মঙ্গলবার, জানুয়ারী ০৩, ২০১৭

পাঠ প্রতিক্রিয়া - তমিস্রা



পড়লাম লেখক জাবেদ রাসিন সাহেবের 'তমিস্রা'

ছোট বেলাতে অতি-প্রাকৃতিক কিংবা ভৌতিক গল্পগুলোতে আকর্ষণ থাকলেও একটা সময় পর সে আকর্ষণ কমে আসে। আর সেই স্থানটাতে জায়গা করে নিয়েছিল কিশোর থ্রিলার। এরপর তো একে একে সায়েন্স ফিকশন, উপন্যাস, হিমু, মিসির আলি, মাসুদ রানা সহ আরও অনেকেই চলে আসে সেখানে, আসতে থাকে অনুবাদ গল্প গুলো।

সেদিক থেকে হিসেব করলে বেশ অ....নে,,,,ক দিন পর কোন অতি-প্রাকৃতিক একটি গল্প পড়লাম। সম্ভবত থ্রিলার গল্পে পড়ার আধিক্যের কারণে হালকা ধরণের থ্রিলার লেখাগুলি এখন আর খুব একটা আকর্ষণ করে না। অতি-প্রাকৃতিক গল্প হলেও এখানে লেখক অনেক চেষ্টা করেছেন একটা থ্রিল ভাব নিয়ে আসবার জন্যে। কিন্তু তবুও কেন জানি তমিস্রা শুরু করার ২৫/২৬ পৃষ্ঠা যাবার পরপরই মূল গল্পটা জানা হয়ে যায়। ঐ সময়ই গল্পের শেষ পরিণতি কি ধরণের হতে পারে তার একটা ধারণা পেয়ে গিয়েছিলাম। এরপরেও গল্পটাকে শেষ পর্যন্ত ধৈর্য(!) সহকারে পড়ে গেছি।

গল্পটা নিঃসন্দেহে ইন্টারেস্টিং, আরও ভালো করে বলতে গেলে লেখক যেভাবে গল্পটাকে গড়ে তুলেছেন সেই অবস্থা থেকেই এর সিক্যুয়াল তৈরি করা যেতে পারে। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বার বার ইরফান আর সোহেলকে বিভিন্ন ঘটনাতে ব্যবহার করা যেতে পারে। লেখক তা করবেন কি না তা সম্পর্কে তিনিই ভালো জানেন।

গল্পের যে অংশটা ভালো লেগেছে তা হল এর সমাপ্তি। গতানুগতিক ধারায় অতি-প্রাকৃতিক রহস্য গল্প গুলিতে 'সত্যের জয়, মন্দের পরাজয়'-ধরণের একটা সমাপ্তি দেখানো হয়। সেখানে তমিস্রা'য় একই ব্যাপার একটু ভিন্ন ভাবে দেখানো হয়েছে। এখানে একই সাথে 'সত্য' এবং 'মন্দ' কে জয় এবং পরাজয়ের মাঝে আটকে রেখে গল্পের সমাপ্তি টানা হয়েছে।

গল্পের যে অংশগুলি খারাপ লেগেছে তার মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত স্মৃতি চারণ করা। গল্পে বার বার করে প্রতিটি চরিত্রের পেছনের ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। আর এই ব্যাপারটা মূল গল্পের জন্যে কতটুকু সহায়ক হয়েছে তা মোটেও আমার বোধগম্য হয়নি। খারাপ লাগার আরও একটা কারণ গল্পের আকার। কেন জানি মনে হয়েছে গল্পকার ইচ্ছে করেই গল্পটাকে টেনে হিঁচড়ে ২৫৪ পৃষ্ঠায় নিয়ে যাবার চেষ্টা করেছেন। চাইলে আরও কম শব্দ খচর করে তিনি গল্পটাকে উপস্থাপন করতে পারতেন, আর তাতে গল্পের আকর্ষণ বিন্দুমাত্রও কমে যেত না।

তবে আবারও বলছি, গল্পকার খুব চমৎকার ভাবে গল্পের সমাপ্তি টেনেছেন। শেষে এসেও নতুন আরেকটা গল্পের হাতছানি খুব স্পষ্ট করে বোঝা যায়। আসগর মাহতাব এর পরে কি করতে পারে সে ব্যাপারে পাঠকদের একটা তৃষ্ণা ঠিকই থেকে যাবে। আরও অপেক্ষা থাকবে ইফ্রিত আর তার আংটিটার পরিণতি জানবার একটা আকাঙ্ক্ষার।


ব্যক্তিগত রেটিং - ২.৭/৫





সোমবার, ডিসেম্বর ১২, ২০১৬

শক্তিশালী কিছু স্থিরচিত্র :: ২য় খণ্ড

          অনেক বড় একটা গল্পকে মাত্র এক পলকে বোঝাতে পারে শুধুমাত্র হাতে গোনা কিছু স্থিরচিত্র। অনেক সময় শত শত সেমিনার করেও যা মানুষকে বোঝানো যায় না তা নিমিষেই বুঝে নেয় একটি চিত্রের মাধ্যমে। 

পূর্বে "শক্তিশালী কিছু স্থিরচিত্র" শিরোনামের একটি পোষ্টে কিছু ছবি পোষ্ট করা হয়েছিল। সে ধরণের আরও কিছু ছবি নিয়ে আজকের আয়োজন।



ইথিওপিয়ার এ্যাবোর (Erbore) উপজাতি গোষ্ঠীর একটি শিশু


ইথিওপিয়ার মুরসি (Mursi) গোষ্ঠীর এক উপজাতি নারী প্রথমবারের মত Vouge ম্যাগাজিনে চিত্রায়িত ছবি দেখে বহির্বিশ্বের নারীদের আবিষ্কার করছে


কসভো যুদ্ধের শরণার্থীদের একটি ক্যাম্পের কাঁটাতারের ফোঁকর দিয়ে একটি শিশুকে তার প্রপিতামহের হাতে তুলে দেবার সময়কার ছবি

নেশায় বুদ হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকা এক বাবাকে রাস্তা হতে তুলে বাড়ি নিয়ে যাবার আপ্রাণ চেষ্টায় লেগে থাকা এক সন্তানের চিত্র

সিরিয়ার শরণার্থী শিবিরে অবস্থানকারী শিশুরা নিজ নিজ পাত্রে তাদের পরিবারের জন্যে পানি সংগ্রহ করার কাজ করছে

রোমানিয়ার ব্যুকারেস্ট (Bucharest) শহরে দাঙ্গার সময়ে পুলিশ ব্যারিকেড তৈরি করে আক্রমণাত্মক অবস্থায় গেলে স্থানীয় এক শিশু 'হৃদয় আকৃতির (heart-shaped)' একটি বেলুন এক পুলিশ সদস্যের হাতে তুলে দেয়। পরবর্তীতে ঐ হৃদয় আকৃতির বেলুন হাতেই পুলিশ সদস্যকে ব্যারিকেড তৈরি করে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায়

২০১২ সালে মিশরের কায়রোতে বিক্ষোভ চলাকালীন সময় এক তরুণ বিক্ষোভকারী নিরাপত্তা প্রহরীদের লক্ষ করে পাথর ছুড়ে মারছে

ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ (Kiev)-এ পুলিশ এবং বিক্ষোভকারীদের মাঝে অবস্থিত এক জ্বলন্ত ব্যারিকেডের সামনে দাড়িয়ে আছে একজন বিক্ষোভকারী

২০১১ সালের এপ্রিল মাসে অ্যালাব্যামায় কনকর্ড শহরে টর্নেডোর আঘাতে ধ্বংস প্রাপ্ত নিজ বাড়ির সামনে দাড়িয়ে এক মা তার সন্তানকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন

২০১১ সালের আগস্ট মাসে লন্ডনের ক্রোয়িডন (Croydon) শহরে দাঙ্গার সময় আকস্মিক আগুন লেগে যাওয়া এক দালানের দ্বিতীয় তলা (first-floor) হতে ঝাপ দিচ্ছেন দালানে অবস্থানকারী এক মহিলা

২০১১ সালের অক্টোবর মাসে ব্যাংককের উপকণ্ঠে অবস্থিত র‍্যাঙ্গিট শহর বন্যার পানিতে প্লাবিত হলে এক মহিলা ল্যম্পপোষ্ট আঁকড়ে ধরে নিজেকে ভেসে যাওয়া থেকে বাঁচিয়ে রাখবার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন

এক সন্তান প্রথমবারের মত ছুঁয়ে দেখছে তার বাবাকে। লোকটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের সামরিক বাহিনীর কাছে যুদ্ধবন্দী হিসেবে ছিলেন

জন এফ. কেনেডি জুনিয়র, সকলের সাথে নিজ বাবার কফিনের প্রতি স্যালুট দিয়ে বিদায়ী অভিবাদন জানাচ্ছে

১৯৪০ সালের ১লা অক্টোবর মাসে কানাডার নিউ ওয়েস্টমিনস্টার হতে চিত্রগ্রাহক ক্লড পি. ডেটলফ ((Claude P. Dettloff)) "আমার জন্যে দাড়াও বাবা / Wait For Me Daddy" - শিরোনামের এই ছবিটির তুলেছিলেন

এক ফ্রেমে বন্দী ফিদেল কাস্ত্রো ও চে-গুয়েভারা'র একটি হাস্যোজ্জ্বল ছবি


রিও ডি জানিয়েরো কাছাকাছি এক স্থানে সর্বনাশা ধ্বসে মারা যায় এক ব্যক্তি। তাকে সমাহিত করার পরের দিনেও তার পোষা কুকুরটিকে তার সমাধির পাশে বসে থাকতে দেখা যায়

════════════════════════════════════
চিত্র এবং তথ্যসূত্রঃ আন্তঃজালিকা হতে সংগ্রহীত

বুধবার, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৬

অনুবাদ গল্পঃ আনন্দ আর দুঃখবোধ



          চমৎকার এক বাগান বাড়ির মালিক ছিলেন এক লোক। রুচি আর সাধ্যের সংমিশ্রণে তিলে তিলে গড়ে তুলেছিলেন তার সাধের বাড়িটিকে। শুধুমাত্র চমৎকার উপমা দিলে হয়তো বাড়িটির প্রশংসায় ভাটা পড়বে, তাই বাড়িটির সৌন্দর্যের সম্মানার্থে একে অপূর্ব আলয় বলা যেতে পারে।

গ্রামের অনেকেই ঐ বাগান বাড়িটি মালিকানায় পাবার জন্যে বেশ আগ্রহী ছিল। শুধু যে ঐ গ্রামের লোকেরাই আগ্রহী ছিল তাও নয়, বরং আগ্রহীদের তালিকায় ছিল দূর দূরান্তের অনেক নামী-দামী আর প্রভাবশালী লোকেরাও। কিন্তু বাড়ির মালিক বাড়িটিকে এত ভালোবাসতেন যে সকল আগ্রহীদের সব ধরণের প্রস্তাব সে বারংবারই নাকচ করে আসছিলেন অনেক লম্বা সময় ধরে।

একবার এক বিশেষ কাজে তাকে দিন কয়েকের জন্যে যেতে হল শহরে। শহরের কাজ শেষে দিন কয়েক বাদে ফিরছিলেন নিজ নিবাসে। পথিমধ্যে শুনতে পেলেন তার শখের বাগান বাড়িটিতে কিভাবে যেন আগুন লেগে গেছে। আর সে খবর শুনে সকলকেই ছুটতে দেখলেন সেদিকে। সখের বাড়িটিতে আগুন লাগবার খবর শোনামাত্র লোকটি যেন উড়ে চলল বাড়ির দিকে।

বাগান বাড়ির কাছাকাছি পৌছে দেখলেন শ'য়ে শ'য়ে লোক ভীর করেছে বাড়িটিকে ঘেরাও করে। কিন্তু কারোই এখন আর কিছু করার নেই, আগুন ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বাড়িময়। সত্যি বলতে সবই মিলে যদি এখন হাতও লাগায় তবুও বাড়িটিকে আর উদ্ধার করা সম্ভব হবে না। সকলের চেষ্টার বিপরীতেও মিলবে পোড়া বাড়ি আর জ্বলে-পুড়ে ভস্ম হয়ে যাওয়া আসবাব পত্র। টুকরো কোন বস্তুই ঐ বাড়ি থেকে আর অক্ষত অবস্থায় ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। আর সেটা বুঝতে পেরেই সকলে তাদের অহেতুক চেষ্টা থেকে নিজেদের বিরত রেখেছে।

জ্বলতে থাকা বাড়িটির দিকে নিঃস্বের মত তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই যেন করার থাকল না। বাকি সবার মত সেও দাড়িয়ে দাড়িয়ে তিলে তিলে গড়ে তোলা নিজের স্বপ্ন কুটিরটির পুড়ে যাওয়া দেখতে লাগলেন।

এরই মাঝে লোকটির বড় ছেলেকে দৌড়ে তার দিকে আসতে দেখলেন। দৌড়ে আসার কারণে ঠিক মত কথাও বলতে পারছিল না ছেলেটি। কোনরকমে বাবার কাছে পৌঁছে বলতে লাগল- "আব্বা, আপনি বাড়িটার জন্যে মোটেই মনে কোন কষ্ট নেবেন না। আপনি চলে যাবার পর এক ভদ্রলোক এসেছিলেন বাড়িটি কেনার জন্যে। অন্য সকলের তুলনায় প্রায় চার গুন দাম বলেছিলেন তিনি। এ বাজারে এত দাম দিয়ে অন্য কেউ বাড়িটিকে কেনার কথা চিন্তাও করবে না। তাই আর আপনার ফিরে আসার অপেক্ষা না করে ঝটপট সিদ্ধান্ত নিয়ে বাড়িটি আমি তার কাছে বিক্রি করে দেই। আমি মনে করছিলাম ফিরে এসে আপনি এ কথা শুনে রাগ করলেও আমাকে আমার এমন সিদ্ধান্তের জন্যে ক্ষমা করবেন।"

বড় ছেলের এমন কথায় বাবা যেন আপন স্বস্তির নাগাল খুঁজে পেলেন। একটু চুপ থেকে বললেন, "খোদাকে ধন্যবাদ, তোমাকে এমন উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করার জন্যে!" স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে আবারও তিনি বাড়িটির দিকে তাকিয়ে রইলেন। তার সাধের বাড়িটি এখনো পুড়েই চলেছে।

অল্প কিছু সময় পরই দেখলেন তার মেঝ ছেলে আরেক দিক থেকে দৌড়ে আসছে তার দিকে। কাছে এসেই আক্ষেপ আর কর্তৃত্ব মিশ্রিত কণ্ঠে বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগল, "আব্বা, আপনি কি করছেন? বাড়িটি পুড়ে ভস্ম হয়ে যাচ্ছে আর আপনি এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছেন? আপনি না প্রায়ই বলেন যে এ বাড়িটিকে আপনি আমাদের চেয়েও বেশি ভালোবাসেন; তাহলে এমন নির্বাক হয়ে কিভাবে আপনি বসে থাকছেন বলেন তো শুনি?"

বাবা যেন মেঝ ছেলের এমন কথায় কিছুটা কৌতুক খুঁজে পেয়েছেন এমন করে একটু হাসলেন। তারপর বললেন, "আরে বোকা, তুমি কি জানো না যে গতকালই তোমার বড় ভাই এই বাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছে?" বাবার উত্তর শুনে মেঝ ছেলে বলল, "সে ব্যাপারে জানি, কিন্তু বাড়িটি কিন্তু এখনো পুরোপুরি বিক্রি হয়ে যায় নি। বড় ভাই আপনার সিদ্ধান্ত নেবার জন্যে বাড়িটি ঐ ভদ্রলোকের কাছে বিক্রি করার আশ্বাস দিয়েছে মাত্র। আর বড় ভাইয়ের আশ্বাসের প্রতিরূপে লোকটি কেবল কিছু অগ্রিম টাকা দিয়ে বাড়িটির বিক্রয় চুক্তি নিশ্চিত করে রেখেছেন। বিক্রির পুরো টাকা এখনো আমাদের হাতে আসে নি! কিন্তু এখন তো এখানে ছাই ছাড়া আর কিছুই মিলবে না, ভদ্রলোক নিশ্চই কেবলমাত্র এই মূল্যহীন ছাই কেনবার জন্যে এতগুলি টাকা পরিশোধ করবেন না!"

যে কান্না শুরু হবার আগেই থেমে গিয়েছিল, এসব শোনার পর তা যেন জলোচ্ছ্বাসের রূপ নিলো। স্বস্তির সাথে হৃদয়টাও যেন টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ল চারিদিকে। ডুকরে কেঁদে উঠলেন তিনি; যতটা না বাড়িটিতে আগুন লাগবার শোকে, তারচেয়ে বেশি বাড়ি মূল্য আর আপন স্বস্তি খুইয়ে ফেলবার দুঃখে আর্তনাদ করে কাঁদতে লাগলেন। আশে পাশে লোকজনও যেন এবারে লোকটির এমন কান্না দেখে স্বস্তি খুঁজে পেল। কেউ কেউ দূর থেকেই সান্ত্বনা বাক্য ছুড়ে দেবার বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছিল। কিন্তু এবারে যে আগুনের কারণে কান্নার সৃষ্টি তা আর সান্ত্বনা বাক্যে বন্ধ হবার নয়।

এরই মাঝে লোকজনের ভিড় ছেলে উদয় হল লোকটির ছোট ছেলে। বাবাকে জড়িয়ে ধরে বলল, "আব্বা, এভাবে কাঁদবেন না। আর বাড়িটির জন্যেও দুঃখ করবেন না। বাড়িটি সত্যিই আর আর আমাদের নয়"। ছোট ছেলে ছেলে সান্ত্বনা দিচ্ছে ভেবে লোকটি বললেন, "নারে বোকা! আমাদের বাড়িটিই পুড়ছে তোমার চোখের সামনে। আর পোড়া বাড়ি কখনোই বিক্রি হয় না। বাড়ির এমন দশা দেখে অগ্রিম টাকাও নিশ্চিত ফিরিয়ে নিতে আসবেন ঐ ভদ্রলোক।"

ফের ছোট ছেলে বলল, "আব্বা, আপনি ভুল বুঝছেন। আপনি এখনো আমার পুরো কথাটি শোনেন নি। বাড়িতে আগুন লাগবার ঘটনা শুনে ভদ্রলোক কিছুক্ষন পূর্বে আমার সাথে যোগাযোগ করেছেন। তিনি তার দেয়া কথা রাখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন আমায়। বলেছেন- 'আগুন লাগুক কিংবা না লাগুক ঐ বাড়ির মালিকানা কেবলই আমার, এবং আমি অবশ্যই চুক্তি অনুযায়ী বাড়ির ক্রয়মূল্য তোমাদের পরিশোধ করব। ভাগ্যের ব্যপারে কারও কোন হাত থাকে না, বরং তা ওপর-ওয়ালাই নির্ধারন করে দেন। আমি কিংবা তোমরা কেউই আগে থেকে জানতাম না ঐ বাড়ির ভাগ্যে কি রয়েছিল। যেহেতু চুক্তির পর বাড়িটি আগুনের স্পর্শ পেয়েছে, অতএব সে আগুনে পুড়ে যাওয়া বাড়ির মালিকানাও আমার ভাগেই পড়ে। তাই তোমরা ঐ দুর্ঘটনা নিয়ে মোটেও কোন চিন্তা করো না। আমি যথা-দ্রুত সম্ভব বাড়িটির মূল্য পরিশোধ করব'।"

কথা শুনে লোকটির জলোচ্ছ্বাস থামলেও অশ্রু যেন আর বাধে আটকে রাখা যাচ্ছিল না। অশ্রুসিক্ত নয়নেই বোকার মত দাড়িয়ে কেবল বাড়িটির পুড়ে যাওয়া দেখতে লাগল সকলে মিলে।





⚍⚌⚎⚌⚍⚌⚎⚌⚍⚌⚎⚌⚍⚌⚎  নীতিনিষ্ঠ মূল্যায়ন  ⚍⚌⚎⚌⚍⚌⚎⚌⚍⚌⚎⚌⚍⚌⚎

মনব চরিত্রের বৈশিষ্ট্য নিরূপণ দারুণ এক জটিল কাজ। গল্পের বাগান বাড়ির মালিক যদিও তার সন্তানদের তুলনায় তার বাড়িটিকে অধিকতর ভালোবাসতেন, তবুও তিনি স্বস্তি খুঁজে পেয়েছিলেন এই জেনে যে বাড়িটির মালিকানার ভার এখন আর তার নেই। যদিও পূর্বে কোনভাবেই তিনি বাড়িটিকে বিক্রি করতে সম্মত ছিলেন না। কিন্তু যখন চোখের সামনে বাড়িটির সৌন্দর্য ধীরে ধীরে হারাতে লাগল, তখন তিনি ভালোবাসা আগলে রেখে কেবল বাড়ি বিক্রির অর্থের দিকে চেয়ে সান্ত্বনা খুঁজে পেয়েছিলেন। কিন্তু পরমুহুর্তে যখন জানতে পারলেন বাড়ির সৌন্দর্য আর মূল্য দুটোই তিনি হারাচ্ছেন তখন আর নিজের দুঃখের লাগাম টেনে ধরতে পারেন নি, ভেঙ্গে পড়েছিলেন নিমিষেই। এরপর যখন আবারও ছোট ছেলের কাছ থেকে পরবর্তি ঘটনা জানলেন তখন দুঃখ, সান্ত্বনা এবং কৃতজ্ঞতা বোধ সবই তার উপর ভর করে ছিল।

গল্পের মতই মানুষের আনন্দ আর দুঃখবোধ সময় আর ঘটনা প্রবাহের সাথে পরিবর্তিত হয়। ভালোবাসার অধিকার অর্জন আর হারানোর অনুপাতের দাঁড়িপাল্লায় হিসেব করে প্রকাশ পায় এক এক জনের অনুভূতি। গুরুত্বের পানসি জোয়ার-ভাটার টানে ঘুরে বেড়ায়, এগিয়ে যায়, পিছিয়ে যায় কিংবা থেমে থাকে নিজের জায়গায় নোঙ্গর ফেলে। একই ঘটনা ঘটে আত্মীয়তা আর বন্ধুত্বের সম্পর্কে।

তাই কারও আচরণ দেখে বিচার করবার আগেই ভাবতে হবে তার আচরণের পেছনে ঘটে যাওয়া বা ঘটতে থাকা কারণ গুলো নিয়ে। বুঝতে হবে তার উচ্ছাস কিংবা নিস্তব্দতার কারণ। আর এরপরই কেবল একজন মানুষের আচরণের বিপরীতে তার প্রকৃত মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে।





বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ০১, ২০১৬

ইনফার্নোঃ উপন্যাস বনাম চলচ্চিত্র

ধরুন চোখ মেলে আপনি নিজেকে আবিষ্কার করলেন কোন এক হসপিটালের বিছানায়। স্মৃতি আঁকড়ে ধরে মনে করার চেষ্টা করছেন ঠিক কি কারণে আপনি কখন হসপিটালে আসলেন। কিন্তু চেষ্টা করেও কিছু মনে করতে পারলেন না। তখনই হঠাৎ করে হসপিটালের জানালা গলে আপনার দৃষ্টি ছড়িয়ে পড়ল। বুঝতে পারলেন আপনি আছেন ভিন্ন কোন এক শহরের অজানা কোন এক হসপিটালের বিছানার উপর।

বলুন তো, ঠিক এমন একটা পরিস্থিতিতে কতটা অসহায় বোধ হবে আপনার?

এমন একটা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গল্পের শুরু হবে রবার্ট ল্যাংডনের সাথে। একজন প্রখ্যাত সিম্বলিষ্ট হঠাৎই নিজেকে আবিষ্কার করবেন এক হসপিটালের বেডে যে হসপিটালটি তার নিজের দেশে নয়, বরং রয়েছে ভিন্ন আরেক দেশে। সাথে রয়েছে মাথার যন্ত্রণা আর টুকরো টুকরো স্মৃতি ও স্বপ্নের মিশ্রণ। যদিও এই স্বপ্নটাকে আপনি কোনভাবেই সাধারণ স্বপ্ন বলতে পারবেন না, তারচেয়ে বরং স্বপ্ন গুলোকে দুঃস্বপ্ন বলা যেতে পারে।

দায়িত্বরত ডক্টরের কাছ থেকে জানতে পারলেন আপনাকে কোন এক ক্যাব হসপিটালের ইমার্জেন্সি সেকশনে ছেড়ে গেছে, কিন্তু যখন ছেড়ে গিয়েছিল তখন আপনি ছিলেন আপনার নিজেরই রক্তে চপচপে ভেজা! জানতে পারলেন এই রক্তের উৎস আপনার মাথার চামড়া কেটে যাওয়াতেই হয়েছে। কিন্তু খুব সাধারণ ভাবে চামড়া কেটে রক্ত বের হয়নি, বরং হয়েছে কোন একটা বুলেট শুধুমাত্র চামড়াটা ছুঁয়ে যাবার কারণে! আর দুই এক মিলিমিটার এদিক-সেদিক হলে হয়তো আপনার ভবলীলা সাঙ্গ হতো। আর এই আঘাতের কারণেই আপনার স্মৃতির কিছু অংশ ভ্রষ্ট হয়েছে। তবে আশার কথা হল সেসব স্মৃতি খুব দ্রুতই ফিরে পাবেন আপনি।

কিন্তু এতটাই সহজ যদি গল্পের শুরু হবে তবে সেটা কিভাবে এক উপন্যাসে রূপ নেবে? হ্যাঁ, এবারে আবারও শুরু হবে জটিলতার। হঠাৎ করেই গোলাগুলির শব্দ! কর্তব্যরত চিকিৎসকদের একজন আপনার সামনেই সেই গুলির আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন, তার রক্ত মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ছে খুবই দ্রুত। শুরু হল ছুটোছুটি আর এই ছুটোছুটি চলবে একদম উপন্যাসের শেষ পর্যন্ত। শুধু ল্যাংডন যে তার নিজের জীবন বাঁচানোর জন্যেই ছুটবেন তা কিন্তু নয়, বরং এ ছুটো-ছুটি চলবে পুরো মানব গোত্রকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে। বলতে পারেন মানব সমাজকে বাঁচিয়ে রাখার একমাত্র ক্লু’টি রয়েছে রবার্ট ল্যাংডনের হাতে।




এতক্ষণ যে গল্পের প্লট নিয়ে কথা বলছিলাম তা ছিল একজন সফল রোমাঞ্চ উপন্যাস লেখক 'ড্যান ব্রাউন' রচিত 'ইনফার্নো' উপন্যাসটির একদম প্রাথমিক অংশ। 'ডা ভিঞ্চি কোড', 'দ্যা লস্ট সিম্বল' এবং 'ইনফার্নো'; এই তিনি উপন্যাসে লেখক ড্যান ব্রাউন আমাদের সামনে নিয়ে এসেছেন তার বিখ্যাত চরিত্র রবার্ট ল্যাংডন সাহেবকে। আর প্রতিবারই দারুণ এক উত্তেজনার সাগরের তলদেশ হতে ঘুরিয়ে নিয়ে এসেছেন তার পাঠকদের।

ইতোপূর্বে 'ডা ভিঞ্চি কোড' এবং 'দ্যা লস্ট সিম্বল' উপন্যাস দুটোকে চলমান চিত্রে রূপ দান করা হয়েছে। সেখানে ল্যাংডনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন আরেক কালজয়ী অভিনেতা 'টম হ্যাংক্‌স'। আর সত্যি কথা বলতে গেলে এই চরিত্রটির জন্যে টম হ্যাংক্‌সের চেয়ে ভালো কেউ হতে পারত বলে মনে করি না। মাঝে মাঝে মনে হয় ড্যান ব্রাউন সাহেব সম্ভবত ল্যাংডন চরিত্রটিকে রূপদান করার পূর্বে তার কল্পনাতেও টম হ্যাংক্‌স সাহেবকে নিয়ে এসেছিলেন। 'ডা ভিঞ্চি কোড' এবং 'দ্যা লস্ট সিম্বল'-এ দারুণ অভিনয় গুণ ফুটিয়ে তোলার পুরস্কার স্বরূপ এবারেও ইনফার্নো চলচ্চিত্রে একই চরিত্রে দেখা মেলে হ্যাংক্‌স সাহেবের সাথে।

