শনিবার, অক্টোবর ১২, ২০১৩

নিঃশব্দের গল্প...

- এই ছেলে এখানে কিভাবে আসলে? কাকে চাও?
কোন উত্তর নেই। একটু তাকিয়ে আবার তার দৃষ্টি মাটিতে নিয়ে গেল।

- এই ছেলে! আমি তোমাকে কি জিজ্ঞাস করলাম??
এইবার ছেলেটা ভাল করে তাকাল আর একটু হাসি দিল; যেন এটাই তার উত্তর।

- এখানে দাড়িয়ে আছো কেন?? কাকে চাই?? সমস্যা কি তোমার, কথার জবাব দিচ্ছ না কেন??

ছেলেটা কিছু না বলে পকেট থেকে ছোট্ট এতটা নোটবই আর একটা পেন্সিল বের করলো। তারপর নোটবই টা খুলে তাতে কিছু একটা লিখে বাড়িয়ে দিল। তাতে লিখা "দুঃখিত, আমি কথা বলতে পারি না। তবে শুনতে আর লিখতে পারি।"

এটা দেখে রাকিব সাহেবের হঠাৎ মনটা খারাপ হয়ে গেল। রাজপুত্রের মত একটা ছেলে, কিন্তু কত বড় অন্যায় করেছে বিধাতা তার সাথে। মনের কথা গুলি মুখে নিয়ে আসতে পারে না বেচারা। এটা ভাবতে ভাবতেই অন্য একটা ছেলের কথাও মনে পরে গেল। তার নিজের ছেলে, আবির। আবিরও কথা বলতে পারতো না এই ছেলেটির মত। ঠিক এই ছেলেটির মতই কথা শুনতে আর বুঝতে পারতো। হাসির শব্দ করতে পারতো না। তবুও মুখে সবসময় একটা মায়া-মাখানো হাসি ঝুলিয়ে রাখতো।

আবিরের কথা মনে পরেনা সেই কবে থেকে। হঠাৎ করেই খুব জ্বর হল। ঐ সময় ছেলেকে ডাক্তার পর্যন্ত দেখানোর সামর্থ্য ছিল না তার। দুইদিন ভোগার পর হঠাৎ করেই জ্বর ভাল হয়ে গেল। খুব দুষ্টামি করলো সারাদিন। সন্ধ্যায় ক্লান্ত হয়ে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়েও পড়লো। কিন্তু রাতে ঘুমিয়ে ছেলেটা আর সকালে উঠলো না, ঘুমিয়েই থাকলো। কত ডাকাডাকি করলো কিন্তু ছেলেটা তার ডাক যেন গা'ই করলো না। ঘুমিয়েই থাকলো নিজের মত করে।

ঐদিন থেকে বিধাতার উপর একটা আক্রোশ জন্মে গেছে মনে। আক্রোশ জন্মেছে দারিদ্রতার প্রতি। তার আক্রোশ তাকে এখন পাজেরো গাড়িতে চলার মত অবস্থা করে দিয়েছে। বিরাট এসি রুমে বসে বসে সময় কাটানোর সুযোগ করে দিয়েছে। এখন ইচ্ছে করলেই দেশের বাইরে চেকআপের জন্যে যেতে পারে সে।

ভুল করেও এত বছর সে আবিরের কথা মনে করে নি। কিন্তু আজ মনে হয়েই গেল। সাথে মেজাজটাও খারাপ হয়ে গেল তার। একটু রুক্ষ স্বরেই জিজ্ঞাস করলো ছেলেটিকে,
- তা এখানে দাড়িয়ে আছো কেন? কাকে চাই??
ছেলেটি আবারও একটা হাসি দিয়ে নোটবইটাতে লিখে তাকে দেখালো। সেখানে লেখা আছে, "আপনার সাথে"

রাকিব সাহেব এইবার আরো একটু বিরক্তি নিয়ে বললেন
- আমার সাথে মানে কি? তুমি কি জানতে আমি এই সময়ে এখানে আসবো? আর এখানে কেন আমার জন্যে অপেক্ষা করতে হবে?
ছেলেটা আবারও নোটবইতে লিখে দেখালো "আমি এখানে প্রতিদিন অপেক্ষা করছি, গত ২মাস ধরে আপনার জন্যে"

এইবার রাকিব সাহেব একটু অবাক হয়ে বললেন
- টানা দুইমাস ধরে অপেক্ষা করছো আমার জন্যে? তাও আমার গ্যারেজের আড়ালে? ঠিক কি কারণে জানতে পারি?

ছেলেটা আবারও লিখলো, আর আস্তে করে তার চোখের সামনে ধরলো নোটবইটা। সেখানে স্পষ্ট করে লিখা
"বাবা আমি আবির"

রাকিব সাহেব এতটুকু পড়েই জ্ঞান হারালেন।

পরের দিন পেপারে একটা শোকবার্তা ছাপা হলো। সেটা স্বনামধন্য শিল্পপতি রাকিব সাহেবের মৃত্যু সংবাদ। সন্ধ্যায় তার ড্রাইভার তাকে গ্যারেজের পাশে মাটিতে পড়ে থাকা অবস্থায় আবিস্কার করে। সাথে সাথে হাসপাতালেও নেয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। সবাই ধারনা করলো হঠাৎ করেই হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গেছেন তিনি। কিন্তু কেউ জানতে পারলো নিঃশব্দ ঐ ছেলেটির কথা।







বৃহস্পতিবার, অক্টোবর ১০, ২০১৩

আমার আব্বার রসিকতা...

আব্বা প্রায় রাত্রেই দেরি করে আসে। আসেতে আসতে প্রায়ই রাত ১২টা বেজে যায়। আর দিনে আর যাই হোক রাতের খাবারটা আব্বার সাথে একসাথে না খেলে কেমন জানি অপূর্ণতা থেকে যায় ঐদিন। তাই প্রতিদিনই আব্বা আসলে তার সাথেই একত্রে খেতে বসি। আমার দাদী এখনো জীবিত আছে। আমাদের সাথেই ভাল-খারাপ সময়ের সাথী হয়েই আছেন। শারীরিক এবং মানুষিক ভাবে বলতে গেলে আমার দাদী এখনো অনেক ফিট রয়েছে। দাদী এত দেরী করে খেতে পারে না। রাত্র ৯টা নাগাদ খেয়ে নেয়। আর বলতে গেলে নিয়ম করেই রাত ১১টার মধ্যে ঘুমাতে চেষ্টা করেন। ছোট্ট পরিবারে সবাই নিজেদের খোঁজখবর রাখতে পারে। আব্বা প্রায়ই খেতে বসে আম্মাকে জিজ্ঞাস করে দাদী খেয়েছে কিনা। যদিও সে জানে দাদী ঠিকই সময় মত খেয়ে নিয়েছে।

ঐদিনও আব্বার আসতে ১২টা বেজে গেল। তবে দাদী ঐদিন কোন কারণে সময় মত ঘুমাতে যায়নি। আব্বা এসে ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং এ খেতে বসেছে। আর তখন দাদী ঘুমানোর জন্যে রুমে যাচ্ছিল। আব্বাকে দেখতে গম্ভীর মনে হলেও আব্বা মাঝে মাঝে ছোটখাটো দুষ্টামি করে আমাদের নিয়ে। ঐদিন সেরকমই একটা করলো। দাদী শুতে যাবার সময় তাকে ডেকে জিজ্ঞাস করলো- "আম্মা খেয়েছেন?" দাদী উত্তরে বললো "হ্যাঁ, খেয়েছি" এইবার আব্বা আবার জিজ্ঞাস করলো "কি খেয়েছেন?" আব্বা কিন্তু ততক্ষণে ঐদিনের খাবার মেন্যু সব জেনে গেছে। তবুও দুষ্টামিটা করার জন্যেই জিজ্ঞাস করলো। দাদী জানালো আজ কি খেয়েছে।

এইবার আব্বা আসল দুষ্টামি শুরু করলো। বললো-
"হয়নি আম্মা। জিদ করে বলতে হবে"

আমার দাদী তো পুরো অবাক আব্বার ঐ কথা শুনে। জিদ করে কিভাবে আবার বলে এই কথা? সে বললো-
"কি বলবো কি করে??"

আব্বা বললো-
"এইভাবে বলেন।
হুহ! কি দিয়ে আর খাবো? ডাল আর ভর্তা ছাড়া আর কি রান্না হয়েছে আজ ??"

দাদী আব্বার এই কথা শুনে কিছু না বলেই হাসতে হাসতে তার রুমে চলে গেল। আম্মা আর আমি ছিলাম খাবার টেবিলে। জোরে শব্দ করে না হাসতে পারলেও আমরা দুইজনই মনে মনে হাসছিলাম ঐ মুহূর্তে...






বুধবার, অক্টোবর ০৯, ২০১৩

সময়ের স্মৃতি...

মাঝে মাঝে ছোটখাটো ঝড় এসে জীবনের অনেক কিছুই পরিবর্তন করে দিয়ে যায়। পরিবর্তন করে দেয় মানুষের মানুষিকতা, সম্পর্ক আর বিশ্বাস...

আরো পরিবর্তন করে দেয় জীবনের গতিপথ। তৈরি করে দেয় কাছের মানুষের সাথে বিশাল দূরত্ব...

তবে, যা কখনোই পরিবর্তন করতে পারে না তা হল স্মৃতি। জীবনের চলার পথ যতই পরিবর্তন হোক না কেন; দূরত্ব যতই থাকুক না কেন; বিশ্বাস যতই ভাঙ্গুক না কেন। পাশাপাশি থেকে কাটানো ভাল সময়ের স্মৃতিগুলোকে কখনোই পরিবর্তন করতে পারে না এই ঝড়গুলো...







শনিবার, অক্টোবর ০৫, ২০১৩

নিজেকে বুঝতে না পারা সময়ের কথা...

মাঝে মাঝে কিছু সময় আসে যখন কোন আবেগ থাকে না, থাকে না নিজের কিছু বলার। আর মনটা থাকে তখন একেবারেই ফাঁকা। সময়টা আনন্দের নাকি বিষাদের সেটাও বুঝে উঠা যায় না। বোঝা যায় না কি করতে হবে কিংবা কি করা উচিৎ।

নিজেকে অনেক অচেনা লাগে সেই সময়টাতে। অবাক হয়ে ভাবতে হয়- "এমন কেন আমি?"

দুরন্তপনা গুলি মন থেকে গায়েব হয়ে যায়। ঠাট্টা গুলি তখন আর মনকে আনন্দ দেয় না। কষ্টগুলি দিতে পারে না মানুষিক যন্ত্রণা। জড় বস্তুতে পরিণত হয়ে যায় মানুষ সেই সময়টাতে।


আমি এখন একটা জড় বস্তু। নিজের আবেগ গুলিকে বুঝতে পারছি না। তারা নিজেদের মত হাত পা গুটিয়ে বসে আছে। আর আমি তাদের পুনরায় জেগে উঠার অপেক্ষায় আছি...