বৃহস্পতিবার, জুন ১৩, ২০১৯

ইমেজ অপটিমাইজেশন এর জন্যে ওয়েব এ্যাপ


আমরা সকলেই নিজ নিজ গল্প, কবিতা, ছন্দ, ভাব কিংবা লেখার সাথে মিল রেখে অন্তত একটি ছবি পোষ্টের সাথে জুড়ে দেই। এই ছবি জুড়ে দেয়ার ব্যাপারটির গুরুত্ব আশা করি নতুন করে বলতে হবে না। এটি একাধারে যেমন আপনার লেখাটিকে নতুন একটি মাত্রা প্রদাণ করে তেমনি লেখাটির গ্রহণযোগ্যতা আর তার আকর্ষণ বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। অনেক সময় দেখা যায় পাশাপাশি কয়েকটি লেখা। কিন্তু একটি লেখার সাথে ছবি জুড়ে দেবার কারণে সেই পোষ্টটিই মানুষকে বেশি আকর্ষণ করছে বাকি গুলোর তুলনায়; যদিও বাকি লেখা গুলোও বেশ মানসম্মত। তাছাড়া আমাদের সবজান্তা গুগল মামারও এই ছবি সম্বলিত পোষ্টের দিকে বিশেষ দূর্বলতা আছে বলেই গোপন এক সংবাদে জেনেছি। 

কিন্তু কথা সেটা নয়। আমরা একটু চেষ্টা করলেই নিজের লেখার সাথে মিল রেখে ব্লগ পোষ্টে ছবি আপলোড করতেই পারি। সমস্যাটা হচ্ছে আমাদের আপলোড করতে চাওয়া ছবির 'সাইজ'। আসলে এইখানে সাইজ শব্দটাকে দুই ভাবে উপস্থাপন করা যায়। এক হচ্ছে এর দৈর্ঘ-প্রস্থের মাপ যাকে আমরা সহজ ভাবে রেজুল্যুশন বলেই চিনি। আর অন্যটি হলো ঐ ছবির ফাইলটির দখল করা মেমরি স্পেস। 

ব্যাপারটা আরও একটু সহজ করে বলার চেষ্টা করি। প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় আমাদের প্রায় সকলের হাতে রয়েছে একটি করে স্মার্টফোন। এখন আপনি আপনার স্মার্টফোনটির ক্যামেরা এ্যাপ চালু করে তার সেটিংস এ গেলেই দেখতে পাবেন আপনার ক্যামেরায় ছবি তোলার জন্যে কয়েক ধরণের সুবিধা রয়েছে। এই যেমন আপনার স্মার্টফোনটির ক্যামেরা ১২ মেগাপিক্সেল হলেও চাইলে আপনি সেটি দিয়ে ৮ মেগাপিক্সেল কিংবা ৫ মেগাপিক্সেল সেট করেও ছবি তুলতে পারবেন। এখন আপনি ৫ মেগাপিক্সেলে ছবি তুললে তার দৈর্ঘ  হবে ২৫৬০ এবং প্রস্থ হবে ১৯২০ পিক্সেল। আবার ৮ মেগাপিক্সেল সেট করে ছবি তুললে তার দৈর্ঘ হবে ৩২৬৪ এবং প্রস্থ হবে ২৪৪৮ পিক্সেল। সাধারণ ভাবেই বোঝা যাচ্ছে ৫ মেগাপিক্সেল এর তুলনায় ৮ মেগাপিক্সেল দিয়ে ছবি তুললে তাতে বেশি পরিমাণ ডেটা সংরক্ষিত হবে আর ছবিটি ৫ মেগাপিক্সেলের তুলনায় আরও বেশি স্পষ্ট থাকবে। সেক্ষেত্রে ৫ মেগাপিক্সেলে তোলা ছবিটি যদি ২.৫ মেগাবাইট মেমরি স্পেস দখল করে তবে ৮ মেগাপিক্সেল ছবিটি দখল করবে ৩ থেকে ৫ মেগাবাইট পর্যন্ত মেমরি স্পেস। 

এখন চলুন একটি হিসেব করি। ধরলাম আপনি আপনার মোবাইলে ৮ মেগাপিক্সেল দিয়ে তোলা একটি ছবি আপনার পোষ্টের সাথে জুড়ে দিয়েছেন। আরও ধরে নিলাম ছবিটি ব্লগ সাইটের ৫ মেগাবাইট মেমরি দখল করল। এখন কেউ যখনই আপনার পোষ্টটি পড়বে কিংবা ব্রাউজারে লোড করবে তখনই ব্লগ এর ব্যান্ডউইথ থেকে ৫ মেগাবাইট খরচ হতে থাকবে। এখন যদি আপনার পোষ্টটি ১০০ জন পাঠক পড়ে থাকে কিংবা ১০০ বার আপনার পোষ্টটি হিট হয় তাহলে গড়পড়তা আপনার পোষ্টের জন্যে ব্লগের ব্যান্ডউইথ খরচ হবে ৫ x ১০০ = ৫০০ মেগাবাইট। এটা শুধুমাত্র একটি  নির্দিষ্ট পোষ্টের নির্দিষ্ট ছবির হিসেব। এখন চিন্তা করুন এমন ১০০টি ছবি যদি কোন ব্লগে আপলোড করা থাকে তাহলে সবগুলো ছবি মিলিয়ে ব্লগ স্পেস থেকে দখল থাকবে ৫০০ মেগাবাইট আর তার বিপরীতে ১০০ জন ভিজিটর ছবি গুলো দেখলে গড়পড়তা ব্যান্ডউইথ খরচ হবে প্রায় ৫০০ x ১০০ = ৫০০০০ বা  প্রায় ৫০ গিগাবিট। পাবলিক ব্লগে ৫০ গিগাবিট ব্যান্ডউইথ কিন্তু একদম ফেলে দেবার মত হিসেব না। 

তো এর থেকে পরিত্রাণের উপায়? ছবি বিহীন পোষ্ট??

না, আমি মোটেই সে কথা বলছি না। বরং আমি অবশ্যই আপনাদের ছবি সম্বলিত পোষ্ট দেবার জন্যে উৎসাহিত করবো। তার বিপরীতে আমরা কিছু টেকনিক ব্যবহার করলেই এই বিষাল(!) ব্যান্ডউইথ কমিয়ে আনতে পারি। আর সেই টেকনিকটির নাম ইমেজ অপটিমাইজেশন। 

ইমেজ অপটিমাইজেশন নিয়ে লিখতে বসলে সেটা নিয়েই বেশ বিষাল আকারের একটা পোষ্ট করা যাবে। হয়তো চেষ্টা করলে পোষ্টের সিরিজও তৈরি করা সম্ভব এই টপিকে। আপাতত আমি সেই দিকে গেলাম না (কিংবা বলা যায় ইচ্ছে করে চেপে গেলাম, কারণ বলতে গেলেই খালি কলসির ঢ‍ং ঢং আওয়াজ বের হয়ে আসবে কি না 😋)।




ইমেইজ আপটিমাইজ আসলে দু ভাবে করা যায়। মূল ছবির দৈর্ঘ আর প্রস্থের পিক্সেলের পরিমাণ (রেজুল্যুশন) কমিয়ে এনে অপটিমাইজ করা কিংবা ছবির সাইজ ঠিক রেখে একে কিছুটা কমপ্রেস করা। অনেক ধরণের টুল কিংবা সফটওয়্যার ব্যবহার করে কাজটি করা যায়। চাইলে আপনি Adobe Photoshop দিয়েও যেমন কাজটি করতে পারেন তেমনি আবার ফ্রি ওপেন-সোর্স সফটওয়্যার GIMP দিয়েও ইমেজ কমপ্রেস করে নিতে পারেন। তবে আপাতত আমি ডেক্সটপ ভিত্তিক সফটওয়্যারের দিকে না গিয়ে আরও একটু সহজ আর কম টোকাটুকিতে কাজ সাড়া যায় এমন পদ্ধতির দিকে আপনাদের মনযোগ টেনে নিচ্ছি। 

ডেক্সটপ, ল্যাপটপ কিংবা স্মার্টফোন যে কোন ডিভাইসেই আপনি আপনার ব্রাউজারের সহায়তা নিয়ে এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করতে পারবেন। অনলাইনে বেশ কিছু ইমেজ অপটিমাইজ করার ওয়েব এ্যাপ রয়েছে। আমরা এগুলোর সহায়তা নিয়ে খুব সহজেই ছবির ক্ষতি না করে (ঘোলা কিংবা অতিরিক্ত ছোট করে পিক্সেল নষ্ট করা) ছবির সাইজ কমিয়ে আনতে পারি। 

সাধারণত ব্লগ পোষ্টের জন্যে ছবির আদর্শ মাপ ধরা যায় দৈর্ঘে ১২০০ পিক্সেল এবং লম্বায় ৬৭৫ পিক্সেল (রেশিও ১৬:৯)। কিংবা ছবির ছোট আকারের জন্যে দৈর্ঘে ৬০০ পিক্সেল এবং লম্বায় ৩৩৫ পিক্সেল। এই মাপটিকে আদর্শ বলার কারণ হল, এই মাপের ছবি যে কোন সোস্যাল নেটওয়ার্ক (ফেসবুক, টুইটার, গুগলপ্লাস, লিংক্‌ডইন প্রভৃতি)-এ শেয়ার করার জন্যেই আদর্শিক। এই মাপের ছবি সোস্যাল নেটওয়ার্ক গুলোর পোষ্ট হিসেবে ঠিকঠাক মপেই দেখা যায়। তাছাড়া বড় আকারের ছবি ব্যবহার করলে তা প্রায়ই ব্লগের বডি ব্লকের সাইজ মেইনটেইন করতে গিয়ে ছোট আকারে চলে আসে, তখন অনেক সময় সেটি দেখতে আর ততটা আকর্ষণীয় মনে হয় না। এছাড়াও বেশি বড় সাইজের ইমেজ সাইজ হলে তা লোড হতেও অনেক সময় লাগায়, যা ব্লগ রিডারদের মনযোগ নষ্ট করে কিংবা পোষ্ট বিমুখী করে দেয়। 

আপনি চাইলে এর মাপের বাইরেও ছবি ব্যবহার করতে পারেন। তবে সেটি নির্ভর করবে আপনার পোষ্টের বিষয়বস্তু, আর পোষ্ট সাজানোর উপর ভিত্তি করে।


১২০০ x ৬৭৫ পিক্সেলের মূল ছবি - সাইজ ৪৯৯.৬ কিলোবাইট
তুলনা করার জন্যে আমরা একটি ছবি নিলাম। যেটির মাপ দৈর্ঘে ১২০০ পিক্সেল এবং লম্বায় ৬৭৫ পিক্সেল, ছবিটির ফাইল সাইজ ৪৯৯.৬ কিলোবাইট। এই ছবিটি এখন আমরা কয়েকটি অনলাইন ইমেজ অটপিমাইজার টুল দিয়ে অপটিমাইজ করে দেখবো কি অবস্থা হয়। 



Compressor.io

এই সাইটটি থেকে খুব সহজেই আপনি আপনার ছবি অপটিমাইজ করতে পারবেন। সাইটটি JPG, JPEG, PNG, GIF এবং SVG ফাইল নিয়ে কাজ করতে পারে। সাধারণত ছবির কোন ক্ষতি না করেই এর ফাইল সাইজ কমিয়ে আনার ব্যাপারে এটি দারুণ কাজ করে থাকে। তবে এই সাইটটি একই সময় কেবল একটি ছবি অপটিমাইজ করার সুবিধা প্রদাণ করে। আপনার অনেক গুলো ছবি থাকলে একটি একটি করে আপলোড করে তা অপটিমাইজ করে নিয়ে ডাওনলোড করতে হবে। 



TinyJPG

ইমেজ অপটিমাইজেশনের সাজেশন চাইলে গুগলে যে কয়েকটি রেজাল্ট পাওয়া যায় তার প্রথম ২/৩ এর মধ্যেই এই সাইটটির অবস্থান। এটি মোটামুটি পুরনো ও নির্ভরযোগ্য একটি সাইট, পাশাপাশি ওয়ার্ডপ্রেস ব্লগিং করার জন্যে এদের আলাদা প্লাগ-ইন রয়েছে। সাইটটি কেবল JPEG এবং PNG ফরম্যাটের ছবি নিয়ে কাজ করতে পারে। ফাইল সাইজ কমিয়ে আনবার ব্যাপারে সেও খুব দারুণ কাজ করে। ছবির ক্ষতি না করে যতটুকু সম্ভব, ততটুকুই কমিয়ে নিয়ে আসে ফাইল সাইজ। পাশাপাশি আপনি একই সাথে ৫ মেগাবাইট করে ২০ টি ছবি একই সাথে এই ওয়েব এ্যাপের মাধ্যমে প্রসেস করতে পারবেন। 



Optimizilla

Optimizilla আপনার ছবিটির যথাসম্ভব সাইজ কমিয়ে আনে ছবির প্রকৃতি নষ্ট না করেই। পাশাপাশি আপনি চাইলে আপনি আপনার ছবিটি কতটুকু কমপ্রেস করতে চান তা নির্ধারণ করে দিতে পারেন এই ওয়েব এ্যাপটিতে। সাইটটি JPEG এবং PNG ফরম্যাটের ছবি নিয়ে কাজ করতে পারে। আর একই সাথে এ্যাপটি ২০ টি ছবিকে অপটিমাইজ করার কাজ করতে সক্ষম। 



ShortPixel

ShortPixel ওয়েব এ্যাপের মাধ্যমে আপনি ১০ মেগাবাইট ফাইল সাইজের ৫০ টি ছবি একসাথে অপটিমাইজ করার সুযোগ পাবেন। সাইটটি JPEG, PNG এবং নন-এনিমেটেড GIF ফাইল অপটিমাইজ করতে পারবে। অপটিমাইজেশন শেষে ডাওনলোডের পূর্বেই ইচ্ছে হলে আপনি ছবির হাল খুব সহজেই তুলনার অনুপাতে দেখে নিতে পারবেন। 



লেখাটি অনেক লম্বা হয়ে গেলো, তারপরও যদি কেউ এটি থেকে বিন্দুমাত্র উপকৃত হয় তাহলে কিস্ট্রোক গুলো সার্থক হবে। 




শনিবার, জুন ০১, ২০১৯

Telegram - ফিচারে পরিপূর্ণ একটি নিরাপদ ইনস্ট্যান্ট মেসেঞ্জার


চলুন পরিচিত হওয়া যাক নতুন একটি এ্যাপের সাথে। শিরোনাম দেখেই সবাই জেনে গেছেন, যে এ্যাপটি নিয়ে আজকের আলোচনা তার নাম হচ্ছে টেলিগ্রাম (Telegram)। আপনি আমি যখন এই এ্যাপটি নিয়ে কথা বলছি সেই সময়টাতে বিশ্বজুড়ে প্রায় ২ কোটি লোক এটি ব্যবহার করছে।

টেলিগ্রাম একটি অবানিজ্যিক প্রকল্প যেটি ২০১৩ সালে নিকোলাই এবং পাভেল ড্যুরভ এর হাত ধরে শুরু হয়েছিল। এই এ্যাপটি এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে এটি সকল ডিভাইসেই ব্যবহারের সুবিধা পায়। আইফোন, এন্ড্রয়েড স্মার্টফোন, উইন্ডোজফোন কিংবা আপনার উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম, ম্যাক অথবা লিনাক্সের জন্যে এর আলাদা আলাদা এ্যাপ রয়েছে। আপনি যে কোন প্লার্টফর্মে থেকেই একে ব্যবহার করতে পারবেন। কিংবা কোন ক্লায়েন্ট এ্যাপ ছাড়াই এর ওয়েব এ্যাপ এর সহায়তায় আপনার ব্রাউজারের মাধ্যমেই এর ব্যবহার করা সম্ভব।



আপনি হয়তো ভাবছেন মেসেঞ্জার, ভাইবার কিংবা হয়াট্‌সএ্যাপ থাকতে কেন এই এ্যাপ নিয়ে এত কথাবার্তা হচ্ছে! কি এমন ফিচার রয়েছে যেটি বাকি গুলোতে নেই?

হ্যাঁ, প্রাথমিক দর্শনে আপনি একে সাধারণ মেসেঞ্জার হিসেবেই দেখবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাকি সব এ্যাপ থেকেও এটি ভিন্ন। সেটিও বলছি ধীরে ধীরে... 

টেলিগ্রাম এ্যাপ সরাসরি ক্লায়েন্ট এনক্রিপশন সার্ভার ব্যবহার করে ক্লাউড ভিত্তিক বার্তা আদান প্রদাণ করে থাকে। সহজ করে বললে একে এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যাতে সরাসরি সার্ভার থেকে কিংবা Man-in-the-middle (MITM) এ্যাটাক পদ্ধতি ব্যবহার করে আপনার পাঠানো বার্তাটি কেউ দেখে নিতে না পারে। আরও একটু সহজ করে বুঝাতে গেলে উদাহরণ হিসেবে বলবো, যারা নিয়মিত সোস্যাল সাইট গুলো ব্যবহার করেন তারা প্রায়ই শুনে থাকবেন যে ওমুক-তমুকের কথপোকথন কেউ তাদের অগোচরেই হ্যাক করে ছড়িয়ে দিয়েছে। এই ক্ষেত্রে ভিক্টিমের ডিভাইস বা একাউন্টের কোন ক্ষতি না করেই তাদের মধ্যকার কথপোকথন চোর(হ্যাকার) চুরি করে বের করে আনে। আর টেলিগ্রাম সেখানেই আপনাকে নিরাপত্তা প্রদাণ করছে। আপনার ডিভাইস থেকে আপনার বন্ধুকে যখন আপনি কোন বার্তা পাঠানোর জন্যে Send বাটনে ক্লিক করছেন তখনই আপনার ঐ বার্তাটি টেলিগ্রাম এ্যাপের একটি গোপন এনক্রিপশন কী (যার তথ্য টেলিগ্রাম কম্পানি নিজেও জানে না) এর মাধ্যমে বার্তাটিকে এনক্রিপ্ট (নিরাপত্তা বিষয়ক একটি ব্যাপার) করে তারপর সেটি প্রাপকের কাছে পৌছে দিচ্ছে। এখন এর মাঝে বসে যদি কেউ আপনার পাঠানো বার্তাটি পড়তেও যায় তাহলে সে ঐ নির্দিষ্ট 'এনক্রিপশন কী' জানা না থাকবার কারণে বার্তাটি সরাসরি পড়তে বা বুঝতে ব্যার্থ হবে। কারণ হিসেবে বললে বলতে হবে, ঐ অবস্থায় মেসেজটি দেখতে কিছুটা হিজিবিজি কিছু অক্ষর ছাড়া আর কিছুই মনে হবে না। 


যেমন আপনি মেসেজে লিখলেন - Hi there!
আর এনক্রিপশনের পর মেসেজটি খুঁজে পেলে দেখা হবে সেখানে লেখা রয়েছে - LQCIGFOG8VxNPW1qapkFWLpz
এখন এই 'LQCIGFOG8VxNPW1qapkFWLpz' এর মাঝে কি লেখা রয়েছে তা কেবল আপনার টেলিগ্রাম একাউন্টের সাথে গোপন চাবি হিসেবে যুক্ত 'এনক্রিপশন কী' এর সহায়তা নিয়েই পড়া যাবে, নচেৎ এই অক্ষরের আড়ালে লুকায়িত বার্তা উদ্ধার করতে বছরের পর বছর চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। 

আবার আপনি যদি চান আপনার আর আপনার বন্ধুর মধ্যকার কথপোকথন আপনি তাদের সার্ভারেও জমা রাখবেন না, তাহলে খুব সহজেই টেলিগ্রাম এ্যাপের 'Secret Chat' ফিচার ব্যবহার করে খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা সেড়ে নিতে পারেন। এই পদ্ধতিতে শুধুমাত্র আপনার আর আপনার বন্ধুর ডিভাইস ছাড়া এই মেসেজ আর কোথাও সংরক্ষন করা হবে না। আর যখনই আপনারা আপনাদের ঐ Secret Chat সেশন শেষ করবেন তখনই ঐসব মেসেজ আপনাদের ডিভাইস থেকেও চিরতরে মুছে যাবে। আরও রয়েছে মেসেজকে 'Self-destruct' করার সুবিধা। প্রয়োজনে আপনার বার্তা পড়ার সময় আপনি নির্ধারণ করে দিতে পারেন। বার্তা পাঠানোর পর নির্ধারিত ঐ সময়ের পর নিজে নিজেই সেটি সব জায়গা থেকে নিজেকে মুছে ফেলবে। 


ভাইবার কিংবা হয়াটস্‌এ্যাপ ব্যবহার করে কারও সাথে যোগাযোগ করতে গেলে আপনার ফোন নম্বরটি সরাসরি এক্সপোজ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে কেউ আপনার ফোন নম্বরটির অপব্যবহার করার সুযোগ পেয়ে থাকে। টেলিগ্রামে আপনি আপনার নম্বরটি কাউকে না জানিয়েও টেলিগ্রাম ব্যবহারকারীদের সাথে যোগাযোগ রাখতে পারবেন। আপনি যখন টেলিগ্রামে আপনার username টি সেট করে নিবেন তারপর থেকে যাদের মোবাইলে আপনার ফোন নম্বরটি সরাসরি সংরক্ষণ করা নেই তারা ব্যতিত ভিন্ন কেউ আপনার নম্বরটি আর দেখতে পাবে না। 

আরও একটি বিশেষ সুবিধা হচ্ছে এটি একই সাথে আপনার সকল ডিভাইসে মেসেজ সিনক্রোনাইজ করতে থাকে। ধরুন আপনার একটি এন্ড্রয়েড ফোন, একটি আইফোন, একটি ট্যাব আর একটি পিসি রয়েছে। আপনি পিসি থেকে কোন বার্তা কাউকে পাঠালে কিংবা কারও কাছে থেকে আপনি কোন বার্তা পেলে সেটি একই সাথে সকল ডিভাইসেই আপডেট হয়ে যাবে। আবশ্য সে ক্ষেত্রে আপনার সবগুলো ডিভাইসই ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত থাকতে হবে। 



এছাড়াও আপনি আপনার বন্ধুর সাথে এ যাবৎকালে যত মেসেজ পাঠিয়েছেন কিংবা যত ছবি শেয়ার করেছেন অথবা যত ফাইল আদান প্রদাণ করেছেন তার পুরোটাই আপনি যে কোন সময় যে কোন ডিভাইস থেকে এক্সেস করতে পারবেন। 

ফাইল প্রেরণের কথা যখন আসলো তখন যেটা না বললেই না। টেলিগ্রাম ব্যবহার করে আপনি আপনার বন্ধুকে যত খুশি তত ছবি, গান, ভিডিও কিংবা অন্য যে কোন ফাইল পাঠাতে পারবেন। আবার যে কোন সময় সে সব ফাইল সরাসরি ডাওনলোড করে নিতে পারবেন। আর ফাইল সাইজের লিমিট হিসেবে আপনি সরাসরি ১ গিগাবাইট পর্যন্ত সাইজের ফাইল কোন লিমিট ছাড়াই পাঠাতে কিংবা ডাওনলোড করে নিতে পারবেন। আর এই ফাইল আপনি নিজে থেকে ডিলিট না করলে আপনার একাউন্টের বিপরীতে টেলিগ্রাম সার্ভারেই জমা হয়ে থাকবে। 

রয়েছে গ্রুপ এবং চ্যানেল ব্যবহারের সুবিধা। বন্ধুদের নিয়ে খুব সহজেই আড্ডা দেবার জন্যে এখানে গ্রুপ তৈরি করা যায়। আর চ্যানেল এর ব্যাপারটা তুলনা করলে করা যায় ফেসবুক পেইজ -এর সাথে। রয়েছে বন্ধুদের সাথে সরাসরি ভয়েস কল করার সুবিধা। পছন্দ মত থিম ব্যবহারের স্বাধীনতা, ইন-এ্যাপ Emoticon, GIF এবং Sticker ইনসার্ট সুবিধা, কাস্টম প্রাইভেসি ফিচার সহ রয়েছে আরও নানান সুবিধা। 



তা ছাড়া ফেসবুক, মেসেঞ্জার কিংবা গুগলের মত টেলিগ্রাম আপনার তথ্য বিক্রি করার চেষ্টা করে না। তাদের ফিলোসফি হচ্ছে- যদি টেলিগ্রাম সার্ভার মেইনটেইন করার খরচ তাদের সাধ্যের বাইরে চলেই যায় তাহলে তারা টেলিগ্রামের বিশেষ কিছু ফিচার (যা সকলের প্রয়োজন পড়বে  না, এমন) তারা সাবস্ক্রিপশন হিসেবে ব্যবহারকারীর নিকট বিক্রি করবে। তবুও কখনো ব্যবহারকারীর তথ্য তারা নিজেরা ব্যবহার করবে না, কিংবা তৃতীয় কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট বিক্রি করবে না। 

সবশেষে বলছি রেপন্স টাইমের কথা। ব্যক্তিগত ভাবে হয়াটস্‌এ্যাপ আমার পছন্দের তালিকায় না থাকলেও কিছু সময় এটি ব্যবহার করেছি। যদি মেসেঞ্জার, হয়াটস্‌এ্যাপ এবং টেলিগ্রাম তুলনা করি তাহলে অন্তত আমার দৃষ্টিতে টেলিগ্রাম এ্যাপ বাকি দুইটি এ্যাপের তুলনায় এগিয়ে থাকবে। বাকি দুইটি এ্যাপের বিপরীতে এটি বরাবরই যথেষ্ট দ্রুত কাজ করেছে আমার ডিভাইস গুলোতে। ইমেজ লোডিং এবং কোয়ালিটি মেইনটেইন করে ইমেজ পাঠাবার ব্যাপারেও বাকিদের তুলনায় একে এগিয়ে রাখছি।


আপাতত যে ফিচার গুলো আমার ভালো লেগেছে তার বর্ননা করলাম। এর বাইরেও যদি কিছু জানবার থাকে তাহলে নির্দিদ্ধায় জিজ্ঞাস করতে পারেন। আর সেটি করতে না চাইলে গুগল তো রয়েছেই আপনার সহায়তায়। 

আশা করছি ইতোমধ্যে টেলিগ্রাম ব্যবহার করে থাকলে আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন। আর আপনি যদি এই পোষ্ট পড়বার পর টেলিগ্রাম ব্যবহার করে থাকেন তাহলে অবশ্যই ব্যবহারের পর কতটুকু সন্তুষ্ট বা অসুন্তুষ্ট হলে তা জানাতে ভুলবেন না। 





বৃহস্পতিবার, মে ৩০, ২০১৯

অনুবাদ গল্পঃ রাজা এবং চিত্রশিল্পী


সে অনেক...অনেকদিন আগের কথা। সেই দূর সিমান্ত পেরিয়ে সাগরের নীল ঘেষে ছিল এক রাজ্য। গল্পে গল্পে আমরা যে সুখ-সম্মৃদ্ধিতে পরিপূর্ণ রাজ্যের কথা বলি, এই রাজ্যটি ছিলো ঠিক তারই এক জলজ্যান্ত উদাহরণ। সেই রাজ্যে গরীব থাকলেও কেউ অনাহরী ছিলো না। ক্ষুধা পেটে নিয়ে কেউ ঘুমাতে যেতো না। অভাবে স্বভাব নষ্ট করে কেউ সেখানে চুরি করতে যেতো না। পরিপূর্ণ সুখের নগরি বলতে আমরা যেমনটা কল্পনা করি, রাজ্যটি ছিল ঠিক সেই রকমের। 

কিন্তু এত সব পূর্নতার মাঝেও সেখানে একটি অপূর্ণতা ঠিকই উপস্থিত ছিলো। সেই রাজ্যের যে রাজা, সে সুখে থাকলেও শারিরিক ভাবে সে ছিলো অপূর্ণ। সেই ছোট্ট কালে একবার দারুণ অসুস্থ হয়ে তাকে হারাতে হয় তার একটি পা আর একটি চোখ। অথচ শারিরিক এই অপূর্ণতা কখনোই তার হৃদয়ে ভালোবাসার কমতি ফেলেনি। যেমনটি তার হৃদয় ছিলো কোমলোতায় পরিপূর্ণ তেমনি তার মগজ ছিলো সুক্ষ্মবুদ্ধিতে ভরপুর। আর তাইতো রাজ্যের সবাই তাদের এই প্রজাবৎসল রাজাকে সত্যিকার অর্থেই হৃদয় দিয়ে ভালোবাসতো, তার মঙ্গল কামনা করতো। 

তো একদিনের কথা, সেদিন রাজা দরবারের কাজ শেষ করে তার প্রাসাদ ঘুরে ঘুরে দেখছিলো। প্রাসাদের হলঘর ঘুরে ঘুরে দেখতে দেখতে গিয়ে চোখ পড়লো তার পূর্বপুরুষদের তৈলচিত্রের দিকে। চিত্রে তার সব পূর্বপুরুষ ব্যক্তিত্ব দারুণভাবে ফুটে উঠেছে। এই হল দিয়ে পার হবার সময় ছবিগুলোতে চোখ পড়লেই গর্বে তার বুক ফুলে উঠে। সে জানে, তার মতই তার অনুজেরা এই হল দিয়ে হেঁটে যাবার সময় গর্বিত হবে। তারা এই তৈলচিত্র দেখেই তাদের পূর্বপুরুষদের বুঝতে শিখবে, স্মৃতিতে জড়িয়ে রাখবে। তাদের ব্যক্তিত্ব আর মহত্বকে নিজেদর মধ্যে ধারণ করবে। 

এইসব ভাবতে ভাবতেই মনে পড়লো, পূর্বপুরুষদের এই সারি সারি ছবির মধ্যে এখনো তার ছবিটি স্থান পায় নি। আর পারবেই বা কিভাবে! তার এই অপুর্ণ শারিরিক অবস্থা এতটা প্রসন্ন হয়নি যে বলিষ্ঠ একটি চরিত্র ঐরকম একটি তৈলচিত্রে ফুটে উঠবে। এই ভেবেই হঠাতই তার মন খারাপ হয়ে উঠলো। তারপরও সে হাল ছেড়ে দেবার পাত্র নয়। পরবর্তি দিনই রাজসভায় সে এই কথা উঠালো। আর তারপরই নানা রাজ্যের চিত্রকরদের তার রাজদরবারে নিমন্ত্রণ জানিয়ে আনা হলো। 

দূর দূরান্ত থেকে অনেক নামীদামী চিত্রকর উপস্থিত হলো সেই দরবারে। উপস্থিত সেই মজলিসে রাজা বললেন- 

আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ আমার আমন্ত্রণে সাড়া দেবার জন্যে। আমি খুবই আনন্দিত যে আপনারা এত অল্প সময়ে নিজ নিজ ব্যস্ততা ফেলে আমরার আমন্ত্রণ রক্ষা করতে আমার দরবারে উপস্থিত হয়েছেন। অবশ্য এভাবে আপনাদের আমন্ত্রণ জানাবার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণও রয়েছে। 

আপনারা সকলেই জানেন আমাদের এই রাজপরিবারের শেকড় এই রাজ্যের গোড়াপত্তন থেকেই রাজ্যকে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করে আসছে। আমার সকল পূর্বপুরুষেরা বেশ সফলতার সাথেই তাদের এই রাজ্যকে নিয়ন্ত্রণ আর নিরাপত্তা প্রদাণ করেছে। আর সেই ধারাবাহিকতায় আজকে এই সিংহাসনে আমার অবস্থান। 

পূর্বপুরুষদের মত না হলেও আমি চেষ্টা করেছি আমার সর্বোচ্চোটা দিয়ে তাদের এই সফলতার ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে। কিন্তু তবুও আমার শারিরিক অপূর্ণতা আমাকে কিছু বিষয় থেকে হয়তো পিছিয়ে রেখেছে। হয়তো আমার এই অপূর্ণতা আমার মাঝেও একটি হীনমন্যতা সৃষ্টি করেছে। আর সেই হীনমন্যতার কারণেই এখন অব্দি আমি আমার পূর্বপুরুষদের পারিবারিক তৈলচিত্রের সাথে নিজের একটি চিত্র এখনো স্থান দিতে পারি নি। 

বন্ধুগন, অনেক দেরিতে হলেও আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমার পূর্বপুরুষেরা তৈলচিত্রের যে মাধ্যম ব্যবহার করে তাদের নিজ নিজ বৈশিষ্ট আর বলিষ্ঠতার বার্তা তাদের অনুজদের নিকট পৌঁছানোর জন্যে রেখে গেছেন; সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আমিও আমার একটি চিত্র আমার পূর্বপুরুষদের সাথে রেখে যেতে চাই। যাতে আমার পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের তৈলচিত্র দেখে আমাদের বুঝতে পারে, অনুধাবন করতে পারে, তৈরি করতে পারে আপন বৈশিষ্ট আমাদের আদলে। 

সম্মানিত বন্ধুগন, আপনারা সকলেই আমার শারিরিক অপূর্ণতা লক্ষ করেছেন। আমি চাই না আমার এই শারিরিক অপূর্ণতা সেই চিত্রে স্থান পাক। বরং আমি চাই এই শারিরিক অপূর্ণতা ঢেকে এমন একটি তৈলচিত্র তৈরি হোক, যা দেখে আমার পরবর্তী প্রজন্মের অনুজেরা অনুপ্রেরণা পাবে; যেমনটি আমি আমার পূর্বপুরুষদের চিত্র দেখে পেয়েছি। 

আর এমন একটি অসাধারণ চিত্র অঙ্কনের দায়িত্ব আমি আপনাদের উপর অর্পন করছি। যদি আপনাদের মাঝে কেউ এই অসম্ভবটি সম্ভব করতে পারেন তাকে এই দরবার হতে পুরস্কৃত এবং সম্মানিত করা হবে। 



রাজার এমন আহ্বানে সকল চিত্রশিল্পী চিন্তায় পড়ে গেলো। একজন রাজা, যার একটি চোখ এবং একটি পা নেই; আদৌ কি তার এমন কোন চিত্র অঙ্কন করা সম্ভব যা হবে তার পূর্ববর্তী পুরুষদের মত বলিষ্ঠ আর আকর্ষনীয়! নামী দামী সকল চিত্রকরই অনুধাবন করলেন এমন আকর্ষণীয় কোন চিত্র আসলে তৈরি করা সম্ভব নয়। আর যদি চিত্রে ভুল করে কেউ তার এই অপূর্ণ প্রতিকৃতি ফুটিয়েই তোলে তাতে রাজার আপন ব্যক্তিত্ব পরবর্তী প্রজন্মের নিকট প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে রইবে। আর সেটি দেখে রাজার মনক্ষুন্ন হতে পারে, যার ফলাফল হিসেবে মিলতে পারে কঠিন শাস্তি। তাই একে একে সকল চিত্রশিল্পীই নানান ছুতোয় নিজেদের ব্যর্থতা প্রকাশ করতে লাগলেন।  


কিন্তু আমন্ত্রিত এই চিত্রশিল্পীদের মাঝেই এক অখ্যাত চিত্রকর হাত তুলে রাজার দৃষ্টি আকর্ষন করার চেষ্টা করলেন। রাজা যখন তার দিকে দৃষ্টি দিয়ে কথা বলবার অনুমতি দিলেন তখন সেই চিত্রকর বলল- আমার দৃঢ় বিশ্বাস আপনি যা চাচ্ছেন তা আমি তৈরি করে দিতে পারবো। কিন্তু আমি যেহেতু কোন খ্যাতমান চিত্রকর নই তাই আপনি আদৌ কি আমাকে আপনার তৈলচিত্রটি অঙ্কন করার অনুমতি প্রদাণ করবেন?

চিত্রকরের এমন কথা শুনে রাজা বললো- আমি খুব আনন্দের সাথেই আপনাকে আমার এমন একটি চিত্র অঙ্কনের অনুমতি প্রদাণ করলাম। 

বাকি সব নামী-দামী চিত্রকর এমন প্রস্তাবে হতবাক হয়ে গেলো। তারা ভেবেই পেলো না কিভাবে এমন একটি চিত্র তৈরি হবে যেখানে রাজার অপূর্ণতা ঢেকে তাকে বেশ আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপন করা যাবে! তাও আবার সেটি আঁকবে এক অখ্যাত চিত্রকর, যার নাম আজকের এই মজলিসে উপস্থিত হয়েও অনেকের অজানা!


রাজার অনুমতি নিয়েই সেই অখ্যাত চিত্রকর তার কাজ শুরু করলেন। রাজদরবারের এক কোনে তাকে তার প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি প্রদাণ করা হলো। আর সকল সরঞ্জমাদি হাতে পেয়েই শুরু করলো চিত্রকর তার কাজ। 

ঘন্টার পর ঘন্টা পেরিয়ে যাচ্ছে। সব চিত্রকরের মধ্যে ফিস্‌ফিস শব্দে নানা কথা ঘুরছে দরবার জুড়ে। সবাই আশঙ্কা করছে আজই গর্দান যাবে এই গর্দভ চিত্রকরের। 

দুপুর পেরিয়ে সন্ধ্যা, সকলেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে চিত্রকরের তৈরি সেই কাঙ্খিত চিত্রটি দেখবার জন্যে। দিন গরিয়ে সন্ধ্যায় সকলেই ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। কিন্তু তাদের আগ্রহের সামনে তাদের ক্লান্তি আর ক্ষুধার যেন মৃত্যু ঘটেছে আজ। 


সন্ধ্যার বেশ খানিকটা পর চিত্রকর তার হাতের ব্রাশটি রাখলেন। জানালেন তার কাজ সমাপ্ত হয়েছে। সাথে সাথেই দুইজন প্রহরী এসে চিত্রকরের ক্যানভাসটি রাজদরবারের  দিকে ঘুরিয়ে দিলো। মজলিসে উপস্থিত সকল মন্ত্রী, সকল সভাসদস্য, খ্যাতিমান চিত্রকরেরা এমনকি খোদ রাজা নিজেই সেই চিত্র দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে রইলেন! 

এ কি করে সম্ভব! এমনটাও যে হতে পারে তা কি ভেবে দেখেছিল কেউ! 

রাজা ঠিক যেভাবে তার তৈলচিত্রে তার ব্যক্তিত্ব আর বৈশিষ্টকে ফুটিয়ে তুলতে অনুরোধ করেছিলেন, ঠিক ঐভাবেই তাকে এই তৈলচিত্রে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বিস্ময়ে কারও মুখে কোন রা'ও ফুটলো না। 

চিত্রকর তার ঐ তৈলচিত্রে রাজাকে একেছেন এমন একটি ভঙ্গিমায় যেখানে রাজা একটি ঘোড়ার উপর বসে আছেন, আর সে তার একটি চোখ বন্ধ করে আরেকটি চোখ দিয়ে তীরের নিশানা ঠিক করছেন। তার ঐ ভঙ্গীমায় তার সেই অপূর্ণ একটি চোখ আর একটি পা সম্পূর্ণরূপে ঢাকা পড়ে গিয়েছে। আর একই সাথে প্রকাশ পাচ্ছে রাজার বিচক্ষণতা, বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্ব আর রাজা হিসেবে তার রাজ্যের রক্ষণক্ষমতা! 


তৈলচিত্রটি দেখে রাজা দারুণ খুশি হয়ে উঠলেন। আর একই সাথে ঐ অখ্যাত চিত্রশিল্পীকে এই রাজ্যের প্রধাণ চিত্রশিল্পী হিসেবে ঘোষনা দিলেন। সাথে আরও দিলেন মূল্যবান অনেক পুরস্কার। 





⚍⚌⚎⚌⚍⚌⚎  নীতিনিষ্ঠ মূল্যায়ন  ⚍⚌⚎⚌⚍⚌⚎
আমাদের সকলেরই উচিৎ অন্যের ঘাটতিকে উপেক্ষা করে তাদের ইতিবাচক দিককে গ্রহণ করা, তাকে প্রকাশ করা। আমাদের শেখা উচিৎ কিভাবে নিজের ভেতর লুকিয়ে থাকা প্রতিভাটি সকলের সামনে ইতিবাচক ভাবে উপস্থাপন করা যায়। যদি আমরা নেতিবাচক অবস্থাতেও ইতিবাচক চিন্তা করতে পারি, ইতিবাচক মনোভাব দেখাতে পারি তাহলে আমরা আরও বেশি দক্ষতার সাথে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আমাদের সকল সমস্যাকে সমাধান করতে সক্ষম হবো। আমাদের ভেতর যেসকল দূর্বলতা ঘাপটি মেরে রয়েছে, সে সকল দূর্বলতা ঢাকতেই আমরা সদা সচেষ্ট থাকি। অথচ যদি ইতিবাচক মনোভাবের প্রকাশ আমরা ঘটাতে পারি তখন আমাদের ঐসব দূর্বলতা কাটিয়ে আমরা সকলেই একই কাতারে এসে দাড়াতে পারবো। হতে পারবো নিজ নিজ ক্ষেত্রের শ্রেষ্ঠতম একজন! 








…………………………………………
মূল লেখকঃ অজ্ঞাত
সোর্সঃ "Moral Stories" via pinterest.com

রবিবার, মার্চ ১০, ২০১৯

বন্ধ হচ্ছে Google+, ডেটা ব্যাকআপ করে নিন এখুনি


Google এর অনেক গুরুত্বপূর্ণ সেবার মধ্যে অন্যতম একটি সোস্যাল সেবা হচ্ছে Google+

ফেসবুক, টুইটার এর মত এটিও একটি সোস্যাল প্লাটফর্ম যেখানে ব্যবহারকারীরা তাদের লেখা, স্থিরচিত্র, এনিমেটেড চিত্র কিংবা ভিডিও প্রকাশ করতে পারত। শুধুমাত্র গুগলের একাউন্ট ব্যবহার করেই অন্যান্য অনেক সুবিধার সাথে গুগল তাদের এই সোস্যাল সেবাটি ব্যবহারীকে ব্যবহার করতে দিত।

কিন্তু গেল বছর গুগলের ডেভেলপার প্লাটফর্মে গুগল প্লাসের নিরাপত্তা ত্রুটির কারণ দেখিয়ে বন্ধ করার ঘোষনা দেয় তারা। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল-কে তারা জানায়, গুগল গত মার্চেই তাদের এই নিরাপত্তা ত্রুটিটি ধরতে পেরেছে। আর এই ত্রুটির কারণে নতুন করে কোন সরকারী নীতিমালা লঙ্ঘনের জটিলতা এড়াতে ও টেক ওয়াল্ডে নিজেদের ভাবমূর্তি ধরে রাখতেই প্রাথমিক ভাবে তারা ত্রুটির এই ব্যাপারটি গোপন করে। কিন্তু যখন ত্রুটির এই ব্যাপারটি লিক হয়ে গনমাধ্যমে চলে আসে, তখনই গুগলের শেয়ারের দাম ২ শতাংশ কমে যায়।


২০১১ সালে প্রকাশের পর গত বছর পর্যন্ত গুগল প্লাস সকলের জন্যে অবমুক্ত থাকলেও অন্য সকল সোস্যাল মিডিয়ার তুলনায় গুগল প্লাসের ব্যবহারকারী ছিল খুবই নগন্য। এক সমীক্ষায় দেখা যায় যে ২ দশমিক ২ বিলিয়ন রেজিস্টার্ড ইউজারের বিপরীতে সক্রিয় ব্যবহারকারী ছিল ৩৯৫ মিলিয়ন। কিন্তু এই বিশাল ব্যবহারকারীরা দিনে গড়ে মাত্র ৫ মিনিট (প্রায়) সময় কাটাতো গুগল প্লাসের পেছনে।

গুগল প্লাস বন্ধ হলে বর্তমান সকল ব্যবহারকারীর প্রোফাইল(একাউন্ট) ও পেইজও মুছে যাবে। গুগল প্লাসে পোষ্ট করা সকল ছবি, ভিডিও গায়েব হবে গুগল প্লাস বন্ধ হবার সাথে সাথেই। তাই গুগল তাদের ব্যবহারকারীদের কথা মাথায় রেখে তাদের সকল গুগল প্লাস ডাটা ব্যকআপ ও ডাওনলোডের সুবিধা চালু করেছে। যাতে গুগল প্লাস বন্ধ হলেও তাদের পোষ্ট, ছবি আর ভিডিও গুলো ব্যবহারকারী থেকে হারিয়ে না যায়। তবে এই সুবিধাটি কাজ করবে গুগল প্লাস বন্ধ হবার আগেই। গুগল প্লাস বন্ধ হলে এই সুবিধাটি আর কাজ করবে না।


কিভাবে ব্যাকআপ নিবেন আপনার গুগল প্লাসের ডেটা?

গুগল প্লাসের ডেটা ব্যাকআপ নেবার জন্যে প্রথমে ব্রাউজারে আপনি আপনার গুগল একাউন্টে লগইন করুন। লগইন শেষে নিম্নবর্ণত ধাপ গুলো অনুসরণ করুন-


  • সাধারণ ভাবে এই পৃষ্ঠাটিতে আপনার গুগল প্লাসের সকল পোষ্ট, ছবি, ভিডিও, কম্যুনিটি ডেটা ব্যাকআপ করার জন্যে পূর্ব থেকেই সিলেক্ট করা থাকবে। তারপরও যদি আপনি কোন নির্ধারিত বিষয় বন্তু বাদ দিতে বা যুক্ত করতে চান তাহলে 'All Google+ Stream data included' লেখাটিতে ক্লিক করুন। তারপর লিস্ট থেকে পছন্দ মত ডেটা সিলেক্ট করুন কিংবা বাদ দিয়ে দিন।
     
  • পছন্দমত ব্যাকআপ করার ডেটা সিলেকশনের পর 'Next step' বাটনে ক্লিক করুন।



  • নতুন ফর্মে থাকা Delivery method থেকে আপনার সুবিধা অনুযায়ী Delivery মেথড পছন্দ করুন। এখানে ৫ ধরণের মেথড রয়েছে-
    - Send download link via email(আপনার ফাইল গুলোর ডাওনলোড লিংক আপনাকে মেইলের মাধ্যমে পাঠাবে)
    - Add to Drive(আপনার গুগল প্লাসের ব্যাকআপ ফাইল আপনার গুগল ড্রাইভেই সংরক্ষণ করবে)
    - Add to Dropbox(আপনার গুগল প্লাসের ব্যাকআপ আপনার Dropbox একাউন্টে সংরক্ষণ করার সুবিধা দিবে)
    - Add to OneDrive(আপনার গুগল প্লাসের ব্যাকআপ আপনার OneDrive একাউন্টে সংরক্ষণ করার সুবিধা দিবে)
    -Add to Box(আপনার গুগল প্লাসের ব্যাকআপ আপনার Box একাউন্টে সংরক্ষণ করার সুবিধা দিবে)
     
  • File type থেকে আপনার সুবিধা অনুযায়ী ফাইলের ধরণ নির্ধারণ করুন। .zip ফাইল সাধারণত Windows অপারেটিং সিস্টেমে কোন এ্যাপ ছাড়াই এক্সেস করা যায়। আর .tgz ফাইল ব্যবহার করতে হলে windows অপারেটিং সিস্টেমে আপনাকে 7-zip বা PeaZip এ্যাপের মত কোন এ্যাপ ব্যবহার করতে হবে।
     
  • Archive size থেকে আপনার সুবিধা অনুযায়ী আর্কাইভ সাইজ সিলেক্ট করুন। আপনি যদি স্বল্প প্যাকেজের নেট ব্যবহারকারী হয়ে থাকেন তাহলে Archive সাইজ থেকে 1GB বা 2GB সিলেক্ট করুন। আর যদি ব্যান্ডউইথ নিয়ে ঝামেলা না থাকে তাহলে 10GB অথবা 50GB-র যে কোন একটি সিলেক্ট করতে পারেন। তবে আমার পরামর্শ হিসেবে আমি বলবো আপনি আপনার Archive ফাইল গুলো 2GB করে আর্কাইভ করুন। এতে আপনার ফাইল ডাওনলোড এবং স্থানান্তর সুবিধা উভয়ই সহজ হবে।
     
  • এরপর 'Create archive' বাটনটিতে ক্লিক করুন। তবে আপনি যদি Delivery method সিস্টেমে Add to Dropbox, Add to OneDrive অথবা Add to Box সিলেক্ট করে থাকেন তাহলে সব শেষে 'Link account and create archive'  বাটনে ক্লিক করে আপনার Dropbox, OneDrive বা Box একাউন্টের সাথে লিংক করে দিতে হবে। সেখানে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে সহজেই আপনি আপনার ব্যাকআপ ফাইলটি Dropbox, OneDrive বা Box একাউন্টে পেয়ে যাবেন।

এখন আপনাকে বেশ কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে। আপনার গুগল প্লাসের এক্টিভিটি এবং পোষ্টের সংখ্যার উপর ভিত্তি করে আপনার অপেক্ষার সময়ের দৈর্ঘ কম/বেশি হবে। ব্যাকআপ শেষে আপনাকে মেইলের মাধ্যমে আপনার ব্যাকআপ ডাওনলোড করার লিংক জানিয়ে দেয়া হবে। 





তথ্যসূত্রঃ Google, Dustn.tv

সম্প্রতি দেখা সিনেমাঃ Rampage (2018)


২০১৮ সালের এপ্রিলে মুক্তি পায় ‘দ্যা রক’ ক্ষ্যাত ‘ডুয়েইন জনসন’ এর এ্যাকশন ঘরনার চলচিত্র 'Rampage'। মুভিটিতে ডুয়েইন জনসন অভিনয় করেন ডেভিস ওকোয়ে চরিত্রে।

মুভিতে দেখানো হয় ডেভিস একজন প্রাক্তন মর্কিন সেনা যে বর্তমানে বন্যপ্রাণী দেখাশোনার একটি পার্কে কর্মরত আছে। ডেভিস মানুষের চাইতে বন্যপ্রাণীদের সাথে বেশি বন্ধুভাবাপন্ন একজন ব্যক্তি। এই পার্কের বন্যপ্রাণীদের মধ্যে ‘জর্জ’ নামের একটি গরিলা ডেভিসের প্রিয় বন্ধু। আর্মিতে বন্যপ্রাণীদের রক্ষনাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকাকালীণ সময় সে এই বিলুপ্তপ্রায় গরিলাটিকে উদ্ধার করে এখানে নিয়ে আসে। আর একই সাথে ডেভিসের সাথে জর্জের বোঝাপড়াটা দারুণ ভাবে গড়ে উঠে। জর্জ গরিলা হলেও সে দারুণ বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন একটি গরিলা, এটি মুভির শুরুতেই চমৎকার ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।


এদিকে ‘এনার্জিন’ নামক এটি প্রতিষ্ঠান তাদের একটি প্রজেক্টে জিন মেনিপুলেশন করে একটি বায়ো-উইপন তৈরি করে, আর সেই উইপনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্যে একে পাঠায় তাদের স্পেসশিপে অবস্থিত ল্যাবে। সেখানে পরীক্ষাধীন সময় এই উইপনের মারাত্বক দিকটি প্রাকাশ পায়। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে, নিয়ন্ত্রণের মাত্রা ছাড়িয়ে সেটি। টেস্ট সাবজেক্ট হিসেবে ব্যবহৃত ইদুরটি ততক্ষণে রূপান্তরিত হয়েছে এক ভয়ানক দানবে। সুযোগ বুঝেই খুন করেছে স্পেসশিপে কর্মরত প্রায় সকলকে। তার মাঝেই কোনভাবে টিকে যাওয়া একজন বিজ্ঞানী এই পরিস্থিতির আপডেট জানিয়ে সাহায্য প্রার্থনা করে ‘এনার্জিন’ এর প্রতিষ্ঠাতা ক্লায়ার উইডেন এর কাছে। কিন্তু এমন পরিস্থিতির কথা জেনেও ক্লায়ার দৃঢ়কণ্ঠে জানায় যে, তাকে কখনই সহায়তা করা হবে যখন সে তাদের বায়ো-উইপনের স্যাম্পল এনার্জিন-এর কাছে পুনরায় হস্তান্তর করতে পারবে। প্রতিকূল পরিবেশে থেকেও শেষ পর্যন্ত স্পেসশিপের ধ্বংসযজ্ঞে বেঁচে যাওয়া বিজ্ঞানি কাঙ্খিত ঐ স্যাম্পল উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। কিন্তু তবুও দুর্ঘটনার কবল থেকে সে বাঁচতে পারে নি। বিদ্ধস্ত যে ইমার্জেন্সি স্কেপশিপে করে সে রওনা হয়েছিল তা পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে ঢুকতেই বিষ্ফোরণের স্বীকার হয়। আর একই সাথে ঐ স্পেসশিপে থাকা ঐ বায়ো-উইপনের স্যাম্পল ছড়িয়ে পড়ে আলাদা আলাদা তিন প্রান্তে।

বায়ো-উইপনের স্যাম্পল ছড়িয়ে পড়া তিন প্রান্তে আক্রান্ত হয় তিনটি বন্যপ্রাণী, যার একটি ছিল জর্জ। বায়ো-উইপনের প্রভাবে আক্রান্ত হয়ে জর্জ অশান্ত হয়ে উঠে। রাতের আধারেই সে হিংস্রাত্মক হয়ে আক্রমন করে বসে তার সাথে থাকা অন্য আরেকটি গরিলাকে, জর্জের হাতে খুন হয় সেই গরিলা। এদিকে একই সাথে জর্জের মধ্যে পরিবর্তন আসতে থাকে। জর্জ তার পরিবর্তন বুঝতে পেরে নিজেই ভীত হয়ে উঠে। নিরাপত্তা কর্মীরা তাকে আলাদা করে ফেলে বাকি গরিলাদের থেকে। পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে বুঝতে পারে তার মাঝে কোন একটা সমস্যা হয়েছে, যা স্বাভাবিক নিয়মে হবার নয়। বিচলিত হয়ে পড়ে ডেভিস।



অন্যদিকে মিলিয়ন ডলারের প্রজেক্ট এভাবে হাতছাড়া হয়ে যাবার কারনে পাগল হয়ে উঠে ক্লায়ার। যে কোন মূল্যেই ফিরে চায় সে তার প্রজেক্টের স্যাম্পল। আর সেই ধারাবাকিহতায় ঐ স্যাম্পল উদ্ধারে পাঠায় ভাড়া করা কিছু খুনে সৈনিকদের। কিন্তু স্যাম্পল উদ্ধারের এই মিশন ব্যর্থ হয় যখন খুনে সৈনিকদের সবাই মারা পড়ে বায়ো-উইপনের প্রভাবে আক্রান্ত নেকড়ের কবলে।


ওদিকে নিজের আবিস্কারের এমন ভয়ানক অবস্থা জানতে পেরে প্রাক্তন এনার্জন এর কর্মী কেইট চলে যায় জর্জকে সংরক্ষণ করা পার্কে। সেখানে সে ডেভিসকে বোঝাতে সক্ষম হয় যে, এই অবস্থা থেকে সে জর্জকে রেহাই দিতে সক্ষম। আর এরই মাঝে জর্জ নিজের নিয়ন্ত্রন হারায়। ক্ষুদ্ধ হয়ে জর্জ আপন সেল ভেঙ্গে বেরিয়ে পড়ে লোকালয়ে। অবশ্য খুব বেশিদূর যেতে পারে নি সে। এফ.বি.আই এর অতর্কিত আক্রমনে জর্জ সঙ্গা হারায়। তারা জর্জকে নিয়ে যেতে চায় তাদের ক্যাম্পে। সাথে নিয়ে যায় ডেভিস আর কেইটকে। ডেভিসের অনুরোধ স্বত্তেও এই অভিযানের দায়িত্বে থাকা হার্ভে রাসেল জর্জকে নিয়ে রওনা হয় উড়োজাহাজে।

পথিমধ্যে জর্জ আবারও তার জ্ঞান ফিরে পেয়েই শুরু করে তার ধ্বংসযজ্ঞ। ডেভিস উপস্থিত বুদ্ধি প্রয়োগে কেইট এবং রাসেলকে উদ্ধার করে এই ধ্বংসযজ্ঞ হতে। জর্জের তান্ডবে ভুপতিত হয় তাদের বহনকারী উড়োজাহাজ। তারা ধারণা করেছিল বিমান ভুপতিত হবার এই ঘটনাতেই মারা পড়বে জর্জ। কিন্তু সবাইকে ভুল প্রমাণ করে জর্জ এই ধ্বংসস্তুপ থেকে পালায়।

এরই মাঝে ক্লেয়ার নতুন ফন্দি বের করে। সে তাদের যোগাযোগ মডিউলের বিশেষ পরিবর্তন এনে একত্রিত করতে চায় বায়ো-উইপনের প্রভাবে আক্রান্ত জানোয়ার গুলোকে। সে এমন এক মাইক্রোওয়েভ সাউন্ডের সৃষ্টি করে যা শুনে আক্রান্ত জানোয়ার গুলি ধেয়ে আসবে শব্দ উৎপাদনকারী এনার্জিকের টাওয়ারের দিকে। আর সেই শব্দের প্রভাবেই তিন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা তিন জানোয়ার ধেয়ে আসতে থাকে শহরের দিকে। মার্কিন মেলিটারিরা চেষ্টা করে তাদের থামাতে, এম্বুস করে এদের ধ্বংস করতে চেষ্টা করে। বোমা হামলা চালায়, কিন্তু কিছুতেই কোন লাভ হচ্ছিল না। বরং তাদের গড়া একের পর এক নিরাপত্তা বলয় ভেঙ্গে চুরমার করে শহরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল জানোয়ারগুলো।



মার্কিন মেলিটারি অবস্থার নিয়ন্ত্রন হারিয়ে শহর থেকে মানুষকে নিরাপদ অবস্থানে সরিয়ে নিতে শুরু করে। আর জানোয়ার গুলোর ধ্বংসলীলা থামাতে বিষ্ফোরক দিয়ে পুরো শহর সহ গুড়িয়ে দেবার প্রস্তুতি নেয়। ডেভিস এমন সিদ্ধান্ত থেকে ধারণা করে যে এই অল্প সময়ে পুরো শহরের লোকজন বের করে নিয়ে আসা সম্ভব নয়। আর তাই কেইটকে নিয়ে মিলিটারি ক্যাম্প থেকে পালিয়ে রওনা হয় এনার্জিন-এর দিকে।

শেষ পর্যন্ত অনেক ক্লাইমেক্স পেরিয়ে ডেভিস আর কেইট বায়ো-উইপনের এন্টিডোট উদ্ধার করে জর্জকে তার নিয়ন্ত্রণে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়। আর একই সাথে জর্জের সহায়তায় বাকি দুই জানোয়ার শেয়াল ও কুমিরকে খুন করে দূর্যোগপূর্ণ অবস্থার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আসে নিজেদের দিকে। শহরশুদ্ধ মানুষকে হিংস্র জানোয়ার আর বোমার বিষ্ফোরনের নিশ্চিত মৃত্যু থেকে বের করে নিয়ে আসে ডেভিস এবং জর্জ।




যারা নিয়মিত মুভি দেখেন তারা এই একই ধরণের স্ক্রিপ্ট ধরে এগিয়ে চলা অনেক-অনেক মুভিই ইতোমধ্যে দেখে ফেলেছেন বলেই আমার বিশ্বাস। খুব অল্প কিছু পরবর্তন ছাড়া এই একই ধরণের দুর্যোগপূর্ণ মারমার-কাটকাট মুভি রয়েছে বেশ অনেক সংখ্যক। গরিলার সাথে মানুষের যোগাযোগ আর দুষ্টামি-বুদ্ধিতে ভরপুর গরিলা ছাড়া বাকি মুভিতে কখন কি হতে পারে তা প্রায় সকল হলিউড ভিত্তিক মুভির দর্শকেরা সহজেই অনুমান করে নিতে পারবে। ডেভিসের চরিত্রে অভিনয় করা রককে কিছু স্থানে দেখানো হয়েছে অতিপ্রাকৃতিক শক্তিধর একজন হিসেবে। আবার বায়ো-উইপন দ্বারা আক্রান্ত জানোয়ার গুলোকে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন আকারে দেখানো হয়েছে, যা গল্পের সাথে একদমই বেমানান ঠেকেছে।

প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত এ্যাকশন সিনেমা হিসেবে উপস্থাপন করতে গিয়ে অনেক বেশি বিষ্ফোরণ আর ধ্বংসলীলা দেখানো হয়েছে। বারবার করে যেন নিজে ইচ্ছেতে ধরা দিচ্ছিল উদ্ধার করতে আসা যুদ্ধ বিমান গুলো। যদিও মুভি স্ক্রিপ্টে “বন্যপ্রাণীর সাথে মানুষের মেলবন্ধন”-এর ব্যাপারটাকে হাইলাইট করে দেখানো হয়েছে, তবুও এখানে গল্পে/স্ক্রিপ্টে অনেক বেশি পরিমানে বিচ্ছিন্নতা আর অসঙ্গতিপূর্ণ বিশৃঙ্খলাই নজরে এসেছে। মুভির একটি দৃশ্যস্তর পার করে অন্য দৃশ্যে প্রবেশের সময় চরিত্রগুলোও যেন তাদের দিক হারিয়ে ফেলছিল বারবার। এছাড়া ডেভিস এবং জর্জ চরিত্রদুটি ছাড়া বাকি চরিত্রগুলোর কোন প্রভাবই যেন মুভিজুড়ে অনুপস্থিত লেগেছে।

সিনেমার ঘটনা ছাড়াই যাদের কাছে ধুম-ধাম পছন্দ, তাদের কাছে মুভিটি ভালো লাগতে পারে। কিন্তু যারা এ্যাকশনের সাথে গল্পের ধারাবাহিকতা আর গভীরতা পছন্দ করেন, তাদের কাছে হয়তো মুভিটা পানসেই লাগবে।



যদিও IMDB-তে Rampage রেটিং পেয়েছে ১০ এর মধ্যে ৬.১
কিন্তু ব্যক্তিগত রেটিং হিসেবে আমি মুভিটিকে ১০ এর মধ্যে ৩ দেবো।



সস্তা বিনোদনের আশা নিয়ে মুভিটি দেখা যেতে পারে। ব্যাক্তিগত ভাবে মুভিটি আমার তেমন আকর্ষণীয় কিছু মনে হয়নি। আশা করছি যারা ইতোমধ্যে মুভিটি দেখেছেন তারা মুভিটি সম্পর্কে নিজেদের মতামত জানাবেন 🙂






বুধবার, মার্চ ০৬, ২০১৯

প্রণয়িনী, কিছু অনুভূতি তোমার জন্য...



কিছু রাত বিভীষিকার ভয়ে জোৎস্নায় নিজেকে ভাসিয়ে দেয় না,
কিছু মেঘ উন্মাদনার ভয়ে অঝোরে বর্ষণ ঝড়িয়ে যায় না।
কিছু বাতাস লাগাম হারাবার ভয়ে ঝড়ো বেগে বয়ে যায় না,
কিছু তারা অনিষ্টের ভয়ে আপন আলোয় দিশা দেখায় না।

কিছু উত্তাপ পুড়ে যাবার তিব্রতায় আপন গণ্ডি অতিক্রম করে না,
কিছু ধোঁয়া অহেতুক অন্ধকারে তোমার দুনিয়া ভাসিয়ে দেয় না।
কিছু জলোচ্ছাস আঙ্গীনা ভাসিয়ে দেবার ভয়ে সমুদ্র ছেড়ে ডাঙ্গায় চড়ে না,
কিছু বর্জপাত আতঙ্ক ছড়াবার ভয়ে মেঘের আড়াল ছেড়ে দৃশ্যমান হয় না।

কিছু ফুল হিংস্রতার ভয়ে কলি ছাড়িয়ে ফুটে উঠে না,
কিছু সুবাস তীব্রতার ভয়ে নিজেকে ছড়িয়ে বিলীন হয় না।
কিছু মায়া কাঁদাবে বলে কখনো নিজেকে প্রকাশ করে না,
কিছু মমতা আকড়ে ধরার ভয়ে আপন শাখা মেলে ধরে না।

কিছু শব্দ কলঙ্কতার ভয়ে জনসম্মুখে উচ্চারিত হয় না,
কিছু ছন্দ সময়ের উন্মত্ততার ভয়ে শব্দরূপে সামনে আসে না।
কিছু সুর কাতরতার মাত্রা ছাড়াবে বলে বাদ্য রূপে বেজে উঠে না,
কিছু গান অশ্রুশিক্ত করার ভয়ে কারো গলায় ধরা দেয় না।


প্রণয়িনী,
তেমনি করে তোমার অনুযোগের ভয়ে আপন অনুভূতির প্রকাশ করি না...



ছবিঃ অরুন শিবপ্রসাদ (মূল), ঘষামাজায় অধম

রবিবার, মার্চ ০৩, ২০১৯

সুরের যাদু


সুরের মাঝে কি জাদু আছে কে জানে? কেউ সুরের এই যাদুর মোহে পড়ে হারিয়ে যায় আজানায়। আবার কেউ কেউ কেউ নিজেকে খুঁজে পায় এই সুরের মাঝেই। সেই অনাদিকালের শুরু থেকে মানুষ সুরের মুর্ছনায় হারাতে শিখেছিল। লক্ষ কোটি বছর পরেও সেই হারিয়ে যাবার আগ্রহে মানুষ সুরের পেছনে অন্ধের মত ছুটে বেড়ায়।

কি অসম্ভব ক্ষমতা এই সুরের! হ্যামিলনের ইঁদুর থেকে শুরু করে বাচ্চারাও দল বেঁধে হারিয়ে গেছে এই সুরের মোহনীয় লাইন ধরে। আজ অব্দি কেউ আর তাদের খুঁজে পায়নি। না কোন নগরে, না কোন বন্দরে। তারা যেন সুরের মতই সুরের মাঝে হারিয়ে গেছে, মিশে গেছে বাতাসে।

ক্ষমতা, লোভ, লালসা -এই সবই হার মেনেছে এই সুরের সামনে। আহংকার, আত্মগরিমা, দাম্ভিকতা - সবই ধুলিসাৎ হয়েছে এই সুরের কারণে। যে মন কোন বাঁধনে জড়ায় না, সেই মনও কোন না কোন এক গলিতে অখ্যাত কোন রেস্তোরায় বেঁজে যাওয়া কোন এক নাম না জানা বাদ্যযন্ত্রের টুং টাং শব্দতে নিজের পাথরসম হৃদয়টাকে বেঁধেছে। হয়তো স্বীকার করেনি কোন কালে, তবুও সেই সুর কখনো কানে ভেসে আসলে তাতে নিজের তৃষ্ণা মিটিয়েছে খুব সর্ন্তপণে।

উল্লাস, আনন্দ, বিজয় - এই সবই প্রকাশ পেয়েছে সুরে। কৃতজ্ঞতা, মহানুভবতা, দয়া - এরাও নিজেদের প্রকাশ আর প্রচার ঘটিয়েছে এই সুরের পথে হেটে। প্রতিটা শোক কিংবা প্রতিটা আনন্দের উল্লাস সুরের এই অলিগলির পথ ধরে অন্ধকার পথের কোণ থেকে উঠে গেছে রাজপ্রাসাদে। কখনো শোকের অশ্রু ঝড়িয়ে আবার কখনো আনন্দ অশ্রু বিসর্জনের মাধ্যমে মনের গহীন থেকে ভাব গুলিকে প্রকাশ করিয়েছে জনসমুদ্রে।

সুরের এই মাদকতা কাউকেই ছেড়ে কথা বলেনি। মোয়াজ্জিনের আজান থেকে শুরু করে কোরআনের তেলাওয়ালে রয়েছে তার উপস্থিতি। মন্দিরের ঘন্টা থেকে পুজার মন্ত্র পাঠের পড়তে পড়তে রয়েছে তার অবস্থান। গির্জার ঘন্টা থেকে শুরু করে সান্তাক্লোজের স্লেজ গাড়িতে রয়েছে তার বিস্তৃতি।

কেউ তার কন্ঠে ধারণ করেছে সুর আর কেউ তা নিয়ে এসেছে তাদের হাতের আঙ্গুলে। কেউ কথার পর কথাকে সাজিয়ে গেছে সুরে, আর কেউ কেউ সেতারার তার ধরে গুঞ্জন তুলতে তুলতে সৃষ্টি করেছে ঝড়। আর তাদের সেই ঝড়ে, সৃষ্টির গহীন তলে মানুষ বিভোর হয়ে হারিয়েছিল, হারাচ্ছে আর হারাতেই থাকবে নিজেকে।

এই সুরের ভেলায় চড়ে কত ভালোবাসার গল্প পার করেছে কত শত নীল নদ। শত শত বেহালার তারে প্রকাশ ঘটেছে ছড়িয়েছে বেদনার গল্প। একতারার কম্পনে সৃষ্ট সুরে প্রকাশ পেয়েছে হাজারো মূল্যবোধ। দোতারার সুর ছড়িয়েছে কত কাব্যকথা। পিয়ানো গুলো শব্দের কম্পনে শত শত মানুষের অস্তিত্বকে নাড়িয়ে গেছে। আর গিটারের তার গুলো আপন উন্মাদনার সুর ছড়িয়ে ছিটিয়ে উন্মত্ততায় আগুন জ্বালিয়েছে যুব হৃদয় গুলিতে। শত অবজ্ঞাতেও কেউ মুক্তি পায়নি এই সুরের কবল থেকে।

কত হঠকারী সুরের এই চিৎকারে নিজের কুৎসিত কর্মমকে সংবরণ করেছে। কত যালিমের মনে এই সুর সৃষ্টি করেছে ভয়। কত মুক্তিকামী মানুষের মনে সাহস যুগিয়েছে এই সুর। কত ভীত সম্প্রদায়কে আগ্রগামী করে দিয়েছে সে সময়-অসময়ে। কত রাজত্বের সৃষ্টি হয়েছে এই সুরের সিড়ি বেঁয়ে, আবার কত রাজত্ব ধ্বংস হয়ে বালিতে মিশে গেছে এই সুরের তেজস্বীয়তার সামনে। কত পরিচয় লুটেছে এই সুরে আর কত পরিচয় গড়েছে এই সুরের শেষে। সুরের এই অবদানের হিসেব কখনো বলে কয়ে শেষ করার নয়।

এইসব সুর ভেসে চলুক মানুষের মনে, ভাসিয়ে নিয়ে যাক মানুষকে তেপান্তরে। যুগ যুগান্তরের সুর এগিয়ে চলুক তার আপন গতিতে। ধ্বংসে, সৃষ্টে আর ভালোবাসায় জড়িয়ে রাখুক সবাইকে....


পরিশেষে সুরের যাদুতে ঘেরা একটি পরিবেশনা..







শনিবার, আগস্ট ২৫, ২০১৮

২৭ বছরে লিনাক্স!


একটি কম্পিউটারকে চালাতে গেলে একটি চালক বা অপারেটিং সিস্টেমের প্রয়োজন পড়ে। শুরুতে কম্পিউটার বলতে মানুষ বুঝতো বিশাল বিশাল মেশিন। আর সেই মেশিন দিয়ে করা হতো খুব গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু নির্দিষ্ট কিছু কাজকর্ম। কিন্তু তার সবই আটকে থাকতো মেশিনকে কাজ করানোর জন্যে অপারেটিং সিস্টেমের দূর্বলতার সামনে। 

অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে অনেকেই কাজ করছিল তখন। প্রতিটা মেশিনের জন্যে আলাদা আলাদা করে অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করা হতে লাগলো। পোর্ট করে একটা একটা ফিচার একটা একটা মাইক্রোপ্রসেসরে যুক্ত করা শুরু হলো। কিন্তু এইসবই আটকে থাকলো ব্যবসায়িক ধ্যাণ ধারণাকে সামনে রেখে। 

ধরুন আপনি একটি মেশিনের মালিক, এবং আপনার টাকা দিয়ে কেনা একটি অপারেটিং সিস্টেমও রয়েছে তাকে চালাবার জন্যে। কিন্তু সেই অপারেটিং সিস্টেমটি আপনার মেশিনকে দিয়ে আপনি যা করতে চাচ্ছেন তা করতে পারছে না। এমন অব্স্থায় যদি আপনি আপনার অপারেটিং সিস্টেমটার দুটো ফিচার পরিবর্তন করে নিতে পারেন, তাহলেই আপনার কাজ ঠিক মত হবে। কিন্তু চাইলেই আপনি এই কাজটা করতে পারবেন না। কারণ এটি করার অনুমতি আপনার নেই!



তখনকার প্রায় সকল অপারেটিং সিস্টেমের মত এমনই প্রতিবন্ধকতা ছিল মিনিক্স (Minix) অপারেটিং সিস্টেমেও। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া এক সুইডিস যুবক নিজের 386 পিনের মাইক্রোপ্রসেসরের জন্যে মিনিক্সের আদতে একটি অপারেটিং সিস্টেম তৈরির কাজ শুরু করল। সেই যুবকটির নাম লিনুস বেনেদিক্‌ত তোরভাল্দ্‌স। লিনুস কাজ শুরুর প্রায় ৪ মাস পর তার কাজের একটি ছোট সংস্করণ সকলের জন্যে উন্মুক্ত করে দিল। আর তার সাথে চাইলো মানুষের মতামত।

লিনাক্স সম্পর্কে তার প্রথম বার্তাটির অনুবাদ নিচে তুলে দিলাম- 

হইতে: torvalds@klaava.Helsinki.FI (লিনুস বেনেডিক্ট টোভাল্ডস)
নিউজগ্রুপ: comp.os.minix
বিষয়: আপনি মিনিক্সে সর্বাধিক কি দেখতে চান?
সারাংশ: আমার নতুন অপারেটিং সিস্টেমের জন্য ছোট জরিপ
বার্তা-ক্রম: <1991Aug25.205708.9541@klaava.Helsinki.FI>
তারিখ: ২৫ আগস্ট ৯১ ২০:৫৭:০৮ GMT
সংগঠন: University of Helsinki
হ্যালো মিনিক্স ব্যবহারকারীগন–
আমি ৩৮৬ এটি ক্লোন  একটি প্রসেসরের জন্যে একটি অপারেটিং (এটি নেহায়েতই সখের বসে, খুব বড় কিছু নয় এবং এটি জিএনইউ এর মত পেশাদারীও নয়) সিস্টেম নিয়ে কাজ (বিনামূল্যের) করছি। এটির পেছনে আমি গত এপ্রিল থেকে কাজ করে যাচ্ছি, এবং শুরু করার জন্যে এটি প্রায় প্রস্তুত। যেহেতু এটি প্রায় (ফাইল-সিস্টেম এবং কাঠামোগত দিক দিয়ে) মিনিক্স অপারেটিং সিস্টেমের অনুরূপ তাই যারা মিনিক্স পছন্দ/অপছন্দ করেন তাদের সকলের মতামত আশা করছি।
আমি এটিতে bash(1.08) এবং gcc(1.40) এর বৈশিষ্ট সমূহ নিয়ে এসেছি, এবং প্রায় সবকিছুই কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে মাসখানিকের মধ্যে এর থেকে বাস্তবিক কিছু একটি পেতে যাচ্ছি, এবং এর মধ্যে মানুষ কি কি সুবিধাদি চায় তা আমি জানতে ইচ্ছুক। যে কোন ধরণের পরামর্শ গ্রহণযোগ্য, কিন্তু তাদের বাস্তবায়ণের প্রতিশ্রুতি আমি দিতে পারছি না :-)
লিনুস (torvalds@kruuna.helsinki.fi)
বি.দ্রঃ এটি মিনিক্স কোড থেকে মুক্ত, এবং এতে মাল্টি-থ্রেড ফাংশন রয়েছে। এটি বহনযোগ্য নয় (৩৮৬ টাস্ক সুইচের ব্যবহার সমূহ) এবং সম্ভবত AT-Harddisk ছাড়া সম্ভবত এটি অন্যকিছু সমর্থন করবেও না, কারণ আমার তাই আছে :-( 

লিনুসের সেই ছোট্ট সখের কাজটি ধীরে ধীরে ডালপালা গজিয়ে উঠতে লাগলো। তার সেই সখের প্রজেক্টের নাম হলো 'লিনাক্স'। নানা প্রতিকূলতা পার করে তার তৈরি সেই লিনাক্স আজকে শতকরা ৯৬ শতাংশ সুপার কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম। বিশ্বের যত ক্লাউড কম্পিউটার রয়েছে তার বড় একটা অংশ পরিচালনায় ব্যবহার করা হয় এই লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম! এন্টারপ্রাইজ সল্যুশন হিসেবে লিনাক্সের গ্রহণযোগ্যতা এখন বিশ্বজোড়া। 

আর এই লিনাক্সকে ব্যবহার করা যায় একদম বিনামূল্যে। চাইলে পরিবর্তন করে নেয়া যায় নিজের ইচ্ছে মত। নেই কোন বাধা, নেই কোন নিষেধ। এন্টারপ্রাইজ লিনাক্স সাপোর্টের পাশাপাশি লিনাক্সকে নিয়ে গড়ে উঠেছে অনেক অনেক কম্যুনিটি। যারা নিরন্তর ভাবে একে উন্নত থেকে আরও উন্নত অবস্থানে পৌছে নিচ্ছে প্রতিটা মুহুর্তে। 


হাটি হাটি পা পা করে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম আজ ২৬ বছর পার করে ২৭ বছরে উর্ন্নীত হলো। পার্সোনাল কম্পিউটার, স্মার্টফোন থেকে শুরু করে সুপার কম্পিউটার, সবস্থানেই লিনাক্সের জয়জয়কার। 


শুভ জন্মদিন লিনাক্স, ধন্যবাদ লিনুস তোরভাল্দ্‌স 💗