বুধবার, ফেব্রুয়ারী ১২, ২০১৪

••••••••••••• একটি লাইনের গল্প •••••••••••••

প্রীতম, কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে ভার্সিটিতে অবস্থান। পাবলিকে কোথাও হয়নি তাই সময় নষ্ট না করে প্রাইভেটেই নাম লিখিয়েছে। বাবা-মার আদরের সন্তান তাই সবসময় প্রাপ্তি গুলি চাহিদা তৈরির আগেই পূর্ণতা পেয়ে গেছে। তবে বাবা মায়ের কড়া নজর, ছেলে যাতে বাইরে আড্ডা না জমায়। কারণ, আজকাল তো আড্ডা দিতে গিয়েই সিগারেট, হেরোইনের আর ফেন্সিডিলের মত নেশার কবলে পড়ে ছেলেপেলে। তাই প্রয়োজনের বাইরে যাতে বাইরে সময় না দেয় সেদিকে খুব কড়াকড়ি অবস্থান।

কি আর করার? ভার্সিটি ক্লাস শেষে সোজা বাসায় অবস্থান নেয় প্রীতম। গান শুনে, বই পড়ে আর টুকটাক এক্সপেরিমেন্টের নামে কাগুজে তৈরি বিদঘুটে জিনিষ পত্র তৈরি করে দিন ভালোই কাটছিল তার। একদিন তার ক্লাসমেট পরিচয় করিয়ে দিল আরো একটা সময় কাটানো মাধ্যমের সাথে, পরিচয় করিয়ে দিলো “ফেসবুক” এর সাথে। যেখানে সে ঘরে বসেও দুনিয়ার অপর প্রান্তে অবস্থান নেয়া বন্ধুটার সাথে যোগাযোগ করতে পারবে। পারবে আড্ডা দিতে একা ঘরে বসে হাজার বন্ধুদের সাথে।

প্রথম কদিন এটা সেটা বুঝে সময় কাটালেও খুব দ্রুতই সে ফেসবুক কে নিজের আয়ত্তে নিয়ে আসলো। এখন আর গান শুনে বা বই পড়ে সময় কাটাতে হয় না তার। চেয়ারে বসে বা খাটে শুয়ে ল্যাপটপটা কোলে নিয়েই সে সময় কাটাতে পারে ফেসবুকে। এখানে কদিনেই তার অনেক পরিচিতি হয়ে গেছে। মাস তিনের মধ্যেই কয়েকটা বড় গ্রুপে তার ভালো একটা অবস্থান তৈরি করেছে আর ফ্রেন্ড-লিস্টে পরিচিত অপরিচিত সহ প্রায় দু’হাজার বন্ধু জোগাড় করে ফেলেছ। এখন প্রায় প্রতি রাতেই ক’জন মিলে সেই আড্ডা জমে এখানে।

ইলার সাথে এখানেই কোথাও পরিচয় হয় প্রীতমের সাথে। আড্ডায় আড্ডায় খুব ভালো বন্ধুত্বও তৈরি হয়। আর তারপর আড্ডার পাশাপাশি চলে ইন-বক্সে কথোপকথন। আড্ডা গড়ায়, সাথে বেড়ে চলে ইন-বক্সের মেসেজের সংখ্যা। অবস্থা এমন যে আড্ডায় কেউ থাকুক বা না থাকুক ইন-বক্সে অন্তত একজনের ‘হাই’ বলতেই হবে। কদিন বাদে ইন-বক্সের আলাপ দূরালাপনিতে গিয়ে বসে। কি হয় না সেখানে? কোথায় আছে, কি করছে, পড়ছে নাকি টিভি দেখছে সব আলাপই চলে এখন। সমস্যা কি? বন্ধু তো, বলতেই পারে। খারাপ তো কিছু করছে না….

সমস্যা হল প্রীতমের। এতদিন সে আসলে ঐ অর্থে মেয়েদের সাথে সরাসরি এভাবে যোগাযোগের সুযোগ পায়নি কখনো। বয়েজ স্কুল, তারপর বয়েজ কলেজ আর শেষে তার ভার্সিটির ডিপার্টমেন্টে হাতে গোনা ক’জন মেয়ে থাকায় সে আসলে ঐ অর্থে তাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগের কোন মাধ্যম পায়নি এর আগে। এর আগে মানে এই ইলার সাথে পরিচয় হবার আগে। মেয়েদের নিয়ে আগে যেটা ফ্যান্টাসি ছিল এখন তার অনেক কিছুই বুঝতে পারে এই ইলার মাধ্যমেই। কিন্তু প্রীতমের মন ইলাকে বন্ধু থেকেও বেশী কিছু মনে করতে শুরু করেছে এখন। কিন্তু ভয় হয়, ইলা যদি এটা জেনে তার সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্কটা নষ্ট করে দেয়। এই ভেবে সে আর ইলাকে কিছু বলার সাহস করে না।

গতরাতে হঠাৎ করে ফেসবুকের কল্যাণে জনতে পারলো যে “প্রপোজ ডে” নামেও একটা আলাদা দিন আছে। দিনভর খুব চিন্তা করলো প্রীতম। বলবে, বলবে-না, করবে, করবে-না করতে করতে যখন দিন গড়িয়ে বিকেল তখন ঝোঁকের চোটেই ইলাকে ইন-বক্সে বলল “ইলা, ভালবাসি, তোমাকেই ভালবাসি”। লিখেই ফেসবুক বন্ধ করে দিল। প্রচণ্ড টেনশন হচ্ছে তার ইলা এই মেসেজ দেখে কি বলবে, তার রি-একশন কি হবে, আর প্রতি-উত্তরটা কি প্রত্যাখ্যানের হবে; নাকি সম্মতির। ভাবতে ভাবতেই সন্ধ্যা পার হয়ে গেল। আচ্ছা ভালো কথা, এত সময় পার হয়ে গেল নিশ্চয় এর মাঝে ইলা মেসেজটা পড়েছে। তাহলে ফোন দিচ্ছে না কেন? তাহলে কি……

অবশেষে অনেক আকাঙ্ক্ষা আর টেনশন নিয়ে ফের ফেসবুকে লগইন করলো প্রীতম। সবার আগেই ঢুকল মেসেজ বক্সে। ইলার মেসেজটাই সবার উপরে। তবে কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। ক্লিক করলো তাকে প্রীতম। ইলা একটা লম্বা মেসেজ দিয়ে গেছে তাকে। আর মেসেজটা দেবার পর ইলা তার আইডি বন্ধ করে দিয়েছে। হ্যাঁ, প্রীতম ইলার দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। ইলার অত বড় মেসেজটা বার ৩ পড়ার পর যেটা প্রীতম বুঝল, ইলা আসলে সত্যিকার অর্থেই তাকে বন্ধু ভেবে তার কথা গুলি শেয়ার করেছিল এতদিন। ইলাও তার মত বদ্ধ ঘরে মানুষ। তবুও সে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারায়নি। আর প্রীতমও যে তার নিয়ন্ত্রণ হারাবে তা কল্পনা করতে পারেনি। এটা নয় যে ইলা এটাই প্রথম কারো কাছ থকে প্রপোজাল পেয়েছে। কিন্তু প্রীতম এটা করবে সে তা কল্পনাও করতে পারে নি। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই প্রপোজালের রাস্তাটাই বন্ধ করে দিবে। আর তাই সে তার পুরাতন মোবাইল নাম্বার পাল্টে নিবে আর তার এই ভার্চুয়াল পরিচয়টাকে মুছে দিবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

হ্যাঁ, ইলার মেসেজের যে স্থানে এতদিন ইলার ছবিটা দেখা যেত সেটা এখন মেয়ে আকৃতির একটা এভাটারে রূপ নিয়েছে। আর তার নামটা নীল অক্ষর থেকে কালো অক্ষরে পরিণত হয়েছে। প্রীতমের মাত্র একটা লাইন তার বিশ্বাসকে নষ্ট করেছে এই ভার্চুয়াল জগত থেকে.....







বুধবার, জানুয়ারী ২২, ২০১৪

নিশ্চিত জীবন থেকে দেখা অনিশ্চিতের দূর্বার গতি……

কিছু জীবনের নিশ্চয়তা থাকে না, তবুও দূর্বার গতিতে এগিয়ে চলে।

সেই গতিটা দেখতে ভাল লাগে………

মন আকাঙ্ক্ষায় থাকে সেই গতিটাকে নিজের জীবনে নিয়ে আসতে। কিন্তু পারে না। কারণ গতিটার সাথে অনিশ্চয়তার একটা গভীর সম্পর্ক আছে। আর কেউ জেনে শুনে অনিশ্চয়তাকে বেছে নিতে পারে না।

ততটা সাহস সবার থাকে না……






শনিবার, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৩

ফেসবুকের গল্প-কথা....



ফেসবুকের শুরুটা বলি আজ তাহলে। আরেহ নাহ! ফেসবুক কিভাবে শুরু হলো তা বলবো না। আমি বলতে যাচ্ছি কিভাবে 'আমি' ফেসবুকে আসলাম, আর তাকে বুঝতে শুরু করলাম সেই কথা।

সময়টা ২০০৬ এর শেষের দিকে। নেটে পড়ে আছি অনেকদিন হয়। ও হ্যাঁ, তখন নেট মানে হচ্ছে আফতাব আইটি (Aftab IT) বা BOL (Bangladesh Online Limited) এর কার্ড আর টেলিফোন লাইন ব্যবহার করে ইন্টারনেট সংযোগ। তাও আবার কাটায় কাটায় মিনিট হিসেব করে, সময় শেষ তো লাইন অফ, কোন ছাড় নেই।

তো সেই সময় মূলত নতুন নতুন সাইট আর ব্লগে ঢু মারতাম আর সামুতে পড়ে থাকতাম। বিশেষ কাউকে না চিনলেও দুই একজনের লেখা রেগুলার ফলো করতাম। আরো একটা কাজ করতাম। মজা নিয়ে নিজের নামের আরো কেউ আছে কিনা কোথাও সেটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করতাম। আর মজার ব্যাপার হলো যে, তখন এমন নিজের নামের সাথে মিল আছে এমন দুইজনের সন্ধানও পেয়ে যাই। তবে তারা কেউ বাংলাদেশের ছিলো না। দুইজনই কোলকাতার, আবার তাদের মাঝে একজন ইউরোপ প্রবাসী।

দিন ভালোই কাটছিলো ঐভাবে। অল্প সময় নেট আর অল্প স্বল্প জ্ঞান আহরণ। প্রায় সব ওয়েব পেইজ গুলিকে পরে পড়বো ভেবে হার্ডডিস্কে সেভ করে পড়তাম, আর অনলাইনে সার্চ আর কমেন্ট করার কাজ করতাম। যদিও প্রতিটা সাইটে আলাদা আলাদা রেজিস্ট্রেশন করার বিপরীতেই কমেন্ট করতে দিতো সেই সময়ে। 

দেখতে দেখতে এভাবে ২০০৭ চলে আসলো। তখন সাইবার ক্যাফে আর ইন্সটিটিউটের ল্যাবে বসে ইন্টারনেটে সময় কাটাই। ল্যাব এসিস্টেন্টের সাথে খাতির থাকায় ক্লাসের পরেও তার সাথে ল্যাবে কাজ করতাম আর ইন্টারনেট একসেস করতে পারতাম। তখন একটা সাইটে একটা সফটওয়্যার রিভিউ দেখলাম। সফটওয়্যারটা অনেক কাজের কাজী। আর তাই তা পাওয়ার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠলাম। কিন্তু সে যেই লিংক দিয়েছে তা ততদিনে ডেড লিংকে রূপ নিয়েছে। 

তখন তার ঐ পোষ্টও প্রায় ২ মাসের পুরানো হওয়ায় শুধু মন্তব্য করে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাচ্ছিল না। আর সাইটেও পাচ্ছিলাম না তখন তাকে। সে জন্যেই অন্য চিন্তা শুরু করলাম। সাইট ঘাটিয়ে তার পরিচয় আর মেইল খুঁজে বের করলাম এবং তাকে মেইল করলাম। সেই মেইলের রিপ্লাই ও পেলাম প্রায় সপ্তা খানিক পর। আমাকে বললো ফেসবুকে যোগাযোগ করতে। তখনও আমার তো ফেসবুক একাউন্ট নাই, আর তার সাথে যোগাযোগ করার উদ্দেশ্যেই সেই ফেসবুকে রেজিস্ট্রেশন করি তখন। 

রেজিস্ট্রেশন শেষে তার মেইল এড্রেস দিয়ে তাকে ফেসবুকে খুঁজে বের করলাম। কিন্তু যখনই তার কোন একটা পোষ্টে কমেন্ট করতে গেলাম তখন বুঝতে পারলাম কারো সাথে যোগাযোগ করতে হলে তাকে আগে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতে হবে। নতুবা তার পোষ্টে কমেন্ট করতে পারবো না আমি। তাই আইডির লিংক নিয়ে রিকোয়েস্ট দিয়ে আবারও মেইল দিলাম তাকে, আমাকে এড করার জন্যে। সে এড করে আমাকে সেই সফটওয়্যার এর লিংক দিলো এবং তারপর তার সাথে আরো কয়েকবার শুধুমাত্র প্রয়োজনেই কথা হয়েছিলো এই ফেসবুকে। কিন্তু আমার ফেসবুক তখনও ঐ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। 

২০০৮ এর শেষের দিকে ব্লগে খুব সময় দিচ্ছি। টেকি ব্লগ কোনটাই বাকি নেই যে সকাল সন্ধ্যায় চোখ বুলাই না। তবুও টেকটিউন্স আর বিজ্ঞানী.অর্গে ভালো সময় কাটতো আমার। নিজে কিছু পারতাম না, কিন্তু সবার কাছ থেকে শিখতে চেষ্টা করতাম। তখন আবার কয়েকজন টেকি বন্ধু বললো ফেসবুকের কথা। আমি তো আইডি যে আছে সেইটাই ভুলে গিয়েছিলাম ততদিনে। রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে দেখি আগে রেজিস্ট্রেশন করা আছে, তাই পাসওয়ার্ড রিকোভার করে লগইন করলাম। তখনও দুই তিনদিন চালিয়ে ফের অফ। আর কোন খোজ খবর নেই। 

ওদিকে ইন্সটিটিউটের অনেক ফ্রেন্ড তখন ফেসবুক কে লাভবুক বানিয়ে ফেলেছে। যাকেই দেখি ফেসবুকে তাকেই দেখি গার্লফ্রেন্ডের সাথে মেসেজ আদান প্রদান আর সব পোষ্ট গার্লফ্রেন্ডকে উৎসর্গ করে। তাই ঐদিকে ফেসবুকে আইডি আছে বলতে লজ্জা লাগতো, পরে লোকে কি মনে করে এই ভেবে।

সব শেষে ২০১২ তে আবার ফেসবুকে সময় দেয়া শুরু করলাম। ইন্সটিটিউটের বন্ধুদের সাথে দূরত্ব বেড়ে যাওয়ায় তাদের সাথে যোগাযোগ রাখার মাধ্যম হয়ে দাঁড়ালো এই ফেসবুক। সবাই মোবাইল নাম্বার পরিবর্তন করলেও ফেসবুক আইডি তো আর পরিবর্তন করছে না তাই এটাই ভরসা হয়ে দাঁড়ালো আমার জন্যে।

মৌলিক বিষয় গুলি তখন থেকেই বুঝতে শুরু করলাম ফেসবুকের। সাইটে যেমন ড্যাশ-বোর্ড থাকে এখানে পুরোটাই তার মিল আছে তবে ভিন্ন ভাবে সব উপস্থাপন করা হয়েছে। ট্যাগ করা শিখলাম, শিখলাম ফটো আপলোড এবং তাতে ট্যাগ করে বন্ধুদের যুক্ত করার বিষয়টা। তবে কখনোই অসামাজিক কোন পেইজ বা গ্রুপে যুক্ত ছিলাম না, এবং প্রশ্ন করতে পারে এমন কারো সাথে বন্ধুত্বও তৈরি হয় নি। কিন্তু নিজেকে ঠিক ঐভাবে মুক্ত মনে হচ্ছিলো না প্রোফাইলটাতে।

২০১৩ এর মে মাসের ২৬ তারিখে একটা আইডি খুললাম যাতে আমার কোন পরিচিতি নেই এবং নেই পরিচিত কেউ সেখানে। সেখানে এসে হুট করেই অনেক কিছুর সাথে জড়িয়ে গেলাম। পরিচিত হলাম নতুন সব অপরিচিতের সাথে। দেখলাম একটা পরিবার এবং তাকে জড়িয়ে অনেক গুলি উজ্জ্বল মুখ। তাদের সাথে এই অল্প সময়ের পথ চলাতে অনেকের সাথে তৈরি হয়েছে বন্ধুত্বের সম্পর্ক আর পেয়েছি কিছু বড় ভাই আর বোন।

যে ভালবাসা পেয়েছি তার কোন কিছুই হয়তো ফেরত দেবার যোগ্যতা নেই আমার। তবে সবার মত এর খারাপ দিক গুলিকে বলবো না। অনেক ভাল কিছুই লুকিয়ে আছে এই ফেসবুক পাড়াতে...... :)




শনিবার, নভেম্বর ৩০, ২০১৩

নীরা, তোমার অপেক্ষায়.....



নীরা, তোমাকে তো বলা হয়নি। তোমার জন্যে ঐ দিন স্টেশনে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেছিলাম। মিন্টু বলেছিল তুমি নাকি বাড়ি আসছো। আমি সেই শীতের রাতে প্লাটফর্মে বসেছিলাম তোমার জন্যে। জানো রাতে বেকার সময়টাতে প্লাটফর্মে তেমন কেউ থাকে না। তবে একেবারেই যে থাকে না তা কিন্তু নয়। আমাদের স্টেশনটা ছোট। গ্রামের স্টেশন অতবড় হয় না। কিন্তু তারপরও দেখলাম কয়েকটা বৃদ্ধ আর বেশ কিছু টোকাই গোছের বাচ্চা ছেলে এক কোনায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে আছে। একটা পরিবারও মনে হয় আছে সেখানে। এই শীতেও তারা কি করে ঘুমুচ্ছে তা আসলেই চিন্তা করার মত বিষয়।

ভুল হয়ে গেছে নীরা। আসলে বাংলাদেশের ট্রেন গুলি যে সময় মত আসে না তা আমার জানা আছে। তবুও অনেক আগেই চলে এসেছি। আসলে তুমি আসছো এইটা শুনে আর অন্য কোথাও অপেক্ষা করতে ইচ্ছে করছিলো না। এখন মনে হচ্ছে একটা বই নিয়ে আসার প্রয়োজন ছিলো। গল্পে ডুবে থেকে তোমার জন্যে অপেক্ষা করতে থাকায় হয়তো সময়টা মন্দ কাটতো না। কিন্তু দ্রুত চলে আসলাম, মনেই ছিল না একটা বই সাথে করে নিয়ে আসার কথা। আচ্ছা কোন বইটা নিয়ে আসতে চাইছি বুঝতে পেরেছ তো? সেই যে তুমি "অপেক্ষা" নামের একটা বই খুঁজতে গিয়েছিলে লাইব্রেরিতে, সেই বইটা। আসলে অপেক্ষা করতে হচ্ছে তো তোমার জন্যে, তাই আজ ওটার কথাই মনে হচ্ছিল বার বার।

নাহ, আজ মনে হয় অনেক বেশীই দেরি হচ্ছে কোথাও। না হয় ট্রেন তো চলে আসার কথা এই সময়ের মাঝে। কি জানি? হয় তো ট্রেনই লেট ছিল আজ। তাই সব কিছুতেই লেট হচ্ছে। আর ঠাণ্ডাটাও মনে হয় বেড়েছে। লেট যেহেতু হচ্ছে তাই চিন্তা করলাম স্টেশনের বাইরে থেকে চা খেয়ে আসি। দিনের বেলায় হলে বাইরে যাবার ঝামেলা ছিলো না। ছোট ছোট কতগুলি বাচ্চা ছেলেই তো চা'য়ের ফ্লাস্ক নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। এক ইশারাতেই চা হাজির হয়ে যেতো। কিন্তু রাতের বেলাতে তো আর তা সম্ভব না। তাই স্টেশনের বাইরে যেতেই হবে।

বাইরে বেরিয়ে দেখি এই রাত দুপুরেও একটা হোটেল খোলা রয়েছে। আর হোটেল দেখেই খিদেটা টের পেলাম। গিয়ে দেখি দোকানি আর দুইটা ছেলে আছে হোটেলটাতে। অলস সময় পার করছে। তারাও আমার মত অপেক্ষা করছে ট্রেনটার। অল্প কিছু সময়ের জন্যে ট্রেনটা থামলেও এর মাঝেই অনেকে চলে আসে এখানে পেট-পূজা করতে। অন্য সময় হলে ছেলে দুইটার যে কোন একজন দৌড়ে আসতো কি খাবো তা অর্ডার নিতে। কিন্তু এখন তাদের কোন ব্যস্ততা দেখছি না। একবার আমার দিকে তাকিয়ে দেখেই আগের মতই নিজেদের মাঝে আলাপ করছে তারা। আলাপ করার ভঙ্গি দেখে মনেই হবে না শীতের রাত জেগে থাকার কোন দুঃখ আছে এদের কারো।

ক্যাশে বসে থাকা লোকটাই জানতে চাইলো কি লাগবে। তাকে জিজ্ঞাস করলাম কি পাওয়া যাবে এখন। জানালো রুটি-পারোটা, মোঘলাই, ডিম ভাজি, আর সবজি হবে এই মুহূর্তে। খিদেটা আরো একটু বাড়লো কিন্তু হুট করে ট্রেন চলে আসলে তোমাকে এক পলক দেখার চান্সটা মিস হবে তাই বললাম একটা মোঘলাই আর চা দিতে। শুনে সে নিজেই মোঘলাই তৈরি করতে গেলো ক্যাশ ফেলে, ছেলেদের ডেকে আর বিরক্ত করলো না। আমি সামনের দিকের একটা টেবিলে বসে স্টেশনের দিকে চেয়ে আছি। দ্রুতই সে মোঘলাই দিয়ে গেলো। তার কাছে জানতে চাইলাম রাতের ট্রেনটা কখন আসে। জানালো এই সময়ের মাঝে চলে আসার কথা। হয়তো কোথাও দেরি হয়ে গেছে, তাই আজ লেট। তবে খুব দ্রুতই চলে আসবে বললো।

ট্রেন হুট করে চলে আসতে পারে ভেবে যত দ্রুত পারি খেয়ে নিলাম। তারপর প্লাস্টিকের কাপে চা নিয়ে বিল মিটিয়ে আবার এসে বসলাম প্লাটফর্মের টুলটাতে। চারদিক অন্ধকার আর প্লাটফর্মের অল্প আলোয় চারদিক আরো বেশী অন্ধকার মনে হচ্ছিলো। চা'টা শেষ করেও ট্রেনের দেখা পেলাম না। বসে অপেক্ষায় আছি আর মনে পড়ছে এভাবেই বসে থাকার কথা, তোমার পথ চেয়ে। সেই শীতের সকাল বেলায় অপেক্ষার কথা, তোমার কলেজে যাওয়ার পথে। সময়গুলি কত দ্রুত চলে গেলো। তুমি কলেজে পড়া শেষ করে ভার্সিটি ভর্তি হলে। ঢাকা চলে গেলে হোস্টেলে। আর আমি এখনো তোমার অপেক্ষায় বসে আছি এই নির্জনে......







শুক্রবার, নভেম্বর ২৯, ২০১৩

কালোর মিছিলে পদ্মবতীর ইচ্ছে-কথন...



সমাজ ব্যবস্থার শুরু থেকেই গায়ের রং নিয়ে বিভেদ তৈরি শুরু হয়েছিল। শুরু হয়েছিল বড় একটা ফারাক মানুষ মানুষে। চামড়ায় উজ্জ্বলতা থাকার দরুন একটা দল নিজেদেরকে একটু কম উজ্জ্বল বর্ণের মানুষ গুলি থেকে আলাদা করে নিয়েছিল এবং নিজেরা শাসক গোষ্ঠীতে প্রতিষ্ঠিত হবার চেষ্টা করে গেছে আজীবন। পক্ষান্তরে এই কৃষ্ণ বর্ণের মানুষ গুলি সবসময় একটা হীনমন্যতায় ভুগে শোষণের স্বীকার হয়ে আসছিলো। সেখান থেকে দাস প্রথার ব্যাপ্তিও দেখা যায়। 

সময়ের স্রোতে ভেসে দাস প্রথা দূর হয়েছে। আমরা আধুনিক হয়েছি। সভ্য জাতি হিসেবে পরিচয় দিতে শিখেছি। নিজেদের সভ্যতা নিয়ে গর্ব করার মত কাজও করেছি অনেক। ভালবাসা দিয়ে আদায় করতে শিখেছি অনেক কিছু। কিন্তু মূল যে সমস্যা তা কিন্তু দূর করতে পারি নি।

হ্যাঁ, ঐ কৃষ্ণাঙ্গদের আমারা এখনো অবহেলার চোখেই দেখি। এখনো আমরা গায়ের রং দেখে মানুষ বিচার করি। তৈরি করি সমাজ, আমাদের তথাকথিত আধুনিক সমাজের মধ্যে থেকেই। আর এখনো তারা অনেক মেধা এবং গুনে গুণান্বিত হয়েও একটা সোজা লাইনে দাড়াতে সাহস পায় না। কারণ সমাজ তাদের দ্বিতীয় লাইনে দাড় করিয়ে বড় করেছে এবং মনে গেঁথে দিয়েছে যে তারা কখনো প্রথম লাইনের উপযুক্ত নয়।

দেখতে দেখতে সময় তো অনেক পেরুল। এখন তো আমরা আবার নিজেদের "সচেতন নাগরিক" বলেও পরিচয় দিয়ে থাকি। তবে এই ব্যাপারটা নিয়ে কেন সচেতনতার অভাব থাকবে? কেন আমরা একজন মেধাবী এবং গুন সম্বলিত ব্যক্তিকে পেছনের লাইনে দাড় করিয়ে রাখবো? কেন শুধু গুণগান করবো ঐ ত্বক ফর্সা ব্যক্তিটির?

তাই আসুন, নিজেদের মাঝে একটা জনমত তৈরি করি। তৈরি করি এমন একটা সমাজ যেখানে গায়ের রং দেখে কেউ কপাল কুচকে তাকাবে না। বরং কাজ এবং গুন দেখেই তার সাথে এক লাইনে দাঁড়াবে। তাকে আপন সম্পর্কে জুড়তে মন কোন কটু চিন্তা করা থেকে বিরত থাকবে।

কিভাবে হবে তা? কেমনে হবে? কে করবে?
এগুলির সহজ উত্তর হল- আমি, আপনি এবং আমরা সবাই :) আমাদের প্রত্যেকের এই ব্যাপারে যত আইডিয়া আছে তা একত্রিত করে একটা সিস্টেমে পরিণত করবো। সমস্যা সমাধানের রাস্তা তৈরি করবো। আর তখনই ভেদাভেদ হীন একটা কাঙ্ক্ষিত সমাজ ব্যবস্থা ফিরে পাবো আমরা।

এই নিয়ে ফেসবুকে "কালোর মিছিলে পদ্মবতীর ইচ্ছে-কথন" নামে একটা পেইজ খোলা হয়েছে। সেখানে আমারা সবাই এই নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ পাবো। দিতে পারবো নিজেদের মতামত এবং সামনে এগুনোর পথকে করতে পারবো উন্মুক্ত। সময় করে একটু চোখ বুলিয়ে আসতে পারেন পেইজটা থেকে।

শুভ সূচনায় এবং শুভ উদ্যোগে সকলের অংশগ্রহণই কাম্য....... :)







বৃহস্পতিবার, নভেম্বর ২৮, ২০১৩

এখনো তোমার অপেক্ষাতেই আছি....



ঐ সেদিন থেকে অপেক্ষা করছি। যেদিন বলেছিলে, তোমার পক্ষে এইসব পাগলামি আর সহ্য করা সম্ভব নয়। তোমাকে কিছুই বোঝাতে পারি নি সেই দিন। শুধু জানতে চেয়েছিলেম, কখনো পাগলামিটা একটু কমিয়ে দিলে ফিরে আসবে কি না? তুমি তার প্রতি উত্তরে কিছুই বলনি আমায়...

ঐ সেদিন থেকে অপেক্ষা করছি। যেদিন তুমি কালো ঐ ট্যাক্সিতে চড়ে উঠলে, আর তা চলতে শুরু করলো। আর একবারও পিছু ফিরে তাকালে না তুমি। আমি এই একা ঘরটাতে একলা কিভাবে সময় কাটাবো তাও একবার ভাবলে না। আমি শুধু দাড়িয়ে দেখছিলাম, দেখছিলাম তোমার চলে যাওয়া টা। ঠিক সেই দিন থেকে অপেক্ষা করছি.....

এখনো অপেক্ষাতে আছি। জানি, তুমি ফিরে আসবে না। কারণ কেউ কোন দিন ঐ অবস্থা থেকে ফিরে আসে নি। আর ফিরে আসবে বলে এখনো কেউ আমাকে মিছে সান্ত্বনা দেয় নি। বলেছিল ভুলে যেতে। বলেছিল নতুন করে সব শুরু করতে। একেবারে শুরু থেকে শুরু করার কথা অনেকেই উপদেশ আকারে দিয়েছিল। কিন্তু কি করে শুরু করি বল? ঐ শুরু করাটা যে একমাত্র তোমার সাথেই করতে পেরেছিলাম। আর কারো সাথে তো শুরু থেকে শুরু হবে না। হলে সেটা হবে এক অধ্যায়ের শেষের থেকে কিছু একটা। কিন্তু আমি তো অধ্যায়টা শেষ করতে চাই না। তারচেয়ে বরং তোমার অপেক্ষাটাই ভালো.......

আমি এখনো অপেক্ষাতে আছি। অপেক্ষাতে আছি তোমার সাথে আরো কিছু সময় কাটাবার। পাগলামি করে তোমাকে রাগিয়ে দিয়ে তার আনন্দ নেবার। মাঝে মাঝে কিছু অবাধ্য আকাঙ্ক্ষা তোমাকে বলার। লোক চক্ষুর তোয়াক্কা না করে তোমার হাত জড়িয়ে রাজপথে হেঁটে হেঁটে বৃষ্টিতে ভেজার।

জানি তুমি আসবে না। ফিরে আসতে পারলে তুমি এদিনে চলে আসতে। ছোট্ট একটা দুর্ঘটনা তোমাকে আমার কাছে থেকে অনেক দূরে নিয়ে গেছে। দূরত্ব টা তোমার অভিমান থেকেও বাড়িয়ে দিয়ে গেছে হাজার গুন করে......

কিন্তু কি জানো?
আমি এখনো তোমার অপেক্ষাতেই আছি.......





সোমবার, নভেম্বর ২৫, ২০১৩

একটা দিনের জন্যে সত্যিকারের "বাংলাদেশ" দেখতে চাই...

আমি "বিসমিল্লাহ" পড়লে বলবি, করি "জামাত-শিবির"
"Good bless you" বললে তোর মনে লাগবে ব্যথা,
আর "নম্ নম্"? 
সেটা না হয় বাদই দিলাম.....




আমি "জয় বাংলা" বললে হয়ে যাই "লীগ"

বললে "বাংলাদেশ জিন্দাবাদ" হয়ে যাই "জাতীয়তাবাদী"
"রাজাকারের ফাঁসি চাই" বললে হই "নাস্তিক-ব্লগার"
আর "কিন্তু" বললেই, 
"তুই রাজাকার! তুই রাজাকার!........"




আমি "হরতাল চাইলেই" তুই বলবি, 

......................আমি বিরোধী দলের লোক
আর "হরতাল বিরোধী" কথা বললেই, 
.....................হয়ে যাই সরকারের চাটুকার


.

.
.
.
.


আমি একটা দিনের জন্যে "মানুষ" হতে চাই,

গোত্র-বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে দেখতে চাই আমারই মত "মানুষ"
চিন্তা-ভাবনা আর মতাদর্শের উপরে উঠে "জীবন" দেখতে চাই.......



বাংলাদেশী আমি, 

একটা দিনের জন্যে সত্যিকারের "বাংলাদেশ" দেখতে চাই.........





মঙ্গলবার, নভেম্বর ১২, ২০১৩

দিনের শেষে একলা এই আমি...


শীত দরজার কড়া নাড়ছে জোরে জোরে। ইতোমধ্যে দখিনা হাওয়া বন্ধ হয়ে উত্তরের হিম শীতল বাতাস বইতে শুরু করেছে। দিনের সূর্যতাপ ইদানীং আর আগের মত পীড়া দেয় না। আর দুপুর গড়িয়ে কোন রকম বিকলে হলেই ঝুপ করে অন্ধকার নেমে যায় চারদিক থেকে।

হ্যাঁ শীত একেবারেই দরজার বাইরে দাড়িয়ে আছে।
পুরাতন কাঁথা আছে, কিন্তু এইবার শীতের তীব্রতা মনে হয় আমার এই কাঁথাকেও সহ্য করবে না। এখুনি রীতিমতো কাঁথা হাঁপিয়ে উঠে আমাকে উষ্ণ রাখতে গিয়ে।

একটু বাইরে গিয়েছিলেম বিকেলের দিকে একটা কাজে। ফেরার পথে মোড়ের চা'য়ের স্টল থেকে এক কাপ চা খাওয়ার লোভে পেয়ে বসলো। আর তাই গিয়ে সিদ্দিক মিয়ার চায়ের দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। শীতের আগমন আর হরতালের উত্তাপ মনে হয় বেচারার ব্যবসাকে একটু মিইয়ে দিয়েছে। আর তাই সে অন্য যেকোনো সন্ধ্যায় ব্যস্ততার এই সময়টাকে আজ টিভি দেখে পার করছে। আমি গিয়ে দাড়াতেই জিজ্ঞাস করলো
- কেমন আছেন? আজ এই সময়? কোন কাজে গিয়েছিলেন নাকি?
- হ্যাঁ, একটু বেরুতে হয়েছিল। কিন্তু হরতালের কারণে কাজটা আজ আর হলো না। তাই চলে এলাম দ্রুতই।
- বসেন, কি দিবো আপনাকে?
- আপাতত এক কাপ চা দিও।

সিদ্দিক মিয়া ধীরে সুস্থে চা বানাতে শুরু করলো। চা প্রস্তুত করাটাও একটা আর্ট। কাপ ধোয়া, তাতে চিনি আর কনডেস্ট মিল্ক দেয়া, ছাঁকুনি বসিয়ে তাতে কিছু আলাদা চা'পাতা দেয়া আর সব শেষে কেতলি থেকে গরম পানি ঐ ছাকনিতে ফেলা। ব্যাপারটা ঠিক এইভাবে মনোযোগ নিয়ে দেখিনি। আসলে সবসময় এত ব্যস্ততা থাকে যে, এইসব দেখার সময় কই থাকে হাতে?

সিদ্দিক মিয়া চা বানানো শেষ করে কাপটা এগিয়ে দিলো। আমি একটু আরাম করেই চা খাচ্ছি আর নিউজ চ্যানেল দেখছি সিদ্দিক মিয়ার দোকানের ভেতর দিকটায় বসে। রাজনীতির ব্যাপার স্যাপার নিয়ে কথা বলছে উপস্থাপক। এগুলি শুনতে শুনতে আর ভাল লাগে না। তাই সিদ্দিক মিয়াকে বললাম চ্যানেলটা পাল্টে দিতে। সে বললো কিছুক্ষণ পর নাকি কোন মন্ত্রী অনুষ্ঠানে আসবে। মন্ত্রী কি বলে সেটা শুনতে সে নাকি অনেকক্ষণ ধরে এই চ্যানেলটাই দেখছে। আমি আর কথা বাড়ালাম না। চা খেয়ে চারটা সিগারেট নিয়ে দাম পরিশোধ করে চলে আসলাম।

নাহ, সময় বাড়ার সাথে সাথে উত্তরের বাতাসটাও বাড়ছে। একেবারে কাবু করে দিতে চায়। বিকেলে যখন বেরিয়েছিল তখন এতটা ঠাণ্ডা লাগবে বুঝতে পারলে চাদরটা সাথে করে নিয়ে বেরুতাম। কিন্তু তখন এমন হবে সেটা একটিবারের জন্যেও মনে হয়নি। আর কাজটা তো আরও সময় লাগতো, একবার ভেবেই নিয়েছিলাম যে আজ আর হয়তো আসা হবে না।

এখন বাসায় যেতে হবে। ভাতের রান্না করতে হবে। আলুসিদ্ধ করতে হবে। তারপর আলুভর্তা বানিয়ে খেতে বসতে হবে। নাকি চাল ডাল একত্রে বসিয়ে দিয়ে যেটা হয় ঐটাই করবো চিন্তা করতে করতে মেসে চলে আসলাম। হরতালের কারণে আগেই অনেকে বাড়িতে চলে গিয়েছে। দুই একজন যারা আছে তারা এই মুহূর্তে মেসে নেই। একেবারেই ঠাণ্ডা লাগছে মেসের পরিবেশ। অন্য সময়টাতে কারো কারো রুমে গান শুনতে পারতাম। সাথে তাদের টাস খেলার উচ্চ আওয়াজ। কিন্তু এখন সব নিস্তব্ধের আওয়াজ দিয়ে পরিপূর্ণ।

রান্না ঘরে গিয়ে ভাত বসিয়ে দিয়ে আসলাম। রুমে এসে পত্রিকাটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ পড়ার চেষ্টা করলাম। কিন্তু এখন সব খবরেই ঐ একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা। এটা আর ভাল লাগে না। তাই পত্রিকা রেখে বাইরে আসলাম। মেসের বাইরে একটা ছোট্ট ফাকা জায়গা। প্রতিদিন বিকেলে কিছু ছেলে এখানে ক্রিকেট খেলতো। এখন ব্যাডমিন্টন খেলবে কিছুদিন পর থেকে। সেটাও দেখার মত বিষয়।

কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে একটা সিগারেট বের করে জ্বালালাম। ধুয়াটা ছাড়লাম উপরের দিকে তাকিয়ে। ছোট বেলার কথা মনে পড়ে গেল। ছোট বেলায় শীতের সময় মুখ দিয়ে ধোয়া ছাড়ার চেষ্টার করতাম এখনকার এই সিগারেটের ধোয়ার মত করে।

আহ! সময় কত দ্রুত চলে যায়। কিছু বুঝে উঠার আগেই কোথা থেকে কোথায় চলে এসেছি। এখনো মনে পড়ে এতিম খানাটার কথা। ছোট্ট জায়গা, খাবার হয়তো ভাল ছিল না। কিন্তু আমার ঐ জায়গাটাই ভাল লাগতো। যখন একত্রে কষ্ট করতাম আমার মত আরো কয়েকজন মিলে তখন কাউকে আলাদা করে কিছু বলতে হতো না। সবাই কিভাবে যেন ঠিকই বুঝে যেত সমস্যাটার কথা। নিজেরাই অন্য কোন একটা বিষয় নিয়ে আসতাম সমস্যাটাকে পেছনে ফেলে দিতে।

কিন্তু মেট্রিক পাশ করার পর তারা আর আমাকে কোন ভাবেই রাখতে চাইলো না। আর তারপর কিছুটা হোঁচট খেয়েই চলে এসেছি এতদূর। রাত বাড়ছে, ঠাণ্ডাটাও বাড়ছে। উপরে তাকিয়ে আকাশের তারা গুলিকে দেখলাম। আর হারাতে লাগলাম তরার মৃদু মনোমুগ্ধকর উজ্জ্বলতায়...