছিলাম। কিন্তু রাস্তায় অহনা আর সুমির সাথে দেখা। ওরা স্কুল থেকে কোচিং এ যাচ্ছিল। আমাকে দৌড়াতে দেখে অহনা ডাকল। দাঁড়াবো না, দাঁড়াবো না করেও দাঁড়ালাম। বললাম যে দেরি করে ফেলেছি। কথা শুনে ওরা দুজনেই হেসে দিল। আর বলল- দেরি যখন হয়েই গেছে তখন আরও একটু দেরি করে যেতে। বিরক্ত লাগলেও কিছু বলিনি তখন। তারপর অহনা ব্যাগ থেকে বইটা দিয়ে বলল- নোট নেয়া শেষ। বই নিয়ে যাও। আমি বই নিয়েই আবার ছুট দিলাম। তারপর ক্লাসে এসে সেকেন্ড পিরিয়ডে যখন বই খুললাম তখন দেখি পেন্সিল দিয়ে লেখা প্রথম পৃষ্ঠাতে-
"শুরু করেছো যখন, তখন ১২ নম্বর পেজে যাও"
আমি ১২ নাম্বার পেইজে গেলাম। সেখানে চিত্রের নিজে লেখা-
"১২ তারিখে পরিচয় হয়েছিল কোচিং এ, জানি গুরুত্বহীন তথ্য তোমার জন্যে। কিন্তু সবার জন্যে নয়। এখন কষ্ট করে ৩৬ নাম্বার পেইজে যাও"
আমি আবার ৩৬ নাম্বার পেইজে গেলাম, সেখান একেবারে নিচে লেখা-
"এই ৩৬ নাম্বার আমি তোমার থেকে দেখে দেখে লিখেছিলাম কোচিং এর পরীক্ষাতে। আরও বেশিই লিখেছিলাম, কিন্তু পেয়েছিলাম ৩৬। এটাও গুরুত্বহীন তথ্য তোমার জন্যে। কিন্তু সবার জন্যে নয়। এখন আরও একটু কষ্ট করে ৫৩ নম্বর পেইজে যাও"
আমি তখন সেইটা আর না দেখে বই বন্ধ করে ক্লাস করলাম। আর তোর বইতে নোট নিয়েছিলাম সেইদিন।

- হুম, তারপর?
- তারপর বিকেলে বাসায় এসে আর বই ধরি নি। কোচিং এ ও যাইনি সেদিন। আম্মাকে বললাম মাথা ব্যথা করছে। তাই আম্মা ও আর কিছু জিজ্ঞাস করেনি। সন্ধ্যার পর চা'য়ের মগ হাতে নিয়ে পড়তে বসলাম। আসলে পড়তে বসি নাই, কেমিস্ট্রি বই খুললাম। গেলাম ৫৩ পেইজে। সেখানে লেখা-
"কোচিং এর ৫৩ নাম্বার দিনে আমার জন্মদিন ছিল। তোমরা সবাই আমার জন্মদিন উপলক্ষে পার্টি করেছিলে কোচিং এর মধ্যেই। উপহারও দিয়েছিলে অনেকে। তোমার সেইদিনের উপহারটা আমার ভালো লেগেছে। সবার মত তুমি শো-পিস দেও নি। একটা কলম আর একটা ডায়েরী দিয়েছিলে। যেটাতে আবার ছোট্ট একটা লকও আছে। উপহার গুলির মধ্যে সবচেয়ে আলাদা উপহার ছিল। এবার কষ্ট করে ২০৪ নম্বর পেইজে যাও...."
পৃষ্ঠা উল্টে গেলাম ২০৪ নাম্বার পেইজে। ঐটা প্রশ্নের শেষ পেইজ। তাই অনেকটা জায়গা। আর সেখানে অল্প কয়টা লাইন লিখেছে। এইটা তুই নিজেই দেখে বল এর অর্থ কি।

খাইরুল তার কেমিস্ট্রি বইটা ব্যাগ থেকে বের করে ইমনের হাতে দিল। ইমন ২০৪ নাম্বার পেইজে গেল। সেখানে লেখা-

সবার জন্যে গুরুত্বপূর্ণ না, তোমার কাছে আরও না। কিন্তু তবুও তোমাকে অজানা কারণেই ভালোলাগে আমার। প্রথমেই বলেছি অজানা কারণ তাই আর ব্যাখ্যা দিতে পারবো না। এই ভালো লাগা তোমার মেধার জন্যে নয় এতটুকু নিশ্চিত করে বলছি। আরও নিশ্চিত করে বলছি তোমার হ্যারিপটার মার্কা চেহারার জন্যেও এতটা ভালোলাগা নেই। ব্যক্তি তোমার জন্যেই ভালোলাগা কাজ করে। প্রথমে ভালোলাগাটা আস্তে আস্তে অনেক বড় হয়ে গেছে। এখন ভালোলাগাটা তোমার উপহারের ডায়রিতে দেয়া জাতীয় সঙ্গীতের ২য় লাইনে পরিণত হয়েছে। ঘাবড়ে যেও না, তোমাকে আমি জাতীয় সঙ্গীতের ঐ লাইন গাইতে বলবো না। আমি শুধু আমার কথা গুলিই তোমাকে বললাম।
ভালো থেকো।

এইগুলি পড়ে ইমন হাসতে হাসতেই খুন। বলল-
- তুই এই সহজ কথাটা ও বুঝতে পারিস নাই গোবর গণেশ?
- সহজ কথা কোনটা। কি বলল কি বলতে চায় কিছুই তো বুঝলাম না। শুধু শুধুই কতগুলি কথা বলল। আর এত কিছু মনে রেখে কি করে?
- ধুর! তুই শুধু পড়া লেখাই করেছিস। তোর বুদ্ধি আসলেই খোলে নাই। আচ্ছা বাদ দে। তুই ডায়েরী খোল।
- কোন ডায়েরী?
- আরে একটা ডায়েরী হলেই হবে। স্কুলের ডায়েরিটাই নে।
(খাইরুল ব্যাগ থেকে ডায়েরী বের করে)
- এখন?
- জাতীয় সঙ্গীত বের কর।
- হুম
- এখন ২য় লাইনটা পড়।
- চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি।
- আরে!! ঐটা না। প্রথম লাইনের এইটা পড়।
- কিন্তু ২য় লাইন তো এইটাই। দাড়ির পর এইটাই দ্বিতীয় লাইন।
- তুই আজাইরা কথা বলিস না তো। যা করতে বলছি ঐটা কর। এই এতটুকু পড় (আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ইমন)
- আমি তোমায় ভালবাসি
- হুম। অহনা তোকে পছন্দ করে এইটা তো সরাসরিই বলেছে। আর অস্পষ্ট ভাবে বলেছে সে তোকে ভালোবাসে। সিম্পল জিনিষ।
- ধুর! এর মাঝে ভালোবাসা-বাসি আসলো কোথা থেকে?
- তুই আসলেই একটা বেকুব। সহজ করে বলা কথাও বুঝিস না। মেয়েটা তোকে ভালোবাসে সেইটা সরাসরি বলতে পারছিল না, আর তার পছন্দের গুরুত্ব বোঝাতে তোর প্রতিটা কাজের দিন গুনে বলল, তারপরও তুই বুঝিস না কেন?
- কিন্তু...
- রাখ তোর কিন্তু। তুই মেয়েটাকে পছন্দ করিস? এমনি কিন্তু মেয়েটা মেধাবী। রোল তুইও জানিস। আর সবসময় সে তার প্লেস ধরে রাখে। দেখতেও কিন্তু খারাপ না। অনেকেই তাকে পছন্দ করে।
- তুই এইসব কি বলিস! এখন এই গুলি নিয়ে ভাবার সময় কোথায়?
- আচ্ছা যা। তোর ভাবতে হবে না। তুই শুধু বল মেয়েটা এখন তোর কাছে ভালো না খারাপ?
- এইটা কেমন প্রশ্ন? খারাপ ভাববো কেন?
- হইছে। মুখ বন্ধ কর। তোর কিছু করতে হবে না। তুই তোর মত থাক। নতুন একটা কেমিস্ট্রি বই কিনে নে। এইটা আপাতত আর কাউকে দেখাবি না। আর লেখাগুলিও মুছে ফেলিস না।
- কেন?
- তোরে আমি করতে বলছি তাই। আর কোচিং এ অহনাকে কিছু বলবি না। তুই যেমন ছিলি ঐরকমই থাকবি। ধর তুই এইগুলি কিছুই দেখিস নাই।
- আর?
- বাকিটা পরে।

সেদিন সন্ধ্যায় কোচিং করলো সবাই। সবাই স্বাভাবিক। এত কিছুর কোনটাই তাদের দেখে বোঝার উপায় নেই। তবে মনে মনে ৩জনই খুব উত্তেজিত। কোচিং শেষ হতেই সবাই বের হচ্ছে। রুম থেকে বের হবার একটু আগে ইমন অহনাকে ডাকল।
- অহনা! শোন।
- কি?
- কেমন আছো?
- এই তো ভালোই। তুমি?
- আমিও ভালো। একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাস করবো?
- কি প্রশ্ন?

পাশ থেকে খাইরুল বলল- এই ইমন আমি বাইরে যাচ্ছি।
ইমন খপ করে খাইরুলের হাত ধরে বলে- কই যাবি! চুপ করে এখানে বস। অহনা সোজা করে উত্তর দিবে। প্যাচাবা না।
অহনা- আচ্ছা।
ইমন- তুমি কি খাইরুল কে পছন্দ কর। যতটা পছন্দ করলে নিজেদের একটা জুটি বলে ততটা?
অহনা- হ্যাঁ, ততটাই পছন্দ করি। কিন্তু সেটা আমি একা করি। খাইরুল নিশ্চয় করে না।
ইমন- খাইরুল আসলে এইসব নিয়ে কখনো ভেবেছে বলে মনে হয় না। কিন্তু আমার বিশ্বাস তোমরা দু'জনই যদি নিজেদের অল্প একটু করে সময় দিতে পারো তাহলে তোমাদের সম্পর্কটা সুন্দর করে এগিয়ে যাবে।
অহনা- কিন্তু খাইরুল কি এটা চায়?
ইমন- সে বুঝতে পারলে চাইতো। এক্ষেত্রে তোমাকেই কিছুটা কষ্ট করতে হবে। আর খাইরুল শোন। তোকে সিরিয়াস ভাবে কিছু করতে হবে না। আগে যেমন ছিলি তেমনই থাকবি। শুধু মাঝে মাঝে অহনার সাথে কথা বার্তা বললে তো আর তোর কোন সমস্যা হবে না নিশ্চয়!
খাইরুল- না।
ইমন- Good. এখন সবাই বাসায় যা। মনে কর কিছুই হয়নি।
অহনা- যাই তাহলে ইমন ভাইয়া। গেলাম খাইরুল।





৯ বছর পর এক সকালে ইমনকে ফোন করে খাইরুল বলছে-
- হ্যালো ইমন! কেমন আছিস?
- আলহামদুলিল্লাহ। তুই?
- আমিও ভালো। শোন তোকে একটা প্রয়োজনে ফোন করেছি।
- কি প্রয়োজন?
- তুই ৭ দিনের ছুটি ম্যানেজ কর। ১২ থেকে ১৭ তারিখ পর্যন্ত এই মাসের।
- কেন? কি হয়েছে??
- তোকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ করতে হবে।
- ধুর। কথা পেঁচাচ্ছিস কেন? সোজাসুজি বলতে পারিস না?
- আচ্ছা, শোন। সোজা করেই বলছি। ‌১৪ তারিখে আনুষ্ঠানিক ভাবে অহনা তোর ভাবী হচ্ছে। পারিবারিক ভাবেই সব হচ্ছে। তুই শুধু আমাদের হয়ে বেশ কিছু কাজ করবি। হা হা হা! বুঝতে পারছিস এখন?
- তুই অনেক চালাক হয়ে গিয়েছিস। ১২ তারিখে বিকেলে তোর বাসায় আমি আসছি।
- দ্রুত আয়। অনেক কাজ রয়েছে। সব তোকেই ম্যানেজ করতে হবে। আফটার অল, তোর জন্যেই ঘটনাটার শুরু হয়েছিল।







0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন