শুক্রবার, মে ০৯, ২০১৪

প্রতীয়মান জীবনের কথা


চারপাশে তাকিয়ে দেখুন, হাজার কোটি মানুষ আপনার চারপাশ জুড়ে। হাঁটছে, চলছে, অপেক্ষা করছে, ছুটছে, খেলছে। সবাই ব্যস্ত, কারো কোন ফুরসুত নেই। বিছানা ছেড়ে জগিং করা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমোতে যাবার আগ পর্যন্ত সবাই কিছু না কিছু করেই চলেছে। সকলের কাজই তার নিজ নিজ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে গিয়ে অন্যের দিকে নজর দেবার সময় নেই কারো।


এই মানুষ গুলির মধ্যেও আবেগ-বিবেক সবকিছুরই অবস্থান রয়েছে। যখনই কোন দুর্যোগ কিংবা খারাপ সময় দেখা দিবে তখন এদের সবার বিচলিত চেহারাই দেখা যায়। যখন বড় ধরণের কোন প্রাপ্তির সন্ধান মিলে তখন সবার মধ্যে একটা উল্লাসিত ভাব লক্ষ্য করা যায়। একজন বিপদে পড়লে এদেরই একশত জনের একজন কেউ সাহায্যের জন্যে এগিয়ে আসে, বাকি নিরানব্বই জন দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে যায়। এরা সকলেই সেই ব্যস্ত, ছুটন্ত মানুষ।


আর এই ব্যস্ত ছুটন্ত মানুষ গুলিই আমি, আপনি, আমরা সকলে। ছোটার ধরণ, প্রকৃতি, গতি ভিন্ন হলেও সবাই ছুটছি উন্নতির আশা করে, উন্নতির শেখরে পৌঁছানোর জন্যে। যদিও জানা নেই ছুটে ঠিক কোন স্থানে থামতে হবে আমাদের।


নির্দিষ্ট করে কারো কথা নয়, সকলের মাঝেই এই একই কথা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে প্রতীয়মান।






বুধবার, মে ০৭, ২০১৪

কেমিস্ট্রি বই.........


খাইরুল গতকাল থেকে খুব অস্বস্তিতে আছে। রাতে এক ফোটা ঘুমাতে পারেনি। এদিক সেদিক আর ভিন্ন রঙ্গের চিন্তা করেই সময়টাকে পার করেছে। ফলাফল, সকালের কোচিং আধা ঘণ্টা লেট। কোচিং এ ঢুকে বিব্রত বোধ করলেও কিছু সময়ে সেটা কেটে যায়। পড়ালেখার প্রতি বেশ অনেকটা সিরিয়াসনেস এখনো আছে তার। সামনেই পরীক্ষা, আর বয়সটাই রঙ্গিন চশমা লাগিয়ে ঘুরতে চাওয়ার মত। তবুও খাইরুল পরীক্ষাটাকেই গুরুত্ব দিয়ে এসেছে এতদিন ধরে। কিন্তু গতকাল থেকে সেটার একটু গরমিল হয়েছে।

দশটার দিকে কোচিং ছুটি হল। দ্রুত বাসায় গিয়ে ফ্রেস হয়ে নাকে মুখে কিছু গুজেই ১১টার মধ্যে আবার বের হতে হবে স্কুলের জন্যে। স্কুলটা খুব বেশি দূরে না আবার একেবারেই কাছেও না। আর পথটা হেটেই যেতে হয়। তাই প্রায় সময় একেবারে পিটি স্যরের ঘড়ি ধরা টাইমের শেষ সময় গিয়ে পৌছায় সে। দুই একদিন অবশ্য স্যরের টাইম লিমিট অতিক্রমও হয়ে যায়। তখন এই রোদের মাঝেই ঘড়ি ধরে ২০ মিনিট দাড়িয়ে থাকতে হয়।

এই বিশ মিনিটে অনেক কিছু ঘটে। প্রথমে স্কুলের মর্নিং শিফটের মেয়ে গুলি তাদের সামনে দিয়ে স্কুল ত্যাগ করে, আর তাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসে। আর হাসেবেই তো, কান ধরে কিছু ছেলে একসাথে লজ্জায় মুখ নিচু করে থাকলে তারা হাসবে না তো আর কি করবে? এর পর পিটি স্যরের তাণ্ডব চলে রোদের মাঝে। ছেলে গুলির শরীর চর্চার নামে এক ধরণের অবিচার চালাতে থাকে এই রোদে দাড় করিয়ে। তারপর তার তাণ্ডব শেষে ছেলেগুলিকে ছেড়ে দেবার সময় ওদের ওয়ার্নিং দিয়ে ছেড়ে দেয়। মাঝে মাঝে বেত্রাঘাতও চলে, তবে সেটা প্রতিদিন নয়। যেদিন ড্রেস আপ এর গড়মিল একটু বেশি ঘটে সেদিন বেত্রাঘাত মোটামুটি সবার কপালেই জোটে।

আজ কিন্তু খাইরুল পিটি স্যরের হাতে ধরা খায় নি। তবে মনে হচ্ছিল আজ ধরা খেলেই বরং ভালো হতো। স্যরের তাণ্ডব শেষ হবার পর ক্লাসে যায় সে। ইংরেজি ক্লাসটার পরই আজ "কেমিস্ট্রি" ক্লাস। সাবজেক্টটাও খাইরুলের খুব ভালো লাগে। বইটার নমুনা দেখলেই তা বোঝা যায়। পাতায় পাতায় বিভিন্ন রঙ্গে রাঙ্গিয়ে নোট আর বুকমার্ক তৈরি করা আছে। সংজ্ঞা খোজার জন্যে সবাই যখন আতিপাতি করে তখন খাইরুলের বইটায় আশেপাশের অনেকেই চোখ বুলায়। সংজ্ঞার বুকমার্কের অংশটাও তো তার বইতে হাইলাইট করা থাকে।

কিন্তু আজ খাইরুল বইটা ব্যাগ থেকে বের করছে না। একটু ভয়ও পাচ্ছে মনে মনে। কেউ যদি বইটা দেখেই কিছু আচ করে ফেলে। তাই ইমনের বইটা আজ সে ধার করে নিয়েছে। ইমন একটু অবাক হলেও কিছু বলল না। ইমনেরই লাভ, স্যর কি বলল সেটা খেয়াল না করলেও খাইরুলের মার্কিং এর বদৌলতে তা সে বইতেই পেয়ে যাবে। টিফিন টাইমেই আজ ছুটি। বৃহস্পতি বার হাফ স্কুল তাই বেলা ২টায় ছুটির ঘণ্টা বাজতে শুরু করলো। হই হই করে নিচের ক্লাসের ছেলেগুলি বের হচ্ছে ক্লাস থেকে। ফরহাদ, শফিক, মামুন, ইমন আর খাইরুল বসে কথা বলছে ক্লাস। আসলে খাইরুল কিছু বলছে না, শুনছে। বাকি সবাই আজকে বিকেলে ক্রিকেট ম্যাচটার আলোচনা করছে। খাইরুলও সেই দলের একজন খেলোয়াড়।

প্রায় সবাই যখন বের হয়ে গেছে তখন এই দলটাও স্কুল থেকে বের হল। ইমন আর খাইরুল একই এলাকায় পাশাপাশি থাকে। তারা এক সাথেই ফিরে যায় স্কুল শেষে। আর ভালো বন্ধুও তারা। ইমন কিছু পথ যাওয়ার পর খাইরুলকে জিজ্ঞাস করলো-

- তোর কি হয়েছে? এমন গুম হয়ে আছিস কেন? খালাম্মা বকেছে নাকি?
- আরে নাহ, কিছু হয়নি। এমনি ভালো লাগছে না।
- তুই আমাকে বুঝ দেস? এতদিনে তুই এই বুঝ আমাকে দিয়ে পার পেয়ে যাবি বলে তোর ধারনা?
- আরে! তোকে বুঝ দিবো কেন? আর কি নিয়ে বুঝ দিব?
- থাক। বলতে যখন চাস না তখন আর জিজ্ঞাস করবো না। কিন্তু মুডটা অন্তত পরিবর্তন কর। তোকে দেখে মনে হচ্ছে যেন কেউ মরে গেছে।

এরপর অনেকক্ষণ আর কেউ কোন কথা বলল না। প্রায় বাড়ির কাছাকাছি এসে খাইরুল বলল-

- তোর কোন কাজ আছে এখন?
- নাহ। গোসল দিয়ে খেয়ে একটু রেস্ট, তারপর তো ম্যাচে।
- একটু বাসায় আসবি আমার সাথে?
- কেন?
- এমনি, আম্মা বাসায় নেই আর আব্বা তো সেই দেড়টার দিকেই এসে চলে গেছে এতক্ষণে। বাসায় চল, একসাথেই বেরুবো ম্যাচের জন্যে।
- আন্টি কোথায় গেছে?
- আম্মা একটু ঢাকা গেছে খালার বাসায়। সন্ধ্যা হবে ফিরতে।
(ইমন একটু তেরছা ভাবে তাকিয়ে বলল)
- আচ্ছা চল। তবে ভালো কিছু খাওয়াতে হবে, মনে রাখিস।

বাসায় গিয়ে দু'জনেই ফ্রেস হয়ে খাওয়া-দাওয়ার পর্ব সারল। এর পর কনসোল গেম খেলা শুরু করলো। খেলার এক পর্যায়ে খাইরুল বলল-

- দোস্ত, একটা কথা বলবো?
- দেখ গেম খেলবি না আমার সাথে একদম। তুই কিছু একটা চেপে আছিস সেটা আমি ঠিকই বুঝতে পারছি। বলার হলে সোজা করে বল, আর না হয় এমন মুখ করে থাকবি না একদম।
- ক্ষেপিস না দোস্ত, আমি ব্যাপারটা নিয়ে একটু কনফিউশনে আছি। আসলে ব্যাপারটাতে গুরুত্ব দেয়া উচিৎ কিনা সেটাই আমি বুঝতে পারছি না। আবার যেটা মনে করছি সেটা ভুল কিনা সেও বোঝা যাচ্ছে না।
- দেখ ট্রেলার বলবি না, পুরা ঘটনা বল। কি নিয়ে তোর এত টেনশন সেইটা বল, পুরাটা বলবি। অর্ধেক করে বলবি না।
- তার আগে বল এটা কারো সাথে আলোচনা করতে যাবি না।
- ধুর! তুই এতদিনেও আমাকে এতটুকু বিশ্বাস করতে পারিস নাই? যা শালা শুনবোই না, তুই থাক। আমি বাসায় যাবো।
- দোস্ত থাম, শোন আমার কথা। টেনশন হচ্ছে এখন তুইও যদি এমন করিস তাহলে আর কাকে গিয়ে বলবো?
- ঢং করবি না। যা বলার বল এখন।
- আচ্ছা, শোন। আগে পুরাটা শুনবি তারপর যা বলার বলবি।
- হুম
- কয়দিন আগে অহনা কোচিং এর শেষে আমার কেমিস্ট্রি বইটা চেয়ে নেয়। বলে তার নাকি কি একটা নোট নিতে হবে। যেহেতু আমার বইটাতে হাইলাইট করা আছে আর প্রয়োজনীয় সূত্র গুলি প্রতি চ্যাপটার শেষেই লিখে রাখি তাই সেটা নাকি তার নোট করতে সুবিধা হবে। আমিও চাওয়ার পর বই দিয়েছিলাম। ঐখানে বসেই দাগাচ্ছিল প্রথমে। পরে বলল তার নোট করতে আসলে অনেক সময় লাগবে, তাই যদি বইটা তাকে দেই ঐদিনের জন্যে তবে খুব উপকার হয়। তুই যেহেতু বাড়ির কাছেই আছিস আর কোচিং এর নোট গুলি যেহেতু আমার কাছেও আছে তাই বইটা দিলাম তাকে।
- হুম। তো?
- আগে শোন পুরাটা। পরে কথা বল। পরের দিন সকালে কোচিং করে যখন স্কুলের দিকে আবার যাচ্ছি তখন এমনি অনেক লেট হয়ে গেছে। মনে নাই পরশু পিটির সময় আমি দেরি করার লাইনে দাড়িয়ে ছিলাম, ঐদিনের কথা বলছি। বাসা থেকেই লেট হয়ে গেছে, তাই একরকম দৌড়েই আসছিলাম। কিন্তু রাস্তায় অহনা আর সুমির সাথে দেখা। ওরা স্কুল থেকে কোচিং এ যাচ্ছিল। আমাকে দৌড়াতে দেখে অহনা ডাকল। দাঁড়াবো না, দাঁড়াবো না করেও দাঁড়ালাম। বললাম যে দেরি করে ফেলেছি। কথা শুনে ওরা দুজনেই হেসে দিল। আর বলল- দেরি যখন হয়েই গেছে তখন আরও একটু দেরি করে যেতে। বিরক্ত লাগলেও কিছু বলিনি তখন। তারপর অহনা ব্যাগ থেকে বইটা দিয়ে বলল- নোট নেয়া শেষ। বই নিয়ে যাও। আমি বই নিয়েই আবার ছুট দিলাম। তারপর ক্লাসে এসে সেকেন্ড পিরিয়ডে যখন বই খুললাম তখন দেখি পেন্সিল দিয়ে লেখা প্রথম পৃষ্ঠাতে-
"শুরু করেছো যখন, তখন ১২ নম্বর পেজে যাও"
আমি ১২ নাম্বার পেইজে গেলাম। সেখানে চিত্রের নিজে লেখা-
"১২ তারিখে পরিচয় হয়েছিল কোচিং এ, জানি গুরুত্বহীন তথ্য তোমার জন্যে। কিন্তু সবার জন্যে নয়। এখন কষ্ট করে ৩৬ নাম্বার পেইজে যাও"
আমি আবার ৩৬ নাম্বার পেইজে গেলাম, সেখান একেবারে নিচে লেখা-
"এই ৩৬ নাম্বার আমি তোমার থেকে দেখে দেখে লিখেছিলাম কোচিং এর পরীক্ষাতে। আরও বেশিই লিখেছিলাম, কিন্তু পেয়েছিলাম ৩৬। এটাও গুরুত্বহীন তথ্য তোমার জন্যে। কিন্তু সবার জন্যে নয়। এখন আরও একটু কষ্ট করে ৫৩ নম্বর পেইজে যাও"
আমি তখন সেইটা আর না দেখে বই বন্ধ করে ক্লাস করলাম। আর তোর বইতে নোট নিয়েছিলাম সেইদিন।

- হুম, তারপর?
- তারপর বিকেলে বাসায় এসে আর বই ধরি নি। কোচিং এ ও যাইনি সেদিন। আম্মাকে বললাম মাথা ব্যথা করছে। তাই আম্মা ও আর কিছু জিজ্ঞাস করেনি। সন্ধ্যার পর চা'য়ের মগ হাতে নিয়ে পড়তে বসলাম। আসলে পড়তে বসি নাই, কেমিস্ট্রি বই খুললাম। গেলাম ৫৩ পেইজে। সেখানে লেখা-
"কোচিং এর ৫৩ নাম্বার দিনে আমার জন্মদিন ছিল। তোমরা সবাই আমার জন্মদিন উপলক্ষে পার্টি করেছিলে কোচিং এর মধ্যেই। উপহারও দিয়েছিলে অনেকে। তোমার সেইদিনের উপহারটা আমার ভালো লেগেছে। সবার মত তুমি শো-পিস দেও নি। একটা কলম আর একটা ডায়েরী দিয়েছিলে। যেটাতে আবার ছোট্ট একটা লকও আছে। উপহার গুলির মধ্যে সবচেয়ে আলাদা উপহার ছিল। এবার কষ্ট করে ২০৪ নম্বর পেইজে যাও...."
পৃষ্ঠা উল্টে গেলাম ২০৪ নাম্বার পেইজে। ঐটা প্রশ্নের শেষ পেইজ। তাই অনেকটা জায়গা। আর সেখানে অল্প কয়টা লাইন লিখেছে। এইটা তুই নিজেই দেখে বল এর অর্থ কি।

খাইরুল তার কেমিস্ট্রি বইটা ব্যাগ থেকে বের করে ইমনের হাতে দিল। ইমন ২০৪ নাম্বার পেইজে গেল। সেখানে লেখা-

সবার জন্যে গুরুত্বপূর্ণ না, তোমার কাছে আরও না। কিন্তু তবুও তোমাকে অজানা কারণেই ভালোলাগে আমার। প্রথমেই বলেছি অজানা কারণ তাই আর ব্যাখ্যা দিতে পারবো না। এই ভালো লাগা তোমার মেধার জন্যে নয় এতটুকু নিশ্চিত করে বলছি। আরও নিশ্চিত করে বলছি তোমার হ্যারিপটার মার্কা চেহারার জন্যেও এতটা ভালোলাগা নেই। ব্যক্তি তোমার জন্যেই ভালোলাগা কাজ করে। প্রথমে ভালোলাগাটা আস্তে আস্তে অনেক বড় হয়ে গেছে। এখন ভালোলাগাটা তোমার উপহারের ডায়রিতে দেয়া জাতীয় সঙ্গীতের ২য় লাইনে পরিণত হয়েছে। ঘাবড়ে যেও না, তোমাকে আমি জাতীয় সঙ্গীতের ঐ লাইন গাইতে বলবো না। আমি শুধু আমার কথা গুলিই তোমাকে বললাম।
ভালো থেকো।

এইগুলি পড়ে ইমন হাসতে হাসতেই খুন। বলল-
- তুই এই সহজ কথাটা ও বুঝতে পারিস নাই গোবর গণেশ?
- সহজ কথা কোনটা। কি বলল কি বলতে চায় কিছুই তো বুঝলাম না। শুধু শুধুই কতগুলি কথা বলল। আর এত কিছু মনে রেখে কি করে?
- ধুর! তুই শুধু পড়া লেখাই করেছিস। তোর বুদ্ধি আসলেই খোলে নাই। আচ্ছা বাদ দে। তুই ডায়েরী খোল।
- কোন ডায়েরী?
- আরে একটা ডায়েরী হলেই হবে। স্কুলের ডায়েরিটাই নে।
(খাইরুল ব্যাগ থেকে ডায়েরী বের করে)
- এখন?
- জাতীয় সঙ্গীত বের কর।
- হুম
- এখন ২য় লাইনটা পড়।
- চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি।
- আরে!! ঐটা না। প্রথম লাইনের এইটা পড়।
- কিন্তু ২য় লাইন তো এইটাই। দাড়ির পর এইটাই দ্বিতীয় লাইন।
- তুই আজাইরা কথা বলিস না তো। যা করতে বলছি ঐটা কর। এই এতটুকু পড় (আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ইমন)
- আমি তোমায় ভালবাসি
- হুম। অহনা তোকে পছন্দ করে এইটা তো সরাসরিই বলেছে। আর অস্পষ্ট ভাবে বলেছে সে তোকে ভালোবাসে। সিম্পল জিনিষ।
- ধুর! এর মাঝে ভালোবাসা-বাসি আসলো কোথা থেকে?
- তুই আসলেই একটা বেকুব। সহজ করে বলা কথাও বুঝিস না। মেয়েটা তোকে ভালোবাসে সেইটা সরাসরি বলতে পারছিল না, আর তার পছন্দের গুরুত্ব বোঝাতে তোর প্রতিটা কাজের দিন গুনে বলল, তারপরও তুই বুঝিস না কেন?
- কিন্তু...
- রাখ তোর কিন্তু। তুই মেয়েটাকে পছন্দ করিস? এমনি কিন্তু মেয়েটা মেধাবী। রোল তুইও জানিস। আর সবসময় সে তার প্লেস ধরে রাখে। দেখতেও কিন্তু খারাপ না। অনেকেই তাকে পছন্দ করে।
- তুই এইসব কি বলিস! এখন এই গুলি নিয়ে ভাবার সময় কোথায়?
- আচ্ছা যা। তোর ভাবতে হবে না। তুই শুধু বল মেয়েটা এখন তোর কাছে ভালো না খারাপ?
- এইটা কেমন প্রশ্ন? খারাপ ভাববো কেন?
- হইছে। মুখ বন্ধ কর। তোর কিছু করতে হবে না। তুই তোর মত থাক। নতুন একটা কেমিস্ট্রি বই কিনে নে। এইটা আপাতত আর কাউকে দেখাবি না। আর লেখাগুলিও মুছে ফেলিস না।
- কেন?
- তোরে আমি করতে বলছি তাই। আর কোচিং এ অহনাকে কিছু বলবি না। তুই যেমন ছিলি ঐরকমই থাকবি। ধর তুই এইগুলি কিছুই দেখিস নাই।
- আর?
- বাকিটা পরে।

সেদিন সন্ধ্যায় কোচিং করলো সবাই। সবাই স্বাভাবিক। এত কিছুর কোনটাই তাদের দেখে বোঝার উপায় নেই। তবে মনে মনে ৩জনই খুব উত্তেজিত। কোচিং শেষ হতেই সবাই বের হচ্ছে। রুম থেকে বের হবার একটু আগে ইমন অহনাকে ডাকল।
- অহনা! শোন।
- কি?
- কেমন আছো?
- এই তো ভালোই। তুমি?
- আমিও ভালো। একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাস করবো?
- কি প্রশ্ন?

পাশ থেকে খাইরুল বলল- এই ইমন আমি বাইরে যাচ্ছি।
ইমন খপ করে খাইরুলের হাত ধরে বলে- কই যাবি! চুপ করে এখানে বস। অহনা সোজা করে উত্তর দিবে। প্যাচাবা না।
অহনা- আচ্ছা।
ইমন- তুমি কি খাইরুল কে পছন্দ কর। যতটা পছন্দ করলে নিজেদের একটা জুটি বলে ততটা?
অহনা- হ্যাঁ, ততটাই পছন্দ করি। কিন্তু সেটা আমি একা করি। খাইরুল নিশ্চয় করে না।
ইমন- খাইরুল আসলে এইসব নিয়ে কখনো ভেবেছে বলে মনে হয় না। কিন্তু আমার বিশ্বাস তোমরা দু'জনই যদি নিজেদের অল্প একটু করে সময় দিতে পারো তাহলে তোমাদের সম্পর্কটা সুন্দর করে এগিয়ে যাবে।
অহনা- কিন্তু খাইরুল কি এটা চায়?
ইমন- সে বুঝতে পারলে চাইতো। এক্ষেত্রে তোমাকেই কিছুটা কষ্ট করতে হবে। আর খাইরুল শোন। তোকে সিরিয়াস ভাবে কিছু করতে হবে না। আগে যেমন ছিলি তেমনই থাকবি। শুধু মাঝে মাঝে অহনার সাথে কথা বার্তা বললে তো আর তোর কোন সমস্যা হবে না নিশ্চয়!
খাইরুল- না।
ইমন- Good. এখন সবাই বাসায় যা। মনে কর কিছুই হয়নি।
অহনা- যাই তাহলে ইমন ভাইয়া। গেলাম খাইরুল।





৯ বছর পর এক সকালে ইমনকে ফোন করে খাইরুল বলছে-
- হ্যালো ইমন! কেমন আছিস?
- আলহামদুলিল্লাহ। তুই?
- আমিও ভালো। শোন তোকে একটা প্রয়োজনে ফোন করেছি।
- কি প্রয়োজন?
- তুই ৭ দিনের ছুটি ম্যানেজ কর। ১২ থেকে ১৭ তারিখ পর্যন্ত এই মাসের।
- কেন? কি হয়েছে??
- তোকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ করতে হবে।
- ধুর। কথা পেঁচাচ্ছিস কেন? সোজাসুজি বলতে পারিস না?
- আচ্ছা, শোন। সোজা করেই বলছি। ‌১৪ তারিখে আনুষ্ঠানিক ভাবে অহনা তোর ভাবী হচ্ছে। পারিবারিক ভাবেই সব হচ্ছে। তুই শুধু আমাদের হয়ে বেশ কিছু কাজ করবি। হা হা হা! বুঝতে পারছিস এখন?
- তুই অনেক চালাক হয়ে গিয়েছিস। ১২ তারিখে বিকেলে তোর বাসায় আমি আসছি।
- দ্রুত আয়। অনেক কাজ রয়েছে। সব তোকেই ম্যানেজ করতে হবে। আফটার অল, তোর জন্যেই ঘটনাটার শুরু হয়েছিল।







বৃহস্পতিবার, মে ০১, ২০১৪

সভ্য সমাজের আধুনিক দাস



পৃথিবী এগিয়েছে, মানুষ দিনে দিনে আরও বেশি সভ্য হয়েছে। আগে অন্ধকার যুগে বসবাস করতো আর এখন আধুনিকতার যুগে বসবাস করে। সত্যিই অনেক উন্নতি হয়েছে মানব সমাজের।

কিন্তু এখনো দাস প্রথা এই সভ্য মানব সমাজ থেকে বিলুপ্ত হয়নি। যদিও আজকাল কেউ এটাকে আর দাস প্রথা বলে না। আর বলবেই বা কেন? আজ কাল তো আর সেই অন্ধকার যুগের মত মানুষ হাট বাজারে বিক্রি করা যায় না। তারা এখন বিক্রি হয় তাদের শ্রমের দ্বারা, হাড় ভাঙ্গানি খাটুনির দ্বারা, আর লোক ঠকানো পারিশ্রমিকের দ্বারা।

কিন্তু বিক্রি হয়, হাতে পায়ে লোহার শিকলের বদলে এখন অদৃশ্য দারিদ্রের বাধনে বন্ধী হয়।



জয় হোক!
আজকের সভ্য সমাজের এই নতুন দাশ প্রথারই জয় হোক.......







বুধবার, এপ্রিল ৩০, ২০১৪

একটা অসম্ভব ভালবাসাকে জয় করার গল্প.....

বর্ষণমুখর কোন এক রাতে গল্পের শুরু.....

 
 
 
 
 
 
 
 
 
      
 
 
 
 
 
 



...... আর তারপর কাছাকাছি থাকা সকল সমস্যার অবসান ঘটিয়ে, সবটা সময়ের জন্যে।









সোমবার, এপ্রিল ০৭, ২০১৪

অদ্ভুতুড়ে স্বপ্ন.....


ঘুমের মধ্যেই এই অস্বস্তি কাজ করছিল। কেমন যেন একটা দম বন্ধ ভাব। মনে হচ্ছিল বুকের উপর ভারী কিছু একটা বসে গলা চেপে ধরেছে। ছটফট করছিলাম খুব কিন্তু খুব অবাক হয়ে আবিষ্কার করলাম আমি কোন শব্দ করার শক্তি পাচ্ছি না, এমনকি নিজের হাতের আঙ্গুলটা পর্যন্ত নাড়াবার শক্তি নেই আমার। অসহায়ের মত শুধু দম নেবার জন্যে ছটফট করতে থাকলাম আমি। কিছুক্ষণ বাদেই বুঝতে পারলাম চারদিক অন্ধকার হয়ে আসছে আমার। মারা যাচ্ছি আমি এটা বুঝতে এতটুকু সমস্যা হচ্ছিল না।


হঠাৎ করে ছটফটানিটা কমে গেল। বুকের উপর চাপটা আগের মতই আছে কিন্তু সেটা এখন আর পিড়া দিচ্ছে না। দম বন্ধ ভাবটা নেই, সাথে দমটাও নিতে হচ্ছিল না আর। কিন্তু এটা কি করে সম্ভব!! দম নেবার প্রয়োজনটাই যদি ফুরবে তবে বোধ শক্তিটা পাচ্ছি কোথা থেকে? নাকি মরে যাবার পরও বোধ শক্তিটা রয়ে যায়? নাকি......

ধরমর করে বিছানায় উঠে বসলাম। বিছানাটা আমার ধস্তাধস্তির চোটে একেবারেই জগাখিচুড়ি টাইপের হয়ে গেছে। এলোমেলো বিছানা ছেড়ে উঠলাম। শিরদাঁড়া বেয়ে ঠাণ্ডা একটা স্রোত নেমে গেলো। ঘড়ি দেখলাম, রাত ৪টা ১০। ভোর হতে এখনো অনেকটা সময় বাকি। স্বপ্নের অস্বস্তিটা এখনো রয়ে গেছে। উঠে বেসিনের সামনে গেলাম হাতমুখ ধোঁয়ার জন্যে।

ঠাণ্ডা পানির স্পর্শ চোখে মুখে লাগার সাথে সাথেই অস্বস্তিটা অনেকটা কমে গেছে। সোজা হয়ে আয়নায় দেখলাম নিজেকে। মনে মনেই হাসি পেয়ে গেলো। কিছুক্ষণ আগেই নিজের মৃত অবস্থা স্বপ্নে দেখলাম আমি আর এখন দিব্যি আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকেই দেখছি। কি অদ্ভুত স্বপ্ন! হঠাৎ গলার দিকে চোখ গেল। আয়নার দিকে একটু এগিয়ে ভাল করে গলার দিকে দেখলাম। ৩ টে করে গলার দুপাশে ৬টা দাগ লাল হয়ে আছে। কিন্তু তা কি করে সম্ভব......

বৃহস্পতিবার, মার্চ ২০, ২০১৪

পছন্দের কার্টুনঃ Popeye



I'm Popeye the Sailor Man,
I'm Popeye the Sailor Man.
I'm strong to the finich, cause I eats me spinach.
I'm Popeye the Sailor Man....


কি! কারো কথা মনে পড়ে? নাবিকের পোশাক গায়ে পেশিবহুল একটা ক্যারেক্টারের কথা?? শক্তির প্রয়োজন পড়া মাত্র Spinach খেয়ে শক্তি জোগাড় করা কার্টুনটার কথা?

হ্যাঁ, আমি Popeye এর কথাই বলছি, এটা জনপ্রিয় কার্টুন ক্যারেক্টার পপাই (Popeye) এর থিম সং। খুব ছোট বেলায় যেই কার্টুন সিরিজ গুলি নিয়মিত অনেক আগ্রহ নিয়ে দেখতাম এবং এখনো সময় পেলে যা দেখতে বসে যাই তাদের মধ্যে একটা এই Popeye। এখনো মনে পড়ে, সকালে স্কুলে যাবার আগে রেডি হতে হতে আর নাস্তা করতে করতে এই কার্টুনটা দেখতাম তখন। 

Popeye এর বয়স কত হতে পারে একটু ধারনা করুন তো! 
হুম, Popeye কিন্তু বয়সে অনেক অনেক বয়স্ক। একে প্রথমে দেখা যায় ১৯২৯ সালের ১৭ই জানুয়ারি "দৈনিক কিং" পত্রিকায় কমিক থাম্বলাইন হিসেবে। মার্কিন কার্টুনিস্ট এলিজে ক্রিসলার সেগার [Elzie Crisler Segar] এর হাত ধরে আমাদের সামনে আসে এই Popeye। তখন অবশ্য Popeye শিরোনামে ছিল না থাম্বলাইনটি, তবে অল্প কিছুদিনের মাঝেই সেটি শিরোনামে চলে আসে। 

এলিজে ক্রিসলার সেগার একাধারে কার্টুনিস্ট, স্ক্রিপ্ট লেখক, নাট্য ও টেলিভিশন এনিমেটেড কার্টুন নির্মাতা। ১৯১৯ সাল থেকে প্রকাশিত Thimble Theatre কার্টুন ধারাবাহিকের দশ বছর বয়সে Segar এর হাত ধরে Popeye পত্রিকার পাতা থেকে থিয়েটারে উঠে আসে। পরে ১৯৩৮ এ Segar এর মৃত্যুর পর তার সহকারী Bud Sagendorf হাত ধরে এগিয়ে চলে Popeye। সে সময় পত্রিকায় প্রতি রবিবার Hy Eisman এর লেখা আর অঙ্কনে থাম্বলাইন আকারে প্রকাশ পেতে থাকে কার্টুন টি। 

১৯৩৩ সালে Max এবং Dave Fleischer এর Fleischer Studios, Thimble Theatre এর কার্টুন কারেক্টর গুলিকে শর্ট সিরিজে কার্টুনে রূপা দান করে Paramount Pictures এর জন্যে। ৩০ শতকের জনপ্রিয় কার্টুন শো গুলির একটিতে পরিণত হয় এই Popeye। ১৯৫৭ পর্যন্ত Paramount Pictures এর অধীনেই কার্টুনটি প্রকাশিত হতে থাকে, পরে এর সত্ত্বাধিকারী নিয়ে নেয় Time Warner এর সহায়ক প্রতিষ্ঠান Turner Entertainment। পরে Warner Bros. Entertainment অধীনে এটি প্রকাশিত হতে থাকে।

এই সময়ের মাঝে Popeye কমিক বই, টেলিভিশনের কার্টুন, বিভিন্ন সামগ্রীর উপস্থাপনের চরিত্র, ভিডিও গেম সহ অসংখ্য জিনিষের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমাদের সামনে এসেছে। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৮০ সালে জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা রবিন উইলিয়ামস [Robin Williams] কে Popeye এর চরিত্রে রূপায়িত করে Robert Altman একটি মুভি তৈরি করেন, যা এই সময়ও ৫৭% রেটিং পেয়ে অবস্থান করছে বিভিন্ন ক্রিটিকদের তালিকায়। ২০০২ এর টিভি গাইড তালিকা অনুসারে "50 Greatest Cartoon Characters of All Time" এর ২০ তম অবস্থানে রয়েছে প্রিয় Popeye কার্টুন ক্যারেকটারটি।

অনেক কথা বললাম, এবার Popeye এর থিম সং টি শুনে নিন দ্রুত। আরো থাকলো রবিন উইলিয়ামস অভিনিত মুভি থেকে গানটির আংশবিশেষ ইউটিউভ থেকে।




মঙ্গলবার, মার্চ ১৮, ২০১৪

Prisoners :: অসাধারণ থ্রিলার মুভি



প্রতিবেশী ব্রিচ পরিবারের নিমন্ত্রণে তার বাড়িতে গিয়ে হাজির হয় ডোভার পরিবার। নিজেদের সমবয়সী ছেলে মেয়েদের ছেড়ে দিয়ে হাত পা ছাড়িয়ে আড্ডায় বসে তারা। আড্ডার ফাকে এনা ডোভার প্রতিবেশীর মেয়ে জয় ব্রিচকে তার খেলনা দেখাতে তাদের বাড়ি নিয়ে যাবার বায়না ধরে। মানা করেও তাদের বড় ভাই-বোনকে নিয়ে অবশেষে বাড়ি যাবার অনুমতি পায় তারা। রাস্তায় নেমে বাড়ি যাবার পথে রাস্তার পাশে পার্ক করে রাখা অপরিচিত এক RV ভ্যান দেখে বাচ্চারা দৌড়ে সেটার কাছে যায় আর স্বভাব সুলভ দুষ্টামি জুড়ে দেয়। এনা এক পর্যায়ে ভ্যানের পেছনে থাকা সিঁড়ি ধরে উপরে উঠতে শুরু করে। কিন্তু পেছন থেকে তার বড় ভাই এসে তাকে নামিয়ে নিয়ে আবার ফিরে যায় ব্রিচদের বাড়িতে। আড্ডার ফাকে হঠাৎ খোঁজ করতে গিয়ে জানতে পারে বাচ্চারা ফিরে এসেছে কিন্তু ছোট এনা আর জয়কে খুঁজে না পেয়ে কেলার তার বাড়িতে গিয়ে খুঁজে আসে তাদের। সেখানে গিয়ে বুঝতে পারে তারা এখানে আসে নি, ফিরে গিয়ে ব্রিচদের বাসায় আবার খোঁজাখুঁজি শুরু করে তখন। এক পর্যায়ে রালফ ডোভার জানায় রাস্তার পাশে পার্ক করে রাখা সেই RV ভ্যানটার কথা। কিন্তু খুঁজতে গিয়ে সেটার আর দেখা পায়নি তারা।

পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের লোকি'র উপর দায়িত্ব পড়ে কেসটার। ভ্যানের তথ্য অনুযায়ী খুব দ্রুতই সেটার অবস্থান জানতে পেরে সেটা থেকে গ্রেফতার করে এলেক্স নামের এক তরুণকে। কিন্তু জিজ্ঞাসা বাদের এক পর্যায়ে বুঝতে পারে এলেক্স একজন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। তার বয়স বেড়ে গেলেও তার বুদ্ধির বিকাল একজন ১০ বছরের বাচ্চার মত। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে লোকি ফাদার পেট্রিকের বাড়ি থেকে একটা অর্ধ-গলিত লাস উদ্ধার করে। ফাদারকে সে ব্যাপারে চার্জ করা হলে ফাদার জানায় লোকটা তার কাছে কনফেস করতে এসেছিলো, এবং কনফেস করার সময় সে জানায় এই পর্যন্ত সে মোট ১৬ টা বাচ্চাকে খুন করেছে এবং এর পরও আরও করবে। ফাদার লোকটাকে ট্রিক করে বন্দী করে এবং তার বাড়ির বেসমেন্টে হাত-পা, মুখ বেধে ফেলে রাখে। ওদিকে এলেক্সের কাছ থেকে কোন তথ্য আদায় করতে না পেরে তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ ডিপার্টমেন্ট, আর তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায় এলেক্সের আন্টি। এটা জনতে পেরে কেলার ক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং জনসম্মুখেই এলেক্সকে হামলা করে বসে। ডিটেকটিভ লোকি পুলিশের সহায়তায় সেই পরিস্থিতি সামাল দেয় তখন।

মেয়ে হারিয়ে ক্ষোভে অন্ধ পিতা খুব সন্তর্পণে কিডন্যাপ করে এলেক্সকে। পরে সে আর তার প্রতিবেশী ফ্রাংলিন ব্রিচকে নিয়ে ছেলেটার কাছ থেকে মেয়েদের তথ্য আদায় করতে তাকে নির্যাতন শুরু করে। এদিকে পাড়া প্রতিবেশী সবাই হারানো বাচ্চাদের মঙ্গল কামনা আর পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানাতে একত্রিত হয় এক সন্ধ্যায়। সেখানে ডিটেকটিভ লোকির নজর এক অচেনা লোকের উপর গিয়ে পড়ে। লোকটি সেটা বুঝতে পেরে দ্রুত ঘটনা স্থল ত্যাগ চাইলেও লোকি তার পিছু নেয় এবং অবশেষে ডিটেকটিভকে ধোঁকা দিয়ে পালাতে সক্ষম হয়। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে ডিটেকটিভ লোকি একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে কর্মরত এক মহিলার থেকে জানতে পারে একটি লোক সম্বন্ধে, যে কিনা প্রায় কিছুদিন পরপর ছোট ছেলে-মেয়েদের কাপড় কিনতে আসে কিন্তু প্রতি বারই কাপড়ের সাইজের ভিন্নতা থাকে। মহিলার তথ্য অনুযায়ী সে একটি ঠিকানায় গিয়ে পৌঁছে আর সেখান থেকে ঐ রাতের সন্দেহভাজন লোকটিকে গ্রেফতার করে আর উদ্ধার করে বাক্সে ভরা নানা প্রজাতির সাপ এবং ভিন্ন ভিন্ন সাইজের ছোটদের কাপড়চোপড় আর একটি ডায়েরী। কিন্তু বিধি বাম, লোকটিকে জিজ্ঞাসা কালের এক পর্যায়ে কর্তব্যরত এক পুলিশের বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে সেটি দিয়ে আত্মহত্যা করে সে।

প্রায় সকল পথ যখন অবরুদ্ধ তখন হুট করেই খোঁজ মেলে নিখোঁজ জয় ব্রিচের। হাসপাতালে তাকে দেখতে জায় কেলার ডোভার আর তার স্ত্রী। কেলার খুব অশান্ত ভাবেই বার বার জিজ্ঞাস করতে থাকে কোথায় ছিল তারা। ছোট জয়ের শারীরিক অবস্থা অনেক খারাপ আর স্মৃতি গুলি এলোমেলো থাকাতে সে ঐভাবে কিছুই বলতে পারে না, তবুও একটা বাড়ির কথা বলে যেখান থেকে সে পালিয়ে এসেছে। তবে সেটা কোথায় তার বিশেষ কিছু বলতে পারে  না সে। কেলার তার কথা শুনেই বুঝে যায় বাড়িটির অবস্থান, আর দ্রুত হাসপাতাল ত্যাগ করে। তার হাসপাতাল ত্যাগ করার মুহূর্তেই সেখানে পৌঁছে ডিটেকটিভ লোকি। কিন্তু ডিটেকটিভের কোন কথা কানে না তুলেই কেলার একা হাসপাতাল ত্যাগ করে। ডিটেকটিভ তার পিছু নিয়েও হারিয়ে ফেলে কিন্তু মনে মনে  তার অবস্থান আন্দাজ করে এক পরিত্যক্ত বাড়িতে গিয়ে পৌঁছে। বাড়ি তল্লাসি চালিয়ে কিডন্যাপ সন্দেহে আটক করা সেই এলেক্স  এর দেখা পায়, যদিও তার অবস্থা চরম গুরুতর সেই মুহূর্তে।

পুলিশ চিফ ডিটেকটিভ লোকিকে অনুরোধ করে ছেলেটার আন্টিকে তার প্রাপ্তি সংবাদ পৌঁছে দেবার জন্যে। মানা করেও পরে ডিটেকটিভ এলেক্সের আন্টির বাসায় গিয়ে পৌঁছে রাতে। কিছু সময় ডাকাডাকির পড় কোন সাড়া-শব্দ না পেয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে যায় লোকি, আর সেখান থেকেই উদ্ধার করে হারিয়ে যাওয়া এনা ডোভারকে।


চরম একটা থ্রিলার ক্যাটাগরির মুভি এই Prisoners। প্রতি মিনিটেই মনে হবে একটি সম্ভাবনার কথা আবার পর মুহূর্তেই সেটা পাল্টে যাবে। সন্দেহের তীর একদিক থেকে ছুটে গিয়ে অবস্থান নিবে অন্যদিকে। আর পরিচালক Denis Villeneuve প্রতিটা মুহূর্তকে আরও বেশি রহস্যের চালে চেপে আটকে দিয়েছে। ক্যামেরার কাজ আর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছিল এক কথায় অসাধারণ। স্ক্রিনের দিকে তাকিয়েই রহস্যের সমুদ্রে ডুবিয়ে দিবে আপনাকে। যারা থ্রিলার মুভি পছন্দ করেন আর এখনো এটা দেখেন নি মুভিটা তারা দ্রুতই দেখে নিন। আপনার ২ঘন্টা ৩৩ মিনিট সময়টা একেবারেই বৃথা যাবে না :D












শনিবার, মার্চ ১৫, ২০১৪

এক শব্দে ফেসবুক প্রোফাইলের নামকরণ করার পদ্ধতি



ফেসবুকের সাধারণ নিয়ম অনুসারে দুই শব্দের নাম দিতে হয়, যা আমরা সবাই দিয়ে থাকি। কিন্তু আপনি খেয়াল করলেই দেখবেন, কিছু আইডিতে এক শব্দের নাম দিয়ে ব্যবহার করছে অনেকেই। এটি ফেসবুকের একটি বিশেষ সুবিধা যা নির্দিষ্ট একটি পদ্ধতি অবলম্বন করে কাজ করার পরই তা ব্যবহারের উপযোগী হয়। যদি আপনার একান্তই ইচ্ছে থাকে তবে চলুন দেখে নেই কিভাবে এই এক শব্দে ফেসবুকের নাম নির্ধারণ করা যায়। ধরুন আপনার নাম দেয়া আছে “শুভ্র নূর“, কিন্তু আপনি তা পরিবর্তন করে শুধুই “শুভ্র” রাখতে চাচ্ছেন। এক্ষেত্রে বলে রাখা ভালো যে ফেসবুকের নতুন নাম নির্ধারণের নিয়মানুসারে এইসকল এক শব্দের নাম তাদের ভেরিফিকেশন পদ্ধতিতে ধরা পড়ে। পরে নাম মিলানোর পদ্ধতির গরমিলের কারণে আইডি হারানোর সম্ভাবনা থাকে। তাই আপনি আগে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিন যে, ভেরিফিকেশন প্রসেসে পড়লে আপনি তা রিকোভার করতে পারবেন কি না। এরপরও যদি আপনার আইডির নাম পরিবর্তন করে এক শব্দের মধ্যে নিয়ে আসতে চান তাহলে পরবর্তী ধাপ গুলি দেখুন। আপনাকে এই পদ্ধতিতে কাজ করতে হলে Firefox ব্রাউজার ব্যবহার করতে হবে। অন্য ব্রাউজার দিয়েও করা যাবে, কিন্তু সেটি এর থেকে আরও একটু ঝামেলা যুক্ত বিধায় আমরা এখানে Firefox ব্রাউজারকেই গুরুত্ব দিচ্ছি।

  • ধাপ ১ঃ প্রথমে আপনি Facebook.com সাইটে গিয়ে আপনার Email / Phone / UserName এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।


  • ধাপ ২ঃ এরপর লগইন হয়ে যাবার পর আপনার Firefox ব্রাউজারের Menu থেকে Option মেনুতে ক্লিক করুন।


  • ধাপ ৩ঃ এরপর Options মেনু থেকে Advanced ট্যাবের Network সাবট্যাব থেকে Connection এর পাশে থাকা Settings… বাটনে ক্লিক করুন।


  • ধাপ ৪ঃ এরপর Connection Settings থেকে প্রথমে “Manuel Proxy Configuration” এবং “Use this porxy server for all protocols” এই দুইটি অপশন সিলেক্ট করুন। এরপর HTTP Proxy এর প্রথম বক্সে আপনার Proxy IP এবং দ্বিতীয় বক্সে Proxy Port নম্বর লিখুন।


এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে আমাদের এখানে কাজ করার জন্যে প্রয়োজন পড়বে ইন্দোনেশিয়ান Proxy IP এবং Port । তাই এই ধাপে আসার পূর্বেই আপনাকে ইন্দোনেশিয়ান প্রক্সি এবং পোর্ট সংগ্রহ করে নিতে হবে। আপনি Google এর সহায়তায় কিংবা spys.ru, gatherproxy.com, hidemyass.com, proxynova.com, xroxy.com থেকে ইন্দোনেশিয়ান প্রক্সি পোর্ট সংগ্রহ করতে পারেন।


প্রক্সি পোর্ট বসানোর পর “OK” বাটন চেপে কনফার্ম করুন।


  • ধাপ ৫ঃ এবারে আবার আপনার ফেসবুক প্রোফাইলে ফিরে চলুন। নোটিফিকেশন বারের একবারে শেষ মাথার মেনু হতে Settings সিলেক্ট করুন।



  • ধাপ ৬ঃ এরপর Language এর পাশে Edit বাটনে ক্লিক করুন। কিছুক্ষণ পরেই সেখানে একটি ড্রপ ডাউন বক্স আসবে। বক্স হতে Bahasa Indonesia সিলেক্ট করুন। এরপর “Save Changes” বাটনে ক্লিক করুন।


  • ধাপ ৭ঃ আপনার পেইজ রিলোড হবার পর সম্পূর্ণ ভাষা পরিবর্তন হয়ে যাবে। এবারে আবার “Nama” এর পাশে থাকা “Sunting” এ ক্লিক করুন।



  • ধাপ ৮ঃ কিছুক্ষণের মাঝেই স্ক্রিনে ৩টি বক্স দেখতে পাবেন, যা ধারাবাহিক ভাবে Fist Name, Middle Name, Last Name নির্দেশ করে। এবারে আপনি যে নামে আপনার আইডি নামকরণ করতে চান তা প্রথম বক্সে বা “Depan” এর বক্সে লিখুন। এরপর “Tengah” এবং “Belakang” বা দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বক্স হতে সকল লেখা মুছে দিন। এরপর “Tinjau Perubahan” লেখা নীল বাটনে ক্লিক করুন।






  • ধাপ ৯ঃ প্রদত্ত নাম কনফার্ম করার পূর্বে আপনাকে আপনার Password আবার ইনপুট দিতে হবে। “Kata sandi” এর বক্সে আপনার পাসওয়ার্ড টাইপ করে “Simpan Perubahan” এর নীল বাটনে ক্লিক করুন।


  • ধাপ ১০ঃ নতুন পেইজ রিলোড হবার পর আপনার প্রোফাইলের নাম আপনার নির্ধারণ করা এক শব্দের নামে পরিবর্তিত হবে। এরপর আবারও ৬ নং ধাপ অনুসরণ করে আপনার ভাষা English (US) কিংবা আপনার ব্যবহৃত ভাষায় পরিবর্তন করে নিন।



এবার আপনার প্রোফাইলে কিংবা ভিজিট করে দেখে নিন আপনার প্রদত্ত এক শব্দের নাম।

পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে এই সুবিধাটি বিশেষ একটি পদ্ধতি (ইন্দোনেশিয়া প্রক্সি সেটিংস্‌) ব্যবহার করে উপভোগ করা যাবে। কিন্তু আপনাকে বুঝতে হবে যে উক্ত সুবিধাটি শুধুই নির্দিষ্ট দেশের জন্যে দেয়া হয়েছিল। আমরা সেই সুবিধাটি ব্যবহার করেই এই “এক শব্দের নাম” সুবিধাটি নিচ্ছি। কিন্তু ফেসবুক পলিসি অনুসারে এটি আপনার সত্যিকারের নাম হলেও তা গ্রহনযোগ্য নয়। তাই এই সকল Single Name বা এক শব্দের নামের আইডি গুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফেসবুক ভেরিফিকেশন এর মধ্যে পড়ে যায়। আর সেখান থেকে নামের সঠিক মিল খুঁজে পাওয়া যায় না বলেই রিকোভার করা সম্ভব হয় না। তাই এই পদ্ধতি অনুসরণ করে আইডির নাম করলে তা নিজ দায়িত্বে করবেন।