বুধবার, এপ্রিল ২৭, ২০১৬

আপনার Google Account এ সংরক্ষণ করুন প্রয়োজনীয় সকল ওয়েব লিংক

     বিভিন্ন প্রয়োজনেই আমরা বিভিন্ন সাইটের লিংক বুকমার্ক হিসেবে সংরক্ষণ করি। পূর্বে এই সুবিধা কেবলমাত্র ব্রাউজার কেন্দ্রিক হলেও এখন তার পরিধির ব্যাপ্তি ঘটেছে। এখন ব্রাউজারের মেমরি ব্যবহারের সুবিধার পাশাপাশি রয়েছে ক্লাউড বুকমার্কিং পদ্ধতি। সে লক্ষে ভিন্ন ভিন্ন এ্যাপ ডেভেলপার ভিন্ন ভিন্ন ফিচার সমৃদ্ধ এ্যাপ ইতোমধ্যে তৈরি করেছেন। তেমনই কিছু পরিচিত এ্যাপের মাঝে আছে Pocket, Raindrop.io, Dropmark, Dragdis, Pinterest সহ আরও অনেক। 

Google Chrome ব্রাউজার অনেক আগে থেকেই ব্রাউজারের বুকমার্ক নিজেদের ক্লাউড সার্ভারে সংরক্ষণ এবং হালনাগাদ করার সুবিধা দিয়ে আসছিল। ঐ সুবিধার আলতায় Google Chrome ব্রাউজার ব্যবহারকারী যে সকল সাইট বা লিংক ব্রাউজারের বুকমার্ক সিস্টেমে সংরক্ষণ করতেন তা ঐ ব্যবহারকারীর Google একাউন্টে স্বয়ংক্রিয় ভাবে সংরক্ষণ হয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অনেক লিংক বুকমার্ক করা হয়ে গেলে সেখান থেকে প্রয়োজনীয় লিংকটি খুঁজে পেতে কিছুটা সময় লেগে যায়, আর বুকমার্ক বারটিও বেশ হিজিবিজি দেখা যায়। আর যারা অনেক বেশি লিংক এভাবে সংরক্ষণ করেন তাদের ব্রাউজার কিছুটা স্লো কাজ করতে থাকে। 






এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসার জন্যে গুগল "Save to Google" নামে নতুন একটি এ্যাপ ডেভেলপ করেছে। এই এ্যাপ আপনার সমস্ত লিংক গুগলের সার্ভারে সংরক্ষণ করবে এবং অন্য সকল বুকমার্কিং এ্যাপের মত এটিও আপনাকে লিংক কন্টেন্টের ভিত্তিতে ট্যাগ ব্যবহারের সুবিধা প্রদান করবে। সেখানে ইচ্ছে করলে আপনি পোষ্ট প্রদত্ত ছবি গুলি যে কোন একটিকে Thumb বা প্রিভিউ হিসেবে পছন্দ করতে পারবেন এবং ইচ্ছে হলে লিংকটির সাথে ট্যাগ যুক্ত করে দিতে পারবেন।

Google এর এই সুবিধাটি পেতে আপনাকে প্রথমে আপনার Google Chrome ব্রাউজারে "Save to Google" এক্সটেনশনটি ইন্সটল করতে হবে। এরপর এক্সটেনশনটি আপনার একাউন্ট এক্সেস করার অনুমতি চাইবে। অনুমতি প্রদান করলেই সে কাজ করার উপযোগী হয়ে যাবে। 




এরপর যখনই আপনি কোন সাইট বা কোন পেইজের লিংক সংরক্ষণ করতে চাইবেন তখন উক্ত সাইট বা পেইজটি ব্রাউজারে লোড হবার পর শুধুমাত্র এক্সটেনশন বার হতে হলুদ স্টার চিহ্নিত এই "Save to Google"এক্সটেনশন বাটনে ক্লিক করতে হবে। ক্লিক করার পর পরই একটি pop-up উইন্ডো দেখতে পাবেন। এই উইন্ডোতে আপনি পোষ্ট সম্বলিত ছবি সমূহের মধ্য থেকে পছন্দসই ছবি Thumbs বা প্রিভিউ হিসেবে পছন্দ করতে পারবেন। পাশাপাশি পোষ্ট ক্যাটাগরি আলাদা করার জন্যে পছন্দমত Tag দিয়ে দিতে পারবেন।





আপনার সংরক্ষিত সাইট কিংবা লিংকগুলি দেখতে হলে Google এর My Save পেইজটিতে যান। সেখানে চমৎকার ভাবে আপনার লিংক গুলিকে ছোট প্রিভিউ সহ দেখতে পাবেন। আর অনেক লিংক হলে Google এর বিল্টইন সার্চ সুবিধার মাধ্যমে খুব সহজেই আপনার সংরক্ষিত লিংকটি খুঁজে পাবেন। এছাড়াও ক্যাটাগরি আকারে Tag সেকশনে একই ট্যাগের পোষ্ট গুলি আলাদা ভাবে দেখার সুযোগ তো থাকছেই।


আপাতত Google -এর এই সুবিধাটি কেবলমাত্র Google Chrome বা Chrome নির্ভর ব্রাউজার গুলিতে ব্যবহার করা সম্ভব। Firefox বা অন্যান্য ব্রাউজার গুলির জন্যে এখনো কোন Add-on তৈরি হয়নি। তবে আশা করা হচ্ছে খুব দ্রুতই অন্য সকল ব্রাউজারের জন্যেও খুব দ্রুতই Add-on প্রকাশ করা হবে।








সোমবার, এপ্রিল ২৫, ২০১৬

Google Docs এর ডকুমেন্ট পাবলিশ করুন আরও পরিপাটি রূপে


যারা Google এর সাথে পরিচিত তারা Google Docs সুবিধাটির কথাও জানেন। বর্তমানে আমরা যে Google Drive ব্যবহার করছি সেটি Google Docs এর একটি বর্ধিত সুবিধার আলতায় পড়ে। কোন অতিরিক্ত ওয়ার্ড প্রসেসর কিংবা অফিস প্রোগ্রাম ছাড়াই অনলাইনে ডকুমেন্ট তৈরির জন্যে Google Docs সমাদৃত হয়। তবে এর আরও একটি ফিচার হচ্ছে Online Collaboration পদ্ধতি। এই ফিচার ব্যবহার করে একই ডকুমেন্ট একই সময় একাধিক স্থান হতে একাধিক নির্বাচিত ব্যবহারকারী দেখতে এবং পরিবর্তন সংরক্ষণ করতে পারে।

তবে শুধুমাত্র এক বা একাধিক ব্যক্তির ডকুমেন্ট তৈরির সুবিধা নয়, Google Docs এর আরও একটি ফিচার হচ্ছে  Document Publishing. Google Docs এ কোন ডকুমেন্ট লেখার পর ব্যবহারকারী সরাসরি সেই ডকুমেন্ট অনলাইনে সকলের সাথে শেয়ার করার সুবিধা পেয়ে থাকে। তবে সেক্ষেত্রে কেউ ডকুমেন্টটি আর পরিবর্তন করার সুযোগ পায় না, শুধুমাত্র ভিউয়ার হিসেবে ডকুমেন্টে অবস্থিত তথ্য গুলি দেখতে পারে। 



তবে ডকুমেন্ট পাবলিশ করার পর তার বাহ্যিক সাজসজ্জা আধুনিক যুগের ওয়েব সাইট কিংবা ব্লগ গুলির মত আকর্ষণীয় তাকে না, কিছুটা আদিম যুগের ওয়েব সাইটের মত দেখা যায়। যার দরুন অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলেও ডকুমেন্টটি অনেকেই পড়তে বিরক্ত বোধ করে থাকে। 


এই সমস্যা থেকে বের হয়ে আসার লক্ষেই কাজ করেছে Google Doc Publisher নামের একটি ওয়েব এ্যাপের ডেভেলপারগণ। তাদের স্লোগান হচ্ছে - "PUBLISH GOOD LOOKING GOOGLE DOCS"। তারা একটি চমৎকার এ্যাপ তৈরি করেছে যা গুগল ডকের সাজসজ্জায় অনেকটাই পরিবর্তন এনে দেয়। ডকুমেন্টটি তৈরি করার সময় যেমন সাজসজ্জায় থাকে, ডকুমেন্ট পাবলিশ করার পরও তার সাজসজ্জা তেমনই থেকে যায়। মোট কথা, পুরাতন যুগের ওয়েব ডিজাইনের মত পুরো স্ক্রিনটা Justify মুডের মত হয়ে যায় না।

চমৎকার এই এ্যাপটি ব্যবহার করে সহজেই আপনি আপনার ডকুমেন্ট গুলিকে আকর্ষণীয় রূপে পাবলিশ করতে পারবেন। এতে যেমন আপনার পাবলিশ করা ডকুমেন্টটি পাঠকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে, তেমনি আপনার মার্জিত ভঙ্গি আপনার লেখাতেই উঠে আসবে।



যেভাবে পাবলিশিং এর কাজটি করবেন____





  • কাজটি করার জন্যে প্রথমে আপনি আপনার ডকুমেন্টটি তৈরি করে নিন।




  • ডকুমেন্ট সম্পাদনার পর যখন পাবলিশ করার জন্যে File থেকে "Publish to the web..." অপশনটি সিলেক্ট করুন।




  • পাবলিশিং পারমিশন প্রদান করে পাবলিশ্‌ড লিংকটি কপি করে ক্লিপ-বোর্ডে নিন।




  • এরপর  Google Doc Publisher সাইটে চলে আসুন। এখানে একটি ইনপুট টেক্সট-বক্স দেখতে পাবেন। সেখানে আপনার পাবলিশ করা Google Docs এর লিংকটি পেস্ট করুন।


পেস্ট করার প্রায় সাথে সাথেই লিংকটি পরিবর্তন হয়ে যাবে। এখানে লক্ষ করে দেখবেন যেখানে আপনার Google Docs থেকে প্রাপ্ত পাবলিশিং লিংক ছিল কিছুটা এমন ফরমেটের-

https://docs.google.com/document/d/1lP8fDWJj8qD6R2SpYUc2g4eIWereIsTheLink1eAFrTSVWOBU/pub


সেখানে Google Doc Publisher এর লিংক ফরমেট হবে কিছুটা এমন-

http://gdoc.pub/1lP8fDWJj8qD6R2SpYUc2g4eIWereIsTheLink1eAFrTSVWOBU





  • এখন 'VIEW YOUR DOC' বাটনে ক্লিক করলেই নতুন একটি ট্যাবে পাবলিশ হওয়া আপনার ডকুমেন্টটি নতুন রূপে দেখতে পাবেন।




  • এখন শুধু আপনার কাজ হচ্ছে এই এ্যাপ থেকে প্রাপ্ত আপনার ডকুমেন্টের লিংকটি আপনার লেখাটির পাঠকদের কাছে পৌঁছে দেয়া।



Google Doc Publisher এ পাবলিশ করা ডকুমেন্টটি যদি একাধিক পৃষ্ঠার হয়ে থাকে, তাতেও কোন সমস্যা নেই। Google Docs এবং Google Doc Publisher এ্যাপের মাধ্যমে যে লিংকটি আপনি পাচ্ছেন তাতে সকল পৃষ্ঠা স্বয়ংক্রিয় ভাবে একত্রিত হয়ে একদম ব্লগ পোষ্টের মত দেখাবে।






রবিবার, এপ্রিল ২৪, ২০১৬

কল্পগল্প - ওয়েভ লেন্থ



অবর্জাভেটরি প্যানেলে বসে থাকার মত বিরক্তিকর কাজ দ্বিতীয় আরেকটা নেই। হাজার বছরেও কোন পরিবর্তন হবে কি না তার কোন নিশ্চয়তা নেই, অথচ তোমাকে বসে বসে মনিটরিং করে যেতেই হবে। হুট করেই যদি কোন সেন্সর চিৎকার করে উঠে তখনও বিচলিত হওয়ার মত কোন কারণ থাকে না। হঠাৎ এমন করে সেন্সর গুলি। মাঝে মাঝে মনে হয় সেন্সর গুলিও বিরক্ত হয়ে গেছে এভাবে বসে বসে সময় নষ্ট করে। তাই হঠাৎ হুট হাট করে চিৎকার করে নিজেদের করুন অবস্থার জানান দেয়। আবার অন্যদিকে এর থেকে শান্তি দায়ক চাকরিও নেই বাজারে। পরিশ্রম বলতে কিছুই নেই, অথচ মাথার ঘাম পায়ে ফেলেও যা উপার্জন করা যায় না এখানে তার চেয়ে পরিমাণে অনেক বেশিই বেতন পাওয়া যায়।

স্যাম এখনো দ্বিধাগ্রস্ত এই ব্যাপারটা নিয়ে। যদিও এখানে আসার কারণ নিয়ে তার কোন দ্বিধা নেই। সে নক্ষত্রকে ভালবাসে, আর ভালোবাসে বলেই এমন একটা কাজের জন্যে ছুটে এসেছে এতদূর। সখ মেটানো আর অর্থপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা যেখানে আছে সেখানে কে আসতে চাইবে না! তবে দ্বিধা হচ্ছে, এখনো কেন সে এখানে আটকে আছে, এই নিয়ে। এমন নয় যে তার সখ মিটে গেছে। তবে একঘেয়েমির একটা ব্যাপার চলে এসেছে। কাজে যোগদানের পর সে প্রথম দুই মাস স্বস্তি নিয়ে ঘুমাতেও পারেনি উত্তেজনায়। বলতে গেলে পুরো সময়টাই জেগে কাটিয়েছে। অবর্জাভেটরিতে যতক্ষণ থাকত ততক্ষণ এইটা ঐটা নিয়ে ভালো ভাবে জানার চেষ্টা করত। আর বাকি পুরোটা সময় এখানকার বিশাল অনলাইন লাইব্রেরি থেকে জানা না জানা নক্ষত্র সম্পর্কে যে তথ্যগুলি জমা আছে তা মাথায় ঢোকাবার চেষ্টা করত। কিন্তু আগ্রহ ধীরে ধীরে কমে আসে। এখানে আছে এখন প্রায় দেড় বছর হতে চলল। ইতোমধ্যে সে বুঝে নিয়েছে এখানে আরও কিছুদিন থাকলে হয় উন্মাদ হয়ে যাবে, নয়তো আগের অপারেটরটার মত আত্মহত্যা করে বসবে। যদিও এই তথ্যটা ক্লাসিফাইড ছিল, তবে স্যাম ঠিকই বের করে নিয়েছে।

এই স্পেস অবর্জারটরির মূল কাজ যদিও মহাবিশ্বের অবস্থানগত পরিবর্তন গুলি রেকর্ড করা। তবে এটা ছাড়াও এখানে আরও কাজ হয়। এটা অবশ্য খুব গোপন কিছু নয়, কমবেশি সবাই জানে। মহাবিশ্বে ছাড়িয়ে থাকা কোন কোণে বুদ্ধিমান কোন প্রাণী রয়েছে কি না তা বের করার চেষ্টা করা হয়। প্রচলিত ব্যবস্থাতেই কাজটা চলে। একটা সিগনালে করে বেশ কিছু সম্ভাষণ আর বুদ্ধিমত্তা পরীক্ষা করার সাধারণ কিছু তথ্য প্রচার করা হয়। সেই সিগন্যাল প্রতিনিয়ত মহাবিশ্বের অজানা প্রান্তের উদ্দেশ্যে ছড়িয়ে যাচ্ছে তাদের স্যাটেলাইট কম্যুনিক্যাশন প্যানেল থেকে। যদি কোন বুদ্ধিমান প্রাণী কোথাও থাকে তবে তারা সেই সিগন্যাল রিসিভ করতে পারবে এমনটা ধারণা করা হয়। আর যারা এমন সিগন্যালকে রিসিভ করতে পারবে আশা করা যায় তারা সেই সিগন্যালের বিপরীতে তাদের সিগন্যাল ব্রডকাস্টও করতে পারবে।

তবে স্যামের এখানে কিছু দ্বিমত রয়েছে। সে অবশ্য আশা করে মহাবিশ্বের কোন কোণে বুদ্ধিমান প্রাণীর বসবাস রয়েছে। তবে তার মানে এই নয় যে তারা সরাসরি আমাদের মতই প্রযুক্তি ব্যবহার করে। যেহেতু প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত নয় সেই হিসেবে আমাদের জ্ঞানের সাথে তাদের জ্ঞানের তফাত থাকতেই পারে। আমরা যেভাবে জ্ঞানের ব্যবহার করছি তাদের জ্ঞানের ব্যবহার তারচেয়ে ভিন্ন কিছু হওয়া খুব অস্বাভাবিক নয়। আর তাই যদি হয় তবে কয়েকটি ঘটনা ঘটতে পারে। প্রথমত, সিগন্যালটি তাদের পর্যন্ত পৌছলেও সেটা তারা ধারণ করবে না। দ্বিতীয়ত, যদি ধারণ করেও তবে তারা তা ডিকোড করতে বা বুঝতে পারবে না। আবার যদি তারা ডিকোড করতেও পারে তবে সেই কোডের অর্থ তারা বুঝবে সেটা হয়ত সম্ভবও হবে না। আবার এই নিয়ে তার একটা নেতিবাচক ধারণাও রয়েছে। যদি ধরা হয় তাদের পুরো সভ্যতাটাই সিগন্যাল নির্ভর হয় তবে মানুষ যে সিগন্যাল ব্রডকাস্ট করছে সেটা তাদের প্রচলিত সিগন্যাল সিস্টেমকে ধ্বংসের মুখে ফেলে দিতে পারে। আর এটা যদি বাস্তব হয় তবে তারা কিছু বোঝার আগেই হয়ত ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।

কিছুদিন আগে অবশ্য স্যম তার এই থিউরিটা নিয়ে ড. আলভিনের সাথে কথা বলেছিল। ড. আলভিন তার এই থিউরি শুনে তো হেসেই খুন! লোকটা যে এমন ভাবে হাসতে পারে সেটা হয়ত স্যামকে এমনিতে কেউ বললে বিশ্বাসই করত না। একান্তই নিজের চোখে দেখেছে বলেই বিশ্বাস করতে পেরেছে। ড. স্যাম হাসির পরে অবশ্য তার ধারণার একটা ভুলও তাকে ধরিয়ে দিয়েছিল। ভুলটা হল, যদি এমন কোন সভ্যতার উপস্থিতি সত্যিই থেকে থাকে তবে আমাদের পাঠানো সিগন্যাল পাওয়ার অনেক পূর্বেই তারা বিলীন হবে। তার ভাষ্যমতে আরও অনেক ওয়েভ লেন্থের সিগনাল ইতোমধ্যে মহাবিশ্বে চলাচল করছে। যদিও সেগুলি অর্থবহ কোন সিগন্যাল নয়। তবে যদি সিগন্যালের কারণেই অন্য কোন সিগন্যাল ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়, তবে ঐ সব সভ্যতা অনেক আগেই মৃত্যুবরণ করেছে। স্যাম তার পরেও আরও একটা কিছু বলতে চাচ্ছিল। কিন্তু ড. আলভিনের সময় না থাকায় আর বলা হয়নি। এরপর অবশ্য ড. আলভিনের সাথে কথা বলবার সুযোগও হয়নি আর। ক’দিন বাদেই ড. আলভিন স্পেস অবর্জাভেটরি থেকে পৃথিবীতে চলে যান। তার পরিবর্তে যিনি আসেন তার স্যাম সাথে ভাব জমানোর মত সাহস করে উঠতে পারেনি।

স্যামের চাকরির চুক্তিটা বেশ লম্বা সময়ের। আর এই লম্বা সময়ের পুরোটাই একরকম এই স্পেস অবর্জাভেটরিতে কাটাতে হবে তা আগেই জানানো হয়েছিল তাকে। পৃথিবীতে অবশ্য তার জন্যে অপেক্ষায় আছে তেমন কেউ নেই। তাই এই নিয়ে তার কোন আক্ষেপও তৈরি হয় না। যদিও মাঝে মধ্যে মুক্ত জীবনের কথা মনে পড়ে। তখন কিছুটা দুঃখবোধ হয়। কিন্তু সেটা ঐ পর্যন্তই। নিজের কাজ আর সখের সমন্বয় করার আনন্দটাকে মনে করেই দিন পার করতে থাকে সে।

তেমনি একদিন সে বসেছিল অবর্জাভেটরি প্যানেলের সামনে। মুখের সামনে রিডার ধরে সেখানে দুই আলোকবর্ষ দূরের একটা গ্রহের উপাদান গুলি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ছিল। ব্যাপারটা তখনই ঘটল, একটা সেন্সর হুট করেই তার স্বরে চিৎকার জুড়ে দিল। যদিও এমন চিৎকার শুনে স্যাম অভ্যস্ত, কারার মত তেমন কিছুই নেই। তবুও রিডারটা রেখে উঠে দাঁড়াল। তারপর প্যানেলের সেন্সর মনিটরটার দিকে এগিয়ে গেল সে। রিডিং দেখেই বুঝল হঠাৎ করেই একটা লাইট রিসিভার কিছু সময়ের জন্যে কাজ বন্ধ করে দিয়েছিল। সেটা যেমন হঠাৎ করেই নিজের কাজ বন্ধ করেছিল, তেমনি আবার নিজে নিজেই স্বয়ংক্রিয় কাজ করতে শুরু করে দিয়েছে। যদিও নিয়ম অনুযায়ী এটা নিয়ে রিপোর্ট করা উচিৎ। তবে সিস্টেমে এমন অনেক গ্লিচই থাকে, সে নিয়ে এত উত্তেজিত হওয়ার কিছু নেই। রিডিং আবার আগের মতই নিচ্ছে দেখে নিজের স্থানে ফিরে আসছিল স্যাম।

চেয়ারটার কাছাকাছি পৌছতেই আবার আরেকদিকের প্যানেলে আরেকটা সেন্সর চিৎকার করে উঠল। এবার একটু বিরক্ত হল সে। মনে হচ্ছে সব সেন্সরই বোধহয় আজ এক সাথে চিৎকার করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ঘুরে আবার যে সেন্সর শব্দ করেছিল সেটার মনিটরের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। এটা হিট সিগনাল প্রসেস করার সেন্সর। এখানেও একই ঘটনা। লাইট সেন্সরের মত এই সেন্সরটাও অল্প কিছু সময়ের জন্যে থেমে গিয়েছিল। তারপর তার আসার আগেই আবার কাজ শুরু করে দিয়েছে। রিডিংটা দেখে নিয়ে যখন বুঝল আর কোন সমস্যা হচ্ছে না তখন ফিরে গেল নিজের অবস্থানে। রিডারটা আবার মুখের সামনে তুলে ধরে ডুবে যেতে লাগল তথ্যের সমুদ্রে।

হঠাৎ কি মনে করে অবর্জাভেটরির বাইরে থাকা ভিডিও রিসিভারের রেকর্ড করা ভিডিও চালু করল। বর্তমান সময়ের প্রায় সাথে সাথেই সেটা ভিডিও ক্যাপচার করে পাঠাতে পারে। তবুও ট্রান্সমিশন আর প্রসেসিং করার জন্যে কিছু সময় এর মাঝে ব্যয় হয়। তবে সেটা এতই ক্ষুদ্র যে না বলে দিলে বোঝার উপায় নেই। মনে মনে হিসেব করে যে সময়টাতে লাইট সেন্সরটা এলার্ম দিচ্ছিল সেই সময়ের কিছু পূর্বের ভিডিও আর্কাইভ চালু করল। নাহ্‌, সব ঠিকঠাকই চলছে। কোন সমস্যা চোখে পড়ছে না। তবুও ভিডিও দেখতে থাকল।

ভিডিও দেখতে দেখতে স্যামের শিরদাঁড়া বেয়ে একটা ঠাণ্ডা স্রোত নেমে গেল। এটাকেও কি সিস্টেম গ্লিচ বলবে?! কিন্তু আর কি ব্যাখ্যা হতে পারে? যা দেখছে সেটা হলেও বেশ বড় ধরণের বিপদে পড়তে যাচ্ছে তারা। তবে প্রশ্ন হচ্ছে শুধুই কি তারা? এবার আর অবহেলা না করে দ্রুত রিপোর্ট করল। তারপর বেশ উত্তেজনা নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকল। বার বার ঘড়ি দেখে সময় পার করছিল। আর কোন রিপ্লাই পাচ্ছিল না বলে হাতের রিডারের মেসেজ বক্সে চোখ বোলাচ্ছিল। কিন্তু শেষ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কোন রিপ্লাই না পেয়ে চরম হতাশ হয়ে পড়ল। আরও কিছু সময় অপেক্ষা করে শেষে নিজের রুমে ফিরে গেল।

কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও মন থেকে ব্যাপারটাকে ঝেড়ে ফেলতে পারল না। অন্তত ভিডিও ফিডে যা দেখেছে তার পর তো সম্ভবই নয়। স্পষ্ট দেখেছে সে, সূর্যের ঠিক উপরিভাগে হঠাৎ করেই একটা গর্তের মত তৈরি হল যেন। আর সেই গর্ত সূর্যের আলোগুলি যেন টেনে গিলে খাচ্ছিল! অথচ এত অল্প সময়ের জন্যে ব্যাপারটা ঘটেছে যে ভিডিও ফিডে স্লো মোশনে না দেখলে সেটা বিশ্বাসই করা যায় না!! ঘুমানোর সময়টাতেও এই ঘটনার উত্তেজনায় ঘুম হল না। ঘুম আসছে না বলে শেষে রিডারটা টেনে নিয়ে কৃষ্ণগহ্বর গুলি নিয়ে পড়তে শুরু করল। যদিও নিশ্চিত করে কোথায় কোথায় এই গহ্বর আছে তা কেউ বলতে পারছে না। যতটুকু ধারণা দেয়া হয়েছে তা সবই অনুমান নির্ভর। আবার এটাও প্রচলিত যে কৃষ্ণগহ্বর বলতে আসলে কিছুই নেই, এটা একটা ধারণা মাত্র। তবুও মোটামুটি যা পাওয়া গেল তার প্রায় সবই দেখা হয়ে গেল স্যামের।

অবর্জাভেটরিতে দিনরাত বলে কোন ব্যাপার নেই, তবুও সময় এখানে মেনে চলতে হয়। আর তাদের সময় হিসেবে এখন সকাল ধরে নেয়া যায়। সেই সকালেই সে ছুটে চলল ড. ডোনাল্ড টোরেস এর দিকে। ড. আলভিনের চলে যাবার পরই এখনকার অবর্জাভেটরির দায়িত্বে এসেছেন ড. ডোনাল্ড টোরেস। তার গম্ভীর স্বভাবের কারণে তাকে কিছুটা রাগীও মনে হয়। আর এই কারণেই তার সাথে পরিচিত হবার জন্যে খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি স্যাম। ড. টোরেসও যে ঐরকম কোন চেষ্টা করেছেন তাও নয়। আসার পর টুকিটাকি দুই একটা অফিসিয়াল কথা ছাড়া সে তেমন কোন বাক্যব্যয়ই করেন নি।

স্যাম যদিও এতদিন ড. ডোনাল্ড টোরেস থেকে দূরত্বে থাকবার চেষ্টা করে গেছে, তবুও গতকালের ঘটনার উত্তেজনায় আজ সব রাখঢাক বাদ পড়ে গেছে। তার রুমের সামনে দাড়িয়ে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি চাইল। অল্প কিছুক্ষণের মাঝেই মুখের সামনে থেকে দরজা খুলে গেল। ভেতরে প্রবেশ করল স্যাম। সম্ভবত ড. টোরেসও রাতে ঘুমান নি। রুমের ভেতরে কেন্দ্রীয় কম্পিউটারের মডিউলটির সচল অবস্থা আর ড. টোসের এর ব্যবহৃত মনিটরটিতে ভেসে উঠা বিভিন্ন ফাইল সেটাই প্রমাণ করে। ড. টোরেস স্যামের দিকে না তাকিয়েই বলতে শুরু করলেন, আমি আপনার মেসেজটি গতকাল যথাসময়েই পেয়েছি মি. স্যাম। তবে আপনাকে তার উত্তরে দ্রুত সময়ে উত্তর না দেবার জন্যে দুঃখ প্রকাশ করছি। তবে এটার পেছনেও কিছু কারণ আছে।

স্যাম সাথে সাথেই উত্তর দিল, ড. টোরেস, আমি কিছু মনে করি নি। তবে আপনার উত্তর না পেয়ে আমি আসলে বুঝতে পারছিলাম না আসলে কি করা উচিৎ।

– আসলে মি. স্যাম আমাদের আর কিছুই করার নেই এই মুহূর্তে।

– কি বলছেন ডক্টর! আপনি কি রিডিং গুলি দেখেন নি? সাথে ঐ সময়ের ভিডিও ফিডের রেকর্ডিংটা?!

– হ্যাঁ, আমি সবই দেখেছি মি. স্যাম। তবে তা নিয়ে আমাদের বিচলিত কিংবা চিন্তিত হবার কোন কারণ আর নেই।

– এমনটা কেন বলছেন ডক্টর? এর মানে কি ধরে নেব আমরা সকল আশা ইতোমধ্যে হারিয়েছি?

– না, আশা হারাই নি। তবে তুমি যা ধারণা করছিলে তার থেকে এখন আমরা শঙ্কা মুক্ত আছি।

– ড. টোরেস, আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। আমি যতটুকু বুঝেছি তাতে ব্যাপারটা যদি সত্যি হয় তাহলে আমারদের অস্তিত্ব রক্ষা করা নিয়েই আমরা সমস্যায় পড়ে যাব।

– হ্যাঁ, আপনার ধারণা সত্যি স্যাম। তবে তেমন আর কিছুই হবে না। অন্তত গতকাল যাদের দ্বারা ব্যাপারটা ঘটেছিল তাদের দ্বারা আর না।

– ড. টোরেস যদি সমস্যা না থাকে তাহলে কি আমি বিস্তারিত জানতে পারি এই ব্যাপারে?

– হ্যাঁ, অবশ্যই। তার আগে আপনাকে আপনারই একটা ধারণার কথা মনে করিয়ে দেই যা আপনি আমার আগে অবস্থানরত ড. আলভিনের সাথে শেয়ার করেছিলেন। তিনি তার রেগুলার রিপোর্ট অংশে সেটি রেখে গিয়েছিলেন বলে আমি তা জানতে পেরেছি।

– আমার সিগন্যাল নিয়ে যে ধারণাটা ড. আলভিনের সাথে শেয়ার করেছিলাম, সেটা?

– হ্যাঁ, আমি সেটার কথাই বলছি।
গতকাল তুমি যেই সময়ের লাইট এবং হিট ট্যাম্পারেচার সিগনালের অসঙ্গতি আর ভিডিও ফিড এর রেকর্ডিং পাঠালে সেই একই সময় আরও একটা অদ্ভুত ব্যাপার ঘটেছিল।

– কি ব্যাপার ডক্টর?

– আমরা যে উন্নত বুদ্ধিমত্তার প্রাণী খোঁজার জন্যে সিগন্যাল প্রেরণ এবং গ্রহণ করার আরও একটি প্রোগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি সেটা তো তুমি নিশ্চই জানো।

– হ্যাঁ, ওটা জানা আছে। তবে আমার সেখানে কোন এক্সেস নেই।

– হ্যাঁ, তোমার ওখানে কোন এক্সেস নেই। এর এক্সেস সরাসরি আমাদের কেন্দ্রীয় কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করে। আর সেটার রিপোর্ট সবার আগে আমাকেই সে প্রদান করে। তুমি গতকাল যে সময়ের অসঙ্গতি রিপোর্ট করেছিলে, সেই একই সময়ে আরও একটা অদ্ভুত সিগন্যাল আমরা রিসিভ করি। আসলে বলতে গেলে এটাই প্রথম একটা সিগন্যাল যা আমাদের এই উন্নত বুদ্ধিমত্তা প্রোগ্রাম প্রথম রিসিভ করে। প্রাথমিক অবস্থায় সিগনালটার কোন অর্থই আমরা বুঝতে পারি নি। কাল মাঝ রাত পর্যন্ত কেন্দ্রীয় কম্পিউটার সেই সিগনালকে প্রসেস করেছে। এবং মাঝ রাতের কিছু পরেই সে সেই সিগনালকে ডিকোড করতে সক্ষম হয়েছে।

– কি ছিল সেই সিগন্যালে ডক্টর?

– আত্ম-চিৎকার!

– কি!!

– হ্যাঁ, আত্ম-চিৎকার। মাত্র ৩ শব্দ, মরে গেলাম, বাঁচাও।

– এর অর্থ কি?

– আসলে আমি যতটুকু ধারণা করছি তাতে বলতে পারি গতকাল যে বা যারাই ঐ অদ্ভুত কাজটি করছিল তারা মূলত অত্যন্ত বুদ্ধিমান এক ধরণের প্রাণী কিংবা প্রাণী গোষ্ঠী। এবং আরও বলতে পারি যে তারা কোন সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজটি করেনি। আরও পরিষ্কার করে বললে তারা এই মহাবিশ্বের দস্যু। আমার ধারণা তারা সূর্যের শক্তি কিংবা আলো অথবা সূর্যটাকেই কব্জা করার চেষ্টা করছিল। তবে তাদের সেই হামলা বিফল হয় কিংবা তারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয় আমাদের এই উন্নত বুদ্ধিমত্তা খোঁজার সিগন্যালের মাধ্যমে।

– সেটা কিভাবে ডক্টর?

– আসলে যে কোন ভাবেই হোক, আমাদের সেন্সর গুলি যখনই কোন ফল্ট করে তখনই আমাদের এই বুদ্ধিমত্তা খোঁজ করা সিগন্যাল প্রেরণের প্রায়োরিটি বেড়ে যায়। সম্ভবত একে প্রোগ্রাম করাই হয়েছে এভাবে। যাতে কোন সম্ভাবনা এড়িয়ে না যায়। গতকালও সেটাই হয়েছিল। ওরা মূলত হামলা চালানোর উদ্দেশ্যে এক ধরণের কন্ট্রোল্‌ড ব্লাকহোল তৈরি করেছে। জিজ্ঞাস করো না কিভাবে করেছে, কিন্তু তারা করেছে। আর এই ধারণা থেকেই বলছি, তারা আমাদের থেকে অন্তত হাজার গুন বেশি উন্নত একটা গোষ্ঠী। আর তাদের তৈরি ঐ ব্লাক হোল যখন আমাদের সূর্যের আলোকে তার মধ্যে নিয়ে যাচ্ছিল ঠিক তখন লাইট সিগন্যাল রিসিভার সেন্সরটি নোটিফাই করে। আর এই নোটিফাই করার আগেই আমাদের বুদ্ধিমত্তা খোঁজ করা সিগন্যাল পাওয়ার ১০০ গুন বৃদ্ধি পায়।

ওরা মূলত আমাদের এই সিগন্যালকে রেগুলার সিগন্যাল ধরে এগিয়ে এসেছিল। আর এখানেই তোমার ধারনাটা ঠাই পেয়েছে স্যাম। ওদের পুরো সভ্যতাটাই গড়ে উঠেছে সিগন্যালকে কেন্দ্র করে। আমাদের ব্রডকাস্ট সিগন্যালকে ওরা অনেক আগেই ইন্টারসেপ্ট করেছিল। আর সেই রকম প্রস্তুতি নিয়েই ওরা হামলার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু যখনই আমাদের সিগন্যালের লেন্থ রেগুলার লেন্থ ছেড়ে ১০০ গুন বেড়ে গেল তখনই ওরা বিপত্তিতে পড়ল। তোমার ধারণা কাজ করা শুরু করে দিল সেখানেই। আমাদের সিগন্যালের কারণে ওদের সিগন্যালের পরিবর্তন ঘটল। আর সেই পরিবর্তনই ধ্বংস করল ওদের। আর সেই ধ্বসের মুখেই ওরা প্রচার করল ওদের প্রথম ব্রডকাস্ট!

এক নিশ্বাসে কথাগুলি বলে থামলেন ড. ডোনাল্ড টোরেস।

কথা শুনে স্যাম রীতিমত বোকাই বনে গেল। কত বড় একটা ব্যাপার! কত বিশাল এক ধ্বংসের মুখে পড়তে যাচ্ছিল তারা। অথচ যারা এই ধ্বংসের হোতা, সেই তারাই সামান্য একটা সিগন্যালের সামনে নিজেদের বিলীন করল!!


এতকিছু শোনার পরেও স্যাম ঘটনাকে হজম করতে পারছে না যেন! কিন্তু মানতে না চাইলেও তাকে বিশ্বাস করতেই হবে। ড. ডোনাল্ড টোরাসের কথা বাদ দিলেও সেন্ট্রাল কম্পিউটার তো আর মিথ্যে বলছে না.....





সোমবার, এপ্রিল ১১, ২০১৬

পাঠ প্রতিক্রিয়া - যে প্রহরে নেই আমি



গতকাল শেষ করলাম লেখক/ব্লগার 'রাসায়াত রহমান' এর লেখা "যে প্রহরে নেই আমি" বইটি।

গল্পটা বেশ ইন্টারেস্টিং। গল্পের মূল চরিত্র 'রাজু' তারচেয়েও বেশি ইন্টারেস্টিং। প্রথম দিকে অতি-ভৌতিক কিছু একটা ব্যাপার তার মাঝে আছে, এমন মনে হচ্ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত যার দেখা মিলল সেটাও কম চমৎকৃত করেনি। উত্তেজনাপূর্ণ ছিল "ইদ্রিস খা" এর প্রাপ্য বুঝিয়ে দেবার অংশটুকু। আর অবশ্যই আলাদা করে বলতে হবে 'নায়লা' চরিত্রটির ঘুরে দাঁড়াবার ব্যাপারটাকে। রাজুর জ্বালিয়ে দেয়া প্রেরণার প্রদীপ আর নিজের ইচ্ছাশক্তিকে ভর করে সে কতদূর পর্যন্ত এগিয়েছে তা জানতে হলে অবশ্যই আপনাকে পড়তে হবে গল্পটি।

তবে গল্পটা শেষ করার পরও ঠিক বুঝতে পারিনি গল্পগ্রন্থের নাম করণের উদ্দেশ্য বা সার্থকতা :(






সোমবার, মার্চ ২১, ২০১৬

সাবধানতা অবলম্বন করুনঃ আপনার স্মার্ট-ফোনটিও রয়েছে Stagefright ঝুঁকিতে



গত বছরের জুলাই মাসে সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান জিমপেরিয়ামের গবেষকেরা ‘স্টেজফ্রাইট’ বাগ সম্পর্কে প্রথম তথ্য প্রকাশ করেছিল। ওই সময় এ প্রতিষ্ঠানটির বিশেষজ্ঞরা বলেছিলেন, অ্যান্ড্রয়েডচালিত মোবাইল ফোনে এমএমএস হিসেবেও ভাইরাস আসতে পারে, যা ফোনে থাকা তথ্য চুরি করতে সক্ষম।

‘স্টেজফ্রাইট’ নামের অ্যান্ড্রয়েডের একটি নিরাপত্তা ত্রুটি কাজে লাগিয়ে ভাইরাস পাঠাতে পারে হ্যাকাররা। জিমপেরিয়াম মোবাইল সিকিউরিটির ব্লগ পোস্টে বলা হয়, ‘হ্যাকারদের শুধু অ্যান্ড্রয়েড ফোন হ্যাক করার জন্য মোবাইল নম্বর জানা থাকলেই চলবে। ওই নম্বরে দূরে বসেই এমএমএস বা টেক্সট মেসেজ আকারে একটি বিশেষ কোড লিখে মোবাইলে পাঠিয়ে দেবে তারা। বিশেষভাবে লেখা কোডসমেত বার্তা মোবাইলে পাঠাতে সফল হলে ব্যবহারকারী সে বার্তা দেখার আগেই তা মুছে যাবে। এ ক্ষেত্রে ব্যবহারকারী শুধু নোটিফিকেশন দেখতে পাবেন।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক মোবাইল নিরাপত্তা পণ্য নির্মাতা জিমপেরিয়ামের দাবি, এখন পর্যন্ত অ্যান্ড্রয়েডের যতগুলো নিরাপত্তা ত্রুটির খোঁজ পাওয়া গেছে তার মধ্যে স্টেজফ্রাইট সবচেয়ে বাজে। এর কারণ হচ্ছে, এতে ব্যবহারকারীর কিছুই করার থাকে না। মোবাইল ফোন হ্যাক করে ব্যবহারকারীর অজান্তেই মোবাইল ফোনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় হ্যাকাররা। শতকরা ৯৫ শতাংশ বা ৯৫ কোটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী এই বিপদের ঝুঁকির মুখে আছেন বলেই জিমপেরিয়াম দাবি করে।

সূত্রঃ প্রথম আলো

এদিকে জেডগেট্‌স এর বার্তা অনুযায়ী তারা ‘Stagefright’ এর নতুন আরেকটি সংস্করণ খুঁজে পেয়েছে। এটাকে তারা Stagefright 2.0 নামকরণ করেছে। এটা সম্পর্কে তারা বলে পূর্বে হ্যাকারকে টার্গেটেড ব্যক্তির ফোন নাম্বার জানতে হত। বাগটির নতুন এই রূপে হ্যাকারকে সেটিও করতে হবে না। শুধু মাত্র তাদের ডেভেলপ করা কোড ‘অডিও’ অথবা ‘ভিডিও’ ফাইলে ইনজেক্ট করে তা ব্যবহারকারীকে যে কোন মিডিয়া অবলম্বন করে পাঠালেই হবে। আর এতেই আক্রান্ত হবে ব্যবহারকারীর স্মার্ট ফোনটি।

জেডগেট্‌স এর নিরাপত্তা গবেষকেরা স্মার্ট-ফোনকে নিয়মিত প্যাচ করার পরামর্শ প্রদান করার পাশাপাশি বলে- ব্যবহারকারী যেন পরিচিত এবং নির্ভরযোগ্য কোন সাইট/লিংক/ব্যক্তি ছাড়া কোন ‘অডিও’ বা ‘ভিডিও’ ফাইলের লিংকে ক্লিক/ডাওনলোড না করে। কিংবা ম্যাসেঞ্জার কিংবা অন্য কোন মাধ্যমে পাওয়া কোন এটাচমেন্ট (সংযুক্ত ফাইল), কিংবা লিংকে ক্লিক করা থাকে।

গুগল এন্ড্রয়েড ব্লগের ভাষ্য অনুযায়ী তারা ইতোমধ্যে Stagefright বাগটির প্যাচ তৈরি করেছে এবং তাদের নির্মিত স্মার্ট-ফোন (Nexus) গুলিতে OTA আপডেট করার মাধ্যমে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই ত্রুটির নিরাপত্তা প্রদান করবে। অন্য সকল স্মার্ট-ফোন নির্মাতা এ সম্পর্কে এখনো কোন তথ্য প্রদান করেনি। তবে আশা করি অচিরেই তারা গুগলের প্যাচটিকে নিজেদের সার্ভারে আপলোড করে তা ব্যবহারকারীকে প্রদান করবেন।






রবিবার, ফেব্রুয়ারী ২৮, ২০১৬

পাঠ প্রতিক্রিয়া - জলেশ্বরী



ইব্রাহীম গাজীর খোঁজে বের হয়েছিল কাজল, গন্তব্য ছিল জলেশ্বরীর পানে। সেই খোঁজ দীর্ঘ এক ভ্রমণ অভিজ্ঞতা এনে দেয় তাকে। সেখানে সে সভ্যতার মুখোশের আড়ালে আদিম মানুষের প্রকৃত রূপ খুঁজে পায়। খুঁজে পায় লাজ, ইজ্জত আর অহংকার চূর্ণ হবার একমাত্র কারণ ‘ক্ষুধা’ কে। খুঁজে পায় তপসী নামের এক মানবীকে, খুঁজে পায় প্রাণের রক্ষাকারী বুজিকে। পরিচয় ঘটে এমন এক মানুষের সঙ্গে যে গোর খোঁড়ার জন্যে হন্যে হয়ে গ্রামের পর গ্রাম ছুটে বেড়াচ্ছে।

অতঃপর সেই গোর খোদক আসাদ উদ্দীনকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যায় মহামারির দিকে। সেখানে পৌঁছে দেখে তপসীর ভিন্ন আরেক রূপ। খুঁজে পায় ভিন্ন আরেক তপসীকে, জানতে পারে প্রকৃত তপসীকে। কত পরম মমতায় তপসী তাদের আপন হয়ে গিয়েছে সেখানে। আবার সেই প্রাণের আত্মীয়ই কিভাবে 'ধর্ম'কে ভর করে কুৎসিত রূপে রূপ লাভ করে, তা সে সেখানেই দেখতে পায়।

এত কিছুর পর যখন সে ইব্রাহীম গাজীকে খুঁজে পায় তখন বুঝতে পারে, কতই  মিথ্যে পরিচয়ে বেঁচে ছিল এতকাল….





রবিবার, অক্টোবর ২৫, ২০১৫

বদি এণ্ড রঞ্জুর কথোপকথন —  ৪



বদি ভাইঃ বলতো রঞ্জু ভালো মানুষের ভালোমানুষি কখন কাজে আসে?

রঞ্জুঃ এইটা আবার কেমন প্রশ্ন বদি ভাই!

বদি ভাইঃ আহ্‌! প্রশ্ন হইল প্রশ্ন, প্রশ্নের কোন এমন তেমন নাই। এখন দ্রুত করে বল তো, ভালোমানুষের ভালোমানুষি কখন কাজে আসে?

রঞ্জুঃ আমার তো মনে হয় সবসময়ই কাজে লাগে।

বদি ভাইঃ সেটা একেবারে ভুল বল নাই। তবে সেই কাজে লাগাটা মূলত তার নিজের লাগে না। তার ভালো কাজ গুলি অন্যের কাজে লাগে।

রঞ্জুঃ সেটাই তো হবার কথা।

বদি ভাইঃ হুম, সেইটাই হবার কথা। কিন্তু মূলত তার এই ভালো কাজ গুলি কখন তার নিজের সত্যিকারে কাজে লাগে এইটা বলতে পারবা?

রঞ্জুঃ নাহ্‌, পারলাম না। আপনিই বলে দেন।

বদি ভাইঃ তোমারে নিয়ে আমি বড়ই হতাশ রঞ্জু। এত দ্রুত হাল ছেড়ে দাও না, তোমাকে পুরাই হোপলেস মনে হয়।

রঞ্জুঃ আচ্ছা, বুঝলাম তো। এইবার বলেন কখন মানুষের ভালো কাজ তার নিজের কাজে আসে।

বদি ভাইঃ মানুষের ভালো কাজ দুইটা অবস্থায় কাজে আসে। প্রথম যখন সে খুব.. খুব… খুবই অসুস্থ থাকে, তখন। আর দ্বিতীয় যখন সে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করে ইহলোকে পাড়ি জমায়, তখন।

রঞ্জুঃ এইসব কি বলেন! তখন কিভাবে কাজে আসে তার ভালো কাজ!

বদি ভাইঃ বুঝলা না! এত অবুঝ হইলে কেমনে চলে!

রঞ্জুঃ আচ্ছা আমি অবুঝই ঠিক আছি, আপনি আছেন না আমাকে বুঝিয়ে বলার জন্যে। এবার বলেন, কিভাবে কাজে আসে?

বদি ভাইঃ খেয়াল করে দেখো, যখন কোন ভালো মানুষ গুরুতর অসুস্থ থাকে তখন সবাই মুখে মুখে বলবে, ‘আহা! কত ভালো মানুষ ছিল। এমন রোগ তার কেমনে করে হল’। আবার যখন কেউ মারা যায় তখন তো তার বাড়ি গিয়েই তার পরিবার পরিজনের সাথে বলবে, “ইশ! এমন ভালো লোকটা এমন করে চলে গেল!” আর তারপর সে যে কি পরিমাণ ভালো সেইটার ফিরিস্তি দিতে শুরু করবে।

রঞ্জুঃ কিন্তু এইসবই তো সমবেদনা, সান্ত্বনার কথা। এগুলি কিভাবে তার কাজে আসে।

বদি ভাইঃ হ্যাঁ, এইবার আবার একটা ঠিক কথা বলছো তুমি রঞ্জু। মানুষের ভালোকাজ গুলি একমাত্র তার অবর্তমানে মানুষের সমবেদনা কিংবা সান্ত্বনার ভাষায় প্রকাশ পায়। আর ঐটুকুই তার প্রাপ্তি।

রঞ্জুঃ তাহলে মানুষের খারাপ কাজ কখন কাজে আসে?

বদি ভাইঃ হা! হা! হা! হা! ঐটা কোন সময় কাজে আসে না সেইটা বল!










বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৫

কল্প গল্পঃ হোম অফ আলট্রন এণ্ড আওয়ার্স


পঞ্চদশ শতাব্দীর শুরুতে আলট্রনসেপিয়েন্সের ধারণার প্রকাশ ঘটে। তবে বাকি সব ধারণার মত একে ঝুলে থাকতে হয়নি, হয়নি মুখ থুবড়ে শুধুই বিজ্ঞানের তত্ব হিসেবে পড়ে থাকতে। বিজ্ঞান কাউন্সিল একে পরিপূর্ণ সমর্থন দান করে। ফলস্বরূপ পরবর্তী ৩০ বছরের মাথাতেই প্রথম আলট্রনসেপিয়েন্সের জন্ম হয়। এদের প্রাথমিক ভাবে ল্যাবেই বড় করা হলেও তাদের বিকাশ প্রাকৃতিক উপায়েই ঘটে। বিজ্ঞান আর প্রকৃতির সমন্বয়ে খুব অল্প সময়েই এরা বড় একটা গোষ্ঠীতে পরিণত হয়। প্রথম দিকে প্রতিকূলতা থাকলেও শেষে একে অনেকেই আলট্রনসেপিয়েন্স জন্ম দেবার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করতে থাকে। এর ৭০ বছরের মাথাতেই আলট্রনসেপিয়েন্সের জন্যে আলাদা করে মহাদেশ নির্দিষ্ট করে দিতে হয়। আর বিজ্ঞান কাউন্সিল তা খুব সানন্দেই করে।

পঞ্চদশ শতাব্দীর ৫০০ বছর পার হবার পর যখন বিশ্বের তিন মোড়লের নাকের ডগা থেকে ছ’ছয়টি নিউক্লিয়ার বেস নিয়ন্ত্রণ হারায় তখনই বিশ্ববাসী বুঝে যায় যে তাদের দিন ফুরিয়ে এসেছে। আর এই ধারণা প্রমাণ হতে খুব বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। অল্প ক’দিন পরেই অজ্ঞাত কোন গোষ্ঠী এই ছটি বেস থেকে ১৬ টি নিউক্লিয়ার বোমা উৎক্ষেপণ করে। গুরুত্বপূর্ণ সকল শহরে ঐ সব বোমা বিষ ফোড়ার মত অবস্থান নেয়। তবে আক্রমণ যেখানেই হোক ক্ষতি সবার প্রথম তৃতীয় বিশ্বেরই ঘটে। উন্নত শহরের তুলনায় আড়াই গুন মানব সভ্যতা নষ্ট হয় তৃতীয় বিশ্বের। প্রায় সকল নেতা এবং দিক নির্দেশক এই হামলায় মারা যায়। বাকি যারা ছিল তারা সকল ক্ষমতা বিজ্ঞান কাউন্সিলের কাছে হস্তান্তর করে।

হামলার বছর কয়েক বাদে এক উগ্রবাদী চার্চের গোপন দল এই হামলার পরিপূর্ণ দায়ভার গ্রহণ করে। তাদের ভাষ্যমতে ঈশ্বরের ক্ষমতাকে খর্ব করে যখন মানুষ আলট্রনসেপিয়েন্স তৈরি করছে তখন তাদের সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে তারা এই হামলা চালায়। কিন্তু মজার ব্যাপার হল এরা আলট্রনসেপিয়েন্সদের মহাদেশে কোন নিউক্লিয়ার বোমা ফেলতে সাহস দেখায় নি। এই উগ্রবাদীদের সম্পর্কে একটা মিথ প্রচলিত আছে। ধারণা করা হয় হামলার ঠিক ৪৮ ঘণ্টা পূর্বে এই গোপন উগ্রবাদী সংস্থার নেতারা উক্ত এলাকায় পৌঁছে যেত। সকল কিছু যখন নিশ্চিত তখন ঐ শহরে বসেই নেতারা নিজেদের সাথে সাথে লক্ষ লক্ষ মানুষের কবর তৈরি করত। নিজেদের নির্দেশনায় এমন প্রাণনাশে নিজেদেরই শাস্তি দিত তারা।

হামলা পরবর্তী মানব সভ্যতার যে ক্ষতি সাধিত হয় তা শুধু সভ্যতাকেই নয়, মানুষের মন থেকে বিশ্বাসকেও ধুয়ে মুছে দেয়। একমাত্র পরিবারের সদস্য ছাড়া কেউ কারও দিকে তাকাত পর্যন্ত না। আর অন্যের উপর নির্ভরতা? সে প্রথম হামলার সময়ই সকলের মাঝ থেকে উবে গিয়েছিল। হামলাতে যারা আহত হয়েছিল কিংবা কাছাকাছি এলাকাতে অবস্থান করছিল তারা সকলেই এক মাসের মাথায় অতিরিক্ত রেডিয়েশনে মারা যায়। কেউ তাদের জন্যে এগিয়ে আসেনি। রেডিয়েশনের প্রভাব বাড়তে থাকলে সকলে বাধ্য হয়ে মেরু অঞ্চলের দিকে অবস্থান নিতে থাকে। এই প্রথম তৃতীয় বিশ্বের সাথে এক কাতারে দাড়াতে বাধ্য হয় উন্নত বিশ্বের মানুষ।

আলট্রনসেপিয়েন্স মানব সভ্যতা থেকে অনেক উন্নত এবং মুক্ত চিন্তার হলেও তাদের প্রতিবন্ধকতা ছিল। এরা কখনোই তাদের সভ্যতা মানব সভ্যতা ছাড়া এগিয়ে নিতে সক্ষম নয়। উন্নত একটি শরীর দিতে গিয়ে এদের প্রজনন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ রূপে বের করে নিয়ে আসতে হয়। তাই আলট্রনসেপিয়েন্স সর্বদা মানব সভ্যতার উপর নির্ভরশীল ছিল। প্রথম প্রথম ধারণা করা হত এদের আরও প্রসার ঘটলে প্রজনন অংশ এদের ফেরত দেয়া হবে। কিন্তু সময়ের সাথে প্রকৃতিও এই আলট্রনসেপিয়েন্সদের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। ফলে কখনোই আর একটি আলট্রনসেপিয়েন্স থেকে আরেকটি আলট্রনসেপিয়েন্স তৈরি করা যায়নি। ক্লোনিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে আলট্রনসেপিয়েন্সকে কপি করার চেষ্টাও তারা করেছিল। কিন্তু বিচিত্র কারণে প্রকৃতি তাকে এদের মাঝে অবস্থান নিতে দেয়নি। আলট্রনসেপিয়েন্সের ক্লোন তৈরি করার ৫ম দিনের মাথায় আন্তঃ রক্ত চলাচল ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে। পরপর কয়েকটি আলট্রনসেপিয়েন্সের যখন একই হাল হয় তখন বিজ্ঞানীরা ক্লোন করা ছেড়ে দেয় এবং চিরদিনের মত নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।

বিজ্ঞান কাউন্সিলের হস্তক্ষেপে দীর্ঘ সময় পর পোলার মনব ফ্যামিলি গুলিতে আবার সভ্যতার জন্ম হয়, নিজেদের সমাজ ব্যবস্থা গড়ে উঠে। অবশ্য এই প্রাপ্তির পুরোটার নাম দাবীদার ‘মিকি’র। মিকি হল বিজ্ঞান কাউন্সিলের মুক্ত চিন্তা এবং স্বতন্ত্র ব্যবস্থা। সে সকল ডাটা ঘটে তার থেকে রিপোর্ট না করলে এই পদ্ধতির শুরুতেই বিজ্ঞান কাউন্সিল মুখ থুবড়ে পড়ে যেত। মিকির তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতেই বিজ্ঞান কাউন্সিল সহজেই একটা সিদ্ধান্তে পৌছতে পারত। দীর্ঘ সময় নিয়ে তারা পরিবার গুলিকে প্রতিস্থাপন করেছে। পৃথিবীর জোন অনুসারে তাদের আলাদা আলাদা অবস্থানে নিয়ে গেছে। জাতিগত সংমিশ্রণ ঠেকাতে নিজেদের মধ্যেই সখ্যতা বাড়িয়ে নেবার সুযোগ করে দিয়েছে। ফলাফলে জাতী হিসেবে তাদের আলাদা সত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

মিকির সম্বন্ধে বিজ্ঞান কাউন্সিল শুধু এতটুকুই জানে যে মিকি’র মুক্ত চিন্তা কিংবা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স তৈরি কাজ পর্যন্ত মানুষ এর কাজ করে দিয়েছে। তারপর ধীরে ধীরে সে নিজেই নিজের উন্নয়ন ঘটিয়ে নিয়েছে। অনেকের ধারণা আলট্রনসেপিয়েন্সদের দিয়ে সে নিজেকে ধীরে ধীরে গড়েছে। আর এই কারণেই আলট্রনসেপিয়েন্সদের জন্যে মিকির এত দরদ। ঘটনা যাই হোক দুটি সভ্যতার কেন্দ্রীয় নির্দেশ দাতা, তথ্য সমন্বয়ক আর বিশ্লেষক রূপে মিকি তার অবস্থান ঠিকই তৈরি করতে পেরেছিল। তার বোন এতটাই শক্তিশালী ছিল সে সমসাময়িক আর কোন প্রযুক্তিই তার ধারের কাছ দিয়ে যেতে পারেনি। অনেকেই মিকির পরিবর্তে ভিন্ন আরেকটা সিস্টেম তৈরি করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু মিকির মত স্বতন্ত্র রূপে আর কোন সিস্টেমই টিকতে পারেনি। যারা মিকিকে তৈরির কাজ করেছিল তারা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে যে মিকিই তাদের জীবনের সর্বোচ্চ সম্মানিত কাজ।

বলা হয় পোলার এরিয়া গুলি উগ্রবাদীরা ছেড়ে দেয় কারণ এখানেই তারা তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে বাড়িয়ে তোলার প্লান করেছিল। কিন্তু যেভাবেই হোক তাদের কোন অস্তিত্ব পোলার এরিয়াতে পাওয়া যায়নি। তারা কোথায় আছে, কত জন আছে এ নিয়ে বরাবরই নিরাপত্তা সংস্থা ধোয়ার মধ্যেই রয়ে গিয়েছে। তবে তারা আছে এটাও নিশ্চিত ছিল। বেশ কয়েকবারই নিরাপত্তা সংস্থার নেটওয়ার্ক তারা ভেঙ্গে দিতে চেয়েছিল। সফল হতে হতেও তারা এই নিয়ন্ত্রণ পায়নি। নিয়ন্ত্রণ সংস্থার পাশাপাশি উগ্রপন্থী গ্রুপটি বিজ্ঞান কাউন্সিলের সকল নেটওয়ার্ক ডাওন করে সার্ভারের নিয়ন্ত্রণ নিতে চেয়েছে। আর একবার নয়, বেশ অনেকবার করেই তারা এই পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছে। কিন্তু মিকি’র স্বয়ংক্রিয় ফায়ারওয়াল ব্যবস্থা আর মুক্ত চিন্তার প্রযুক্তির কাছে বরাবরই তারা ধরা খেয়েছে। একটা বাগ পর্যন্ত কোন সার্ভারে প্লান্ট করতে সক্ষম হয়নি তারা। তবে গুরুত্বপূর্ণ অনেক ডাটাই কপি করতে পেরেছিল। তবে যতই গুরুত্বপূর্ণ ডাটার কপি করুক না কেন, নতুন সমাজ ব্যবস্থার কোন তথ্যই তাদের হাতে আসেনি।

ত্রয়োদশ শতাব্দীতেই রবোটিক শিল্পের বেশ প্রসার ঘটে। প্রায় সকল কাজের জন্যে আলাদা আলাদা রোবট তৈরি হয়। যাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্রেডিট থাকত তারা আবেদন করলে প্রায় সকল রোবট কিনতে পারত। তবে সকলের এই সঙ্গতি হত না। বাধ্য হয়েই তারা গৃহপরিচারিকা’র রোবটের আবেদন করত। আর খামারিরা করত কর্মী রোবটের আবেদন। কিছু উন্নত ফার্ম ছাড়া ঐ সব রোবট কারও ভাগ্যে জুটত না। হামলার প্রথমদিকে রোবট শিল্পেরও মৃত্যু ঘটে। তবে সমাজ ব্যবস্থা পুনঃ প্রতিষ্ঠা লাভের পর মিকি পুনরায় রোবট শিল্পকে নিয়ে কাজ করতে থাকে। বছর খানিক বাদেই রোবট শিল্পকে তার পূর্বের অবস্থানে নিয়ে আসে। তখন যারা আবেদন করার মত সাহস দেখিয়েছে তাদের প্রায় সকলেই গ্রহস্থলির কাজের রোবট পেয়েছিল।

তবে বিজ্ঞান কাউন্সিল এবং মিকি এই ব্যবস্থার বিপরীতে এক শক্ত নির্দেশনা প্রদান করে। মর্যাদা যেমনই হোক, যে এলাকার মানুষই হোক না কেন উৎপাদন মুখী কাজ, খামারির কাজ এবং রান্না সংক্রান্ত সকল কাজেই মানুষকে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে হবে। এবং কোন অবস্থাতেই সেখানে রোবটের উপর নির্ভর করা চলবে না। রোবট সর্বোচ্চ সাহায্যকারী হিসেবে এইসব কাজে অংশগ্রহণ করতে পারে। মেশিন সমমানের রোবটই কেবল এই সকল কাজে বিলি করা হত। নিরাপত্তার রোবট খুব অল্প পরিমাণে তৈরি করা হয়। ঠিক যেই পরিমাণে প্রয়োজন সেই পরিমাণেই নিরাপত্তার রোবট তৈরি হত।

রবোটিক শিল্প এবং মানব সভ্যতার পরিপূর্ণ নিরাপত্তার হাল বিজ্ঞান কাউন্সিল অথবা মিকির নিয়ন্ত্রণে আসার পর মিকি রেডিয়েশন যুক্ত এলাকা গুলি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসার প্রকল্প চালু করে। এবারও মিকি ব্যর্থ হয়নি। সফলতার সাথেই খুব অল্প সময়ে বেশ কিছু এলাকার হতে পরিপূর্ণ রেডিয়েশন নিয়ন্ত্রণে এনে সেখানে মানব পরিবারের বেড়ে উঠা নিশ্চিত করে। প্রথমে দুটি পরিবারকে কোন শর্ত ছাড়াই সেখানে পাঠানো হয়। তবে একেবারে নিঃশর্তও ছিল না। মিকির যে কোন নির্দেশ তারা মেনে নিতে বাধ্য ছিল। তারপর বছর কয়েক বাদে যখন নিশ্চিত করা গেল এখানে মানব সভ্যতার অবস্থান দেয়া সম্ভব তখনই পোলার এরিয়ার পরিবার গুলি উষ্ণ এলাকায় যাবার আবেদন পত্র জমা দিতে থাকে। কিন্তু এখন আর আবেদন পত্র নয়, নির্দিষ্ট পরিমাণ ক্রেডিট এবং বিজ্ঞান কাউন্সিল হতে মিকির অনুমোদনই মূল ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

খুব অল্প কিছু পরিবারকে প্রাথমিক ভাবে উষ্ণ এলাকাতে যাবার অনুমতি দেয়া হয়। আর এই অনুমতির পূর্ণ স্বাধীনতা মিকির নিজের একার। বিজ্ঞান কাউন্সিলের বেশ কয়েকজন সদস্য এই নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে আসতে চেয়েছিল। কাউন্সিল মিটিং এ বেশ কয়েক বার করেই তাদের প্রস্তাবনা পেশ করে। কিন্তু বিজ্ঞান কাউন্সিলের প্রধান মহামান্য লুকাস প্রতিবারই তাদের প্রস্তাবনা বাতিল করে দেন। আর এই নিয়ে মিকির সিদ্ধান্তের বিপরীতে তাদের একটা ক্ষোভ জমা হতে থাকে ভেতর ভেতর। যেহেতু নিয়ন্ত্রণ পাওয়া সম্ভব নয় তাই সবাই চেষ্টা করছিল ব্যাপারটাকে দেখেও না দেখার মত ভান করার। এর পেছনে অবশ্য বেশ কারণও ছিল। নিজেদের বিশাল পরিবার আর গোষ্ঠীকে এরা উষ্ণ এলাকায় নিয়ে যেতে চাইছিল। কিন্তু অনুমতি না মেলায় তাদের আশার প্রদীপ নিভিয়ে দিতে বাধ্য হয়।

শুধু রবোটিক শিল্পেরই নয়, চিকিৎসা ব্যবস্থারও ব্যাপক উন্নতি সাধন করে মিকি। প্রতি এলাকাতেই একটি করে সেফ হোম প্রতিষ্ঠা করে। পাশাপাশি বেশ অনেক গুলি হসপিটালও স্থাপন করা হয়। অবস্থা বুঝে কোন রোগী যদি সেফ হোমে প্রবেশ করত, তাহলে ৩ থেকে ৭ দিনের মধ্যেই তাকে নীরোগ অবস্থায় পরিবারের কাছে ফেরত দেয়া হত। প্রাথমিক ভাবে ক্লোনিং করে এই ব্যাপারটা ঘটাচ্ছে বলে একটা গুঞ্জনের সৃষ্টি হয়। কিন্তু এই গুঞ্জনের কোন ভিত্তি কেউ দিতে পারেনি। ডি. এন. এ. পরীক্ষা করে শেষ পর্যন্ত নিশ্চিত করা হয় এখানে কোন ক্লোনিং ব্যবস্থারই সহায়তা নেয়া হয়না। প্রয়োজনে নতুন কোষ সৃষ্টির মাধ্যমে নীরোগ একটি শরীর ফিরিয়ে দেয়া হয়। তবে সকলেই সেফ হোমে যাবার সুযোগ পেত না। মিকি নির্ধারণ করত রোগের পরিমাণ। আর তার নির্ধারণের ভিত্তিতেই রোগীকে এই বিশেষ সুবিধা দেয়া হত। তবে একটি ব্যাপার ছিল। কেউ একবার যদি সেফ হোমে যেতে পারত তবে তার পরবর্তী ২টি জেনারেশনের মধ্যে কেউ না কেউ ঠিকই উষ্ণ অঞ্চলে যাবার অনুমতি পেয়ে যেত। তাই প্রতিটি পরিবারই প্রতি রাতে প্রার্থনা করত, অন্তত একবার হলেও সেফ হোমে যাবার। ক্ষুধ্ব হয়ে অনেকেই বিজ্ঞান কাউন্সিলের কাছে এই ব্যাপারে নালিস জানালে বিজ্ঞান কাউন্সিল মিকির হাত থেকে নিয়ন্ত্রণ নেবার আরও একটা সুযোগ পেয়ে যায়। এবার তারা বেশ গুঞ্জন তুলে আবারও নিজেদের দাবী প্রকাশ করে কাউন্সিল মিটিং-এ। কিন্তু বরাবরের মত কাউন্সিলের সর্বোচ্চ পরিচালক মহামান্য লুকাস তাদের আবেদন, দাবী নাকচ করে মিকির উপর নিয়ন্ত্রণ বহাল রাখেন। যদিও বেশ কয়েকবারই প্রমাণ সহকারে এইসব দাবীর উপস্থাপন ঘটে। তিনি সব জেনেও সকলকে শান্ত থাকার পরামর্শ দেন।

সেফ হোম প্রতিষ্ঠার পর পর উগ্রপন্থীদের আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে দেখা যায়। তারা দাবী করে তাদের নির্বাচিত স্থানে কয়েকটি সেফ হোম তৈরি করে দেয়া না হলে তারা সকল সেফ হোম গুড়িয়ে দিবে। বিজ্ঞান কাউন্সিল ফু দেবার মত করে এই দাবী উড়িয়ে দেয়। আর তারপরই এদের নেটওয়ার্ক বেশ কয়েকবার সেফ হোমের নেটওয়ার্কে ঢুকতে চেষ্টা করে। কিন্তু সরাসরি মিকির তত্ত্বাবধায়নে থাকার কারণে প্রতিটি হামলার বিপরীতে ওদের সার্ভারই বাগ দিয়ে ভরে যেতে থাকে। মিকি সরাসরি হামলা না চালিয়ে হামলার বিপরীতে হামলার মাধ্যমে উগ্রপন্থীদের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। শেষ পর্যন্ত এরা সেই হামলা করা হতে ক্ষান্ত দেয়।

উষ্ণ শহরের বাসিন্দারা উন্নত কিছু ব্যবস্থা পেত জীবনকে সহজ করার জন্যে, কিন্তু উৎপাদন এবং রান্নার কাজে তাদের কোন ছাড় দেয়া হয় নি। এখানেও তাদের নিজেদের উৎপাদন এবং রান্নার কাজ নিজেদেরই করতে হত। প্রথম প্রথম বেশ ঝামেলা হলেও অল্প ক’দিনেই সব বাগে নিয়ে আসে। পোলার শস্য সরাসরি এখানে উৎপাদন করা যেত না। এখানে ভিন্ন দানার ভিন্ন সকল দানাদার বস্তুর উৎপাদন করতে হত। ফলে তাদের পরিচিত রন্ধন ব্যবস্থারও পরিবর্তন করতে হত। টিকে থাকতে মানুষ সবসময়ই নিজেদের রাস্তা তৈরি করে নিয়েছে। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। প্রথম কেউ পোলার এরিয়া হতে এলে এক মাসের রেশন সহ নিয়ে আসতে পারত। এই এক মাসের মধ্যে তাদের খাদ্য অভ্যাসের পরিবর্তন করে নিতে হত। পরিবারের সংখ্যা বাড়তে থাকলে সেটা আর খুব বড় কোন সমস্যা হয়ে থাকল না। এক মাসেই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে সমর্থ হত।

আলট্রনসেপিয়েন্স কিন্তু এখনো মানব সভ্যতার উপর নির্ভর করে ছিল। দীর্ঘ আয়ু থাকার কারণে বেশ কয়েক বছর তাদের উৎপাদন বন্ধ থাকে। কিন্তু এতে তাদের সংখ্যার খুব একটা হেরফের হয় না। উষ্ণ শহরে আসার পর প্রতিটি পরিবারকে নতুন সন্তান নেবার জন্যে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হত। তারপর পরিবারে ভ্রূণের জন্ম হওয়া মাত্র তাকে মাতৃ গর্ভ থেকে বের করে আনা হত। এরপর তাকে নিরাপদ ক্লোন করে ক্লোন ভ্রূণটি মাতৃ গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হত। আর মূল ভ্রূণ হতে জন্ম হত আলট্রনসেপিয়েন্সের। আলট্রনসেপিয়েন্সদের জন্ম এবং বেড়ে উঠা যদিও ল্যাবে হত। কিন্তু তারা প্রকৃতির ছোঁয়াতেই সামনে এগিয়ে যেত। আর এদের নিয়ে কোন এক্সপেরিমেন্ট কখনোই করা হয়নি। একটা নির্দিষ্ট সময় পর এদের আলট্রন এরিয়াতে দিয়ে আসা হত।

এদিকে ক্লোন ভ্রূণ হতে নীরোগ সকল শিশু বেড়ে উঠতে লাগল। রোগ শোক প্রায় ৬০ শতাংশ কমে আসল এই ক্লোনিং প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে। এরা কোন ভাবেই কোন দিক থেকে পিছিয়ে থাকেনি। প্রকৃতি এদেরও পরম মমতায় বুকে টেনে নিয়েছিল। কৃষি, চিকিৎসা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, নিরাপত্তা বিভাগ এমনকি বিজ্ঞান সংস্থাও তাদের মেধা সত্ত্বের উন্নতি দেখে ডেকে নিতে বাধ্য হয়। বিজ্ঞান কাউন্সিলেও তাদের অবস্থান নিশ্চিত করা হয়। যতই দিন এগুতে থাকে পোলার এরিয়া হতে ততই পরিবারের ডাক কমে আসতে শুরু করে। দিনে দিনে নিরাপদ উষ্ণ শহর ভরে উঠতে থাকে। সেখানে যে সংস্কৃতির সৃষ্টি হয়েছে তা পোলার এরিয়ার সভ্যতা হতে অনেক ভিন্ন। তবে শুধু মাত্র মানুষের মধ্য থেকেই আলট্রনসেপিয়েন্স নেয়া হয় বলেই কিছু পরিবার এখনো উষ্ণ শহরে আসার অনুমতি পায়।

এইসব যখন মিকির তত্ত্বাবধায়নে চলছিল তখন আলট্রনসেপিয়েন্সও থেমে থাকেনি। তারা নিজেদের সভ্যতা প্রতিষ্ঠা করে নিজেদের জ্ঞানকে বিকশিত করতে থাকে। প্রায় ২০০০ বছর পর তারা সূর্যের শক্তির নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়। তবে তারা পরিবর্তন খুব কমই ঘটাত, শুধু মাত্র মানব সভ্যতার জন্যে যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকু নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করত। তবে এর বিপরীতে চড়া দামও দিতে হত আলট্রনসেপিয়েন্সদের। উন্নত শরীর হবার কারণে তারা দীর্ঘ সময় বেঁচে তো থাকতে পারত সত্যি, কিন্তু রেডিয়েশনের প্রভাব হতে সম্পূর্ণ রূপে তারা মুক্ত ছিল না। আলট্রনসেপিয়েন্সের মধ্য হতে তারা যাকে এই কাজের জন্যে নির্বাচন করত তারা ঠিক ৩ বছরের মাথায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পরত। দীর্ঘ সময় সূর্যের রেডিয়েশনের প্রভাবে তারাও বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করত। রেডিয়েশনের প্রভাব এত বেশি থাকত যে, এদের কারও দেহই পৃথিবীতে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হত না। সেখানেই তাদের একটা কক্ষে বক্সে করে সমাহিত করা হত।

মানব সমাজ কখনোই কোন বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির অগ্রগতিকে সহজ ভাবে গ্রহণ করতে পারে নি, তা তারা যতই উন্নত সভ্যতার হোক না কেন। এবারের ঘটনাতেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। এবারেও তারা আলট্রনসেপিয়েন্সদের এই নিয়ন্ত্রণ সহজ ভাবে মেনে নিতে পারেনি মানব সম্প্রদায়। বেশ বিক্ষোভ করল পোলার এরিয়া আর উষ্ণ শহরের মানুষ গুলি মিলে। কিন্তু প্রাকৃতিক কোন বিপর্যয় হবার না কারণে তারা তাদের বিক্ষোভের কোন ভিত্তি তৈরি করতে পারেনি। বরং উত্তর উত্তর তাদের প্রাকৃতিক অবস্থা আরও সহায়ক হয়ে উঠছিল। সাইক্লোন, টাইফুন, সুনামির মত প্রাকৃতিক বিপর্যয় গুলি তারা দিনে দিনে প্রায় হারিয়েই ফেলেছে। বিজ্ঞান কাউন্সিল প্রথম দিকে খুব চাপের মুখে থাকলেও অবস্থার কারণে এইসব বিক্ষোভের বিপরীতে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয় অবশেষে।

শিল্প সংস্কৃতির উন্নয়নের সাথে সাথে জুয়ার একটা ব্যাপার গড়ে উঠেছিল প্রতিটি সভ্যতাতেই। উষ্ণ শহর কিংবা পোলার এরিয়াতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। যখন সবার সংগ্রহেই জীবন যাপনের চেয়ে অতিরিক্ত ক্রেডিট জমা হতে থাকল তখনই জুয়ার আসর জমে উঠতে থাকল। আর জুয়া মানেই একটা সার্বক্ষণিক আসরের প্রয়োজন। বিনোদন মূলক বার তৈরি করে বছর কয়েক বাদেই সেখানে ধীরে ধীরে ক্যাসিনো গড়ে উঠতে থাকল। ক্যাসিনোর মালিক গুলি সর্বদাই তাদের প্রোফাইল ফ্রেশ রাখার কারণে নিরাপত্তা ব্যবস্থা তাদের বিরুদ্ধে কিছু করতে পারেনি। প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারে ক্যাসিনো মালিকেরা ফুলে ফেঁপে উঠছিল দিনে দিনে। বিজ্ঞান কাউন্সিল এইসব ঝামেলায় নিজেদের জড়াতে চায় নি। যতক্ষণ বড় ধরণের কোন অপরাধ না ঘটছে ততক্ষণ তাদের ঘাঁটানো বাদ রাখল তারা। আর বড় ধরণের অপরাধ যাতে না হয় সেদিকে সূক্ষ্ম দৃষ্টি ছিল ক্যসিনো মালিকদের। যখনই কোন টেবিলে কেউ ক্রমান্বয়ে জিততে শুরু করত, তখনই তাদের বিশেষ ব্যবস্থা তাদের লাগাম টেনে ধরার কাজ করত।

ক্যাসিনো থেকে প্রায় সবাইকেই গোমড়া মুখে ফিরতে হয়। হাসি খুশি মুখে খুব কম মানুষই ক্যাসিনো হতে বের হতে পারে। তবে রয়েল ক্যাসিনোর কথা ছিল ভিন্ন। রয়েল ক্যাসিনোটা এমন ভাবে গড়ে তোলা হয়েছে যাতে সবাই একটা উইন-উইন পজিশনে থাকতে পারে। জুয়াড়ি খেলা হেরে গেলেও তৃপ্তি নিয়ে আবার ফিরে আসত রয়েল ক্যাসিনোতে। আর তাই আধিপত্যে রয়েল সকল ক্যাসিনোকে ছাড়িয়ে যায় খুব অল্পেই। এরা বেশ কয়েকটি শাখা তৈরি করলেও সেখানে খেলোয়াড় বা জুয়াড়ি নিত খুব গুনে বেছে। নির্দিষ্ট সংখ্যক জুয়াড়ি হয়ে গেলে সেদিনের মত ক্লাব ফুল ঘোষণা করা হত। একমাত্র যারা রয়েল ক্যাসিনোর দরজা পার করতে পারত না তারাই সেদিনের জন্যে মুখ কালো করে ফিরে যেত। কোন স্তরের মানুষ এই রয়েল ক্যাসিনোতে আসা হতে নিজের লোভ সংবরণ করতে পারেনি।

কারও যখন প্রয়োজনের অতিরিক্ত ইউনিটের পাহাড় গড়ে উঠে তখনই তারা সেটাকে ভিন্ন কোন খাতে ব্যবহার করতে শুরু করে। জুয়াড়িদের জুয়ারি এইসব জুয়ায় মেতে উঠে। তবে এর ফলাফল হাতে হাতে কেউ পায় না। বিশাল অঙ্কের ইনভেস্ট করে লম্বা সময়ের ধৈর্য ধরতে হয় তাদের। কেউ কেউ জুয়ার শুরুতেই হার মেনে যায়, আর কেউ সফলতার মুখ দেখার আগে হাল ছেড়ে দেয় না। দানের পর দান তারা লাগাতে থাকে এই অদৃশ্য জুয়ার টেবিলে।

মানব সমাজ হতে আলট্রনসেপিয়েন্সদের সবসময় একটা দূরত্বে রাখা হয়েছিল। হয়ত একত্রে থাকলেই সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয়টা তখন ঘটে যেত। আর এ কারণেই মানব সভ্যতায় আলট্রনসেপিয়েন্সদের অবস্থান সবসময়ের জন্যে গোপন রাখা হত। একমাত্র এবং কেবলমাত্র বিজ্ঞান কাউন্সিলের কিছু সদস্য এই তথ্য জানত, আর জানত মিকি। যেহেতু সকল কর্মকাণ্ড মিকির নজরদারির মধ্যেই হত তাই কেউ এখন আর সেটা নিয়ে মাথা ঘামাত না। মিকির কাছে এই সব জুয়ার কোন তথ্যই গোপন থাকত না। সকল তথ্যই তার সংগ্রহে থাকত। সরাসরি এদের না ঘেঁটে এদের তথ্য গুলিতে সূক্ষ্ম পরিবর্তন ঘটিয়ে এদের পরিকল্পনাকে সবসময় বানচাল করে দিতে লাগল। কিন্তু ধীরে ধীরে পরিকল্পনাও শক্ত হাতে পরিচালনা করা হতে লাগল। বাইরে হতে কোন তথ্য বের করতে না পেরে বিজ্ঞান কাউন্সিলের ভেতর হতে খবর আদায়ে উঠে পড়ে লাগল।

বিজ্ঞান কাউন্সিলের প্রতিটি সদস্যকে ‘মহান মানব’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। একমাত্র তারা আছে বলেই মানব সভ্যতার পুনঃ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে। প্রতিটি সদস্যের মতামতের কারণে তারা এখন উন্নত একটা জাতীতে রূপ লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। শুধু মাত্র তাদের হস্তক্ষেপের কারণেই মানব সভ্যতা পৃথিবীর হাত থেকে বিলীন হয়ে যায় নি। যে স্তরেরই হোক না কেন সবাই মন হতে কাউন্সিলের প্রতিটি সদস্যকে সম্মান করতেন। কিন্তু জুয়াড়ির মন কোন বাধা মানতে চায় না। একমাত্র তাদের উদ্দেশ্য আর উদ্দেশ্যের জন্যে কাজই তাদের এক অদ্ভুত নেশায় ডুবিয়ে রাখত। কিন্তু এই নেশাই একসময় বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসবে তা কবে কে ভেবেছিল। জুয়াড়ির জুয়ার ফাঁদে পা দিয়ে বসে এক কাউন্সিল সদস্য। পরোক্ষ ভাবে এক জুয়ার খেলাতে যোগ দিয়ে মাতাল হয়ে উঠে এই সদস্যটি। ধীরে খুব ফন্দি খাটিয়ে তার কাছ থেকেই আলট্রনসেপিয়েন্সদের তথ্য আদায় করে নেয় রয়েল ক্যাসিনোর নিয়োগ কৃত গুপ্তচর। বেশ উচ্চমূল্যে সে এই তথ্য বিক্রি করে রয়েল ক্যাসিনোর মালিক জনাথন আব্রাহামের কাছে।

জনাথন আব্রাহাম পূর্ণ মানব শিশু। কোন কারণে তাকে ক্লোন করে আলট্রনসেপিয়েন্স করা হতে বিরত থাকে। এমন যে শুধু জনাথনের ব্যাপারেই হয়েছে তা নয়। ক্লোন শিশু খুব নির্দিষ্ট পরিমাণে তৈরি করা হত, যাতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকে। আর ডি. এন. এ. হতে তথ্য উপাত্ত নিয়েই কোন ভ্রূণকে ক্লোন করা হবে তা নির্ধারণ করা হত। কিছু ভ্রূণ কখনোই মাতৃগর্ভ হতে বাইরে আসত না। এরা প্রাকৃতিক উপায়েই বেড়ে উঠত। স্বাভাবিক নিয়মেই জন্ম হত তাদের। সকল সুবিধাই তাদের জন্যে ছিল উন্মুক্ত। জনাথনও তাদের একজন। বাকি শিশুদের তুলনায় সে খুব দ্রুত বেড়ে উঠে। সবাই যখন কলেজ পাশের চিন্তায় মগ্ন তখন সে বিজ্ঞান কাউন্সিল দ্বারা পরিচালিত ইউনিভার্সিটিতে পড়ার জন্যে আবেদন পত্র জমা দেয়। মেধাস্বত্তের কারণে বিজ্ঞান কাউন্সিল পরিচালিত সেই ইউনিভার্সিটিতে তার প্রবেশাধিকারও পেয়ে যায় সে। ডক্টরেট সম্পন্ন করে ফিরে আসে আপন শহরে। ফ্যামিলি বিজনেস বাদ দিয়ে নিজের চেষ্টাতেই বার খুলে বসে। আর তারপর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। খুব দ্রুতই সকলের মধ্যে নিজের শক্ত অবস্থান গড়ে তোলে।

প্রতিদ্বন্দ্বী যে কেউ আসেনি কখনো তার রাস্তায় এমন নয়। কিন্তু প্রতিটি প্রতিদ্বন্দ্বীকে খুব চালাকির সাথে নিজের দলে ভিড়িয়ে নিয়েছে। নিজের অধীনস্থ হিসেবে তাদেরও অবস্থান গড়ে দিয়েছে। তাই এই বাজারে তার কোন শত্রু নেই বললেই চলে। যারা শত্রুতার মনোভাব নিয়ে আসে তারাই রক্ষা করতে উদ্যত হয় অবশেষে। প্রতি শহরের সকল তথ্য হাতের নাগালে এভাবেই চলে আসে জনাথনের। অন্ধকারের এই সাম্রাজ্যে তাকে বাদশাহ হিসেবে মেনে নেয় সকলে।

ধীরে ধীরে বেশ কিছু প্রকৌশলীকে নিজের সাম্রাজ্যে নিয়ে আসে। সবাইকে ধোয়ার মধ্যে রেখে খুব সন্তর্পণে নিজের প্লান অনুসারে এবারে কাজে হাত দেয় জনাথন। বাইরের নেটওয়ার্ক থেকে এবারের প্রজেক্ট সম্পূর্ণ আলাদা রাখে। প্রতিটি তথ্যর এত নিরাপত্তা দিয়েছে যে খোদ নিরাপত্তা বিভাগেই তথ্যের এত নিরাপত্তা তারা দিতে সক্ষম নয়। মিকি’র ধরা ছোঁয়ার বাইরে রেখে এবারের প্রজেক্টের কাজ করতে থাকে জনাথন। মাস খানিক বাদে বাদেই প্রকৌশলীদের টাস্ক পরিবর্তন করে দেয়া হত। শুধু টাস্ক পরিবর্তনই নয়, সময়ের সাথে তাদের অবস্থানের পরিবর্তনও করত। বিশাল কয়েকটি জেটিতে খুবই নিরাপত্তার সাথে তৈরি করে নেয় কয়েকটি সাবমেরিন। স্যাটেলাইট হতে এমন ভাবে এইসব জেটি গুলিকে নিরাপদ করা হয় যে স্যাটেলাইট নিশ্চিত তথ্য জেনেও তাদের অবস্থান নির্ধারণ করতে ব্যর্থ হয়।

মিকিও বুঝতে পারে তার ধারণার বাইরে কোন একটা কাজ করে চলেছে রয়েল ক্যাসিনোর মালিক জনাথন আব্রাহাম। কিন্তু প্রতিটি ইউনিটের স্বচ্ছ হিসেব থাকার কারণে তাকে ধরার কোন অবস্থারই সৃষ্টি করতে পারে না। তার প্রতিটি যোগাযোগ মনিটর করা হয়, তবুও নির্বিঘ্নে জনাথনের কাজ এগিয়ে যেতে থাকে। যারা জনাথনের হয়ে কাজ করে তারা এতটাই বিশ্বস্ত যে বেশ কয়েকবার নিরাপত্তা বিভাগ মিথ্যে ঘটনা সাজিয়ে তাদের তুলে নেবার পরও জনাথনের বিপরীতে কোন তথ্য তাদের হতে আদায় করতে পারেনি। প্রতিবারই বিফল হয়েছে তারা। জনাথনও বসে থাকার পাত্র ছিল না, প্রতিটা সদস্য তুলে নেবার সাথে সাথেই শহরের সেরা ল’ইয়ার পাঠিয়ে দিত নিরাপত্তা বিভাগে। জনাথনের পূর্বেই প্রতি সদস্যদের সকল কাগজপত্র তৈরি করে রাখার নির্দেশ থাকত ল’ইয়ারদের প্রতি। তারাও সকল কাগজ পূর্ব থেকেই তৈরি রাখত। জনাথনের কোন লোকই ৭ দিনের বেশি নিরাপত্তা বিভাগের বিল্ডিং এ অবস্থান করেনি। ৭ দিনের মাথায় যেভাবেই হোক তাকে বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে ল’ইয়ারেরা।

বের করে আনার পর তাদের কোন প্রশ্ন করা হত না। পদমর্যাদায় কোন হেরফেরও হত না। যে যেখানে ছিল সেখানেই তার কাজ করে যেত। বলা চলে তারপর আরও দৃঢ়ভাবে জনাথনের হয়ে কাজ করত তারা। অবস্থার পরিবর্তন করতে না পেরে শেষ পর্যন্ত এইভাবে হাল ছেড়ে দেয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার লোকজন। নিজেরাই জনাথনের দলে ভেড়ার চেষ্টা করতে থাকে এরপর হতে। কিন্তু জনাথনের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এড়িয়ে সে দিকেও তেমন সফলতা দেখতে পারেনি তারা। যখনই তাদের কেউ কাজের জন্যে জনাথনের কাছে এসেছে জনাথন সাথে সাথেই তাদের কাজ দিয়েছে। কিন্তু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তাদের নিয়ে গেছে আপন ঘাটি হতে বেশ অনেক দূরে। এত দূরে যে সেখান থেকে নিরাপত্তা বিভাগের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখাই চরদের জন্যে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াত। নিরাপত্তা বিভাগ হাত গুটিয়ে নেবার আগে শেষ চেষ্টা হিসেবে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের দিকে নজর দেয়। খুব চালাকি করে সেখান থেকে ‘রুশান’ নামের একটা ছেলেকে বের করে নিয়ে আসে। প্রচুর নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যবহার করে ছেলেটির সাথে ধীরে ধীরে যোগাযোগ গড়ে তোলে তারা।

রুশান কখনোই জানতে পারেনি কার সাথে সে যোগাযোগ করছে। তবে ধারণা করত বিজ্ঞান কাউন্সিল হতে এদের অনুমতি দেয়া আছে। ডার্ক ওয়েবে প্রতিদিন নতুন নতুন চ্যাটরূম তৈরি করে সেখানে যোগাযোগ হত তাদের। মূল ব্যাপারটা না জানিয়ে তাকে বোঝানো হয় জনাথনের ঐ স্পেশাল গ্রুপে তাকে প্রবেশ করতে হবে। অবস্থান গড়তে হবে খুব ভালো একটা পজিশনের। তার উপর যেন খোদ জনাথন বিশ্বাস রাখতে পারে এমন পরিস্থিতি তার নিজের মেধায় তাকে তৈরি করতে হবে। ব্যাপার গুলি আজব হলেও রুশান বেশ রোমাঞ্চ অনুভব করল মনে মনে। শেষ পর্যন্ত যখন জানতে চাওয়া হল সে এই কাজের জন্যে রাজী কি না তখন রুশানের আর পিছ পা হবার সুযোগ নেই। ডার্ক ওয়েবে তার অবস্থান মোটামুটি জেনে বুঝেই যে তারা যোগাযোগ করছে সে ব্যাপারটা একদম নিশ্চিত। এলাইস বদলালেও তারা যোগাযোগ করা থেকে পিছ পা হয়নি। কোন না কোন ভাবে তারা ঠিকই তাকে খুঁজে বের করেছে। এই অবস্থায় ‘না’ বলাটাও বোকামি হবে। কারণ তাতে পরবর্তীতে তার প্রতিটি কাজের নজরদারী করবে তারা। আর তার কাজও যে বেশ পরিষ্কার তা নয়। নিরাপত্তা বিভাগ হলে ঠিকই তাদের নাক সেখানে তারা গলাবে সেখানে। তাই বাধ্য হয়েই রাজী হতে হল তাকে।

পরের সেমিস্টারেই গ্রাজুয়েশন বাগে চলে এল রুশানের। সহজ স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই একটা জবের জন্যে এপ্লাই করল জনাথনের একটা ক্লাবে। রেকর্ড পরিষ্কার বলে জনাথনও নিয়োগ দিল ছেলেটিকে। খুব সাবধানে রুশান তার মেধার প্রকাশ ঘটাতে লাগল। টেবিলের চমক দেখানোর সাথে সাথে নিজের মেধার চমকও দেখাতে শুরু করল। জনাথনের নজরে আসতে খুব বেশিদিন খাটতে হল না তাকে। ক’দিন বাদেই রুশানের ডাক পড়ল জনাথনের চেম্বারে। খুব সময় নিয়ে জনাথন তার রিপোর্ট গুলি দেখতে লাগল তাকে সামনে বসিয়েই। তারপর তার ডার্ক ওয়েবের এলাইস নাম ধরে ডাকল। জানতে চাইল যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কেন সে এখানে পড়ে আছে। জবাবে রুশান বলল, যোগ্যতা দেখাবার অনেক জায়গা থাকতে পারে কিন্তু সবাই জানে কোথায় সেটা খাটালে নিশ্চিত মুনাফা হিসেবে ফেরত আসবে। বাঁকা হলেও জনাথনের মনে ধরল কথাটা। সে তাকে পরবর্তী দিন আবার দেখা করতে বলল।

রুশান জানত তাকে জনাথন দলে ভেড়াবেই। কিন্তু এত দ্রুত সেটা ধারণা করতে পারেনি। সপ্তা খানিক বাদেই এক জেটিতে তাকে নিয়ে আসা হল। কোন পথে কোথায় এই জেটি সেটি পুরোটাই থাকল তার জ্ঞানের বাইরে, কারণ পুরো পথ তাকে অজ্ঞান করিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। কোন রকম রিস্ক নেয়নি জনাথনের লোকজন। আশপাশের শব্দে যাতে এলাকা বুঝতে না পারে তাই পূর্ণ রূপে জ্ঞান ছাড়িয়ে তারপর তাকে নিয়ে এসেছে এই জেটিতে। জেটিতে চারিদিকেই কর্মমূখর পরিবেশ। এরা প্রায় সবাই যার যার অবস্থানে সেরাদের সেরা। কিন্তু সেই সেরা কাজটাই দিতে এসেছে জনাথনের কাছে। আর কাজের মূল্য জনাথনের চেয়ে কেউ বেশি বোঝে না। তাই ন্যায্য পারিশ্রমিকই দেয়া হচ্ছে প্রতিটি সদস্যকে।

রুশানকে যখন নিয়ে আসা হল তখন প্রজেক্টের প্রায় সকল কাজ গুটিয়ে এসেছে। এখন চলছে টেস্টিং সেশন। সর্বোচ্চ মেধা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে জনাথন বেশ কয়েকটি সাবমেরিন তৈরি করেছে এই গোপন জেটি গুলিতে। আপাতত কোন প্রযুক্তি এই সাবমেরিন গুলির অবস্থান নিশ্চিত করতে সক্ষম নয়। শুধুমাত্র এবং কেবল মাত্র জেটির কম্পিউটার সিস্টেমই এদের অবস্থান জানতে পারবে। আবার এক জেটির কম্পিউটার আরেক জেটির সাবমেরিনকে ধরতে সক্ষম নয়। প্রতিটা সিস্টেমকেই স্বতন্ত্র নিরাপত্তা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। তাই নিরাপত্তা বিভাগের কেউ যদি একটা জেটির সন্ধান পেয়েও যায় তবুও বাকি জেটি গুলির কোন তথ্য কোথাও হতে বের করে নিতে পারবে না।

রুশানকে তার কাজ বুঝিয়ে দেয়া হল। সাবমেরিনের ভেতরকার নিরাপত্তা সেকশনে তাকে একটা পোষ্ট দেয়া হল। এত কিছুর ভেতরে রুশানও জানতে পারেনি বিজ্ঞান কাউন্সিল তার উপর নজরদারির জন্যে তারই মত আরেকজনকে নিয়োগ দিয়ে রেখেছে। আর সে নিয়মিত রুশানের রিপোর্ট গোপন চ্যানেলের মাধ্যমে নিরাপত্তা বিভাগকে দিয়ে আসছে।

তিন হপ্তা বাদে প্রথমবারের মত জেটি হতে সাবমেরিন গুলিকে সমুদ্রে ছাড়া হয়। জেটির জল সীমানার প্রায় ১০,০০০ কিলোমিটার তারা খুব নিরাপদেই তাদের ভ্রমণ দিয়ে আবার জেটিতে ফিরে আসে। নিরাপত্তা বিভাগের প্রতিটা চ্যানেলে বাগ বসিয়ে নিশ্চিত হয় তাদের এই টেস্ট ড্রাইভ সম্পর্কে কোন তথ্যই এখনো নিরাপত্তা বিভাগের কাছে পৌঁছেনি। ঘটনার ৫ম দিনের মাথায় প্রথম বারের মত নিরাপত্তা বিভাগে একটু চঞ্চলতা দেখা যায়। জনাথনের প্রতিটি বার আর ক্যাসিনোতে তারা কোয়ারি বসায়। জনাথনও নীরবে তাদের প্রতিটি কাজ চালিয়ে নেবার নির্দেশনা দেয়। নিরাপত্তা বিভাগ জনাথনের এমন উদাসী ভাব দেখে আরও চটে যায়। বিগত বছরের সকল হিসেবের পাই পাই তারা ঘাটিয়ে দেখতে থাকে। টানা ১৫ দিন ক্যাসিনো আর বার বন্ধ রেখে যখন কোন তথ্যই বের করতে পারল না তখনই কেবল জনাথনের কাছে ‘সরি’ বলে ‘ক্লিন’ সার্টিফিকেট দিয়ে বের হয়ে আসতে বাধ্য হয়।

জনাথন জানতই এমন কিছু হবে। প্রতিবার রেট বসানোর পরই তার কাছে মাথা নিচু করে বের হয়ে যেতে হয়েছে এই টিকটিকি গুলিকে। প্রতিটা ইউনিট এত পরিষ্কার ভাবে লেনদেন করে জনাথন যে কোন পথে যে তার ইউনিট তার বিশাল সাম্রাজ্যের সৈন্যদের নিকট পৌঁছে তা কেউ বের করতে পারে না। তবে জনাথন এবারে উদ্বিগ্ন হয়। কেউ তো আছে যে মিশন সম্পর্কে নিরাপত্তা বিভাগকে খবর দিচ্ছে। নয়ত মিশন লঞ্চের ঠিক ক’দিন আগেই এভাবে তারা রেট দেয় না। কিছু একটা গোলমাল এর মধ্যে নিশ্চিত রয়ে গেছে। আর গোলমালটা কোথায় হয়েছে তা বের করতেও সময় নেয় নি। কালপিটকে ঠিক পরদিনই তার চেম্বারে নিয়ে আসা হয়। যখন বুঝতে পারল সে ধরা পরে গেছে তখনই খুব সাবধানে রুশানের রুমের বাইরে দাড়িয়ে তাকে ডেকে তোলে এই অজ্ঞাত লোকটি। তারপর দরজা না খোলার অনুরোধ করেই তার কথা গুলি খুব ধীরে এবং দ্রুত জানায় রুশানকে। রুশান প্রথমে তার উপর নজরদারির ঘটনায় রেগে গেলেও শেষে অবস্থার গুরুত্ব বুঝতে পারে। পরবর্তীতে তাকে কি করতে হবে তা বলেই নিঃশব্দে সেখান থেকে চলে আসে লোকটি।

জনাথন জানে সহজে লোকটি মুখ খুলবে না। তাই সেদিকে না গিয়ে সরাসরি কতটুকু ক্ষতি সে করেছে তা বের করার নির্দেশ দিল তার লোকজনকে। ৪ দিন পর যখন তার লোকেরা রিপোর্ট করল তখন সন্তুষ্ট চিত্তেই জনাথন লোকটির দিকে তাকাল। এই চারদিন লোকটি জনাথনের নজরের বাইরে যায়নি। জনাথনও এই ৪ দিন এই রুমটি ত্যাগ করেনি। তারপর আবার নির্দেশনা দিল একে জেটিতে ফিরিয়ে নিয়ে সেলে বন্দী করে রাখতে। যেহেতু নিরাপত্তা বিভাগ আগে থেকে এসে মাথা নত করবে না, তাই এর সম্বন্ধেও কিছু জানতে চাইবে না।

৩ দিন পর সাবমেরিন গুলি রিফুয়েলিং করে বিচিত্র কিছু কোর্স ধরে এগিয়ে যাবার নির্দেশ দিল। সরাসরি রেডিও সাইলেন্স রাখার নির্দেশ প্রতিটা সদস্যকে লিখিত দেয়া হল। খুব বড় ধরণের বিপদে না পড়লে এরা কেউই রেডিও ফায়ার-আপ করতে পারবে না। যদিও তাদের রেডিও সিগনাল গুলি যথেষ্ট নিরাপদ, তবুও জনাথন কোন চান্স নিল না। আলাদা আলাদা কোর্সে সব গুলি সাবমেরিনকে সমুদ্রে পাঠিয়ে দিল। প্রথম সাতদিন নির্দিষ্ট গতিতে একটা কোর্স ধরে এগিয়ে চলল রুশানদের সাবমেরিন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা এত জোরদার যে রুশান খুব গোপনে আলাদা আরেকটা চ্যানেল খুলতে ব্যর্থ হল। সিগনাল জ্যামিং প্রযুক্তি কোন সিগনালকে এক মিটার এগুতে দেয় না। তার আগেই ধরে ফেলে। কয়েকবার ট্রাই করে রুশান বাদ দিল। বেশি চেষ্টা করলে হয়ত তাকেও সরিয়ে ফেলা হবে ঐ অজ্ঞাত লোকটির মত।

মিকি সমুদ্রে একটা সূক্ষ্ম আলোড়ন লক্ষ করল দু দিন ধরে। মোট ৮টি স্থানে এমন আলোড়ন তৈরি হচ্ছে। কিন্তু কিসের মাধ্যমে এই আলোড়ন তৈরি হচ্ছে তার সম্বন্ধে কোন তথ্যই দিতে পারছে না তার সিস্টেম। সমুদ্রে টহল রত সকল নৌযান এবং সাবমেরিনকে জানিয়ে দেয়া হল অযাচিত কোন মুভমেন্ট লক্ষ করা মাত্রই তাকে গুড়িয়ে দেবার। সবাই তক্কে তক্কে রইল এই ক’টাদিন। অবশেষে ৩টি সাবমেরিনকে তারা ধরতে সক্ষম হল। কিন্তু কোনটাই অক্ষত অবস্থায় বাগে আনতে পারল না। যখনই বুঝেছে তাদের নিশ্চিত ধরে ফেলা হবে তখনই সেল্ফ ডিসট্রাকশন সিস্টেম চালু হয়ে গেছে। নিয়তি সকল সদস্য সহ পুরো সাবমেরিনকে গুড়ো করে দিয়েছে। অবশ্য সবাই যার যার নিয়তি মিশনের শুরুতেই মেনে নিয়েছে।

জনাথনের এতেও কোন বিকার দেখতে পেলো না নিরাপত্তা বিভাগ। বেশ কয়েকবার তাকে ভিডিও কনফারেন্স করে হুমকি দেয়া হয়েছে যে এই সব উল্টো পাল্টা কাজের সাথে কোন ক্লু যদি তার বিরুদ্ধে পাওয়া যায়, তাহলে শুধুমাত্র তাকে ধরেই শূলে চড়ানো হবে। এই কথার পরও জনাথন নির্বিকারই থাকে। উল্টো তাদের বলল, নিরাপত্তা বিভাগ যদি কোন ত্রুটি খুঁজে পায় তাহলে তারা যে শাস্তিই দেবেন তা সে মাথা পেতে নিবে। এও বলল, তার বার আর ক্যাসিনো নিরাপত্তা বিভাগের প্রতিটি লোকের জন্যে সবসময় খোলা।

নিরাপত্তা বিভাগের হর্তাকর্তারা নিজের চুল টেনে ধরে বসে আসে। ৩টা সাবমেরিন হতে আসার পরও কোন তথ্য সেখান থেকে বের করে আনতে পারেনি। যেন মাটি ফুড়ে বের হয়ে এসেছে এগুলি। যাদের ডি. এন. এ. এর ভেতর থেকে উদ্ধার করতে পেরেছে তাদের সবাই বিভিন্ন কাজে বিভিন্ন কোম্পানিতে নিযুক্ত ছিল। তারপর তারা ভ্যাকেশনে গিয়েছিল। কিভাবে কোন যাদু বলে সবাই এমন উদ্ভট দর্শন সাবমেরিনে এসেছে তার কোন ক্লু’ই তারা বের করতে পারল না। প্রতিটা রেকর্ড ক্লিন। কাউকে ধরে বলার মত কিছুই খুঁজে পায়নি তারা।

১০ দিন পর প্রথম বারের মত রুশানদের সাবমেরিন গতির পরিবর্তন করে। যেন কিছুটা তাড়াহুড়া করেই কোথাও পৌছাতে চাইছে এখন সাবমেরিনটা। অবশ্য সবকিছুই নির্দেশনা মোতাবেক এগিয়ে যাচ্ছে। মিকির নজরও সূক্ষ্ম এই পরিবর্তন হতে এরিয়ে গেল না। কিন্তু এইবার সে আর কাউকে কোন নির্দেশনা দিল না। নিজেই কিছু নিরাপত্তা রোবট পাঠিয়ে দিল আলট্রনসেপিয়েন্সদের মহাদেশে। নিরাপত্তা বিভাগের জন্যে তৈরি করা হলেও এই ৩০ টি রোবট অন্য সকল রোবট হতে ভিন্ন ক্ষমতা সম্পন্ন। এদের কপোট্রন সরাসরি মিকি’র হতে নির্দেশ গ্রহণ করে। আর ধ্বংস করার জন্যে এদের একটাই তার মত ১০০০ রোবট এক নিমিষে শেষ করতে পারে। ফিল্ড টেস্ট করার পর নিরাপত্তা বিভাগের ব্যাজ লাগিয়ে খুব সাবধানে মিকি এই রোবট গুলিকে আলাদা করেছে। কাউন্সিলের প্রতিটি মেম্বারের জন্যে তার সংগ্রহে ১টি করে রোবট নিয়োজিত। বিন্দু মাত্র বিপদ বোঝা মাত্রই রোবট গুলি নিজে থেকে কাউন্সিল মেম্বারকে ঘিরে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করবে। তারপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার আগ পর্যন্ত প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থাই সে গ্রহণ করতে সক্ষম।

২১ দিন পর রুশানদের সাবমেরিন একটা নির্দিষ্ট অবস্থানে এসে থামল। ২ দিন সেখানেই তারা অবস্থান করল। এরপর ৩য় দিনের মাথায় ৫টি আলাদা আলাদা স্কাউট বোট পানির নিচে দিয়েই ৩ জন করে সদস্যকে নিয়ে বের হল। প্রথম বার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটা টহল দিল তারা। তারপর সকল নিরাপত্তা নিশ্চিত জেনেই এগুতে থাকল আপন লক্ষ্যের দিকে। এভাবে ৮ ঘণ্টার জার্নি শেষে তাদের পা ঠেকল বালিতে। ধীরে ধীরে খুব সন্তর্পণে তারা মুক্ত একটা জায়গায় বের হয়ে আসল। রুশানও ছিল সেই অভিযাত্রীদের সঙ্গে। তাদের সুট এমন ভাবে তৈরি যে বডি টেম্পারেচারও তাদের অবস্থান কাউকে জানতে দিবে না। পাড়ে উঠেই তারা বুঝতে পারল এখানকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা তাদের স্বাগতম জানানোর জন্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অপেক্ষা করছে। এরপর টানা ১২ ঘণ্টা তারা পায়ে হেটে একটানা এগিয়ে গেল। ১৫ জন সদস্যের কেউই তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে একবিন্দু পর্যন্ত ধারণা করতে পারেনি সেই মুহূর্তে।

বিকেলের দিকে তারা একটা বেস ক্যাম্পের খুব কাছাকাছি চলে আসল। বেস ক্যাম্প হলেও বাইরে থেকে তারের উঁচু প্রাচীর দেয়া ছিল না তাতে। তার বদলে কোমর পর্যন্ত এক ধরণের তার টানা তার ছিল সেখানে। তবে সন্ধ্যা নামার আগে দলনেতা কোন রিস্ক নিতে চাইল না। সবাইকে ছড়িয়ে যাবার নির্দেশনা দিয়ে বিশ্রাম নিতে বলল। এর মাঝে অবশ্য রুশান একটি কাজ সকলের অগোচরে করল। বেশ পুরাতন একটা প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিরাপত্তা বিভাগে তাদের অবস্থান জানিয়ে রাখল। কোন দিকে কতটুকু এগিয়েছে সেটারও একটা ধারণা দিল। বর্তমানে যে অচেনা একটা বেস ক্যাম্পের সামনে অপেক্ষা করছে সে খবরও পৌঁছে দিল বিরতিতে। নিরাপত্তা বিভাগ যখন এই মেসেজের অর্থ উদ্ধার করার জন্যে ছোটাছুটি করছিল মিকি ততক্ষণে পুরো মেসেজ ডিকোড করে নিল। তারপর আলট্রনসেপিয়েন্সদের প্রতিটি বেস ক্যাম্পে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার নির্দেশনা পৌঁছে দিল।

আলট্রনসেপিয়েন্সদের নিজেদের মাঝে অবিশ্বাস করার মত কিছুই ছিল না কোন কালে। তাই নিরাপত্তা নিয়ে তারা কখনোই তেমন মাথা ঘামায়নি। যখন সকলেই নিয়মের মধ্যে চলে সেখানে নিরাপত্তা নিয়ে এত ভেবেই বা কি হবে! তাই তারা মোটামুটি এক ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করে আপন মনে নিজেদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। আলট্রনসেপিয়েন্সদের আধুনিক রোবট ভাবলেও খুব একটা ভুল হবে না। তবে রোবট আর তাদের মাঝে পার্থক্য হল, রোবট মুক্ত চিন্তার অধিকারী হলেও তার মধ্যে অনুসন্ধানী কিছু আপনা আপনি সৃষ্টি হয় না। কিন্তু আলট্রনসেপিয়েন্সদের মস্তিষ্কের মৌলিক গঠন মানুষের মত হওয়ায় প্রতিনিয়ত বিভিন্ন আইডিয়া তাদের মস্তিষ্কে জন্ম নেয়। আর কোন একটা আইডিয়া কেউ পেলে সেটা বাস্তবায়ন করার আগ পর্যন্ত তারা শান্ত হয় না। মিকির নির্দেশনা পেয়ে মধ্যম দূরত্বের লেজার সিস্টেম গান নিয়ে দুটি করে টহল জিপ ক্যাম্পের চারিপাশে টহল দিতে শুরু করল।

সন্ধ্যা নাগাদ এই পরিবর্তন দেখে ছোট দলটির দলনেতার বুঝতে বাকি রইল না যে তাদের আগমনের খবর ইতোমধ্যে সকলের জানা হয়ে গেছে। শুধু মাত্র তাদের স্পেশাল সুটের কারণে তার অবস্থান নিশ্চিত করে জানতে পারছে না। সন্ধ্যার পর সকলেই আবার একত্রে মিলিত হল। বেশ অনেক সময় ধরে টহল জিপ দুটির ফিরে ফিরে আসার সময়ের পার্থক্য বের করল তারা। প্রতি ৫ মিনিট পর পর জিপ গুলি ফিরে আসছে। তাদেরকে এই পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ক্যাম্পে ঢুকতে হবে এবং নির্দেশিত কাজটি করতে হবে। এরপর ঘণ্টা খানিক নানা হিসেব নিকেশের পর দলনেতা সবাইকে নিয়ে এগিয়ে চলল। তবে সবাই দৌড়ে না গিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে এগুতে লাগল। ভাগ্য ভাল যে এরা স্পট-লাইট সেট করে তা দিয়ে কাউকে খুঁজে ফিরছে না। অন্ধকারে নিজেদের ভালোই কভার করার সুযোগ পাচ্ছে তারা। বেস ক্যাম্পের কাছাকাছি এসে ঢিল ছুড়ে যখন নিশ্চিত হল কোথাও কোন বৈদ্যুতিক তার ছড়িয়ে রাখেনি তখন শেষ জিপটা ঘোরার সাথে সাথেই সবাইকে নিয়ে ছুটল দলনেতা।

এবারে এক রকম দৌড়েই বেস ক্যাম্পে প্রবেশ করল তারা। প্রবেশ করেও কোন থামার লক্ষণ দেখা গেলো না। সমান তালে দলনেতার পিছু পিছু সবাই এগিয়ে চলল। সকলের সাথে ২টি করে রিমোট কন্ট্রল্‌ড এবং টাইমার ব্যবহৃত গ্রেড থ্রি টাইপ C-4 বোমা রয়েছে। দলনেতা সবাইকে নিয়ে একটা বড় লঞ্চার বেসে পৌঁছে গেল। আর ঠিক সে মুহূর্তেই পেছন থেকে আতর্কিক হামলা শুরু হল। কিছু বোঝার আগেই ৩ জন লুটিয়ে পড়ল। দলনেতা চিৎকার করে সবাইকে সুটের প্রোটেকশন মোড চালু করতে বলল। প্রোটেকশন মোড চালু করলে মূলত আর লুকিয়ে থাকার সিস্টেম কাজ করে না। এখন অবশ্য তার প্রয়োজনও ফুরিয়েছে। কারণ তাদের অবস্থান নিশ্চিত জেনেই একটা জিপ ছুটে আসছে। সকলের পাশ দিয়েই লেজারের ফুলঝুরি ছুটে যেতে লাগল। কিন্তু তাদের কাউকেই আর লেজার স্পর্শ করল না। সবাইকে দ্রুত হাতে লঞ্চার বেসে তাদের বোমা গুলি লাগাবার নির্দেশ দিল।

সকলেই তার বোমা গুলি দূরত্ব বুঝে লঞ্চার বেসে লাগিয়ে দিয়েছিল, শুধু মাত্র রুশান বাদে। সে এক কোনে বসে নিরাপত্তা বিভাগে যোগাযোগ করার জোড় প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। মনে মনে রুশান আশা করছিল যে আলট্রনসেপিয়েন্সেরা এসে তাদের সবাইকে ধরে নিবে আর বোমা গুলি নিষ্ক্রিয় করে দিবে। কিন্তু ঘটনা তেমন ঘটল না। আলট্রনসেপিয়েন্স গুলি নির্দিষ্ট একটা দূরত্বে দাড়িয়ে রইল। লেজার গান বন্ধ করে এবার সত্যিকারের বুলেট চালিত গান-শিপ হতে গুলি ছুড়তে লাগল। প্রায় সকলেই সেই গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গেল। গুলি করা থামাতেই রুশান বুঝল তাকে কি করতে হবে। বিপদ বুঝেও সে ছুট লাগাল। ছুটে ছুটে সব গুলি বোমা প্লান্ট করা স্থান হতে খুলে প্যান্টের পকেটে ঢুকাতে লাগল। একটা করে ছুটিয়েই আবার দৌড় লাগাচ্ছে অন্যটা ছোটানোর জন্যে। হুস জ্ঞান হারিয়েই কাজটা করে যাচ্ছিল সে। কিন্তু যখন হুশ হল ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। এবারে বেস হতে দৌড়ে বেশ অনেকটা দূরত্বে চলে আসল সে, আর তখনই বিস্ফোরণটা ঘটল। পকেটের C-4 গুলি একটার পর আরেকটা ফেটে চলল। পায়ের নিচ হতে রুশানের দেহটি আলাদা হয়ে গেল। ছিটকে পড়ল এক কোনে। তারপর আর কিছুই মনে নেই তার।

জিপে বসা আলট্রনসেপিয়েন্স গুলি বিস্ময় নিয়ে দেখতে লাগল আক্রমণকারীদের একজন প্রাণপণে ছুটে ছুটে বোমা গুলি খুলে নিচ্ছে। আর তার কিছুক্ষণ পর উত্তর-পশ্চিম কোন ধরে ছুটে যেতে লাগল। তবে বেশিদূর এগুতে পারল না, তার আগেই বোমা গুলি ফুটতে শুরু করল। যতক্ষণে বুঝল এই ছেলেটি তাদের উপকার করার জন্যেই কাজ করেছে তখন জিপ হতে দু’জন আলট্রনসেপিয়েন্স ছুটে বের হল। দৌড়ে ছেলেটার ছিন্ন দেহ তুলে আনল জিপে। তারপর সরাসরি তাকে নিয়ে মেডিকহোমে ছুটল। এর মাঝে অবশ্য বাকি সকল বেসে খবর পৌঁছে দিল যাতে তারা সিগনাল জ্যাম প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই হামলাকে ঠেকিয়ে দিতে পারে। তারপর আর কোন বেসেই বোমা ফেটে উঠেনি। সবাইকে ধরে নিয়ে সেলে বন্দি করা হল।

মেডিকহোম সেন্টার সরাসরি তাকে রিক্রিয়েশন বিভাগে ট্রান্সফার করে দিল। প্রযুক্তির আধুনিক মেডিকেশন সিস্টেম সেল ক্রিয়েশন সিস্টেম ইউনিটে ধীরে ধীরে রুশানের মৃত কোষ গুলিকে ছাড়িয়ে নিয়ে নতুন কোষ তৈরি করতে থাকে। যেহেতু সিস্টেমটি আলট্রনসেপিয়েন্সদের জন্যে তৈরি তাই রুশানের নতুন কোষ গুলিও আলট্রনসেপিয়েন্সদের মত হতে লাগল। মানুষের কোষ হতে তৈরি হলেও আলট্রনসেপিয়েন্সদের কোষ গুলি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন রকমের। গঠনগত দিক হতে সেগুলি মানব সেল হতে কিছুটা লম্বাটে ধরণের। ৬ ঘণ্টা পর রুশানের নতুন দেহ তৈরির কাজ সম্পন্ন হল। কিন্তু তখনও তার জ্ঞান ফেরেনি। মিকির সাথে যোগাযোগ করে তাকে বিজ্ঞান কাউন্সিলে ফিরিয়ে নেবার সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করল আনট্রনসেপিয়েন্সেরা। এর ঘণ্টা ২ বাদে একটা আধুনিক মেডিক টিম সহ চপার এসে থামল আলট্রনসেপিয়েন্সদের মেডিকহোমে।

পরদিন ভোরে বিজ্ঞান কাউন্সিলের বিশেষ কক্ষে রুশানের জ্ঞান ফিরে আসল। এর মাঝে কত কিছুর পরিবর্তন হয়ে গেছে তার কিছুই সে জানতে পারল না সে ঐ মুহূর্তে। বিজ্ঞান কাউন্সিলের সভাপতি মহামান্য লুকাস তার জ্ঞান ফিরে আসার জন্যে অপেক্ষা করছিল। জ্ঞান ফিরে পাবার পর সে কোথায় আছে তা ধারণা করার একটা চেষ্টা করল। মহামান্য লুকাস তার মনের কথাটাই যেন বুঝতে পেরে বললেন, তুমি নিরাপদেই আছো। তারপর যখন গতরাতের বিস্ফোরণের কথা মনে পড়ল সাথে সাথে নিজেকে হাতড়ে অনুভব করবার চেষ্টা করল রুশান। প্রায় সবই ঠিক আছে। তবুও কোথাও একটা গোলমাল আছে। রুশান জানতে চাইল, এটা কোন মাইন্ড ইমুলেশন প্রজেক্টর কি না। উত্তরে মহামান্য লুকাস বললেন, না, এটি শতভাগ বাস্তবতা। রুশানের মাথায় হাজারটা প্রশ্ন ভীর করতে লাগল। কিন্তু জিজ্ঞাস করার মত সঙ্গতি তখনও তার হয়নি।

দেরিতে হলেও নিরাপত্তা বিভাগ বুঝতে পেরেছিল জনাথন আব্রাহাম সেই পুরাতন উগ্রবাদী দলের একজন সক্রিয় সদস্য। কিন্তু বুঝেও তাকে ধরতে পারেনি তারা। জনাথন আব্রাহাম যেন সেফ হাওয়ায় মিশে গেছে। পেছনে কোন ক্লু’ই সে ছেড়ে যায়নি। ভিডিওতে এক মিনিট পূর্বে লোকটি তার চেয়ারে অবস্থান করছিল আর এক মিনিট বাদে যেন অদৃশ্য হয়ে গেল আপন অবস্থানেই। ভেলকিবাজির মত ঘটে গেল ঘটনাটা। সে ক্যাসিনো হতে বাইরে আসেনি এতটুকু নিশ্চিত নিরাপত্তা বিভাগের লোকেরা। কারণ চারদিক হতেই বিল্ডিং ঘিরে রেখেছিল নিরাপত্তা বিভাগের লোকজন। রাস্তায় রাস্তায় স্ক্যানার আর চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। বিল্ডিং হতে বের হলেও সেগুলিকে পার করে এগিয়ে যাওয়া জনাথনের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব কাজ হবে। কিন্তু যখন ভেলকিবাজির মত জনাথন হাওয়ায় মিলিয়ে গেল চোখের সামনে তখন নিজেদের চুল ছেড়া ছাড়া নিরাপত্তা বিভাগের আর কিছুই করার রইল না।

ধারণা করা হয় প্রথম এটমিক আক্রমণ চালাবার পূর্বেই মাটির বেশ গভীরে নিজেদের শহর তৈরি করেছিল গুপ্ত চার্চের উগ্রবাদীরা। তারা সেখান থেকেই সকল কাজ পরিচালনা করে থাকত। কিন্তু জনাথনকে কিভাবে উষ্ণ শহরে নিয়ে এসেছিল তার কোন হদিস তারা পায়নি। জনাথনের ফ্যামিলি ট্রি চেক করে দেখেছে মিকি। সে নিজেই এই পরিবারটাকে পোলার এরিয়া হতে উষ্ণ শহরে প্রতিস্থাপন করেছিল জনাথনের ৫ পুরুষ পূর্বে। জনাথনের অসুস্থতার কোন রিপোর্টও মিকির হাতে ছিল না। তবু ভিন্ন উপায়ে ডি. এন. এ. টেস্ট করে দেখেছে মূল পরিবারটির সাথে তার ডি. এন. এ.-র খুব বেশি পরিবর্তন ছিল না। অনেক তথ্য উপাত্ত ঘাটতে ঘাটতে মিকি এই সিদ্ধান্তে আসে যে জনাথনের এই পরিবারটি যখন মানব সভ্যতার পূর্বের অবস্থায় অবস্থান করছিল তখনই তাদের কেউ ঐ গোপন উগ্রবাদী চার্চের গ্রুপে যুক্ত হয়ে যায়। আর আক্রমণের পর পরিবারটির প্রায় সকল সদস্য মারা গেলে আলাদা করে কাউকে আর নিখোঁজ ধরা হয়নি। আর এই সুবিধাটিই কাজে লাগিয়ে জনাথনকে এই পরিবারে ঢোকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল সেই উগ্রবাদী সংস্থা। কিন্তু কখন কিভাবে এই কাজটি করেছিল তারা সে সম্বন্ধে কোন ক্লু বের করতে পারেনি মিকি।

বিজ্ঞান কাউন্সিলের শুরু হতেই মহামান্য লুকাস সেখানে নিযুক্ত ছিলেন। প্রথমে সিনিয়র মেম্বার হিসেবে তাকে নিযুক্ত করা হয়। তারপর দীর্ঘ সময়ে দু’জন কাউন্সিল প্রধানের মৃত্যু ঘটে। তখন পর্যন্ত মেডিকেল সায়েন্সের তেমন উন্নতি ঘটেনি। কিন্তু আলট্রনসেপিয়েন্সদের সাথে সাথে পরে মানুষের জীবন ব্যবস্থারও উন্নতি ঘটতে থাকে। আর হামলা পরবর্তী পর্যায়ে মিকি সরাসরি বিজ্ঞান কাউন্সিলের মেম্বারদের দায়িত্ব গ্রহণ করে। নির্দিষ্ট পরিমাণে প্রোটিন দিয়ে তাদের বাঁচিয়ে রাখে মিকি। কাউন্সিলের ভেতরেই বেশ ছোট কয়েকটি অপারেশন করে কাউন্সিল সদস্যদের দীর্ঘায়ু নিশ্চিত করে। মিকির দায়িত্বে কাউন্সিলের সদস্যেরা সবাই প্রায় দীর্ঘ জীবন লাভ করে। মৃত্যু যেন তাদের ছুতে ভুলে যায়। তবে সবার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এক রকম ছিল না। কেউ কেউ এই দীর্ঘ জীবনকে সহ্য করতে না পেরে শেষে আত্মহত্যা করে বসত। আর কারও কারও ক্ষেত্রে কোষের পুনর্জন্ম থেমে যেত। একটা সময় পরে স্বাভাবিক মৃত্যুর কোলে তারা ঢলে পড়ত। তবে মিকি কখনোই মহামান্য লুকাসের ব্যাপারে কোন কার্পণ্য করেনি। প্রতি ১৫ দিন অন্তর অন্তর তাকে তার ব্যক্তিগত সেফ হোমে নিয়ে কোষের বেড়ে উঠার হার পরীক্ষা করত। কোথাও কোষের বেড়ে উঠার হার কম মনে হলেই সেখান থেকে ঐ কোষ গুলিকে সরিয়ে নতুন কোষ দিয়ে প্রতিস্থাপন করে দিত। আর এভাবেই বিজ্ঞান কাউন্সিলের প্রধান মহামান্য লুকাস দীর্ঘ জীবন লাভ করেন।

তবে মহামান্য লুকাসও এই জীবনের মোহ হারিয়ে ফেলেছিলেন। বসে বসে কেবল মাত্র মিকির কার্যক্রম দেখা আর অর্থহীন সকল আলোচনায় কাউন্সিল সদস্যদের হা-হুতাশ দেখতে দেখতে তিনি বেশ বিরক্ত হয়ে উঠেছিলেন। তার সময়ের কেউই বেঁচে নেই এখন। তিনি যাদের সাথে কাজ করেন তাদের কয়েক পুরুষ আগের মানুষদের সাথেও তিনি কাজ করেছেন। সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হয়েও তিনি নিজেকে বড় অসহায় মনে করতেন সময় সময়ে। তিনি অপেক্ষা করছিলেন তার অবস্থানে উপযুক্ত কাউকে বসিয়ে যাবার। কিন্তু এই দীর্ঘ জীবনে তেমন কাউই তার নজরে আসেনি। তবে এবারে তিনি আশার আলো দেখছেন। রুশান ছেলেটির মধ্যে যে আলো তিনি দেখতে পারছেন তাতে সে নিশ্চিন্তে এর উপর নিজের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে পারে বলেই ধারণা করছেন। মিকি মহামান্য লুকাসের মনোভাব বুঝতে পারছিল। নিজের কক্ষে ফিরে যাবার পর মিকি নিজে থেকেই জানতে চাইল সত্যিই তিনি কাজটি করতে চান কি না। মহামান্য লুকাস অনেকক্ষণ ভেবে চিন্তে বললেন- হ্যাঁ, সত্যিকারেই আমি এমনটা করতে চাই।

এই সবের মাঝে মিকি আরও দুটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছিল। আলট্রনসেপিয়েন্সদের যে ভ্রূণ হতে তৈরি করা হত সেই ভ্রূণের ক্লোনে সে আলট্রনসেপিয়েন্সের ডি. এন. এ. স্থাপন করে ল্যাবে বিশেষ প্রক্রিয়ার মাঝে তাকে বাড়িয়ে তোলে। এবং এবারে সফল ভাবেই সে কাজটি করতে সক্ষম হয়। একই নিয়ম অনুসরণ করে যখন ১০/১২ জন আলট্রনসেপিয়েন্স তৈরি করতে সে সক্ষম হয় তখন মহামান্য লুকাসকে তার এই এক্সপেরিমেন্ট সম্বন্ধে জানায়। মহামান্য লুকাস এই প্রথমবারের মত সত্যিকার অর্থে মিকির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। মানব সভ্যতাকে তার মত রেখেই যদি আলট্রনসেপিয়েন্সদের জন্ম দেয়া সম্ভব হয় তাহলে সেখানে আর কোন বাধাই থাকে না। আর মানব জীবনও প্রাকৃতিক ভাবে বেড়ে উঠতে পারে কোন কৃত্রিমতা ছাড়া। আর দ্বিতীয় কাজটি ছিল পৃথিবীর সকল স্থান হতে রেডিয়েশনের উপর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আসা। মিকি বেশ সময় নিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রেডিয়েশন গুলিকে তার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে। মানুষের বসবাস যোগ্য নিশ্চিত করেই মহামান্য লুকাসকে এই সুসংবাদ প্রদান করে। মহামান্য লুকাসও তাকে অনুমতি দেয় যাতে সে সকল স্থানে মানুষ দিয়ে আবারও ভরে ফেলতে পারে।

মিকি কখনোই পোলার এরিয়া হতে সকল মানুষকে সরিয়ে নেবার পক্ষে ছিল না। তার যুক্তি অনুসারে যে কোন ধরণের বিপর্যয় আসতে পারে। তার নিজের নিয়ন্ত্রণেরও পরিবর্তন হুট করে ঘটে যেতে পারে। আর উষ্ণ শহরের সম্পূর্ণ দায়িত্ব যখন তার উপরই থাকে তখন সকল মানব জাতীকে নিয়ে এই রিস্ক সে কখনোই নিতে রাজি ছিল না। তাই সে ধীরে ধীরে অল্প অল্প মানুষ বিভিন্ন এলাকাতে ছড়িয়ে দিচ্ছিল। জাতিগত ভাবে তাদের পূর্ব পুরুষেরা যেসব এলাকায় বসবাস করত সে তাদের সেভাবেই ঐ সকল এলাকায় ফিরিয়ে নেবার চেষ্টা করে যাচ্ছিল। পুরানো পৃথিবীটা নতুন রূপে আবারও ফিরে আসছিল। আলট্রনসেপিয়েন্সদের নিয়ে অতি আগ্রহ কিংবা ভীতি অথবা অবজ্ঞা মানুষের মধ্য থেকে দূর করার জন্যে প্রায়ই আলট্রনসেপিয়েন্সদের মানব সমাজে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়ে আসা হত। সেমিনার করে করে তাদের মাঝে পার্থক্য আর মৌলিক বন্ধন গুলি সবাইকে বুঝিয়ে দেবার চেষ্টা করে যেতে লাগল মিকি। আর এভাবেই ধীরে ধীরে আলট্রনসেপিয়েন্স আর মানুষের মধ্যকার দূরত্ব কমে আসতে লাগল।

রুশানকে এখন ঠিক মানুষ কিংবা আলট্রনসেপিয়েন্স কোনটাই বলা চলে না। সে দুটি জাতীর সংমিশ্রণে তৈরি নতুন কিছু। মহামান্য লুকাস যখন তাকে তার অবস্থানে আসার আহ্বান জানায় তখন সে শুধু বোকার মত চেয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করতে পারছিল না। সবশেষে বিজ্ঞান কাউন্সিলের সকল সদস্যদের অনুমোদন আদায় করে মিকি মহামান্য লুকাসের অবস্থানে বিজ্ঞান কাউন্সিলের নতুন সভাপতি হিসেবে রুশানকে অবস্থান দেয়। মহামান্য লুকাসের অনুরোধেই উষ্ণ শহরে তার পূর্বপুরুষদের একটা অবস্থানে তাকে সাধারণ একটা কাঠের বাড়ি তৈরি করে দেয় মিকি। তবে খামারের কাজের জন্যে বরাদ্দ দেয় ২ টি কর্মী রোবট। মহামান্য লুকাস পরবর্তী ৩টা বছর সেখানেই কাটিয়ে দেন। তৃতীয় বছরের শেষের দিকে তিনি স্বাভাবিক নিয়মেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।

পূর্ব নির্দেশনা অনুযায়ী মহামান্য লুকাসকে তার নতুন বাড়ির উত্তরদিকের পাহাড়ের একটা গুহায় সমাহিত করা হয়। তবে মিকি শুধু তাকে সমাহিত করেই ক্ষান্ত হয়নি। সে গুহাটাকে একটা ছোটখাটো যাদুঘরে পরিবর্তন করে নেয়। এখানে সকলের প্রবেশাধিকার রয়েছিল। সবাই এখানে এসে মহামান্য লুকাসের জীবনের শুরু হতে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি পদক্ষেপই জানার সুযোগ পেত। তার অবদানগুলি আলাদা করে হলোগ্রাফিক ছবির মাধ্যমে দেখানোর ব্যবস্থা করা হত। তার গুরুত্বপূর্ণ কথা গুলিকে আলাদা করে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। চাইলেই সকলে সেই গুরুত্বপূর্ণ কথা গুলি হলোগ্রাফিক চিত্রে দেখতে পারত।

রুশানকে মানব সভ্যতা আর আলট্রনসেপিয়েন্স উভয়েই তাদের প্রতিনিধি হিসেবে মেনে নিয়েছিল। আর এই কারণেই এই দুই সভ্যতার মধ্যকার দূরত্বকে সে কমিয়ে আনতে পেরেছিল। কোন প্রকৌশলী, ডাক্তার, সায়েন্টিস্ট যাতে আবারও কোন জনাথনের আয়ত্তে না আসে সেই ব্যবস্থা করেছিল রুশান। সে সবাইকে বাধ্যতা মূলক কাউন্সিলিং করার নির্দেশনা প্রদান করেন। আর সেই কাউন্সিলিং সেশন গুলিতে সায়ক্রাটিস্টের পাশাপাশি মিকিও অংশগ্রহণ করত। প্রতিটা মানুষের আলাদা আলাদা প্রোফাইল তৈরি আর আপডেট করা হত প্রতি সেশনে। কোথায় কাকে কখন কতটুকু পরিমাণে কাজ করানো হবে তা সেই প্রোফাইল হতেই বের করা হত। আর এভাবেই গোপন চার্চের সেই মৌলবাদী দলটির দীর্ঘমেয়াদি হামলার সকল ষড়যন্ত্র বানচাল করে দিতে সক্ষম হয় সে। হয়ত তারা আবারও আক্রমণ করবে। তবে এইবার আর তাদের ছেড়ে দেয়া হবে না। আক্রমণের পাল্টা আক্রমণ তাদেরও করবে এমনটাই সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে বিজ্ঞান কাউন্সিল আর নিরাপত্তা বিভাগ।

মানব সভ্যতা হারিয়ে যাবে এমনটা কখনোই সম্ভব নয়। আলট্রনসেপিয়েন্স হয়েই তাদের বাঁচতে হবে এমন কোন ধরাবাঁধা নিয়মও কোথাও নেই। তারা সকলেই বেঁচে থাকবে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এক কাতারে দাড়িয়ে….