শুভ আজ রাতে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে যাবে বন্ধুদের সাথে। বিকেলেই একটা তোড়া ফুল নিয়ে এসেছে সে, উপরে লেখা তাতে "আমরা তোমাদের ভুলবো না"। লাল রং দিয়ে লেখা রয়েছে কথাটা। সন্ধ্যার একটু পর রাহাত ফোন আসলো-
- ড্যুড! মিটআপ, হয়্যেন? হয়্যার??
- টাইমিং প্লানিং তো সব ফাহিম করছে ড্যুড, আস্ক হিম..
- ওকে, ওকে দেন বেরুচ্ছি কখন
- মে বি ৯টার পর, ফার্স্ট ফাহিমের বাসায় মিটআপ দেন ওর গাড়িতে করেই..
- থ্যাংস ড্যুড, সি ইউ সুন
কথা শেষ করে শুভ নীচে নামলো। ডাইনিং রুমে মা'য়ের সাথে দেখা-
- মম ফাহিম আর রাহাতের সাথে আজ শহীদ মিনারে যাবো।
- রাতে বাড়ি ফিরবে না?
- নো মম, ফুল দিতে দিতে তো অনেক সময় লেগে যাবে। তারপর একটু ঘুরবো। ফিরতে ফিরতে মর্নিং। ড্যাডকে কিছু বলো না প্লিজ।
- আচ্ছা, দ্রুত করে ফিরে আসিস তাহলে তোর বাবা উঠার আগেই।
- ওকে মম, থ্যাংকস।
- বেরুবি কখন? রাতে ডিনার করে না তার আগেই।
- ফাহিম তো শার্প এইট'ও ক্লক তার বাড়িতে থাকতে বলল। ডিনার নাকি ওর ওখানেই হবে। আমি এখুনি বেরুবো।
- আচ্ছা, সাবধানে থাকিস।
রুমে এসে গত পরশু কেনা ফতুয়া টা বের করলো শুভ। ফতুয়ার উপরে রক্ত ঝরা লাল রঙ। মাঝে কালো দেখতে গুলির চিহ্নের মত আর পাশে অ আ ক খ বর্ণমালা খচিত আছে। চমৎকার ডিজাইন, শুধু আজকের কথা চিন্তা করেই সে এটা কিনেছিল। আটটা বাজতে এখনো অনেক দেরি, ল্যাপটপটা কোলের উপর নিয়ে টুইটার চেক করলো। নতুন কোন নিউজ নেই তার জন্যে। তাই ফেসবুকে চলে আসলো টুইটার বাদ দিয়ে। সবাই যার যার প্রোফাইলে নিজেদের নামের প্রথম অক্ষর লাগিয়েছে। সেও লাগিয়েছে সবার মত করে। নাহ, ঐরকম এক্সাইটমেন্ট নিয়ে দেখার মত কিছু নেই এখানেও। বালিশের উপর মাথা এলিয়ে দিয়ে কিছু একটা চিন্তা করছিল।
তারপর ঘড়ির দিকে তাকাতেই চোখ কপালে তার। এত দ্রুত আটটা দশ কিভাবে হল, মাত্রই তো সে দেখল সন্ধ্যা ছয়টা চল্লিশের কাছাকাছি। দৌড়ে প্যান্ট পাল্টে, ফতুয়াটা গলিয়ে মোবাইল, মানিব্যাগ চাদর আর তোড়াটা নিয়ে নিচে নামলো সে। আশ্চর্য! এই সময় তো বাড়ি এত নিঝুম থাকে না আজকের মত। মা'কি তবে এখুনি শুয়ে পড়লো? যাক তাও ভালো কিছু বলে আর সময় নষ্ট করতে হল না, দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেল সে। ফাহিমের বাড়ি বেশি দূর না, হেটেই যাওয়া যায়। তবে আজ দেরি করে ফেলেছে, তাই রিক্সা নিতে হবে। সামনেই রিক্সা পাওয়ার কথা তবে আজ কেমন যেন রাস্তাটা ফাকা এই সময়েই, মোড়ের চা'য়ের দোকানটাও বন্ধ। ছুটি পেয়ে মনে হয় আজ সবাই আগেই গন্তব্যে পৌঁছে গেছে, রিক্সাটা পেলেই হয় এখন। নাহ! একটা রিক্সা আছে দেখা যায়, ভাড়া বেশি চাইবে বুঝতে পারছে শুভ কিন্তু কি করার, যত দ্রুত সম্ভব তাকে ফাহিমের বাসায় যেতেই হবে। রিক্সা ওয়ালা হুড তুলে তার ভেতর বসেছে, বেশ আয়েশি ভঙ্গীতে পা দু'টো চালকের সিটে তুলে আরাম করছে।
শুভ রিক্সার সামনে দাড়িয়ে, কিন্তু কিছু একটা সমস্যা হয়েছে তার। ঠাণ্ডায় গলা দিয়ে আওয়াজ বেরুচ্ছে না তার। আজ ঠাণ্ডাও লাগছে বেজায় রকম। গায়ে চাদর জড়ানো, কিন্তু সেটা ঠাণ্ডা থামাতেই পারছেনা যেন। গলা চিড়ে যে একটা আওয়াজ করবে তার জো নেই। কিন্তু এ কি! একেবারেই যে আওয়াজ বের করতে পারছে না সে। কাশি দিয়ে নিজের গলায় হাত রেখে নিজেকেই বিশ্বাস করতে পারছে না সে। চিৎকার করে চলেছে মনের ভেতর কিন্তু আওয়াজ করে এতটুকু শক্তি যেন তার নেই।
হুডের ভেতর থেকে রিকশাওয়ালা বলে উঠলো-
কি মামা, কথা আটাকায় গেছে? হাতের ফুল আর আর ফতুয়া পইড়া আর কত দিন এইভাবে ভাষার লাঞ্ছনা করবেন মামা? তারচেয়ে এই ভালা, কথা কওনের শক্তি আপনেগোর বন্ধ হইয়্যা যাক এক্কেরে। ঐরকম আধা বাঙ্গালি হওনের চেয়ে অবাঙ্গালি হইয়্যা যান আর নাইলে এইরকম কইরা বোবা হইয়্যা যান। তাতে অন্তত আমাগোর "বাংলা" শান্তি পাইব।
তারপর হুট করে পা নামিয়ে রিক্সার হুডের ভেতর থেকে লোকটা তার দু'হাত বের করে শুভ'র গলায় চেপে ধরল। শুভ চিৎকার করে দু'হাত ধরে রিক্সা ওয়ালার হাত তার গলা থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু, কোন লাভ হচ্ছে বলে মনে হল না। উল্টো লোকটার হাতের চাপ বাড়তে থাকলো। দম যেন ফুরিয়ে আসছে শুভ'র.......
একবারে ঘেমে নেয়ে ঘুম ভাঙ্গল শুভর। পরনের টি'শার্টটা একেবারেই ভিজে জবজব অবস্থা। ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই দেখল সময় মাত্র সাড়ে সাতটা। গলায় হাত বুলিয়ে কাশি দিলো শুভ। কি ভয়ানক স্বপ্ন দেখল সে এটা। ধুর এমন কিছু হয় নাকি? আজকের দৌড়াদৌড়িটা মনে হয় একটু বেশি হয়ে গেছে। তার উপর বাংলা ভাষা নিয়ে স্যরের ল্যাকচারটাই এমন করেছে। ফাহিমকে বললে নির্ঘাত সে এটা সবাইকে বলে বলে জ্বালিয়ে মারবে। ধুর! এত ভাবার সময় নেই। এবার উঠতে হবে, দ্রুত রেডি হয়ে ফাহিমের বাসা তারপর শহীদ মিনার আর শেষে বন্ধুদের সাথে ঘুরাঘুরি....
- ড্যুড! মিটআপ, হয়্যেন? হয়্যার??
- টাইমিং প্লানিং তো সব ফাহিম করছে ড্যুড, আস্ক হিম..
- ওকে, ওকে দেন বেরুচ্ছি কখন
- মে বি ৯টার পর, ফার্স্ট ফাহিমের বাসায় মিটআপ দেন ওর গাড়িতে করেই..
- থ্যাংস ড্যুড, সি ইউ সুন
কথা শেষ করে শুভ নীচে নামলো। ডাইনিং রুমে মা'য়ের সাথে দেখা-
- মম ফাহিম আর রাহাতের সাথে আজ শহীদ মিনারে যাবো।
- রাতে বাড়ি ফিরবে না?
- নো মম, ফুল দিতে দিতে তো অনেক সময় লেগে যাবে। তারপর একটু ঘুরবো। ফিরতে ফিরতে মর্নিং। ড্যাডকে কিছু বলো না প্লিজ।
- আচ্ছা, দ্রুত করে ফিরে আসিস তাহলে তোর বাবা উঠার আগেই।
- ওকে মম, থ্যাংকস।
- বেরুবি কখন? রাতে ডিনার করে না তার আগেই।
- ফাহিম তো শার্প এইট'ও ক্লক তার বাড়িতে থাকতে বলল। ডিনার নাকি ওর ওখানেই হবে। আমি এখুনি বেরুবো।
- আচ্ছা, সাবধানে থাকিস।
রুমে এসে গত পরশু কেনা ফতুয়া টা বের করলো শুভ। ফতুয়ার উপরে রক্ত ঝরা লাল রঙ। মাঝে কালো দেখতে গুলির চিহ্নের মত আর পাশে অ আ ক খ বর্ণমালা খচিত আছে। চমৎকার ডিজাইন, শুধু আজকের কথা চিন্তা করেই সে এটা কিনেছিল। আটটা বাজতে এখনো অনেক দেরি, ল্যাপটপটা কোলের উপর নিয়ে টুইটার চেক করলো। নতুন কোন নিউজ নেই তার জন্যে। তাই ফেসবুকে চলে আসলো টুইটার বাদ দিয়ে। সবাই যার যার প্রোফাইলে নিজেদের নামের প্রথম অক্ষর লাগিয়েছে। সেও লাগিয়েছে সবার মত করে। নাহ, ঐরকম এক্সাইটমেন্ট নিয়ে দেখার মত কিছু নেই এখানেও। বালিশের উপর মাথা এলিয়ে দিয়ে কিছু একটা চিন্তা করছিল।
তারপর ঘড়ির দিকে তাকাতেই চোখ কপালে তার। এত দ্রুত আটটা দশ কিভাবে হল, মাত্রই তো সে দেখল সন্ধ্যা ছয়টা চল্লিশের কাছাকাছি। দৌড়ে প্যান্ট পাল্টে, ফতুয়াটা গলিয়ে মোবাইল, মানিব্যাগ চাদর আর তোড়াটা নিয়ে নিচে নামলো সে। আশ্চর্য! এই সময় তো বাড়ি এত নিঝুম থাকে না আজকের মত। মা'কি তবে এখুনি শুয়ে পড়লো? যাক তাও ভালো কিছু বলে আর সময় নষ্ট করতে হল না, দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেল সে। ফাহিমের বাড়ি বেশি দূর না, হেটেই যাওয়া যায়। তবে আজ দেরি করে ফেলেছে, তাই রিক্সা নিতে হবে। সামনেই রিক্সা পাওয়ার কথা তবে আজ কেমন যেন রাস্তাটা ফাকা এই সময়েই, মোড়ের চা'য়ের দোকানটাও বন্ধ। ছুটি পেয়ে মনে হয় আজ সবাই আগেই গন্তব্যে পৌঁছে গেছে, রিক্সাটা পেলেই হয় এখন। নাহ! একটা রিক্সা আছে দেখা যায়, ভাড়া বেশি চাইবে বুঝতে পারছে শুভ কিন্তু কি করার, যত দ্রুত সম্ভব তাকে ফাহিমের বাসায় যেতেই হবে। রিক্সা ওয়ালা হুড তুলে তার ভেতর বসেছে, বেশ আয়েশি ভঙ্গীতে পা দু'টো চালকের সিটে তুলে আরাম করছে।
শুভ রিক্সার সামনে দাড়িয়ে, কিন্তু কিছু একটা সমস্যা হয়েছে তার। ঠাণ্ডায় গলা দিয়ে আওয়াজ বেরুচ্ছে না তার। আজ ঠাণ্ডাও লাগছে বেজায় রকম। গায়ে চাদর জড়ানো, কিন্তু সেটা ঠাণ্ডা থামাতেই পারছেনা যেন। গলা চিড়ে যে একটা আওয়াজ করবে তার জো নেই। কিন্তু এ কি! একেবারেই যে আওয়াজ বের করতে পারছে না সে। কাশি দিয়ে নিজের গলায় হাত রেখে নিজেকেই বিশ্বাস করতে পারছে না সে। চিৎকার করে চলেছে মনের ভেতর কিন্তু আওয়াজ করে এতটুকু শক্তি যেন তার নেই।
হুডের ভেতর থেকে রিকশাওয়ালা বলে উঠলো-
কি মামা, কথা আটাকায় গেছে? হাতের ফুল আর আর ফতুয়া পইড়া আর কত দিন এইভাবে ভাষার লাঞ্ছনা করবেন মামা? তারচেয়ে এই ভালা, কথা কওনের শক্তি আপনেগোর বন্ধ হইয়্যা যাক এক্কেরে। ঐরকম আধা বাঙ্গালি হওনের চেয়ে অবাঙ্গালি হইয়্যা যান আর নাইলে এইরকম কইরা বোবা হইয়্যা যান। তাতে অন্তত আমাগোর "বাংলা" শান্তি পাইব।
তারপর হুট করে পা নামিয়ে রিক্সার হুডের ভেতর থেকে লোকটা তার দু'হাত বের করে শুভ'র গলায় চেপে ধরল। শুভ চিৎকার করে দু'হাত ধরে রিক্সা ওয়ালার হাত তার গলা থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু, কোন লাভ হচ্ছে বলে মনে হল না। উল্টো লোকটার হাতের চাপ বাড়তে থাকলো। দম যেন ফুরিয়ে আসছে শুভ'র.......
একবারে ঘেমে নেয়ে ঘুম ভাঙ্গল শুভর। পরনের টি'শার্টটা একেবারেই ভিজে জবজব অবস্থা। ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই দেখল সময় মাত্র সাড়ে সাতটা। গলায় হাত বুলিয়ে কাশি দিলো শুভ। কি ভয়ানক স্বপ্ন দেখল সে এটা। ধুর এমন কিছু হয় নাকি? আজকের দৌড়াদৌড়িটা মনে হয় একটু বেশি হয়ে গেছে। তার উপর বাংলা ভাষা নিয়ে স্যরের ল্যাকচারটাই এমন করেছে। ফাহিমকে বললে নির্ঘাত সে এটা সবাইকে বলে বলে জ্বালিয়ে মারবে। ধুর! এত ভাবার সময় নেই। এবার উঠতে হবে, দ্রুত রেডি হয়ে ফাহিমের বাসা তারপর শহীদ মিনার আর শেষে বন্ধুদের সাথে ঘুরাঘুরি....
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন