আমরা সকলেই নিজ নিজ গল্প, কবিতা, ছন্দ, ভাব কিংবা লেখার সাথে মিল রেখে অন্তত একটি ছবি পোষ্টের সাথে জুড়ে দেই। এই ছবি জুড়ে দেয়ার ব্যাপারটির গুরুত্ব আশা করি নতুন করে বলতে হবে না। এটি একাধারে যেমন আপনার লেখাটিকে নতুন একটি মাত্রা প্রদাণ করে তেমনি লেখাটির গ্রহণযোগ্যতা আর তার আকর্ষণ বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। অনেক সময় দেখা যায় পাশাপাশি কয়েকটি লেখা। কিন্তু একটি লেখার সাথে ছবি জুড়ে দেবার কারণে সেই পোষ্টটিই মানুষকে বেশি আকর্ষণ করছে বাকি গুলোর তুলনায়; যদিও বাকি লেখা গুলোও বেশ মানসম্মত। তাছাড়া আমাদের সবজান্তা গুগল মামারও এই ছবি সম্বলিত পোষ্টের দিকে বিশেষ দূর্বলতা আছে বলেই গোপন এক সংবাদে জেনেছি।
কিন্তু কথা সেটা নয়। আমরা একটু চেষ্টা করলেই নিজের লেখার সাথে মিল রেখে ব্লগ পোষ্টে ছবি আপলোড করতেই পারি। সমস্যাটা হচ্ছে আমাদের আপলোড করতে চাওয়া ছবির 'সাইজ'। আসলে এইখানে সাইজ শব্দটাকে দুই ভাবে উপস্থাপন করা যায়। এক হচ্ছে এর দৈর্ঘ-প্রস্থের মাপ যাকে আমরা সহজ ভাবে রেজুল্যুশন বলেই চিনি। আর অন্যটি হলো ঐ ছবির ফাইলটির দখল করা মেমরি স্পেস।
ব্যাপারটা আরও একটু সহজ করে বলার চেষ্টা করি। প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় আমাদের প্রায় সকলের হাতে রয়েছে একটি করে স্মার্টফোন। এখন আপনি আপনার স্মার্টফোনটির ক্যামেরা এ্যাপ চালু করে তার সেটিংস এ গেলেই দেখতে পাবেন আপনার ক্যামেরায় ছবি তোলার জন্যে কয়েক ধরণের সুবিধা রয়েছে। এই যেমন আপনার স্মার্টফোনটির ক্যামেরা ১২ মেগাপিক্সেল হলেও চাইলে আপনি সেটি দিয়ে ৮ মেগাপিক্সেল কিংবা ৫ মেগাপিক্সেল সেট করেও ছবি তুলতে পারবেন। এখন আপনি ৫ মেগাপিক্সেলে ছবি তুললে তার দৈর্ঘ হবে ২৫৬০ এবং প্রস্থ হবে ১৯২০ পিক্সেল। আবার ৮ মেগাপিক্সেল সেট করে ছবি তুললে তার দৈর্ঘ হবে ৩২৬৪ এবং প্রস্থ হবে ২৪৪৮ পিক্সেল। সাধারণ ভাবেই বোঝা যাচ্ছে ৫ মেগাপিক্সেল এর তুলনায় ৮ মেগাপিক্সেল দিয়ে ছবি তুললে তাতে বেশি পরিমাণ ডেটা সংরক্ষিত হবে আর ছবিটি ৫ মেগাপিক্সেলের তুলনায় আরও বেশি স্পষ্ট থাকবে। সেক্ষেত্রে ৫ মেগাপিক্সেলে তোলা ছবিটি যদি ২.৫ মেগাবাইট মেমরি স্পেস দখল করে তবে ৮ মেগাপিক্সেল ছবিটি দখল করবে ৩ থেকে ৫ মেগাবাইট পর্যন্ত মেমরি স্পেস।
এখন চলুন একটি হিসেব করি। ধরলাম আপনি আপনার মোবাইলে ৮ মেগাপিক্সেল দিয়ে তোলা একটি ছবি আপনার পোষ্টের সাথে জুড়ে দিয়েছেন। আরও ধরে নিলাম ছবিটি ব্লগ সাইটের ৫ মেগাবাইট মেমরি দখল করল। এখন কেউ যখনই আপনার পোষ্টটি পড়বে কিংবা ব্রাউজারে লোড করবে তখনই ব্লগ এর ব্যান্ডউইথ থেকে ৫ মেগাবাইট খরচ হতে থাকবে। এখন যদি আপনার পোষ্টটি ১০০ জন পাঠক পড়ে থাকে কিংবা ১০০ বার আপনার পোষ্টটি হিট হয় তাহলে গড়পড়তা আপনার পোষ্টের জন্যে ব্লগের ব্যান্ডউইথ খরচ হবে ৫ x ১০০ = ৫০০ মেগাবাইট। এটা শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট পোষ্টের নির্দিষ্ট ছবির হিসেব। এখন চিন্তা করুন এমন ১০০টি ছবি যদি কোন ব্লগে আপলোড করা থাকে তাহলে সবগুলো ছবি মিলিয়ে ব্লগ স্পেস থেকে দখল থাকবে ৫০০ মেগাবাইট আর তার বিপরীতে ১০০ জন ভিজিটর ছবি গুলো দেখলে গড়পড়তা ব্যান্ডউইথ খরচ হবে প্রায় ৫০০ x ১০০ = ৫০০০০ বা প্রায় ৫০ গিগাবিট। পাবলিক ব্লগে ৫০ গিগাবিট ব্যান্ডউইথ কিন্তু একদম ফেলে দেবার মত হিসেব না।
তো এর থেকে পরিত্রাণের উপায়? ছবি বিহীন পোষ্ট??
না, আমি মোটেই সে কথা বলছি না। বরং আমি অবশ্যই আপনাদের ছবি সম্বলিত পোষ্ট দেবার জন্যে উৎসাহিত করবো। তার বিপরীতে আমরা কিছু টেকনিক ব্যবহার করলেই এই বিষাল(!) ব্যান্ডউইথ কমিয়ে আনতে পারি। আর সেই টেকনিকটির নাম ইমেজ অপটিমাইজেশন।
ইমেজ অপটিমাইজেশন নিয়ে লিখতে বসলে সেটা নিয়েই বেশ বিষাল আকারের একটা পোষ্ট করা যাবে। হয়তো চেষ্টা করলে পোষ্টের সিরিজও তৈরি করা সম্ভব এই টপিকে। আপাতত আমি সেই দিকে গেলাম না (কিংবা বলা যায় ইচ্ছে করে চেপে গেলাম, কারণ বলতে গেলেই খালি কলসির ঢং ঢং আওয়াজ বের হয়ে আসবে কি না 😋)।
ইমেইজ আপটিমাইজ আসলে দু ভাবে করা যায়। মূল ছবির দৈর্ঘ আর প্রস্থের পিক্সেলের পরিমাণ (রেজুল্যুশন) কমিয়ে এনে অপটিমাইজ করা কিংবা ছবির সাইজ ঠিক রেখে একে কিছুটা কমপ্রেস করা। অনেক ধরণের টুল কিংবা সফটওয়্যার ব্যবহার করে কাজটি করা যায়। চাইলে আপনি Adobe Photoshop দিয়েও যেমন কাজটি করতে পারেন তেমনি আবার ফ্রি ওপেন-সোর্স সফটওয়্যার GIMP দিয়েও ইমেজ কমপ্রেস করে নিতে পারেন। তবে আপাতত আমি ডেক্সটপ ভিত্তিক সফটওয়্যারের দিকে না গিয়ে আরও একটু সহজ আর কম টোকাটুকিতে কাজ সাড়া যায় এমন পদ্ধতির দিকে আপনাদের মনযোগ টেনে নিচ্ছি।
ডেক্সটপ, ল্যাপটপ কিংবা স্মার্টফোন যে কোন ডিভাইসেই আপনি আপনার ব্রাউজারের সহায়তা নিয়ে এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করতে পারবেন। অনলাইনে বেশ কিছু ইমেজ অপটিমাইজ করার ওয়েব এ্যাপ রয়েছে। আমরা এগুলোর সহায়তা নিয়ে খুব সহজেই ছবির ক্ষতি না করে (ঘোলা কিংবা অতিরিক্ত ছোট করে পিক্সেল নষ্ট করা) ছবির সাইজ কমিয়ে আনতে পারি।
সাধারণত ব্লগ পোষ্টের জন্যে ছবির আদর্শ মাপ ধরা যায় দৈর্ঘে ১২০০ পিক্সেল এবং লম্বায় ৬৭৫ পিক্সেল (রেশিও ১৬:৯)। কিংবা ছবির ছোট আকারের জন্যে দৈর্ঘে ৬০০ পিক্সেল এবং লম্বায় ৩৩৫ পিক্সেল। এই মাপটিকে আদর্শ বলার কারণ হল, এই মাপের ছবি যে কোন সোস্যাল নেটওয়ার্ক (ফেসবুক, টুইটার, গুগলপ্লাস, লিংক্ডইন প্রভৃতি)-এ শেয়ার করার জন্যেই আদর্শিক। এই মাপের ছবি সোস্যাল নেটওয়ার্ক গুলোর পোষ্ট হিসেবে ঠিকঠাক মপেই দেখা যায়। তাছাড়া বড় আকারের ছবি ব্যবহার করলে তা প্রায়ই ব্লগের বডি ব্লকের সাইজ মেইনটেইন করতে গিয়ে ছোট আকারে চলে আসে, তখন অনেক সময় সেটি দেখতে আর ততটা আকর্ষণীয় মনে হয় না। এছাড়াও বেশি বড় সাইজের ইমেজ সাইজ হলে তা লোড হতেও অনেক সময় লাগায়, যা ব্লগ রিডারদের মনযোগ নষ্ট করে কিংবা পোষ্ট বিমুখী করে দেয়।
আপনি চাইলে এর মাপের বাইরেও ছবি ব্যবহার করতে পারেন। তবে সেটি নির্ভর করবে আপনার পোষ্টের বিষয়বস্তু, আর পোষ্ট সাজানোর উপর ভিত্তি করে।
১২০০ x ৬৭৫ পিক্সেলের মূল ছবি - সাইজ ৪৯৯.৬ কিলোবাইট |
Compressor.io
এই সাইটটি থেকে খুব সহজেই আপনি আপনার ছবি অপটিমাইজ করতে পারবেন। সাইটটি JPG, JPEG, PNG, GIF এবং SVG ফাইল নিয়ে কাজ করতে পারে। সাধারণত ছবির কোন ক্ষতি না করেই এর ফাইল সাইজ কমিয়ে আনার ব্যাপারে এটি দারুণ কাজ করে থাকে। তবে এই সাইটটি একই সময় কেবল একটি ছবি অপটিমাইজ করার সুবিধা প্রদাণ করে। আপনার অনেক গুলো ছবি থাকলে একটি একটি করে আপলোড করে তা অপটিমাইজ করে নিয়ে ডাওনলোড করতে হবে।TinyJPG
ইমেজ অপটিমাইজেশনের সাজেশন চাইলে গুগলে যে কয়েকটি রেজাল্ট পাওয়া যায় তার প্রথম ২/৩ এর মধ্যেই এই সাইটটির অবস্থান। এটি মোটামুটি পুরনো ও নির্ভরযোগ্য একটি সাইট, পাশাপাশি ওয়ার্ডপ্রেস ব্লগিং করার জন্যে এদের আলাদা প্লাগ-ইন রয়েছে। সাইটটি কেবল JPEG এবং PNG ফরম্যাটের ছবি নিয়ে কাজ করতে পারে। ফাইল সাইজ কমিয়ে আনবার ব্যাপারে সেও খুব দারুণ কাজ করে। ছবির ক্ষতি না করে যতটুকু সম্ভব, ততটুকুই কমিয়ে নিয়ে আসে ফাইল সাইজ। পাশাপাশি আপনি একই সাথে ৫ মেগাবাইট করে ২০ টি ছবি একই সাথে এই ওয়েব এ্যাপের মাধ্যমে প্রসেস করতে পারবেন।Optimizilla
Optimizilla আপনার ছবিটির যথাসম্ভব সাইজ কমিয়ে আনে ছবির প্রকৃতি নষ্ট না করেই। পাশাপাশি আপনি চাইলে আপনি আপনার ছবিটি কতটুকু কমপ্রেস করতে চান তা নির্ধারণ করে দিতে পারেন এই ওয়েব এ্যাপটিতে। সাইটটি JPEG এবং PNG ফরম্যাটের ছবি নিয়ে কাজ করতে পারে। আর একই সাথে এ্যাপটি ২০ টি ছবিকে অপটিমাইজ করার কাজ করতে সক্ষম।ShortPixel
ShortPixel ওয়েব এ্যাপের মাধ্যমে আপনি ১০ মেগাবাইট ফাইল সাইজের ৫০ টি ছবি একসাথে অপটিমাইজ করার সুযোগ পাবেন। সাইটটি JPEG, PNG এবং নন-এনিমেটেড GIF ফাইল অপটিমাইজ করতে পারবে। অপটিমাইজেশন শেষে ডাওনলোডের পূর্বেই ইচ্ছে হলে আপনি ছবির হাল খুব সহজেই তুলনার অনুপাতে দেখে নিতে পারবেন।লেখাটি অনেক লম্বা হয়ে গেলো, তারপরও যদি কেউ এটি থেকে বিন্দুমাত্র উপকৃত হয় তাহলে কিস্ট্রোক গুলো সার্থক হবে।