লিনাক্সের স্ট্যাবল ডিস্ট্রো গুলোর তালিকা করলে যে নামটি শুরুর দিকে আসবে তার একটি হচ্ছে ‘লিনাক্স মিন্ট’। মুক্ত অপারেটিং সিস্টেমের স্বাদ নিতে যে কয়েকটি ডিস্ট্রোর সাজেশন মানুষ দিয়ে থাকে, সেখানেও একটা সম্মানজনক অবস্থান গড়ে নিয়েছে এই ‘লিনাক্স মিন্ট’। সাধারণ ব্যবহারকারীর ডেস্কটপ থেকে শুরু করে মধ্যম মানের ব্যবহারকারী কিংবা একজন ডেভেলপারের জন্যে জুতসই একটা অপারেটিং সিস্টেম চিন্তা করলেও ‘লিনাক্স মিন্ট’-কে তালিকাতে রাখতেই হয়।
যদিও লিনাক্স মিন্ট সরাসরি লিনাক্সের কোর লেভেল থেকে ডেভেলপ হয় না। আরেকটি লিনাক্সের ডিস্ট্রিবিউশন ‘উবুন্টু’ থেকে এটি ডেভেলপ করা হয়ে থাকে। অবশ্য এর আরও শাখা একটি ডিস্ট্রিবিউশন আছে, যা সরাসরি ডেবিয়ান থেকে ডেভেলপ করা হয়। তবে জনপ্রিয়তার এগিয়ে আছে উবুন্টু হতে ডেভেলপ করা ডিস্ট্রোটি।
লিনাক্স মিন্ট – সিনামন ডেক্সটপ পরিবেশ |
যাই হোক, লিনাক্স মিন্টের পরিচয় আপাতত এখানেই ইতি টানছি। পরে কোন এক সময় লিনাক্স কিংবা লিনাক্স মিন্ট নিয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা হবে(অনিশ্চিত)। আপাতত চলে যাচ্ছি এর নতুন রিলিজ ‘টিনা’-র (Tina) বন্দনায়।
যদিও ডেভেলপার লোকজনকে মানুষ কাঠখোট্টা হিসেবেই চেনে। তারপরও লিনাক্স মিন্ট এর ডেভেলপারদের সেই ক্যাটাগরিতে ফেলে দেয়া সম্ভব না। তারা দারুণ রস-কস যুক্ত ডেভেলপার, তাই তো প্রতিটা ডিস্ট্রিবিউশনের নামকরণে তারা কোন না কোন একটা মেয়ের নামে ব্যবহার করে থাকে (ডেভ গুলু মনে হয় একটু ইয়ে। এদের মাথা শুধু মেয়েদের চিন্তায় বিভোর থাকে। তাই প্রতি রিলিজই এরা মেয়েদের নামে উৎসর্গ করে 😜 )।
নতুন কি পেলাম ‘টিনা’র নামে?
পর্ব অভিজ্ঞতা থেকে যদি বলতে হয় তবে বলবো- লিনাক্স মিন্ট প্রতি রিলিজেই আমাকে মুগ্ধ করেছে। প্রত্যেকটি রিলিজ ছিলো এর পূর্বেরটির তুলনায় আরও উন্নত, আরও শক্তিশালী। মিন্ট যেন প্রতি রিজিলেই তার পূর্বের রিলিজকে টক্কর দিয়ে ডেভেলপ করে থাকে। এছাড়া নতুন এই রিলিজ মানে ১৯.২ সংস্করণটি অফিসিয়াল সাপোর্ট পাবে ২০২৩ সাল পর্যন্ত। সে হিসেবে যারা লং টার্মে একটি ডিস্ট্রোতে থাকতে চান, তারা অবশ্যই এটিকে নিজ নিজ তালিকায় রাখতে পারেন।» উন্নত আপডেট ম্যানেজার
নতুন রিলিজের যে দুটো ব্যাপার আমার দারুণ ভালো লেগেছে তার মধ্যে একটি এই আপডেট ম্যানেজার। পূর্বের রিলিজ গুলোতে একটি নির্দিষ্ট কার্নেলের উপর ভিত্তি করে একে তৈরি এবং রিলিজ করা হতো। পরবর্তী রিলিজে কার্নেল আপডেট হবার আগ পর্যন্ত ঐ একই কার্নেল ব্যবহার করতে হতো। অন্যথায় নিজেকে পুরো কার্নেল কম্পাইল/বিল্ড করে ব্যবহার করা লাগতো। অনেকের জন্যে হয়তো এটি তেমন বড় ব্যাপার নয়। কিন্তু যারা নতুন কার্নেলসের সুবিধা আদায় করতে চায় তাদের কাছে এতদিন বড় বাধা হয়ে দাড়িয়েছিল এই সমস্যাটি। এখন চাইলে যে কেউ খুব সহজেই নতুন কার্ণেলটি আপডেট ম্যানেজার ব্যবহার করে ইন্সটল ও ব্যবহার করতে পারবে।আপডেট ম্যানেজারের আরও একটা নতুন ফিচার ‘ব্লাকলিস্ট’। যারা লিনাক্স ব্যবহার করেছেন তারা সবাই লিনাক্সের সফটওয়্যার রিপো অথবা সফটওয়্যার ম্যানেজারের সাথে পরিচিত। যখন কেউ পুরো সিস্টেমটি আপডেট দেয় তখন সিস্টেমে ইন্সটল করা সকল সফটওয়্যারও একই সাথে আপডেট হয়ে যায়। কিন্তু এতে অনেক সময় কিছু কিছু সফটওয়্যার কম্পাবিলিটি ইস্যুতে পড়ে ইউজারকে নাজেহাল করে। ধরুন আপনি Darktable এর ২.৬.১ ভার্সনটি ব্যবহার করছিলেন। এর মধ্যেই এটির ২.৬.২ ভার্সন আসলো। কিন্তু তাতে কোন একটা বাগ বা সমস্যা থাকায় কাজের সমস্যা হচ্ছিলো। তাই আপনি আপডেট ভার্সনটি বাদ দিয়ে পুনরায় ২.৬.১ এ ফিরে গেলেন। কিন্তু যখন পুরো সিস্টেমটি আপডেট করতে দিবেন তখন Darktable পুনরায় আপডেট হয়ে ২.৬.২ তে আপডেট হয়ে গেলো।
এই সমস্যাটিরই সমাধান এসেছে এই নতুন আপডেট ম্যানেজারে। এখন আপনি চাইলে কোন একটা প্যাকেজ বা সফটওয়্যারের নির্দিষ্ট কোন ভার্সনকে ইচ্ছে হলে আপডেট হতে বাধা দিতে পারবেন এই ব্লাক লিস্ট ফিচার ব্যবহার করে।
তাছাড়া আপডেট ম্যানেজারকে আপডেট করার জন্যেও নতুন একটা ইন্টারফেস তৈরি করা হয়েছে!
» কার্যকর ‘রেসপন্স টাইম’
আপনি যদি লিনাক্স মিন্ট ১৯.১ ব্যবহার করে থাকেন আর, এখন ১৯.২ ব্যবহার করতে বসেন তাহলে এই ব্যাপারটি আপনার নজরে আসবেই। নতুন রিলিজে মিন্টের রেসপন্স টাইম অনেকটাই ইফেক্টিভ হয়েছে। আগের তুলনায় সফটওয়্যার লোড কিংবা সফটওয়্যার গুলো আরও দ্রুত গতি সম্পন্ন হয়েছে। এটা এই রিলিজের আরও একটি বিশাল প্লাস পয়েন্ট হিসেবে আমি ধরেছি।
» সফটওয়্যার সনাক্তকরণ পদ্ধতি
লিনাক্স মিন্ট -এ সফটওয়্যার সেন্টার থেকে সরাসরি এ্যাপ ইন্সটল করার পাশাপাশি ফ্লাট এ্যাপ গুলো ইন্সটল করার সুবিধা রয়েছে। লিনাক্স মিন্ট এর বিল্ট-ইন সফটওয়্যার ম্যানেজার হতে সরাসরি মূল এ্যাপ এবং সেই একই এ্যাপের ফ্লাটপ্যাক এ্যাপ ইন্সটল ও ব্যবহার করা যায়। কিন্তু মিন্ট-মেন্যুতে আগে এই দুটো গ্যাটাগরির এ্যাপ আলাদা করা যেতো না। কিন্তু বর্তমান রিলিজে ফ্লাট এ্যাপ গুলোকে এক ধরণের রঙ্গে রাঙ্গানো হয়, আর অর্গানিক এ্যাপ গুলো তার নিয়মিত ঢং-এই থাকে। তাছাড়া ফ্লাট এ্যাপ গুলোর নামের সাথেই ফ্লাটপ্যাক লিখা থাকে। তাই ফ্লাটপ্যাক এ্যাপ আর অর্গানিক এ্যাপ নিয়ে এখন আর তেমন জটিলতা পোহাতে হবে না। এছাড়া ভিন্ন ভিন্ন প্যাকেজের জেনারিক নামও এখন মিন্ট মেন্যুতে আলাদা করেই দেখানো হবে।
» লাইভ মুডেই থাকছে বুট রিপেয়ার
পূর্ববর্তী লাইভ মুড থেকে বুট রিপেয়ার করাটা দারুণ ঝামেলাপূর্ণ ছিলো। সেই ঝামেলা এই রিলিজে সমাপ্ত হলো। নতুন এই রিলিজ ‘টিনা’র লাইভ মুডেই এখন দেয়া হয়েছে বুট রিপেয়ার সফটওয়্যারটি। যারা ডুয়েল বুটে লিনাক্স চালাচ্ছেন তাদের যে কত বড় উপকার হয়েছে এই ফিচারটি যুক্ত হওয়ায় তা বোধ করি আলাদা করে আর বলার অপেক্ষায় থাকে না।
» ডুপ্লিকেট সোর্স রিমোভ অপশন
যারা অতিরিক্ত রেপো থেকে প্যাকেজ/সফটওয়্যার ইন্সটল করে থাকেন তাদের জন্যে এই সুবিধাটি দারুণ কাজের হবে। এবারে কোন রেপো একের অধিকবার যুক্ত হলে কিংবা রেপো ডুপ্লিকেট হবার কারণে আপডেটে ঝামেলা হলে খুব সহজেই সোর্স কনফিগার অপশন থেকে ডুপ্লিকেট রেপো গুলো রিমুভ করার সুযোগ পাবেন।
» গোছানো সিস্টেম রিপোর্ট
আরও আপডেট হয়েছে সিস্টেমের আর্টওয়ার্ক। অবশ্য এটা বরাবরই আমার কাছে বোনাস বলেই মনে হয়।
লিনাক্স মিন্ট ১৯.২ ‘টিনা’-র জন্য আবশ্যক হার্ডওয়্যার
- অন্তত ১ গিগাবাইট র্যাম (২ গিগাবাইট র্যাম হলে মোটামুটি পর্যায়ে চালানো সম্ভব)
- ইন্সটল করার জন্যে ১৫ গিগাবাইট হার্ডডিস্ক স্পেস (২০ গিগাবাইট হলে ভালো হবে)
- ১০২৪×৭৬৮ রেজ্যুলুশনের ডিসপ্লে সিস্টেম
ডাওনলোড
নতুন রিলিজটি অফিসিয়াল ISO ইমেজটি এই লিংক থেকে সংগ্রহ করা যাবে। তবে আপনি যদি বাংলাদেশে অবস্থান করেন, আর আপনার যদি একটি ব্রডব্যান্ড কানেকশন থাকে, তাহলে ঢাকাকম লিমিটেড বা জিওনবিডি উচ্চগতির-সার্ভার থেকেও নতুন রিলিজটি সংগ্রহ করতে পারবেন।আর আপনি যদি লিনাক্স মিন্টের পুরাতন রিলিজ হতে নতুন রিলিজে আপগ্রেড করাতে চান, তাহলে অফিসিয়াল এই পদ্ধতিটি অনুসরণ করে দেখুন।
আপাতত এতটুকুই। এক রাতে এই জিনিষ গুলোই ডিসকোভার করলাম লাইভ মুডে। তবে কথা হচ্ছে কোন রিলিজই একদম সয়ংসম্পূর্ণ রিলিজ হবে না, এটিও নয়। এখনও কোন কোন ব্যাপারে এই রিলিজটি সমস্যা করতে পারে। কোন কারণে আপনার কাঙ্খিত আউটপুট হয়তো পেতে ব্যর্থ হতে পারেন। সেক্ষেত্রে সিস্টেম রিপোর্ট খুবই কার্যকরী একটি পদ্ধতি। এতে পরবর্তী আপডেটে এটি ফিক্স হবার সম্ভাবনা বহুগুন বেড়ে যায়। কেউ যদি সত্যিই নতুন ডিস্ট্রো কিংবা লিনাক্স সম্পর্কে ধারণা পেতে চান তাহলে অবশ্যই লিনাক্স মিন্ট একটি আদর্শ ডিস্ট্রো। তবে আমার পরামর্শ থাকবে- হুট করে সিস্টেমে ইন্সটল করার আগে তা লাইভ মুডে ব্যবহার করে দেখুন। এরপর মোটামুটি একটা ধারণা হয়ে গেলে সাহস করে সিস্টেমে ইন্সটল করে দেখতে পারেন।
লেখাটি ক্রিয়েটিভ কমন্স এর CC BY-NC-SA 4.0 আন্তর্জাতিক লাইসেন্স এর আলতায় প্রকাশিত।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন