শনিবার, নভেম্বর ৩০, ২০১৩

নীরা, তোমার অপেক্ষায়.....



নীরা, তোমাকে তো বলা হয়নি। তোমার জন্যে ঐ দিন স্টেশনে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছিলাম। মিন্টু বলেছিল তুমি নাকি বাড়ি আসছো। আমি সেই শীতের রাতে প্লাটফর্মে বসেছিলাম তোমার জন্যে। জানো রাতে বেকার সময়টাতে প্লাটফর্মে তেমন কেউ থাকে না। তবে একেবারেই যে থাকে না তা কিন্তু নয়। আমাদের স্টেশনটা ছোট। গ্রামের স্টেশন অতবড় হয় না। কিন্তু তারপরও দেখলাম কয়েকটা বৃদ্ধ আর বেশ কিছু টোকাই গোছের বাচ্চা ছেলে এক কোনায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে আছে। একটা পরিবারও মনে হয় আছে সেখানে। এই শীতেও তারা কি করে ঘুমুচ্ছে তা আসলেই চিন্তা করার মত বিষয়।

ভুল হয়ে গেছে নীরা। আসলে বাংলাদেশের ট্রেন গুলি যে সময় মত আসে না তা আমার জানা আছে। তবুও অনেক আগেই চলে এসেছি। আসলে তুমি আসছো এইটা শুনে আর অন্য কোথাও অপেক্ষা করতে ইচ্ছে করছিলো না। এখন মনে হচ্ছে একটা বই নিয়ে আসার প্রয়োজন ছিলো। গল্পে ডুবে থেকে তোমার জন্যে অপেক্ষা করতে থাকায় হয়তো সময়টা মন্দ কাটতো না। কিন্তু দ্রুত চলে আসলাম, মনেই ছিল না একটা বই সাথে করে নিয়ে আসার কথা। আচ্ছা কোন বইটা নিয়ে আসতে চাইছি বুঝতে পেরেছ তো? সেই যে তুমি "অপেক্ষা" নামের একটা বই খুঁজতে গিয়েছিলে লাইব্রেরিতে, সেই বইটা। আসলে অপেক্ষা করতে হচ্ছে তো তোমার জন্যে, তাই আজ ওটার কথাই মনে হচ্ছিল বার বার।

নাহ, আজ মনে হয় অনেক বেশীই দেরি হচ্ছে কোথাও। না হয় ট্রেন তো চলে আসার কথা এই সময়ের মাঝে। কি জানি? হয় তো ট্রেনই লেট ছিল আজ। তাই সব কিছুতেই লেট হচ্ছে। আর ঠাণ্ডাটাও মনে হয় বেড়েছে। লেট যেহেতু হচ্ছে তাই চিন্তা করলাম স্টেশনের বাইরে থেকে চা খেয়ে আসি। দিনের বেলায় হলে বাইরে যাবার ঝামেলা ছিলো না। ছোট ছোট কতগুলি বাচ্চা ছেলেই তো চা'য়ের ফ্লাস্ক নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। এক ইশারাতেই চা হাজির হয়ে যেতো। কিন্তু রাতের বেলাতে তো আর তা সম্ভব না। তাই স্টেশনের বাইরে যেতেই হবে।

বাইরে বেরিয়ে দেখি এই রাত দুপুরেও একটা হোটেল খোলা রয়েছে। আর হোটেল দেখেই খিদেটা টের পেলাম। গিয়ে দেখি দোকানি আর দুইটা ছেলে আছে হোটেলটাতে। অলস সময় পার করছে। তারাও আমার মত অপেক্ষা করছে ট্রেনটার। অল্প কিছু সময়ের জন্যে ট্রেনটা থামলেও এর মাঝেই অনেকে চলে আসে এখানে পেট-পূজা করতে। অন্য সময় হলে ছেলে দুইটার যে কোন একজন দৌড়ে আসতো কি খাবো তা অর্ডার নিতে। কিন্তু এখন তাদের কোন ব্যস্ততা দেখছি না। একবার আমার দিকে তাকিয়ে দেখেই আগের মতই নিজেদের মাঝে আলাপ করছে তারা। আলাপ করার ভঙ্গি দেখে মনেই হবে না শীতের রাত জেগে থাকার কোন দুঃখ আছে এদের কারো।

ক্যাশে বসে থাকা লোকটাই জানতে চাইলো কি লাগবে। তাকে জিজ্ঞাস করলাম কি পাওয়া যাবে এখন। জানালো রুটি-পারোটা, মোঘলাই, ডিম ভাজি, আর সবজি হবে এই মুহূর্তে। খিদেটা আরো একটু বাড়লো কিন্তু হুট করে ট্রেন চলে আসলে তোমাকে এক পলক দেখার চান্সটা মিস হবে তাই বললাম একটা মোঘলাই আর চা দিতে। শুনে সে নিজেই মোঘলাই তৈরি করতে গেলো ক্যাশ ফেলে, ছেলেদের ডেকে আর বিরক্ত করলো না। আমি সামনের দিকের একটা টেবিলে বসে স্টেশনের দিকে চেয়ে আছি। দ্রুতই সে মোঘলাই দিয়ে গেলো। তার কাছে জানতে চাইলাম রাতের ট্রেনটা কখন আসে। জানালো এই সময়ের মাঝে চলে আসার কথা। হয়তো কোথাও দেরি হয়ে গেছে, তাই আজ লেট। তবে খুব দ্রুতই চলে আসবে বললো।

ট্রেন হুট করে চলে আসতে পারে ভেবে যত দ্রুত পারি খেয়ে নিলাম। তারপর প্লাস্টিকের কাপে চা নিয়ে বিল মিটিয়ে আবার এসে বসলাম প্লাটফর্মের টুলটাতে। চারদিক অন্ধকার আর প্লাটফর্মের অল্প আলোয় চারদিক আরো বেশী অন্ধকার মনে হচ্ছিলো। চা'টা শেষ করেও ট্রেনের দেখা পেলাম না। বসে অপেক্ষায় আছি আর মনে পড়ছে এভাবেই বসে থাকার কথা, তোমার পথ চেয়ে। সেই শীতের সকাল বেলায় অপেক্ষার কথা, তোমার কলেজে যাওয়ার পথে। সময়গুলি কত দ্রুত চলে গেলো। তুমি কলেজে পড়া শেষ করে ভার্সিটি ভর্তি হলে। ঢাকা চলে গেলে হোস্টেলে। আর আমি এখনো তোমার অপেক্ষায় বসে আছি এই নির্জনে......







শুক্রবার, নভেম্বর ২৯, ২০১৩

কালোর মিছিলে পদ্মবতীর ইচ্ছে-কথন...



সমাজ ব্যবস্থার শুরু থেকেই গায়ের রং নিয়ে বিভেদ তৈরি শুরু হয়েছিল। শুরু হয়েছিল বড় একটা ফারাক মানুষ মানুষে। চামড়ায় উজ্জ্বলতা থাকার দরুন একটা দল নিজেদেরকে একটু কম উজ্জ্বল বর্ণের মানুষ গুলি থেকে আলাদা করে নিয়েছিল এবং নিজেরা শাসক গোষ্ঠীতে প্রতিষ্ঠিত হবার চেষ্টা করে গেছে আজীবন। পক্ষান্তরে এই কৃষ্ণ বর্ণের মানুষ গুলি সবসময় একটা হীনমন্যতায় ভুগে শোষণের স্বীকার হয়ে আসছিলো। সেখান থেকে দাস প্রথার ব্যাপ্তিও দেখা যায়। 

সময়ের স্রোতে ভেসে দাস প্রথা দূর হয়েছে। আমরা আধুনিক হয়েছি। সভ্য জাতি হিসেবে পরিচয় দিতে শিখেছি। নিজেদের সভ্যতা নিয়ে গর্ব করার মত কাজও করেছি অনেক। ভালবাসা দিয়ে আদায় করতে শিখেছি অনেক কিছু। কিন্তু মূল যে সমস্যা তা কিন্তু দূর করতে পারি নি।

হ্যাঁ, ঐ কৃষ্ণাঙ্গদের আমারা এখনো অবহেলার চোখেই দেখি। এখনো আমরা গায়ের রং দেখে মানুষ বিচার করি। তৈরি করি সমাজ, আমাদের তথাকথিত আধুনিক সমাজের মধ্যে থেকেই। আর এখনো তারা অনেক মেধা এবং গুনে গুণান্বিত হয়েও একটা সোজা লাইনে দাড়াতে সাহস পায় না। কারণ সমাজ তাদের দ্বিতীয় লাইনে দাড় করিয়ে বড় করেছে এবং মনে গেঁথে দিয়েছে যে তারা কখনো প্রথম লাইনের উপযুক্ত নয়।

দেখতে দেখতে সময় তো অনেক পেরুল। এখন তো আমরা আবার নিজেদের "সচেতন নাগরিক" বলেও পরিচয় দিয়ে থাকি। তবে এই ব্যাপারটা নিয়ে কেন সচেতনতার অভাব থাকবে? কেন আমরা একজন মেধাবী এবং গুন সম্বলিত ব্যক্তিকে পেছনের লাইনে দাড় করিয়ে রাখবো? কেন শুধু গুণগান করবো ঐ ত্বক ফর্সা ব্যক্তিটির?

তাই আসুন, নিজেদের মাঝে একটা জনমত তৈরি করি। তৈরি করি এমন একটা সমাজ যেখানে গায়ের রং দেখে কেউ কপাল কুচকে তাকাবে না। বরং কাজ এবং গুন দেখেই তার সাথে এক লাইনে দাঁড়াবে। তাকে আপন সম্পর্কে জুড়তে মন কোন কটু চিন্তা করা থেকে বিরত থাকবে।

কিভাবে হবে তা? কেমনে হবে? কে করবে?
এগুলির সহজ উত্তর হল- আমি, আপনি এবং আমরা সবাই :) আমাদের প্রত্যেকের এই ব্যাপারে যত আইডিয়া আছে তা একত্রিত করে একটা সিস্টেমে পরিণত করবো। সমস্যা সমাধানের রাস্তা তৈরি করবো। আর তখনই ভেদাভেদ হীন একটা কাঙ্ক্ষিত সমাজ ব্যবস্থা ফিরে পাবো আমরা।

এই নিয়ে ফেসবুকে "কালোর মিছিলে পদ্মবতীর ইচ্ছে-কথন" নামে একটা পেইজ খোলা হয়েছে। সেখানে আমারা সবাই এই নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ পাবো। দিতে পারবো নিজেদের মতামত এবং সামনে এগুনোর পথকে করতে পারবো উন্মুক্ত। সময় করে একটু চোখ বুলিয়ে আসতে পারেন পেইজটা থেকে।

শুভ সূচনায় এবং শুভ উদ্যোগে সকলের অংশগ্রহণই কাম্য....... :)







বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২৮, ২০১৩

এখনো তোমার অপেক্ষাতেই আছি....



ঐ সেদিন থেকে অপেক্ষা করছি। যেদিন বলেছিলে, তোমার পক্ষে এইসব পাগলামি আর সহ্য করা সম্ভব নয়। তোমাকে কিছুই বোঝাতে পারি নি সেই দিন। শুধু জানতে চেয়েছিলেম, কখনো পাগলামিটা একটু কমিয়ে দিলে ফিরে আসবে কি না? তুমি তার প্রতি উত্তরে কিছুই বলনি আমায়...

ঐ সেদিন থেকে অপেক্ষা করছি। যেদিন তুমি কালো ঐ ট্যাক্সিতে চড়ে উঠলে, আর তা চলতে শুরু করলো। আর একবারও পিছু ফিরে তাকালে না তুমি। আমি এই একা ঘরটাতে একলা কিভাবে সময় কাটাবো তাও একবার ভাবলে না। আমি শুধু দাড়িয়ে দেখছিলাম, দেখছিলাম তোমার চলে যাওয়া টা। ঠিক সেই দিন থেকে অপেক্ষা করছি.....

এখনো অপেক্ষাতে আছি। জানি, তুমি ফিরে আসবে না। কারণ কেউ কোন দিন ঐ অবস্থা থেকে ফিরে আসে নি। আর ফিরে আসবে বলে এখনো কেউ আমাকে মিছে সান্ত্বনা দেয় নি। বলেছিল ভুলে যেতে। বলেছিল নতুন করে সব শুরু করতে। একেবারে শুরু থেকে শুরু করার কথা অনেকেই উপদেশ আকারে দিয়েছিল। কিন্তু কি করে শুরু করি বল? ঐ শুরু করাটা যে একমাত্র তোমার সাথেই করতে পেরেছিলাম। আর কারো সাথে তো শুরু থেকে শুরু হবে না। হলে সেটা হবে এক অধ্যায়ের শেষের থেকে কিছু একটা। কিন্তু আমি তো অধ্যায়টা শেষ করতে চাই না। তারচেয়ে বরং তোমার অপেক্ষাটাই ভালো.......

আমি এখনো অপেক্ষাতে আছি। অপেক্ষাতে আছি তোমার সাথে আরো কিছু সময় কাটাবার। পাগলামি করে তোমাকে রাগিয়ে দিয়ে তার আনন্দ নেবার। মাঝে মাঝে কিছু অবাধ্য আকাঙ্ক্ষা তোমাকে বলার। লোক চক্ষুর তোয়াক্কা না করে তোমার হাত জড়িয়ে রাজপথে হেঁটে হেঁটে বৃষ্টিতে ভেজার।

জানি তুমি আসবে না। ফিরে আসতে পারলে তুমি এদিনে চলে আসতে। ছোট্ট একটা দুর্ঘটনা তোমাকে আমার কাছে থেকে অনেক দূরে নিয়ে গেছে। দূরত্ব টা তোমার অভিমান থেকেও বাড়িয়ে দিয়ে গেছে হাজার গুন করে......

কিন্তু কি জানো?
আমি এখনো তোমার অপেক্ষাতেই আছি.......





সোমবার, নভেম্বর ২৫, ২০১৩

একটা দিনের জন্যে সত্যিকারের "বাংলাদেশ" দেখতে চাই...

আমি "বিসমিল্লাহ" পড়লে বলবি, করি "জামাত-শিবির"
"Good bless you" বললে তোর মনে লাগবে ব্যথা,
আর "নম্ নম্"? 
সেটা না হয় বাদই দিলাম.....




আমি "জয় বাংলা" বললে হয়ে যাই "লীগ"

বললে "বাংলাদেশ জিন্দাবাদ" হয়ে যাই "জাতীয়তাবাদী"
"রাজাকারের ফাঁসি চাই" বললে হই "নাস্তিক-ব্লগার"
আর "কিন্তু" বললেই, 
"তুই রাজাকার! তুই রাজাকার!........"




আমি "হরতাল চাইলেই" তুই বলবি, 

......................আমি বিরোধী দলের লোক
আর "হরতাল বিরোধী" কথা বললেই, 
.....................হয়ে যাই সরকারের চাটুকার


.

.
.
.
.


আমি একটা দিনের জন্যে "মানুষ" হতে চাই,

গোত্র-বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে দেখতে চাই আমারই মত "মানুষ"
চিন্তা-ভাবনা আর মতাদর্শের উপরে উঠে "জীবন" দেখতে চাই.......



বাংলাদেশী আমি, 

একটা দিনের জন্যে সত্যিকারের "বাংলাদেশ" দেখতে চাই.........





মঙ্গলবার, নভেম্বর ১২, ২০১৩

দিনের শেষে একলা এই আমি...


শীত দরজার কড়া নাড়ছে জোরে জোরে। ইতোমধ্যে দখিনা হাওয়া বন্ধ হয়ে উত্তরের হিম শীতল বাতাস বইতে শুরু করেছে। দিনের সূর্যতাপ ইদানীং আর আগের মত পীড়া দেয় না। আর দুপুর গড়িয়ে কোন রকম বিকলে হলেই ঝুপ করে অন্ধকার নেমে যায় চারদিক থেকে।

হ্যাঁ শীত একেবারেই দরজার বাইরে দাড়িয়ে আছে।
পুরাতন কাঁথা আছে, কিন্তু এইবার শীতের তীব্রতা মনে হয় আমার এই কাঁথাকেও সহ্য করবে না। এখুনি রীতিমতো কাঁথা হাঁপিয়ে উঠে আমাকে উষ্ণ রাখতে গিয়ে।

একটু বাইরে গিয়েছিলেম বিকেলের দিকে একটা কাজে। ফেরার পথে মোড়ের চা'য়ের স্টল থেকে এক কাপ চা খাওয়ার লোভে পেয়ে বসলো। আর তাই গিয়ে সিদ্দিক মিয়ার চায়ের দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। শীতের আগমন আর হরতালের উত্তাপ মনে হয় বেচারার ব্যবসাকে একটু মিইয়ে দিয়েছে। আর তাই সে অন্য যেকোনো সন্ধ্যায় ব্যস্ততার এই সময়টাকে আজ টিভি দেখে পার করছে। আমি গিয়ে দাড়াতেই জিজ্ঞাস করলো
- কেমন আছেন? আজ এই সময়? কোন কাজে গিয়েছিলেন নাকি?
- হ্যাঁ, একটু বেরুতে হয়েছিল। কিন্তু হরতালের কারণে কাজটা আজ আর হলো না। তাই চলে এলাম দ্রুতই।
- বসেন, কি দিবো আপনাকে?
- আপাতত এক কাপ চা দিও।

সিদ্দিক মিয়া ধীরে সুস্থে চা বানাতে শুরু করলো। চা প্রস্তুত করাটাও একটা আর্ট। কাপ ধোয়া, তাতে চিনি আর কনডেস্ট মিল্ক দেয়া, ছাঁকুনি বসিয়ে তাতে কিছু আলাদা চা'পাতা দেয়া আর সব শেষে কেতলি থেকে গরম পানি ঐ ছাকনিতে ফেলা। ব্যাপারটা ঠিক এইভাবে মনোযোগ নিয়ে দেখিনি। আসলে সবসময় এত ব্যস্ততা থাকে যে, এইসব দেখার সময় কই থাকে হাতে?

সিদ্দিক মিয়া চা বানানো শেষ করে কাপটা এগিয়ে দিলো। আমি একটু আরাম করেই চা খাচ্ছি আর নিউজ চ্যানেল দেখছি সিদ্দিক মিয়ার দোকানের ভেতর দিকটায় বসে। রাজনীতির ব্যাপার স্যাপার নিয়ে কথা বলছে উপস্থাপক। এগুলি শুনতে শুনতে আর ভাল লাগে না। তাই সিদ্দিক মিয়াকে বললাম চ্যানেলটা পাল্টে দিতে। সে বললো কিছুক্ষণ পর নাকি কোন মন্ত্রী অনুষ্ঠানে আসবে। মন্ত্রী কি বলে সেটা শুনতে সে নাকি অনেকক্ষণ ধরে এই চ্যানেলটাই দেখছে। আমি আর কথা বাড়ালাম না। চা খেয়ে চারটা সিগারেট নিয়ে দাম পরিশোধ করে চলে আসলাম।

নাহ, সময় বাড়ার সাথে সাথে উত্তরের বাতাসটাও বাড়ছে। একেবারে কাবু করে দিতে চায়। বিকেলে যখন বেরিয়েছিল তখন এতটা ঠাণ্ডা লাগবে বুঝতে পারলে চাদরটা সাথে করে নিয়ে বেরুতাম। কিন্তু তখন এমন হবে সেটা একটিবারের জন্যেও মনে হয়নি। আর কাজটা তো আরও সময় লাগতো, একবার ভেবেই নিয়েছিলাম যে আজ আর হয়তো আসা হবে না।

এখন বাসায় যেতে হবে। ভাতের রান্না করতে হবে। আলুসিদ্ধ করতে হবে। তারপর আলুভর্তা বানিয়ে খেতে বসতে হবে। নাকি চাল ডাল একত্রে বসিয়ে দিয়ে যেটা হয় ঐটাই করবো চিন্তা করতে করতে মেসে চলে আসলাম। হরতালের কারণে আগেই অনেকে বাড়িতে চলে গিয়েছে। দুই একজন যারা আছে তারা এই মুহূর্তে মেসে নেই। একেবারেই ঠাণ্ডা লাগছে মেসের পরিবেশ। অন্য সময়টাতে কারো কারো রুমে গান শুনতে পারতাম। সাথে তাদের টাস খেলার উচ্চ আওয়াজ। কিন্তু এখন সব নিস্তব্ধের আওয়াজ দিয়ে পরিপূর্ণ।

রান্না ঘরে গিয়ে ভাত বসিয়ে দিয়ে আসলাম। রুমে এসে পত্রিকাটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ পড়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু এখন সব খবরেই ঐ একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা। এটা আর ভাল লাগে না। তাই পত্রিকা রেখে বাইরে আসলাম। মেসের বাইরে একটা ছোট্ট ফাকা জায়গা। প্রতিদিন বিকেলে কিছু ছেলে এখানে ক্রিকেট খেলতো। এখন ব্যাডমিন্টন খেলবে কিছুদিন পর থেকে। সেটাও দেখার মত বিষয়।

কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে একটা সিগারেট বের করে জ্বালালাম। ধুয়াটা ছাড়লাম উপরের দিকে তাকিয়ে। ছোট বেলার কথা মনে পড়ে গেল। ছোট বেলায় শীতের সময় মুখ দিয়ে ধোয়া ছাড়ার চেষ্টার করতাম এখনকার এই সিগারেটের ধোয়ার মত করে।

আহ! সময় কত দ্রুত চলে যায়। কিছু বুঝে উঠার আগেই কোথা থেকে কোথায় চলে এসেছি। এখনো মনে পড়ে এতিম খানাটার কথা। ছোট্ট জায়গা, খাবার হয়তো ভাল ছিল না। কিন্তু আমার ঐ জায়গাটাই ভাল লাগতো। যখন একত্রে কষ্ট করতাম আমার মত আরো কয়েকজন মিলে তখন কাউকে আলাদা করে কিছু বলতে হতো না। সবাই কিভাবে যেন ঠিকই বুঝে যেত সমস্যাটার কথা। নিজেরাই অন্য কোন একটা বিষয় নিয়ে আসতাম সমস্যাটাকে পেছনে ফেলে দিতে।

কিন্তু মেট্রিক পাশ করার পর তারা আর আমাকে কোন ভাবেই রাখতে চাইলো না। আর তারপর কিছুটা হোঁচট খেয়েই চলে এসেছি এতদূর। রাত বাড়ছে, ঠাণ্ডাটাও বাড়ছে। উপরে তাকিয়ে আকাশের তারা গুলিকে দেখলাম। আর হারাতে লাগলাম তরার মৃদু মনোমুগ্ধকর উজ্জ্বলতায়...







শনিবার, অক্টোবর ১২, ২০১৩

নিঃশব্দের গল্প...

- এই ছেলে এখানে কিভাবে আসলে? কাকে চাও?
কোন উত্তর নেই। একটু তাকিয়ে আবার তার দৃষ্টি মাটিতে নিয়ে গেল।

- এই ছেলে! আমি তোমাকে কি জিজ্ঞাস করলাম??
এইবার ছেলেটা ভাল করে তাকাল আর একটু হাসি দিল; যেন এটাই তার উত্তর।

- এখানে দাড়িয়ে আছো কেন?? কাকে চাই?? সমস্যা কি তোমার, কথার জবাব দিচ্ছ না কেন??

ছেলেটা কিছু না বলে পকেট থেকে ছোট্ট এতটা নোটবই আর একটা পেন্সিল বের করলো। তারপর নোটবই টা খুলে তাতে কিছু একটা লিখে বাড়িয়ে দিল। তাতে লিখা "দুঃখিত, আমি কথা বলতে পারি না। তবে শুনতে আর লিখতে পারি।"

এটা দেখে রাকিব সাহেবের হঠাৎ মনটা খারাপ হয়ে গেল। রাজপুত্রের মত একটা ছেলে, কিন্তু কত বড় অন্যায় করেছে বিধাতা তার সাথে। মনের কথা গুলি মুখে নিয়ে আসতে পারে না বেচারা। এটা ভাবতে ভাবতেই অন্য একটা ছেলের কথাও মনে পরে গেল। তার নিজের ছেলে, আবির। আবিরও কথা বলতে পারতো না এই ছেলেটির মত। ঠিক এই ছেলেটির মতই কথা শুনতে আর বুঝতে পারতো। হাসির শব্দ করতে পারতো না। তবুও মুখে সবসময় একটা মায়া-মাখানো হাসি ঝুলিয়ে রাখতো।

আবিরের কথা মনে পরেনা সেই কবে থেকে। হঠাৎ করেই খুব জ্বর হল। ঐ সময় ছেলেকে ডাক্তার পর্যন্ত দেখানোর সামর্থ্য ছিল না তার। দুইদিন ভোগার পর হঠাৎ করেই জ্বর ভাল হয়ে গেল। খুব দুষ্টামি করলো সারাদিন। সন্ধ্যায় ক্লান্ত হয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়েও পড়লো। কিন্তু রাতে ঘুমিয়ে ছেলেটা আর সকালে উঠলো না, ঘুমিয়েই থাকলো। কত ডাকাডাকি করলো কিন্তু ছেলেটা তার ডাক যেন গা'ই করলো না। ঘুমিয়েই থাকলো নিজের মত করে।

ঐদিন থেকে বিধাতার উপর একটা আক্রোশ জন্মে গেছে মনে। আক্রোশ জন্মেছে দারিদ্রতার প্রতি। তার আক্রোশ তাকে এখন পাজেরো গাড়িতে চলার মত অবস্থা করে দিয়েছে। বিরাট এসি রুমে বসে বসে সময় কাটানোর সুযোগ করে দিয়েছে। এখন ইচ্ছে করলেই দেশের বাইরে চেকআপের জন্যে যেতে পারে সে।

ভুল করেও এত বছর সে আবিরের কথা মনে করে নি। কিন্তু আজ মনে হয়েই গেল। সাথে মেজাজটাও খারাপ হয়ে গেল তার। একটু রুক্ষ স্বরেই জিজ্ঞাস করলো ছেলেটিকে,
- তা এখানে দাড়িয়ে আছো কেন? কাকে চাই??
ছেলেটি আবারও একটা হাসি দিয়ে নোটবইটাতে লিখে তাকে দেখালো। সেখানে লেখা আছে, "আপনার সাথে"

রাকিব সাহেব এইবার আরো একটু বিরক্তি নিয়ে বললেন
- আমার সাথে মানে কি? তুমি কি জানতে আমি এই সময়ে এখানে আসবো? আর এখানে কেন আমার জন্যে অপেক্ষা করতে হবে?
ছেলেটা আবারও নোটবইতে লিখে দেখালো "আমি এখানে প্রতিদিন অপেক্ষা করছি, গত ২মাস ধরে আপনার জন্যে"

এইবার রাকিব সাহেব একটু অবাক হয়ে বললেন
- টানা দুইমাস ধরে অপেক্ষা করছো আমার জন্যে? তাও আমার গ্যারেজের আড়ালে? ঠিক কি কারণে জানতে পারি?

ছেলেটা আবারও লিখলো, আর আস্তে করে তার চোখের সামনে ধরলো নোটবইটা। সেখানে স্পষ্ট করে লিখা
"বাবা আমি আবির"

রাকিব সাহেব এতটুকু পড়েই জ্ঞান হারালেন।

পরের দিন পেপারে একটা শোকবার্তা ছাপা হলো। সেটা স্বনামধন্য শিল্পপতি রাকিব সাহেবের মৃত্যু সংবাদ। সন্ধ্যায় তার ড্রাইভার তাকে গ্যারেজের পাশে মাটিতে পড়ে থাকা অবস্থায় আবিস্কার করে। সাথে সাথে হাসপাতালেও নেয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। সবাই ধারনা করলো হঠাৎ করেই হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন তিনি। কিন্তু কেউ জানতে পারলো নিঃশব্দ ঐ ছেলেটির কথা।







বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ১০, ২০১৩

আমার আব্বার রসিকতা...

আব্বা প্রায় রাত্রেই দেরি করে আসে। আসেতে আসতে প্রায়ই রাত ১২টা বেজে যায়। আর দিনে আর যাই হোক রাতের খাবারটা আব্বার সাথে একসাথে না খেলে কেমন জানি অপূর্ণতা থেকে যায় ঐদিন। তাই প্রতিদিনই আব্বা আসলে তার সাথেই একত্রে খেতে বসি। আমার দাদী এখনো জীবিত আছে। আমাদের সাথেই ভাল-খারাপ সময়ের সাথী হয়েই আছেন। শারীরিক এবং মানুষিক ভাবে বলতে গেলে আমার দাদী এখনো অনেক ফিট রয়েছে। দাদী এত দেরী করে খেতে পারে না। রাত্র ৯টা নাগাদ খেয়ে নেয়। আর বলতে গেলে নিয়ম করেই রাত ১১টার মধ্যে ঘুমাতে চেষ্টা করেন। ছোট্ট পরিবারে সবাই নিজেদের খোঁজখবর রাখতে পারে। আব্বা প্রায়ই খেতে বসে আম্মাকে জিজ্ঞাস করে দাদী খেয়েছে কিনা। যদিও সে জানে দাদী ঠিকই সময় মত খেয়ে নিয়েছে।

ঐদিনও আব্বার আসতে ১২টা বেজে গেল। তবে দাদী ঐদিন কোন কারণে সময় মত ঘুমাতে যায়নি। আব্বা এসে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং এ খেতে বসেছে। আর তখন দাদী ঘুমানোর জন্যে রুমে যাচ্ছিল। আব্বাকে দেখতে গম্ভীর মনে হলেও আব্বা মাঝে মাঝে ছোটখাটো দুষ্টামি করে আমাদের নিয়ে। ঐদিন সেরকমই একটা করলো। দাদী শুতে যাবার সময় তাকে ডেকে জিজ্ঞাস করলো- "আম্মা খেয়েছেন?" দাদী উত্তরে বললো "হ্যাঁ, খেয়েছি" এইবার আব্বা আবার জিজ্ঞাস করলো "কি খেয়েছেন?" আব্বা কিন্তু ততক্ষণে ঐদিনের খাবার মেন্যু সব জেনে গেছে। তবুও দুষ্টামিটা করার জন্যেই জিজ্ঞাস করলো। দাদী জানালো আজ কি খেয়েছে।

এইবার আব্বা আসল দুষ্টামি শুরু করলো। বললো-
"হয়নি আম্মা। জিদ করে বলতে হবে"

আমার দাদী তো পুরো অবাক আব্বার ঐ কথা শুনে। জিদ করে কিভাবে আবার বলে এই কথা? সে বললো-
"কি বলবো কি করে??"

আব্বা বললো-
"এইভাবে বলেন।
হুহ! কি দিয়ে আর খাবো? ডাল আর ভর্তা ছাড়া আর কি রান্না হয়েছে আজ ??"

দাদী আব্বার এই কথা শুনে কিছু না বলেই হাসতে হাসতে তার রুমে চলে গেল। আম্মা আর আমি ছিলাম খাবার টেবিলে। জোরে শব্দ করে না হাসতে পারলেও আমরা দুইজনই মনে মনে হাসছিলাম ঐ মুহূর্তে...






বুধবার, অক্টোবর ০৯, ২০১৩

সময়ের স্মৃতি...

মাঝে মাঝে ছোটখাটো ঝড় এসে জীবনের অনেক কিছুই পরিবর্তন করে দিয়ে যায়। পরিবর্তন করে দেয় মানুষের মানুষিকতা, সম্পর্ক আর বিশ্বাস...

আরো পরিবর্তন করে দেয় জীবনের গতিপথ। তৈরি করে দেয় কাছের মানুষের সাথে বিশাল দূরত্ব...

তবে, যা কখনোই পরিবর্তন করতে পারে না তা হল স্মৃতি। জীবনের চলার পথ যতই পরিবর্তন হোক না কেন; দূরত্ব যতই থাকুক না কেন; বিশ্বাস যতই ভাঙ্গুক না কেন। পাশাপাশি থেকে কাটানো ভাল সময়ের স্মৃতিগুলোকে কখনোই পরিবর্তন করতে পারে না এই ঝড়গুলো...