মঙ্গলবার, জুলাই ২২, ২০১৪

অদৃশ্য সুতোর টানে অদ্ভুত ঐ লাইনটার দিকে এগিয়ে চলা....



কে জানি একজন! কিছু বোঝার আগেই একটা অদৃশ্য সুতো হাতটায় বেধে দিল। সুতোটা সারাক্ষণ আমায় সামনের দিকে টেনে নিয়ে চলেছে। মাঝে মাঝে যখন সুতো টানে এগিয়ে চলায় বিরক্ত হয়ে দাড়িয়ে পড়তে চাই তখন বুঝতে পারি, এই সুতোটার টানের ক্ষমতা। আমার সর্বশক্তির প্রয়োগের পরও সে সেটা উপেক্ষা করে সে তার দিকে আমাকে টেনে হেঁচড়ে ঠিকই নিয়ে যায়। এর বিরুদ্ধে টানাটানিকরতে করতেক্লান্ত হয়ে এখন এর টানেই সামনে এগিয়ে চলেছি।

এই টানাটানির মাঝেই পথের বেশ কিছু জিনিষ দেখার বাকি থেকে যায়। অনেক প্রয়োজনীয় জিনিষও হাতছাড়া হয়ে তার টানের তাল সামলাতে গিয়ে। একটু দাড়িয়ে কোথাও বিশ্রাম নিয়ে নিবো, সেই অবস্থাটাও থাকে না। কত প্রিয়জনকে এই টানের সামনে মুখ থুবড়ে পড়ে যেতে দেখেছি। কত মানুষকে দেখেছি এর কাছে হার মেনে নিতে। কিন্তু কি জানেন? খুব ভয়ানক পরিস্থিতি দেখেও এই সুতোর টান এক বিন্দু পরিমাণ পর্যন্ত কমে না।

আবার কেউ কেউ আছে এই অদৃশ্য সুতোর টান সইতে না পেরে এর থেকে পরিত্রাণের রাস্তা খুঁজে বেড়ায়। জানি না, তারা কিভাবে চিন্তাও করতে পারে এই অসম্ভব কাজটার কথা। যা দেখা যায় না, যার কোন অস্তিত্ব নেই, তাকে ঠিক কোন উপায়ে বাধা দেব? পিছুই বা ছুটবো কেমন করে?

শেষে না পেরে তারা ভিন্ন উপায় খুঁজে বের করে। তারা তাদের সকল আক্ষেপ সুতোর উপর না দেখিয়ে নিজের উপর দেখানো শুরু করে। কারো কারো আক্ষেপের পরিমাণ এত বেশি থাকে যে, সুতোটা শেষ পর্যন্ত বিরক্ত হয়ে তাকে ঐ লাইনটাকে পার করিয়ে দেয়।

ওহ! বলা তো হয়নি। সুতোটা কিন্তু সবাইকে ঐ লাইনের দিকেই টেনে নিয়ে যাচ্ছে। লাইনটা বড়ই অদ্ভুত। সবার জন্যে এক সমান নয়। কারো কারো দু’কদম এগুতেই লাইনের দেখা মিলছে তো আবার কারো কারো কদমের পর কদম ছুটে চলেছে, লাইনের দেখা আর মিলছে না। তবে লাইন ঠিকই আছে।

কেউ কেউ আবার এই লাইনের দিকে ছুটে চলার ভীতিকে বিভিন্ন উপায়ে পিছু ছাড়াতে ব্যস্ত। হরেক রকম পদ্ধতি তারাও প্রয়োগ করে যাচ্ছে। কিন্তু লাভের লাভ কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। সুতো ঠিকই তাদেরকেও ঐ লাইন বরাবর ছুটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

সুতোটার মত এই লাইনটাও আরেক রহস্য। এদিক থেকে লাইনটাকে কেউ যতই দ্রুত কিংবা দেরিতে পার করার চেষ্টা করুক না কেন, এই সুতোর টানের সাহায্য ছাড়া কেউ লাইনটাকে পার করতে পারে না। আবার কেউ একবার লাইনটাকে অতিক্রম করলে, তাকে এই ছুটে চলার পথটায় দেখাও যায় না। একেবারে অদৃশ্য হয়ে যায় লাইনটা অতিক্রম করার পরপরই।

মাঝে মাঝে খুব জানতে ইচ্ছে করে। লাইনটা পেরুনোর পরও কি এই অদৃশ্য সুতোর টানে টানে এগিয়ে চলে তারা? নাকি মুক্তি মেলে এই টান থেকে??

জানা হয় না...

এই প্রশ্নের জবাব সবাই একমাত্র আর কেবল মাত্র জানতে পারবে অদ্ভুত ঐ লাইনটাকে অতিক্রম করার পরেই.....








রবিবার, জুলাই ২০, ২০১৪

গল্পঃ শহুরে প্রশান্তির গল্পের খোঁজে…



সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে আর সবার মত আমার রাত হয় না। আমার খোঁজের শুরুটাই হয় ঐ সময়টাতে। আমি প্রশান্তির গল্প গুলি খুঁজে বেড়াই এই শহরের কোলাহলের ভীরে। পরিচিত মুখ গুলি যখন আপন আলয়ে ফিরে যাবার জন্যে ব্যাকুল হয়ে ছুটাছুটি লাগায় তখন আমি তাদের মাঝেই দাড়িয়ে সময় কাটাই। আমার তো আপন আলয় বলতে কিছু নেই। যা আছে তাকে বড়জোর একটা মাথা গোজার ঠাই বলা চলে। অবশ্য আমার মত অনেকেই সেই মাথা গোজার ঠাইয়ের দিকেই ছুট লাগায়। আমি তাদেরও ব্যস্ততা দেখি। একবার কোনোমত আপন ঠিকানায় পৌছাতে পারলেই হাঁপ ছেড়ে বাঁচে এরা।

সন্ধ্যার পর রাতটা কেউ আর উপভোগ করে না। সবাই সেই সময়টাতে বিশ্রাম জিনিষটাকে খুঁজে বেড়ায় নিজ নিজ ঘুমের দেশে। যদিও এই শহরে কেউ সত্যিকার অর্থে ঘুমাতে পারে কি না তা নিয়ে আমর যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। আমি চেয়ে চেয়ে দেখি এদের ঘুম নামের সেই অভিনয়। যে অভিনয় করে এরা নিজেকে বুঝ দেয় যে, এরাও শান্তিতে রয়েছে।

মাস শেষে যখন সবাই যখন হিসেব করতে ব্যস্ত সময় পার করে, আমি তখনও তাদের দিকে চেয়ে চেয়ে দেখি। কি নিপুণ ভাবে কষ্ট সহ্য করে এরা সঞ্চয় করে চলেছে। আধ বেলা খেয়ে পূর্ণ এক বেলার শান্তি কি করে যোগায়! তা দেখলে আশ্চর্য হওয়া ছাড়া কোন উপায় থাকে না। যখন আপনজনদের সাথে দূরালাপনিতে তারা যোগাযোগ করে, তাদের আবদার আর বায়না গুলি শোনে, তা নিয়ে কথা বলে। তখন কিন্তু তাদের চোখে মুখে একটা বিরক্তির ছাপ দেখা যায়। তবে সেই বিরক্তিটাকেও আমি তাদের উপভোগ করতে দেখি। এরা প্রতিটা জিনিষই উপভোগ করার এক অসীম ক্ষমতা নিয়ে জন্মায়।

এরপর যাদের এই শহরে একটা ছোট্ট হলেও আপন ঠিকানা বলতে কিছু আছে, আমি তাদেরও দেখে সময় পার করি। ক্লান্তিতে পরিশ্রান্ত হয়েও এরা আপন আলয়ে প্রবেশ করে সেই বিশাল একটা করে হাসি দেয়। সেই হাসির মূল্য এদের আজীবন কষ্টের পারিশ্রমিক থেকেও বেশি মনে হয়। ছোট্ট ছেলেটা কিংবা মেয়েটাকে কোলে জড়িয়ে সকল ক্লান্তি থেকে কেমন করে যেন পিছু ছাড়িয়ে নেয় এরা। চোখের পলকে যেন এদের শক্তি ফিরে আসে। নতুন উদ্যম নিয়ে এরা আনন্দে মেতে উঠে সেই ছোট্ট আলটার মধ্যে।

আমি চেয়ে চেয়েই দেখি। হাজারও ঝঞ্ঝা পেরিয়ে যখন কোন অপরিচিত রিকশাওয়ালা তার ছাউনিতে ফিরে যায়। আধো অন্ধকার আধো আলোর ঘরগুলিতে কেমন যেন একটা খুশির আমেজ ফিরে আসে। আমি দেখি তার সাত কি আট বছরের মেয়েটা কেমন করে তাকে জড়িয়ে ধরে। তার জন্যে কিছু একটা বোধয় আনার কথা বলেছিল, সেটা নিয়ে এসেছে কিনা তা জানতে চায়। রিকশাওয়ালা ক্লান্তির চেহারায় উজ্জ্বলতা ভরে সেই কাঙ্ক্ষিত বস্তুটা মেয়েটার হাতে তুলে দেয়। আর মেয়েটা সেই বস্তু নিয়ে ছুটে গিয়ে মা কিংবা পরিচিত কাউকে দেখাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আর রিকশাওয়ালা সেই ছুটাছুটি দেখেই কেমন করে যেন তার ক্লান্তিকে ভুলে যায়।

আমি দেখতে দেখতে সামনে এগিয়ে যাই। কোন এক ক্রসিঙের সামনে কিছু সময় অপেক্ষা করে দেখি পাশের ছাউনিটাতে লাইন ম্যান টেবিলটাতে মাথা রেখে ঘুমানোর চেষ্টায় ব্যস্ত। আর সেখানেও এক প্রশান্তির ছাপ। যেন এভাবে ঘুমিয়েই শ্রেষ্ঠ ঘুমটা অর্জন করা যায়। তারপর যখনই একটা হুইসিল কিংবা ঘণ্টার শুনতে পায় ওমনি ছুট লাগায় ক্রসিঙের দিকে। আশে পাশে চেয়ে দেখে নেয় কোন লাইনটা থেকে ট্রেনটা ছুটে আসছে। কি বিরক্তিটাই না থাকে তার চেহারাটায় তখন। কিন্তু যখনই আবার ফুরসুত পায় সেই টেবিলটাতে মাথা রাখার। ওমনি তার সকল বিরক্তি কোথায় যেন ঢাকা পড়ে যায়।

আমি ক্রসিং পেড়িয়ে সামনে এগিয়ে চলি। এবার মাথা উঁচু কোন বিল্ডিং এর ছোট্ট বারান্দায় চোখ আটকে যায় আমার। সেখানে কেউ একজন জ্বলন্ত সিগার হাতে নিয়ে দোল কেদারায় বসে আছে। একটু একটু দুলছে আর একটু একটু করে আগুনে সিগার পুরিয়ে নিচ্ছে। আমি তার চেহারা দেখতে পাই না, শুধুমাত্র একটা ছায়া চোখে পড়ে। কিন্তু সেই ছায়াটাতে কোন প্রশান্তির ছাপ খুঁজে পাই না। আমি অপেক্ষা করি, অপেক্ষা করতেই থাকি একটা প্রশান্তি সেই ছায়ামূর্তিটাতে দেখার জন্যে। ওদিকে ভোর প্রায় হয়ে আসে। মসজিদের মুয়াজ্জিন “আল্লাহু আঁকবার” বলে মুসুল্লিদের ডাকতে শুরু করে। কিন্তু ঐ ছায়ামূর্তিটার ছায়ায় আমি প্রশান্তির ছাপ দেখতে পাই না......






শনিবার, জুলাই ১৯, ২০১৪

হিজিবিজি ভাবনাঃ মনের গহীনে কিছু একটা পুড়ে চলেছে…


মানুষ শিখে যায়..
একা একা একটা সময় ঠিকই বাঁচতে শিখে যায়। শিখে যায় প্রিয়জন হারিয়ে এই পৃথিবীর আনন্দ খুঁজে নিতে। শিখে যায় ব্যস্ততার মাঝে নিজেকে ডুবিয়ে নিতে।

শুধু একলা রাতের কোন এক অজানা মুহূর্তে অন্তরের গহীনে শূন্যতা তাকে পুড়িয়ে যায়…..





মঙ্গলবার, জুলাই ১৫, ২০১৪

গল্পঃ ধ্বংসস্তূপে সব হারিয়ে


ইব্রাহীম, বয়স ৭ বছর। দুষ্ট দুষ্ট চেহারার চমৎকার মিশুক একটা ছেলে। তার বাবার বাজারে একটা ফলের দোকান আছে। মসজিদের সামনে যে খেলার মাঠটা রয়েছে তার দক্ষিণ দিকে তাদের কলোনি। রোজ বিকেলে আজিজ চাচার ছেলে ফারুকের সাথে ঐ মাঠেই খেলে সে। আজিজ চাচাও তাকে অনেক আদর করে। মাঝে মাঝে বাজার থেকে ফিরে আসার সময় ফারুক আর তাকে চকলেট দেয়।

সকালে মাদ্রাসা শেষ করে সে এখন স্কুলেও যায়। সেখানে কত মজার মজার জিনিষ শেখায়। আর খেলার জন্যে কত ধরনের ব্যবস্থা আছে। সময়টা হুট করেই শেষ হয়েযায়। ফিরে এসে তার ছোট বোনটার কাছে সারাদিন স্কুলে কি দিয়ে কেমন করে খেলে সেটা নিয়ে গল্প করে। তার বোনটা বড় বড় চোখ করে সেই গল্প শোনে আর আম্মুর কাছে গিয়ে বায়না করে তাকেও স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেবার জন্যে। আম্মু ওকে বলে আগামী বছরই ওকে ভর্তি করিয়ে দিবে। তারপর দুই ভাই বোন মিলে একসাথে স্কুলে যাবে।

গত কয়েকদিন ধরে স্কুল যাওয়া বন্ধ, বাড়ি থেকেও বাইরে যাওয়া বন্ধ ঘোষণা করেছে ইব্রাহীমের বাবা। বাইরে নাকি বেশ ঝামেলা চলছে এখন। ঝামেলার ব্যাপারটা ইব্রাহীম ঘরে থেকেও বুঝতে পারে। প্রায়ই বেশ জোরে জোরে শব্দ হয় দূর কোথাও। শব্দের সাথে অল্প অল্প ভূমিকম্প অনুভব করে সে। তার বাবা আর আজিজ চাচা বাইরে বসে কি সব খারাপ সময়ের কথা আলোচনা করে। ঐ ধুপ ধুপ শব্দের সাথে নাকি অনেকের বাড়ি ঘর ভেঙ্গে যাচ্ছে। অনেকে নাকি মারাও যাচ্ছে। হসপিটালে নাকি আহতদের জায়গা দিতে পারছে না ঠিক ভাবে। আশে পাশের অনেকেই নাকি তাদের স্কুলটাতে জায়গা নিয়েছে।

চাচা আরও বলল বাবা যাতে সময় থাকতে সবাইকে নিয়ে আমাদের স্কুলটাতে উঠে আসে। আমাদের কলোনিটা নাকি আর নিরাপদ না। বাবা বলে, সবার যা হবে আমাদেরও তাই হবে। দেখা যাক আর কয়টা দিন। এদিকে নাকি ওরা নাও নজর দিতে পারে। আজিজ চাচা বাবার কথায় তত আশ্বস্ত হতে পারে না। চিন্তিত মুখে বিদায় নিয়ে ফিরে যায়।

আম্মাও আজিজ চাচার কথা গুলি শুনেছে ঘরের ভেতর থেকে। বাবাকে বলল আজিজ চাচার কথা শোনার জন্যে। কয়দিন স্কুলে অবস্থান নিয়ে পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হলে আবার ফিরে আসার কথা। বাবা বলে আরও কয়েকদিন দেখে তারপর একটা সিদ্ধান্ত নিবে। এরপর রাতের খাবার খেয়ে আমরা সবাই শুয়ে পড়লাম।

প্রচণ্ড শব্দে ঘুম ভেঙ্গে যায় ইব্রাহীমের। তার বাবার সাথে ঘুমায় সে। বাবা তাকে জাপটে ধরে বাইরে নিয়ে আসে। কলোনির ভেতরে অনেক কোলাহল, সবাই যার যার মত ছুটে বাইরে যাবার চেষ্টা করছে। এরই মাঝে আজিজ চাচা আর তার পরিবারকে দেখে বাবা আমাকে আজিজ চাচার কাছে দিয়ে তাকে বলল, “ওকে নিয়ে এগুতে থাকেন। আমি আপনার ভাবিকে নিয়ে আসছি।” চাচা বাবার কথায় সম্মতি দিয়ে একহাতে ইব্রাহীম আর অন্য হাতে ফারুককে নিয়ে ভীর ঠেলে সামনের দিকে এগুতে থাকে।

খুব বেশি দূর এগুতে পারলো না তারা। তার আগেই প্রচণ্ড শব্দের সাথে ধাক্কা অনুভব করে ইব্রাহীম। চাচার হাতটা খুব জোড়ে ধরার চেষ্টা করে সে। কিন্তু কেমন করে জানি ছুটে যায়। এর পরপরই আরও একটা শব্দ, সেটা আগের টা থেকেও খুব জোরে। তারপর শুধু উল্টে পড়ে যাওয়ার কথাই মনে আছে তার।

চোখ মেলে দেখে ফারুকের আম্মু তার দিকে ঝুঁকে তাকিয়ে আছে। মাথার বাম পাশে যন্ত্রণা হচ্ছে অনেক। ঝি ঝি একটা শব্দ এখনো কানে লেগে আছে। চোখ মেলতেই আন্টি জোরে চিৎকার দিয়ে বললও “জ্ঞান ফিরেছে!” আজিজ চাচাকে আন্টির চিৎকার শুনে এক কোন থেকে ছুটে আসলো। কপালে হাত দিয়ে দেখল, বলল আরও কিচ্ছুক্ষণ শুয়ে থাকতে।

চোখ ঘুরিয়ে চেয়ে দেখল তাদের স্কুলের দোতালার সিঁড়ির পাশে যে বড় রুমটা ছিল, ওটাতে আছে তারা। তারা একা নই, কলোনির অনেকেই আছে। সবাই কেন জানি কান্না করেই চলেছে। গুমোট একটা পরিবেশ এখানে। তার পাশেই আন্টিকে জড়িয়ে ধরে ফারুকও ভয় পাওয়া চোখে তাকিয়ে দেখছে সবাইকে। ফারুকের গালে কালো একটা দাগ দেখতে পেলো সে। তারপর হুট করেই আবার কেমন যেন সব অন্ধকার হয়ে আসলো চারপাশে।

এরপর আবার চোখ মেলে দেখে দিনের আলো দেখা যাচ্ছে। সে এখনো আন্টির কোলেই শুয়ে আছে। আর আন্টি দেয়ালে ঘেঁষে ফারুককে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। আস্তে করে উঠে বসলো, আশে পাশে যারা ছিল তাদের প্রায় সবাই ঘুমাচ্ছে। বাইরে কয়েকজন আছে, তাদের ফিসফিসে আওয়াজের কথা শোনা যাচ্ছে। উঠে দিয়ে দরজার সামনে দাড়ায় ইব্রাহিম। তাকে দেখেই আজিজ চাচা ছুটে এসে সামনে হাঁটু মুড়ে বসলো। জিজ্ঞাস করলো খারাপ লাগছে কিনা। উত্তরে বলল “এখন আর মাথায় যন্ত্রণাটা হচ্ছে না”। এদিক সেদিক তাকিয়ে চাচাকে জিজ্ঞাস করল “আব্বু আম্মু ওনারা কোথায়?” আজিজ চাচা ইব্রাহীমকে জাপটে ধরে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়ল শুধু…..






শুক্রবার, জুলাই ১১, ২০১৪

হিজিবিজি ভাবনাঃ পরিবর্তিত



মুগ্ধ নয়নে অভ্রনীল আকাশ দেখতে দেখতে খালি পায়ে সবুজ ঘাস মাড়িয়ে সামনে এগিয়ে চলতো যেই ছেলেটা; সে এখন অনেক বড় হয়ে গেছে। পরিবর্তন হয়েছে তার পারিপার্শ্বিক অবস্থার। এখন সে আর আগের মত খালি পায়ে আর ঘাস মাড়ায় না। তার পায়ে এখন জুতো থাকে, যদিও রং তার অনেক আগেই মলিন হয়ে গেছে।

এখন সে পিচ-ঢালা রাস্তায় ধরে শুধু সামনেই এগিয়ে যায়। পুরনো দিনের মত মুগ্ধতা নিয়ে আর অভ্রনীল আকাশটাকে দেখে না…….






মঙ্গলবার, জুলাই ০৮, ২০১৪

হিজিবিজি ভাবনাঃ ইচ্ছেদের মুক্তির দাবি



এরপর ইচ্ছেরা এসে বলল, মুক্তি চাই! মুক্তি চাই!! মুক্তি চাই!!!

আমি অবাক হয়ে জানতে চাইলাম-
কিসের মুক্তি?
কোন বিষয় থেকে মুক্তি?
আর কার থেকে বা মুক্তি প্রয়োজন তোমাদের?

উত্তরে ইচ্ছেরা বলল-
তোমার আকাশ পাতাল চিন্তা আর ভাবনা গুলিকে আমাদের উপর আর ইচ্ছে রূপে চড়িও না। ঐসব চিন্তা-ভাবনার ভর আমরা আর সইতে পারছি না। তোমার ঐসব চিন্তাকে যখন আমরা তোমার জন্যে পূর্ণতা পাবার আশা হিসেবে তৈরি করতে যাই তখন বুঝতে পারি, ওটা অসম্ভব। তাই তোমার ঐ সব চিন্তা আর ভাবনা গুলি থাকে আমাদের মুক্তি দাও।

মুক্তি চাই তোমার আকাঙ্ক্ষা গুলি থেকে। যেই আকাঙ্ক্ষা গুলি তুমি তোমার ইচ্ছের নামে মনে মনে পেলে পুষে বড় করছ। এরপর কোন আকাঙ্ক্ষা পূর্ণতা না পেয়ে হৃদয় চূর্ণ হলে সেই ইচ্ছেদেরই গালি দাও তোমার ঐ মন থেকে। এবার তোমার ঐসব আকাঙ্ক্ষা গুলি থেকেও আমাদের মুক্তি দাও। তোমার মন থেকে দেয়া অভিশাপ গুলি আমাদের আর সহ্য হচ্ছে না।

মুক্তি চাই তোমার থেকে। তুমি স্বপ্ন-বাজ, তোমার স্বপ্নের পরিসীমা তোমার অতীত, তোমার বর্তমান আর তোমার ভবিষ্যৎ থেকেও বিশালাকারের। তুমি জীবনভর এই সব ছোট ছোট ইচ্ছের নুড়ি জমা করে তাতে দাড়িয়েও সেইসব বিশালতার ছোঁয়া পাবে না। পাবে না মিল কোন প্রাপ্তিতে। এইবার আমাদেরকে তোমার থেকেই মুক্তি দাও।

এরপর…..?

এরপর হয়তো তুমি ঠিকই স্বপ্ন বুনবে, কিন্তু সেটাকে পূর্ণতায় না পেলে তোমার অপূর্ণ ইচ্ছের নামে অন্তত তিরস্কার করবে না।







রবিবার, জুলাই ০৬, ২০১৪

হিজিবিজি ভাবনাঃ অপেক্ষমাণ



অন্ধকার এই রাত্রি যাপন, কার অপেক্ষাতে?
– জানা নেই।
জানা আছে এই মহাকালকে সাক্ষী রেখে এমনই লক্ষ কোটি যুবক জেগে জেগে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে। বিসর্জন দিয়েছে চোখের বিশ্রাম আর মনের শান্তিটাকে। অজানা কোন উদ্ভট ইশারার অপেক্ষায় প্রহর গুনেছে, এই অন্ধকার কোনে বসে।

কিন্তু হায়!
অপেক্ষা শুধু অপেক্ষার প্রহরই বাড়িয়ে দিয়ে গেছে, দিয়ে গেছে যন্ত্রণা অশান্ত এই মনটা জুড়ে। কেউ এগিয়ে আসেনি তার সেই যন্ত্রণা ঘোচাতে কিংবা একটু সান্ত্বনা দিতে। উল্টো “আতেল” আর “বোকা” বলে খেতাব দিয়ে গেছে যখনই পেয়েছে সুযোগ ঐ দিনের আলোতে।

নেই, সত্যিই কিছু বলার নেই।
কারণ, এখনো সেই যুবক অপেক্ষা করে।
অপেক্ষা, মহাকালকে সাক্ষী রেখে সেই দীর্ঘ অপেক্ষা……






সোমবার, জুন ০৯, ২০১৪

ইরেজার থেকে আত্ম উপলব্ধি


ছোটবেলা চাচার সাথে লাইব্রেরি স্ট্যাশনারি থেকে খাতা, পেন্সিল, ইরেজার, সার্পনার এই সব কিনতে যেতাম (পড়ালেখার দেখভালের সকল দায়িত্ব ছিল এই কাকার উপর)। ঐ সময় সাধারণ মানের HB পেন্সিলের দাম ছিল ৪ টাকা। আর ইরেজার ছিল দুই ধরণের। একটার দাম ছিল ৩ টাকা আর অন্যটার দাম ছিল ৫ টাকা।

দুইটাই কিন্তু ইরেজার, তবুও দামের তফাতের কারণটা বুঝতাম না। কাকা অবশ্য আমার জন্যে ৫ টাকা দামের ইরেজারটাই সবসময় কিনত। আমি তার কাছে একবারদোকানে গিয়ে জিজ্ঞাস করলাম- "যদি একই জিনিষ কম দামে পাওয়া যায় তাহলে কেন আমরা বেশি দামের টা নেই?" কাকা হুট করে কোন জবাব দেয়নি, প্রশ্নটা শুনে সুন্দর করে হেসেছিল শুধু। তারপর দোকানিকে একটা ৩ টাকার ইরেজার আরেকটা ৫ টাকার ইরেজার দিতে বলল। আর দুইটাই কিনে নিয়ে আসল।

এইবার আমাকে ব্যবহার করার জন্যে ঐ ৩ টাকার ইরেজারটা দিল। লেখা ভুল হবার পর যখন ইরেজার দিয়ে লেখার উপর ঘষলাম তখন দেখলাম এই ইরেজারটা আগে ব্যবহৃত ইরেজার থেকে অনেকটা ভিন্ন, যদিও দেখতে প্রায় একই রকম। এটি আগে ব্যবহৃত ইরেজারটা থেকে অনেকটা শক্ত আর যখন লেখার উপর ঘষছি তখন আগের ইরেজারটার মত খুব সহজেই দাগ মুছতে পারছে না। উপরন্তু যতটুকু জায়গায় ঘষছি ততটুকু জায়গা কেমন কালো হয়ে যাচ্ছে। আর বার বার ঘসার ফলে লেখা কাগজটা ছিঁড়ে যাবার মত অবস্থায় গিয়ে পৌঁছেছে।

এরপর কাকা ৩ টাকার ইরেজারটা নিয়ে সেই ৫ টাকার ইরেজারটা আবার দিলেন। ইরেজারটা ধরার সাথে সাথেই বুঝলাম এটা কতটা নরম। আর এখন প্রয়োজনের সময় ইরেজার ব্যবহার করতে আর বেগও পেতে হচ্ছে না। খুব সহজেই ভুল গুলি মুছে ফেলতে পারছি। খাতার পৃষ্ঠারও কোন ক্ষতি হচ্ছে না, যেখানে মোছার জন্যে ঘষা দিয়েছিলাম ঐ স্থানেও কোন কালো দাগ থাকছে না।

আমার সেই প্রশ্নের উত্তরটা কাকা মুখে মুখে না দিয়ে একেবারে আমাকে দিয়েই অনুধাবন করিয়ে ছিলেন।

এর অনেকদিন পর আরেকটা ব্যাপার ঐ ছোট্ট ঘটনা থেকে বুঝতে পেরেছিলাম।
জীবনে চলতে গিয়ে অনেক ভাবেই অনেক স্থানে আমরা ভুল করে ফেলি। আর সেই ভুল গুলি অনেক সময় মোচন করেই তারপর সামনে এগুতে হয়। যখন আমরা ভুল গুলিকে সাধারণ ভাবে কম গুরুত্ব দিয়ে উপলব্ধি করার চেষ্টা করি তখন কিন্তু অবস্থাটা ঐ ৩ টাকার ইরেজারের মতই হয়। ভুলটা আদতে মোচন হয় না, কিন্তু জটিলতা আরও বাড়িয়ে দেয়।

কিন্তু যদি ভুলটার সত্যিকারের মর্ম বুঝতে পারি আর সেটাকে ততটুকুই গুরুত্ব দিয়ে উপলব্ধি করতে পারি তখন সেটা মোচন করাও অনেকটা সহজ হয়, আর পরিপার্শ্বিক ক্ষতিরও কোন সম্ভাবনা থাকে না। উল্টো ভুল না করে কিভাবে এরপর এগুতে হবে সেই ব্যাপারেও নিজের বিবেক অনেকটা সচেষ্ট হয়ে যায়।

মূল ব্যাপারটা হল আত্ম উপলব্ধি। কোনটা ৩ টাকার ইরেজারের মত আর কোনটা ৫ টাকার ইরেজারের সমমানের সেটা নির্ণয় করে তারপর কাজ করতে হবে....