প্রতিবেশী ব্রিচ পরিবারের নিমন্ত্রণে তার বাড়িতে গিয়ে হাজির হয় ডোভার পরিবার। নিজেদের সমবয়সী ছেলে মেয়েদের ছেড়ে দিয়ে হাত পা ছাড়িয়ে আড্ডায় বসে তারা। আড্ডার ফাকে এনা ডোভার প্রতিবেশীর মেয়ে জয় ব্রিচকে তার খেলনা দেখাতে তাদের বাড়ি নিয়ে যাবার বায়না ধরে। মানা করেও তাদের বড় ভাই-বোনকে নিয়ে অবশেষে বাড়ি যাবার অনুমতি পায় তারা। রাস্তায় নেমে বাড়ি যাবার পথে রাস্তার পাশে পার্ক করে রাখা অপরিচিত এক RV ভ্যান দেখে বাচ্চারা দৌড়ে সেটার কাছে যায় আর স্বভাব সুলভ দুষ্টামি জুড়ে দেয়। এনা এক পর্যায়ে ভ্যানের পেছনে থাকা সিঁড়ি ধরে উপরে উঠতে শুরু করে। কিন্তু পেছন থেকে তার বড় ভাই এসে তাকে নামিয়ে নিয়ে আবার ফিরে যায় ব্রিচদের বাড়িতে। আড্ডার ফাকে হঠাৎ খোঁজ করতে গিয়ে জানতে পারে বাচ্চারা ফিরে এসেছে কিন্তু ছোট এনা আর জয়কে খুঁজে না পেয়ে কেলার তার বাড়িতে গিয়ে খুঁজে আসে তাদের। সেখানে গিয়ে বুঝতে পারে তারা এখানে আসে নি, ফিরে গিয়ে ব্রিচদের বাসায় আবার খোঁজাখুঁজি শুরু করে তখন। এক পর্যায়ে রালফ ডোভার জানায় রাস্তার পাশে পার্ক করে রাখা সেই RV ভ্যানটার কথা। কিন্তু খুঁজতে গিয়ে সেটার আর দেখা পায়নি তারা।
পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের লোকি'র উপর দায়িত্ব পড়ে কেসটার। ভ্যানের তথ্য অনুযায়ী খুব দ্রুতই সেটার অবস্থান জানতে পেরে সেটা থেকে গ্রেফতার করে এলেক্স নামের এক তরুণকে। কিন্তু জিজ্ঞাসা বাদের এক পর্যায়ে বুঝতে পারে এলেক্স একজন বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। তার বয়স বেড়ে গেলেও তার বুদ্ধির বিকাল একজন ১০ বছরের বাচ্চার মত। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে লোকি ফাদার পেট্রিকের বাড়ি থেকে একটা অর্ধ-গলিত লাস উদ্ধার করে। ফাদারকে সে ব্যাপারে চার্জ করা হলে ফাদার জানায় লোকটা তার কাছে কনফেস করতে এসেছিলো, এবং কনফেস করার সময় সে জানায় এই পর্যন্ত সে মোট ১৬ টা বাচ্চাকে খুন করেছে এবং এর পরও আরও করবে। ফাদার লোকটাকে ট্রিক করে বন্দী করে এবং তার বাড়ির বেসমেন্টে হাত-পা, মুখ বেধে ফেলে রাখে। ওদিকে এলেক্সের কাছ থেকে কোন তথ্য আদায় করতে না পেরে তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয় পুলিশ ডিপার্টমেন্ট, আর তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায় এলেক্সের আন্টি। এটা জনতে পেরে কেলার ক্ষোভে ফেটে পড়ে এবং জনসম্মুখেই এলেক্সকে হামলা করে বসে। ডিটেকটিভ লোকি পুলিশের সহায়তায় সেই পরিস্থিতি সামাল দেয় তখন।
মেয়ে হারিয়ে ক্ষোভে অন্ধ পিতা খুব সন্তর্পণে কিডন্যাপ করে এলেক্সকে। পরে সে আর তার প্রতিবেশী ফ্রাংলিন ব্রিচকে নিয়ে ছেলেটার কাছ থেকে মেয়েদের তথ্য আদায় করতে তাকে নির্যাতন শুরু করে। এদিকে পাড়া প্রতিবেশী সবাই হারানো বাচ্চাদের মঙ্গল কামনা আর পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানাতে একত্রিত হয় এক সন্ধ্যায়। সেখানে ডিটেকটিভ লোকির নজর এক অচেনা লোকের উপর গিয়ে পড়ে। লোকটি সেটা বুঝতে পেরে দ্রুত ঘটনা স্থল ত্যাগ চাইলেও লোকি তার পিছু নেয় এবং অবশেষে ডিটেকটিভকে ধোঁকা দিয়ে পালাতে সক্ষম হয়। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে ডিটেকটিভ লোকি একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে কর্মরত এক মহিলার থেকে জানতে পারে একটি লোক সম্বন্ধে, যে কিনা প্রায় কিছুদিন পরপর ছোট ছেলে-মেয়েদের কাপড় কিনতে আসে কিন্তু প্রতি বারই কাপড়ের সাইজের ভিন্নতা থাকে। মহিলার তথ্য অনুযায়ী সে একটি ঠিকানায় গিয়ে পৌঁছে আর সেখান থেকে ঐ রাতের সন্দেহভাজন লোকটিকে গ্রেফতার করে আর উদ্ধার করে বাক্সে ভরা নানা প্রজাতির সাপ এবং ভিন্ন ভিন্ন সাইজের ছোটদের কাপড়চোপড় আর একটি ডায়েরী। কিন্তু বিধি বাম, লোকটিকে জিজ্ঞাসা কালের এক পর্যায়ে কর্তব্যরত এক পুলিশের বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে সেটি দিয়ে আত্মহত্যা করে সে।
প্রায় সকল পথ যখন অবরুদ্ধ তখন হুট করেই খোঁজ মেলে নিখোঁজ জয় ব্রিচের। হাসপাতালে তাকে দেখতে জায় কেলার ডোভার আর তার স্ত্রী। কেলার খুব অশান্ত ভাবেই বার বার জিজ্ঞাস করতে থাকে কোথায় ছিল তারা। ছোট জয়ের শারীরিক অবস্থা অনেক খারাপ আর স্মৃতি গুলি এলোমেলো থাকাতে সে ঐভাবে কিছুই বলতে পারে না, তবুও একটা বাড়ির কথা বলে যেখান থেকে সে পালিয়ে এসেছে। তবে সেটা কোথায় তার বিশেষ কিছু বলতে পারে না সে। কেলার তার কথা শুনেই বুঝে যায় বাড়িটির অবস্থান, আর দ্রুত হাসপাতাল ত্যাগ করে। তার হাসপাতাল ত্যাগ করার মুহূর্তেই সেখানে পৌঁছে ডিটেকটিভ লোকি। কিন্তু ডিটেকটিভের কোন কথা কানে না তুলেই কেলার একা হাসপাতাল ত্যাগ করে। ডিটেকটিভ তার পিছু নিয়েও হারিয়ে ফেলে কিন্তু মনে মনে তার অবস্থান আন্দাজ করে এক পরিত্যক্ত বাড়িতে গিয়ে পৌঁছে। বাড়ি তল্লাসি চালিয়ে কিডন্যাপ সন্দেহে আটক করা সেই এলেক্স এর দেখা পায়, যদিও তার অবস্থা চরম গুরুতর সেই মুহূর্তে।
পুলিশ চিফ ডিটেকটিভ লোকিকে অনুরোধ করে ছেলেটার আন্টিকে তার প্রাপ্তি সংবাদ পৌঁছে দেবার জন্যে। মানা করেও পরে ডিটেকটিভ এলেক্সের আন্টির বাসায় গিয়ে পৌঁছে রাতে। কিছু সময় ডাকাডাকির পড় কোন সাড়া-শব্দ না পেয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকে যায় লোকি, আর সেখান থেকেই উদ্ধার করে হারিয়ে যাওয়া এনা ডোভারকে।
চরম একটা থ্রিলার ক্যাটাগরির মুভি এই Prisoners। প্রতি মিনিটেই মনে হবে একটি সম্ভাবনার কথা আবার পর মুহূর্তেই সেটা পাল্টে যাবে। সন্দেহের তীর একদিক থেকে ছুটে গিয়ে অবস্থান নিবে অন্যদিকে। আর পরিচালক Denis Villeneuve প্রতিটা মুহূর্তকে আরও বেশি রহস্যের চালে চেপে আটকে দিয়েছে। ক্যামেরার কাজ আর ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক ছিল এক কথায় অসাধারণ। স্ক্রিনের দিকে তাকিয়েই রহস্যের সমুদ্রে ডুবিয়ে দিবে আপনাকে। যারা থ্রিলার মুভি পছন্দ করেন আর এখনো এটা দেখেন নি মুভিটা তারা দ্রুতই দেখে নিন। আপনার ২ঘন্টা ৩৩ মিনিট সময়টা একেবারেই বৃথা যাবে না :D