রবিবার, ফেব্রুয়ারী ২৩, ২০১৪

সাধারণ একটা গল্প, আর কিছু বিষয় অনুধাবন......

একটা গল্প বলি, আহামরি কোন গল্প না। ছোটবেলায় ঘুমতে যাবার আগে কাকা'র কাছে শোনা গল্প। সাধারণ গল্প, আশা করি অনেকেই জানে এটা।

এক লোক কাজের সন্ধানে আরেক জন লোকের নিকটে গেল। কাজ চাইতে আসা লোকটিকে নিয়োগ দিলো অপর লোকটি তবে শর্ত এটা যে তার সমুদয় কাজের পারিশ্রমিক নিয়োগকর্তা মারা যাবার পর পাবে। নিয়োগ কর্তা বলল যে "তুই সারাজীবন বসে খেতে পারবি ঐরকম পারিশ্রমিক পাবি"
কাজ চাইতে আসা লোকটি মনের আনন্দে কাজ করতে লাগলো। প্রচুর সেবা-যত্ন করতে লাগলো নিয়োগকর্তাকে। দেখতে দেখতে একটা সময় নিয়োগকর্তা মৃত্যুশয্যাতে পৌঁছল। ঐ সময় নিয়োগকর্তা সেই লোকটাকে একটা বক্স দেখিয়ে বললেন এটা যেন সে তার মৃত্যুর পর খোলে। এটাতেই তার এত বছরের পারিশ্রমিক রয়েছে, যা সে আজীবন বসে খেতে পারবে।

নিয়োগকর্তা অল্প কিছুদিনেই মারা গেল। আর লোকটা তার পারিশ্রমিকের বাক্স সামনে নিয়ে বসে আছে।


এখন বাকি অংশটা পড়ার আগে একটা প্রশ্ন করছি  (যেমনটা গল্পটা শোনার সময় অতি আগ্রহে আমি আমার কাকাকে জিজ্ঞাস করেছিলাম, তেমন)। এই বাক্সের ভেতরে কি থাকতে পারে? এমন কত পরিমাণের টাকা থাকতে পারে যা তার আজীবন বসে খাবার মত যোগাড় হবে? বা এমন কি জিনিষ হতে পারে যা এই নিশ্চয়তা দিতে পারে। (স্বাভাবিক ভাবেই আমার তখনকার প্রশ্নটা এত বড় ছিল  না, তখন প্রশ্নের পেছনে বিস্ময় কাজ করেছে আর প্রশ্নের বিপরীতে আমার উত্তরের চাওয়াটা  ছিল সাধারণ কিছু। হিন্ট হিসেবে বলবো- বাক্স ভর্তি টাকা, অথবা অনেক মূল্যবান কিছু যেমন দামী হীরা কিংবা এমন কিছু।)

উত্তরটা বলার আগে আরও কিছু কথা বলি। এই গল্পটার সারমর্ম বা মূল কথা গুলি ঐ বয়সে আমি বুঝি নি, বুঝেতে পেরেছি অনেক পরে। কিংবা হয়তো এখনো পুরোটা বুঝে উঠতে পারি নি। তবে বুঝে উঠতে না পারলেও এখন কিছু করার নেই। কারণ, গল্প বলা লোকটা হারিয়ে গেছে। জিজ্ঞাস করে জেনে নিব সে উপায় নেই......

লোকটা কাঁপা কাঁপা হাতে বক্সের র‍্যাপিং খুলল। বক্সের মুখ খুলে ভেতরে উকি দিলো। ভেতরে দুইটা মাত্র জিনিষ দেখতে পেলো। প্রথমটা একটা কাগজ আর দ্বিতীয়টা একটা পিড়ি (মোড়া)। লোকটা কাগজ হাতে নিলো, তাতে কিছু লিখা আছে-

আমি বলেছিলাম এমন একটা জিনিষ দিব, যা তুমি আজীবন বসে খেতে পারবে। তুমি যে পিড়ি (মোড়া) টা দেখছ তার উপর বসে তুমি আজীবন খেতে পারবে। এটাই তোমার পারিশ্রমিক।


এখন নিয়োগকর্তাকে আমি ঠগ আর কাজ চাইতে আশা লোকটাকে আমি লোভী বা বোকা বলবো না। নিয়োগকর্তা তাকে দেয়া কথা ঠিকই রেখেছে। শুধু কাজ করতে আসা লোকটা যা আশা করেছে তা সে দিতে পারে নি, বা দেয়নি। কিন্তু সে তার কথা রেখেছে। আর কাজ চাইতে আশা লোকটাকে এই কারণে লোভী বা বোকা বলবো না কারণ আমরা প্রতিনিয়ত বর্তমান অবস্থা থেকে ভালো, আরও ভালো, অনেক ভালো থাকার আশাতেই কাজ করি, আর তার কারণে অনেক মানুষকেই বিশ্বাস করি। অনেক সময় সব হারাতে হতে পারে জেনেও বিশ্বাস করতে হয়।

এই গল্পটার অনেক রকম মূলকথা আমি ভিন্ন ভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন ভাবে বুঝতে পেরেছি। তার মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে-

 ♦ কাউকে অন্ধের মত বিশ্বাস করে তার পিছু ছুটা উচিৎ না, নিজের চিন্তাশক্তি আর বিবেক কাজে লাগাতে হবে।

 ♦ চাইতে হলে তা পরিষ্কার ভাবে চাইতে হবে, আংশিক প্রকাশ করে বাকিটুকু মনের ভেতরে দাবিয়ে রেখে নয়।

 ♦ কোন কাজ সেটা কার জন্যে করছ, কি জন্যে করছ আর কেন করছ তার পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে।

 ♦ নিজের অবস্থান, চাহিদা কে নিজের গণ্ডীর ভেতর থেকে দেখতে হবে। "আরও বেশি, আরও বড়, অনেক অনেক বেশি" এটা যথা সম্ভব পরিত্যাগ করতে হবে। তাই বলে বড় আশা করতে মানা করছি না। বলছি এমন আশা না করতে, যা গণ্ডিতে দাড়িয়ে অসম্ভব আর গণ্ডির বাইরে গিয়ে করার পর তা গণ্ডিতে ফিরে আসতে বাধা তৈরি করে। নিজের অবস্থানে চাহিদা গুলিকে যথাসম্ভব পরিপূর্ণ ভাবার মত মানুষিক শক্তি থাকতে হবে।

 ♦ কোন কাজে কথা দেবার আগে তা ভালো করে বুঝে নিতে হবে, কারণ কথা দেবার পর একটা প্রত্যাশা কাজ করবে সেই কথার উপর। সেটা সাধারণও হতে পারে আবার অনেক জটিল কিছুও হতে পারে। তাই এই ব্যাপারে বুঝে শুনে পরে সিদ্ধান্তে আসতে হবে।

 ♦ কাজ জানলে আর করতে পারলে সেটা তোমাকে আজীবন বসিয়েই খাওয়াতে পারবে। কারো উপর নির্ভর করতে হবে না।



যখন গল্পটা শুনেছি তখন কিন্তু মজা পেয়েছি। মজা পেয়েছি কারণ ছোট বাচ্চারা অল্পতেই মজা খুঁজে নিতে পারে। আজীবন কাজ করে কেউ কাউকে পিড়ি(মোড়া)  দিতে পারে সেটা জানতে পেরে মজা পেয়েছি। কিন্তু আমার মত এখনও অনেকে গল্পটা শুনে এই বড় বেলায় মজা নেয় কিংবা তার চেয়েও খারাপ ভাবে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে। গল্পের এদিকে দাড়িয়ে গল্পটা শুনতে যতটা মজাদার মনে হয় গল্পের ভেতরে দাড়িয়ে গল্পটাকে ততটাই কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতা হিসেবে পাওয়া হয়।








0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন