পড়লাম লেখক জাবেদ রাসিন সাহেবের 'তমিস্রা'
ছোট বেলাতে অতি-প্রাকৃতিক কিংবা ভৌতিক গল্পগুলোতে আকর্ষণ থাকলেও একটা সময় পর সে আকর্ষণ কমে আসে। আর সেই স্থানটাতে জায়গা করে নিয়েছিল কিশোর থ্রিলার। এরপর তো একে একে সায়েন্স ফিকশন, উপন্যাস, হিমু, মিসির আলি, মাসুদ রানা সহ আরও অনেকেই চলে আসে সেখানে, আসতে থাকে অনুবাদ গল্প গুলো।
সেদিক থেকে হিসেব করলে বেশ অ....নে,,,,ক দিন পর কোন অতি-প্রাকৃতিক একটি গল্প পড়লাম। সম্ভবত থ্রিলার গল্পে পড়ার আধিক্যের কারণে হালকা ধরণের থ্রিলার লেখাগুলি এখন আর খুব একটা আকর্ষণ করে না। অতি-প্রাকৃতিক গল্প হলেও এখানে লেখক অনেক চেষ্টা করেছেন একটা থ্রিল ভাব নিয়ে আসবার জন্যে। কিন্তু তবুও কেন জানি তমিস্রা শুরু করার ২৫/২৬ পৃষ্ঠা যাবার পরপরই মূল গল্পটা জানা হয়ে যায়। ঐ সময়ই গল্পের শেষ পরিণতি কি ধরণের হতে পারে তার একটা ধারণা পেয়ে গিয়েছিলাম। এরপরেও গল্পটাকে শেষ পর্যন্ত ধৈর্য(!) সহকারে পড়ে গেছি।
গল্পটা নিঃসন্দেহে ইন্টারেস্টিং, আরও ভালো করে বলতে গেলে লেখক যেভাবে গল্পটাকে গড়ে তুলেছেন সেই অবস্থা থেকেই এর সিক্যুয়াল তৈরি করা যেতে পারে। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বার বার ইরফান আর সোহেলকে বিভিন্ন ঘটনাতে ব্যবহার করা যেতে পারে। লেখক তা করবেন কি না তা সম্পর্কে তিনিই ভালো জানেন।
গল্পের যে অংশটা ভালো লেগেছে তা হল এর সমাপ্তি। গতানুগতিক ধারায় অতি-প্রাকৃতিক রহস্য গল্প গুলিতে 'সত্যের জয়, মন্দের পরাজয়'-ধরণের একটা সমাপ্তি দেখানো হয়। সেখানে তমিস্রা'য় একই ব্যাপার একটু ভিন্ন ভাবে দেখানো হয়েছে। এখানে একই সাথে 'সত্য' এবং 'মন্দ' কে জয় এবং পরাজয়ের মাঝে আটকে রেখে গল্পের সমাপ্তি টানা হয়েছে।
গল্পের যে অংশগুলি খারাপ লেগেছে তার মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত স্মৃতি চারণ করা। গল্পে বার বার করে প্রতিটি চরিত্রের পেছনের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। আর এই ব্যাপারটা মূল গল্পের জন্যে কতটুকু সহায়ক হয়েছে তা মোটেও আমার বোধগম্য হয়নি। খারাপ লাগার আরও একটা কারণ গল্পের আকার। কেন জানি মনে হয়েছে গল্পকার ইচ্ছে করেই গল্পটাকে টেনে হিঁচড়ে ২৫৪ পৃষ্ঠায় নিয়ে যাবার চেষ্টা করেছেন। চাইলে আরও কম শব্দ খচর করে তিনি গল্পটাকে উপস্থাপন করতে পারতেন, আর তাতে গল্পের আকর্ষণ বিন্দুমাত্রও কমে যেত না।
তবে আবারও বলছি, গল্পকার খুব চমৎকার ভাবে গল্পের সমাপ্তি টেনেছেন। শেষে এসেও নতুন আরেকটা গল্পের হাতছানি খুব স্পষ্ট করে বোঝা যায়। আসগর মাহতাব এর পরে কি করতে পারে সে ব্যাপারে পাঠকদের একটা তৃষ্ণা ঠিকই থেকে যাবে। আরও অপেক্ষা থাকবে ইফ্রিত আর তার আংটিটার পরিণতি জানবার একটা আকাঙ্ক্ষার।
ব্যক্তিগত রেটিং - ২.৭/৫