রবিবার, ফেব্রুয়ারী ২৩, ২০১৪

সাধারণ একটা গল্প, আর কিছু বিষয় অনুধাবন......

একটা গল্প বলি, আহামরি কোন গল্প না। ছোটবেলায় ঘুমতে যাবার আগে কাকা'র কাছে শোনা গল্প। সাধারণ গল্প, আশা করি অনেকেই জানে এটা।

এক লোক কাজের সন্ধানে আরেক জন লোকের নিকটে গেল। কাজ চাইতে আসা লোকটিকে নিয়োগ দিলো অপর লোকটি তবে শর্ত এটা যে তার সমুদয় কাজের পারিশ্রমিক নিয়োগকর্তা মারা যাবার পর পাবে। নিয়োগ কর্তা বলল যে "তুই সারাজীবন বসে খেতে পারবি ঐরকম পারিশ্রমিক পাবি"
কাজ চাইতে আসা লোকটি মনের আনন্দে কাজ করতে লাগলো। প্রচুর সেবা-যত্ন করতে লাগলো নিয়োগকর্তাকে। দেখতে দেখতে একটা সময় নিয়োগকর্তা মৃত্যুশয্যাতে পৌঁছল। ঐ সময় নিয়োগকর্তা সেই লোকটাকে একটা বক্স দেখিয়ে বললেন এটা যেন সে তার মৃত্যুর পর খোলে। এটাতেই তার এত বছরের পারিশ্রমিক রয়েছে, যা সে আজীবন বসে খেতে পারবে।

নিয়োগকর্তা অল্প কিছুদিনেই মারা গেল। আর লোকটা তার পারিশ্রমিকের বাক্স সামনে নিয়ে বসে আছে।


এখন বাকি অংশটা পড়ার আগে একটা প্রশ্ন করছি  (যেমনটা গল্পটা শোনার সময় অতি আগ্রহে আমি আমার কাকাকে জিজ্ঞাস করেছিলাম, তেমন)। এই বাক্সের ভেতরে কি থাকতে পারে? এমন কত পরিমাণের টাকা থাকতে পারে যা তার আজীবন বসে খাবার মত যোগাড় হবে? বা এমন কি জিনিষ হতে পারে যা এই নিশ্চয়তা দিতে পারে। (স্বাভাবিক ভাবেই আমার তখনকার প্রশ্নটা এত বড় ছিল  না, তখন প্রশ্নের পেছনে বিস্ময় কাজ করেছে আর প্রশ্নের বিপরীতে আমার উত্তরের চাওয়াটা  ছিল সাধারণ কিছু। হিন্ট হিসেবে বলবো- বাক্স ভর্তি টাকা, অথবা অনেক মূল্যবান কিছু যেমন দামী হীরা কিংবা এমন কিছু।)

উত্তরটা বলার আগে আরও কিছু কথা বলি। এই গল্পটার সারমর্ম বা মূল কথা গুলি ঐ বয়সে আমি বুঝি নি, বুঝেতে পেরেছি অনেক পরে। কিংবা হয়তো এখনো পুরোটা বুঝে উঠতে পারি নি। তবে বুঝে উঠতে না পারলেও এখন কিছু করার নেই। কারণ, গল্প বলা লোকটা হারিয়ে গেছে। জিজ্ঞাস করে জেনে নিব সে উপায় নেই......

লোকটা কাঁপা কাঁপা হাতে বক্সের র‍্যাপিং খুলল। বক্সের মুখ খুলে ভেতরে উকি দিলো। ভেতরে দুইটা মাত্র জিনিষ দেখতে পেলো। প্রথমটা একটা কাগজ আর দ্বিতীয়টা একটা পিড়ি (মোড়া)। লোকটা কাগজ হাতে নিলো, তাতে কিছু লিখা আছে-

আমি বলেছিলাম এমন একটা জিনিষ দিব, যা তুমি আজীবন বসে খেতে পারবে। তুমি যে পিড়ি (মোড়া) টা দেখছ তার উপর বসে তুমি আজীবন খেতে পারবে। এটাই তোমার পারিশ্রমিক।


এখন নিয়োগকর্তাকে আমি ঠগ আর কাজ চাইতে আশা লোকটাকে আমি লোভী বা বোকা বলবো না। নিয়োগকর্তা তাকে দেয়া কথা ঠিকই রেখেছে। শুধু কাজ করতে আসা লোকটা যা আশা করেছে তা সে দিতে পারে নি, বা দেয়নি। কিন্তু সে তার কথা রেখেছে। আর কাজ চাইতে আশা লোকটাকে এই কারণে লোভী বা বোকা বলবো না কারণ আমরা প্রতিনিয়ত বর্তমান অবস্থা থেকে ভালো, আরও ভালো, অনেক ভালো থাকার আশাতেই কাজ করি, আর তার কারণে অনেক মানুষকেই বিশ্বাস করি। অনেক সময় সব হারাতে হতে পারে জেনেও বিশ্বাস করতে হয়।

এই গল্পটার অনেক রকম মূলকথা আমি ভিন্ন ভিন্ন সময় ভিন্ন ভিন্ন ভাবে বুঝতে পেরেছি। তার মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে-

 ♦ কাউকে অন্ধের মত বিশ্বাস করে তার পিছু ছুটা উচিৎ না, নিজের চিন্তাশক্তি আর বিবেক কাজে লাগাতে হবে।

 ♦ চাইতে হলে তা পরিষ্কার ভাবে চাইতে হবে, আংশিক প্রকাশ করে বাকিটুকু মনের ভেতরে দাবিয়ে রেখে নয়।

 ♦ কোন কাজ সেটা কার জন্যে করছ, কি জন্যে করছ আর কেন করছ তার পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে।

 ♦ নিজের অবস্থান, চাহিদা কে নিজের গণ্ডীর ভেতর থেকে দেখতে হবে। "আরও বেশি, আরও বড়, অনেক অনেক বেশি" এটা যথা সম্ভব পরিত্যাগ করতে হবে। তাই বলে বড় আশা করতে মানা করছি না। বলছি এমন আশা না করতে, যা গণ্ডিতে দাড়িয়ে অসম্ভব আর গণ্ডির বাইরে গিয়ে করার পর তা গণ্ডিতে ফিরে আসতে বাধা তৈরি করে। নিজের অবস্থানে চাহিদা গুলিকে যথাসম্ভব পরিপূর্ণ ভাবার মত মানুষিক শক্তি থাকতে হবে।

 ♦ কোন কাজে কথা দেবার আগে তা ভালো করে বুঝে নিতে হবে, কারণ কথা দেবার পর একটা প্রত্যাশা কাজ করবে সেই কথার উপর। সেটা সাধারণও হতে পারে আবার অনেক জটিল কিছুও হতে পারে। তাই এই ব্যাপারে বুঝে শুনে পরে সিদ্ধান্তে আসতে হবে।

 ♦ কাজ জানলে আর করতে পারলে সেটা তোমাকে আজীবন বসিয়েই খাওয়াতে পারবে। কারো উপর নির্ভর করতে হবে না।



যখন গল্পটা শুনেছি তখন কিন্তু মজা পেয়েছি। মজা পেয়েছি কারণ ছোট বাচ্চারা অল্পতেই মজা খুঁজে নিতে পারে। আজীবন কাজ করে কেউ কাউকে পিড়ি(মোড়া)  দিতে পারে সেটা জানতে পেরে মজা পেয়েছি। কিন্তু আমার মত এখনও অনেকে গল্পটা শুনে এই বড় বেলায় মজা নেয় কিংবা তার চেয়েও খারাপ ভাবে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে। গল্পের এদিকে দাড়িয়ে গল্পটা শুনতে যতটা মজাদার মনে হয় গল্পের ভেতরে দাড়িয়ে গল্পটাকে ততটাই কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতা হিসেবে পাওয়া হয়।








শুক্রবার, ফেব্রুয়ারী ২১, ২০১৪

হঠাৎ স্বপ্নে ছোট্ট ধাক্কা.....

শুভ আজ রাতে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে যাবে বন্ধুদের সাথে। বিকেলেই একটা তোড়া ফুল নিয়ে এসেছে সে, উপরে লেখা তাতে "আমরা তোমাদের ভুলবো না"। লাল রং দিয়ে লেখা রয়েছে কথাটা। সন্ধ্যার একটু পর রাহাত ফোন আসলো-
- ড্যুড! মিটআপ, হয়্যেন? হয়্যার??
- টাইমিং প্লানিং তো সব ফাহিম করছে ড্যুড, আস্ক হিম..
- ওকে, ওকে দেন বেরুচ্ছি কখন
- মে বি ৯টার পর, ফার্স্ট ফাহিমের বাসায় মিটআপ দেন ওর গাড়িতে করেই..
- থ্যাংস ড্যুড, সি ইউ সুন

কথা শেষ করে শুভ নীচে নামলো। ডাইনিং রুমে মা'য়ের সাথে দেখা-
- মম ফাহিম আর রাহাতের সাথে আজ শহীদ মিনারে যাবো।
- রাতে বাড়ি ফিরবে না?
- নো মম, ফুল দিতে দিতে তো অনেক সময় লেগে যাবে। তারপর একটু ঘুরবো। ফিরতে ফিরতে মর্নিং। ড্যাডকে কিছু বলো না প্লিজ।
- আচ্ছা, দ্রুত করে ফিরে আসিস তাহলে তোর বাবা উঠার আগেই।
- ওকে মম, থ্যাংকস।
- বেরুবি কখন? রাতে ডিনার করে না তার আগেই।
- ফাহিম তো শার্প এইট'ও ক্লক তার বাড়িতে থাকতে বলল। ডিনার নাকি ওর ওখানেই হবে। আমি এখুনি বেরুবো।
- আচ্ছা, সাবধানে থাকিস।

রুমে এসে গত পরশু কেনা ফতুয়া টা বের করলো শুভ। ফতুয়ার উপরে রক্ত ঝরা লাল রঙ। মাঝে কালো দেখতে গুলির চিহ্নের মত আর পাশে অ আ ক খ বর্ণমালা খচিত আছে। চমৎকার ডিজাইন, শুধু আজকের কথা চিন্তা করেই সে এটা কিনেছিল। আটটা বাজতে এখনো অনেক দেরি, ল্যাপটপটা কোলের উপর নিয়ে টুইটার চেক করলো। নতুন কোন নিউজ নেই তার জন্যে। তাই ফেসবুকে চলে আসলো টুইটার বাদ দিয়ে। সবাই যার যার প্রোফাইলে নিজেদের নামের প্রথম অক্ষর লাগিয়েছে। সেও লাগিয়েছে সবার মত করে। নাহ, ঐরকম এক্সাইটমেন্ট নিয়ে দেখার মত কিছু নেই এখানেও। বালিশের উপর মাথা এলিয়ে দিয়ে কিছু একটা চিন্তা করছিল।

তারপর ঘড়ির দিকে তাকাতেই চোখ কপালে তার। এত দ্রুত আটটা দশ কিভাবে হল, মাত্রই তো সে দেখল সন্ধ্যা ছয়টা চল্লিশের কাছাকাছি। দৌড়ে প্যান্ট পাল্টে, ফতুয়াটা গলিয়ে মোবাইল, মানিব্যাগ চাদর আর তোড়াটা নিয়ে নিচে নামলো সে। আশ্চর্য! এই সময় তো বাড়ি এত নিঝুম থাকে না আজকের মত। মা'কি তবে এখুনি শুয়ে পড়লো? যাক তাও ভালো কিছু বলে আর সময় নষ্ট করতে হল না, দ্রুত পায়ে বেরিয়ে গেল সে। ফাহিমের বাড়ি বেশি দূর না, হেটেই যাওয়া যায়। তবে আজ দেরি করে ফেলেছে, তাই রিক্সা নিতে হবে। সামনেই রিক্সা পাওয়ার কথা তবে আজ কেমন যেন রাস্তাটা ফাকা এই সময়েই, মোড়ের চা'য়ের দোকানটাও বন্ধ। ছুটি পেয়ে মনে হয় আজ সবাই আগেই গন্তব্যে পৌঁছে গেছে, রিক্সাটা পেলেই হয় এখন। নাহ! একটা রিক্সা আছে দেখা যায়, ভাড়া বেশি চাইবে বুঝতে পারছে শুভ কিন্তু কি করার, যত দ্রুত সম্ভব তাকে ফাহিমের বাসায় যেতেই হবে। রিক্সা ওয়ালা হুড তুলে তার ভেতর বসেছে, বেশ আয়েশি ভঙ্গীতে পা দু'টো চালকের সিটে তুলে আরাম করছে।

শুভ রিক্সার সামনে দাড়িয়ে, কিন্তু কিছু একটা সমস্যা হয়েছে তার। ঠাণ্ডায় গলা দিয়ে আওয়াজ বেরুচ্ছে না তার। আজ ঠাণ্ডাও লাগছে বেজায় রকম। গায়ে চাদর জড়ানো, কিন্তু সেটা ঠাণ্ডা থামাতেই পারছেনা যেন। গলা চিড়ে যে একটা আওয়াজ করবে তার জো নেই। কিন্তু এ কি! একেবারেই যে আওয়াজ বের করতে পারছে না সে। কাশি দিয়ে নিজের গলায় হাত রেখে নিজেকেই বিশ্বাস করতে পারছে না সে। চিৎকার করে চলেছে মনের ভেতর কিন্তু আওয়াজ করে এতটুকু শক্তি যেন তার নেই।

হুডের ভেতর থেকে রিকশাওয়ালা বলে উঠলো-
কি মামা, কথা আটাকায় গেছে? হাতের ফুল আর আর ফতুয়া পইড়া আর কত দিন এইভাবে ভাষার লাঞ্ছনা করবেন মামা? তারচেয়ে এই ভালা, কথা কওনের শক্তি আপনেগোর বন্ধ হইয়্যা যাক এক্কেরে। ঐরকম আধা বাঙ্গালি হওনের চেয়ে অবাঙ্গালি হইয়্যা যান আর নাইলে এইরকম কইরা বোবা হইয়্যা যান। তাতে অন্তত আমাগোর "বাংলা" শান্তি পাইব।
তারপর হুট করে পা নামিয়ে রিক্সার হুডের ভেতর থেকে লোকটা তার দু'হাত বের করে শুভ'র গলায় চেপে ধরল। শুভ চিৎকার করে দু'হাত ধরে রিক্সা ওয়ালার হাত তার গলা থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু, কোন লাভ হচ্ছে বলে মনে হল না। উল্টো লোকটার হাতের চাপ বাড়তে থাকলো। দম যেন ফুরিয়ে আসছে শুভ'র.......




একবারে ঘেমে নেয়ে ঘুম ভাঙ্গল শুভর। পরনের টি'শার্টটা একেবারেই ভিজে জবজব অবস্থা। ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই দেখল সময় মাত্র সাড়ে সাতটা। গলায় হাত বুলিয়ে কাশি দিলো শুভ। কি ভয়ানক স্বপ্ন দেখল সে এটা। ধুর এমন কিছু হয় নাকি? আজকের দৌড়াদৌড়িটা মনে হয় একটু বেশি হয়ে গেছে। তার উপর বাংলা ভাষা নিয়ে স্যরের ল্যাকচারটাই এমন করেছে। ফাহিমকে বললে নির্ঘাত সে এটা সবাইকে বলে বলে জ্বালিয়ে মারবে। ধুর! এত ভাবার সময় নেই। এবার উঠতে হবে, দ্রুত রেডি হয়ে ফাহিমের বাসা তারপর শহীদ মিনার আর শেষে বন্ধুদের সাথে ঘুরাঘুরি....





রবিবার, ফেব্রুয়ারী ১৬, ২০১৪

সম্প্রতি দেখা মুভি : Secondhand Lions

Secondhand Lions 

(2003)


গত কয়েকদিনে অনেক গুলি মুভি দেখলাম। নাম হিসেবে বলতে বললে কোনটার নামই এখন মনে পড়ছে না এই মুহূর্তে। কিন্তু একটা মুভি মাথায় ঢুকে আছে। খুব সাধারণ একটা ছেলের জীবন নিয়ে শুরু কিন্তু আবার অতটাই সাদামাটা নয়। ছেলের মা তখনো জীবনকে স্থায়ী রূপ দিতে পারে নি তাই রূপায়নের লক্ষ্যে তার ছেলেকে দূর সম্পর্কের মামাদের কাছে রেখে আসতে চায়। আবার সেই দূর সম্পর্কের মামা দুইজনও যুবা বয়সের ৩০ বছর কোথায় কাটিয়েছে এসেছে তার হদিস কারো জানা নেই। তবে যা জানে তা হল, মামাদের কাছে অনেক টাকা রয়েছে। কিন্তু তারা তা কোথায় রেখেছে তা কেউ বলতে পারে না। তার উপর মামা দুইজনই উদ্ভট আচরণের মানুষ উপরন্তু অবিবাহিত তাই সেই সম্পদের পুরোটা লোভ তাদের আত্মীয়দের ঘিরে রেখেছে। ছেলেটির মা'ও কিন্তু সেই আশা মনে রেখে ছেলেকে এখানে ছেড়ে যাচ্ছেন।

সমস্যা হল সবাই অদ্ভুত বললেও ছেলেটা কিন্তু তাদের সেই অদ্ভুত আচরণে একটা কোমলতা খুঁজে পায়। একটা দুর্বলতা সে ঠিকই তৈরি করে দেয় সেই অদ্ভুত আচরণ করা মামাদের মাঝে। কিছু বোঝার আগেই তাদের মনে বসতি গড়ে তোলে ছেলেটি। আর সাথে আবিষ্কার লুকানো সেই ৩০ বছরের ঘটনাকে। জানতে পারে "প্রকৃত ভালবাসার কোন মৃত্যু নেই"। রোমাঞ্চিত হয় মামাদের সব কল্প-কাহিনীর মত বাস্তবতায়। অভিভূত হয় তাদের কার্যক্ষমতায়। হারিয়ে যায় তাদের মাঝে অন্য এক ভুবনে। যেখানে মাছ ধরতে শটগান আর পালতু জন্তু হিসেবে কুকুর বিড়ালের সাথে সিংহও থাকে।

আর কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না। তবে যা শিখেছি সেটা না বললেই না। ভালবাসা যে বিশ্বাস এনে দেয়, যেভাবে আপন করে নেয় তার শক্তি দিয়ে তা পুরো পৃথিবীর সম্পদের দ্বারা কেউ উদ্ধার করে দিতে পারবে না। Haley Joel Osment, Michael Caine, Robert Duvall অভিনীত মুভিটার নাম হচ্ছে Secondhand Lions










রাত জাগা পাখির প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াই....

রাত জাগা পাখিদের ভোর কি কখনো হয়? 
নাকি দিনের শুরুর আলোটাই তাদের দিন শেষের অন্ধকারের কথা মনে করিয়ে দেয়। মনে করিয়ে দেয় রাতের নিস্তব্ধতার কথা আলোকিত কোলাহলের মাঝে। মনে করিয়ে দেয় আপন অক্ষমতা সকল ক্ষমতার মাঝে???

বুধবার, ফেব্রুয়ারী ১২, ২০১৪

••••••••••••• একটি লাইনের গল্প •••••••••••••

প্রীতম, কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে ভার্সিটিতে অবস্থান। পাবলিকে কোথাও হয়নি তাই সময় নষ্ট না করে প্রাইভেটেই নাম লিখিয়েছে। বাবা-মার আদরের সন্তান তাই সবসময় প্রাপ্তি গুলি চাহিদা তৈরির আগেই পূর্ণতা পেয়ে গেছে। তবে বাবা মায়ের কড়া নজর, ছেলে যাতে বাইরে আড্ডা না জমায়। কারণ, আজকাল তো আড্ডা দিতে গিয়েই সিগারেট, হেরোইনের আর ফেন্সিডিলের মত নেশার কবলে পড়ে ছেলেপেলে। তাই প্রয়োজনের বাইরে যাতে বাইরে সময় না দেয় সেদিকে খুব কড়াকড়ি অবস্থান।

কি আর করার? ভার্সিটি ক্লাস শেষে সোজা বাসায় অবস্থান নেয় প্রীতম। গান শুনে, বই পড়ে আর টুকটাক এক্সপেরিমেন্টের নামে কাগুজে তৈরি বিদঘুটে জিনিষ পত্র তৈরি করে দিন ভালোই কাটছিল তার। একদিন তার ক্লাসমেট পরিচয় করিয়ে দিল আরো একটা সময় কাটানো মাধ্যমের সাথে, পরিচয় করিয়ে দিলো “ফেসবুক” এর সাথে। যেখানে সে ঘরে বসেও দুনিয়ার অপর প্রান্তে অবস্থান নেয়া বন্ধুটার সাথে যোগাযোগ করতে পারবে। পারবে আড্ডা দিতে একা ঘরে বসে হাজার বন্ধুদের সাথে।

প্রথম কদিন এটা সেটা বুঝে সময় কাটালেও খুব দ্রুতই সে ফেসবুক কে নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসলো। এখন আর গান শুনে বা বই পড়ে সময় কাটাতে হয় না তার। চেয়ারে বসে বা খাটে শুয়ে ল্যাপটপটা কোলে নিয়েই সে সময় কাটাতে পারে ফেসবুকে। এখানে কদিনেই তার অনেক পরিচিতি হয়ে গেছে। মাস তিনের মধ্যেই কয়েকটা বড় গ্রুপে তার ভালো একটা অবস্থান তৈরি করেছে আর ফ্রেন্ড-লিস্টে পরিচিত অপরিচিত সহ প্রায় দু’হাজার বন্ধু জোগাড় করে ফেলেছ। এখন প্রায় প্রতি রাতেই ক’জন মিলে সেই আড্ডা জমে এখানে।

ইলার সাথে এখানেই কোথাও পরিচয় হয় প্রীতমের সাথে। আড্ডায় আড্ডায় খুব ভালো বন্ধুত্বও তৈরি হয়। আর তারপর আড্ডার পাশাপাশি চলে ইন-বক্সে কথোপকথন। আড্ডা গড়ায়, সাথে বেড়ে চলে ইন-বক্সের মেসেজের সংখ্যা। অবস্থা এমন যে আড্ডায় কেউ থাকুক বা না থাকুক ইন-বক্সে অন্তত একজনের ‘হাই’ বলতেই হবে। কদিন বাদে ইন-বক্সের আলাপ দূরালাপনিতে গিয়ে বসে। কি হয় না সেখানে? কোথায় আছে, কি করছে, পড়ছে নাকি টিভি দেখছে সব আলাপই চলে এখন। সমস্যা কি? বন্ধু তো, বলতেই পারে। খারাপ তো কিছু করছে না….

সমস্যা হল প্রীতমের। এতদিন সে আসলে ঐ অর্থে মেয়েদের সাথে সরাসরি এভাবে যোগাযোগের সুযোগ পায়নি কখনো। বয়েজ স্কুল, তারপর বয়েজ কলেজ আর শেষে তার ভার্সিটির ডিপার্টমেন্টে হাতে গোনা ক’জন মেয়ে থাকায় সে আসলে ঐ অর্থে তাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগের কোন মাধ্যম পায়নি এর আগে। এর আগে মানে এই ইলার সাথে পরিচয় হবার আগে। মেয়েদের নিয়ে আগে যেটা ফ্যান্টাসি ছিল এখন তার অনেক কিছুই বুঝতে পারে এই ইলার মাধ্যমেই। কিন্তু প্রীতমের মন ইলাকে বন্ধু থেকেও বেশী কিছু মনে করতে শুরু করেছে এখন। কিন্তু ভয় হয়, ইলা যদি এটা জেনে তার সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্কটা নষ্ট করে দেয়। এই ভেবে সে আর ইলাকে কিছু বলার সাহস করে না।

গতরাতে হঠাৎ করে ফেসবুকের কল্যাণে জনতে পারলো যে “প্রপোজ ডে” নামেও একটা আলাদা দিন আছে। দিনভর খুব চিন্তা করলো প্রীতম। বলবে, বলবে-না, করবে, করবে-না করতে করতে যখন দিন গড়িয়ে বিকেল তখন ঝোঁকের চোটেই ইলাকে ইন-বক্সে বলল “ইলা, ভালবাসি, তোমাকেই ভালবাসি”। লিখেই ফেসবুক বন্ধ করে দিল। প্রচণ্ড টেনশন হচ্ছে তার ইলা এই মেসেজ দেখে কি বলবে, তার রি-একশন কি হবে, আর প্রতি-উত্তরটা কি প্রত্যাখ্যানের হবে; নাকি সম্মতির। ভাবতে ভাবতেই সন্ধ্যা পার হয়ে গেল। আচ্ছা ভালো কথা, এত সময় পার হয়ে গেল নিশ্চয় এর মাঝে ইলা মেসেজটা পড়েছে। তাহলে ফোন দিচ্ছে না কেন? তাহলে কি……

অবশেষে অনেক আকাঙ্ক্ষা আর টেনশন নিয়ে ফের ফেসবুকে লগইন করলো প্রীতম। সবার আগেই ঢুকল মেসেজ বক্সে। ইলার মেসেজটাই সবার উপরে। তবে কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। ক্লিক করলো তাকে প্রীতম। ইলা একটা লম্বা মেসেজ দিয়ে গেছে তাকে। আর মেসেজটা দেবার পর ইলা তার আইডি বন্ধ করে দিয়েছে। হ্যাঁ, প্রীতম ইলার দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। ইলার অত বড় মেসেজটা বার ৩ পড়ার পর যেটা প্রীতম বুঝল, ইলা আসলে সত্যিকার অর্থেই তাকে বন্ধু ভেবে তার কথা গুলি শেয়ার করেছিল এতদিন। ইলাও তার মত বদ্ধ ঘরে মানুষ। তবুও সে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারায়নি। আর প্রীতমও যে তার নিয়ন্ত্রণ হারাবে তা কল্পনা করতে পারেনি। এটা নয় যে ইলা এটাই প্রথম কারো কাছ থকে প্রপোজাল পেয়েছে। কিন্তু প্রীতম এটা করবে সে তা কল্পনাও করতে পারে নি। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই প্রপোজালের রাস্তাটাই বন্ধ করে দিবে। আর তাই সে তার পুরাতন মোবাইল নাম্বার পাল্টে নিবে আর তার এই ভার্চুয়াল পরিচয়টাকে মুছে দিবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

হ্যাঁ, ইলার মেসেজের যে স্থানে এতদিন ইলার ছবিটা দেখা যেত সেটা এখন মেয়ে আকৃতির একটা এভাটারে রূপ নিয়েছে। আর তার নামটা নীল অক্ষর থেকে কালো অক্ষরে পরিণত হয়েছে। প্রীতমের মাত্র একটা লাইন তার বিশ্বাসকে নষ্ট করেছে এই ভার্চুয়াল জগত থেকে.....







বুধবার, জানুয়ারী ২২, ২০১৪

নিশ্চিত জীবন থেকে দেখা অনিশ্চিতের দূর্বার গতি……

কিছু জীবনের নিশ্চয়তা থাকে না, তবুও দূর্বার গতিতে এগিয়ে চলে।

সেই গতিটা দেখতে ভাল লাগে………

মন আকাঙ্ক্ষায় থাকে সেই গতিটাকে নিজের জীবনে নিয়ে আসতে। কিন্তু পারে না। কারণ গতিটার সাথে অনিশ্চয়তার একটা গভীর সম্পর্ক আছে। আর কেউ জেনে শুনে অনিশ্চয়তাকে বেছে নিতে পারে না।

ততটা সাহস সবার থাকে না……






শনিবার, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৩

ফেসবুকের গল্প-কথা....



ফেসবুকের শুরুটা বলি আজ তাহলে। আরেহ নাহ! ফেসবুক কিভাবে শুরু হলো তা বলবো না। আমি বলতে যাচ্ছি কিভাবে 'আমি' ফেসবুকে আসলাম, আর তাকে বুঝতে শুরু করলাম সেই কথা।

সময়টা ২০০৬ এর শেষের দিকে। নেটে পড়ে আছি অনেকদিন হয়। ও হ্যাঁ, তখন নেট মানে হচ্ছে আফতাব আইটি (Aftab IT) বা BOL (Bangladesh Online Limited) এর কার্ড আর টেলিফোন লাইন ব্যবহার করে ইন্টারনেট সংযোগ। তাও আবার কাটায় কাটায় মিনিট হিসেব করে, সময় শেষ তো লাইন অফ, কোন ছাড় নেই।

তো সেই সময় মূলত নতুন নতুন সাইট আর ব্লগে ঢু মারতাম আর সামুতে পড়ে থাকতাম। বিশেষ কাউকে না চিনলেও দুই একজনের লেখা রেগুলার ফলো করতাম। আরো একটা কাজ করতাম। মজা নিয়ে নিজের নামের আরো কেউ আছে কিনা কোথাও সেটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করতাম। আর মজার ব্যাপার হলো যে, তখন এমন নিজের নামের সাথে মিল আছে এমন দুইজনের সন্ধানও পেয়ে যাই। তবে তারা কেউ বাংলাদেশের ছিলো না। দুইজনই কোলকাতার, আবার তাদের মাঝে একজন ইউরোপ প্রবাসী।

দিন ভালোই কাটছিলো ঐভাবে। অল্প সময় নেট আর অল্প স্বল্প জ্ঞান আহরণ। প্রায় সব ওয়েব পেইজ গুলিকে পরে পড়বো ভেবে হার্ডডিস্কে সেভ করে পড়তাম, আর অনলাইনে সার্চ আর কমেন্ট করার কাজ করতাম। যদিও প্রতিটা সাইটে আলাদা আলাদা রেজিস্ট্রেশন করার বিপরীতেই কমেন্ট করতে দিতো সেই সময়ে। 

দেখতে দেখতে এভাবে ২০০৭ চলে আসলো। তখন সাইবার ক্যাফে আর ইন্সটিটিউটের ল্যাবে বসে ইন্টারনেটে সময় কাটাই। ল্যাব এসিস্টেন্টের সাথে খাতির থাকায় ক্লাসের পরেও তার সাথে ল্যাবে কাজ করতাম আর ইন্টারনেট একসেস করতে পারতাম। তখন একটা সাইটে একটা সফটওয়্যার রিভিউ দেখলাম। সফটওয়্যারটা অনেক কাজের কাজী। আর তাই তা পাওয়ার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠলাম। কিন্তু সে যেই লিংক দিয়েছে তা ততদিনে ডেড লিংকে রূপ নিয়েছে। 

তখন তার ঐ পোষ্টও প্রায় ২ মাসের পুরানো হওয়ায় শুধু মন্তব্য করে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাচ্ছিল না। আর সাইটেও পাচ্ছিলাম না তখন তাকে। সে জন্যেই অন্য চিন্তা শুরু করলাম। সাইট ঘাটিয়ে তার পরিচয় আর মেইল খুঁজে বের করলাম এবং তাকে মেইল করলাম। সেই মেইলের রিপ্লাই ও পেলাম প্রায় সপ্তা খানিক পর। আমাকে বললো ফেসবুকে যোগাযোগ করতে। তখনও আমার তো ফেসবুক একাউন্ট নাই, আর তার সাথে যোগাযোগ করার উদ্দেশ্যেই সেই ফেসবুকে রেজিস্ট্রেশন করি তখন। 

রেজিস্ট্রেশন শেষে তার মেইল এড্রেস দিয়ে তাকে ফেসবুকে খুঁজে বের করলাম। কিন্তু যখনই তার কোন একটা পোষ্টে কমেন্ট করতে গেলাম তখন বুঝতে পারলাম কারো সাথে যোগাযোগ করতে হলে তাকে আগে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতে হবে। নতুবা তার পোষ্টে কমেন্ট করতে পারবো না আমি। তাই আইডির লিংক নিয়ে রিকোয়েস্ট দিয়ে আবারও মেইল দিলাম তাকে, আমাকে এড করার জন্যে। সে এড করে আমাকে সেই সফটওয়্যার এর লিংক দিলো এবং তারপর তার সাথে আরো কয়েকবার শুধুমাত্র প্রয়োজনেই কথা হয়েছিলো এই ফেসবুকে। কিন্তু আমার ফেসবুক তখনও ঐ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। 

২০০৮ এর শেষের দিকে ব্লগে খুব সময় দিচ্ছি। টেকি ব্লগ কোনটাই বাকি নেই যে সকাল সন্ধ্যায় চোখ বুলাই না। তবুও টেকটিউন্স আর বিজ্ঞানী.অর্গে ভালো সময় কাটতো আমার। নিজে কিছু পারতাম না, কিন্তু সবার কাছ থেকে শিখতে চেষ্টা করতাম। তখন আবার কয়েকজন টেকি বন্ধু বললো ফেসবুকের কথা। আমি তো আইডি যে আছে সেইটাই ভুলে গিয়েছিলাম ততদিনে। রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে দেখি আগে রেজিস্ট্রেশন করা আছে, তাই পাসওয়ার্ড রিকোভার করে লগইন করলাম। তখনও দুই তিনদিন চালিয়ে ফের অফ। আর কোন খোজ খবর নেই। 

ওদিকে ইন্সটিটিউটের অনেক ফ্রেন্ড তখন ফেসবুক কে লাভবুক বানিয়ে ফেলেছে। যাকেই দেখি ফেসবুকে তাকেই দেখি গার্লফ্রেন্ডের সাথে মেসেজ আদান প্রদান আর সব পোষ্ট গার্লফ্রেন্ডকে উৎসর্গ করে। তাই ঐদিকে ফেসবুকে আইডি আছে বলতে লজ্জা লাগতো, পরে লোকে কি মনে করে এই ভেবে।

সব শেষে ২০১২ তে আবার ফেসবুকে সময় দেয়া শুরু করলাম। ইন্সটিটিউটের বন্ধুদের সাথে দূরত্ব বেড়ে যাওয়ায় তাদের সাথে যোগাযোগ রাখার মাধ্যম হয়ে দাঁড়ালো এই ফেসবুক। সবাই মোবাইল নাম্বার পরিবর্তন করলেও ফেসবুক আইডি তো আর পরিবর্তন করছে না তাই এটাই ভরসা হয়ে দাঁড়ালো আমার জন্যে।

মৌলিক বিষয় গুলি তখন থেকেই বুঝতে শুরু করলাম ফেসবুকের। সাইটে যেমন ড্যাশ-বোর্ড থাকে এখানে পুরোটাই তার মিল আছে তবে ভিন্ন ভাবে সব উপস্থাপন করা হয়েছে। ট্যাগ করা শিখলাম, শিখলাম ফটো আপলোড এবং তাতে ট্যাগ করে বন্ধুদের যুক্ত করার বিষয়টা। তবে কখনোই অসামাজিক কোন পেইজ বা গ্রুপে যুক্ত ছিলাম না, এবং প্রশ্ন করতে পারে এমন কারো সাথে বন্ধুত্বও তৈরি হয় নি। কিন্তু নিজেকে ঠিক ঐভাবে মুক্ত মনে হচ্ছিলো না প্রোফাইলটাতে।

২০১৩ এর মে মাসের ২৬ তারিখে একটা আইডি খুললাম যাতে আমার কোন পরিচিতি নেই এবং নেই পরিচিত কেউ সেখানে। সেখানে এসে হুট করেই অনেক কিছুর সাথে জড়িয়ে গেলাম। পরিচিত হলাম নতুন সব অপরিচিতের সাথে। দেখলাম একটা পরিবার এবং তাকে জড়িয়ে অনেক গুলি উজ্জ্বল মুখ। তাদের সাথে এই অল্প সময়ের পথ চলাতে অনেকের সাথে তৈরি হয়েছে বন্ধুত্বের সম্পর্ক আর পেয়েছি কিছু বড় ভাই আর বোন।

যে ভালবাসা পেয়েছি তার কোন কিছুই হয়তো ফেরত দেবার যোগ্যতা নেই আমার। তবে সবার মত এর খারাপ দিক গুলিকে বলবো না। অনেক ভাল কিছুই লুকিয়ে আছে এই ফেসবুক পাড়াতে...... :)




শনিবার, নভেম্বর ৩০, ২০১৩

নীরা, তোমার অপেক্ষায়.....



নীরা, তোমাকে তো বলা হয়নি। তোমার জন্যে ঐ দিন স্টেশনে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছিলাম। মিন্টু বলেছিল তুমি নাকি বাড়ি আসছো। আমি সেই শীতের রাতে প্লাটফর্মে বসেছিলাম তোমার জন্যে। জানো রাতে বেকার সময়টাতে প্লাটফর্মে তেমন কেউ থাকে না। তবে একেবারেই যে থাকে না তা কিন্তু নয়। আমাদের স্টেশনটা ছোট। গ্রামের স্টেশন অতবড় হয় না। কিন্তু তারপরও দেখলাম কয়েকটা বৃদ্ধ আর বেশ কিছু টোকাই গোছের বাচ্চা ছেলে এক কোনায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে আছে। একটা পরিবারও মনে হয় আছে সেখানে। এই শীতেও তারা কি করে ঘুমুচ্ছে তা আসলেই চিন্তা করার মত বিষয়।

