সোমবার, জুন ০৯, ২০১৪

ইরেজার থেকে আত্ম উপলব্ধি


ছোটবেলা চাচার সাথে লাইব্রেরি স্ট্যাশনারি থেকে খাতা, পেন্সিল, ইরেজার, সার্পনার এই সব কিনতে যেতাম (পড়ালেখার দেখভালের সকল দায়িত্ব ছিল এই কাকার উপর)। ঐ সময় সাধারণ মানের HB পেন্সিলের দাম ছিল ৪ টাকা। আর ইরেজার ছিল দুই ধরণের। একটার দাম ছিল ৩ টাকা আর অন্যটার দাম ছিল ৫ টাকা।

দুইটাই কিন্তু ইরেজার, তবুও দামের তফাতের কারণটা বুঝতাম না। কাকা অবশ্য আমার জন্যে ৫ টাকা দামের ইরেজারটাই সবসময় কিনত। আমি তার কাছে একবারদোকানে গিয়ে জিজ্ঞাস করলাম- "যদি একই জিনিষ কম দামে পাওয়া যায় তাহলে কেন আমরা বেশি দামের টা নেই?" কাকা হুট করে কোন জবাব দেয়নি, প্রশ্নটা শুনে সুন্দর করে হেসেছিল শুধু। তারপর দোকানিকে একটা ৩ টাকার ইরেজার আরেকটা ৫ টাকার ইরেজার দিতে বলল। আর দুইটাই কিনে নিয়ে আসল।

এইবার আমাকে ব্যবহার করার জন্যে ঐ ৩ টাকার ইরেজারটা দিল। লেখা ভুল হবার পর যখন ইরেজার দিয়ে লেখার উপর ঘষলাম তখন দেখলাম এই ইরেজারটা আগে ব্যবহৃত ইরেজার থেকে অনেকটা ভিন্ন, যদিও দেখতে প্রায় একই রকম। এটি আগে ব্যবহৃত ইরেজারটা থেকে অনেকটা শক্ত আর যখন লেখার উপর ঘষছি তখন আগের ইরেজারটার মত খুব সহজেই দাগ মুছতে পারছে না। উপরন্তু যতটুকু জায়গায় ঘষছি ততটুকু জায়গা কেমন কালো হয়ে যাচ্ছে। আর বার বার ঘসার ফলে লেখা কাগজটা ছিঁড়ে যাবার মত অবস্থায় গিয়ে পৌঁছেছে।

এরপর কাকা ৩ টাকার ইরেজারটা নিয়ে সেই ৫ টাকার ইরেজারটা আবার দিলেন। ইরেজারটা ধরার সাথে সাথেই বুঝলাম এটা কতটা নরম। আর এখন প্রয়োজনের সময় ইরেজার ব্যবহার করতে আর বেগও পেতে হচ্ছে না। খুব সহজেই ভুল গুলি মুছে ফেলতে পারছি। খাতার পৃষ্ঠারও কোন ক্ষতি হচ্ছে না, যেখানে মোছার জন্যে ঘষা দিয়েছিলাম ঐ স্থানেও কোন কালো দাগ থাকছে না।

আমার সেই প্রশ্নের উত্তরটা কাকা মুখে মুখে না দিয়ে একেবারে আমাকে দিয়েই অনুধাবন করিয়ে ছিলেন।

এর অনেকদিন পর আরেকটা ব্যাপার ঐ ছোট্ট ঘটনা থেকে বুঝতে পেরেছিলাম।
জীবনে চলতে গিয়ে অনেক ভাবেই অনেক স্থানে আমরা ভুল করে ফেলি। আর সেই ভুল গুলি অনেক সময় মোচন করেই তারপর সামনে এগুতে হয়। যখন আমরা ভুল গুলিকে সাধারণ ভাবে কম গুরুত্ব দিয়ে উপলব্ধি করার চেষ্টা করি তখন কিন্তু অবস্থাটা ঐ ৩ টাকার ইরেজারের মতই হয়। ভুলটা আদতে মোচন হয় না, কিন্তু জটিলতা আরও বাড়িয়ে দেয়।

কিন্তু যদি ভুলটার সত্যিকারের মর্ম বুঝতে পারি আর সেটাকে ততটুকুই গুরুত্ব দিয়ে উপলব্ধি করতে পারি তখন সেটা মোচন করাও অনেকটা সহজ হয়, আর পরিপার্শ্বিক ক্ষতিরও কোন সম্ভাবনা থাকে না। উল্টো ভুল না করে কিভাবে এরপর এগুতে হবে সেই ব্যাপারেও নিজের বিবেক অনেকটা সচেষ্ট হয়ে যায়।

মূল ব্যাপারটা হল আত্ম উপলব্ধি। কোনটা ৩ টাকার ইরেজারের মত আর কোনটা ৫ টাকার ইরেজারের সমমানের সেটা নির্ণয় করে তারপর কাজ করতে হবে....








বৃহস্পতিবার, মে ১৫, ২০১৪

আমার মা, আমার সবকিছু.....



স্নায়ু-চাপের খুব বড় ধরণের একটা অসুস্থতা দেখা দিয়েছিল একবার। তখন আমি সবে মাত্র প্রাইমারি থেকে হাই স্কুলে উঠেছি। সময়টাও বার্ষিক পরীক্ষার আগ দিয়ে। না স্নায়ু-চাপের কারণ পড়ালেখা কিংবা পরীক্ষার জন্যে নয়। কারণটা আমার পিতৃতুল্য কাউকে হারানো। খুব মনে আছে, আমি পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে খুব কষ্টে ঘাড়ের ব্যথা সহ্য করে বাড়ির সামনে পর্যন্ত পৌঁছেই "আম্মা" বলে চিৎকার দিয়েই জ্ঞানহারিয়েছিলাম। এরপর প্রায় ঘণ্টা ৩ আমার কোন ধরণের স্মৃতি নেই। ঘণ্টা তিন পর নিজেকে ঘরের খাটে আর আমার চারপাশ জুড়ে পুরো ঘর কানায় কানায় ভরা আত্মীয়-স্বজন আর পাড়া-প্রতিবেশী সমেত আবিষ্কার করি।

এর মধ্যেই আব্বা ঢাকা থেকে ডাক্তার ডেকে নিয়ে এসেছেন (ঐ সময় মোবাইল ফোন ছিল না, আর যোগাযোগ একমাত্র ল্যান্ডফোন দিয়ে করতে হতো। সেটাও তখন আমাদের নেই। বাজারে থেকেই ঢাকায় অবস্থিত স্বল্পপরিচিত এক চাচাকে ফোন করে তাকে ডাক্তার নিয়ে আসার অনুরোধ করেন আব্বা)। ডাক্তার আমার পালস কিছুক্ষণ পরপর চেক করছে আর ফ্যাকাসে মুখ করে বার বার ঘড়ি দেখছে। জেগে উঠার মিনিট ১০ পার হবার আগেই আবার ব্যথা শুরু হয়, আর প্রায় সাথে সাথেই জ্ঞান হারাই ২য় বারের জন্যে। এর পর জ্ঞান ফিরে অনেক পরে, প্রায় এশার আজান হয়ে যাবার পর। এই সময়ের মাঝে ভিটামিন আর বিভিন্ন ঔষধ সহকারে স্যালাইন দেয়া হয় আমাকে। ঐদিন রাতে আর কোন সমস্যা হয়নি, সে যাত্রায় এতটুকুতেই পার পেয়েছিলাম।

এবার আম্মার কথায় আসি। আমি যখন দুপুরে "আম্মা" বলে চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে রাস্তার উপরই পড়ে যাই তখন বাড়িতে আম্মা আর দাদী ছাড়া কেউ ছিল না। চিৎকার শুনে আম্মাই দৌড়ে বেরিয়ে আসে আর রাস্তা থেকে ঘরে নিয়ে যায়। কেউ একজন আব্বাকে খবর দিতে বাজারে যায় আর আব্বা তখনই ডাক্তার আনার জন্যে চাচাকে ফোন করে বাসায় ফিরে আসে। ততক্ষণে আম্মা আমার মাথায় বালতি কয়েক পানি ঢেলে একাকার করে ফেলেছেন (ঐ সময় চাপকল দিয়ে পানি তুলে ব্যবহার করতে হতো)। তারপর তার কোলে আমার মাথা রেখে সেই যে বসেছেন তারপর একেবারে পরদিন সকালে আমার ঘুম ভাঙ্গার পর সেই বসা থেকে উঠেছেন।

এরপর কি করেছেন তার ছোট করে বলতে গেলেও অনেক বড় হয়ে যাবে। শুধু এতটুকু বলি, আম্মা এখনো যদি ভাত মাখিয়ে না দেয় তবে খেতে পারি না। এমন তো কিছু না সেই একই রান্না তবুও আম্মা যদি ভাত মাখিয়ে না দেয় তবে তা খেয়ে ঐ স্বাদ পাই না যেটা আম্মা মেখে দিলে পাই।

এখনো বাইরে কোথাও গেলে গড়ে ঘণ্টা খানিকের ভেতরে আম্মা একবার ফোন করেই। আর সেটা রিসিভ না করতে পারলে বাসায় আসলে ঝাড়ি এখনো শুনতে হয়। প্রতিটা প্রয়োজনের জিনিষ এখনো আম্মার কাছেই আবদার করি আর আম্মাও ছোটবেলার মত এখনো সেগুলি পূরণ করার যথাসাধ্য চেষ্টা করে। আমি সাধারণত কারো সাথে তর্ক করতে পারি না। তাই মাঝে মাঝে রাগ করে খাওয়া-দাওয়া কথা-বার্তা বন্ধ করে দেই। কিন্তু সেখানেও আম্মা হাজির। রাগটা যদি তার সাথেও করি বকা দিয়ে হোক আর রাগ ভাঙ্গানোর কথা দিয়েই হোক, আম্মাই সেটা করে।

জানিনা তার ত্যাগ আর ভালোবাসার ঋণী হয়ে কতটুকু কি করতে পারবো তার জন্যে, তবুও প্রার্থনা আল্লাহ যেন আমার দ্বারা কখনো তার মনে কোন কষ্ট না দেয়।
ভালো থাকুক আম্মা'রা, ভালোবাসায় থাকুক তাদের সন্তানেরা......


══════════════════════════

মা'য়ের সম্মান রক্ষার্থে কিছু পরিশ্রমী ছেলে-মেয়ে অনলাইনে কাজ করছে। তাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য জনপ্রিয় সার্চ-ইঞ্জিন গুলি থেকে পবিত্র "মা" শব্দটি নিয়ে নোংরামি গুলি দূর করা। সেই উদ্দেশ্যে তারা একটি ইভেন্ট খুলেছে। কিন্তু শুধু দূর করলেই তো আর দূর হবে না। আমাদের সেই খালি স্থান নিজেদের ভালো ভালো লেখা দিয়ে ভরাট করতে হবে। কত বিষয় নিয়েই তো প্রতিদিন কত-শত কিছু লিখি। মা'কে নিয়েও না হয় লিখলাম নিজেদের মত করে। তাতে মা'য়ের সম্মান ও কিছুটা রক্ষা করা হবে আর নিজের কাছে মা'য়ের মূল্যবোধও পরিষ্কার হবে।

ইভেন্ট লিংক__: http://goo.gl/YdXtEr
পেইজ লিংক__: https://www.facebook.com/ma.valobasi
ব্লগ লিংক_____: http://www.mayermomota.blogspot.com/

ইভেন্টে মা'কে নিয়ে লেখা গুলি পোষ্ট করলে তারা পেইজ আর ব্লগে তা পোষ্ট করবে আপনার নামেই। চলুন না দেখি ভালো কিছু করা যায় কিনা একসাথে....

মঙ্গলবার, মে ১৩, ২০১৪

অনুগল্প - না বলা বিদায় বেলা




সুমন আর ফাহিমা, কলেজের কে চেনে না তাদের? ভিন্ন ভিন্ন শিফট, আর সেই ভিন্ন ভিন্ন শিফটেই নিজেদের দুষ্টামির জন্যে তারা সেরা। স্যারদের কটু কথা, হুমকি, নালিশ, গার্ডিয়ান ডেকে বিচার কোনটাই কাবু করতে পারেনি তাদের। মাস ৬ চলার পর স্যরেরাই তাদের দুষ্টামি নিয়ন্ত্রণে আনার হাল ছেড়ে দেয়। না ছেড়েই বা কি করবে? পড়ালেখায় তো আর দুষ্টামির জন্যে ফাঁকি দিচ্ছে না। ক্লাস টেস্ট, কোয়াটার টেস্ট সব কিছুতেই নিজেদের অবস্থান উপরের দিকেই ধরে রেখেছে তারা। সমস্যাটা যখন শুধুই দুষ্টামির তাহলে একটু ছাড় দেয়াই যায়, এই ভেবে ক্ষান্ত দিল তারা।

নিজেদের মধ্যে পরিচয় শুভ'র মাধ্যমে। দু'জনেরই কমন ফ্রেন্ড শুভ। ফাহিমা'র স্কুল ফ্রেন্ড আর সুমনের সাথে কলেজে পরিচয় হয় শুভ'র। কেমিস্ট্রি স্যর মিজানের কাছে তারা কোচিং করে একসাথে। শুভ'ই ডেকে নিয়ে ফাহিমার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় সুমনের। ফাহিমার সাথে গল্প করার সময় সুমনকে ডেকে বলে- "দোস্ত! এইটা আমার দোস্ত। এইবার পরিচিত হয়ে নে।" এই শুভ'টাও কম ফাজিল না, ফামিহা এমনিতেই দুষ্টামির সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। মুখের উপরই বলে ফেললো- "তোর দোস্ত মানে তো আমারও দোস্ত। তাই না সুমন দোস্ত?” সুমন এই কথার পর আর যায় কোথায়। দুষ্টামিতে তো আর সেও কম যায় না। সাথে সাথেই উত্তর- "আব্বে দোস্ত! এইটা আবার কইতে হয় নাকি? আমরা সবাই তো গোল্লাছুট খেলার দোস্ত। কোন কথা নাই.." দুষ্টামিতে সবাই এক্সপার্ট সেইটা এক মুহূর্তেই বোঝা হয়ে যায় সবার।

কোচিং এ ও দুষ্টামি চলতো সমান তালে। তবে এখানে দুষ্টামির সাথে পড়ালেখার সিরিয়াসনেস একটু কলেজের তুলনায় বেশি ছিল সবার। নোট শেয়ারিং, কোচিং ক্লাস ডিসকাস আর মাঝে মাঝে ভিন্ন ভিন্ন স্যারদের প্রশ্ন জোগাড় করে নিজেদের মত করে প্রশ্নের গুরুত্ব খুঁজে নিতো তারা। ভালোই চলছিলো, কোচিং এর পর একটু ঘোরাঘুরি, ফাস্টফুড আর কফি শপেও আড্ডা চলতো তাদের। বন্ধুত্বটা একটু বেশি বেশি মনে হয়েছিল সকলের। আসলে সকলের না নিজেদেরও মনে হচ্ছিল। কিন্তু কেউ কখনো কাউকে কিছুই বলেনি। হয়তো বন্ধুত্বটা নষ্ট করতে চায় নি।

দেখতে দেখতে ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল চলে এল পড়ার চাপ বেড়ে গেলো সকলেরই। আড্ডা ইদানীং একেবারেই কম হয়। তবে প্রয়োজনে মাঝে মাঝে মোবাইল ফোনে আলাপ চলে। তারপর পরীক্ষা, অনেক টেনশন দুষ্টামি আর বিরক্তি নিয়ে পরীক্ষাটা ভালোয় ভালোয় শেষ করলো সকলেই। মাঝে ১২ দিন ছুটি ঘোষণা করলো কলেজ। ১২ দিন নিজেদের মত করে ছুটি কাঁটালো সবাই। যোগাযোগ ঐরকম করে আর করা হয়নি কারো সাথেই। ১২ দিন পরে আবার কলেজ আর কোচিং এর রুটিন মাফিক দৌড়াদৌড়ি শুরু। কিন্তু ৩ দিন হয় ফাহিমার কোন দেখা নেই। শুভ আর সুমন বার ২-৩ ফোনও দিয়েছিল, রিসিভ করেনি কিংবা কল ব্যাক ও করেনি সে।

আজ খোঁজ নিবো, কাল খোঁজ নিবো করতে করতে ৬ দিনের মাথায় ফাহিমাই ফোন দিয়ে সুমন আর শুভ'কে পরিচিত ফাস্টফুডে আসতে বলল বিকেলে। কি হয়েছে জানতে চাইলে তার উত্তর না দিয়ে কৌশলে এড়িয়ে গেল ফাহিমা। কোচিং শেষ করে বিকেল ৫ টার কিছু পর সুমন আর শুভ দুজনেই ফাস্টফুডে গিয়ে পৌঁছল। সারপ্রাইজটা তখনও অপেক্ষা করছিল তাদের জন্যে। তারা রেগুলার যে টেবিলটায় বসে আড্ডা দেয় সেখানে ফাহিমা আগে থেকেই অপেক্ষা করছে তাদের।

শুভ সোজা গিয়ে ফাহিমার ঘড়ে চেপে ধরেই বলতে শুরু করল-

» শয়তান! এতদিন কই ছিলি? খেয়ে দেয়ে তো মোটা হয়ে গেছিস। ফোন দিলাম এতগুলি করে খাওয়ার তালে ঐটাও শুনতে পাস নাই?

» আরে ছাড়! আজব তো! আগে কথা তো শুনবি। কোথায় জিজ্ঞাস করবি কেমন আছি না আছি। তা না, আগেই ঘাড়ে হাত।

» তোর কথা আর কি শুনবো? তুই তো খেয়ে দেয়ে মোটা হয়েই এসেছিস। ফর্সাও হয়েছিস কিছুটা।

» এই শয়তান, তোরে জিজ্ঞাস করছি আমি সুন্দর হইছি না মোটা হইছি?


বলেই উল্টা হাতে দিল শুভর পেটে এক কুনি। শুভ ফাহিমার ঘাড় ছেড়ে সুমনের পাশের চেয়ারটায় বসলো। এবার সুমন জিজ্ঞাস করলো-

» কি হয়েছে তোমার? আসলে না ফোনও রিসিভ করলে না, মেজর কোন সমস্যা ছিল নাকি?

» আস্তে ধীরে বৎস,আগে ঠাণ্ডা হও, ঠাণ্ডা খাও তারপর বলছি।

ইশারায় ওয়েটার ডাকল ফাহিমা, ওয়েটার আসলে তাকে বলল ৪ টা বার্গার আর ৪টা ঠাণ্ডা কিছু দেবার জন্যে। ওয়েটার চলে যাবার পর শুভ টিটকারি দিয়ে বলল-

» দেখ। এই কয়দিনেই খাওয়ার রুচি কত বেড়েছে মুটি টার। এখন ওর একারই ২টা বার্গার লাগে।

» শুভ!! একদম বাজে কথা বলবি না বললাম!! আর একজন আসছে, অর্ডারটা তার জন্যেই করেছি।

» আরও একজন? ঐটা আবার কে? কোন সুন্দরী কাজিন নাকি তোর??

» তোদের এই এক সমস্যা। কেউ আসবে শুনলেই সুন্দরী কাজিন আর বান্ধবী খুঁজিস তোরা।

» তো! আর কি ভাববো? আমরা তো স্ট্রেইট মাইন্ডের.... বুঝস না।

» হুম, বুঝিই তো তোরা কত বড় স্ট্রেইট শয়তান।

» এখন বল কে সেটা?

» আসুক, আসলেই বুঝতে পারবি।

অর্ডার দেয়া খাবার আসার আগেই একজন যুবক ফাস্টফুড শপে প্রবেশ করে আর ঠিক ফাহিমাদের টেবিলের সামনে এসে দাড়ায়। ফাহিমা তাকে দেখেই হেসে দেয়, আর বলে-

» সুমন, শুভ এ হচ্ছে ইমরান, পরিচিত হও। আর এরা দুইজন আমার খুব ভালো বন্ধু।

» হ্যালো সুমন এন্ড শুভ। নাইস টু মিট ইউয়্যু।

» নাইস টু মিট ইউয়্যু ঠ্যু, প্লিজ হ্যাভ এ সিট।

ইমরান নামের যুবকটি কোন ইতস্তত ছাড়াই ফাহিমার পাশের চেয়ারে বসে পড়লো। এর পর ফামিহা বলতে শুরু করলো-

ফাহিমাঃ আমি এই কয়দিন আসি নি বা তোদের সাথে যোগাযোগ করি নি একটা বিশেষ কারণে।

শুভঃ কি কারণ?

ফাহিমাঃ এই যে ইমরান নামের ভদ্র চেহারার মানুষটা দেখছিস, এ আসলে যতটা দেখতে ভদ্র মনে হয় ততটা ভদ্র না। এই কয়দিন এই অল্প ভদ্র লোকটাকে একটু ভদ্রতা শিখিয়েছি।

শুভঃ মানে!!

ফাহিমাঃ মানে হচ্ছে.... পরীক্ষা শেষেই হুট করে এই অল্প ভদ্র লোকটার নামে আমাকে তিন কবুল পড়তে হয়েছে।

সুমনঃ কনগ্রাচুলেশন দোস্ত। কিন্তু এইভাবেই চেপে গেলি? আমাদের অন্তত একটা ফোন দিতে পারতি।

ফাহিমাঃ আরে কিভাবে দিবো। পরীক্ষা শেষ করে বাসায় পৌঁছেই আম্মুর মুখে শুনি এমন একটা ঘটনা। আমি নিজেই তো কিছু বুঝে উঠার আগে আমাকে কবুল বলিয়ে নিলো এই হতচ্ছাড়া লোকটা। আর তারপর গতকালই কেবল সিলেট ট্যুর থেকে ফিরলাম। আর এসেই প্রথমে তোদের সাথে যোগাযোগ করেছি।

সুমনঃ যাই হোক পার্টি কিন্তু পাওনা। মাফ হবে না কোন.....

ইমরানঃ মাফ চাইছে কে? সামনের সপ্তায় রিসিপশন অনুষ্ঠান হচ্ছে ঘটা করে। আপনারা দুইজন তার দুইদিন আগে থেকে ওখানে থাকবেন। কি থাকবেন তো??

সুমনঃ সে আবার জিজ্ঞাস করতে?

ফাহিমাঃ ঐক! তাহলে আমার দিক থেকে কে যাবে?

সুমনঃ আরে ধুর! তুই তো এখন পর। আপন তো ইমরান ভাই, হা! হা! হা! হা!

ফাহিমাঃ শয়তান! শুরুতেই পল্টি নিলি। মনে রাখিস কিন্তু...

তারপর আরও অনেকটা সময় আড্ডা দিয়ে বেরুলো তারা। ফাহিমা আর ইমরান ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে একটা প্রাইভেট কারে করে ছুটলো। শুভ্র এতক্ষণ পর সুমনের দিকে তাকাল। সুমন হাসি মুখ দেখে বোঝার চেষ্টা করলো কতবড় অভিনেতা তার এই বন্ধুটি। পাক্কা অভিনেতাই বলতে হবে।

» কি করবি এখন?

» আর কি করবো? বাসায় যাবো। সন্ধ্যা তো হয়েই গেছে। কেন কোথাও যাবি?

» নাহ! কিন্তু....

» আরে এই তিনদিন একটু ভালো করে দেখে নিলে ঐ দুই দিন ম্যানেজ হয়ে যাবে। কোন কিন্তু নেই।

» সুমন শোন!

» আরে বলার আর কি আছে। তুই বাসায় বলে দেখ। আন্টি নিশ্চিত রাজী হবে এই দুইদিনের জন্য। আর আফটার অল ফাহিমার রিসিপশন বলে কথা।

» সুমন আমি কিন্তু এটা বলতে চাইছি না।

» কিছু বলতে হবে না, বাসায় যা ব্যাটা। বেশি রাত করলে কালকের ম্যাথ গুলি করে জমা দিতে পারবি না। আমি গেলাম।

বলেই আর কোন অপেক্ষা করলো না সুমন, সাইকেলটার দিকে হাটা দিল। শুভ দাড়িয়ে দেখছে, কিছুই বলতে পারলো না বন্ধুটাকে। হাসি খুশি এই দুষ্ট ছেলেটা এত চাপা স্বভাবের এটা কি এতদিন সে বুঝতে পেরেছিল? সত্যিই মানুষ কত আজব, আনন্দ গুলি দেখাতে পারলেও কেউ কেউ দুঃখ দেখাতে পারে না। পাশের কফি শপটাতে গান পরিবর্তন হয়ে পুরাতন একটা গান বেজে উঠলো....


চলে যাও.. বন্ধু তুমি চলে যাও.. 
হৃদয়ের বাধন ভেঙ্গে দিয়ে.... 
দেবনো না.. বাধা কোন দিবো না... 
থেকে যাও.. নিজেকে নিয়ে.... 

দূরে... রবো আমি... 
শুধু তোমার সুখ কামনায়.... 
স্মৃতি.... নিয়ে এই মন.... 
আজীবন ভালবাসবে তোমায়.... 

চলে যাও.. বন্ধু তুমি চলে যাও.. 
হৃদয়ের বাধন ভেঙ্গে দিয়ে....







শনিবার, মে ১০, ২০১৪

চশমা ঘিরে ভুলগুলি




ভুলে যাই গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছুই। এর কারণে কথাও কম শুনতে হয়নি এই জীবনের পার করা সময় গুলিতে। প্রতিবার ভুল যাবার পরপরই নানা কথা শুনতে শুনতে এখন সব গা'সওয়া হয়ে গেছে। তবুও কিছু জিনিষ ভুলে যাবার পর যখন মনে পড়ে কিংবা ভুল হবার পর যখন বুঝতে পারি তখন নিজেকেই অনেকটা অবাক হতে হয় সেই ভুলটার জন্যে।


সবচেয়ে বেশি ভুল হয় আমার চোখের সামনে, নাকের ডগায় বসে থাকা চশমাটাকে নিয়ে। বেশ অনেকটা সময় ধরে এই বস্তুটার উপর নির্ভর করার কারণে এখন এইটাকে আর শরীরের বাইরে আলাদা কিছু মনে হয় না। বরং নিজের অংশ বলেই বিশ্বাস করে মন। আর তাই ভুলটাও একেই নিয়ে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে করে।


মাঝে মাঝে বিছানায় যাবার পরও ভুলে যাই এটা চোখ থেকে খুলে রাখার কথা। এমনও হয়েছে অনেক যে রাতভর ঘুম ভেঙ্গে সকালে যখন মুখের উপর হাত রেখেছি তখন সেখানে আমার চশমার অবস্থান জানতে পেরেছি। আমি ঘুম দিলেও তাকে ঘুমোতে দিতে পারি নি রাত ভরে। তারপর যখন ব্রাশ করে চোখ মুখে পানি ছুড়ে দিচ্ছি তখন তার গ্লাস ভেজার পর তাকে তার কাজ থেকে অব্যাহতি না দেয়া আর আমার কাজের খামখেয়ালিপনা নজরে পড়েছে। আর গোসল করার সময়ের কথা আর নাই বা বললাম। এই ভুলটা তো অন্যগুলির চেয়ে বেশি বেশি ঘটে।


আমার এই খামখেয়ালিপনার জন্যে ভুগতেও হয়েছে বেশ অনেকবার। প্রথম যেই চশমাটা ব্যবহার করতাম সেটা হ্যারি পটারের চশমার মত ছিল। প্রথম জিনিষের মূল্যায়ন একটু অন্যরকমই থাকে সকলের কাছে। আমার কাছেও ছিল। পড়তে বসার আগে কিংবা যখন মাথা ব্যথা হবে বা চোখে জ্বালা করছে বুঝতে পারতাম তখন সেই ব্যথা বা চোখ জ্বালা নিয়েই তাকে খুব সুন্দর করে চশমার সাথে দেয়া কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করতাম। তারপর সেটা নাকের ডগায় বসাতাম খুব সাবধানে। বারবার এদিক সেদিক করে তাকিয়ে দেখতাম সব ঠিকঠাক মত হয়েছে কিনা।


বহু সাধের সেই চশমাটাও একদিন অসাবধানতায় ভেঙ্গে ফেলি বইয়ের চাপা দিয়ে। আর ভেঙ্গে ফেলেই নিজের ভেতর অপরাধ বোধ আর ভয় কাজ করতে শুরু করে। কাকে বলে বকা শুনতে হবে সেই চিন্তা করে আমি আর সেটা কাউকে জানাই নি। প্রথমে কিছুদিন চুপচাপ করেই থাকতাম। মাথা ব্যথা আর চোখ জ্বালা হলে যতটা সম্ভব সহ্য করে থাকার চেষ্টা করতে থাকি। কিন্তু এভাবে বেশি দিন থাকা যায় না, ধরা পড়তেই হয়। আমিও ধরা পড়লাম। আব্বা খুব রাগ হলেও কিছু বলেনি। ভাঙ্গা চশমাটা নিয়ে দু'দিন বাদে নতুন চশমা নিয়ে এসেছিল (তখন ২ দিন সময় লাগাত একটা চশমার অর্ডার ডেলিভারি দেবার জন্যে)। সে যাত্রায় আব্বা কিছু না বললেও আম্মা প্রচুর বকা দিয়েছিল।


মাঝে অল্প কিছুদিন আমাকে হোস্টেল কিংবা ছাত্র-মেসে থাকতে হয়েছে। সেখানেও সমবয়সী রুমমেট আমার এই চশমা পড়ে ঘুমিয়ে যাওয়া আর আনুষঙ্গিক খামখেয়ালি ব্যাপার গুলি দেখে বার বার অবাক হয়েছে, মাঝে মাঝে বিরক্ত ও হয়েছে। এখন যখন মাঝে মাঝে তাদের কারো সাথে দেখা হয় কিংবা কথা হয় তখনও কথার এক পর্যায়ে জিজ্ঞাস করে ফেলে "তুমি কি এখনো চশমা চোখেই ঘুমাও"। নিজের ভুল গুলির জন্যে ঐ সময়টাতে খুব মজা পাই।


জানিনা এই ভুল গুলি শোধরাতে পারবো কি না। কিন্তু এখন এই ভুল গুলির জন্যেই মনে হয় বেঁচে আছি, ভালো আছি.....







শুক্রবার, মে ০৯, ২০১৪

প্রতীয়মান জীবনের কথা


চারপাশে তাকিয়ে দেখুন, হাজার কোটি মানুষ আপনার চারপাশ জুড়ে। হাঁটছে, চলছে, অপেক্ষা করছে, ছুটছে, খেলছে। সবাই ব্যস্ত, কারো কোন ফুরসুত নেই। বিছানা ছেড়ে জগিং করা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমোতে যাবার আগ পর্যন্ত সবাই কিছু না কিছু করেই চলেছে। সকলের কাজই তার নিজ নিজ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। আর সেই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে গিয়ে অন্যের দিকে নজর দেবার সময় নেই কারো।


এই মানুষ গুলির মধ্যেও আবেগ-বিবেক সবকিছুরই অবস্থান রয়েছে। যখনই কোন দুর্যোগ কিংবা খারাপ সময় দেখা দিবে তখন এদের সবার বিচলিত চেহারাই দেখা যায়। যখন বড় ধরণের কোন প্রাপ্তির সন্ধান মিলে তখন সবার মধ্যে একটা উল্লাসিত ভাব লক্ষ্য করা যায়। একজন বিপদে পড়লে এদেরই একশত জনের একজন কেউ সাহায্যের জন্যে এগিয়ে আসে, বাকি নিরানব্বই জন দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে যায়। এরা সকলেই সেই ব্যস্ত, ছুটন্ত মানুষ।


আর এই ব্যস্ত ছুটন্ত মানুষ গুলিই আমি, আপনি, আমরা সকলে। ছোটার ধরণ, প্রকৃতি, গতি ভিন্ন হলেও সবাই ছুটছি উন্নতির আশা করে, উন্নতির শেখরে পৌঁছানোর জন্যে। যদিও জানা নেই ছুটে ঠিক কোন স্থানে থামতে হবে আমাদের।


নির্দিষ্ট করে কারো কথা নয়, সকলের মাঝেই এই একই কথা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে প্রতীয়মান।






বুধবার, মে ০৭, ২০১৪

কেমিস্ট্রি বই.........


খাইরুল গতকাল থেকে খুব অস্বস্তিতে আছে। রাতে এক ফোটা ঘুমাতে পারেনি। এদিক সেদিক আর ভিন্ন রঙ্গের চিন্তা করেই সময়টাকে পার করেছে। ফলাফল, সকালের কোচিং আধা ঘণ্টা লেট। কোচিং এ ঢুকে বিব্রত বোধ করলেও কিছু সময়ে সেটা কেটে যায়। পড়ালেখার প্রতি বেশ অনেকটা সিরিয়াসনেস এখনো আছে তার। সামনেই পরীক্ষা, আর বয়সটাই রঙ্গিন চশমা লাগিয়ে ঘুরতে চাওয়ার মত। তবুও খাইরুল পরীক্ষাটাকেই গুরুত্ব দিয়ে এসেছে এতদিন ধরে। কিন্তু গতকাল থেকে সেটার একটু গরমিল হয়েছে।

দশটার দিকে কোচিং ছুটি হল। দ্রুত বাসায় গিয়ে ফ্রেস হয়ে নাকে মুখে কিছু গুজেই ১১টার মধ্যে আবার বের হতে হবে স্কুলের জন্যে। স্কুলটা খুব বেশি দূরে না আবার একেবারেই কাছেও না। আর পথটা হেটেই যেতে হয়। তাই প্রায় সময় একেবারে পিটি স্যরের ঘড়ি ধরা টাইমের শেষ সময় গিয়ে পৌছায় সে। দুই একদিন অবশ্য স্যরের টাইম লিমিট অতিক্রমও হয়ে যায়। তখন এই রোদের মাঝেই ঘড়ি ধরে ২০ মিনিট দাড়িয়ে থাকতে হয়।

এই বিশ মিনিটে অনেক কিছু ঘটে। প্রথমে স্কুলের মর্নিং শিফটের মেয়ে গুলি তাদের সামনে দিয়ে স্কুল ত্যাগ করে, আর তাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসে। আর হাসেবেই তো, কান ধরে কিছু ছেলে একসাথে লজ্জায় মুখ নিচু করে থাকলে তারা হাসবে না তো আর কি করবে? এর পর পিটি স্যরের তাণ্ডব চলে রোদের মাঝে। ছেলে গুলির শরীর চর্চার নামে এক ধরণের অবিচার চালাতে থাকে এই রোদে দাড় করিয়ে। তারপর তার তাণ্ডব শেষে ছেলেগুলিকে ছেড়ে দেবার সময় ওদের ওয়ার্নিং দিয়ে ছেড়ে দেয়। মাঝে মাঝে বেত্রাঘাতও চলে, তবে সেটা প্রতিদিন নয়। যেদিন ড্রেস আপ এর গড়মিল একটু বেশি ঘটে সেদিন বেত্রাঘাত মোটামুটি সবার কপালেই জোটে।

আজ কিন্তু খাইরুল পিটি স্যরের হাতে ধরা খায় নি। তবে মনে হচ্ছিল আজ ধরা খেলেই বরং ভালো হতো। স্যরের তাণ্ডব শেষ হবার পর ক্লাসে যায় সে। ইংরেজি ক্লাসটার পরই আজ "কেমিস্ট্রি" ক্লাস। সাবজেক্টটাও খাইরুলের খুব ভালো লাগে। বইটার নমুনা দেখলেই তা বোঝা যায়। পাতায় পাতায় বিভিন্ন রঙ্গে রাঙ্গিয়ে নোট আর বুকমার্ক তৈরি করা আছে। সংজ্ঞা খোজার জন্যে সবাই যখন আতিপাতি করে তখন খাইরুলের বইটায় আশেপাশের অনেকেই চোখ বুলায়। সংজ্ঞার বুকমার্কের অংশটাও তো তার বইতে হাইলাইট করা থাকে।

কিন্তু আজ খাইরুল বইটা ব্যাগ থেকে বের করছে না। একটু ভয়ও পাচ্ছে মনে মনে। কেউ যদি বইটা দেখেই কিছু আচ করে ফেলে। তাই ইমনের বইটা আজ সে ধার করে নিয়েছে। ইমন একটু অবাক হলেও কিছু বলল না। ইমনেরই লাভ, স্যর কি বলল সেটা খেয়াল না করলেও খাইরুলের মার্কিং এর বদৌলতে তা সে বইতেই পেয়ে যাবে। টিফিন টাইমেই আজ ছুটি। বৃহস্পতি বার হাফ স্কুল তাই বেলা ২টায় ছুটির ঘণ্টা বাজতে শুরু করলো। হই হই করে নিচের ক্লাসের ছেলেগুলি বের হচ্ছে ক্লাস থেকে। ফরহাদ, শফিক, মামুন, ইমন আর খাইরুল বসে কথা বলছে ক্লাস। আসলে খাইরুল কিছু বলছে না, শুনছে। বাকি সবাই আজকে বিকেলে ক্রিকেট ম্যাচটার আলোচনা করছে। খাইরুলও সেই দলের একজন খেলোয়াড়।

প্রায় সবাই যখন বের হয়ে গেছে তখন এই দলটাও স্কুল থেকে বের হল। ইমন আর খাইরুল একই এলাকায় পাশাপাশি থাকে। তারা এক সাথেই ফিরে যায় স্কুল শেষে। আর ভালো বন্ধুও তারা। ইমন কিছু পথ যাওয়ার পর খাইরুলকে জিজ্ঞাস করলো-

- তোর কি হয়েছে? এমন গুম হয়ে আছিস কেন? খালাম্মা বকেছে নাকি?
- আরে নাহ, কিছু হয়নি। এমনি ভালো লাগছে না।
- তুই আমাকে বুঝ দেস? এতদিনে তুই এই বুঝ আমাকে দিয়ে পার পেয়ে যাবি বলে তোর ধারনা?
- আরে! তোকে বুঝ দিবো কেন? আর কি নিয়ে বুঝ দিব?
- থাক। বলতে যখন চাস না তখন আর জিজ্ঞাস করবো না। কিন্তু মুডটা অন্তত পরিবর্তন কর। তোকে দেখে মনে হচ্ছে যেন কেউ মরে গেছে।

এরপর অনেকক্ষণ আর কেউ কোন কথা বলল না। প্রায় বাড়ির কাছাকাছি এসে খাইরুল বলল-

- তোর কোন কাজ আছে এখন?
- নাহ। গোসল দিয়ে খেয়ে একটু রেস্ট, তারপর তো ম্যাচে।
- একটু বাসায় আসবি আমার সাথে?
- কেন?
- এমনি, আম্মা বাসায় নেই আর আব্বা তো সেই দেড়টার দিকেই এসে চলে গেছে এতক্ষণে। বাসায় চল, একসাথেই বেরুবো ম্যাচের জন্যে।
- আন্টি কোথায় গেছে?
- আম্মা একটু ঢাকা গেছে খালার বাসায়। সন্ধ্যা হবে ফিরতে।
(ইমন একটু তেরছা ভাবে তাকিয়ে বলল)
- আচ্ছা চল। তবে ভালো কিছু খাওয়াতে হবে, মনে রাখিস।

বাসায় গিয়ে দু'জনেই ফ্রেস হয়ে খাওয়া-দাওয়ার পর্ব সারল। এর পর কনসোল গেম খেলা শুরু করলো। খেলার এক পর্যায়ে খাইরুল বলল-

- দোস্ত, একটা কথা বলবো?
- দেখ গেম খেলবি না আমার সাথে একদম। তুই কিছু একটা চেপে আছিস সেটা আমি ঠিকই বুঝতে পারছি। বলার হলে সোজা করে বল, আর না হয় এমন মুখ করে থাকবি না একদম।
- ক্ষেপিস না দোস্ত, আমি ব্যাপারটা নিয়ে একটু কনফিউশনে আছি। আসলে ব্যাপারটাতে গুরুত্ব দেয়া উচিৎ কিনা সেটাই আমি বুঝতে পারছি না। আবার যেটা মনে করছি সেটা ভুল কিনা সেও বোঝা যাচ্ছে না।
- দেখ ট্রেলার বলবি না, পুরা ঘটনা বল। কি নিয়ে তোর এত টেনশন সেইটা বল, পুরাটা বলবি। অর্ধেক করে বলবি না।
- তার আগে বল এটা কারো সাথে আলোচনা করতে যাবি না।
- ধুর! তুই এতদিনেও আমাকে এতটুকু বিশ্বাস করতে পারিস নাই? যা শালা শুনবোই না, তুই থাক। আমি বাসায় যাবো।
- দোস্ত থাম, শোন আমার কথা। টেনশন হচ্ছে এখন তুইও যদি এমন করিস তাহলে আর কাকে গিয়ে বলবো?
- ঢং করবি না। যা বলার বল এখন।
- আচ্ছা, শোন। আগে পুরাটা শুনবি তারপর যা বলার বলবি।
- হুম
- কয়দিন আগে অহনা কোচিং এর শেষে আমার কেমিস্ট্রি বইটা চেয়ে নেয়। বলে তার নাকি কি একটা নোট নিতে হবে। যেহেতু আমার বইটাতে হাইলাইট করা আছে আর প্রয়োজনীয় সূত্র গুলি প্রতি চ্যাপটার শেষেই লিখে রাখি তাই সেটা নাকি তার নোট করতে সুবিধা হবে। আমিও চাওয়ার পর বই দিয়েছিলাম। ঐখানে বসেই দাগাচ্ছিল প্রথমে। পরে বলল তার নোট করতে আসলে অনেক সময় লাগবে, তাই যদি বইটা তাকে দেই ঐদিনের জন্যে তবে খুব উপকার হয়। তুই যেহেতু বাড়ির কাছেই আছিস আর কোচিং এর নোট গুলি যেহেতু আমার কাছেও আছে তাই বইটা দিলাম তাকে।
- হুম। তো?
- আগে শোন পুরাটা। পরে কথা বল। পরের দিন সকালে কোচিং করে যখন স্কুলের দিকে আবার যাচ্ছি তখন এমনি অনেক লেট হয়ে গেছে। মনে নাই পরশু পিটির সময় আমি দেরি করার লাইনে দাড়িয়ে ছিলাম, ঐদিনের কথা বলছি। বাসা থেকেই লেট হয়ে গেছে, তাই একরকম দৌড়েই আসছিলাম। কিন্তু রাস্তায় অহনা আর সুমির সাথে দেখা। ওরা স্কুল থেকে কোচিং এ যাচ্ছিল। আমাকে দৌড়াতে দেখে অহনা ডাকল। দাঁড়াবো না, দাঁড়াবো না করেও দাঁড়ালাম। বললাম যে দেরি করে ফেলেছি। কথা শুনে ওরা দুজনেই হেসে দিল। আর বলল- দেরি যখন হয়েই গেছে তখন আরও একটু দেরি করে যেতে। বিরক্ত লাগলেও কিছু বলিনি তখন। তারপর অহনা ব্যাগ থেকে বইটা দিয়ে বলল- নোট নেয়া শেষ। বই নিয়ে যাও। আমি বই নিয়েই আবার ছুট দিলাম। তারপর ক্লাসে এসে সেকেন্ড পিরিয়ডে যখন বই খুললাম তখন দেখি পেন্সিল দিয়ে লেখা প্রথম পৃষ্ঠাতে-
"শুরু করেছো যখন, তখন ১২ নম্বর পেজে যাও"
আমি ১২ নাম্বার পেইজে গেলাম। সেখানে চিত্রের নিজে লেখা-
"১২ তারিখে পরিচয় হয়েছিল কোচিং এ, জানি গুরুত্বহীন তথ্য তোমার জন্যে। কিন্তু সবার জন্যে নয়। এখন কষ্ট করে ৩৬ নাম্বার পেইজে যাও"
আমি আবার ৩৬ নাম্বার পেইজে গেলাম, সেখান একেবারে নিচে লেখা-
"এই ৩৬ নাম্বার আমি তোমার থেকে দেখে দেখে লিখেছিলাম কোচিং এর পরীক্ষাতে। আরও বেশিই লিখেছিলাম, কিন্তু পেয়েছিলাম ৩৬। এটাও গুরুত্বহীন তথ্য তোমার জন্যে। কিন্তু সবার জন্যে নয়। এখন আরও একটু কষ্ট করে ৫৩ নম্বর পেইজে যাও"
আমি তখন সেইটা আর না দেখে বই বন্ধ করে ক্লাস করলাম। আর তোর বইতে নোট নিয়েছিলাম সেইদিন।

- হুম, তারপর?
- তারপর বিকেলে বাসায় এসে আর বই ধরি নি। কোচিং এ ও যাইনি সেদিন। আম্মাকে বললাম মাথা ব্যথা করছে। তাই আম্মা ও আর কিছু জিজ্ঞাস করেনি। সন্ধ্যার পর চা'য়ের মগ হাতে নিয়ে পড়তে বসলাম। আসলে পড়তে বসি নাই, কেমিস্ট্রি বই খুললাম। গেলাম ৫৩ পেইজে। সেখানে লেখা-
"কোচিং এর ৫৩ নাম্বার দিনে আমার জন্মদিন ছিল। তোমরা সবাই আমার জন্মদিন উপলক্ষে পার্টি করেছিলে কোচিং এর মধ্যেই। উপহারও দিয়েছিলে অনেকে। তোমার সেইদিনের উপহারটা আমার ভালো লেগেছে। সবার মত তুমি শো-পিস দেও নি। একটা কলম আর একটা ডায়েরী দিয়েছিলে। যেটাতে আবার ছোট্ট একটা লকও আছে। উপহার গুলির মধ্যে সবচেয়ে আলাদা উপহার ছিল। এবার কষ্ট করে ২০৪ নম্বর পেইজে যাও...."
পৃষ্ঠা উল্টে গেলাম ২০৪ নাম্বার পেইজে। ঐটা প্রশ্নের শেষ পেইজ। তাই অনেকটা জায়গা। আর সেখানে অল্প কয়টা লাইন লিখেছে। এইটা তুই নিজেই দেখে বল এর অর্থ কি।

খাইরুল তার কেমিস্ট্রি বইটা ব্যাগ থেকে বের করে ইমনের হাতে দিল। ইমন ২০৪ নাম্বার পেইজে গেল। সেখানে লেখা-

সবার জন্যে গুরুত্বপূর্ণ না, তোমার কাছে আরও না। কিন্তু তবুও তোমাকে অজানা কারণেই ভালোলাগে আমার। প্রথমেই বলেছি অজানা কারণ তাই আর ব্যাখ্যা দিতে পারবো না। এই ভালো লাগা তোমার মেধার জন্যে নয় এতটুকু নিশ্চিত করে বলছি। আরও নিশ্চিত করে বলছি তোমার হ্যারিপটার মার্কা চেহারার জন্যেও এতটা ভালোলাগা নেই। ব্যক্তি তোমার জন্যেই ভালোলাগা কাজ করে। প্রথমে ভালোলাগাটা আস্তে আস্তে অনেক বড় হয়ে গেছে। এখন ভালোলাগাটা তোমার উপহারের ডায়রিতে দেয়া জাতীয় সঙ্গীতের ২য় লাইনে পরিণত হয়েছে। ঘাবড়ে যেও না, তোমাকে আমি জাতীয় সঙ্গীতের ঐ লাইন গাইতে বলবো না। আমি শুধু আমার কথা গুলিই তোমাকে বললাম।
ভালো থেকো।

এইগুলি পড়ে ইমন হাসতে হাসতেই খুন। বলল-
- তুই এই সহজ কথাটা ও বুঝতে পারিস নাই গোবর গণেশ?
- সহজ কথা কোনটা। কি বলল কি বলতে চায় কিছুই তো বুঝলাম না। শুধু শুধুই কতগুলি কথা বলল। আর এত কিছু মনে রেখে কি করে?
- ধুর! তুই শুধু পড়া লেখাই করেছিস। তোর বুদ্ধি আসলেই খোলে নাই। আচ্ছা বাদ দে। তুই ডায়েরী খোল।
- কোন ডায়েরী?
- আরে একটা ডায়েরী হলেই হবে। স্কুলের ডায়েরিটাই নে।
(খাইরুল ব্যাগ থেকে ডায়েরী বের করে)
- এখন?
- জাতীয় সঙ্গীত বের কর।
- হুম
- এখন ২য় লাইনটা পড়।
- চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি।
- আরে!! ঐটা না। প্রথম লাইনের এইটা পড়।
- কিন্তু ২য় লাইন তো এইটাই। দাড়ির পর এইটাই দ্বিতীয় লাইন।
- তুই আজাইরা কথা বলিস না তো। যা করতে বলছি ঐটা কর। এই এতটুকু পড় (আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় ইমন)
- আমি তোমায় ভালবাসি
- হুম। অহনা তোকে পছন্দ করে এইটা তো সরাসরিই বলেছে। আর অস্পষ্ট ভাবে বলেছে সে তোকে ভালোবাসে। সিম্পল জিনিষ।
- ধুর! এর মাঝে ভালোবাসা-বাসি আসলো কোথা থেকে?
- তুই আসলেই একটা বেকুব। সহজ করে বলা কথাও বুঝিস না। মেয়েটা তোকে ভালোবাসে সেইটা সরাসরি বলতে পারছিল না, আর তার পছন্দের গুরুত্ব বোঝাতে তোর প্রতিটা কাজের দিন গুনে বলল, তারপরও তুই বুঝিস না কেন?
- কিন্তু...
- রাখ তোর কিন্তু। তুই মেয়েটাকে পছন্দ করিস? এমনি কিন্তু মেয়েটা মেধাবী। রোল তুইও জানিস। আর সবসময় সে তার প্লেস ধরে রাখে। দেখতেও কিন্তু খারাপ না। অনেকেই তাকে পছন্দ করে।
- তুই এইসব কি বলিস! এখন এই গুলি নিয়ে ভাবার সময় কোথায়?
- আচ্ছা যা। তোর ভাবতে হবে না। তুই শুধু বল মেয়েটা এখন তোর কাছে ভালো না খারাপ?
- এইটা কেমন প্রশ্ন? খারাপ ভাববো কেন?
- হইছে। মুখ বন্ধ কর। তোর কিছু করতে হবে না। তুই তোর মত থাক। নতুন একটা কেমিস্ট্রি বই কিনে নে। এইটা আপাতত আর কাউকে দেখাবি না। আর লেখাগুলিও মুছে ফেলিস না।
- কেন?
- তোরে আমি করতে বলছি তাই। আর কোচিং এ অহনাকে কিছু বলবি না। তুই যেমন ছিলি ঐরকমই থাকবি। ধর তুই এইগুলি কিছুই দেখিস নাই।
- আর?
- বাকিটা পরে।

সেদিন সন্ধ্যায় কোচিং করলো সবাই। সবাই স্বাভাবিক। এত কিছুর কোনটাই তাদের দেখে বোঝার উপায় নেই। তবে মনে মনে ৩জনই খুব উত্তেজিত। কোচিং শেষ হতেই সবাই বের হচ্ছে। রুম থেকে বের হবার একটু আগে ইমন অহনাকে ডাকল।
- অহনা! শোন।
- কি?
- কেমন আছো?
- এই তো ভালোই। তুমি?
- আমিও ভালো। একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাস করবো?
- কি প্রশ্ন?

পাশ থেকে খাইরুল বলল- এই ইমন আমি বাইরে যাচ্ছি।
ইমন খপ করে খাইরুলের হাত ধরে বলে- কই যাবি! চুপ করে এখানে বস। অহনা সোজা করে উত্তর দিবে। প্যাচাবা না।
অহনা- আচ্ছা।
ইমন- তুমি কি খাইরুল কে পছন্দ কর। যতটা পছন্দ করলে নিজেদের একটা জুটি বলে ততটা?
অহনা- হ্যাঁ, ততটাই পছন্দ করি। কিন্তু সেটা আমি একা করি। খাইরুল নিশ্চয় করে না।
ইমন- খাইরুল আসলে এইসব নিয়ে কখনো ভেবেছে বলে মনে হয় না। কিন্তু আমার বিশ্বাস তোমরা দু'জনই যদি নিজেদের অল্প একটু করে সময় দিতে পারো তাহলে তোমাদের সম্পর্কটা সুন্দর করে এগিয়ে যাবে।
অহনা- কিন্তু খাইরুল কি এটা চায়?
ইমন- সে বুঝতে পারলে চাইতো। এক্ষেত্রে তোমাকেই কিছুটা কষ্ট করতে হবে। আর খাইরুল শোন। তোকে সিরিয়াস ভাবে কিছু করতে হবে না। আগে যেমন ছিলি তেমনই থাকবি। শুধু মাঝে মাঝে অহনার সাথে কথা বার্তা বললে তো আর তোর কোন সমস্যা হবে না নিশ্চয়!
খাইরুল- না।
ইমন- Good. এখন সবাই বাসায় যা। মনে কর কিছুই হয়নি।
অহনা- যাই তাহলে ইমন ভাইয়া। গেলাম খাইরুল।





৯ বছর পর এক সকালে ইমনকে ফোন করে খাইরুল বলছে-
- হ্যালো ইমন! কেমন আছিস?
- আলহামদুলিল্লাহ। তুই?
- আমিও ভালো। শোন তোকে একটা প্রয়োজনে ফোন করেছি।
- কি প্রয়োজন?
- তুই ৭ দিনের ছুটি ম্যানেজ কর। ১২ থেকে ১৭ তারিখ পর্যন্ত এই মাসের।
- কেন? কি হয়েছে??
- তোকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ করতে হবে।
- ধুর। কথা পেঁচাচ্ছিস কেন? সোজাসুজি বলতে পারিস না?
- আচ্ছা, শোন। সোজা করেই বলছি। ‌১৪ তারিখে আনুষ্ঠানিক ভাবে অহনা তোর ভাবী হচ্ছে। পারিবারিক ভাবেই সব হচ্ছে। তুই শুধু আমাদের হয়ে বেশ কিছু কাজ করবি। হা হা হা! বুঝতে পারছিস এখন?
- তুই অনেক চালাক হয়ে গিয়েছিস। ১২ তারিখে বিকেলে তোর বাসায় আমি আসছি।
- দ্রুত আয়। অনেক কাজ রয়েছে। সব তোকেই ম্যানেজ করতে হবে। আফটার অল, তোর জন্যেই ঘটনাটার শুরু হয়েছিল।







বৃহস্পতিবার, মে ০১, ২০১৪

সভ্য সমাজের আধুনিক দাস



পৃথিবী এগিয়েছে, মানুষ দিনে দিনে আরও বেশি সভ্য হয়েছে। আগে অন্ধকার যুগে বসবাস করতো আর এখন আধুনিকতার যুগে বসবাস করে। সত্যিই অনেক উন্নতি হয়েছে মানব সমাজের।

কিন্তু এখনো দাস প্রথা এই সভ্য মানব সমাজ থেকে বিলুপ্ত হয়নি। যদিও আজকাল কেউ এটাকে আর দাস প্রথা বলে না। আর বলবেই বা কেন? আজ কাল তো আর সেই অন্ধকার যুগের মত মানুষ হাট বাজারে বিক্রি করা যায় না। তারা এখন বিক্রি হয় তাদের শ্রমের দ্বারা, হাড় ভাঙ্গানি খাটুনির দ্বারা, আর লোক ঠকানো পারিশ্রমিকের দ্বারা।

কিন্তু বিক্রি হয়, হাতে পায়ে লোহার শিকলের বদলে এখন অদৃশ্য দারিদ্রের বাধনে বন্ধী হয়।



জয় হোক!
আজকের সভ্য সমাজের এই নতুন দাশ প্রথারই জয় হোক.......







বুধবার, এপ্রিল ৩০, ২০১৪

একটা অসম্ভব ভালবাসাকে জয় করার গল্প.....

বর্ষণমুখর কোন এক রাতে গল্পের শুরু.....

 
 
 
 
 
 
 
 
 
      
 
 
 
 
 
 



...... আর তারপর কাছাকাছি থাকা সকল সমস্যার অবসান ঘটিয়ে, সবটা সময়ের জন্যে।