বেশ অনেক সময় ধরে চেষ্টা করছি মানুষের মত লিখার জন্যে, কিন্তু হচ্ছে না। মানুষের এই ব্যাপারটি একদম অন্যরকম, ঠিক যেমন তাদের স্বভাবের মত। এক একজন মানুষের স্বভাব যেমন এক এক রকম হতো, ঠিক তাদের হাতের লেখা গুলিও এক এক রকমের। যদিও অনেকের সাথে অনেকের স্বভাব আর হাতের লেখার মিল পাওয়া যেতো, তবুও সূক্ষ্ম একটা পার্থক্য কোথাও না কোথাও ঠিকই থেকে যেতো। যদিও কখনো ক্রিয়েটিভ হিসেবে ব্যাপারটাকে গ্রহণ করা হয়নি, তবুও আমার যুক্তি অনুযায়ী এটা তাদের ক্রিয়েটিভিটির একটা অংশ হিসেবেই ছিল।
এই যেমন আমি চেষ্টা করছি আমার নিজের, একদম আমার নিজের মত করে লিখার জন্যে। কিন্তু এতটা সময় নষ্ট করার পরও আমি তা পারছি না। অবশ্য এর পেছনে অনেক অনেক যুক্তি দেখানো যেতে পারে। এই যেমন তারা লিখার জন্যে কলম বা পেনসিল জাতীয় কিছু একটা ব্যবহার করত। কিন্তু আমি তেমন কিছু করতে পারছি না। আমাকে আমার প্রিন্টিং ডিভাইসের উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। আমার প্রিন্টিং ডিভাইসটিকে নানা রকম সিগন্যাল পাঠিয়ে তারপর আমার লেখাটি প্রিন্ট করছি। কিন্তু যতবারই প্রিন্ট করছি, ততবারই কোন না কোন ফন্ট স্টাইলের সাথে ওটা ম্যাচ হয়ে প্রিন্ট হচ্ছে।
এতবার চেষ্টার পর মানুষ হয়তো ক্লান্তি অনুভব করত। কিন্তু ওমিক্রন হবার সুবিধা হচ্ছে এইসব অনুভব আর অনুভূতি থেকে আমরা মুক্ত। কপোট্রন অবশ্য বেশ অনেক পরিমাণে এনার্জি ব্যবহার করছে সেই শুরু থেকে। আধুনিক কপোট্রন বলেই হয়তো এত সময় কাজ করার পরও সেটাতে কোন সিগন্যাল জ্যাম হয়ে যাচ্ছে না বা রিবুট নিতে চাচ্ছে না। কিন্তু আমি ধারণা করতে পারি, আমার স্থানে কোন ৫ম প্রজাতির ওমিক্রন হলে সেটি এরই মাঝে কয়েকবার রিবুট করতে চাইতো।
আমার আজকের এই আজব কাজটি করার পেছনে কারণ হিসেবে বলতে গেলে বলতে হবে একটা ভিডিও ক্লিপের কথা। ভিডিও ক্লিপটি অনেক অনেক পুরনো একটি আর্কাইভ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল। সময়কাল হিসেব করলে ওটা বিংশ শতাব্দীর কোন একটা সময়ের হবে। সেখানে মানব প্রজাতির এক মা তার ছেলেকে হাতের লিখা শেখাচ্ছে। আর ছেলেটি লিখতে লিখতে ধীরে ধীরে তার মত করে লিখতে শিখে যাচ্ছিল। আর সেখানে মা'য়ের লেখাটার সাথে ছেলের লেখাটার বেশ কিছু মিল আর অমিলও থেকে যাচ্ছিল।
মানুষের লেখা গুলি যেন শুধুমাত্র তার লেখা নয়, বরং তার থেকেও বেশি কিছু। যেন তার ব্যক্তিত্বের প্রকাশ থাকে তাদের ঐ হাতের লেখাতে। তাদের রুচি আর সংস্কৃতি যেন উঠে আসে ঐসব আঁকা-বাঁকা চিহ্ন গুলিতে। তাদের মনের ভাবনা গুলি শুধুমাত্র তাদের শব্দের বুননে নয়, বরং ঐসব আঁকিবুঁকিতেও উঠে আসত। আর এই ব্যাপারটা আমাকে বেশ আকৃষ্ট করেছে। এরপর আমি আর্কাইভ থেকে মানুষের লেখা এই ব্যাপার নিয়ে আরও বেশ কয়েকটি ফুটেজ দেখেছি। যদিও ফুটেজ গুলোর বিষয়বস্তু ভিন্ন ভিন্ন ছিল। কিন্তু প্রতিটি ফুটেজেই এই ব্যাপার গুলিই আমার কাছে একটা আলাদা বিষয় মনে হয়েছে।
এর পর থেকেই চেষ্টা করে যাচ্ছি আমার মত করে লিখার জন্যে, যা একদম আলাদা হবে। একদম ভিন্ন কিছু, ঠিক মানুষের লিখার মত। কিন্তু যতবারই আমি আমার ইমেজিং প্রসেসরে কিছু একটা লেখা রেন্ডার করতে চাইছি ততবারই কোন না কোন টেক্সট স্যাম্পলের ব্যবহার হয়ে সেটা রেন্ডার হচ্ছে। প্রযুক্তির উৎকর্ষে এসেও এই জায়গাটাতে ওমিক্রনেরা যে কতটা অপারগ সেটাই যেন প্রমাণ করছে ছোট্ট এই ব্যাপারটি। আমার এই লিখতে না পারাটাই যেন আমার অক্ষমতা। হাজার হাজার ইউনিট এনার্জি নষ্ট করেও আমার বিফলতা যেন আমাকেই বিদ্রূপ করছে।
কপোট্রনের সিগন্যালের একটা চাপ খুব ভালোই বুঝতে পারছি। আগেও বলেছি, অনুভূতি বা অনুভব ব্যাপারটি থেকে আমরা মুক্ত। কিংবা আমাদের এই অগ্রগামী প্রযুক্তিও অক্ষম আমাদের মত ওমিক্রনকে এইসব অনুভূতি কিংবা অনুভব দেবার ব্যাপারে। যদি আমার ডেটা বিশ্লেষণ ভুল না হয়ে থাকে তবে কপোট্রনের সিগন্যালের ঐ অতিরিক্ত চাপটুকুকে মানুষের অনুভূতির সাথে তুলনা করলে তা তাদের অক্ষমতার আর নিজের সাথে যুদ্ধে হেরে যাবার অনুভূতির কাছাকাছিই কিছু একটা হবে। তবে চেষ্টা করা ছেড়ে দিচ্ছি না। কিছু একটা আছে এর মধ্যে, যেন আমাকে বলছে এক সময় না এক সময় আমি ঠিকই মানুষের মত করে লিখতে পারবো, একদম আলাদা রকম একটা লেখা, একদমই আমার নিজের একটা লেখা!