ভুল হয়ে গেছে নীরা। আসলে বাংলাদেশের ট্রেন গুলি যে সময় মত আসে না তা আমার জানা আছে। তবুও অনেক আগেই চলে এসেছি। আসলে তুমি আসছো এইটা শুনে আর অন্য কোথাও অপেক্ষা করতে ইচ্ছে করছিলো না। এখন মনে হচ্ছে একটা বই নিয়ে আসার প্রয়োজন ছিলো। গল্পে ডুবে থেকে তোমার জন্যে অপেক্ষা করতে থাকায় হয়তো সময়টা মন্দ কাটতো না। কিন্তু দ্রুত চলে আসলাম, মনেই ছিল না একটা বই সাথে করে নিয়ে আসার কথা। আচ্ছা কোন বইটা নিয়ে আসতে চাইছি বুঝতে পেরেছ তো? সেই যে তুমি "অপেক্ষা" নামের একটা বই খুঁজতে গিয়েছিলে লাইব্রেরিতে, সেই বইটা। আসলে অপেক্ষা করতে হচ্ছে তো তোমার জন্যে, তাই আজ ওটার কথাই মনে হচ্ছিল বার বার।

নাহ, আজ মনে হয় অনেক বেশীই দেরি হচ্ছে কোথাও। না হয় ট্রেন তো চলে আসার কথা এই সময়ের মাঝে। কি জানি? হয় তো ট্রেনই লেট ছিল আজ। তাই সব কিছুতেই লেট হচ্ছে। আর ঠাণ্ডাটাও মনে হয় বেড়েছে। লেট যেহেতু হচ্ছে তাই চিন্তা করলাম স্টেশনের বাইরে থেকে চা খেয়ে আসি। দিনের বেলায় হলে বাইরে যাবার ঝামেলা ছিলো না। ছোট ছোট কতগুলি বাচ্চা ছেলেই তো চা'য়ের ফ্লাস্ক নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। এক ইশারাতেই চা হাজির হয়ে যেতো। কিন্তু রাতের বেলাতে তো আর তা সম্ভব না। তাই স্টেশনের বাইরে যেতেই হবে।

বাইরে বেরিয়ে দেখি এই রাত দুপুরেও একটা হোটেল খোলা রয়েছে। আর হোটেল দেখেই খিদেটা টের পেলাম। গিয়ে দেখি দোকানি আর দুইটা ছেলে আছে হোটেলটাতে। অলস সময় পার করছে। তারাও আমার মত অপেক্ষা করছে ট্রেনটার। অল্প কিছু সময়ের জন্যে ট্রেনটা থামলেও এর মাঝেই অনেকে চলে আসে এখানে পেট-পূজা করতে। অন্য সময় হলে ছেলে দুইটার যে কোন একজন দৌড়ে আসতো কি খাবো তা অর্ডার নিতে। কিন্তু এখন তাদের কোন ব্যস্ততা দেখছি না। একবার আমার দিকে তাকিয়ে দেখেই আগের মতই নিজেদের মাঝে আলাপ করছে তারা। আলাপ করার ভঙ্গি দেখে মনেই হবে না শীতের রাত জেগে থাকার কোন দুঃখ আছে এদের কারো।

ক্যাশে বসে থাকা লোকটাই জানতে চাইলো কি লাগবে। তাকে জিজ্ঞাস করলাম কি পাওয়া যাবে এখন। জানালো রুটি-পারোটা, মোঘলাই, ডিম ভাজি, আর সবজি হবে এই মুহূর্তে। খিদেটা আরো একটু বাড়লো কিন্তু হুট করে ট্রেন চলে আসলে তোমাকে এক পলক দেখার চান্সটা মিস হবে তাই বললাম একটা মোঘলাই আর চা দিতে। শুনে সে নিজেই মোঘলাই তৈরি করতে গেলো ক্যাশ ফেলে, ছেলেদের ডেকে আর বিরক্ত করলো না। আমি সামনের দিকের একটা টেবিলে বসে স্টেশনের দিকে চেয়ে আছি। দ্রুতই সে মোঘলাই দিয়ে গেলো। তার কাছে জানতে চাইলাম রাতের ট্রেনটা কখন আসে। জানালো এই সময়ের মাঝে চলে আসার কথা। হয়তো কোথাও দেরি হয়ে গেছে, তাই আজ লেট। তবে খুব দ্রুতই চলে আসবে বললো।

ট্রেন হুট করে চলে আসতে পারে ভেবে যত দ্রুত পারি খেয়ে নিলাম। তারপর প্লাস্টিকের কাপে চা নিয়ে বিল মিটিয়ে আবার এসে বসলাম প্লাটফর্মের টুলটাতে। চারদিক অন্ধকার আর প্লাটফর্মের অল্প আলোয় চারদিক আরো বেশী অন্ধকার মনে হচ্ছিলো। চা'টা শেষ করেও ট্রেনের দেখা পেলাম না। বসে অপেক্ষায় আছি আর মনে পড়ছে এভাবেই বসে থাকার কথা, তোমার পথ চেয়ে। সেই শীতের সকাল বেলায় অপেক্ষার কথা, তোমার কলেজে যাওয়ার পথে। সময়গুলি কত দ্রুত চলে গেলো। তুমি কলেজে পড়া শেষ করে ভার্সিটি ভর্তি হলে। ঢাকা চলে গেলে হোস্টেলে। আর আমি এখনো তোমার অপেক্ষায় বসে আছি এই নির্জনে......