রবিবার, আগস্ট ৩০, ২০১৫

বদি এণ্ড রঞ্জুর কথোপকথন‬ — ২



বদি ভাইঃ রঞ্জু বলত, একটা বই, সেটা ভালো না মন্দ তা কিভাবে বোঝা যায়?

রঞ্জুঃ এ আর এমন কি কাজ। ভালো বই মানেই পড়ার বই, গল্পের বই, কবিতার বই, এইসব। আর খারাপ বই মানে ঐ যে ইয়ে আর কি.. উল্টা পাল্টা সব কথা বার্তা থাকে যে ঐসব।

বদি ভাইঃ রঞ্জু, তোমাকে কি জিজ্ঞাস করলাম আর তুমি কি বললা। আমি বললাম একটা ভালো বই সেটা তুমি কিভাবে বুঝবে আর তুমি বলছ কি সব বাজে কথা।

রঞ্জুঃ তাহলে বদি ভাই! কিভাবে বুঝবো ভালো বই আর মন্দ বইয়ের পার্থক্য?

বদি ভাইঃ বুঝলা রঞ্জু, তোমারে নিয়ে সত্যিই বড় দুশ্চিন্তা হয়। সাধারণ এই জিনিষ গুলিও এতদিন পরে বুঝে উঠতে পারলে না।

রঞ্জুঃ আপনি আছেন না! আপনি বুঝিয়ে বলবেন। এইবার বলেন না বদি ভাই, কিভাবে ভালো আর মন্দ বইয়ের পার্থক্য বোঝা যায়?

বদি ভাইঃ বলছি, মন দিয়ে শোন।

বইটা ভালো বুঝবে তখন, যখন তুমি বইটা পড়তে শুরু করলে তোমার গার্ল-ফ্রেন্ডের কথা মনে থাকবে না। কত পৃষ্ঠা পর্যন্ত পড়েছ সেইটা মনে থাকবে না। পড়তে পড়তে গল্পের আসল ঘটনা চোখের সামনে ভেসে আসবে, টেনশন অনুভব করবে সেইটাকে ঘিরে। আর প্রতিবার বইটা পড়া থেকে বিরতি নেবার সময় মনে হবে- “ইশ! এত দ্রুত পড়া শেষ হয়ে যাচ্ছে!!” আবার পড়তে শুরু করলে মনে হবে- “ইশ! এরপর কি! এরপর কি!! দ্রুত পড়তে হবে”

কিংবা যদি কোন কবিতার বই হয় তখন দেখবে প্রতিটা কবিতাই তোমাকে এক ধরণের শিহরণ দিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটা কবিতার কিছু লাইনেই তুমি তোমাকে খুঁজে যাবে। কিছু কিছু লাইন তোমাকে টেনে ধরে নিয়ে যাবে সুদূর অতীত। সেখানকার হাসি কান্না তোমাকে আলোড়িত করে যাবে প্রতি চরণে চরণে। দেখা যাবে একই কবিতা তুমি ঘুরে ফিরে পড়ছ।

তারপর বইটা যখন এমন করতে করতে শেষ হয়ে যাবে তখন তোমার আফসোসের সীমা থাকবে না। বার বার মনে হবে- ‘কেন যে এত দ্রুত পড়া শেষ করতে গেলাম’ আর ‘কেন যে আরও একটু লিখল না’ -এইসব। আবার মাঝে মাঝে আক্ষেপও হবে এরপর কি হবে সেইটা জানলে না বলে।

রঞ্জুঃ ও আচ্ছা। তাই বলেন। কিন্তু এইসবই তো প্রায় সব বই পড়তে গেলে হয়। কিন্তু ভালো বইয়ের ব্যাপারে এমন হলে খারাপ বই হবে কোনগুলি?

বদি ভাইঃ এখনো বুঝতে পারো নাই খারাপ কোনগুলি? আফসোস রঞ্জু, তোমারে নিয়া বড়ই আফসোস হয় এইসব কারণেই।

রঞ্জুঃ আহ্! বলেন না বদি ভাই। জিনিষটা বেশ ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে।

বদি ভাইঃ খারাপ বই বলতে আসলে তেমন কিছু নাই। তারপরও যেইসব বই পড়তে গেলেই বার বার তোমার গার্ল-ফ্রেন্ডের কথা মনে পড়ে যাবে। পড়া শুরু করলেই মনে হবে যেন তুমি বই না পড়ে তোমার গার্ল-ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া করছ। আর এমন অযৌক্তিক ঝগড়া তোমার গার্ল-ফ্রেন্ড কোন ব্যাপারকে কেন্দ্র করে করছে তার উপর তোমার বিন্দুমাত্র ধারণা নাই। ভেতর ভেতর এই ঝগড়া দ্রুত শেষ করার তাগিদ অনুভব করবা, আর সেটা সম্ভব না হলে মাঝ পথেই ঝগড়া কিভাবে থামানো যায় তার চিন্তা চলতে থাকবে। যদি এমন সব চিন্তা ধারা যদি কোন বই পড়ার সময় সামনে আসে তখনই বুঝতে পারবে যে তুমি আসলে একটা বাজে ধরণের বই পড়ছ।

রঞ্জুঃ কিন্তু বদি ভাই, আমার যে কোন গার্ল-ফ্রেন্ড নেই। তাহলে কিভাবে এই অনুভূতি আসবে?

বদি ভাইঃ গার্ল-ফ্রেন্ড নেই! এইবার বুঝলাম কেন তুমি ভালো বই আর মন্দ বইয়ের মাঝে পার্থক্য করতে পারো না। ভালোই হয়েছে, সামনের দিকেও আর গার্ল-ফ্রেন্ড জুটাবা না। তাহলেই বই পড়ার আসল স্বাদ অনুভব করতে পারবা। নয়তো সবই বই_ই বাজে মনে হবে।

রঞ্জুঃ উক্কে বদি ভাই।








0 মন্তব্য(গুলি):

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন