সোমবার, ডিসেম্বর ১২, ২০১৬

শক্তিশালী কিছু স্থিরচিত্র :: ২য় খণ্ড

          অনেক বড় একটা গল্পকে মাত্র এক পলকে বোঝাতে পারে শুধুমাত্র হাতে গোনা কিছু স্থিরচিত্র। অনেক সময় শত শত সেমিনার করেও যা মানুষকে বোঝানো যায় না তা নিমিষেই বুঝে নেয় একটি চিত্রের মাধ্যমে। 

পূর্বে "শক্তিশালী কিছু স্থিরচিত্র" শিরোনামের একটি পোষ্টে কিছু ছবি পোষ্ট করা হয়েছিল। সে ধরণের আরও কিছু ছবি নিয়ে আজকের আয়োজন।



ইথিওপিয়ার এ্যাবোর (Erbore) উপজাতি গোষ্ঠীর একটি শিশু


ইথিওপিয়ার মুরসি (Mursi) গোষ্ঠীর এক উপজাতি নারী প্রথমবারের মত Vouge ম্যাগাজিনে চিত্রায়িত ছবি দেখে বহির্বিশ্বের নারীদের আবিষ্কার করছে


কসভো যুদ্ধের শরণার্থীদের একটি ক্যাম্পের কাঁটাতারের ফোঁকর দিয়ে একটি শিশুকে তার প্রপিতামহের হাতে তুলে দেবার সময়কার ছবি

নেশায় বুদ হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা এক বাবাকে রাস্তা হতে তুলে বাড়ি নিয়ে যাবার আপ্রাণ চেষ্টায় লেগে থাকা এক সন্তানের চিত্র

সিরিয়ার শরণার্থী শিবিরে অবস্থানকারী শিশুরা নিজ নিজ পাত্রে তাদের পরিবারের জন্যে পানি সংগ্রহ করার কাজ করছে

রোমানিয়ার ব্যুকারেস্ট (Bucharest) শহরে দাঙ্গার সময়ে পুলিশ ব্যারিকেড তৈরি করে আক্রমণাত্মক অবস্থায় গেলে স্থানীয় এক শিশু 'হৃদয় আকৃতির (heart-shaped)' একটি বেলুন এক পুলিশ সদস্যের হাতে তুলে দেয়। পরবর্তীতে ঐ হৃদয় আকৃতির বেলুন হাতেই পুলিশ সদস্যকে ব্যারিকেড তৈরি করে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়

২০১২ সালে মিশরের কায়রোতে বিক্ষোভ চলাকালীন সময় এক তরুণ বিক্ষোভকারী নিরাপত্তা প্রহরীদের লক্ষ করে পাথর ছুড়ে মারছে

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ (Kiev)-এ পুলিশ এবং বিক্ষোভকারীদের মাঝে অবস্থিত এক জ্বলন্ত ব্যারিকেডের সামনে দাড়িয়ে আছে একজন বিক্ষোভকারী

২০১১ সালের এপ্রিল মাসে অ্যালাব্যামায় কনকর্ড শহরে টর্নেডোর আঘাতে ধ্বংস প্রাপ্ত নিজ বাড়ির সামনে দাড়িয়ে এক মা তার সন্তানকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন

২০১১ সালের আগস্ট মাসে লন্ডনের ক্রোয়িডন (Croydon) শহরে দাঙ্গার সময় আকস্মিক আগুন লেগে যাওয়া এক দালানের দ্বিতীয় তলা (first-floor) হতে ঝাপ দিচ্ছেন দালানে অবস্থানকারী এক মহিলা

২০১১ সালের অক্টোবর মাসে ব্যাংককের উপকণ্ঠে অবস্থিত র‍্যাঙ্গিট শহর বন্যার পানিতে প্লাবিত হলে এক মহিলা ল্যম্পপোষ্ট আঁকড়ে ধরে নিজেকে ভেসে যাওয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখবার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন

এক সন্তান প্রথমবারের মত ছুঁয়ে দেখছে তার বাবাকে। লোকটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের সামরিক বাহিনীর কাছে যুদ্ধবন্দী হিসেবে ছিলেন

জন এফ. কেনেডি জুনিয়র, সকলের সাথে নিজ বাবার কফিনের প্রতি স্যালুট দিয়ে বিদায়ী অভিবাদন জানাচ্ছে

১৯৪০ সালের ১লা অক্টোবর মাসে কানাডার নিউ ওয়েস্টমিনস্টার হতে চিত্রগ্রাহক ক্লড পি. ডেটলফ ((Claude P. Dettloff)) "আমার জন্যে দাড়াও বাবা / Wait For Me Daddy" - শিরোনামের এই ছবিটির তুলেছিলেন

এক ফ্রেমে বন্দী ফিদেল কাস্ত্রো ও চে-গুয়েভারা'র একটি হাস্যোজ্জ্বল ছবি


রিও ডি জানিয়েরো কাছাকাছি এক স্থানে সর্বনাশা ধ্বসে মারা যায় এক ব্যক্তি। তাকে সমাহিত করার পরের দিনেও তার পোষা কুকুরটিকে তার সমাধির পাশে বসে থাকতে দেখা যায়

════════════════════════════════════
চিত্র এবং তথ্যসূত্রঃ আন্তঃজালিকা হতে সংগ্রহীত

বুধবার, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৬

অনুবাদ গল্পঃ আনন্দ আর দুঃখবোধ



          চমৎকার এক বাগান বাড়ির মালিক ছিলেন এক লোক। রুচি আর সাধ্যের সংমিশ্রণে তিলে তিলে গড়ে তুলেছিলেন তার সাধের বাড়িটিকে। শুধুমাত্র চমৎকার উপমা দিলে হয়তো বাড়িটির প্রশংসায় ভাটা পড়বে, তাই বাড়িটির সৌন্দর্যের সম্মানার্থে একে অপূর্ব আলয় বলা যেতে পারে।

গ্রামের অনেকেই ঐ বাগান বাড়িটি মালিকানায় পাবার জন্যে বেশ আগ্রহী ছিল। শুধু যে ঐ গ্রামের লোকেরাই আগ্রহী ছিল তাও নয়, বরং আগ্রহীদের তালিকায় ছিল দূর দূরান্তের অনেক নামী-দামী আর প্রভাবশালী লোকেরাও। কিন্তু বাড়ির মালিক বাড়িটিকে এত ভালোবাসতেন যে সকল আগ্রহীদের সব ধরণের প্রস্তাব সে বারংবারই নাকচ করে আসছিলেন অনেক লম্বা সময় ধরে।

একবার এক বিশেষ কাজে তাকে দিন কয়েকের জন্যে যেতে হল শহরে। শহরের কাজ শেষে দিন কয়েক বাদে ফিরছিলেন নিজ নিবাসে। পথিমধ্যে শুনতে পেলেন তার শখের বাগান বাড়িটিতে কিভাবে যেন আগুন লেগে গেছে। আর সে খবর শুনে সকলকেই ছুটতে দেখলেন সেদিকে। সখের বাড়িটিতে আগুন লাগবার খবর শোনামাত্র লোকটি যেন উড়ে চলল বাড়ির দিকে।

বাগান বাড়ির কাছাকাছি পৌছে দেখলেন শ'য়ে শ'য়ে লোক ভীর করেছে বাড়িটিকে ঘেরাও করে। কিন্তু কারোই এখন আর কিছু করার নেই, আগুন ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বাড়িময়। সত্যি বলতে সবই মিলে যদি এখন হাতও লাগায় তবুও বাড়িটিকে আর উদ্ধার করা সম্ভব হবে না। সকলের চেষ্টার বিপরীতেও মিলবে পোড়া বাড়ি আর জ্বলে-পুড়ে ভস্ম হয়ে যাওয়া আসবাব পত্র। টুকরো কোন বস্তুই ঐ বাড়ি থেকে আর অক্ষত অবস্থায় ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। আর সেটা বুঝতে পেরেই সকলে তাদের অহেতুক চেষ্টা থেকে নিজেদের বিরত রেখেছে।

জ্বলতে থাকা বাড়িটির দিকে নিঃস্বের মত তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই যেন করার থাকল না। বাকি সবার মত সেও দাড়িয়ে দাড়িয়ে তিলে তিলে গড়ে তোলা নিজের স্বপ্ন কুটিরটির পুড়ে যাওয়া দেখতে লাগলেন।

এরই মাঝে লোকটির বড় ছেলেকে দৌড়ে তার দিকে আসতে দেখলেন। দৌড়ে আসার কারণে ঠিক মত কথাও বলতে পারছিল না ছেলেটি। কোনরকমে বাবার কাছে পৌঁছে বলতে লাগল- "আব্বা, আপনি বাড়িটার জন্যে মোটেই মনে কোন কষ্ট নেবেন না। আপনি চলে যাবার পর এক ভদ্রলোক এসেছিলেন বাড়িটি কেনার জন্যে। অন্য সকলের তুলনায় প্রায় চার গুন দাম বলেছিলেন তিনি। এ বাজারে এত দাম দিয়ে অন্য কেউ বাড়িটিকে কেনার কথা চিন্তাও করবে না। তাই আর আপনার ফিরে আসার অপেক্ষা না করে ঝটপট সিদ্ধান্ত নিয়ে বাড়িটি আমি তার কাছে বিক্রি করে দেই। আমি মনে করছিলাম ফিরে এসে আপনি এ কথা শুনে রাগ করলেও আমাকে আমার এমন সিদ্ধান্তের জন্যে ক্ষমা করবেন।"

বড় ছেলের এমন কথায় বাবা যেন আপন স্বস্তির নাগাল খুঁজে পেলেন। একটু চুপ থেকে বললেন, "খোদাকে ধন্যবাদ, তোমাকে এমন উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করার জন্যে!" স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে আবারও তিনি বাড়িটির দিকে তাকিয়ে রইলেন। তার সাধের বাড়িটি এখনো পুড়েই চলেছে।

অল্প কিছু সময় পরই দেখলেন তার মেঝ ছেলে আরেক দিক থেকে দৌড়ে আসছে তার দিকে। কাছে এসেই আক্ষেপ আর কর্তৃত্ব মিশ্রিত কণ্ঠে বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগল, "আব্বা, আপনি কি করছেন? বাড়িটি পুড়ে ভস্ম হয়ে যাচ্ছে আর আপনি এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছেন? আপনি না প্রায়ই বলেন যে এ বাড়িটিকে আপনি আমাদের চেয়েও বেশি ভালোবাসেন; তাহলে এমন নির্বাক হয়ে কিভাবে আপনি বসে থাকছেন বলেন তো শুনি?"

বাবা যেন মেঝ ছেলের এমন কথায় কিছুটা কৌতুক খুঁজে পেয়েছেন এমন করে একটু হাসলেন। তারপর বললেন, "আরে বোকা, তুমি কি জানো না যে গতকালই তোমার বড় ভাই এই বাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছে?" বাবার উত্তর শুনে মেঝ ছেলে বলল, "সে ব্যাপারে জানি, কিন্তু বাড়িটি কিন্তু এখনো পুরোপুরি বিক্রি হয়ে যায় নি। বড় ভাই আপনার সিদ্ধান্ত নেবার জন্যে বাড়িটি ঐ ভদ্রলোকের কাছে বিক্রি করার আশ্বাস দিয়েছে মাত্র। আর বড় ভাইয়ের আশ্বাসের প্রতিরূপে লোকটি কেবল কিছু অগ্রিম টাকা দিয়ে বাড়িটির বিক্রয় চুক্তি নিশ্চিত করে রেখেছেন। বিক্রির পুরো টাকা এখনো আমাদের হাতে আসে নি! কিন্তু এখন তো এখানে ছাই ছাড়া আর কিছুই মিলবে না, ভদ্রলোক নিশ্চই কেবলমাত্র এই মূল্যহীন ছাই কেনবার জন্যে এতগুলি টাকা পরিশোধ করবেন না!"

যে কান্না শুরু হবার আগেই থেমে গিয়েছিল, এসব শোনার পর তা যেন জলোচ্ছ্বাসের রূপ নিলো। স্বস্তির সাথে হৃদয়টাও যেন টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ল চারিদিকে। ডুকরে কেঁদে উঠলেন তিনি; যতটা না বাড়িটিতে আগুন লাগবার শোকে, তারচেয়ে বেশি বাড়ি মূল্য আর আপন স্বস্তি খুইয়ে ফেলবার দুঃখে আর্তনাদ করে কাঁদতে লাগলেন। আশে পাশে লোকজনও যেন এবারে লোকটির এমন কান্না দেখে স্বস্তি খুঁজে পেল। কেউ কেউ দূর থেকেই সান্ত্বনা বাক্য ছুড়ে দেবার বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছিল। কিন্তু এবারে যে আগুনের কারণে কান্নার সৃষ্টি তা আর সান্ত্বনা বাক্যে বন্ধ হবার নয়।

এরই মাঝে লোকজনের ভিড় ছেলে উদয় হল লোকটির ছোট ছেলে। বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল, "আব্বা, এভাবে কাঁদবেন না। আর বাড়িটির জন্যেও দুঃখ করবেন না। বাড়িটি সত্যিই আর আর আমাদের নয়"। ছোট ছেলে ছেলে সান্ত্বনা দিচ্ছে ভেবে লোকটি বললেন, "নারে বোকা! আমাদের বাড়িটিই পুড়ছে তোমার চোখের সামনে। আর পোড়া বাড়ি কখনোই বিক্রি হয় না। বাড়ির এমন দশা দেখে অগ্রিম টাকাও নিশ্চিত ফিরিয়ে নিতে আসবেন ঐ ভদ্রলোক।"

ফের ছোট ছেলে বলল, "আব্বা, আপনি ভুল বুঝছেন। আপনি এখনো আমার পুরো কথাটি শোনেন নি। বাড়িতে আগুন লাগবার ঘটনা শুনে ভদ্রলোক কিছুক্ষন পূর্বে আমার সাথে যোগাযোগ করেছেন। তিনি তার দেয়া কথা রাখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন আমায়। বলেছেন- 'আগুন লাগুক কিংবা না লাগুক ঐ বাড়ির মালিকানা কেবলই আমার, এবং আমি অবশ্যই চুক্তি অনুযায়ী বাড়ির ক্রয়মূল্য তোমাদের পরিশোধ করব। ভাগ্যের ব্যপারে কারও কোন হাত থাকে না, বরং তা ওপর-ওয়ালাই নির্ধারন করে দেন। আমি কিংবা তোমরা কেউই আগে থেকে জানতাম না ঐ বাড়ির ভাগ্যে কি রয়েছিল। যেহেতু চুক্তির পর বাড়িটি আগুনের স্পর্শ পেয়েছে, অতএব সে আগুনে পুড়ে যাওয়া বাড়ির মালিকানাও আমার ভাগেই পড়ে। তাই তোমরা ঐ দুর্ঘটনা নিয়ে মোটেও কোন চিন্তা করো না। আমি যথা-দ্রুত সম্ভব বাড়িটির মূল্য পরিশোধ করব'।"

কথা শুনে লোকটির জলোচ্ছ্বাস থামলেও অশ্রু যেন আর বাধে আটকে রাখা যাচ্ছিল না। অশ্রুসিক্ত নয়নেই বোকার মত দাড়িয়ে কেবল বাড়িটির পুড়ে যাওয়া দেখতে লাগল সকলে মিলে।





⚍⚌⚎⚌⚍⚌⚎⚌⚍⚌⚎⚌⚍⚌⚎  নীতিনিষ্ঠ মূল্যায়ন  ⚍⚌⚎⚌⚍⚌⚎⚌⚍⚌⚎⚌⚍⚌⚎

মনব চরিত্রের বৈশিষ্ট্য নিরূপণ দারুণ এক জটিল কাজ। গল্পের বাগান বাড়ির মালিক যদিও তার সন্তানদের তুলনায় তার বাড়িটিকে অধিকতর ভালোবাসতেন, তবুও তিনি স্বস্তি খুঁজে পেয়েছিলেন এই জেনে যে বাড়িটির মালিকানার ভার এখন আর তার নেই। যদিও পূর্বে কোনভাবেই তিনি বাড়িটিকে বিক্রি করতে সম্মত ছিলেন না। কিন্তু যখন চোখের সামনে বাড়িটির সৌন্দর্য ধীরে ধীরে হারাতে লাগল, তখন তিনি ভালোবাসা আগলে রেখে কেবল বাড়ি বিক্রির অর্থের দিকে চেয়ে সান্ত্বনা খুঁজে পেয়েছিলেন। কিন্তু পরমুহুর্তে যখন জানতে পারলেন বাড়ির সৌন্দর্য আর মূল্য দুটোই তিনি হারাচ্ছেন তখন আর নিজের দুঃখের লাগাম টেনে ধরতে পারেন নি, ভেঙ্গে পড়েছিলেন নিমিষেই। এরপর যখন আবারও ছোট ছেলের কাছ থেকে পরবর্তি ঘটনা জানলেন তখন দুঃখ, সান্ত্বনা এবং কৃতজ্ঞতা বোধ সবই তার উপর ভর করে ছিল।

গল্পের মতই মানুষের আনন্দ আর দুঃখবোধ সময় আর ঘটনা প্রবাহের সাথে পরিবর্তিত হয়। ভালোবাসার অধিকার অর্জন আর হারানোর অনুপাতের দাঁড়িপাল্লায় হিসেব করে প্রকাশ পায় এক এক জনের অনুভূতি। গুরুত্বের পানসি জোয়ার-ভাটার টানে ঘুরে বেড়ায়, এগিয়ে যায়, পিছিয়ে যায় কিংবা থেমে থাকে নিজের জায়গায় নোঙ্গর ফেলে। একই ঘটনা ঘটে আত্মীয়তা আর বন্ধুত্বের সম্পর্কে।

তাই কারও আচরণ দেখে বিচার করবার আগেই ভাবতে হবে তার আচরণের পেছনে ঘটে যাওয়া বা ঘটতে থাকা কারণ গুলো নিয়ে। বুঝতে হবে তার উচ্ছাস কিংবা নিস্তব্দতার কারণ। আর এরপরই কেবল একজন মানুষের আচরণের বিপরীতে তার প্রকৃত মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে।





বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ০১, ২০১৬

ইনফার্নোঃ উপন্যাস বনাম চলচ্চিত্র

ধরুন চোখ মেলে আপনি নিজেকে আবিষ্কার করলেন কোন এক হসপিটালের বিছানায়। স্মৃতি আঁকড়ে ধরে মনে করার চেষ্টা করছেন ঠিক কি কারণে আপনি কখন হসপিটালে আসলেন। কিন্তু চেষ্টা করেও কিছু মনে করতে পারলেন না। তখনই হঠাৎ করে হসপিটালের জানালা গলে আপনার দৃষ্টি ছড়িয়ে পড়ল। বুঝতে পারলেন আপনি আছেন ভিন্ন কোন এক শহরের অজানা কোন এক হসপিটালের বিছানার উপর।

বলুন তো, ঠিক এমন একটা পরিস্থিতিতে কতটা অসহায় বোধ হবে আপনার?

এমন একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গল্পের শুরু হবে রবার্ট ল্যাংডনের সাথে। একজন প্রখ্যাত সিম্বলিষ্ট হঠাৎই নিজেকে আবিষ্কার করবেন এক হসপিটালের বেডে যে হসপিটালটি তার নিজের দেশে নয়, বরং রয়েছে ভিন্ন আরেক দেশে। সাথে রয়েছে মাথার যন্ত্রণা আর টুকরো টুকরো স্মৃতি ও স্বপ্নের মিশ্রণ। যদিও এই স্বপ্নটাকে আপনি কোনভাবেই সাধারণ স্বপ্ন বলতে পারবেন না, তারচেয়ে বরং স্বপ্ন গুলোকে দুঃস্বপ্ন বলা যেতে পারে।

দায়িত্বরত ডক্টরের কাছ থেকে জানতে পারলেন আপনাকে কোন এক ক্যাব হসপিটালের ইমার্জেন্সি সেকশনে ছেড়ে গেছে, কিন্তু যখন ছেড়ে গিয়েছিল তখন আপনি ছিলেন আপনার নিজেরই রক্তে চপচপে ভেজা! জানতে পারলেন এই রক্তের উৎস আপনার মাথার চামড়া কেটে যাওয়াতেই হয়েছে। কিন্তু খুব সাধারণ ভাবে চামড়া কেটে রক্ত বের হয়নি, বরং হয়েছে কোন একটা বুলেট শুধুমাত্র চামড়াটা ছুঁয়ে যাবার কারণে! আর দুই এক মিলিমিটার এদিক-সেদিক হলে হয়তো আপনার ভবলীলা সাঙ্গ হতো। আর এই আঘাতের কারণেই আপনার স্মৃতির কিছু অংশ ভ্রষ্ট হয়েছে। তবে আশার কথা হল সেসব স্মৃতি খুব দ্রুতই ফিরে পাবেন আপনি।

কিন্তু এতটাই সহজ যদি গল্পের শুরু হবে তবে সেটা কিভাবে এক উপন্যাসে রূপ নেবে? হ্যাঁ, এবারে আবারও শুরু হবে জটিলতার। হঠাৎ করেই গোলাগুলির শব্দ! কর্তব্যরত চিকিৎসকদের একজন আপনার সামনেই সেই গুলির আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন, তার রক্ত মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ছে খুবই দ্রুত। শুরু হল ছুটোছুটি আর এই ছুটোছুটি চলবে একদম উপন্যাসের শেষ পর্যন্ত। শুধু ল্যাংডন যে তার নিজের জীবন বাঁচানোর জন্যেই ছুটবেন তা কিন্তু নয়, বরং এ ছুটো-ছুটি চলবে পুরো মানব গোত্রকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে। বলতে পারেন মানব সমাজকে বাঁচিয়ে রাখার একমাত্র ক্লু’টি রয়েছে রবার্ট ল্যাংডনের হাতে।




এতক্ষণ যে গল্পের প্লট নিয়ে কথা বলছিলাম তা ছিল একজন সফল রোমাঞ্চ উপন্যাস লেখক 'ড্যান ব্রাউন' রচিত 'ইনফার্নো' উপন্যাসটির একদম প্রাথমিক অংশ। 'ডা ভিঞ্চি কোড', 'দ্যা লস্ট সিম্বল' এবং 'ইনফার্নো'; এই তিনি উপন্যাসে লেখক ড্যান ব্রাউন আমাদের সামনে নিয়ে এসেছেন তার বিখ্যাত চরিত্র রবার্ট ল্যাংডন সাহেবকে। আর প্রতিবারই দারুণ এক উত্তেজনার সাগরের তলদেশ হতে ঘুরিয়ে নিয়ে এসেছেন তার পাঠকদের।

ইতোপূর্বে 'ডা ভিঞ্চি কোড' এবং 'দ্যা লস্ট সিম্বল' উপন্যাস দুটোকে চলমান চিত্রে রূপ দান করা হয়েছে। সেখানে ল্যাংডনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন আরেক কালজয়ী অভিনেতা 'টম হ্যাংক্‌স'। আর সত্যি কথা বলতে গেলে এই চরিত্রটির জন্যে টম হ্যাংক্‌সের চেয়ে ভালো কেউ হতে পারত বলে মনে করি না। মাঝে মাঝে মনে হয় ড্যান ব্রাউন সাহেব সম্ভবত ল্যাংডন চরিত্রটিকে রূপদান করার পূর্বে তার কল্পনাতেও টম হ্যাংক্‌স সাহেবকে নিয়ে এসেছিলেন। 'ডা ভিঞ্চি কোড' এবং 'দ্যা লস্ট সিম্বল'-এ দারুণ অভিনয় গুণ ফুটিয়ে তোলার পুরস্কার স্বরূপ এবারেও ইনফার্নো চলচ্চিত্রে একই চরিত্রে দেখা মেলে হ্যাংক্‌স সাহেবের সাথে।

এর আগেও একটি লেখাতে আমি বলেছিলাম যে, যদি হাজারও চেষ্টা করা হয় তবুও কখনো কোন উপন্যাসের সমস্ত ঘটনা সমেত একটি মুভি একজন ডাইরেক্টর সাহেব কোনদিনই তৈরি করতে পারবেন না। কারণ ব্যাপারটা একেবারেই অসম্ভব। তবে অন্তত ৫০ থেকে ৬০ ভাগ পর্যন্ত উপন্যাসকে মুভিতে নিয়ে আসা সম্ভব বলে আমি মনে করি। কিন্তু এবারে ইনফার্নো মুভিটি যেভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে তাতে আমার কোন ভাবেই মনে হয়নি যে এখানে মূল উপন্যাসের ৪০ ভাগের বেশি উপস্থিত রয়েছে। বরং হিসেব করলে হয়তো তার থেকে অনেক কমই পাওয়া যাবে।

স্ক্রিপ্ট রাইটার মুভিটির স্ক্রিপ্ট তৈরি করার সময় উপন্যাস থেকে এত বেশি অংশ বাদ দিয়েছেন, আর এত বেশি নিজ থেকে যুক্ত করেছেন যে কেউ যদি মুভিটিকে ভিন্ন কোন নামে প্রকাশ করেন তবে সেটা আমার দিক থেকে মোটেও খুব অনুচিত কিছু মনে হবে না।



আবারও বলি, কারও সাথে যদি বইয়ের পাতাতে ইনফার্নোর সাথে পরিচয় হয়ে গিয়ে না থাকে তবে অবশ্যই আপনি মুভিটি দারুণ ভাবে উপভোগ করতে পারবেন। কিন্তু যদি ইতোমধ্যে ইনফার্নোর উপন্যাসটি আপনি পড়ে থাকেন আর আপনার স্মৃতিতে ইনফার্নোর ঘটনার বিবরণের রঙ এখনো কিছু বাকি থেকে থাকে তবে অবশ্যই মুভিটি দেখার পর আপনি বেশ অনেকটা হতাশ হবেন আর অনেক খানি বিরক্ত চলে আসবে আপনার মনে।

যদি এই ঘটনা পরিবর্তনের কারণ খুব ভালো করেই অনুমেয় তবুও পরিবর্তনটুকু ব্যক্তিগত ভাবে আমার কাছে মোটেই গ্রহণযোগ্য মনে হয় নি। উপন্যাসের স্রষ্টা খুব ভালো বুঝেই উপন্যাসটি রচনা করেছেন। এবং আন্তর্জাতিক ভাবে উপন্যাসটি 'বেস্ট সেল' র‌্যাংক প্রাপ্ত হয়েছে। তাই উপন্যাসের মত করে মুভিটিকে নিয়ে আসলে সেটা মানুষজনকে বিভ্রান্ত করবে, এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ তৈরি হবে কিংবা তার কারণে বড় ধরণের পরিবর্তন হয়ে যাবে মনে করে করা হয়ে থাকলে সম্ভবত ভুলই করা হয়েছে।

উপরন্তু উপন্যাসে বর্ণিত ঘটনা প্রবাহকে অনেক বেশি মর্ডানাইজেশন করা হয়েছে। মানছি সময়ের সাথে এমন পরিবর্তন হয়তো প্রয়োজন ছিল, তবুও যতটুকু না করলে আসলে সম্ভব ছিল না ততটুকু বাদ দিয়ে করলেই সম্ভবত তা আরও বেশি আকর্ষণীয় হতো। উপন্যাসে এক স্থানে ল্যাংডন ইনফার্নোর একটি হার্ড কপি বই ধার নিয়েছিলেন ভ্রমণকারীর কাছ থেকে। সে অংশটাকে মর্ডানাইজেশন প্রক্রিয়ায় বাদ দেয়া হয়েছে। এখানে দেখা যায় সিয়েনা ব্রুক্‌স চাওয়া মাত্রই নেট থেকে ইনফার্নোর একটি কপি বের করে নিয়ে আসেন তার চুরি করা সেলফোনে। এই অংশটা প্রযুক্তির ব্যবহারের অতিরিক্ত মনে হয়েছে আমার কাছে।



এছাড়াও পালিয়ে বেড়ানোর অনেক অংশে নিয়ে আসা হয়েছে অনেক পরিবর্তন। উপন্যাসে ছুটোছুটির যেসব স্থানে স্থানে এসে প্রায় আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম পাঠক হিসেবে, আবার ঠিক তার পরমুহুর্তে সিয়েনা আর ল্যাংডন সাহেব যেভাবে সেই ঘটনা উৎরে যাবার রসদ খুঁজে বের করে নিচ্ছিল, যেখানে ধাঁধা আউরে বার বার সমাধান বের করার চেষ্টা চলছিল; সেখানে লাইট-ক্যামেরা-রোলিং এর গ্যাঁড়াকলে পড়ে তার প্রায় সব কিছুই বাদ পড়ে গেছে।

এ ছাড়াও চরিত্রায়নে ছিল অনেক বেশি গাফিলতি(!)। ড. সিন্সকিকে উপন্যাসে যেভাবে দেখানো হয়েছে, তার যে বর্ণনা সেখানে পাওয়া গেছে তার ঠিক বিপরীত রূপটাই এসেছে মুভিটিতে। অন্তত এই চরিত্রটিকে বেছে নেয়ার ব্যাপারে আরও একটু স্টাডি করার প্রয়োজন ছিল। একই ব্যাপার ঘটেছে সিয়েনা ব্রুকসের ব্যাপারে। তারপরও সিনেমার খাতিরে সিয়েনাকে মেনে নিয়েছিলাম। তবে চরিত্রায়নের পজিটিভ দিক বলতে গেলে বলতে হবে প্রভোস্টের চরিত্রটির কথা। প্রভোস্ট চরিত্রটি চরিত্রায়ন করেছেন ভারতীয় অভিনেতা 'ইরফান খান' এবং তার অভিনয় বেশ সাবলীল ছিল। এই একটি চরিত্রই মুভিটির জন্যে বেশ নিখুঁত মনে হয়েছে।

এরকম হাজারও পরিবর্তন দেখতে দেখতে মুভিটির প্রায় শেষ অংশে উপস্থিত হয়েছি। উপন্যাসের একদম শেষ দিকে সিয়েনার পালিয়ে যাওয়া, তারপর পুনরায় ফিরে আসা, আত্ম সমর্পণ করা, প্রভোস্টের চোপ-পুলিশ খেলায় নিজেই ধরা খাওয়া আর শেষ পরিস্থিতিতে পুরো ব্যাপারটার উপর নিয়ন্ত্রণ নেবার যে ব্যাপারগুলি উপন্যাসটিতে যে দারুণ সব উত্তেজনার সৃষ্টি করেছিল; মুভিতে সেই একই ব্যাপার গুলির অনুপস্থিতি, নতুন দৃশ্যপট সংযোজন আর বিয়োজনে সেই ব্যাপারগুলি একদম সাদামাটা ঠেকেছে। এখন মুভিটিকে আর ১০ টি সাধারণ এডভেঞ্চার মুভির মতই একটা সস্তা দরের এডভেঞ্চার মুভি মনে হয়েছে।



জানিনা বাকি সবার কাছে পরিবর্তিত এই মুভি কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা পাবে, তবে ব্যক্তিগত ভাবে ১০ এর স্কেলে আমি মুভিটিকে মাত্র ৪ পয়েন্ট দিয়ে রেট করব। টিজার আর ট্রেলার দেখার পর অনেক আশা নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম মুভিটি দেখার জন্যে। কিন্তু মুভিটি দেখার পর মনে হয়েছে, যদি দয়া করে ডাইরেক্টর সাহেব মুভিটিকে সৃষ্টি না করতেন তবেই কেবল ইনফার্নো উপন্যাসটির প্রতি তার সুবিচার করা হতো।






রকমারি হতে ইনফার্নো উপন্যাসটির হার্ডকপি সংগ্রহ করতে পারেন
কিংবা এই লিংক হতে বইটির সফটকপি ডাওনলোড করতে পারেন।
মুভিটির অনলাইন স্ট্রিম এখানে পাবেন।

মঙ্গলবার, নভেম্বর ২৯, ২০১৬

সোমবার, নভেম্বর ২৮, ২০১৬

কমিকঃ আপন আলয়ের ভিন্নরূপ








────────────────────────────
♦ কমিক : আপন আলয়ের ভিন্নরূপ | A Place Like Home
♦ সংগ্রহ : Stumbleupon.com Stream
♦ জঘন্য অনুবাদে : আমি 😛

শুক্রবার, নভেম্বর ২৫, ২০১৬

উদভ্রান্ত আগন্তুক



          মন খারাপ হলে কিংবা খুব বেশি পরিমাণে একাকীত্ব বোধ জেগে উঠলে আমি প্রায় এখানে আসি। এখানে বলতে এই পার্কটাতে। শহরের এই দালান কোঠার মাঝে অল্প কিছু জায়গা ঘের দিয়ে তৈরি হয়েছে এই শহুরে পার্ক। শহুরে জীবন থেকে কিছুটা সময় ধার নিয়ে আমার মত কিছু মানুষ চলে আসে এখানে তাদের দুরন্ত আর ছটফটে মনটাকে শান্ত করতে। তবে এমন করে ঠিক কতটুকু পরিমাণে মন শান্ত হয় তার হিসেব কখনোই কেউ করতে যায় না।

অবশ্য শুধু দুরন্তপনাকে শান্ত করতেই যে সকলে আসে তাও নয়। অনেকে সকাল বিকেল ওয়াকে আসে, কেউ কেউ সমবয়সীদের সাথে আড্ডা জমাতে একত্রিত হয় এখানে, ছেলেরা আসে নিজেদের মত দৌড়াদৌড়ি করে সময় কাটাতে। কালেভদ্রে ছেলেগুলি একসাথে ফুটবল, ক্রিকেটও খেলে ঘটা করে। আর আসে ভাসমান চা-বিস্কিট-বাদাম আর সিগারেট বিক্রেতারা। এদের কোলাহলেই বুঝি মাঝে মাঝে এই পার্ক নামের মাঠটা তার প্রাণ ফিরে পায়।

একবার এক প্রবীণ ব্যক্তির সাথে দিন কয়েক আলাপ হয়েছিল। অল্প কিছুদিনেই শহুরে এই জীবনে হাঁপিয়ে যাওয়াদের একজন ছিলেন তিনি। চিকিৎসা করানোর নাম করে তার ছেলেমেয়েরা গ্রাম থেকে জোড় করে ধরে নিয়ে এসেছিল এখানে। নিয়ম করে ক'দিন পর পর গাদা গাদা টেস্ট করিয়ে আর ডাক্তার দেখিয়ে রোগ নির্ণয়ের চেষ্টা চালাচ্ছিল। আর এসবের সাথে অত্যাচার হিসেবে যোগ হয়েছিল বাহারি ধরনের ঔষধ; যা তাকে ততোধিক নিয়ম মেনে গিলতে হতো তিন বেলা। একবার তিনি বেশ আক্ষেপ করে বলেছিলেন- "এই যে এত-শত ঝামেলা করছি দু'টো দিন বেশি বেঁচে থাকবার জন্যে, তাতেও কি জীবনের কোন তৃপ্তি আছে?" বড় কঠিন প্রশ্ন ছিল ওটা। তার উত্তর আজও আমি খুঁজে পাই নি। তবে ভদ্রলোক খুব দ্রুতই তার এই 'ঝামেলা' থেকে মুক্ত হয়েছিলেন। আর তার মুক্তিটা ছিল চিরকালের জন্যে। ঐ মুক্তি ছাপিয়ে কখনোই এ দুনিয়ার কোন ঝামেলা আর তাকে বন্দী করতে পারবে না। কষ্ট পাওয়ার বিপরীতে তার জন্যে আমি কিছুটা খুশিই হয়েছিলাম।

এরপর আবারও আমি একেলা হয়ে পড়লাম। ঠিক কি কারণে জানা নেই, শহুরে এই লোকগুলি আমাকে এড়িয়েই চলতো সবসময়। আর তা নিয়ে কোনদিনই আমার কোন অভিযোগ ছিল না। বরং তাতেই আমি বেশ স্বস্তি পেতাম। অন্তত ঘেঁটে-ঘেঁটে অতীত মনে করতে হতো না ওসব আলাপের তালবাহানায়। আর আমি নির্বিকারেই আমার মনকে শান্ত রাখার সুযোগ পেতাম তাদের এই অনাকাঙ্ক্ষিত দয়ায়।

একদিন এক উদভ্রান্তকে দেখলাম পার্কের এক কোনায় হাতে এক লাঠি নিয়ে দাড়িয়ে হাসছে। মানসিক ভারসাম্য যে সে হারিয়েছে তা আর আলাদা করে কেউ কাউকে বলল না। কিছু লোক তার এমন কর্মকাণ্ডে কিছু বিনোদিত হল; আর মনে মনে এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল এমন করে মুখোশ ছেড়ে প্রাণ খুলে হাসতে না পারার অপারগতায়। সমাজের এই মুখোশটাও বেশ অদ্ভুত; সামাজিক তো তাকে করে তোলে ঠিকই, কিন্তু কেড়ে নেয় তার প্রকৃতি প্রদত্ত স্বভাব। চাইলেই এই উন্মাদের মত হাতে লাঠি নিয়ে কোন মাঠের কোনায় একাকী বসেও নির্লজ্জ হাসিতে মেতে উঠতে পারে না। সামাজিক মুখোশ তাকে অমন উন্মাদনার স্বাদ আহরণ করার অনুমতি দেয় না।

পরপর কয়েকদিন ঐ উদভ্রান্ত পার্কের ঐ কোনাতেই বসে থাকল। ক্ষণে ক্ষণে আপন ইচ্ছেতে হেসে উঠে কারও কারও বিরক্তির কারণ হল। আবার ঠিক ঐভাবেই হঠাৎ শান্ত হয়ে তাদের বিরক্ত হওয়া থেকে মুক্তি দিল। আমিও আর সবার মতই দূর থেকে তাকে দেখলাম কেবল।

এক বিকেলে পার্কে গিয়ে দেখলাম যে স্থানটাতে বসে আমি সময় কাটাই ঠিক সেখানেই ঐ উদভ্রান্তটা বসে আছে। নিশ্চিত নই, তবে মনে হল সে আমাকে দেখে মিটিমিটি হাসছে। যেন বলছে, দেখো বাপু আমি তোমার জায়গাতে এসেছি এখন তুমি আবার ঝামেলা করতে এসো না, লক্ষ্মী ছেলেটার মত আমার যায়গাতে গিয়ে বস। আমি অবশ্য তার মিটিমিটি হাসির বিপরীতে কোন প্রতিক্রিয়া দেখালাম না; কিংবা তার এমন কাজে বিরক্তও হলাম না। আমি আমার মত হেটে গিয়ে ওখানেই একটু দূরত্ব রেখে একপাশে বসে পড়লাম।

একটু বাদে পাগলটা আমার দিকে মুখ করে বসে জিজ্ঞাস করল, "তোর মনে রাগ ধরেনি?"

নিতান্ত পরিচিত ছাড়া এ শহরের ভদ্র সমাজ কেউ কাউকে 'তুই' বলে সম্বোধন করে না, আর অনভ্যাসে আমিও কিছুটা বিরক্ত হলাম অপরিচিত এক উদভ্রান্তের মুখে 'তুই' সম্বোধন শুনে। তাই আর ও প্রশ্নের জবাব দিতে গেলাম না। তাছাড়া কেন জানি মনে হচ্ছে ঝামেলা করার জন্যেই ব্যাটা এখানে এসে বসেছে। আমি নির্বিকার বসে রইলাম।

জবাব না পেয়ে একটু অপেক্ষা করে বলল, "এবারে তোর মনে রাগ ধরেছে। আর ভদ্রতা করে তুই তোর রাগ লুকাতে চাইছিস। কি চাচ্ছিস না?"

আমি নির্বিকার। কথায় কথা বাড়ে। আমি মোটেও তা করতে চাইছি না। আর এমন উদভ্রান্তের সাথে তো ভুল করেও না।

তবে তাতে ঐ উদভ্রান্তের উৎসাহে কোন ভাটা পড়ল না। নিজে নিজেই কথা চালিয়ে যেতে লাগল। বলল-
"তোর মুক্ত হওয়া নেশা তোরা ছাড়ে না। খাঁচায় আটকা পাখির মত তুই খালি ছটফটাস। ছটফটাশ মনে মনে, আর শান্তি খোজস এই শহরের বনে।"

এইটুকু বলেই সে তার মত চিৎকার করে হাসতে লাগল। যেন চরম কোন রসিকতা করেছে সে এ মুহূর্তে। দূর থেকে ক'জন খুব বিরক্ত নিয়ে একবার তাকাল, তারপর আবার নিজেদের মত আবার আলাপ জুড়ে দিল।

এমন কথার পরেও আমি খুব একটা বিচলিত হলাম না। শহরের হাজার হাজার মানুষের ভীরে এমন কিছু মানুষও আছে যারা মন দুর্বল করা কিছু আবেগী কথার দ্বারা মানুষকে সম্মোহিত করেতে জাল ফেলে। মানুষ তাদের কথার জালে আকটে যায়। যারা আটকে যায় তারাও জানে এটা তাদের ভ্রম। কিন্তু আজব এইসব মানুষের মন সেই ভ্রম কেটে বাইরে বের হয়ে আসতে চায় না। মাঝে মাঝে সর্বোস্ব খুইয়ে তারপর নিজের করে যাওয়া এই বোকামিকে গালমন্দ করতে থাকে। আমি তার সম্মোহনের এমন জালতে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে নিজের মত বসে রইলাম।

এরপর লোকটা উঠে দাড়িয়ে একদম আমার সামনে এসে দাঁড়াল। ঝুঁকে একদম মুখের সামনের দিকে এসে বলল, "যাবি? তোর মুক্তি যেইখানে, ঐখানে যাবি?"

এরকম মুখের সামনে এসে দাড়িয়ে এমন করে বললে সেটাকে আর আমলে না নিয়ে পারা যায় না। লোকটাকে কিছু না বলে চলে যাবার জন্যে উঠে দাঁড়ালাম। দেখাদেখি লোকটাও সোজা হয়ে একদম সামনে দাঁড়াল। এরপর বলল- "পলাইবি? কই পলাইবি? এইখানে পলানির জায়গা কই? আয় আমি তোরে মুক্তি দেখাই, তোরে তোর মুক্তির কাছে লইয়া যাই।"

এরপর আচমকা তার হাতের লাঠিটা বিপদজনক ভাবে খুব দ্রুত মাথার উপর উঠিয়ে মুখে মুখে কিছু একটা বিড়বিড় করতে লাগল। আমি ওসব গ্রাহ্য না করে পাশ কাটিয়ে চলে আসতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু হঠাতই লোকটার লাঠি একদম আমার সামনে দিয়ে মাথার উপর হতে নিচের দিকে দ্রুত নামিয়ে নিলো। কাজটা আরও একটু অসাবধানে করলে নির্ঘাত লাঠিটি আমার মাথায় আঘাত করত। এবারে বেশ খানিকটা বিরক্ত হয়ে লোকটিকে একচোট ধমকে দেবার উদ্দেশ্যে ওদিকে ঘুরতেই বুঝলাম কিছু একটা পরিবর্তন হয়ে গেছে এর মধ্যে।

হঠাৎ করেই আমি অনেক পরিচিত একটা স্থানে যেন চলে এসেছি, যে স্থানটাকে শেষ এরকম দেখেছিলাম প্রায় ২৪/২৫ বছর আগে। যে জায়গাটাতে ফিরে যাবার জন্যে আমার মনটা প্রায় ব্যকুল হয়ে থাকে, এটা ঠিক ঐ জায়গাটা। অবাক হওয়ার চেয়েও অনেক বেশি পরিমাণে স্মৃতি-কাতর হয়ে উঠলাম নিমিষেই। বুক ভরে শ্বাস টানলাম, এই নির্মল বাতাস পাবার জন্যে ফুসফুসটাও আকুতি জানাচ্ছিল সেই কত বছর আগ থেকে। চোখ বুজতেও কেন জানি ভয় করছিল। মনে হচ্ছিল চোখ বুজলেই হঠাৎ চোখের সামনে এই স্থানটা যেমন করে উপস্থিত হয়েছে, ঠিক তেমনি হারিয়ে যাবে।

কতটুকু সময় ওভাবে বিমুঢ় হয়েছিলাম তার হিসেব দিতে পারব না, তবে বেশ অনেকটা সময় বিমুঢ় হয়ে ছিলাম তা নিশ্চিত। চোখের কোন দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল তা নিয়ে মোটেই বিচলিত হলাম না। অনা-প্রাপ্তির মরুতে যেন হঠাৎই বৃষ্টির পরশে সবুজ উদ্যান গড়ে উঠেছে মনে। পাশে দাড়িয়ে ঐ উদভ্রান্তটা দাঁত কেলিয়ে হাসছে, কিন্তু এবারে তার হাসিতে উল্লাসের চিৎকার অনুপস্থিত। সে হাসছিল যেমন করে হাসে অভিভাবকেরা তাদের সন্তানকে চমকে দিয়ে। আমি কোনরকম শুধু বলতে পারলাম, 'কিভাবে?'

এবারে আর তার মুখে আর কোন শব্দ নেই, নেই কোন উত্তর। শুধু ঠোটে লেগে আছে এক টুকরো হাসি। সত্যিই সে আমাকে আমার মুক্ত আরণ্যে নিয়ে এসেছে, দিয়েছে মুক্তির স্বাদ। জায়গাটা ঠিক ২৪/২৫ বছর পূর্বে যেমন ছিল, এখনো ঠিক তেমন দেখাচ্ছে। কিন্তু এটা যে সত্যি নয় তা আমি খুব ভালো করেই জানি। এও জানি যে আমি মোহে আটকে গেছি। সত্যিটাকে আমার মন অস্বীকার করে যাচ্ছে, চোখের সামনে যে মায়াজাল দেখছে তাকেই সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে প্রাণপণ।

একসময় লোকটি তার মাথাটা একটু নাড়িয়ে ইশারা দিল। এ ইশারা না বোঝার কিছু নেই। সময় ফুরিয়ে এসেছে, মোহ ভঙ্গ হবে এখুনি। ব্যকুল হয়ে বলতে চাইলাম, 'আর একটু...."। কিন্তু তার আগেই দৃশ্যপট পাল্টে গেল। দেখলাম অনেকগুলি মুখ আমার দিকে তাকিয়ে আতঙ্ক আর উৎসাহ নিয়ে অপেক্ষা করছে। চোখ মেলতেই পাশ থেকে কেউ একজন একটু চিৎকারের মত করেই বলল, "মরে নি! বেঁচে আছে এখনো"। আমি হুড়মুড় করে উঠে বসলাম, আশে পাশে তাকিয়ে খুঁজতে লাগলাম ঐ উদভ্রান্ত লোকটিকে। কিন্তু তাকে দেখলাম না কোথাও।

যে লোকটি বলেছিল আমি এখনো মরি নি সম্ভবত সে এগিয়ে আসল। বলল, 'কি? কিছু দিয়েছিল নাকি আপনাকে খাওয়ার জন্যে?"। আমি তার উত্তর দেবার আগে জিজ্ঞাস করলাম, "ঐ লোকটা কই?"। সে খুব কৃতিত্বের কণ্ঠে বলতে লাগল, "প্রথম দিন থেকেই দেখছিলাম ঐ ব্যাটার নজর আপনার উপর। তারপর আজ যখন আপনাকে দেখলাম হঠাৎ টলে পড়তে তখনই দৌড়ে এসে ধরলাম ব্যাটাকে। দুটো ঘা দিতেই ব্যাটা দিল আমার হাতে একটা কামড় বসিয়ে"। নিজের হাতটা সামনে নিয়ে এসে উৎসুক জনতাকে দেখাতে লাগল। "তারপর দিল এক ভো-দৌড়! এরপর আমার চিৎকার শুনে এরা সবাই এগিয়ে আসল। তা আপনার কিছু খোয়া গেছে নাকি দেখেন তো।"

কি করে এদের বোঝাই আমার কিছুই খোয়া যায় নি। বরং যা খুইয়েছিল অনেক অনেক বছর আগে তাকেই ফিরে পেয়েছিলাম এক মুহূর্তের জন্যে। আমি জানি আমার এই গল্প এদের বিশ্বাস করানো যাবে না। তাই সে চেষ্টাতেও গেলাম না। লোকটার ব্যাপারে কোন সাফাইও গাইলাম না, আর করলেও সেটা কোন কাজে আসত না। বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। যে লোকটি খুব আগ্রহ নিয়ে ঘটনা বলছিল সবাইকে তাকে ছোট করে একটা ধন্যবাদ দিয়ে বের হয়ে এলাম পার্ক থেকে।


এরপর শুধুমাত্র আর মনকে শান্ত করার জন্যে কখনোই পার্কে যেতে পারি নি। যতবার গিয়েছি, ততবারই গিয়েছি ঐ উদভ্রান্তের খোঁজে। কিন্তু উদভ্রান্তদের কোন ঠিকানা নেই, তারা হুট করেই আসে আর হুট করেই হারিয়ে যায়। হারায়, একদম চিরতরে......






বুধবার, নভেম্বর ১৬, ২০১৬

Jetsons এবং হান্না-বারবারা


ছোটবেলায় কার্টুন নেটওয়ার্ক চ্যানেলে The Jetsons কার্টুন সিরিজটা দেখতাম। অত্যান্ত মজার কার্টুন গুলির মধ্যে সেটি ছিল একটি। কেউ যদি আমাকে তখন বলত নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে সারাদিন কার্টুন দেখতে হবে, সম্ভবত তার সেই শর্ত মেনে নিয়ে আমি সারাদিনই কার্টুন দেখতাম।


এ পৃথিবীতে অনেকেই এখন পর্যন্ত এমন অনেক ধারণা দিয়ে গেছে যার প্রয়োজন এবং বাস্তবায়ন বুঝতে আমাদের শতবছরেরও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। তেমনই দুজন মানুষ হলেন উইলিয়াম হান্না এবং জোসেফ বারবারা।


The Jetsons কার্টুন সিরিজটি যারা দেখেছেন তারা মনে করতে পারবেন কার্টুনে দেখানো তাদের জীবন যাপনের অবস্থা এবং ব্যবস্থা গুলি। সেখানে অত্যাধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা, ভাসমান যান, অটোমেটেড লোকেশন ট্রাকিং ডিভাইস, ভয়েস কমান্ড বেস্‌ড মডিউল, উড়ন্ত ডিসপ্লে সমেত কম্যুনিকেশন মডিউল, রোবট সেক্রেটারি এবং হোমকিপার, রোবট জন্তু সহ নানান ধরণের কাল্পনিক (ঐ সময় এসবের সবই শুধু কাল্পনিক নয়, অতিকাল্পনিক ছিল) জিনিষ দেখানো হয়েছে। অথচ ঐসব কাল্পনিক বস্তু গুলি ধীরে ধীরে আমাদের কাছে টেক-টয়(প্রযুক্তির খেলনা) হিসেবে চলে এসেছে। অল্প ক’দিন বাদেই হয়তো আমরা ঘরের কাজ করার জন্যে ইন্টিলিজেন্ট (অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা/সিদ্ধান্ত নিতে পারে এমন) রোবটও পেয়ে যাবো।


তবে সেখানে দেখানো সবচেয়ে সাধারণ একটা বস্তু ছিল তাদের বাড়ি। আমাদের সাধারণ বিল্ডিং গুলোর মত সেখানে দেখানো বিল্ডিং গুলি একদম গ্রাউন্ড থেকে শুরু হতো না। বরং গ্রাউন্ড থেকে লম্বা দুটো দন্ডের উপর একটি বেস এবং সেই বেসের উপর তাদের বিল্ডিং গুলি দেখা যেত।

হান্না-বারবারা নিশ্চিত ভাবেই দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। আমরা আমাদের এই পৃথিবীটাকে যেভাবে বসবাসের অযোগ্য করে তুলছি দিনকে দিন, তাতে অদূর ভবিষ্যতে হয়তো ভূমির কাছাকাছি কোথাও মানুষের টিকে থাকাটাই অসম্ভব হয়ে উঠবে। আর সেই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্যে আমাদেরও জেটসন কার্টুনের মত বেছে নিতে হবে ভূমি থেকে অনেক উঁচুতে বাড়ির মডেল।








বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ০৩, ২০১৬

বদি এণ্ড রঞ্জুর কথোপকথন —৭



বদি ভাইঃ রঞ্জু, ইংরেজিতে Ironic নামে একটা একটা শব্দ আছে। জানিস তো?

রঞ্জুঃ উউম্মম্মম্মম্ম..... কি জানি; মনে পড়ছে না।

বদি ভাইঃ এদ্দিন স্কুল-কলেজ করে কি শিখলি যে সাধারণ কিছু ইংরেজি শব্দ তোর মাথায় থাকে না?

রঞ্জুঃ ইয়ে..... মানে...... সে যাই হোক। এখন বলেন ঐটা কি।

বদি ভাইঃ তোমারে দিয়া কিস্যু হবে না রঞ্জু। বুজলা! তোমার ভবিষ্যৎ পুরাই বাঁশের বিল্ডিং এর মত।

রঞ্জুঃ আচ্ছা হইল সেটা। এখন বলেন Ironic এর অর্থ।

বদি ভাইঃ Ironic এর অর্থ হইল 'বিদ্রূপাত্মক'

রঞ্জুঃ বিদ্রূপাত্মক! এটা আবার কি জিনিষ!

বদি ভাইঃ বুঝলা না?

রঞ্জুঃ না তো।

বদি ভাইঃ ধর কোন একটা ঘটনা বা কারো কথা যদি তারেই ব্যঙ্গ করে কিংবা টিপ্পনী কাটে তখন ঐটারে বলা যায় বিদ্রূপাত্মক ঘটনা।

রঞ্জুঃ তো এইটারে সোজা করে বললেই পারতেন যে কাউরে নিয়ে মজা করার অর্থই Ironic। হুদাই প্যাচ-গোচ লাগাই এতকিছু বললেন।

বদি ভাইঃ আরেহ্‌ নাহ। শুধু শুধু কাউরে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা বা মজা করার অর্থ Ironic না। Ironic হইতে হইলে ঘটনাটারে এমন হইতে হবে যাতে মনে হয় ঘটনাটা নিজেই ঘটনাটারে বা কোন লোকের কথা বা কাজ ঐ লোকটারেই পরিহাস করতেছে।

রঞ্জুঃ আচ্ছা, বুঝলাম।

বদি ভাইঃ কি বুঝলা!

রঞ্জুঃ ঐ তো, যা বুঝাইলেন। তাই বুঝলাম।

বদি ভাইঃ তাই নাকি? তাহলে পরে Ironic ঘটনার একটা উদাহরণ দেও দেখি।

রঞ্জুঃ উউম্মম্মম্ম...................
ইয়ে... মানে.... বদি ভাই। মাথা চুলকায়, একটু হিন্ট দেন না!

বদি ভাইঃ বুঝলা রঞ্জু, তোমারে নিয়ে আমি পুরাই হতাশ। কোন কিছুই একটু ভালো করে চিন্তা কর না তুমি। তার আগেই হাল ছেড়ে দেও। এইটা বড়ই পরিতাপের কথা।

রঞ্জুঃ আচ্ছা! হল তো। এখন একটু হিন্ট দেন। তারপর না পারলে যা খুশি বইলেন।

বদি ভাইঃ নাই, কোনে হিন্ট নাই। গুগল করে বুঝে নিও।

রঞ্জুঃ গুগল! আরে হ্যাঁ, তাই তো।

বদি ভাইঃ কি হইলো?

রঞ্জুঃ পেয়ে গেছি Ironic এর উদাহরণ।

বদি ভাইঃ তাই নাকি? কি? বল শুনি।

রঞ্জুঃ হ্যাঁ, এই যে গুগল করতে বললেন। তখনই পেয়েছি।
ধরেন কেউ Google.com এ গিয়ে সার্চ বক্সে যদি 'Best alternative of google search engine' লিখে সার্চ করে। আর গুগল যদি সেই সার্চ কোয়েরির ৩ লাখ উত্তর দেখায় তবে সেইটা হল একটা Ironic ঘটনা।

বদি ভাইঃ আরে বাহ! দারুণ উদাহরণ দিলা তো!
নাহ, ভুল বলছি। তোমারে দিয়েও হবে। ঠিকমত টিউনিং করতে পারলে তোমারে দিয়েও আলেকজেণ্ডারের মত বিশ্ব জয় করা যাবে।

রঞ্জুঃ থেংকু বদি ভাই!





আত্মহত্যার প্রভাবন



কথায় মানুষ খুব দ্রুত প্রভাবিত হয়, তবে সবার কথায় না। কিছু কিছু মানুষ আজীবন শুধু বলেই যায়, তাদের কথা কেউ বিশেষ কর্ণপাত পর্যন্ত করে না। কিন্তু এই কিছু মানুষের বাইরে আরও অল্প কিছু মানুষ থাকে, যাদের দীর্ঘশ্বাসও মানুষের মনে বিশেষ অর্থ জাগিয়ে তোলে। ঠিক কী কারণে কিংবা কেন এমনটা হয় তার সঠিক কোন ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব না। এমন না যে তারা দেখতে সুদর্শন কিংবা তাদের কণ্ঠ সুমধুর বলেই এমনটা হয়। অথবা তাদের চিন্তাভাবনা অন্য সকলের তুলনায় অনেক অনেক ভিন্নতর হয়, এমনও নয়। তারাও আর দশজন সাধারণের মতই চিন্তাভাবনা করে একদম সাধারণ কথাই বলে। তবুও এই সাধারণ কথাই অন্য সকলের কাছে অসাধারণ কিছু হয়ে উঠে।

এরকম একটা হিসেব কষে যদি ভাবা হয় তবে আমাকেও সে তালিকার একজন ধরা যেতে পারে। অবশ্য এর কৃতিত্ব একক ভাবে আমার নয়। এই ব্যাপারটার সাথে বংশানুক্রমিক জিনের কোন একটা সম্পর্ক থাকতে পারে। একদম নিশ্চিত না হলেও আমার জন্যে এমনটা ভাবা একদম অমূলক বলা যাবে না। কারণ জ্ঞান হবার পর থেকেই দেখেছি আমার বাবার কথায়ও মানুষ খুব গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তার কোন একটা সিদ্ধান্ত বিনাবাক্যে সকলে মেনে নেয়। তার উত্তরসূরী হিসেবে আমার কথাতেও মানুষের গুরুত্ব কিংবা প্রভাবিত হবার ব্যাপারটা আমাকে কখনোই তেমন অবাক করত না।

হ্যাঁ, একটা সময় পর্যন্ত সত্যিই এই ব্যাপারটা আমায় মোটেই অবাক করত না। কিন্তু সব পরিবর্তন হয়ে গেল ছোট একটা দুর্ঘটনা ঘটবার পর। ঠিক কি কারণে জানা নেই, একদিন বিকেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেবার সময় শিমুল যখন ওর গার্লফ্রেন্ডের প্যারা নিয়ে আক্ষেপ করছিল তখন বলেছিলাম- 'তোর উচিৎ সিলিং ফ্যানের তিন পাখায় তিনটা গামছা বেধে ঐ তিনটা একত্রে করে একটা ফাঁস বানিয়ে তারপর তা গলায় গলিয়ে ঝুলে পরা'। 

ব্যাস ঐ ওটুকুই কথা, আসলে আমরা প্রতিদিন ওর ঐ এক ঘ্যান ঘ্যান শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। তাই কিছুটা বিরক্ত আর মজা করার জন্যেই ও কথা বলেছিলাম। বাকি সবাইও ঐ মজার কথাটাকে মজা ধরে নিয়েই ওকে ক্ষেপাচ্ছিল। কেউ কেউ ঐ অবস্থাতে সেল্ফি তুলে ওর গার্লফ্রেন্ডকে পাঠানোর আইডিয়া দিচ্ছিল, আবার কেউ বলছিল গার্লফ্রেন্ডকে উদ্দেশ্য করে সুসাইড নোট লিখে তারপর ঝুলে যাবার জন্যে।

এরপরই দ্বিতীয় ভুলটা করলাম; অবশ্য তখন ওটাকে কোনভাবেই আমার ভুল মনে হচ্ছিল না। বললাম- 'সবচেয়ে ভালো হয় তুই যদি ঝুলে যাবার পুরো ব্যাপারটা লাইভ করে দেখাস, তাতে জনগনের সাপোর্ট আর গার্লফ্রেন্ডের উপর প্যারার রিভেঞ্জ নেয়া, দুটোই হয়'। আর যায় কোথায়, সকলেই আমার আইডিয়াকে বাহ্‌বা দিতে দিতে শিমুলকে এই কাজ করার জন্যেই কথার খোঁচা মেরে যাচ্ছিল।

তারপর সন্ধ্যাটা ওভাবে শেষ করে যে যার বাসায় কিংবা মেসে ফিরে গেলাম। খুব ঘুম পাচ্ছিল বলে ফিরে এসে ফ্রেশ হয়েই বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। সেই ঘুম ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে একদম রাত আড়াইটা! মোবাইলটা সাইলেন্ট করা ছিল, তাই কিছুই টের পাই নি। স্ক্রিনে দেখলাম মিসকলের বিশাল এক নোটিফিকেশন লিস্ট দেখা যাচ্ছে। ৮৬টা মিস কল সেখানে! এক একজন গড়ে ৬~৭ বার করে কল করেছে। সবার উপরের নাম্বারটা ছিল সুমনের। তাই ওকেই কল ব্যক করলাম। রিং পুরোটা হবার আগেই ও প্রান্ত থেকে কলটা রিসিভ হয়ে গেল!

খুব উত্তেজিত ভঙ্গিতে সুমন বলল- 'দেখেছিস?'। সুমনের এই উত্তেজনার জন্যে ওর সাথে কথা বলাই দুস্কর। ছোটখাটো থেকে শুরু করে গুরুতর সব কিছুতেই ওর সীমাহীন উত্তেজনা কাজ করে। তাই বোঝা দুস্কর কোনটা আসলে উত্তেজিত হবার মত ঘটনা, আর কোনটা সাধারন। তাই প্রশ্নের বিপরীতে ওকে প্রশ্নই করতে হল-'কী?'
- কী মানে? তুই এখনো দেখিসনি? কোথায় তুই? কই ছিলি এতক্ষণ?
- আরে ব্যাটা ঘুমাচ্ছিলাম। এখন বল কি দেখবো? হয়েছে টা কি?
- তার মানে তুই কিচ্ছু জানিস না?
- আরে এত্ত না পেঁচিয়ে কি দেখব, আর কি জানতে হবে সেটা বলতে পারিস না?
- তুই দ্রুত ফেসবুকে লগইন কর, আর শিমুলের ওয়ালে ঢু মেরে আমাদের গ্রুপ চ্যাটে দেখ।
বলেই কলটা কেটে দিল। ব্যাটা আহাম্মকের আহাম্মক, কি হয়েছে সেটা না বলে আমাকে বলে কিনা ফেসবুকে ঢুকতে। তবে শিমুলের কথা বলায় একটু আগ্রহ হল। বিকেলেই গার্লফ্রেন্ডের প্যারা নিয়ে কান্নাকাটি করছিল। মনে হয় এবারে ব্যাটা ব্রেকআপ-ট্রেকআপ কিছু একটা করে ফেলেছে। আর সেটা নিয়েই সুগভীর কোন পোষ্ট দিয়ে বসে আছে ফেসবুকে। অবশ্য এমনিতেও এখন আমি ফেসবুকেই ঢু মারতাম।

ফেসবুক এ্যাপটা চালু করে শিমুল নামটা সার্চ দিয়ে ওর প্রোফাইলে গলাম। সেখানে একটা লাইভ ভিডিওর পোষ্ট রয়েছে। অবশ্য এখন আর লাইভ নেই, প্রায় ঘন্টাখানিক আগে সেটা শেষ হয়েছে। এখন ওটার ভিডিওটা পোষ্ট হিসেবে রয়ে গেছে। ব্যাটা নিশ্চিত গার্লফ্রেন্ডের প্যারার বর্ণনা দিয়ে কান্নাকাটি করতে করতে বিশাল কোন ইমোশনাল লাইভ ভিডিও করেছিল। ক্লিক করলাম ভিডিওটাতে, কিন্তু ক্লিক করে যা দেখলাম সেটার জন্যে আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না।

শিমুল প্রথমে ক্যামেরাটা ওর রুমের বুকসেলফের কোথাও সেট করল, মোটামুটি ঐ পজিশন থেকে ওর রুমের বিশাল একটা অংশ তাতে স্ক্রিনে চলে আসে। এরপর একটু দুরত্বে দাড়িয়ে শুরু করল ওর গার্লফ্রেন্ডের প্যারার বন্দনা। এতটুকু অবশ্য আমি আশা করেই রেখেছিলাম। কিন্তু ঐ অবস্থাটা বেশিক্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হল না, কথার মোড় ঘুরে গেল আমার নাম উচ্চারণের সাথে সাথে। নাম ধরেই বলল আজ বিকেলে কি আইডিয়া দিয়েছিলাম ওকে, আর সেই আইডিয়াই সে এখন বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে বলে ঘোষনা করল!!

তারপর বিছানার উপর হতে কিছু একটা তুলল, হাতে নেবার পর বুঝলাম ওগুলি আসলে গামছা। ওর স্টাডির চেয়ারটা বিছনার উপর তুলে তার উপর ও দাড়াল। এরপর ঠিক যেভাবে বলেছিলাম ওভাবেই তিনটি গামছা সিলিং ফ্যানের তিন পাখায় বাধল। আর তারপর গামছা গুলি একত্র করে ওটা দিয়ে একটা ফাঁস তৈরি করল। আমি নিশ্বাস চেপে ওর কাণ্ডকারখানা দেখছি। তবে মনে মনে ক্ষীণ একটা আশা চেপে ধরে আছি যে শেষ পর্যন্ত ও আসলে ওরকম কিছু করবে না।

তারপর আবার চেয়ার হতে বিছানা আর বিছানা হতে নেমে স্ক্রিনের সামনে এসে দাড়াল। সত্যি সত্যি এর পরে যা কিছু ঘটবে তার জন্যে সকল দায়ভার ও ওর গার্লফ্রেন্ডের উপর দিল আর আমাদের সবাইকে বিদায় জানাল।
এবার আমি সত্যি সত্যি ঘামতে শুরু করলাম। অন্য মোবাইলটা দিয়ে ততক্ষনে আবারও সুমনকে ফোন করতে শুরু করেছি। রিং হচ্ছে কিন্তু ব্যাটা এখন আর ফোন উঠাচ্ছে না। আর এদিকে মোবাইল স্ক্রিনে দেখছি শিমুল আবারও বিছানার উপর দাড় করানো চেয়ারটাতে উঠে দাড়িয়েছে। এরপর কাঁপা কাঁপা হাতে তিন গামছা দিয়ে তৈরি ফাসটা গলায় পড়ে নিচ্ছে।

গামছার ফাসটা গলায় গলিয়ে দেবার পর ঐ অবস্থাতেই চিৎকার করে বলল- "দোস্ত তোকে ধন্যবাদ চমৎকার এই আইডিয়াটা দেবার জন্যে"। এরপর বাকিটুকু আর দেখা হল না, হাত থেকে মোবাইলটা খসে পড়ল আপনা-আপনি।



তারপর কিভাবে কি হয়েছে তা আর আমি তেমন পরিস্কার ভাবে বলতে পারছি না। ঘোরের মাঝে সময়টা পার হয়েছে আমার। মাথাটা পুরো ঝিম মেরে ছিল পরের পুরোটাা সময়। তবে এখন মাথাটা আবার পরিস্কার ভাবে কাজ করতে শুরু করেছে। আর কিছুক্ষন পরেই কয়েকজন গার্ড আসবে আমাকে এই সেলটা থেকে নিয়ে যেতে।

ঠাণ্ডা মাথায় উদ্দেশ্যপ্রনেদিত ভাবে বন্ধুকে আত্মহত্যা করার নিমিত্তে প্রভাবিত করার জন্যে কোর্টে বিজ্ঞ বিচারক আমার 'মৃত্যুদণ্ডাদেশ' কার্যকর করার রায় দিয়েছেন.....




মঙ্গলবার, অক্টোবর ২৫, ২০১৬

সামাজিক মূল্যায়ণঃ চটকদার অভিনেতা বনাম প্রকৃত সত্যপরায়ণ মানুষ



একবার এক ভদ্রলোক ফ্রান্সে ঘুরতে গেলে এক বিলবোর্ডে তার নজর আটকে যায়। সেটি ছিল এক প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠানের বিলবোর্ড। প্রতিযোগীতার বিষয়বস্তু ছিল, বিখ্যাত কৌতুকাভিনেতা স্যর চ্যারলি চ্যাপলিনকে অনুকরণের অভিনয় প্রতিযোগীতা (Charlie Chaplin Lookalike Contest)।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্যে অনেক প্রতিযোগীই ইতোমধ্যে সেখানে উপস্থিত হয়েছে। সকলেই চার্লি চ্যাপলিনের মত পোষাক পড়ে, আর তার মত মেকআপ নিয়ে সেখানে উপস্থিত। ভদ্রলোক ব্যাপারটি দেখে দ্রুত তার হোটেলে চলে গেলেন আর খুব দ্রুত সেজে-গুজে আবারও সেখানে ফিরে আসলেন; নাম লেখালেন ঐ প্রতিযোগীতায়।

নির্দিষ্ট সময় পর প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠান আরম্ভ হয়ে আবার শেষও হয়ে গেল। সকলেই নিজ নিজ প্রতিভা আর অভিনয় গুনকে কাজে লাগিয়ে মঞ্চে নিজেকে চার্লি চ্যাপলিনের রূপে উপস্থাপন করে গেল। তাদের অভিনয় দেখে মনেই হচ্ছিল না যে তারা আলাদা আলাদা কোন মানুষ। বরং মনে হচ্ছিল তারা বুঝি সকলেই এক একজন চার্লি চ্যাপলিন। তবুও যখন এটি একটি প্রতিযোগীতা, তাই তাদের মাঝে যারা ভালো করেছিলেন তাদেরকে বিজয়ী হিসেবে নির্বাচিত করা হচ্ছিল। একে একে সকল বিজয়ীদের নাম ঘোষনা করা হল। দেখা গেল ফ্রান্সে ঘুরতে আসা ঐ ভদ্রলোকটিও প্রতিযোগীতায় জিতে গেছেন। তবে তিনি প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় না হয়ে হয়েছেন সপ্তম স্থান অধিকারী। আর ঐ প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠানে কেবল ঐ সাতজনকেই বিজয়ী ঘোষনা করা হয়।

মজার ব্যাপার হল প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করে সপ্তম হওয়া ঐ ভদ্রলোক আর কেউ নন; সয়ং স্যর চার্লি চ্যাপলিন।

এমন ঘটনার পর স্যর চার্লি চ্যাপলিন ভাবতে বসলেন-
আসলেই কি তিনি নিজে প্রকৃত চার্লি চ্যাপলিন? নাকি যে ছয়জন অভিনয় গুণে তাকে টপকে গেছে তারাই এক একজন প্রকৃত চার্লি চ্যাপলিন?

এটা নিয়ে ভাবতে ভাবতেই তিনি অনুধাবন করলেন-
তারা সকলেই কেবল চার্লি চ্যাপলিনের বাহ্যিক রূপ, তার চালচলন, চলচিত্রে প্রদর্শত অভিব্যক্তিকেই নকল করে নিজেদের মাঝে ধারণ করতে পারে। ভেতর থেকে চার্লি চ্যাপলিনের অন্তর, তার ভাবনা কিংবা তার স্বাধীন চিন্তা-চেতনাকে কোনভাবেই কোনদিন নকল করতে পারবে না। আর এমনটা যে শুধু তার বেলায়তে ঘটবে তা কিন্তু নয়; বরং এ দুনিয়ার কারোর হৃদয়, চিন্তা-চেতনা, বিচারভঙ্গী অন্যকেউ এভাবে নকল করে নিজের মাঝে ধারণ করতে পারবে না। সেটা কোনভাবেই সম্ভব নয়।

কিন্তু আমারদের সমাজ, সমাজে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গী, এই দুনিয়া কোন কিছুই অন্তর দিয়ে চলে না; তারা চলে অভিনয় গুণে। যে ব্যক্তি যত বড় অভিনেতা, তার গ্রহনযোগ্যতা এ দুনিয়াতে তত বেশি।

আর সেই ভাবনার অনুধাবন থেকেই স্যর চার্লি চ্যাপলিন লিখেছিলেন-
We live in a world where showman succeed and the true man fail






¶ বর্ণিত ঘটনাটি গালগপ্প হিসেবেই প্রচলিত। স্যর চার্লি চ্যাপলিনের জীবন ঘটনা নিয়ে লেখা কোন বই কিংবা দলিলে উপরুক্ত ঘটনার গ্রহণযোগ্য কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। পাশাপাশি প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠানের স্থান নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। মূলত ঐ সময় খুব জনপ্রিয় একটি প্রতিযোগীতা ছিল এটা। প্রায় প্রতিটি বড় শহর আর উল্লেখযোগ্য প্রতিভা অন্বেষণ করা বিভিন্ন আয়োজকেরা এটি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে এমন প্রতিযোগীতার আয়োজন করছিলেন। একই সাথে প্রতিযোগীতায় স্যর চার্লি চ্যাপলিনের সপ্তম অবস্থান নিয়েও অনেক দ্বিমত রয়েছে। তবুও হাজার বিতর্কে ভরা এই গালগল্পটির বিষয়বস্তু কোনভাবেই 'গালগল্প' হিসেবে ধরে নেয়া সম্ভব নয়।






সোমবার, অক্টোবর ১৭, ২০১৬

রম্যঃ বিল আর জব্‌স এর গোপন কথোপকথন


স্টিভ জব্‌স গত হয়েছেন বেশ কয়েক বছর হল। প্রযুক্তির মানুষ, তার উপর প্রতিভাবান। শান্তির ঘুম ঘুমিয়েও ওপারে শান্ত ছেলের মত বসে থাকতে পারেন নি। ওপারে গিয়েই সকলের খোজ খবর নিতে আর প্রিয় বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করার জন্যে একটা স্পেশাল নেটওয়ার্ক তৈরি করে ফেললেন। তারপর সেই গোপন নেটওয়ার্কের অতি গোপন এক চ্যানেল দিয়ে যোগাযোগ করলেন প্রাণপ্রিয়(!) বন্ধু বিল গেট্‌সের সাথে। কিন্তু আমাদের দুষ্টু হ্যাকারেরা ঠিকই সেই অতি গোপন চ্যানেলের খোঁজ পেয়ে যায়। আর সেখানেই কান পেতে শুনে নেয় দুই বন্ধুর কথোপকথন...

রিং রিং টিং....রিং রিং... টিং...

বিল গেট্‌সঃ হ্যালো!

স্টিভ জব্‌সঃ কি হে বন্ধু! কেমন আছো?

বিল গেট্‌সঃ আরে! জব্‌স নাকি? কি খবর ভায়া?

স্টিভ জব্‌সঃ খবর তো সব তোমাদের কাছে, আমি তো সব খবরের বাইরে চলে এলাম। ভুলে গেলে?

বিল গেট্‌সঃ আরে কি যে বল না। তোমাকে কি আর চাইলেই ভোলা যায়? শুধু আমিই নই, বরং তোমার আবিষ্কার গুলির বদৌলতে মানুষ আমার চেয়ে বেশি তোমাকেই নিয়ে আলোচনা করে।

স্টিভ জব্‌সঃ হা হা! তাই নাকি? তাহলে নিশ্চই খুব বাজে অবস্থা চলছে দুনিয়াতে।

বিল গেট্‌সঃ তা যা বলেছ। তুমিই ভালো করেছো। নিজের নামের সাথে সম্মানটাকে নিয়ে আগেই কেটে পড়েছ। আর আমরা রয়ে গেলাম বদনামের সকল কোটা পূরণ করার জন্যে।

স্টিভ জব্‌সঃ আরেহ্‌ নাহ! দেখছি তো কি অবস্থা চলছে ওখানে। সেদিন দেখলাম আমার কোম্পানি iPhone 7 রিলিজ করেছে। আহাম্মক গুলি নিজে থেকে এখনো কিছুই করতে পারছে না। আমার হ্যান্ড স্কেচ গুলি উল্টো পাল্টা কোনরকম বুঝে iPhone এর নামটাকে বদনাম করছে দিন দিন। আর সেই বদনামের ভাগীদার এপারে বসে আমিও হচ্ছি সমান তালে।

বিল গেট্‌সঃ আচ্ছা, বাদ দাও ওসব কথা। তোমার কথা বল। তোমার ওদিকে সময় কেমন কাটছে? আচ্ছা ওপারের ব্যাপার স্যাপার কেমন, একটু বল তো শুনি।

স্টিভ জব্‌সঃ এপারের ব্যাপার স্যাপার একদম মন্দ না। তবে তোমার জন্যে খুব বড় একটা দুঃসংবাদ আছে বন্ধু।

বিল গেট্‌সঃ দুঃসংবাদ! বল কি? এখনো তো ওপারে গেলামই না, তার আগেই দুঃসংবাদ! তা কি দুঃসংবাদ একটু বলবে?

স্টিভ জব্‌সঃ হ্যাঁ, বিরাট দুঃসংবাদ বলতে পারো। এপারে সবই আছে, কিন্তু কোন বাউন্ডারি নেই।

বিল গেট্‌সঃ এ্যা! তা এটা কেমন দুঃসংবাদ হল?

স্টিভ জব্‌সঃ আহা! বুঝছো না কেন? সৃষ্টিকর্তা খুব চালাকির সাথে এই কাজটা করেছেন। তিনি কোন বাউন্ডারিই রাখেন নি কোথাও। আর তাই এপারে করাও কারও windows (জানালা) কিংবা Gates (দরজা) এরও প্রয়োজন হয় না।

বিল গেট্‌সঃ ওহো! তবে বিরাট দুঃসংবাদই বলতে হয়। তবে আমার মনে হয় কি জানো? দুঃসংবাদ আমার জন্যে যেমনই হোক, তোমার দুঃখ বোধ কিন্তু এপারের তুলনায় ওপারেই বেশিই।

স্টিভ জব্‌সঃ কেন? কেন?? আমার দুঃখ বোধ বেশি হবে কেন?

বিল গেট্‌সঃ না, মানে..। আসলে সৃষ্টিকর্তা তো সৃষ্টির শুরুতেই Apple(আপেল) ধরা-ছোঁয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। আর তার উপর তুমি ওপারে যাবার আগেই সবাইকে বুঝিয়ে-পড়িয়ে দিয়েছিলে যে Apple এর দাম কেমন চড়া হতে পারে। তাই বোধ করি ওপারে Apple প্রোডাক্ট কেউ লোভে পড়েও ধরে ছুঁয়ে দেখবার ইচ্ছে করবে না।

স্টিভ জব্‌সঃ তা অবশ্য খারাপ বল নি। তবে কি জানো? এপারে কিন্তু Apple এর জন্যে কিন্তু কোন Bill করা হয় না, একদম ফ্রি। এখানে-সেখানে ঝুলে আছে। আর ভয়েস কমান্ড আর মাইন্ড রিডিং সিস্টেম এত উন্নত যে, কারও ইচ্ছে হলে ওগুলি না ছুঁয়েই নিজেদের কাজ অনায়াসে করে নিতে পারে।

বিল গেট্‌সঃ তাহলে তো ব্যাপারটা তোমার জন্যে ব্যালেন্স হল মনে হচ্ছে।

স্টিভ জব্‌সঃ কেমন? কেমন??

বিল গেট্‌সঃ মানে এপারে তোমার কোম্পানিটা তোমাকে ছাড়া Jobs Less, আর ওপারে তুমি নিজে Jobs Less। তবে তুমি তাতে খুব বেশি বিচলিত হয়ো না। যেভাবে আইফোনের ডেভেলপমেন্ট এগুচ্ছে তাতে অচিরেই তোমার কর্মীরাও Steve-এর শূন্যতা মানে Jobs Less অবস্থাটা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারবে।

স্টিভ জব্‌সঃ হা হা হা! আচ্ছা বন্ধু, উঠতে হচ্ছে এখন। গার্ডটা সম্ভবত এই নেটওয়ার্কের খবর টের পেতে শুরু করেছে। পাই পাই করে এদিক সেদিক খোঁজা খুঁজি করছে।

বিল গেট্‌সঃ আচ্ছা যাও, তবে সময় পেলে আবার যোগাযোগ করো কিন্তু।

স্টিভ জব্‌সঃ করবো করবো! অবশ্যই করবো। আর সেটা সম্ভব না হলে তোমাকেই এপারে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করবো 😉





সোমবার, আগস্ট ২৯, ২০১৬

টোকা'র শব্দ



নীরবতার দরজায় হালকা টোকা দিয়ে যাচ্ছিল কেউ।
আমার প্রয়োজন অখণ্ড নীরবতা, সেখানে এই হালকা টোকার শব্দও আমার কাছে আল্ট্রাসনিক জেটের ইঞ্জিনের শব্দ মনে হচ্ছিল।

অখণ্ড নীরবতা প্রয়োজন আমার, চিৎকার করে তাড়িয়ে দিতে গেলে আমারই গড়া নীরবতার শীর্ণ কাঁচের দেয়াল ভেঙ্গে গুড়ো গুড়ো হয়ে ছড়িয়ে পড়বে আমার চারিপাশ। তাই অপেক্ষা শুরু করলাম, ক্লান্ত আর বিরক্ত হয়ে টোকার শব্দ সৃষ্টিকারী যদি আপন ইচ্ছেতেই দূর হয় -সেই আশায়। কিন্তু দীর্ঘ সময় পরেও তেমন কিছুই ঘটল না। মৃদু টোকার শব্দ বিরতিহীন ভাবে বেজেই চলছিল। ওদিকে আমার অপেক্ষার কাল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতরই হচ্ছিল কেবল।

তারপর একটা সময় আপনা-আপনিই টোকার শব্দ থেমে গেল। আনন্দ যেন ঠিক সে মুহূর্তেই আমাকে ঘিরে ধরল। অবশেষে ফিরে পেলাম আমি আমার অখণ্ড নীরবতা! কিন্তু ঐ আনন্দের আবেশ খুব বেশি সময় টিকে থাকল না। যদিও আমি এই অখণ্ড নীরবতা পাবার আশায় এতটা সময় বিরক্তি নিয়ে অপেক্ষা করে গেছি। তবুও এখন এই অখণ্ড নীরবতাকে আমি আর নিতে পারছি না।

দরজার ওপাশের শব্দ বন্ধ হলেও মনের গহীনে কোথাও মৃদু টোকার শব্দ বিরতিহীন ভাবে বেজে চলেছে। যে বাইরে ছিল, সে যেন আপন প্রস্থানেই তার অস্তিত্ব ফেলে গেছে আমার মনের গহীনে। এখন এই অখণ্ড নীরবতার কোন অর্থ নেই। বেজে যাওয়া টোকার শব্দেই ডুবে আছে মন....




সোমবার, জুলাই ২৫, ২০১৬

বদি এণ্ড রঞ্জুর কথোপকথন — ৬



বদি ভাইঃ রঞ্জু, তুই মুভি দেখিস?

রঞ্জুঃ দেখি তো বদি ভাই!

বদি ভাইঃ কি কি মুভি দেখিস?

রঞ্জুঃ বাংলা, ইংলিশ কিছু কিছু হিন্দি, কোরিয়ান, জাপানি, থাই সহ প্রায় সব ধরণের মুভিই দেখি। কেন বদি ভাই?

বদি ভাইঃ এই যে এত মুভি দেখেছিস ঐগুলির মাঝে কোন ভাম্পায়ারের মুভি ছিল না?

রঞ্জুঃ হ্যাঁ, ছিল তো। এই তো কিছুদিন আগে ডিজনি'র রিলিজ করা হোটেল ট্রানসিলভেনিয়া-২ দেখলাম। অসাম মুভি একটা।

বদি ভাইঃ হুম, অসাম মুভি। বুঝলাম।

রঞ্জুঃ কেন বদি ভাই! কোন সমস্যা?

বদি ভাইঃ না কোন সমস্যা না। আচ্ছা ঐ যে ভাম্পায়ার ছিল, ওরা কি খেয়ে বেঁচে থাকে বল তো দেখি।

রঞ্জুঃ ইয়ে! মানে... মুভিতে তো দেখায় ভাম্পায়ারেরা মানুষের রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে।

বদি ভাইঃ হুম, ভাম্পায়ার চরিত্রটার চরিত্রায়ন করা হয়েছে এমন ভাবে যেখানে দেখানো হয় ঐগুলি মানুষের রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে। আগে তো ভাম্পায়ার শুধু ভৌতিক সাসপেন্স আর ভায়োলেন্স যুক্ত মুভিতেই ভাম্পায়ারের চরিত্র থাকত। তবে এখন ভাম্পায়ারের চরিত্রের প্রসার ঘটেছে অনেক। রোমান্টিক, কমেডি, যুদ্ধ, কভার্টস্ট্রাইক টাইপের মুভিতেও চলে এসেছে ভাম্পায়ার। আর সাথে ডিজনি তো রয়েছেই তাদের চমৎকার সৃষ্টিশীল কাজ নিয়ে।

রঞ্জুঃ বুঝলাম। কিন্তু আজ আপনি হুট করে ভাম্পায়ার নিয়ে এত কিছু কেন বলছেন ঐটাই শুধু বুঝতে পারি নাই।

বদি ভাইঃ হা হা হা! বুঝিস নাই!
আসলে ভাবিতেছিলাম রঞ্জু, এই যে ভাম্পায়ার গুলিরে ওরা বানাইল। তারপর এত শত ব্যবহার করল। কিন্তু তারপরেও ভাম্পায়ারের খাবারের কিন্তু কোন পরিবর্তন করতে পারলো না। সেই আগের মতই সব ভাম্পায়ার মানুষের রক্তই খাইয়্যা বাইচ্চা থাকে। চিন্তা করে দেখো তো দুনিয়াতে এত এত খাবার থাকতে ভাম্পায়ার গুলিরে নাকি হুদা মানুষের রক্ত খাইয়্যা বাইচ্চা থাকতে হয়!

রঞ্জুঃ হুম, সেইটা তো আসলেই ভাববার মত বিষয়।

বদি ভাইঃ আচ্ছা বলতো রঞ্জু, ভাম্পায়ার গুলির চরিত্র এমন করে কেন তৈরি করেছে, যে সে না চাইলেও বাধ্য তাকে হয়ে মানুষের রক্ত খেতেই হয়?

রঞ্জুঃ কেন বদি ভাই?!

বদি ভাইঃ তোর ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি যারপরনাই হতাশ রঞ্জু! তুই এখনো ওয়াইড মাইন্ডে কিছু বোঝার চেষ্টা করিস না! এমন করে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে যে তোর কি হবে তাই নিয়ে আমি বড়ই শঙ্কায় থাকি মাঝে মাঝে।

রঞ্জুঃ আহ্‌ বদি ভাই! আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে পরে শঙ্কা করলেও চলবে, আগে আপনে বলেন কেন ভাম্পায়ার গুলিকে অনিচ্ছাতেও রক্ত খেতে হয়।

বদি ভাইঃ আচ্ছা শোন মন দিয়ে।
ভাম্পায়ারের মুভিতে তো দেখেছিস, ওরা হাজার হাজার বছর কফিনে বসবাস করে। দিনের বেলাতে ঘুম আর সন্ধ্যার পর জেগে উঠে। তারপর যায় মানুষের রক্তের সন্ধানে।

রঞ্জুঃ হুম দেখেছি।

বদি ভাইঃ আবার এইটাও নিশ্চই দেখেছিস যে ওরা সূর্যের আলো সহ্য করতে পারে না। সূর্যের আলো গায়ে পড়লে হয় ধোঁয়া হয়ে উড়ে যায় কিংবা বালির মত ঝড়ে যায়।

রঞ্জুঃ হ্যাঁ, এটাও দেখেছি। ওদের জন্যে সূর্যের আলো হচ্ছে মৃত্যু স্পর্শের সমতুল্য।

বদি ভাইঃ তাহলে এই থেকে কি প্রমাণ হয়?

রঞ্জুঃ কি প্রমাণ হয় বদি ভাই!!

বদি ভাইঃ আরে গাধা এই থেকে প্রমাণ হয় যে জন্মের পর ওরা আমাদের মত সূর্যের আলো গায়ে মেখে ভিটামিন 'ডি' নিতে পারে না। আর ভিটামিন 'ডি' না থাকলে শরীরের হাড়গোড় শক্ত হয় না। আর হাড়গোড় শক্ত না হলে হাজার হাজার বছর ক্যামনে বেঁচে থাকবে বল?
তাই ওরা শুধুমাত্র ভিটামিন 'ডি' পাওয়ার জন্যে অনিচ্ছাতেও মানুষের রক্ত খেয়ে বেড়ায়! বুঝলি রে আহাম্মক!

রঞ্জুঃ হা হা হা হা!
একেবারে টু দ্যা পয়েন্টে বুঝতে পেরেছি!






রবিবার, জুলাই ২৪, ২০১৬

কমিকঃ নক্ষত্রজ্ঞানী




কমিকটি পিডিএফ হিসেবে ডাওনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন







────────────────────────────
♦ কমিক : নক্ষত্রজ্ঞানী | Stargazer
♦ সংগ্রহ : Stumbleupon.com Stream
♦ জঘন্য অনুবাদে : আমি :p