বৃহস্পতিবার, মার্চ ৩০, ২০১৭

বদি এণ্ড রঞ্জুর কথোপকথন —৮



বদি ভাইঃ রঞ্জু জানিস, মাইক্রোসফট এবার একটা বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছে!

রঞ্জুঃ কি বিপ্লব ভাই!

বদি ভাইঃ নাহ্‌ তোমারে দিয়ে কিস্যু হবে না রঞ্জু। হাল দুনিয়ার কোন খোঁজ খবরই তুমি রাখো না।

রঞ্জুঃ এইটা তো পুরানো কথা 😯 সবাই জানে, নতুন কিছু বলেন।

বদি ভাইঃ নতুন কিছু যে বলবো সেইটা তো তোমার বোঝার ক্ষমতা থাকতে হবে। ইদানীং তো তোমার বোঝার ক্ষমতার উপরেই আমার বিশাল সন্দেহ জন্ম নিয়েছে।

রঞ্জুঃ আহ্‌! বদি ভাই। এইসব বাদ দেন। আগে বলেন মাইক্রোসফট এমন কি বিপ্লব ঘটাইল যা নিয়ে আপনি এত্ত উত্তেজনা ফিল করতেছেন।

বদি ভাইঃ রঞ্জু, ঘটনাটা যদি তুমি বুঝতে তাহলে তুমিও আমার মত উত্তেজনা ফিল করতে। এত বড় বিপ্লব এর আগে কেউ ঘটাইতে পারে নাই। প্রযুক্তি দুনিয়ায় এত বড় একটা বিপ্লব ঘটানো কিন্তু চাট্টিখানি কথা না!

রঞ্জুঃ বদি ভাই, এত ঘুরাই প্যাঁচাই না বইল্লা মূল ঘটনাটা বলেন না। হুদাই এত্ত প্যাঁচাই কি লাভ!

বদি ভাইঃ 😩 এই হইলো তোমাদের সমস্যা। তোমরা মূল বক্তব্যের আগে তার ভূমিকা শুনতে চাও না। এর ইতিহাস তোমাদের শুনতে কষ্ট লাগে। তোমরা শুধু মূল ঘটনায় ঢুকে যেতে চাও। ফ্যাক্ট বাদ দিয়ে ইফেক্ট নিয়ে শুধু তোমার যত চিন্তা!

রঞ্জুঃ 😒 অকা! বলেন আপ্নের বিপ্লবের পেছনের ইতিহাস আর ফ্যাক্ট।

বদি ভাইঃ নাহ্‌, থাক। বলব না। হুদাই তোমারে বিরক্ত করে করে বোর করার কোন মানে নাই। আর এত বকর বরক করারও সময় নেই আমার।

রঞ্জুঃ হ্যাঁ, সেইটাই। এখন দ্রুত বলেন ঘটনাটা কি!

বদি ভাইঃ ঘটনা হইলো, দীর্ঘ ২৪ বছর অক্লান্ত পরিশ্রমের পর মাইক্রোসফট অবশেষে সফল ভাবে তাদের অপারেটিং সিস্টেম হতে BSoD সমস্যা দূর করতে পেরেছে। বল, এইটা কি চাট্টিখানি কথা! BSoD সমস্যা যে কত বড় সমস্যা সেইটা কি তোমরা এই জামানায় আর বুঝবা!!

রঞ্জুঃ BSoD কি জিনিষ!!  😲 এইটা আবার কুন ভাইরাস!! কুন এন্টিভাইরাস লাগবে এইটারে রিমুভ করতে!!!

বদি ভাইঃ আরে আহাম্মক এইটা কোন ভাইরাস না। এইটার মানে হইলো Blue Screen of Death

রঞ্জুঃ Blue Screen of Death আবার কি জিনিষ!

বদি ভাইঃ আরে ঐ যে, কম্পুটারের ঝামেলা হইলে যে মনিটর শুধু নীল হয়ে যেতো। ঐটারে বলে Blue Screen of Death সমস্যা।

রঞ্জুঃ ওহ্‌! আচ্ছা। তা এই সমস্যা কিভাবে সমাধান করলো তারা?

বদি ভাইঃ আরে, বিশাল এক সমাধান নিয়ে এসেছে মাইক্রোসফট। এত বিশাল সমাধান যা ইতিপূর্বে আর্কিমিডিসও ভাবতে পারে নাই। সে তো কেবল ছুটুখাটু জিনিষ নিয়ে চিন্তা করে 'ইউরেকা' 'ইউরেকা' করে চিল্লাইতো। এত বড় সমস্যা তার মাথায় দিলে সে নির্ঘাত বাথটবের পানিতে ডুবে সুইসাইড খাইতো।

রঞ্জুঃ বদি ভাই 😯 আপনি আবারও টপিকের বাইরে চলে যাচ্ছেন। জানেন না, এত বড় লেখা এখন আর কেউ পড়তে চায় না?

বদি ভাইঃ ওহ! হ্যাঁ! তাই তো। খেয়ালই ছিলো না। আসলে বুড়া মানুষ তো, সুযোগ পেলেই খালি কথা কইতে মুঞ্চায়।

রঞ্জুঃ হু, এইবার আসল ঘটনাটা বলেন দ্রুত, কুইক!

বদি ভাইঃ যুগান্তকারী এক আবিষ্কার করেছে মাইক্রোসফট। তারা চিন্তা করে দেখল এই Blue Screen of Death আসবার একমাত্র কারণ এই Blue, আই মিন নীল রং

রঞ্জুঃ হু, তো?

বদি ভাইঃ তারা অনেক বিশাল বিশাল কোডিং করলো। সেই কোডিং এক্সিকিউট করলো। তারপর যখন তারা তাদের কোডিং দেখে সন্তুষ্ট ফিল করলো তখন তারা সেইটা নতুন অপারেটিং সিস্টেমের সাথে জুড়ে দিলো।

রঞ্জুঃ তা সেই সমাধানটা কি সেইটা তো বলেন!

বদি ভাইঃ সমাধানটা হইলো, তারা তাদের কোডিং থেকে নীল রং টা বাদ দিয়ে সেখানে সবুজ রং দিয়ে পেইন্ট থুক্কু লাগিয়ে দিলো।

রঞ্জুঃ কি!! এইটা সমাধান!!

বদি ভাইঃ হ্যাঁ! এইটাই সমাধান। এবারে তুমি আর কোনদিন Blue Screen of Death সমস্যায় পড়বা না। Blue Screen of Death এর সমস্যা থেকে মাইক্রোসফট তোমরা চিরতরে মুক্তি দিলো 😁😁

রঞ্জুঃ আপনে মজা করতেছেন বদি ভাই 😯

বদি ভাইঃ মোটেই না। বিশ্বাস না হইলে Windows insiders preview build 14997 ইন্সটল করে দেখো। তালেই একদম ঝকঝক-ফকফক করে আমার কথার সত্যতা খুঁজে পাইবা।

রঞ্জুঃ আপ্নে একটা হোপলেস বদি ভাই!

বদি ভাইঃ মাইক্রসফ্‌ট একটা হোপলেস সেইটা বল!

রঞ্জুঃ মাইক্রসফ্‌ট ইয়্যু আর হোপলেস্‌! 😪











শুক্রবার, মার্চ ২৪, ২০১৭

কল্প-গল্পঃ কানেকশন



আমি জানি এটা সম্ভব নয়, কিন্তু ব্যাপারটা ঘটছে। আমি এখানে বসেই তার অস্তিত্ব অনুভব করতে পারছি। যা আদৌ সম্ভব নয়, ঠিক সেটা যখন আপনার সাথেই ঘটতে থাকে, তখন ঠিক কেমন অনুভব হয় তা এমন একটা পরিস্থিতিতে না পড়লে কেউ বুঝতে পারবে না। আর এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েও সেই অনুভূতির ধারণা দেওয়াও আমার পক্ষে প্রায় অসম্ভব।

আমি ঠিক বুঝতে পারছি ঠিক আমার পাশের রুমেই ব্যক্তিটি বসে আছে। নাহ্‌, ভুল বললাম। ব্যক্তিটি নয়, বরং বলা উচিৎ পাশের রুমেই আমি বসে আছি। কি? অদ্ভুত লাগছে? পাশের রুমে কিভাবে আমি বসে থাকতে পারি এই ভেবে আমার কথা আপনার কাছে অদ্ভুত ঠেকলে আরও অদ্ভুত কিছু শোনার জন্যে প্রস্তুতি নিন আপনি। শুধু যে পাশের রুমে আমি বসেই আছি তা নয়, বরং একই সাথে সে এখন কি ভাবছে তাও আমি একদম কাটায় কাটায় অনুভব করতে পারছি!

পাশের রুমে থাকা আমিটা এখন ভাবছে ঠিক আমার কথাই! সেও ভেতরে ভেতরে আমার মত উত্তেজনা আর পুলক একই সাথে অনুভব করছে। সেও বুঝতে পারছে আমি ঠিক তার পাশের রুমটাতেই অবস্থান করছি। সেও বুঝতে পারছে ঠিক এই মুহূর্তে আমি কি ভাবছি! একদম আমার মত করেই আমাকে যেভাবে আমি পাশের রুমে আবিষ্কার করেছি, সেও ঠিক একই রকম করে তার সত্তার আমিটাকে অনুভব করতে পারছে।

কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব? আমি জানতাম আমাদের বিজ্ঞান কোন কোন প্রাণীকে প্রায় সফলভাবে ক্লোন করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু তাই বলে মানুষকেও যে ক্লোন করছে তা আমার জানা ছিলো না। আবার ক্লোন করা হলেও হয়তো একই রকম চিন্তা চেতনার ব্যক্তি তৈরি করা সম্ভব হতে পারে। তাই বলে একই সময় একই স্মৃতি আর বিচার বুদ্ধি দু'জন আলাদা আলাদা কিন্তু একই ব্যক্তির সত্তার মাঝে ঢুকিয়ে দেবে তা তো বোধ করি এখনো তারা চিন্তাতেও নিয়ে আসতে পারবে না।

আমি জানি আপনি এখন বিরক্ত হচ্ছেন। ভাবছেন পাগলের প্রলাপ বকছি। কিন্তু বিশ্বাস করুণ আমি পাগল হয়ে যাই নি।

ব্যাপারটা আপনার বোঝার সুবিধার জন্যে আপনাকে কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সাথে একটু তুলনা করে বলতে পারি। কম্পিউটার নেটওয়ার্কের কোন স্টোরেজ ডিভাইসে থাকা তথ্য গুলির সুরক্ষার জন্যে এমন একটা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। সেখানে একটা ডিস্কে যে তথ্য থাকে ঠিক ঐ একই তথ্য অন্য আরেকটা ডিস্কে হুবহু কপি করে রাখা হয়। এমনকি যখন ঐ তথ্য কোন কাজে ব্যবহার করা হয় কিংবা কোন ডেটা হতে নতুন ডেটা পেয়ে সেটাকে পুনরায় সংরক্ষণে পাঠানো হয় তখন একই সাথে ঐ দুটো ডিস্কেই ডাটা রিড এবং রাইট চলতে থাকে। আমার বর্তমান অবস্থার সাথে তুলনা করলে ঘটনাটা কিন্তু ঠিক একই রকম ঘটছে।

এই যে আপনাকে যে এতগুলি কথা লিখে জানাচ্ছি, আমার পাশের রুমে থাকা ব্যক্তিটিও আমার মতই আপনাকে জানানোর জন্যে ঠিক এই কথা গুলি ভাবতে ভাবতে লিখছে। আমরা যেন ঠিক আয়নার সামনে দাড়িয়ে প্রতিবিম্বের প্রতি বিদ্রূপ করা সত্তায় পরিণত হয়েছি! বুঝতে পারছেন? নিজের ভেতরের নিজেকে নিজের বাইরে আবিষ্কার করে তার ভেতর আবার নিজের অস্তিত্বের আবিষ্কার কতটা যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে? আমি জানি এটা বিশ্বাস করা আপনার কর্ম নয়।

দেখুন! এ মুহূর্তে সে ভাবতে শুরু করেছে তার এমন বিপত্তিকর অবস্থা থেকে সে কিভাবে মুক্তি পাবে, আর তাই নিয়ে একই সাথে আমিও ভাবছি! সবচেয়ে ভালো হতো পাশের রুমে গিয়ে যদি আমার ঐ আমিটাকে গলাটিপে নিস্তেজ করা যেতো। কিন্তু সেটা তো সম্ভব না, কারণ সেটা করতে গেলে পাশের রুমের আমিটাও ঠিক একই কাজ করার জন্যে ছুটে আসত। হা হা হা, মজার ব্যাপার হচ্ছে এ মুহূর্তে সেও ঠিক এটা ভেবেই মনে মনে হাসছে আমার মত করে!  আবার আমিও যে এই ভাবনায় মজা পাচ্ছি সেটাও সে একই সময়ে বুঝতে পারছে। ঠিক যেমনটা আমি তার ভেতরের আনন্দটা বুঝতে পারছি, অমন করে!

আচ্ছা, ভালো কথা! আমি এই সংকীর্ণ রুমটাতে কিভাবে এলাম? এতক্ষণ ধরে এই যে এখানে আধো আলো-আধো অন্ধকারে বসে আছি, টেবিলে থাকা নোটপ্যাডটাতে পেনসিল ঘসে যাচ্ছি, অপরিচিত এক বিছানায় যে বসে আছি, আপনার কাছে যে লিখছি, তা এতক্ষণ কেন আমার মনে কোন ধাক্কা দিলো না? আর এই 'আপনিটা' কে? আমি কেন আপনার কাছে লিখার জন্যে তাড়না অনুভব করছি?? আসলে হচ্ছেটা কি এখানে?!!








রিপোর্টঃ 

ঊনষাট আর ষাট নম্বর সেলে থাকা টেস্ট সাবজেক্ট দুটো এবারেও নিজেদের খুন করেছে। নিখুঁত ভাবে এদের তৈরি করতে সময় লেগেছিল ৪ মাস ১৮ দিন ১৬ ঘণ্টা। ব্লাড স্যাম্পল যোগাড় করা হয়েছিল স্থানীয় একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে। এই দুটো টেস্ট সাবজেক্ট মোটামুটি স্ট্যাবল পর্যায়ের ছিল। মিরর মেমরি রিপ্রেজেন্টেশন পরীক্ষাটা প্রায় সফলভাবে এদের উপর চালানো সম্ভব হয়েছে। পূর্বের অল্প কিছু স্মৃতি মুছে দিয়ে সেখানে নতুন কিন্তু খুব স্বল্প সংখ্যক স্মৃতি ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল। এদের মস্তিষ্কের ন্যাচারাল স্ট্যাবিলিটির কিছু পরিবর্তন ঘটিয়ে একটা প্রাইভেট নেটওয়ার্ক তৈরির ব্যবস্থা করা হয়েছিল, এবং সফল ভাবে ঐ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে টেস্ট সাবজেক্ট দুটো নিজেদের তথ্য আদান প্রদান করতে সক্ষম হয়েছে। এদের কমিউনিকেশন ফ্রিকোয়েন্সির জন্যে আলাদা কোন ডিভাইস বা ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়নি। ফ্রিকোয়েন্সিকে কন্ট্রোল করার জন্যে এবং তাদের মাঝে কার আন্তঃ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্যে ল্যাবে প্রস্তুতকৃত বিশেষ ধরণের জ্যমার ব্যবহারের চেষ্টাও চালানো চালিয়েছি। জ্যামারের পরিপূর্ণ সক্ষমতাকে পাশ কাটিয়ে তারা তাদের যোগাযোগ কন্টিনিউ করতে সক্ষম হয়েছে। তাই সুপার সোলজার প্রোগ্রামে এই নেটওয়ার্ক সিস্টেম ব্যবহার করা যেতে পারে বলে মত পোষণ করছি।

টেস্ট সাবজেক্ট দু'টি তাদের রুমে সরবরাহকৃত পেনসিল দিয়ে নিজেদের মস্তিষ্কে ক্ষত সৃষ্টি করে, এর ফলে তাদের দেহে অতিরিক্ত রক্তশূন্যতা দেখা দেয়ায় মৃত্যু সংঘটিত হয়। তবে তাদের মস্তিষ্ক দুটো পরবর্তীতে পুনরায় সচল করা সম্ভব হয়। অল্প কিছু ক্ষতি সাধন হলেও মস্তিষ্ক দুটি প্রায় পূর্ণ কার্যক্ষম বলা চলে। মস্তিষ্ক দুটি পুনরায় ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এদের ইন-প্রিন্ট সংরক্ষণ করে নতুন ডেভেলপমেন্টের জন্যে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে।