সোমবার, আগস্ট ২১, ২০১৭

প্রণয়িনী



প্রণয়িনী,
        হৃদয় উজার করা ভালোবাসা নিও। যে অযুত শহস্র মায়ায় ডুবে আছে এই নক্ষত্রমণ্ডলী, সেই একই পরিমাণ মায়া জমা হয় তোমার নামে প্রতিটা মুহুর্ত এই অবুঝ হৃদয়ে। লাগামহীন এই মায়া, এই ভালোবাসা উন্মাদ করে দেয় আমায় মুহুর্তেই। পথ ছেড়ে প্রায়ই বিপথে হাটি তখন, ভুলে যাই উদ্দেশ্য, ভুলে যাই জীবনের লক্ষ্য। তখন কেবলমাত্র তুমিই থাকো আমার সামনে। কিন্তু থাকো ধরা ছোঁয়ার অনেক বাইরে। মরুভূমিতে পথ হারা পথিকের অনুভূতির মত তোমার মরিচিকার পিছনে ছুটে ফিরি তখন।

        জানি, শহস্রবার করে তোমাকে বলেছি 'তোমায় ভালোবাসি', এও জানি এইসব কথা তোমার কাছে মেকি মুদ্রার চেয়ে বেশি কিছু নয়। হয়তো এমন বারংবার "ভালোবাসি" বলায় তুমি হয়ে যাও বিরক্ত। হয়তো মাঝে মাঝে ঘৃণাও চলে আসে মনে। হয়তো আপত্তি থাকে এত শত বার করে "ভালোবাসি" শব্দটা তোমার শ্রবন ইন্দ্রীয়ে ছুঁয়ে যাওয়ায়। কিন্তু তুও বলি- তোমাকেই, শুধুমাত্র তোমাকেই ভালোবাসি। তুমি যখন বিরক্ত হও, তখন তোমার বিরক্তিকে ভালোবাসি। তুমি যখন ঘৃণা কর, তখন তোমার ঘৃণাকে ভালোবাসি। যখন এমন করতে করতে অতিষ্ট হয়ে যাও, তখন অতিষ্ট হওয়া ঐ তোমাকেই ভালোবাসি। এমন কোন মুহুর্ত নেই, তোমার এমন কোন অনুভূতি নেই- যে মুহুর্তটার ঐ অনুভুতি আমি ভালো না বেশে থাকতে পেরেছি। 

        তোমার প্রতিটি 'হুম', 'কিছু না', 'পরে' শব্দ গুলি কতটা রক্ত ক্ষরণ ঘটায় এই হৃদয়ে তা বোধ করি কোনদিনই তোমাকে বোঝাতে পারবো না। তোমার এক একটি 'হুম', এক একটি 'কিছু না', এক একটি 'পরে' শব্দগুলো আমাকে ছুড়ে ফেলে দেয় দিগন্ত সীমানায়। আমি বিকলঙ্গ মানুষের মত খোঁড়াতে খোঁড়াতে ফের এগিয়ে আসি তোমার দিকে। আবারও অব্যক্ত বাক্য ব্যায়ে তোমার নিরাপদ সীমান্ত পার করে তোমাকে ছুঁতে চাই। আবারও তোমার হৃদয় মন্দিরের ঘন্টা বাজিয়ে তোমাকে সজাগ করতে চাই। আবারও চাই তোমার দৃষ্টি সীমানায় নিজেকে নিয়ে আসতে। আর আবারও তুমি আমায় ছুড়ে ফেলো ঐ দিগন্ত সীমার শেষ প্রান্তে!

        তুমি প্রতিনিয়তই নিজেকে আড়াল করে খুব যত্নে তোমার মাঝেই তোমাকে আটকে রাখো। নিজেকে সংরক্ষণ করে রাখো কোন এক অজানা উদ্দেশ্যে, যা আজও আমার কাছে পরিস্কার নয়। তবুও একদিন সকালে অরক্ষিত তোমাকে দেখে বিমোহিত হয়েছিলাম। হয়তো ঘুমিয়ে ছিলে বলেই এত দীর্ঘ সময় তোমাকে দূর থেকেই দেখার সুযোগ পেয়ে বসেছিলাম। ঘুমন্ত তোমার স্নিগ্ধ মুখমণ্ডলের সেই মায়া আমি আজও কাটিয়ে উঠতে পারি নি। কতটা সময় তোমাকে ওভাবে দেখতে দেখতে পার করেছি তা হিসেব করে বলতে পারবো না। কিন্তু সময়টা আমার কাছে দীর্ঘ ছিল। মনে হচ্ছিল অন্ততকাল এভাবেই বুঝি পার করে দেয়া যাবে তোমার ঘুমন্ত চেহারাটা দেখতে দেখতে। 

        তারপর কোন একদিন যখন কোন এক উচ্ছাসের মুহুর্তে তোমার কণ্ঠে একবার, হয়তো ভুল করেই 'ভালোবাসি' উচ্চারণ করে ফেলো। যখন তোমার ঐ ঠোঁটকে স্পর্শ করে 'ভালোবাসি' শব্দটা আওয়াজে রূপান্তরিত হয়। যখন তোমার উচ্চারিত 'ভালোবাসি' শব্দটা বাতাসে কম্পন তুলে এগিয়ে আসতে শুরু করে। তখন আমার দুনিয়াটাতে ঝড় বয়ে যায়। জলোচ্ছাস তৈরি হয় আমার হৃদয় উপকূলে। আনন্দ স্রোতে ভেসে যাই আমি আপন ঠিকানা ভুলে। ঝড়ো বাতাসে উড়ে যাই আমি, অথচ আমার সবকিছু পড়ে থাকে দূর পেছনে। গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে ছুটে বেড়াই। তোমার ঐ এইটুকু কথায় আমি যে কতটা এলোমেলো হয়ে যাই তার হিসেব কখনোই তোমাকে দিতে পারবো না। শুধু জানি, ঐ মুহুর্তে যদি প্রাণ বায়ু ত্যাগ করতে হয় তবে সেটাও হবে আত্মতৃপ্তির!

        হাজার কথায় তোমাকে বিরক্ত করলাম। জানি এইটুকুও বিরক্ত করার অধিকার এখনো আমার হয়নি। তবুও অযাচিত অধিকার প্রয়োগ করে তোমাকে শব্দগুলি উপহার দিলাম। হয়তো শব্দের এতটা জোড় নেই যা আমার আবেগ গুলিকে তোমার পর্যন্ত পৌছে দিতে পারবে। কিন্তু তোমার পর্যন্ত পৌছে দেবার মত এরচেয়ে জোড়ালো কোন পথও আমার চেনা নেই। তবে জেনো, অজস্র নক্ষবিথি বিরামহীন ঘুরে চলেছে আমাদের চারপাশ; আমিও তোমার চারপাশে এভাবেই ঘুরছি। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে তোমার সামনে প্রতিনিয়ত নিজেকে উপস্থিত করে তোমার বিরক্ত করে যাবো। 

        হয়তো অশান্ত মনের উপর এখনো নিজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আসতে পারি নি। তবে একটা সময় ঠিকই নিজের নিয়ন্ত্রণ নিজের কাছেই নিয়ে আসবো। হয়তো সহসাই নয়, তবে খুব দ্রুতই। আর যেদিন নিজের উপর নিয়ন্ত্রণটা চলে আসবে, ঐদিন থেকে তোমার সামনে উপস্থিত হয়ে আর তোমাকে বিরক্ত করবো না। তোমার জন্যে ভালোবাসার কমতি কখনোই হবে না, তবে তোমার বিরক্তি কমাতে আমি নিজেকে কোন এক দূর নক্ষত্রে নিক্ষেপ করবো। এত দূরের নক্ষত্রে যেখান থেকে চাইলেও তোমাকে আর কখনোই বিরক্ত করা সম্ভব হবে না।



        ভালো থেকো প্রণয়িনী, নিজের মত করেই ভালো থেকো। সম্ভব হলে আমার এই বেহায়াপনাকে মন থেকে বাদ দিয়ে নিজেকে শান্তি দিও। তবে জেনো, তোমার শান্তিতেই আমার সকল শান্তি নিহীত। 





ইতি
বেহায়া  যুবক




0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন