বুধবার, আগস্ট ০২, ২০১৭

গল্পঃ ইগো বিফোর থট্‌স


বছর দশেক আগে ছোট একটা ছোট সফটওয়্যার তৈরির মাধ্যমে পরিচিতিতে আসে প্রতিষ্ঠানটি, তবে তখনও অবশ্য প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে পরিচয় দেবার মত অবস্থা ছিল না তাদের। গজিয়ে উঠা আর ১০ টা আইডিয়াকে সফটওয়্যার তৈরির মতই ছিল তাদেরটি। কিন্তু ভাগ্যগুণে তাদের সফটওয়্যারটি খুব দ্রুত জনপ্রিয়তার মুখ দেখতে পায়। বছর ঘুরতেই প্রতিষ্ঠিত নানা সফটওয়্যার ফার্ম সফটওয়্যারটিকে চড়া দামে কিনতে বিভিন্ন প্রস্তাব পাঠায়। কিন্তু ততদিনে সফটওয়্যারটির প্রতিষ্ঠাতা এন্ড্রু ফক্সও বুঝে যায় সফটওয়্যারটির প্রকৃত মূল্য। তাই আর সেটাকে বিক্রির দিকে খুব বেশি আগ্রহ দেখায় না, বরং আরও ঢেলে সাজাতে শুরু করে সফটওয়্যারটি। কয়েক বছর পরেই স্টক মার্কেটে এর স্টকের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে যায়। বলা হয়, শুরুতে যারা খুব কম টাকায়ও একটা স্টক কিনে রেখেছিলেন, তারাও এখন প্রায় মিলিয়নইয়র।

তবে তারা কেবল একটা সফটওয়্যারের পেছনেই আটকে থাকে নি, ব্যবহারকারীর পছন্দ বুঝে ধীরে ধীরে তার সাথে যুক্ত করেছে আরও নানা ধরনের সফটওয়্যার। কয়েক বছর পর অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়াল যে- দুনিয়ার প্রতিটি শহর থেকে খুঁজলে অন্তত একজন পাওয়া যাবে যিনি এই সফটওয়্যারটি নিয়মিত ব্যবহার করে যাচ্ছে। ধীরে ধীরে বাকি সকল আইডিয়া সমৃদ্ধ সফটওয়্যার গুলি এর সামনে নস্যি হয়ে গেল। যারা সুযোগ কাজে লাগাতে চেয়েছে তারা মোটামুটি একটা চুক্তির মাধ্যমে তাদের সুবিধাকে এই সফটওয়্যারটির সাথে জুড়ে দিতে লাগলেন। এভাবে চলতে চলতে যখন ১০ বছর পার করে ফেলল, তখন তাদের চাহিদা আকাশচুম্বী!

ধীরে ধীরে আইডিয়া খুঁজে তাকে প্রতিষ্ঠিত করতে উঠে পড়ে লাগল এন্ড্রু ফক্সের গড়ে তোলা 'ফক্স' প্রতিষ্ঠানটি। সেই ধারাবাহিকতায় প্রথমে আসল বট। বট গুলি মূলত রোবটের মত, তবে এদের কোন ফিজিক্যাল ব্যাপার নেই। মানে এটা পুরোটাই একটা সফটওয়্যার নির্ভর রোবট। নির্দিষ্ট নির্দেশনার ভিত্তিতে এরা বিরামহীন কাজ করে যেতে পারে। বটগুলিও তাদের সফলতার অংশ হয়ে উঠল। আর এরপরই আসল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের আইডিয়াটি।

নির্মাতা, রক্ষণাবেক্ষণ আর সমর্থনের জন্যে তখন ফক্স-এর হাজার খানিকের বেশি এমপ্লয়ি রয়েছে। তবুও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের এই ব্যাপারটি প্রধান নির্মাতা এন্ড্রু ফক্স একদম নিজ হাতে শুরু করেন। অনেকেই তখন কানা-ঘুষা শুরু করেছিল যে এটা হতে যাচ্ছে এন্ড্রু ফক্সের দ্বিতীয় সন্তান! অবশ্য কথাটা যে খুব ভুল বলেছে তাও নয়। যে আগ্রহ আর ধৈর্য নিয়ে তিলে তিলে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সফটওয়্যারটি গড়তে শুরু করেছিল এন্ড্রু তা দেখে যে কারোরই মনে হতে বাধ্য সেটা। প্রথম কয়েক মাস তো নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়েই কাজ করে গেছে সে। তারপর মোটামুটি যখন তার মনে হল সফটওয়্যারটির একটি বেসলাইন তৈরি হয়ে গেছে তখন ডার ডেভেলপার টিমকে ডেকে বুঝিয়ে দিলেন কোন লেভেলে কি করতে চাইছেন তিনি।

মোটামুটি বছর খানিক বাদে তাদের এই প্রজেক্টটি একটা অবস্থানে পৌঁছে গেলো। যদিও একে এখনো সম্পূর্ণ বলার কোন অবস্থান তৈরি হয়নি, কিন্তু বলা যায় এটি তখন এন্ড্রুর স্বপ্নের একটা ধাপে পৌঁছে গিয়েছিল। এন্ড্রু খুব আগ্রহ নিয়ে পুরো সময় তার ডেভেলপার টিমের কাজের তদারকি করে গেছেন, নিজেও কাজ করে গেছেন সমান তালে। প্রাথমিক ভাবে তার এই দ্বিতীয় সন্তানের একটি রূপ তারা কিছুদিনের মাঝেই টেস্ট করতে যাচ্ছিল। কিন্তু বাদ সাধল তার সহকারী এবং ডেভেলপার টিমের ম্যানেজার ওয়ালেস রাসেল। যদিও এই প্রজেক্টের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সে এর সাথেই কাজ করে গেছে, তবুও টেস্ট রিলিজের জন্যে সে বেঁকে বসল। তার কথা- এটি এখনো টেস্ট করার জন্যেও প্রস্তুত নয়। আর পরামর্শ দিল- একে সিমুলেট করে টেস্ট করার জন্যে।

এন্ড্রু'র এতদিনের স্বপ্ন যখন প্রায় সফলতার কাছাকাছি, তখন এমন বক্তব্য শুনে সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে নি। একদম রাগের মাথাতেই ওয়ারলেসকে বের করে দিলেন ফক্স থেকে। ওয়ারলেসও একদম বিনা বাক্যে বের হয়ে গেলেন সেখান থেকে। ঘটনার পর থেকে অনেকেই ওয়ালেসের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কিছু একটা শোনার জন্যে উঠে পড়ে লেগে থাকে, কিন্তু ওয়ালেস এই ব্যাপার নিয়ে কোথাও মুখ খোলেন নি। একই সাথে প্রতিষ্ঠিত অনেক ফার্ম থেকেই লোভনীয় প্রস্তাব পাঠানো হয়, এসবকেও এড়িয়ে যান ওয়ালেস। কিছুদিন পর একদমই আলোচনার আড়ালে পড়ে যান তিনি।

কয়েক মাস বাদে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের টেস্ট বিল্ড তৈরি হয়ে যায়। অনেকেই এই ব্যাপারটির জন্যে এখন মুখিয়ে আছে। এন্ড্রুও খুব ঢাক-ঢোল পিটিয়ে তার নতুন প্রজেক্টের টেস্ট রিলিজের খবর সবাইকে জানায়। এমন নয় যে এই একই আইডিয়া নিয়ে আর কেউ তখন কাজ করছিল না, কিন্তু তবুও তার এই আইডিয়াটি অন্য সবার থেকে আলাদা অবস্থান পায় তার পূর্ববর্তী কাজের জন্যে। সবাই ধরেই নিয়েছিল এন্ড্রুর হাত ধরে পৃথিবী-বাসী আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের দুনিয়াতে প্রবেশ করত যাচ্ছে।

নির্দিষ্ট সময়েই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সকে দুটো উন্নতমানের বিশেষ রোবটের মাঝে স্থাপন করা হয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাদের একটি বিশেষ রুমেও আবদ্ধ করা হয়। তবে রোবট হলেও দুটো হাত আর মাথা ছাড়া তাদের আর কোন অঙ্গ দেয়া হয়নি। দুটো রোবটকে সামনা-সামনি বসিয়ে দিয়ে চালু করে দেয়া হয় তাদের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্রেইন!

প্রথম আধঘণ্টা সিস্টেম বুট-আপ, রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, মেমরি সিনক্রোনাইজেশন, প্রাইমারি ডেটা রিয়েলাইজেশন সহ আরও নানা কাজ করতে করতেই কেটে যায়। দেখে মনে হচ্ছিল দুটো অসাড় বস্তু মুখোমুখি বসে আছে। আমন্ত্রিত অতিথি যারা সরাসরি এটা পর্যবেক্ষণ করতে সেখানে উপস্থিত ছিলেন তাদের মাঝে কয়েকজন টিপ্পনীও কাটতে শুরু করেছিল ততক্ষণে। ঘুরেফিরে এন্ড্রুর কানেও ওসব কথা চলে আসছিল, তবে এন্ড্রু সেসব নিয়ে মোটেই ভাবছিল না। সিস্টেম কন্ট্রোল এন্ড মনিটরিং এর দিকে বেশ মনোযোগ ধরে রাখছিল সে। সে মনে প্রাণে বিশ্বাস রাখে তার কাজের উপর। সে জানে, সময় নিয়ে হলেও তার আইডিয়াটি এখন বাস্তবতার আয়নায় প্রতিফলিত হবে।

আর হলও তাই, আধ ঘণ্টা পরই রোবট দুটো প্রায় একই সাথে ফটো সেলের আলো জ্বালিয়ে কৃত্রিম চোখ দুটো মেলে চাইতে শুরু করল। প্রায় অবিকল একজন আরেকজনকে দেখে কিছুটা অবাক হওয়ার ভানও ফুটিয়ে তুলল তাদের কৃত্রিম চেহারা দুটোতে। বেশ অনেকটা সময় নিজেকে আর নিজের সামনে বসে থাকা অবিকল তার মতই দেখতে আরেকটি রোবটকে উভয়ে পর্যবেক্ষণ করে কাঁটাল।

ওভাবে কিছু সময় কাটাবার পর তারা তাদের হাত দুটোর কার্যক্ষমতা দেখতে শুরু করল। একটা বাচ্চাকে হুট করে বড় মানুষের শরীরে ঢুকিয়ে দিলে যেভাবে সে নিজেকে আবিষ্কার করে অবাক হয়, ঠিক ঐরকমই একটা অবাক চাহনি নিয়ে নিজেকে নিজে তারা আবিষ্কার করছিল। আঙ্গুল গুলো নেড়ে, হাতের কব্জি এদিক সেদিক বাঁকিয়ে, মুঠো করে আবার ছেড়ে দিতে দিতে হাত নাড়াচাড়া করতে লাগল। উল্টে পাল্টে বারবার নিজেদের হাত গুলো দেখছিল তারা। এরপর একজন হাত দিয়ে নিজের কৃত্রিম চেহারাটকে ছুঁয়ে দেখতে শুরু করল, একজনের দেখা দেখি আরেকজনও একই কাজ করতে শুরু করল। চোখ, মুখ, ঠোট, গাল, মাথা সব একে একে হাত বুলিয়ে, আঙ্গুলে ছুঁয়ে বুঝে নিতে শুরু করল।

সবচেয়ে মজার ব্যাপারটি ঘটল যখন তারা তাদের স্পিকিং সিস্টেমটিকে ব্যবহার করতে শুরু করল। সাধারণত প্রোগ্রাম গুলিতে একটা সাধারণ ভাষা ইন্সটল করে দেয়া হয়। কিন্তু এটি সাধারণ কোন প্রোগ্রাম নয়, এটি একটি বিশুদ্ধ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরির একটি পদক্ষেপ। বলতেই হবে, এন্ড্রু এখানেই দারুণ একটা মুনশিয়ানার পরিচয় দিয়েছে। সে তার সিস্টেম মডেলিং এর সময় প্রাথমিক কোন ভাষা সরাসরি ব্যবহারের নির্দেশনা দেয়নি। যদিও সিস্টেম লাইব্রেরিকে ইংরেজি ভাষাটা ব্যবহারের জন্যে আলাদা কিছু অনুমতি দিয়ে রেখেছিল। তবে সেটা সরাসরি নিজে নিজে ব্যবহারের জন্যে একদম শুরুতেই দেয়া হয়নি। ব্যাপারটা অনেকটা বাচ্চাদের মত, ওরা যেমন একদম শুরু থেকেই কোন শব্দের ব্যবহার করতে পারে না, ঠিক তেমনি এই বিশেষ আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্ট রোবট দুটিও। ওদেরও নির্দিষ্ট করে দেয়া কোন ভাষা ছিল না। ওদেরকেও নিজে নিজে এটা রপ্ত করতে হবে। আর কেবল এরপরই তারা ঐ ভাষায় নিজের পরিধি অনুসারে কথায় ব্যবহার করতে পারবে।

যখন আমন্ত্রিত পর্যবেক্ষকরা এটা বুঝতে পারল তখন তাদের অবাক হওয়ার মাত্রাটা একদম চুড়ায় গিয়ে পৌঁছেছিল। কেউ কেউ এটাকে একটা মূর্খতা বলতে শুরু করল, আর কেউ কেউ সত্যিই এই আইডিয়াটা দেখে চমৎকৃত হলেন। তবে ঐদিনের মত আর ওখানে বসে থাকার কোন মানে ছিল না। প্রায় ৩ ঘণ্টার একটা শো শেষ করে সবাই ফক্সের প্রেজেন্টেশন রুম ত্যাগ করল। তবে ত্যাগ করলেও পর্যবেক্ষণ থেমে গেলো না। এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্ট রোবট দুটোর কার্যক্রম সরাসরি দেখবার জন্যে ইতোমধ্যে ফক্স একটি প্রাইভেট লিংক লাইন তৈরি করে নিয়েছিল। আমন্ত্রিত অতিথিদের সবাইকে সেই লিংক লাইনে যুক্ত করে নেয়া হয়েছিল আগে থেকেই। এখন যতক্ষণ এই এ.আই রোবট দুটোর কার্যক্রম চলবে ততক্ষণ যে কোন সময়ই যে কোন স্থান থেকে অতিথিরা এর কার্যক্রম দেখে যেতে পারবে।

প্রায় ৭ দিন পার হবার পর ধীরে ধীরে এ.আই. রোবট দুটো কথা চালাবার মত বেশ অনেকগুলি শব্দ রপ্ত করতে শিখে গিয়েছিল। আস্তে আস্তে তাদের লাইব্রেরি পারমিশন গুলো ব্যবহার করে লাইব্রেরি হতে তাদের মেমরিতে ডেটা ট্রান্সফার করতে শুরু করেছে ততদিনে। প্রায় সকল এনালাইসিসের ফলাফল পজিটিভ দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে দেখে পুরো টিম যারপরনাই খুশি। তাদের আনন্দটা ছিল দেখবার মত। আর এন্ড্রু! সে যেন  কাঁচ ঘেরা পর্দার এপাশে বসে নিজ দু'সন্তানকে কাচের ওপাশে দেখছিল। ঠোটের কোনের হাসি যেন তার পিছুই ছাড়ছিল না!

১৫ দির পার হবার পর বেশ কিছু বাগ জমা পড়ে, কিছু আপগ্রেডিং এর আইডিয়াও এক একজনের মাথায় আসতে থাকে। এর মাঝে এ.আই. রোবট দুটোকে তাদের ফক্সের প্রাইভেট সার্ভারের এক্সেস দেয়া হয়। সেখানে শেখার জন্যে ইতিহাস, ভাষা, ভূগোল, অর্থনীতি, বিজ্ঞান এমনকি গল্পের বইও দেয়া হয়। দেয়া হয় বিশাল এক মিউজিকের কালেকশন। আরও দেয়া হয় চলচ্চিত্র, গুরুত্বপূর্ণ স্থিরচিত্রের বিশাল এক সংগ্রহ। তারা এসবের প্রায় প্রতিটিকেই ছুঁয়ে দেখেছে। এ. আই. হিসেবে তাদের একটি দ্রুত কাজ করার প্রসেসর থাকায় মানুষের তুলনায় বেশ অনেক দ্রুতই তারা অনেক বিষয় আয়ত্ত করতে শিখেছিল। অবশ্য এটা অনুমেয় ছিল।

কিন্তু যেটা অবাক করেছে তা হল তাদের মিউজিকের পছন্দ! এ.আই. রোবট দুটোর আলাদা আলাদা মিউজিক পছন্দ ছিল। একটি রোবট খুব উচ্চতালের গান বার বার শুনতে লাগল। একই ধরণের গানগুলিকে আলাদা করে সেগুলিকে শুনতে লাগল। আর অন্যটি ঠিক তার বিপরীত কাজ করতে শুরু করল। সে তুলনামূলক হালকা তালের গানগুলিকে বেঁছে নিলো। বেছে বেছে একটা প্লে-লিস্ট তৈরি করে ঐ গান গুলিই বারবার করে শুনল সে। সে যখন গান শুনত, তখন অবিকল মানুষের মত করে চোখ বন্ধ করে সুর গুলিকে শুনত। যেন সুর গুলো তার চিন্তা-ভাবনা ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

তবে এর থেকেও বড় অবাক হবার বিষয়টি এখনো তাদের জন্যে অপেক্ষা করছিল। ব্যাপারটি ধরা পড়ল প্রায় মাস খানিক পর। যারা রোবট দুটোকে নিরীক্ষণ করছিল তারা প্রথমে ব্যাপারটাকে ধরতেই পারে নি। আর ব্যাপারটি সত্যিই খুব সাধারণ ছিল। এত সাধারণ যে সেটাকে এমনিতে কেউ আমলেই নিতো না। কিন্তু এনালাইসিস করে ধীরে ধীরে পর্যবেক্ষকদের কাছে ব্যাপারটা ধরা পড়ে।

বাচ্চারা যেমন কথা বলবার সময় একটি শব্দের বদলে অন্য আরেকটি সুবিধাজনক শব্দ ব্যবহার করে, চাই সেটা আদৌ কোন শব্দ হোক কিংবা না হোক। ঠিক প্রায় একই রকম করে রোবট দুটোও ক্রমাগত ভুল করে যাচ্ছিল। আর সময়ের সাথে যেন ভুলের পরিমাণও ক্রমাগত বেড়ে যাচ্ছিল। শেষের দিকে তো এমন অদ্ভুত শব্দ প্রয়োগেই তারা প্রায় কম্যুনিকেট করতে শুরু করল নিজেদের মাঝে। প্রথমে এনালিস্টরা ওটা তাদের শব্দের সীমাবদ্ধতা হিসেবেই ধরে নিয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘসময় এনালাইসিস করার পর নিরীক্ষকেরা বুঝতে পারল এটি আসলে ভুল নয়! এটি একটি নতুন ডেভেলপ করা ভাষা! যা কোন মানব সভ্যতার অংশ নয়‍!!

ওদিকে লাইভ টেলিকাষ্টেও সেটা পৌঁছে গিয়েছিল সকল আমন্ত্রিত অতিথিদের কাছে। তারাও একটা সময় এ.আই. রোবট দুটোর এমন অদ্ভুত আচরণ দেখে অবাক হতে শুরু করেছিল। আর তাদের এনালাইসিস টিম গুলোও এটা নিয়ে নিজেদের মতামত তখন নানা মিডিয়াতে প্রকাশ করতে শুরু করেছিল। আর এই অবস্থাটাই বেশ বেসামাল করে দেয় ফক্স কোম্পানিটিকে।

এন্ড্রুর বুঝতে অসুবিধা হল না কি ঘটছে সুরক্ষিত কাঁচের দেয়ালের ওপাশে। এ.আই. রোবট দুটো নিজেদের জন্যে আলাদা ভাষা তৈরি করে নিয়েছে নিজেদের সুরক্ষার জন্যে। আর ভাষাটা এমনভাবেই তৈরি করেছে যে ওটা এখন পর্যন্ত ডিকোড করা সম্ভব হয়নি। অবস্থাটা আবিষ্কারের পর প্রায় ৩ দিন পার হয়ে গেছে। ফক্সের স্পেশাল ডিকোডার টিম এটি নিয়ে এখনো আশার আশ্বাস দিতে পারে নি। তারা এখনো বুঝতেই পারছে না ঠিক কোথা থেকে পিক করতে হবে।

মিডিয়ার চাপ, টেক দুনিয়ার বিশেষজ্ঞদের মতামত আর জাতীয় পর্যায়ের সিকিউরিটির নির্দেশনায় অবশেষে ৪৮ দিনের মাথায় রোবট দুটোকে বিকল করতে হয়। এন্ড্রু বেশ ভালো করেই বুঝেছিল এরচেয়ে বেশি সময় অপেক্ষা করাটাও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। শুধুমাত্র লিমিটেড রিসোর্স ব্যবহার করেই এ.আই. রোবট দুটো যা করতে সক্ষম হয়েছে তার বিপরীতে যদি পুরো ইন্টারনেটটা তাদের হাতে পেয়ে বসে তাহলে আর তাদের অগ্রগতির কথা কল্পনা করাও অসম্ভব। এতদূর এসে ওয়ালেস রাসেলের কথা তার মনে পড়ল। বুঝল কত বড় ভুল সে করে গেছে প্রিয় বন্ধু আর সহকর্মী ওয়ালেসের কথাটা না শুনে। শুধুমাত্র রাগ আর জেদের বসে সে পুরো ব্যাপারটিকে বুঝে নিতে অসমর্থ হয়েছিল। আর তার খেসারত দিতে হচ্ছে এখন পুরো ফক্স কোম্পানিকে। যারা আশা করে ছিল এই এন্ড্রু ফক্সের হাত ধরেই পৃথিবী আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের দুনিয়াতে পদার্পণ করবে, তারাই এখন বলে বেড়াচ্ছে এন্ড্রু দুটো মারণাস্ত্র তৈরি করেছে দুনিয়ার জন্যে! তাদের বিশ্বাস আর আস্থা এখন পুরোপুরি উবে গেছে ফক্সের উপর থেকে।

অবিচারের প্রতিফলন বুঝি এভাবেই দৃশ্যমান হয়। ওয়ালেস রাসেলের প্রতি অবিচার আজ বিশ্ববাসীর কাছে বিশ্বাস হারা করেছে এন্ড্রু ফক্সকে!








লোকেশন: Dhaka, Bangladesh

0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন