বৃহস্পতিবার, মার্চ ৩০, ২০১৭

বদি এণ্ড রঞ্জুর কথোপকথন —৮



বদি ভাইঃ রঞ্জু জানিস, মাইক্রোসফট এবার একটা বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছে!

রঞ্জুঃ কি বিপ্লব ভাই!

বদি ভাইঃ নাহ্‌ তোমারে দিয়ে কিস্যু হবে না রঞ্জু। হাল দুনিয়ার কোন খোঁজ খবরই তুমি রাখো না।

রঞ্জুঃ এইটা তো পুরানো কথা 😯 সবাই জানে, নতুন কিছু বলেন।

বদি ভাইঃ নতুন কিছু যে বলবো সেইটা তো তোমার বোঝার ক্ষমতা থাকতে হবে। ইদানীং তো তোমার বোঝার ক্ষমতার উপরেই আমার বিশাল সন্দেহ জন্ম নিয়েছে।

রঞ্জুঃ আহ্‌! বদি ভাই। এইসব বাদ দেন। আগে বলেন মাইক্রোসফট এমন কি বিপ্লব ঘটাইল যা নিয়ে আপনি এত্ত উত্তেজনা ফিল করতেছেন।

বদি ভাইঃ রঞ্জু, ঘটনাটা যদি তুমি বুঝতে তাহলে তুমিও আমার মত উত্তেজনা ফিল করতে। এত বড় বিপ্লব এর আগে কেউ ঘটাইতে পারে নাই। প্রযুক্তি দুনিয়ায় এত বড় একটা বিপ্লব ঘটানো কিন্তু চাট্টিখানি কথা না!

রঞ্জুঃ বদি ভাই, এত ঘুরাই প্যাঁচাই না বইল্লা মূল ঘটনাটা বলেন না। হুদাই এত্ত প্যাঁচাই কি লাভ!

বদি ভাইঃ 😩 এই হইলো তোমাদের সমস্যা। তোমরা মূল বক্তব্যের আগে তার ভূমিকা শুনতে চাও না। এর ইতিহাস তোমাদের শুনতে কষ্ট লাগে। তোমরা শুধু মূল ঘটনায় ঢুকে যেতে চাও। ফ্যাক্ট বাদ দিয়ে ইফেক্ট নিয়ে শুধু তোমার যত চিন্তা!

রঞ্জুঃ 😒 অকা! বলেন আপ্নের বিপ্লবের পেছনের ইতিহাস আর ফ্যাক্ট।

বদি ভাইঃ নাহ্‌, থাক। বলব না। হুদাই তোমারে বিরক্ত করে করে বোর করার কোন মানে নাই। আর এত বকর বরক করারও সময় নেই আমার।

রঞ্জুঃ হ্যাঁ, সেইটাই। এখন দ্রুত বলেন ঘটনাটা কি!

বদি ভাইঃ ঘটনা হইলো, দীর্ঘ ২৪ বছর অক্লান্ত পরিশ্রমের পর মাইক্রোসফট অবশেষে সফল ভাবে তাদের অপারেটিং সিস্টেম হতে BSoD সমস্যা দূর করতে পেরেছে। বল, এইটা কি চাট্টিখানি কথা! BSoD সমস্যা যে কত বড় সমস্যা সেইটা কি তোমরা এই জামানায় আর বুঝবা!!

রঞ্জুঃ BSoD কি জিনিষ!!  😲 এইটা আবার কুন ভাইরাস!! কুন এন্টিভাইরাস লাগবে এইটারে রিমুভ করতে!!!

বদি ভাইঃ আরে আহাম্মক এইটা কোন ভাইরাস না। এইটার মানে হইলো Blue Screen of Death

রঞ্জুঃ Blue Screen of Death আবার কি জিনিষ!

বদি ভাইঃ আরে ঐ যে, কম্পুটারের ঝামেলা হইলে যে মনিটর শুধু নীল হয়ে যেতো। ঐটারে বলে Blue Screen of Death সমস্যা।

রঞ্জুঃ ওহ্‌! আচ্ছা। তা এই সমস্যা কিভাবে সমাধান করলো তারা?

বদি ভাইঃ আরে, বিশাল এক সমাধান নিয়ে এসেছে মাইক্রোসফট। এত বিশাল সমাধান যা ইতিপূর্বে আর্কিমিডিসও ভাবতে পারে নাই। সে তো কেবল ছুটুখাটু জিনিষ নিয়ে চিন্তা করে 'ইউরেকা' 'ইউরেকা' করে চিল্লাইতো। এত বড় সমস্যা তার মাথায় দিলে সে নির্ঘাত বাথটবের পানিতে ডুবে সুইসাইড খাইতো।

রঞ্জুঃ বদি ভাই 😯 আপনি আবারও টপিকের বাইরে চলে যাচ্ছেন। জানেন না, এত বড় লেখা এখন আর কেউ পড়তে চায় না?

বদি ভাইঃ ওহ! হ্যাঁ! তাই তো। খেয়ালই ছিলো না। আসলে বুড়া মানুষ তো, সুযোগ পেলেই খালি কথা কইতে মুঞ্চায়।

রঞ্জুঃ হু, এইবার আসল ঘটনাটা বলেন দ্রুত, কুইক!

বদি ভাইঃ যুগান্তকারী এক আবিষ্কার করেছে মাইক্রোসফট। তারা চিন্তা করে দেখল এই Blue Screen of Death আসবার একমাত্র কারণ এই Blue, আই মিন নীল রং

রঞ্জুঃ হু, তো?

বদি ভাইঃ তারা অনেক বিশাল বিশাল কোডিং করলো। সেই কোডিং এক্সিকিউট করলো। তারপর যখন তারা তাদের কোডিং দেখে সন্তুষ্ট ফিল করলো তখন তারা সেইটা নতুন অপারেটিং সিস্টেমের সাথে জুড়ে দিলো।

রঞ্জুঃ তা সেই সমাধানটা কি সেইটা তো বলেন!

বদি ভাইঃ সমাধানটা হইলো, তারা তাদের কোডিং থেকে নীল রং টা বাদ দিয়ে সেখানে সবুজ রং দিয়ে পেইন্ট থুক্কু লাগিয়ে দিলো।

রঞ্জুঃ কি!! এইটা সমাধান!!

বদি ভাইঃ হ্যাঁ! এইটাই সমাধান। এবারে তুমি আর কোনদিন Blue Screen of Death সমস্যায় পড়বা না। Blue Screen of Death এর সমস্যা থেকে মাইক্রোসফট তোমরা চিরতরে মুক্তি দিলো 😁😁

রঞ্জুঃ আপনে মজা করতেছেন বদি ভাই 😯

বদি ভাইঃ মোটেই না। বিশ্বাস না হইলে Windows insiders preview build 14997 ইন্সটল করে দেখো। তালেই একদম ঝকঝক-ফকফক করে আমার কথার সত্যতা খুঁজে পাইবা।

রঞ্জুঃ আপ্নে একটা হোপলেস বদি ভাই!

বদি ভাইঃ মাইক্রসফ্‌ট একটা হোপলেস সেইটা বল!

রঞ্জুঃ মাইক্রসফ্‌ট ইয়্যু আর হোপলেস্‌! 😪











শুক্রবার, মার্চ ২৪, ২০১৭

কল্প-গল্পঃ কানেকশন



আমি জানি এটা সম্ভব নয়, কিন্তু ব্যাপারটা ঘটছে। আমি এখানে বসেই তার অস্তিত্ব অনুভব করতে পারছি। যা আদৌ সম্ভব নয়, ঠিক সেটা যখন আপনার সাথেই ঘটতে থাকে, তখন ঠিক কেমন অনুভব হয় তা এমন একটা পরিস্থিতিতে না পড়লে কেউ বুঝতে পারবে না। আর এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েও সেই অনুভূতির ধারণা দেওয়াও আমার পক্ষে প্রায় অসম্ভব।

আমি ঠিক বুঝতে পারছি ঠিক আমার পাশের রুমেই ব্যক্তিটি বসে আছে। নাহ্‌, ভুল বললাম। ব্যক্তিটি নয়, বরং বলা উচিৎ পাশের রুমেই আমি বসে আছি। কি? অদ্ভুত লাগছে? পাশের রুমে কিভাবে আমি বসে থাকতে পারি এই ভেবে আমার কথা আপনার কাছে অদ্ভুত ঠেকলে আরও অদ্ভুত কিছু শোনার জন্যে প্রস্তুতি নিন আপনি। শুধু যে পাশের রুমে আমি বসেই আছি তা নয়, বরং একই সাথে সে এখন কি ভাবছে তাও আমি একদম কাটায় কাটায় অনুভব করতে পারছি!

পাশের রুমে থাকা আমিটা এখন ভাবছে ঠিক আমার কথাই! সেও ভেতরে ভেতরে আমার মত উত্তেজনা আর পুলক একই সাথে অনুভব করছে। সেও বুঝতে পারছে আমি ঠিক তার পাশের রুমটাতেই অবস্থান করছি। সেও বুঝতে পারছে ঠিক এই মুহূর্তে আমি কি ভাবছি! একদম আমার মত করেই আমাকে যেভাবে আমি পাশের রুমে আবিষ্কার করেছি, সেও ঠিক একই রকম করে তার সত্তার আমিটাকে অনুভব করতে পারছে।

কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব? আমি জানতাম আমাদের বিজ্ঞান কোন কোন প্রাণীকে প্রায় সফলভাবে ক্লোন করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু তাই বলে মানুষকেও যে ক্লোন করছে তা আমার জানা ছিলো না। আবার ক্লোন করা হলেও হয়তো একই রকম চিন্তা চেতনার ব্যক্তি তৈরি করা সম্ভব হতে পারে। তাই বলে একই সময় একই স্মৃতি আর বিচার বুদ্ধি দু'জন আলাদা আলাদা কিন্তু একই ব্যক্তির সত্তার মাঝে ঢুকিয়ে দেবে তা তো বোধ করি এখনো তারা চিন্তাতেও নিয়ে আসতে পারবে না।

আমি জানি আপনি এখন বিরক্ত হচ্ছেন। ভাবছেন পাগলের প্রলাপ বকছি। কিন্তু বিশ্বাস করুণ আমি পাগল হয়ে যাই নি।

ব্যাপারটা আপনার বোঝার সুবিধার জন্যে আপনাকে কম্পিউটার নেটওয়ার্কের সাথে একটু তুলনা করে বলতে পারি। কম্পিউটার নেটওয়ার্কের কোন স্টোরেজ ডিভাইসে থাকা তথ্য গুলির সুরক্ষার জন্যে এমন একটা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। সেখানে একটা ডিস্কে যে তথ্য থাকে ঠিক ঐ একই তথ্য অন্য আরেকটা ডিস্কে হুবহু কপি করে রাখা হয়। এমনকি যখন ঐ তথ্য কোন কাজে ব্যবহার করা হয় কিংবা কোন ডেটা হতে নতুন ডেটা পেয়ে সেটাকে পুনরায় সংরক্ষণে পাঠানো হয় তখন একই সাথে ঐ দুটো ডিস্কেই ডাটা রিড এবং রাইট চলতে থাকে। আমার বর্তমান অবস্থার সাথে তুলনা করলে ঘটনাটা কিন্তু ঠিক একই রকম ঘটছে।

এই যে আপনাকে যে এতগুলি কথা লিখে জানাচ্ছি, আমার পাশের রুমে থাকা ব্যক্তিটিও আমার মতই আপনাকে জানানোর জন্যে ঠিক এই কথা গুলি ভাবতে ভাবতে লিখছে। আমরা যেন ঠিক আয়নার সামনে দাড়িয়ে প্রতিবিম্বের প্রতি বিদ্রূপ করা সত্তায় পরিণত হয়েছি! বুঝতে পারছেন? নিজের ভেতরের নিজেকে নিজের বাইরে আবিষ্কার করে তার ভেতর আবার নিজের অস্তিত্বের আবিষ্কার কতটা যন্ত্রণাদায়ক হতে পারে? আমি জানি এটা বিশ্বাস করা আপনার কর্ম নয়।

দেখুন! এ মুহূর্তে সে ভাবতে শুরু করেছে তার এমন বিপত্তিকর অবস্থা থেকে সে কিভাবে মুক্তি পাবে, আর তাই নিয়ে একই সাথে আমিও ভাবছি! সবচেয়ে ভালো হতো পাশের রুমে গিয়ে যদি আমার ঐ আমিটাকে গলাটিপে নিস্তেজ করা যেতো। কিন্তু সেটা তো সম্ভব না, কারণ সেটা করতে গেলে পাশের রুমের আমিটাও ঠিক একই কাজ করার জন্যে ছুটে আসত। হা হা হা, মজার ব্যাপার হচ্ছে এ মুহূর্তে সেও ঠিক এটা ভেবেই মনে মনে হাসছে আমার মত করে!  আবার আমিও যে এই ভাবনায় মজা পাচ্ছি সেটাও সে একই সময়ে বুঝতে পারছে। ঠিক যেমনটা আমি তার ভেতরের আনন্দটা বুঝতে পারছি, অমন করে!

আচ্ছা, ভালো কথা! আমি এই সংকীর্ণ রুমটাতে কিভাবে এলাম? এতক্ষণ ধরে এই যে এখানে আধো আলো-আধো অন্ধকারে বসে আছি, টেবিলে থাকা নোটপ্যাডটাতে পেনসিল ঘসে যাচ্ছি, অপরিচিত এক বিছানায় যে বসে আছি, আপনার কাছে যে লিখছি, তা এতক্ষণ কেন আমার মনে কোন ধাক্কা দিলো না? আর এই 'আপনিটা' কে? আমি কেন আপনার কাছে লিখার জন্যে তাড়না অনুভব করছি?? আসলে হচ্ছেটা কি এখানে?!!








রিপোর্টঃ 

ঊনষাট আর ষাট নম্বর সেলে থাকা টেস্ট সাবজেক্ট দুটো এবারেও নিজেদের খুন করেছে। নিখুঁত ভাবে এদের তৈরি করতে সময় লেগেছিল ৪ মাস ১৮ দিন ১৬ ঘণ্টা। ব্লাড স্যাম্পল যোগাড় করা হয়েছিল স্থানীয় একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে। এই দুটো টেস্ট সাবজেক্ট মোটামুটি স্ট্যাবল পর্যায়ের ছিল। মিরর মেমরি রিপ্রেজেন্টেশন পরীক্ষাটা প্রায় সফলভাবে এদের উপর চালানো সম্ভব হয়েছে। পূর্বের অল্প কিছু স্মৃতি মুছে দিয়ে সেখানে নতুন কিন্তু খুব স্বল্প সংখ্যক স্মৃতি ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল। এদের মস্তিষ্কের ন্যাচারাল স্ট্যাবিলিটির কিছু পরিবর্তন ঘটিয়ে একটা প্রাইভেট নেটওয়ার্ক তৈরির ব্যবস্থা করা হয়েছিল, এবং সফল ভাবে ঐ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে টেস্ট সাবজেক্ট দুটো নিজেদের তথ্য আদান প্রদান করতে সক্ষম হয়েছে। এদের কমিউনিকেশন ফ্রিকোয়েন্সির জন্যে আলাদা কোন ডিভাইস বা ব্যবস্থার প্রয়োজন হয়নি। ফ্রিকোয়েন্সিকে কন্ট্রোল করার জন্যে এবং তাদের মাঝে কার আন্তঃ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্যে ল্যাবে প্রস্তুতকৃত বিশেষ ধরণের জ্যমার ব্যবহারের চেষ্টাও চালানো চালিয়েছি। জ্যামারের পরিপূর্ণ সক্ষমতাকে পাশ কাটিয়ে তারা তাদের যোগাযোগ কন্টিনিউ করতে সক্ষম হয়েছে। তাই সুপার সোলজার প্রোগ্রামে এই নেটওয়ার্ক সিস্টেম ব্যবহার করা যেতে পারে বলে মত পোষণ করছি।

টেস্ট সাবজেক্ট দু'টি তাদের রুমে সরবরাহকৃত পেনসিল দিয়ে নিজেদের মস্তিষ্কে ক্ষত সৃষ্টি করে, এর ফলে তাদের দেহে অতিরিক্ত রক্তশূন্যতা দেখা দেয়ায় মৃত্যু সংঘটিত হয়। তবে তাদের মস্তিষ্ক দুটো পরবর্তীতে পুনরায় সচল করা সম্ভব হয়। অল্প কিছু ক্ষতি সাধন হলেও মস্তিষ্ক দুটি প্রায় পূর্ণ কার্যক্ষম বলা চলে। মস্তিষ্ক দুটি পুনরায় ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এদের ইন-প্রিন্ট সংরক্ষণ করে নতুন ডেভেলপমেন্টের জন্যে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে।





মঙ্গলবার, জানুয়ারী ০৩, ২০১৭

পাঠ প্রতিক্রিয়া - তমিস্রা



পড়লাম লেখক জাবেদ রাসিন সাহেবের 'তমিস্রা'

ছোট বেলাতে অতি-প্রাকৃতিক কিংবা ভৌতিক গল্পগুলোতে আকর্ষণ থাকলেও একটা সময় পর সে আকর্ষণ কমে আসে। আর সেই স্থানটাতে জায়গা করে নিয়েছিল কিশোর থ্রিলার। এরপর তো একে একে সায়েন্স ফিকশন, উপন্যাস, হিমু, মিসির আলি, মাসুদ রানা সহ আরও অনেকেই চলে আসে সেখানে, আসতে থাকে অনুবাদ গল্প গুলো।

সেদিক থেকে হিসেব করলে বেশ অ....নে,,,,ক দিন পর কোন অতি-প্রাকৃতিক একটি গল্প পড়লাম। সম্ভবত থ্রিলার গল্পে পড়ার আধিক্যের কারণে হালকা ধরণের থ্রিলার লেখাগুলি এখন আর খুব একটা আকর্ষণ করে না। অতি-প্রাকৃতিক গল্প হলেও এখানে লেখক অনেক চেষ্টা করেছেন একটা থ্রিল ভাব নিয়ে আসবার জন্যে। কিন্তু তবুও কেন জানি তমিস্রা শুরু করার ২৫/২৬ পৃষ্ঠা যাবার পরপরই মূল গল্পটা জানা হয়ে যায়। ঐ সময়ই গল্পের শেষ পরিণতি কি ধরণের হতে পারে তার একটা ধারণা পেয়ে গিয়েছিলাম। এরপরেও গল্পটাকে শেষ পর্যন্ত ধৈর্য(!) সহকারে পড়ে গেছি।

গল্পটা নিঃসন্দেহে ইন্টারেস্টিং, আরও ভালো করে বলতে গেলে লেখক যেভাবে গল্পটাকে গড়ে তুলেছেন সেই অবস্থা থেকেই এর সিক্যুয়াল তৈরি করা যেতে পারে। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বার বার ইরফান আর সোহেলকে বিভিন্ন ঘটনাতে ব্যবহার করা যেতে পারে। লেখক তা করবেন কি না তা সম্পর্কে তিনিই ভালো জানেন।

গল্পের যে অংশটা ভালো লেগেছে তা হল এর সমাপ্তি। গতানুগতিক ধারায় অতি-প্রাকৃতিক রহস্য গল্প গুলিতে 'সত্যের জয়, মন্দের পরাজয়'-ধরণের একটা সমাপ্তি দেখানো হয়। সেখানে তমিস্রা'য় একই ব্যাপার একটু ভিন্ন ভাবে দেখানো হয়েছে। এখানে একই সাথে 'সত্য' এবং 'মন্দ' কে জয় এবং পরাজয়ের মাঝে আটকে রেখে গল্পের সমাপ্তি টানা হয়েছে।

গল্পের যে অংশগুলি খারাপ লেগেছে তার মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত স্মৃতি চারণ করা। গল্পে বার বার করে প্রতিটি চরিত্রের পেছনের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। আর এই ব্যাপারটা মূল গল্পের জন্যে কতটুকু সহায়ক হয়েছে তা মোটেও আমার বোধগম্য হয়নি। খারাপ লাগার আরও একটা কারণ গল্পের আকার। কেন জানি মনে হয়েছে গল্পকার ইচ্ছে করেই গল্পটাকে টেনে হিঁচড়ে ২৫৪ পৃষ্ঠায় নিয়ে যাবার চেষ্টা করেছেন। চাইলে আরও কম শব্দ খচর করে তিনি গল্পটাকে উপস্থাপন করতে পারতেন, আর তাতে গল্পের আকর্ষণ বিন্দুমাত্রও কমে যেত না।

তবে আবারও বলছি, গল্পকার খুব চমৎকার ভাবে গল্পের সমাপ্তি টেনেছেন। শেষে এসেও নতুন আরেকটা গল্পের হাতছানি খুব স্পষ্ট করে বোঝা যায়। আসগর মাহতাব এর পরে কি করতে পারে সে ব্যাপারে পাঠকদের একটা তৃষ্ণা ঠিকই থেকে যাবে। আরও অপেক্ষা থাকবে ইফ্রিত আর তার আংটিটার পরিণতি জানবার একটা আকাঙ্ক্ষার।


ব্যক্তিগত রেটিং - ২.৭/৫





সোমবার, ডিসেম্বর ১২, ২০১৬

শক্তিশালী কিছু স্থিরচিত্র :: ২য় খণ্ড

          অনেক বড় একটা গল্পকে মাত্র এক পলকে বোঝাতে পারে শুধুমাত্র হাতে গোনা কিছু স্থিরচিত্র। অনেক সময় শত শত সেমিনার করেও যা মানুষকে বোঝানো যায় না তা নিমিষেই বুঝে নেয় একটি চিত্রের মাধ্যমে। 

পূর্বে "শক্তিশালী কিছু স্থিরচিত্র" শিরোনামের একটি পোষ্টে কিছু ছবি পোষ্ট করা হয়েছিল। সে ধরণের আরও কিছু ছবি নিয়ে আজকের আয়োজন।



ইথিওপিয়ার এ্যাবোর (Erbore) উপজাতি গোষ্ঠীর একটি শিশু


ইথিওপিয়ার মুরসি (Mursi) গোষ্ঠীর এক উপজাতি নারী প্রথমবারের মত Vouge ম্যাগাজিনে চিত্রায়িত ছবি দেখে বহির্বিশ্বের নারীদের আবিষ্কার করছে


কসভো যুদ্ধের শরণার্থীদের একটি ক্যাম্পের কাঁটাতারের ফোঁকর দিয়ে একটি শিশুকে তার প্রপিতামহের হাতে তুলে দেবার সময়কার ছবি

নেশায় বুদ হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা এক বাবাকে রাস্তা হতে তুলে বাড়ি নিয়ে যাবার আপ্রাণ চেষ্টায় লেগে থাকা এক সন্তানের চিত্র

সিরিয়ার শরণার্থী শিবিরে অবস্থানকারী শিশুরা নিজ নিজ পাত্রে তাদের পরিবারের জন্যে পানি সংগ্রহ করার কাজ করছে

রোমানিয়ার ব্যুকারেস্ট (Bucharest) শহরে দাঙ্গার সময়ে পুলিশ ব্যারিকেড তৈরি করে আক্রমণাত্মক অবস্থায় গেলে স্থানীয় এক শিশু 'হৃদয় আকৃতির (heart-shaped)' একটি বেলুন এক পুলিশ সদস্যের হাতে তুলে দেয়। পরবর্তীতে ঐ হৃদয় আকৃতির বেলুন হাতেই পুলিশ সদস্যকে ব্যারিকেড তৈরি করে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়

২০১২ সালে মিশরের কায়রোতে বিক্ষোভ চলাকালীন সময় এক তরুণ বিক্ষোভকারী নিরাপত্তা প্রহরীদের লক্ষ করে পাথর ছুড়ে মারছে

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ (Kiev)-এ পুলিশ এবং বিক্ষোভকারীদের মাঝে অবস্থিত এক জ্বলন্ত ব্যারিকেডের সামনে দাড়িয়ে আছে একজন বিক্ষোভকারী

২০১১ সালের এপ্রিল মাসে অ্যালাব্যামায় কনকর্ড শহরে টর্নেডোর আঘাতে ধ্বংস প্রাপ্ত নিজ বাড়ির সামনে দাড়িয়ে এক মা তার সন্তানকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন

২০১১ সালের আগস্ট মাসে লন্ডনের ক্রোয়িডন (Croydon) শহরে দাঙ্গার সময় আকস্মিক আগুন লেগে যাওয়া এক দালানের দ্বিতীয় তলা (first-floor) হতে ঝাপ দিচ্ছেন দালানে অবস্থানকারী এক মহিলা

২০১১ সালের অক্টোবর মাসে ব্যাংককের উপকণ্ঠে অবস্থিত র‍্যাঙ্গিট শহর বন্যার পানিতে প্লাবিত হলে এক মহিলা ল্যম্পপোষ্ট আঁকড়ে ধরে নিজেকে ভেসে যাওয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখবার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন

এক সন্তান প্রথমবারের মত ছুঁয়ে দেখছে তার বাবাকে। লোকটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের সামরিক বাহিনীর কাছে যুদ্ধবন্দী হিসেবে ছিলেন

জন এফ. কেনেডি জুনিয়র, সকলের সাথে নিজ বাবার কফিনের প্রতি স্যালুট দিয়ে বিদায়ী অভিবাদন জানাচ্ছে

১৯৪০ সালের ১লা অক্টোবর মাসে কানাডার নিউ ওয়েস্টমিনস্টার হতে চিত্রগ্রাহক ক্লড পি. ডেটলফ ((Claude P. Dettloff)) "আমার জন্যে দাড়াও বাবা / Wait For Me Daddy" - শিরোনামের এই ছবিটির তুলেছিলেন

এক ফ্রেমে বন্দী ফিদেল কাস্ত্রো ও চে-গুয়েভারা'র একটি হাস্যোজ্জ্বল ছবি


রিও ডি জানিয়েরো কাছাকাছি এক স্থানে সর্বনাশা ধ্বসে মারা যায় এক ব্যক্তি। তাকে সমাহিত করার পরের দিনেও তার পোষা কুকুরটিকে তার সমাধির পাশে বসে থাকতে দেখা যায়

════════════════════════════════════
চিত্র এবং তথ্যসূত্রঃ আন্তঃজালিকা হতে সংগ্রহীত

বুধবার, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৬

অনুবাদ গল্পঃ আনন্দ আর দুঃখবোধ



          চমৎকার এক বাগান বাড়ির মালিক ছিলেন এক লোক। রুচি আর সাধ্যের সংমিশ্রণে তিলে তিলে গড়ে তুলেছিলেন তার সাধের বাড়িটিকে। শুধুমাত্র চমৎকার উপমা দিলে হয়তো বাড়িটির প্রশংসায় ভাটা পড়বে, তাই বাড়িটির সৌন্দর্যের সম্মানার্থে একে অপূর্ব আলয় বলা যেতে পারে।

গ্রামের অনেকেই ঐ বাগান বাড়িটি মালিকানায় পাবার জন্যে বেশ আগ্রহী ছিল। শুধু যে ঐ গ্রামের লোকেরাই আগ্রহী ছিল তাও নয়, বরং আগ্রহীদের তালিকায় ছিল দূর দূরান্তের অনেক নামী-দামী আর প্রভাবশালী লোকেরাও। কিন্তু বাড়ির মালিক বাড়িটিকে এত ভালোবাসতেন যে সকল আগ্রহীদের সব ধরণের প্রস্তাব সে বারংবারই নাকচ করে আসছিলেন অনেক লম্বা সময় ধরে।

একবার এক বিশেষ কাজে তাকে দিন কয়েকের জন্যে যেতে হল শহরে। শহরের কাজ শেষে দিন কয়েক বাদে ফিরছিলেন নিজ নিবাসে। পথিমধ্যে শুনতে পেলেন তার শখের বাগান বাড়িটিতে কিভাবে যেন আগুন লেগে গেছে। আর সে খবর শুনে সকলকেই ছুটতে দেখলেন সেদিকে। সখের বাড়িটিতে আগুন লাগবার খবর শোনামাত্র লোকটি যেন উড়ে চলল বাড়ির দিকে।

বাগান বাড়ির কাছাকাছি পৌছে দেখলেন শ'য়ে শ'য়ে লোক ভীর করেছে বাড়িটিকে ঘেরাও করে। কিন্তু কারোই এখন আর কিছু করার নেই, আগুন ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বাড়িময়। সত্যি বলতে সবই মিলে যদি এখন হাতও লাগায় তবুও বাড়িটিকে আর উদ্ধার করা সম্ভব হবে না। সকলের চেষ্টার বিপরীতেও মিলবে পোড়া বাড়ি আর জ্বলে-পুড়ে ভস্ম হয়ে যাওয়া আসবাব পত্র। টুকরো কোন বস্তুই ঐ বাড়ি থেকে আর অক্ষত অবস্থায় ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। আর সেটা বুঝতে পেরেই সকলে তাদের অহেতুক চেষ্টা থেকে নিজেদের বিরত রেখেছে।

জ্বলতে থাকা বাড়িটির দিকে নিঃস্বের মত তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই যেন করার থাকল না। বাকি সবার মত সেও দাড়িয়ে দাড়িয়ে তিলে তিলে গড়ে তোলা নিজের স্বপ্ন কুটিরটির পুড়ে যাওয়া দেখতে লাগলেন।

এরই মাঝে লোকটির বড় ছেলেকে দৌড়ে তার দিকে আসতে দেখলেন। দৌড়ে আসার কারণে ঠিক মত কথাও বলতে পারছিল না ছেলেটি। কোনরকমে বাবার কাছে পৌঁছে বলতে লাগল- "আব্বা, আপনি বাড়িটার জন্যে মোটেই মনে কোন কষ্ট নেবেন না। আপনি চলে যাবার পর এক ভদ্রলোক এসেছিলেন বাড়িটি কেনার জন্যে। অন্য সকলের তুলনায় প্রায় চার গুন দাম বলেছিলেন তিনি। এ বাজারে এত দাম দিয়ে অন্য কেউ বাড়িটিকে কেনার কথা চিন্তাও করবে না। তাই আর আপনার ফিরে আসার অপেক্ষা না করে ঝটপট সিদ্ধান্ত নিয়ে বাড়িটি আমি তার কাছে বিক্রি করে দেই। আমি মনে করছিলাম ফিরে এসে আপনি এ কথা শুনে রাগ করলেও আমাকে আমার এমন সিদ্ধান্তের জন্যে ক্ষমা করবেন।"

বড় ছেলের এমন কথায় বাবা যেন আপন স্বস্তির নাগাল খুঁজে পেলেন। একটু চুপ থেকে বললেন, "খোদাকে ধন্যবাদ, তোমাকে এমন উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করার জন্যে!" স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে আবারও তিনি বাড়িটির দিকে তাকিয়ে রইলেন। তার সাধের বাড়িটি এখনো পুড়েই চলেছে।

অল্প কিছু সময় পরই দেখলেন তার মেঝ ছেলে আরেক দিক থেকে দৌড়ে আসছে তার দিকে। কাছে এসেই আক্ষেপ আর কর্তৃত্ব মিশ্রিত কণ্ঠে বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগল, "আব্বা, আপনি কি করছেন? বাড়িটি পুড়ে ভস্ম হয়ে যাচ্ছে আর আপনি এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছেন? আপনি না প্রায়ই বলেন যে এ বাড়িটিকে আপনি আমাদের চেয়েও বেশি ভালোবাসেন; তাহলে এমন নির্বাক হয়ে কিভাবে আপনি বসে থাকছেন বলেন তো শুনি?"

বাবা যেন মেঝ ছেলের এমন কথায় কিছুটা কৌতুক খুঁজে পেয়েছেন এমন করে একটু হাসলেন। তারপর বললেন, "আরে বোকা, তুমি কি জানো না যে গতকালই তোমার বড় ভাই এই বাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছে?" বাবার উত্তর শুনে মেঝ ছেলে বলল, "সে ব্যাপারে জানি, কিন্তু বাড়িটি কিন্তু এখনো পুরোপুরি বিক্রি হয়ে যায় নি। বড় ভাই আপনার সিদ্ধান্ত নেবার জন্যে বাড়িটি ঐ ভদ্রলোকের কাছে বিক্রি করার আশ্বাস দিয়েছে মাত্র। আর বড় ভাইয়ের আশ্বাসের প্রতিরূপে লোকটি কেবল কিছু অগ্রিম টাকা দিয়ে বাড়িটির বিক্রয় চুক্তি নিশ্চিত করে রেখেছেন। বিক্রির পুরো টাকা এখনো আমাদের হাতে আসে নি! কিন্তু এখন তো এখানে ছাই ছাড়া আর কিছুই মিলবে না, ভদ্রলোক নিশ্চই কেবলমাত্র এই মূল্যহীন ছাই কেনবার জন্যে এতগুলি টাকা পরিশোধ করবেন না!"

যে কান্না শুরু হবার আগেই থেমে গিয়েছিল, এসব শোনার পর তা যেন জলোচ্ছ্বাসের রূপ নিলো। স্বস্তির সাথে হৃদয়টাও যেন টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ল চারিদিকে। ডুকরে কেঁদে উঠলেন তিনি; যতটা না বাড়িটিতে আগুন লাগবার শোকে, তারচেয়ে বেশি বাড়ি মূল্য আর আপন স্বস্তি খুইয়ে ফেলবার দুঃখে আর্তনাদ করে কাঁদতে লাগলেন। আশে পাশে লোকজনও যেন এবারে লোকটির এমন কান্না দেখে স্বস্তি খুঁজে পেল। কেউ কেউ দূর থেকেই সান্ত্বনা বাক্য ছুড়ে দেবার বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছিল। কিন্তু এবারে যে আগুনের কারণে কান্নার সৃষ্টি তা আর সান্ত্বনা বাক্যে বন্ধ হবার নয়।

এরই মাঝে লোকজনের ভিড় ছেলে উদয় হল লোকটির ছোট ছেলে। বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল, "আব্বা, এভাবে কাঁদবেন না। আর বাড়িটির জন্যেও দুঃখ করবেন না। বাড়িটি সত্যিই আর আর আমাদের নয়"। ছোট ছেলে ছেলে সান্ত্বনা দিচ্ছে ভেবে লোকটি বললেন, "নারে বোকা! আমাদের বাড়িটিই পুড়ছে তোমার চোখের সামনে। আর পোড়া বাড়ি কখনোই বিক্রি হয় না। বাড়ির এমন দশা দেখে অগ্রিম টাকাও নিশ্চিত ফিরিয়ে নিতে আসবেন ঐ ভদ্রলোক।"

ফের ছোট ছেলে বলল, "আব্বা, আপনি ভুল বুঝছেন। আপনি এখনো আমার পুরো কথাটি শোনেন নি। বাড়িতে আগুন লাগবার ঘটনা শুনে ভদ্রলোক কিছুক্ষন পূর্বে আমার সাথে যোগাযোগ করেছেন। তিনি তার দেয়া কথা রাখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন আমায়। বলেছেন- 'আগুন লাগুক কিংবা না লাগুক ঐ বাড়ির মালিকানা কেবলই আমার, এবং আমি অবশ্যই চুক্তি অনুযায়ী বাড়ির ক্রয়মূল্য তোমাদের পরিশোধ করব। ভাগ্যের ব্যপারে কারও কোন হাত থাকে না, বরং তা ওপর-ওয়ালাই নির্ধারন করে দেন। আমি কিংবা তোমরা কেউই আগে থেকে জানতাম না ঐ বাড়ির ভাগ্যে কি রয়েছিল। যেহেতু চুক্তির পর বাড়িটি আগুনের স্পর্শ পেয়েছে, অতএব সে আগুনে পুড়ে যাওয়া বাড়ির মালিকানাও আমার ভাগেই পড়ে। তাই তোমরা ঐ দুর্ঘটনা নিয়ে মোটেও কোন চিন্তা করো না। আমি যথা-দ্রুত সম্ভব বাড়িটির মূল্য পরিশোধ করব'।"

কথা শুনে লোকটির জলোচ্ছ্বাস থামলেও অশ্রু যেন আর বাধে আটকে রাখা যাচ্ছিল না। অশ্রুসিক্ত নয়নেই বোকার মত দাড়িয়ে কেবল বাড়িটির পুড়ে যাওয়া দেখতে লাগল সকলে মিলে।





⚍⚌⚎⚌⚍⚌⚎⚌⚍⚌⚎⚌⚍⚌⚎  নীতিনিষ্ঠ মূল্যায়ন  ⚍⚌⚎⚌⚍⚌⚎⚌⚍⚌⚎⚌⚍⚌⚎

মনব চরিত্রের বৈশিষ্ট্য নিরূপণ দারুণ এক জটিল কাজ। গল্পের বাগান বাড়ির মালিক যদিও তার সন্তানদের তুলনায় তার বাড়িটিকে অধিকতর ভালোবাসতেন, তবুও তিনি স্বস্তি খুঁজে পেয়েছিলেন এই জেনে যে বাড়িটির মালিকানার ভার এখন আর তার নেই। যদিও পূর্বে কোনভাবেই তিনি বাড়িটিকে বিক্রি করতে সম্মত ছিলেন না। কিন্তু যখন চোখের সামনে বাড়িটির সৌন্দর্য ধীরে ধীরে হারাতে লাগল, তখন তিনি ভালোবাসা আগলে রেখে কেবল বাড়ি বিক্রির অর্থের দিকে চেয়ে সান্ত্বনা খুঁজে পেয়েছিলেন। কিন্তু পরমুহুর্তে যখন জানতে পারলেন বাড়ির সৌন্দর্য আর মূল্য দুটোই তিনি হারাচ্ছেন তখন আর নিজের দুঃখের লাগাম টেনে ধরতে পারেন নি, ভেঙ্গে পড়েছিলেন নিমিষেই। এরপর যখন আবারও ছোট ছেলের কাছ থেকে পরবর্তি ঘটনা জানলেন তখন দুঃখ, সান্ত্বনা এবং কৃতজ্ঞতা বোধ সবই তার উপর ভর করে ছিল।

গল্পের মতই মানুষের আনন্দ আর দুঃখবোধ সময় আর ঘটনা প্রবাহের সাথে পরিবর্তিত হয়। ভালোবাসার অধিকার অর্জন আর হারানোর অনুপাতের দাঁড়িপাল্লায় হিসেব করে প্রকাশ পায় এক এক জনের অনুভূতি। গুরুত্বের পানসি জোয়ার-ভাটার টানে ঘুরে বেড়ায়, এগিয়ে যায়, পিছিয়ে যায় কিংবা থেমে থাকে নিজের জায়গায় নোঙ্গর ফেলে। একই ঘটনা ঘটে আত্মীয়তা আর বন্ধুত্বের সম্পর্কে।

তাই কারও আচরণ দেখে বিচার করবার আগেই ভাবতে হবে তার আচরণের পেছনে ঘটে যাওয়া বা ঘটতে থাকা কারণ গুলো নিয়ে। বুঝতে হবে তার উচ্ছাস কিংবা নিস্তব্দতার কারণ। আর এরপরই কেবল একজন মানুষের আচরণের বিপরীতে তার প্রকৃত মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে।





বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ০১, ২০১৬

ইনফার্নোঃ উপন্যাস বনাম চলচ্চিত্র

ধরুন চোখ মেলে আপনি নিজেকে আবিষ্কার করলেন কোন এক হসপিটালের বিছানায়। স্মৃতি আঁকড়ে ধরে মনে করার চেষ্টা করছেন ঠিক কি কারণে আপনি কখন হসপিটালে আসলেন। কিন্তু চেষ্টা করেও কিছু মনে করতে পারলেন না। তখনই হঠাৎ করে হসপিটালের জানালা গলে আপনার দৃষ্টি ছড়িয়ে পড়ল। বুঝতে পারলেন আপনি আছেন ভিন্ন কোন এক শহরের অজানা কোন এক হসপিটালের বিছানার উপর।

বলুন তো, ঠিক এমন একটা পরিস্থিতিতে কতটা অসহায় বোধ হবে আপনার?

এমন একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গল্পের শুরু হবে রবার্ট ল্যাংডনের সাথে। একজন প্রখ্যাত সিম্বলিষ্ট হঠাৎই নিজেকে আবিষ্কার করবেন এক হসপিটালের বেডে যে হসপিটালটি তার নিজের দেশে নয়, বরং রয়েছে ভিন্ন আরেক দেশে। সাথে রয়েছে মাথার যন্ত্রণা আর টুকরো টুকরো স্মৃতি ও স্বপ্নের মিশ্রণ। যদিও এই স্বপ্নটাকে আপনি কোনভাবেই সাধারণ স্বপ্ন বলতে পারবেন না, তারচেয়ে বরং স্বপ্ন গুলোকে দুঃস্বপ্ন বলা যেতে পারে।

দায়িত্বরত ডক্টরের কাছ থেকে জানতে পারলেন আপনাকে কোন এক ক্যাব হসপিটালের ইমার্জেন্সি সেকশনে ছেড়ে গেছে, কিন্তু যখন ছেড়ে গিয়েছিল তখন আপনি ছিলেন আপনার নিজেরই রক্তে চপচপে ভেজা! জানতে পারলেন এই রক্তের উৎস আপনার মাথার চামড়া কেটে যাওয়াতেই হয়েছে। কিন্তু খুব সাধারণ ভাবে চামড়া কেটে রক্ত বের হয়নি, বরং হয়েছে কোন একটা বুলেট শুধুমাত্র চামড়াটা ছুঁয়ে যাবার কারণে! আর দুই এক মিলিমিটার এদিক-সেদিক হলে হয়তো আপনার ভবলীলা সাঙ্গ হতো। আর এই আঘাতের কারণেই আপনার স্মৃতির কিছু অংশ ভ্রষ্ট হয়েছে। তবে আশার কথা হল সেসব স্মৃতি খুব দ্রুতই ফিরে পাবেন আপনি।

কিন্তু এতটাই সহজ যদি গল্পের শুরু হবে তবে সেটা কিভাবে এক উপন্যাসে রূপ নেবে? হ্যাঁ, এবারে আবারও শুরু হবে জটিলতার। হঠাৎ করেই গোলাগুলির শব্দ! কর্তব্যরত চিকিৎসকদের একজন আপনার সামনেই সেই গুলির আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন, তার রক্ত মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ছে খুবই দ্রুত। শুরু হল ছুটোছুটি আর এই ছুটোছুটি চলবে একদম উপন্যাসের শেষ পর্যন্ত। শুধু ল্যাংডন যে তার নিজের জীবন বাঁচানোর জন্যেই ছুটবেন তা কিন্তু নয়, বরং এ ছুটো-ছুটি চলবে পুরো মানব গোত্রকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে। বলতে পারেন মানব সমাজকে বাঁচিয়ে রাখার একমাত্র ক্লু’টি রয়েছে রবার্ট ল্যাংডনের হাতে।




এতক্ষণ যে গল্পের প্লট নিয়ে কথা বলছিলাম তা ছিল একজন সফল রোমাঞ্চ উপন্যাস লেখক 'ড্যান ব্রাউন' রচিত 'ইনফার্নো' উপন্যাসটির একদম প্রাথমিক অংশ। 'ডা ভিঞ্চি কোড', 'দ্যা লস্ট সিম্বল' এবং 'ইনফার্নো'; এই তিনি উপন্যাসে লেখক ড্যান ব্রাউন আমাদের সামনে নিয়ে এসেছেন তার বিখ্যাত চরিত্র রবার্ট ল্যাংডন সাহেবকে। আর প্রতিবারই দারুণ এক উত্তেজনার সাগরের তলদেশ হতে ঘুরিয়ে নিয়ে এসেছেন তার পাঠকদের।

ইতোপূর্বে 'ডা ভিঞ্চি কোড' এবং 'দ্যা লস্ট সিম্বল' উপন্যাস দুটোকে চলমান চিত্রে রূপ দান করা হয়েছে। সেখানে ল্যাংডনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন আরেক কালজয়ী অভিনেতা 'টম হ্যাংক্‌স'। আর সত্যি কথা বলতে গেলে এই চরিত্রটির জন্যে টম হ্যাংক্‌সের চেয়ে ভালো কেউ হতে পারত বলে মনে করি না। মাঝে মাঝে মনে হয় ড্যান ব্রাউন সাহেব সম্ভবত ল্যাংডন চরিত্রটিকে রূপদান করার পূর্বে তার কল্পনাতেও টম হ্যাংক্‌স সাহেবকে নিয়ে এসেছিলেন। 'ডা ভিঞ্চি কোড' এবং 'দ্যা লস্ট সিম্বল'-এ দারুণ অভিনয় গুণ ফুটিয়ে তোলার পুরস্কার স্বরূপ এবারেও ইনফার্নো চলচ্চিত্রে একই চরিত্রে দেখা মেলে হ্যাংক্‌স সাহেবের সাথে।

এর আগেও একটি লেখাতে আমি বলেছিলাম যে, যদি হাজারও চেষ্টা করা হয় তবুও কখনো কোন উপন্যাসের সমস্ত ঘটনা সমেত একটি মুভি একজন ডাইরেক্টর সাহেব কোনদিনই তৈরি করতে পারবেন না। কারণ ব্যাপারটা একেবারেই অসম্ভব। তবে অন্তত ৫০ থেকে ৬০ ভাগ পর্যন্ত উপন্যাসকে মুভিতে নিয়ে আসা সম্ভব বলে আমি মনে করি। কিন্তু এবারে ইনফার্নো মুভিটি যেভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে তাতে আমার কোন ভাবেই মনে হয়নি যে এখানে মূল উপন্যাসের ৪০ ভাগের বেশি উপস্থিত রয়েছে। বরং হিসেব করলে হয়তো তার থেকে অনেক কমই পাওয়া যাবে।

স্ক্রিপ্ট রাইটার মুভিটির স্ক্রিপ্ট তৈরি করার সময় উপন্যাস থেকে এত বেশি অংশ বাদ দিয়েছেন, আর এত বেশি নিজ থেকে যুক্ত করেছেন যে কেউ যদি মুভিটিকে ভিন্ন কোন নামে প্রকাশ করেন তবে সেটা আমার দিক থেকে মোটেও খুব অনুচিত কিছু মনে হবে না।



আবারও বলি, কারও সাথে যদি বইয়ের পাতাতে ইনফার্নোর সাথে পরিচয় হয়ে গিয়ে না থাকে তবে অবশ্যই আপনি মুভিটি দারুণ ভাবে উপভোগ করতে পারবেন। কিন্তু যদি ইতোমধ্যে ইনফার্নোর উপন্যাসটি আপনি পড়ে থাকেন আর আপনার স্মৃতিতে ইনফার্নোর ঘটনার বিবরণের রঙ এখনো কিছু বাকি থেকে থাকে তবে অবশ্যই মুভিটি দেখার পর আপনি বেশ অনেকটা হতাশ হবেন আর অনেক খানি বিরক্ত চলে আসবে আপনার মনে।

যদি এই ঘটনা পরিবর্তনের কারণ খুব ভালো করেই অনুমেয় তবুও পরিবর্তনটুকু ব্যক্তিগত ভাবে আমার কাছে মোটেই গ্রহণযোগ্য মনে হয় নি। উপন্যাসের স্রষ্টা খুব ভালো বুঝেই উপন্যাসটি রচনা করেছেন। এবং আন্তর্জাতিক ভাবে উপন্যাসটি 'বেস্ট সেল' র‌্যাংক প্রাপ্ত হয়েছে। তাই উপন্যাসের মত করে মুভিটিকে নিয়ে আসলে সেটা মানুষজনকে বিভ্রান্ত করবে, এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ তৈরি হবে কিংবা তার কারণে বড় ধরণের পরিবর্তন হয়ে যাবে মনে করে করা হয়ে থাকলে সম্ভবত ভুলই করা হয়েছে।

উপরন্তু উপন্যাসে বর্ণিত ঘটনা প্রবাহকে অনেক বেশি মর্ডানাইজেশন করা হয়েছে। মানছি সময়ের সাথে এমন পরিবর্তন হয়তো প্রয়োজন ছিল, তবুও যতটুকু না করলে আসলে সম্ভব ছিল না ততটুকু বাদ দিয়ে করলেই সম্ভবত তা আরও বেশি আকর্ষণীয় হতো। উপন্যাসে এক স্থানে ল্যাংডন ইনফার্নোর একটি হার্ড কপি বই ধার নিয়েছিলেন ভ্রমণকারীর কাছ থেকে। সে অংশটাকে মর্ডানাইজেশন প্রক্রিয়ায় বাদ দেয়া হয়েছে। এখানে দেখা যায় সিয়েনা ব্রুক্‌স চাওয়া মাত্রই নেট থেকে ইনফার্নোর একটি কপি বের করে নিয়ে আসেন তার চুরি করা সেলফোনে। এই অংশটা প্রযুক্তির ব্যবহারের অতিরিক্ত মনে হয়েছে আমার কাছে।



এছাড়াও পালিয়ে বেড়ানোর অনেক অংশে নিয়ে আসা হয়েছে অনেক পরিবর্তন। উপন্যাসে ছুটোছুটির যেসব স্থানে স্থানে এসে প্রায় আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম পাঠক হিসেবে, আবার ঠিক তার পরমুহুর্তে সিয়েনা আর ল্যাংডন সাহেব যেভাবে সেই ঘটনা উৎরে যাবার রসদ খুঁজে বের করে নিচ্ছিল, যেখানে ধাঁধা আউরে বার বার সমাধান বের করার চেষ্টা চলছিল; সেখানে লাইট-ক্যামেরা-রোলিং এর গ্যাঁড়াকলে পড়ে তার প্রায় সব কিছুই বাদ পড়ে গেছে।

এ ছাড়াও চরিত্রায়নে ছিল অনেক বেশি গাফিলতি(!)। ড. সিন্সকিকে উপন্যাসে যেভাবে দেখানো হয়েছে, তার যে বর্ণনা সেখানে পাওয়া গেছে তার ঠিক বিপরীত রূপটাই এসেছে মুভিটিতে। অন্তত এই চরিত্রটিকে বেছে নেয়ার ব্যাপারে আরও একটু স্টাডি করার প্রয়োজন ছিল। একই ব্যাপার ঘটেছে সিয়েনা ব্রুকসের ব্যাপারে। তারপরও সিনেমার খাতিরে সিয়েনাকে মেনে নিয়েছিলাম। তবে চরিত্রায়নের পজিটিভ দিক বলতে গেলে বলতে হবে প্রভোস্টের চরিত্রটির কথা। প্রভোস্ট চরিত্রটি চরিত্রায়ন করেছেন ভারতীয় অভিনেতা 'ইরফান খান' এবং তার অভিনয় বেশ সাবলীল ছিল। এই একটি চরিত্রই মুভিটির জন্যে বেশ নিখুঁত মনে হয়েছে।

এরকম হাজারও পরিবর্তন দেখতে দেখতে মুভিটির প্রায় শেষ অংশে উপস্থিত হয়েছি। উপন্যাসের একদম শেষ দিকে সিয়েনার পালিয়ে যাওয়া, তারপর পুনরায় ফিরে আসা, আত্ম সমর্পণ করা, প্রভোস্টের চোপ-পুলিশ খেলায় নিজেই ধরা খাওয়া আর শেষ পরিস্থিতিতে পুরো ব্যাপারটার উপর নিয়ন্ত্রণ নেবার যে ব্যাপারগুলি উপন্যাসটিতে যে দারুণ সব উত্তেজনার সৃষ্টি করেছিল; মুভিতে সেই একই ব্যাপার গুলির অনুপস্থিতি, নতুন দৃশ্যপট সংযোজন আর বিয়োজনে সেই ব্যাপারগুলি একদম সাদামাটা ঠেকেছে। এখন মুভিটিকে আর ১০ টি সাধারণ এডভেঞ্চার মুভির মতই একটা সস্তা দরের এডভেঞ্চার মুভি মনে হয়েছে।



জানিনা বাকি সবার কাছে পরিবর্তিত এই মুভি কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা পাবে, তবে ব্যক্তিগত ভাবে ১০ এর স্কেলে আমি মুভিটিকে মাত্র ৪ পয়েন্ট দিয়ে রেট করব। টিজার আর ট্রেলার দেখার পর অনেক আশা নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম মুভিটি দেখার জন্যে। কিন্তু মুভিটি দেখার পর মনে হয়েছে, যদি দয়া করে ডাইরেক্টর সাহেব মুভিটিকে সৃষ্টি না করতেন তবেই কেবল ইনফার্নো উপন্যাসটির প্রতি তার সুবিচার করা হতো।






রকমারি হতে ইনফার্নো উপন্যাসটির হার্ডকপি সংগ্রহ করতে পারেন
কিংবা এই লিংক হতে বইটির সফটকপি ডাওনলোড করতে পারেন।
মুভিটির অনলাইন স্ট্রিম এখানে পাবেন।

মঙ্গলবার, নভেম্বর ২৯, ২০১৬

সোমবার, নভেম্বর ২৮, ২০১৬

কমিকঃ আপন আলয়ের ভিন্নরূপ








────────────────────────────
♦ কমিক : আপন আলয়ের ভিন্নরূপ | A Place Like Home
♦ সংগ্রহ : Stumbleupon.com Stream
♦ জঘন্য অনুবাদে : আমি 😛