বুধবার, নভেম্বর ১৬, ২০১৬

Jetsons এবং হান্না-বারবারা


ছোটবেলায় কার্টুন নেটওয়ার্ক চ্যানেলে The Jetsons কার্টুন সিরিজটা দেখতাম। অত্যান্ত মজার কার্টুন গুলির মধ্যে সেটি ছিল একটি। কেউ যদি আমাকে তখন বলত নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে সারাদিন কার্টুন দেখতে হবে, সম্ভবত তার সেই শর্ত মেনে নিয়ে আমি সারাদিনই কার্টুন দেখতাম।


এ পৃথিবীতে অনেকেই এখন পর্যন্ত এমন অনেক ধারণা দিয়ে গেছে যার প্রয়োজন এবং বাস্তবায়ন বুঝতে আমাদের শতবছরেরও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। তেমনই দুজন মানুষ হলেন উইলিয়াম হান্না এবং জোসেফ বারবারা।


The Jetsons কার্টুন সিরিজটি যারা দেখেছেন তারা মনে করতে পারবেন কার্টুনে দেখানো তাদের জীবন যাপনের অবস্থা এবং ব্যবস্থা গুলি। সেখানে অত্যাধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা, ভাসমান যান, অটোমেটেড লোকেশন ট্রাকিং ডিভাইস, ভয়েস কমান্ড বেস্‌ড মডিউল, উড়ন্ত ডিসপ্লে সমেত কম্যুনিকেশন মডিউল, রোবট সেক্রেটারি এবং হোমকিপার, রোবট জন্তু সহ নানান ধরণের কাল্পনিক (ঐ সময় এসবের সবই শুধু কাল্পনিক নয়, অতিকাল্পনিক ছিল) জিনিষ দেখানো হয়েছে। অথচ ঐসব কাল্পনিক বস্তু গুলি ধীরে ধীরে আমাদের কাছে টেক-টয়(প্রযুক্তির খেলনা) হিসেবে চলে এসেছে। অল্প ক’দিন বাদেই হয়তো আমরা ঘরের কাজ করার জন্যে ইন্টিলিজেন্ট (অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা/সিদ্ধান্ত নিতে পারে এমন) রোবটও পেয়ে যাবো।


তবে সেখানে দেখানো সবচেয়ে সাধারণ একটা বস্তু ছিল তাদের বাড়ি। আমাদের সাধারণ বিল্ডিং গুলোর মত সেখানে দেখানো বিল্ডিং গুলি একদম গ্রাউন্ড থেকে শুরু হতো না। বরং গ্রাউন্ড থেকে লম্বা দুটো দন্ডের উপর একটি বেস এবং সেই বেসের উপর তাদের বিল্ডিং গুলি দেখা যেত।

হান্না-বারবারা নিশ্চিত ভাবেই দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। আমরা আমাদের এই পৃথিবীটাকে যেভাবে বসবাসের অযোগ্য করে তুলছি দিনকে দিন, তাতে অদূর ভবিষ্যতে হয়তো ভূমির কাছাকাছি কোথাও মানুষের টিকে থাকাটাই অসম্ভব হয়ে উঠবে। আর সেই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্যে আমাদেরও জেটসন কার্টুনের মত বেছে নিতে হবে ভূমি থেকে অনেক উঁচুতে বাড়ির মডেল।








বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ০৩, ২০১৬

বদি এণ্ড রঞ্জুর কথোপকথন —৭



বদি ভাইঃ রঞ্জু, ইংরেজিতে Ironic নামে একটা একটা শব্দ আছে। জানিস তো?

রঞ্জুঃ উউম্মম্মম্মম্ম..... কি জানি; মনে পড়ছে না।

বদি ভাইঃ এদ্দিন স্কুল-কলেজ করে কি শিখলি যে সাধারণ কিছু ইংরেজি শব্দ তোর মাথায় থাকে না?

রঞ্জুঃ ইয়ে..... মানে...... সে যাই হোক। এখন বলেন ঐটা কি।

বদি ভাইঃ তোমারে দিয়া কিস্যু হবে না রঞ্জু। বুজলা! তোমার ভবিষ্যৎ পুরাই বাঁশের বিল্ডিং এর মত।

রঞ্জুঃ আচ্ছা হইল সেটা। এখন বলেন Ironic এর অর্থ।

বদি ভাইঃ Ironic এর অর্থ হইল 'বিদ্রূপাত্মক'

রঞ্জুঃ বিদ্রূপাত্মক! এটা আবার কি জিনিষ!

বদি ভাইঃ বুঝলা না?

রঞ্জুঃ না তো।

বদি ভাইঃ ধর কোন একটা ঘটনা বা কারো কথা যদি তারেই ব্যঙ্গ করে কিংবা টিপ্পনী কাটে তখন ঐটারে বলা যায় বিদ্রূপাত্মক ঘটনা।

রঞ্জুঃ তো এইটারে সোজা করে বললেই পারতেন যে কাউরে নিয়ে মজা করার অর্থই Ironic। হুদাই প্যাচ-গোচ লাগাই এতকিছু বললেন।

বদি ভাইঃ আরেহ্‌ নাহ। শুধু শুধু কাউরে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা বা মজা করার অর্থ Ironic না। Ironic হইতে হইলে ঘটনাটারে এমন হইতে হবে যাতে মনে হয় ঘটনাটা নিজেই ঘটনাটারে বা কোন লোকের কথা বা কাজ ঐ লোকটারেই পরিহাস করতেছে।

রঞ্জুঃ আচ্ছা, বুঝলাম।

বদি ভাইঃ কি বুঝলা!

রঞ্জুঃ ঐ তো, যা বুঝাইলেন। তাই বুঝলাম।

বদি ভাইঃ তাই নাকি? তাহলে পরে Ironic ঘটনার একটা উদাহরণ দেও দেখি।

রঞ্জুঃ উউম্মম্মম্ম...................
ইয়ে... মানে.... বদি ভাই। মাথা চুলকায়, একটু হিন্ট দেন না!

বদি ভাইঃ বুঝলা রঞ্জু, তোমারে নিয়ে আমি পুরাই হতাশ। কোন কিছুই একটু ভালো করে চিন্তা কর না তুমি। তার আগেই হাল ছেড়ে দেও। এইটা বড়ই পরিতাপের কথা।

রঞ্জুঃ আচ্ছা! হল তো। এখন একটু হিন্ট দেন। তারপর না পারলে যা খুশি বইলেন।

বদি ভাইঃ নাই, কোনে হিন্ট নাই। গুগল করে বুঝে নিও।

রঞ্জুঃ গুগল! আরে হ্যাঁ, তাই তো।

বদি ভাইঃ কি হইলো?

রঞ্জুঃ পেয়ে গেছি Ironic এর উদাহরণ।

বদি ভাইঃ তাই নাকি? কি? বল শুনি।

রঞ্জুঃ হ্যাঁ, এই যে গুগল করতে বললেন। তখনই পেয়েছি।
ধরেন কেউ Google.com এ গিয়ে সার্চ বক্সে যদি 'Best alternative of google search engine' লিখে সার্চ করে। আর গুগল যদি সেই সার্চ কোয়েরির ৩ লাখ উত্তর দেখায় তবে সেইটা হল একটা Ironic ঘটনা।

বদি ভাইঃ আরে বাহ! দারুণ উদাহরণ দিলা তো!
নাহ, ভুল বলছি। তোমারে দিয়েও হবে। ঠিকমত টিউনিং করতে পারলে তোমারে দিয়েও আলেকজেণ্ডারের মত বিশ্ব জয় করা যাবে।

রঞ্জুঃ থেংকু বদি ভাই!





আত্মহত্যার প্রভাবন



কথায় মানুষ খুব দ্রুত প্রভাবিত হয়, তবে সবার কথায় না। কিছু কিছু মানুষ আজীবন শুধু বলেই যায়, তাদের কথা কেউ বিশেষ কর্ণপাত পর্যন্ত করে না। কিন্তু এই কিছু মানুষের বাইরে আরও অল্প কিছু মানুষ থাকে, যাদের দীর্ঘশ্বাসও মানুষের মনে বিশেষ অর্থ জাগিয়ে তোলে। ঠিক কী কারণে কিংবা কেন এমনটা হয় তার সঠিক কোন ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব না। এমন না যে তারা দেখতে সুদর্শন কিংবা তাদের কণ্ঠ সুমধুর বলেই এমনটা হয়। অথবা তাদের চিন্তাভাবনা অন্য সকলের তুলনায় অনেক অনেক ভিন্নতর হয়, এমনও নয়। তারাও আর দশজন সাধারণের মতই চিন্তাভাবনা করে একদম সাধারণ কথাই বলে। তবুও এই সাধারণ কথাই অন্য সকলের কাছে অসাধারণ কিছু হয়ে উঠে।

এরকম একটা হিসেব কষে যদি ভাবা হয় তবে আমাকেও সে তালিকার একজন ধরা যেতে পারে। অবশ্য এর কৃতিত্ব একক ভাবে আমার নয়। এই ব্যাপারটার সাথে বংশানুক্রমিক জিনের কোন একটা সম্পর্ক থাকতে পারে। একদম নিশ্চিত না হলেও আমার জন্যে এমনটা ভাবা একদম অমূলক বলা যাবে না। কারণ জ্ঞান হবার পর থেকেই দেখেছি আমার বাবার কথায়ও মানুষ খুব গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তার কোন একটা সিদ্ধান্ত বিনাবাক্যে সকলে মেনে নেয়। তার উত্তরসূরী হিসেবে আমার কথাতেও মানুষের গুরুত্ব কিংবা প্রভাবিত হবার ব্যাপারটা আমাকে কখনোই তেমন অবাক করত না।

হ্যাঁ, একটা সময় পর্যন্ত সত্যিই এই ব্যাপারটা আমায় মোটেই অবাক করত না। কিন্তু সব পরিবর্তন হয়ে গেল ছোট একটা দুর্ঘটনা ঘটবার পর। ঠিক কি কারণে জানা নেই, একদিন বিকেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেবার সময় শিমুল যখন ওর গার্লফ্রেন্ডের প্যারা নিয়ে আক্ষেপ করছিল তখন বলেছিলাম- 'তোর উচিৎ সিলিং ফ্যানের তিন পাখায় তিনটা গামছা বেধে ঐ তিনটা একত্রে করে একটা ফাঁস বানিয়ে তারপর তা গলায় গলিয়ে ঝুলে পরা'। 

ব্যাস ঐ ওটুকুই কথা, আসলে আমরা প্রতিদিন ওর ঐ এক ঘ্যান ঘ্যান শুনতে শুনতে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। তাই কিছুটা বিরক্ত আর মজা করার জন্যেই ও কথা বলেছিলাম। বাকি সবাইও ঐ মজার কথাটাকে মজা ধরে নিয়েই ওকে ক্ষেপাচ্ছিল। কেউ কেউ ঐ অবস্থাতে সেল্ফি তুলে ওর গার্লফ্রেন্ডকে পাঠানোর আইডিয়া দিচ্ছিল, আবার কেউ বলছিল গার্লফ্রেন্ডকে উদ্দেশ্য করে সুসাইড নোট লিখে তারপর ঝুলে যাবার জন্যে।

এরপরই দ্বিতীয় ভুলটা করলাম; অবশ্য তখন ওটাকে কোনভাবেই আমার ভুল মনে হচ্ছিল না। বললাম- 'সবচেয়ে ভালো হয় তুই যদি ঝুলে যাবার পুরো ব্যাপারটা লাইভ করে দেখাস, তাতে জনগনের সাপোর্ট আর গার্লফ্রেন্ডের উপর প্যারার রিভেঞ্জ নেয়া, দুটোই হয়'। আর যায় কোথায়, সকলেই আমার আইডিয়াকে বাহ্‌বা দিতে দিতে শিমুলকে এই কাজ করার জন্যেই কথার খোঁচা মেরে যাচ্ছিল।

তারপর সন্ধ্যাটা ওভাবে শেষ করে যে যার বাসায় কিংবা মেসে ফিরে গেলাম। খুব ঘুম পাচ্ছিল বলে ফিরে এসে ফ্রেশ হয়েই বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। সেই ঘুম ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে একদম রাত আড়াইটা! মোবাইলটা সাইলেন্ট করা ছিল, তাই কিছুই টের পাই নি। স্ক্রিনে দেখলাম মিসকলের বিশাল এক নোটিফিকেশন লিস্ট দেখা যাচ্ছে। ৮৬টা মিস কল সেখানে! এক একজন গড়ে ৬~৭ বার করে কল করেছে। সবার উপরের নাম্বারটা ছিল সুমনের। তাই ওকেই কল ব্যক করলাম। রিং পুরোটা হবার আগেই ও প্রান্ত থেকে কলটা রিসিভ হয়ে গেল!

খুব উত্তেজিত ভঙ্গিতে সুমন বলল- 'দেখেছিস?'। সুমনের এই উত্তেজনার জন্যে ওর সাথে কথা বলাই দুস্কর। ছোটখাটো থেকে শুরু করে গুরুতর সব কিছুতেই ওর সীমাহীন উত্তেজনা কাজ করে। তাই বোঝা দুস্কর কোনটা আসলে উত্তেজিত হবার মত ঘটনা, আর কোনটা সাধারন। তাই প্রশ্নের বিপরীতে ওকে প্রশ্নই করতে হল-'কী?'
- কী মানে? তুই এখনো দেখিসনি? কোথায় তুই? কই ছিলি এতক্ষণ?
- আরে ব্যাটা ঘুমাচ্ছিলাম। এখন বল কি দেখবো? হয়েছে টা কি?
- তার মানে তুই কিচ্ছু জানিস না?
- আরে এত্ত না পেঁচিয়ে কি দেখব, আর কি জানতে হবে সেটা বলতে পারিস না?
- তুই দ্রুত ফেসবুকে লগইন কর, আর শিমুলের ওয়ালে ঢু মেরে আমাদের গ্রুপ চ্যাটে দেখ।
বলেই কলটা কেটে দিল। ব্যাটা আহাম্মকের আহাম্মক, কি হয়েছে সেটা না বলে আমাকে বলে কিনা ফেসবুকে ঢুকতে। তবে শিমুলের কথা বলায় একটু আগ্রহ হল। বিকেলেই গার্লফ্রেন্ডের প্যারা নিয়ে কান্নাকাটি করছিল। মনে হয় এবারে ব্যাটা ব্রেকআপ-ট্রেকআপ কিছু একটা করে ফেলেছে। আর সেটা নিয়েই সুগভীর কোন পোষ্ট দিয়ে বসে আছে ফেসবুকে। অবশ্য এমনিতেও এখন আমি ফেসবুকেই ঢু মারতাম।

ফেসবুক এ্যাপটা চালু করে শিমুল নামটা সার্চ দিয়ে ওর প্রোফাইলে গলাম। সেখানে একটা লাইভ ভিডিওর পোষ্ট রয়েছে। অবশ্য এখন আর লাইভ নেই, প্রায় ঘন্টাখানিক আগে সেটা শেষ হয়েছে। এখন ওটার ভিডিওটা পোষ্ট হিসেবে রয়ে গেছে। ব্যাটা নিশ্চিত গার্লফ্রেন্ডের প্যারার বর্ণনা দিয়ে কান্নাকাটি করতে করতে বিশাল কোন ইমোশনাল লাইভ ভিডিও করেছিল। ক্লিক করলাম ভিডিওটাতে, কিন্তু ক্লিক করে যা দেখলাম সেটার জন্যে আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না।

শিমুল প্রথমে ক্যামেরাটা ওর রুমের বুকসেলফের কোথাও সেট করল, মোটামুটি ঐ পজিশন থেকে ওর রুমের বিশাল একটা অংশ তাতে স্ক্রিনে চলে আসে। এরপর একটু দুরত্বে দাড়িয়ে শুরু করল ওর গার্লফ্রেন্ডের প্যারার বন্দনা। এতটুকু অবশ্য আমি আশা করেই রেখেছিলাম। কিন্তু ঐ অবস্থাটা বেশিক্ষণ দীর্ঘস্থায়ী হল না, কথার মোড় ঘুরে গেল আমার নাম উচ্চারণের সাথে সাথে। নাম ধরেই বলল আজ বিকেলে কি আইডিয়া দিয়েছিলাম ওকে, আর সেই আইডিয়াই সে এখন বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে বলে ঘোষনা করল!!

তারপর বিছানার উপর হতে কিছু একটা তুলল, হাতে নেবার পর বুঝলাম ওগুলি আসলে গামছা। ওর স্টাডির চেয়ারটা বিছনার উপর তুলে তার উপর ও দাড়াল। এরপর ঠিক যেভাবে বলেছিলাম ওভাবেই তিনটি গামছা সিলিং ফ্যানের তিন পাখায় বাধল। আর তারপর গামছা গুলি একত্র করে ওটা দিয়ে একটা ফাঁস তৈরি করল। আমি নিশ্বাস চেপে ওর কাণ্ডকারখানা দেখছি। তবে মনে মনে ক্ষীণ একটা আশা চেপে ধরে আছি যে শেষ পর্যন্ত ও আসলে ওরকম কিছু করবে না।

তারপর আবার চেয়ার হতে বিছানা আর বিছানা হতে নেমে স্ক্রিনের সামনে এসে দাড়াল। সত্যি সত্যি এর পরে যা কিছু ঘটবে তার জন্যে সকল দায়ভার ও ওর গার্লফ্রেন্ডের উপর দিল আর আমাদের সবাইকে বিদায় জানাল।
এবার আমি সত্যি সত্যি ঘামতে শুরু করলাম। অন্য মোবাইলটা দিয়ে ততক্ষনে আবারও সুমনকে ফোন করতে শুরু করেছি। রিং হচ্ছে কিন্তু ব্যাটা এখন আর ফোন উঠাচ্ছে না। আর এদিকে মোবাইল স্ক্রিনে দেখছি শিমুল আবারও বিছানার উপর দাড় করানো চেয়ারটাতে উঠে দাড়িয়েছে। এরপর কাঁপা কাঁপা হাতে তিন গামছা দিয়ে তৈরি ফাসটা গলায় পড়ে নিচ্ছে।

গামছার ফাসটা গলায় গলিয়ে দেবার পর ঐ অবস্থাতেই চিৎকার করে বলল- "দোস্ত তোকে ধন্যবাদ চমৎকার এই আইডিয়াটা দেবার জন্যে"। এরপর বাকিটুকু আর দেখা হল না, হাত থেকে মোবাইলটা খসে পড়ল আপনা-আপনি।



তারপর কিভাবে কি হয়েছে তা আর আমি তেমন পরিস্কার ভাবে বলতে পারছি না। ঘোরের মাঝে সময়টা পার হয়েছে আমার। মাথাটা পুরো ঝিম মেরে ছিল পরের পুরোটাা সময়। তবে এখন মাথাটা আবার পরিস্কার ভাবে কাজ করতে শুরু করেছে। আর কিছুক্ষন পরেই কয়েকজন গার্ড আসবে আমাকে এই সেলটা থেকে নিয়ে যেতে।

ঠাণ্ডা মাথায় উদ্দেশ্যপ্রনেদিত ভাবে বন্ধুকে আত্মহত্যা করার নিমিত্তে প্রভাবিত করার জন্যে কোর্টে বিজ্ঞ বিচারক আমার 'মৃত্যুদণ্ডাদেশ' কার্যকর করার রায় দিয়েছেন.....




মঙ্গলবার, অক্টোবর ২৫, ২০১৬

সামাজিক মূল্যায়ণঃ চটকদার অভিনেতা বনাম প্রকৃত সত্যপরায়ণ মানুষ



একবার এক ভদ্রলোক ফ্রান্সে ঘুরতে গেলে এক বিলবোর্ডে তার নজর আটকে যায়। সেটি ছিল এক প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠানের বিলবোর্ড। প্রতিযোগীতার বিষয়বস্তু ছিল, বিখ্যাত কৌতুকাভিনেতা স্যর চ্যারলি চ্যাপলিনকে অনুকরণের অভিনয় প্রতিযোগীতা (Charlie Chaplin Lookalike Contest)।

অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার জন্যে অনেক প্রতিযোগীই ইতোমধ্যে সেখানে উপস্থিত হয়েছে। সকলেই চার্লি চ্যাপলিনের মত পোষাক পড়ে, আর তার মত মেকআপ নিয়ে সেখানে উপস্থিত। ভদ্রলোক ব্যাপারটি দেখে দ্রুত তার হোটেলে চলে গেলেন আর খুব দ্রুত সেজে-গুজে আবারও সেখানে ফিরে আসলেন; নাম লেখালেন ঐ প্রতিযোগীতায়।

নির্দিষ্ট সময় পর প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠান আরম্ভ হয়ে আবার শেষও হয়ে গেল। সকলেই নিজ নিজ প্রতিভা আর অভিনয় গুনকে কাজে লাগিয়ে মঞ্চে নিজেকে চার্লি চ্যাপলিনের রূপে উপস্থাপন করে গেল। তাদের অভিনয় দেখে মনেই হচ্ছিল না যে তারা আলাদা আলাদা কোন মানুষ। বরং মনে হচ্ছিল তারা বুঝি সকলেই এক একজন চার্লি চ্যাপলিন। তবুও যখন এটি একটি প্রতিযোগীতা, তাই তাদের মাঝে যারা ভালো করেছিলেন তাদেরকে বিজয়ী হিসেবে নির্বাচিত করা হচ্ছিল। একে একে সকল বিজয়ীদের নাম ঘোষনা করা হল। দেখা গেল ফ্রান্সে ঘুরতে আসা ঐ ভদ্রলোকটিও প্রতিযোগীতায় জিতে গেছেন। তবে তিনি প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় না হয়ে হয়েছেন সপ্তম স্থান অধিকারী। আর ঐ প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠানে কেবল ঐ সাতজনকেই বিজয়ী ঘোষনা করা হয়।

মজার ব্যাপার হল প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করে সপ্তম হওয়া ঐ ভদ্রলোক আর কেউ নন; সয়ং স্যর চার্লি চ্যাপলিন।

এমন ঘটনার পর স্যর চার্লি চ্যাপলিন ভাবতে বসলেন-
আসলেই কি তিনি নিজে প্রকৃত চার্লি চ্যাপলিন? নাকি যে ছয়জন অভিনয় গুণে তাকে টপকে গেছে তারাই এক একজন প্রকৃত চার্লি চ্যাপলিন?

এটা নিয়ে ভাবতে ভাবতেই তিনি অনুধাবন করলেন-
তারা সকলেই কেবল চার্লি চ্যাপলিনের বাহ্যিক রূপ, তার চালচলন, চলচিত্রে প্রদর্শত অভিব্যক্তিকেই নকল করে নিজেদের মাঝে ধারণ করতে পারে। ভেতর থেকে চার্লি চ্যাপলিনের অন্তর, তার ভাবনা কিংবা তার স্বাধীন চিন্তা-চেতনাকে কোনভাবেই কোনদিন নকল করতে পারবে না। আর এমনটা যে শুধু তার বেলায়তে ঘটবে তা কিন্তু নয়; বরং এ দুনিয়ার কারোর হৃদয়, চিন্তা-চেতনা, বিচারভঙ্গী অন্যকেউ এভাবে নকল করে নিজের মাঝে ধারণ করতে পারবে না। সেটা কোনভাবেই সম্ভব নয়।

কিন্তু আমারদের সমাজ, সমাজে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গী, এই দুনিয়া কোন কিছুই অন্তর দিয়ে চলে না; তারা চলে অভিনয় গুণে। যে ব্যক্তি যত বড় অভিনেতা, তার গ্রহনযোগ্যতা এ দুনিয়াতে তত বেশি।

আর সেই ভাবনার অনুধাবন থেকেই স্যর চার্লি চ্যাপলিন লিখেছিলেন-
We live in a world where showman succeed and the true man fail






¶ বর্ণিত ঘটনাটি গালগপ্প হিসেবেই প্রচলিত। স্যর চার্লি চ্যাপলিনের জীবন ঘটনা নিয়ে লেখা কোন বই কিংবা দলিলে উপরুক্ত ঘটনার গ্রহণযোগ্য কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। পাশাপাশি প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠানের স্থান নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। মূলত ঐ সময় খুব জনপ্রিয় একটি প্রতিযোগীতা ছিল এটা। প্রায় প্রতিটি বড় শহর আর উল্লেখযোগ্য প্রতিভা অন্বেষণ করা বিভিন্ন আয়োজকেরা এটি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে এমন প্রতিযোগীতার আয়োজন করছিলেন। একই সাথে প্রতিযোগীতায় স্যর চার্লি চ্যাপলিনের সপ্তম অবস্থান নিয়েও অনেক দ্বিমত রয়েছে। তবুও হাজার বিতর্কে ভরা এই গালগল্পটির বিষয়বস্তু কোনভাবেই 'গালগল্প' হিসেবে ধরে নেয়া সম্ভব নয়।






সোমবার, অক্টোবর ১৭, ২০১৬

রম্যঃ বিল আর জব্‌স এর গোপন কথোপকথন


স্টিভ জব্‌স গত হয়েছেন বেশ কয়েক বছর হল। প্রযুক্তির মানুষ, তার উপর প্রতিভাবান। শান্তির ঘুম ঘুমিয়েও ওপারে শান্ত ছেলের মত বসে থাকতে পারেন নি। ওপারে গিয়েই সকলের খোজ খবর নিতে আর প্রিয় বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করার জন্যে একটা স্পেশাল নেটওয়ার্ক তৈরি করে ফেললেন। তারপর সেই গোপন নেটওয়ার্কের অতি গোপন এক চ্যানেল দিয়ে যোগাযোগ করলেন প্রাণপ্রিয়(!) বন্ধু বিল গেট্‌সের সাথে। কিন্তু আমাদের দুষ্টু হ্যাকারেরা ঠিকই সেই অতি গোপন চ্যানেলের খোঁজ পেয়ে যায়। আর সেখানেই কান পেতে শুনে নেয় দুই বন্ধুর কথোপকথন...

রিং রিং টিং....রিং রিং... টিং...

বিল গেট্‌সঃ হ্যালো!

স্টিভ জব্‌সঃ কি হে বন্ধু! কেমন আছো?

বিল গেট্‌সঃ আরে! জব্‌স নাকি? কি খবর ভায়া?

স্টিভ জব্‌সঃ খবর তো সব তোমাদের কাছে, আমি তো সব খবরের বাইরে চলে এলাম। ভুলে গেলে?

বিল গেট্‌সঃ আরে কি যে বল না। তোমাকে কি আর চাইলেই ভোলা যায়? শুধু আমিই নই, বরং তোমার আবিষ্কার গুলির বদৌলতে মানুষ আমার চেয়ে বেশি তোমাকেই নিয়ে আলোচনা করে।

স্টিভ জব্‌সঃ হা হা! তাই নাকি? তাহলে নিশ্চই খুব বাজে অবস্থা চলছে দুনিয়াতে।

বিল গেট্‌সঃ তা যা বলেছ। তুমিই ভালো করেছো। নিজের নামের সাথে সম্মানটাকে নিয়ে আগেই কেটে পড়েছ। আর আমরা রয়ে গেলাম বদনামের সকল কোটা পূরণ করার জন্যে।

স্টিভ জব্‌সঃ আরেহ্‌ নাহ! দেখছি তো কি অবস্থা চলছে ওখানে। সেদিন দেখলাম আমার কোম্পানি iPhone 7 রিলিজ করেছে। আহাম্মক গুলি নিজে থেকে এখনো কিছুই করতে পারছে না। আমার হ্যান্ড স্কেচ গুলি উল্টো পাল্টা কোনরকম বুঝে iPhone এর নামটাকে বদনাম করছে দিন দিন। আর সেই বদনামের ভাগীদার এপারে বসে আমিও হচ্ছি সমান তালে।

বিল গেট্‌সঃ আচ্ছা, বাদ দাও ওসব কথা। তোমার কথা বল। তোমার ওদিকে সময় কেমন কাটছে? আচ্ছা ওপারের ব্যাপার স্যাপার কেমন, একটু বল তো শুনি।

স্টিভ জব্‌সঃ এপারের ব্যাপার স্যাপার একদম মন্দ না। তবে তোমার জন্যে খুব বড় একটা দুঃসংবাদ আছে বন্ধু।

বিল গেট্‌সঃ দুঃসংবাদ! বল কি? এখনো তো ওপারে গেলামই না, তার আগেই দুঃসংবাদ! তা কি দুঃসংবাদ একটু বলবে?

স্টিভ জব্‌সঃ হ্যাঁ, বিরাট দুঃসংবাদ বলতে পারো। এপারে সবই আছে, কিন্তু কোন বাউন্ডারি নেই।

বিল গেট্‌সঃ এ্যা! তা এটা কেমন দুঃসংবাদ হল?

স্টিভ জব্‌সঃ আহা! বুঝছো না কেন? সৃষ্টিকর্তা খুব চালাকির সাথে এই কাজটা করেছেন। তিনি কোন বাউন্ডারিই রাখেন নি কোথাও। আর তাই এপারে করাও কারও windows (জানালা) কিংবা Gates (দরজা) এরও প্রয়োজন হয় না।

বিল গেট্‌সঃ ওহো! তবে বিরাট দুঃসংবাদই বলতে হয়। তবে আমার মনে হয় কি জানো? দুঃসংবাদ আমার জন্যে যেমনই হোক, তোমার দুঃখ বোধ কিন্তু এপারের তুলনায় ওপারেই বেশিই।

স্টিভ জব্‌সঃ কেন? কেন?? আমার দুঃখ বোধ বেশি হবে কেন?

বিল গেট্‌সঃ না, মানে..। আসলে সৃষ্টিকর্তা তো সৃষ্টির শুরুতেই Apple(আপেল) ধরা-ছোঁয়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলেন। আর তার উপর তুমি ওপারে যাবার আগেই সবাইকে বুঝিয়ে-পড়িয়ে দিয়েছিলে যে Apple এর দাম কেমন চড়া হতে পারে। তাই বোধ করি ওপারে Apple প্রোডাক্ট কেউ লোভে পড়েও ধরে ছুঁয়ে দেখবার ইচ্ছে করবে না।

স্টিভ জব্‌সঃ তা অবশ্য খারাপ বল নি। তবে কি জানো? এপারে কিন্তু Apple এর জন্যে কিন্তু কোন Bill করা হয় না, একদম ফ্রি। এখানে-সেখানে ঝুলে আছে। আর ভয়েস কমান্ড আর মাইন্ড রিডিং সিস্টেম এত উন্নত যে, কারও ইচ্ছে হলে ওগুলি না ছুঁয়েই নিজেদের কাজ অনায়াসে করে নিতে পারে।

বিল গেট্‌সঃ তাহলে তো ব্যাপারটা তোমার জন্যে ব্যালেন্স হল মনে হচ্ছে।

স্টিভ জব্‌সঃ কেমন? কেমন??

বিল গেট্‌সঃ মানে এপারে তোমার কোম্পানিটা তোমাকে ছাড়া Jobs Less, আর ওপারে তুমি নিজে Jobs Less। তবে তুমি তাতে খুব বেশি বিচলিত হয়ো না। যেভাবে আইফোনের ডেভেলপমেন্ট এগুচ্ছে তাতে অচিরেই তোমার কর্মীরাও Steve-এর শূন্যতা মানে Jobs Less অবস্থাটা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারবে।

স্টিভ জব্‌সঃ হা হা হা! আচ্ছা বন্ধু, উঠতে হচ্ছে এখন। গার্ডটা সম্ভবত এই নেটওয়ার্কের খবর টের পেতে শুরু করেছে। পাই পাই করে এদিক সেদিক খোঁজা খুঁজি করছে।

বিল গেট্‌সঃ আচ্ছা যাও, তবে সময় পেলে আবার যোগাযোগ করো কিন্তু।

স্টিভ জব্‌সঃ করবো করবো! অবশ্যই করবো। আর সেটা সম্ভব না হলে তোমাকেই এপারে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করবো 😉





সোমবার, আগস্ট ২৯, ২০১৬

টোকা'র শব্দ



নীরবতার দরজায় হালকা টোকা দিয়ে যাচ্ছিল কেউ।
আমার প্রয়োজন অখণ্ড নীরবতা, সেখানে এই হালকা টোকার শব্দও আমার কাছে আল্ট্রাসনিক জেটের ইঞ্জিনের শব্দ মনে হচ্ছিল।

অখণ্ড নীরবতা প্রয়োজন আমার, চিৎকার করে তাড়িয়ে দিতে গেলে আমারই গড়া নীরবতার শীর্ণ কাঁচের দেয়াল ভেঙ্গে গুড়ো গুড়ো হয়ে ছড়িয়ে পড়বে আমার চারিপাশ। তাই অপেক্ষা শুরু করলাম, ক্লান্ত আর বিরক্ত হয়ে টোকার শব্দ সৃষ্টিকারী যদি আপন ইচ্ছেতেই দূর হয় -সেই আশায়। কিন্তু দীর্ঘ সময় পরেও তেমন কিছুই ঘটল না। মৃদু টোকার শব্দ বিরতিহীন ভাবে বেজেই চলছিল। ওদিকে আমার অপেক্ষার কাল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতরই হচ্ছিল কেবল।

তারপর একটা সময় আপনা-আপনিই টোকার শব্দ থেমে গেল। আনন্দ যেন ঠিক সে মুহূর্তেই আমাকে ঘিরে ধরল। অবশেষে ফিরে পেলাম আমি আমার অখণ্ড নীরবতা! কিন্তু ঐ আনন্দের আবেশ খুব বেশি সময় টিকে থাকল না। যদিও আমি এই অখণ্ড নীরবতা পাবার আশায় এতটা সময় বিরক্তি নিয়ে অপেক্ষা করে গেছি। তবুও এখন এই অখণ্ড নীরবতাকে আমি আর নিতে পারছি না।

দরজার ওপাশের শব্দ বন্ধ হলেও মনের গহীনে কোথাও মৃদু টোকার শব্দ বিরতিহীন ভাবে বেজে চলেছে। যে বাইরে ছিল, সে যেন আপন প্রস্থানেই তার অস্তিত্ব ফেলে গেছে আমার মনের গহীনে। এখন এই অখণ্ড নীরবতার কোন অর্থ নেই। বেজে যাওয়া টোকার শব্দেই ডুবে আছে মন....




সোমবার, জুলাই ২৫, ২০১৬

বদি এণ্ড রঞ্জুর কথোপকথন — ৬



বদি ভাইঃ রঞ্জু, তুই মুভি দেখিস?

রঞ্জুঃ দেখি তো বদি ভাই!

বদি ভাইঃ কি কি মুভি দেখিস?

রঞ্জুঃ বাংলা, ইংলিশ কিছু কিছু হিন্দি, কোরিয়ান, জাপানি, থাই সহ প্রায় সব ধরণের মুভিই দেখি। কেন বদি ভাই?

বদি ভাইঃ এই যে এত মুভি দেখেছিস ঐগুলির মাঝে কোন ভাম্পায়ারের মুভি ছিল না?

রঞ্জুঃ হ্যাঁ, ছিল তো। এই তো কিছুদিন আগে ডিজনি'র রিলিজ করা হোটেল ট্রানসিলভেনিয়া-২ দেখলাম। অসাম মুভি একটা।

বদি ভাইঃ হুম, অসাম মুভি। বুঝলাম।

রঞ্জুঃ কেন বদি ভাই! কোন সমস্যা?

বদি ভাইঃ না কোন সমস্যা না। আচ্ছা ঐ যে ভাম্পায়ার ছিল, ওরা কি খেয়ে বেঁচে থাকে বল তো দেখি।

রঞ্জুঃ ইয়ে! মানে... মুভিতে তো দেখায় ভাম্পায়ারেরা মানুষের রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে।

বদি ভাইঃ হুম, ভাম্পায়ার চরিত্রটার চরিত্রায়ন করা হয়েছে এমন ভাবে যেখানে দেখানো হয় ঐগুলি মানুষের রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে। আগে তো ভাম্পায়ার শুধু ভৌতিক সাসপেন্স আর ভায়োলেন্স যুক্ত মুভিতেই ভাম্পায়ারের চরিত্র থাকত। তবে এখন ভাম্পায়ারের চরিত্রের প্রসার ঘটেছে অনেক। রোমান্টিক, কমেডি, যুদ্ধ, কভার্টস্ট্রাইক টাইপের মুভিতেও চলে এসেছে ভাম্পায়ার। আর সাথে ডিজনি তো রয়েছেই তাদের চমৎকার সৃষ্টিশীল কাজ নিয়ে।

রঞ্জুঃ বুঝলাম। কিন্তু আজ আপনি হুট করে ভাম্পায়ার নিয়ে এত কিছু কেন বলছেন ঐটাই শুধু বুঝতে পারি নাই।

বদি ভাইঃ হা হা হা! বুঝিস নাই!
আসলে ভাবিতেছিলাম রঞ্জু, এই যে ভাম্পায়ার গুলিরে ওরা বানাইল। তারপর এত শত ব্যবহার করল। কিন্তু তারপরেও ভাম্পায়ারের খাবারের কিন্তু কোন পরিবর্তন করতে পারলো না। সেই আগের মতই সব ভাম্পায়ার মানুষের রক্তই খাইয়্যা বাইচ্চা থাকে। চিন্তা করে দেখো তো দুনিয়াতে এত এত খাবার থাকতে ভাম্পায়ার গুলিরে নাকি হুদা মানুষের রক্ত খাইয়্যা বাইচ্চা থাকতে হয়!

রঞ্জুঃ হুম, সেইটা তো আসলেই ভাববার মত বিষয়।

বদি ভাইঃ আচ্ছা বলতো রঞ্জু, ভাম্পায়ার গুলির চরিত্র এমন করে কেন তৈরি করেছে, যে সে না চাইলেও বাধ্য তাকে হয়ে মানুষের রক্ত খেতেই হয়?

রঞ্জুঃ কেন বদি ভাই?!

বদি ভাইঃ তোর ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি যারপরনাই হতাশ রঞ্জু! তুই এখনো ওয়াইড মাইন্ডে কিছু বোঝার চেষ্টা করিস না! এমন করে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে যে তোর কি হবে তাই নিয়ে আমি বড়ই শঙ্কায় থাকি মাঝে মাঝে।

রঞ্জুঃ আহ্‌ বদি ভাই! আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে পরে শঙ্কা করলেও চলবে, আগে আপনে বলেন কেন ভাম্পায়ার গুলিকে অনিচ্ছাতেও রক্ত খেতে হয়।

বদি ভাইঃ আচ্ছা শোন মন দিয়ে।
ভাম্পায়ারের মুভিতে তো দেখেছিস, ওরা হাজার হাজার বছর কফিনে বসবাস করে। দিনের বেলাতে ঘুম আর সন্ধ্যার পর জেগে উঠে। তারপর যায় মানুষের রক্তের সন্ধানে।

রঞ্জুঃ হুম দেখেছি।

বদি ভাইঃ আবার এইটাও নিশ্চই দেখেছিস যে ওরা সূর্যের আলো সহ্য করতে পারে না। সূর্যের আলো গায়ে পড়লে হয় ধোঁয়া হয়ে উড়ে যায় কিংবা বালির মত ঝড়ে যায়।

রঞ্জুঃ হ্যাঁ, এটাও দেখেছি। ওদের জন্যে সূর্যের আলো হচ্ছে মৃত্যু স্পর্শের সমতুল্য।

বদি ভাইঃ তাহলে এই থেকে কি প্রমাণ হয়?

রঞ্জুঃ কি প্রমাণ হয় বদি ভাই!!

বদি ভাইঃ আরে গাধা এই থেকে প্রমাণ হয় যে জন্মের পর ওরা আমাদের মত সূর্যের আলো গায়ে মেখে ভিটামিন 'ডি' নিতে পারে না। আর ভিটামিন 'ডি' না থাকলে শরীরের হাড়গোড় শক্ত হয় না। আর হাড়গোড় শক্ত না হলে হাজার হাজার বছর ক্যামনে বেঁচে থাকবে বল?
তাই ওরা শুধুমাত্র ভিটামিন 'ডি' পাওয়ার জন্যে অনিচ্ছাতেও মানুষের রক্ত খেয়ে বেড়ায়! বুঝলি রে আহাম্মক!

রঞ্জুঃ হা হা হা হা!
একেবারে টু দ্যা পয়েন্টে বুঝতে পেরেছি!






রবিবার, জুলাই ২৪, ২০১৬

কমিকঃ নক্ষত্রজ্ঞানী




কমিকটি পিডিএফ হিসেবে ডাওনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন







────────────────────────────
♦ কমিক : নক্ষত্রজ্ঞানী | Stargazer
♦ সংগ্রহ : Stumbleupon.com Stream
♦ জঘন্য অনুবাদে : আমি :p