এর আগেও একটি লেখাতে আমি বলেছিলাম যে, যদি হাজারও চেষ্টা করা হয় তবুও কখনো কোন উপন্যাসের সমস্ত ঘটনা সমেত একটি মুভি একজন ডাইরেক্টর সাহেব কোনদিনই তৈরি করতে পারবেন না। কারণ ব্যাপারটা একেবারেই অসম্ভব। তবে অন্তত ৫০ থেকে ৬০ ভাগ পর্যন্ত উপন্যাসকে মুভিতে নিয়ে আসা সম্ভব বলে আমি মনে করি। কিন্তু এবারে ইনফার্নো মুভিটি যেভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে তাতে আমার কোন ভাবেই মনে হয়নি যে এখানে মূল উপন্যাসের ৪০ ভাগের বেশি উপস্থিত রয়েছে। বরং হিসেব করলে হয়তো তার থেকে অনেক কমই পাওয়া যাবে।

স্ক্রিপ্ট রাইটার মুভিটির স্ক্রিপ্ট তৈরি করার সময় উপন্যাস থেকে এত বেশি অংশ বাদ দিয়েছেন, আর এত বেশি নিজ থেকে যুক্ত করেছেন যে কেউ যদি মুভিটিকে ভিন্ন কোন নামে প্রকাশ করেন তবে সেটা আমার দিক থেকে মোটেও খুব অনুচিত কিছু মনে হবে না।



আবারও বলি, কারও সাথে যদি বইয়ের পাতাতে ইনফার্নোর সাথে পরিচয় হয়ে গিয়ে না থাকে তবে অবশ্যই আপনি মুভিটি দারুণ ভাবে উপভোগ করতে পারবেন। কিন্তু যদি ইতোমধ্যে ইনফার্নোর উপন্যাসটি আপনি পড়ে থাকেন আর আপনার স্মৃতিতে ইনফার্নোর ঘটনার বিবরণের রঙ এখনো কিছু বাকি থেকে থাকে তবে অবশ্যই মুভিটি দেখার পর আপনি বেশ অনেকটা হতাশ হবেন আর অনেক খানি বিরক্ত চলে আসবে আপনার মনে।

যদি এই ঘটনা পরিবর্তনের কারণ খুব ভালো করেই অনুমেয় তবুও পরিবর্তনটুকু ব্যক্তিগত ভাবে আমার কাছে মোটেই গ্রহণযোগ্য মনে হয় নি। উপন্যাসের স্রষ্টা খুব ভালো বুঝেই উপন্যাসটি রচনা করেছেন। এবং আন্তর্জাতিক ভাবে উপন্যাসটি 'বেস্ট সেল' র‌্যাংক প্রাপ্ত হয়েছে। তাই উপন্যাসের মত করে মুভিটিকে নিয়ে আসলে সেটা মানুষজনকে বিভ্রান্ত করবে, এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ তৈরি হবে কিংবা তার কারণে বড় ধরণের পরিবর্তন হয়ে যাবে মনে করে করা হয়ে থাকলে সম্ভবত ভুলই করা হয়েছে।

উপরন্তু উপন্যাসে বর্ণিত ঘটনা প্রবাহকে অনেক বেশি মর্ডানাইজেশন করা হয়েছে। মানছি সময়ের সাথে এমন পরিবর্তন হয়তো প্রয়োজন ছিল, তবুও যতটুকু না করলে আসলে সম্ভব ছিল না ততটুকু বাদ দিয়ে করলেই সম্ভবত তা আরও বেশি আকর্ষণীয় হতো। উপন্যাসে এক স্থানে ল্যাংডন ইনফার্নোর একটি হার্ড কপি বই ধার নিয়েছিলেন ভ্রমণকারীর কাছ থেকে। সে অংশটাকে মর্ডানাইজেশন প্রক্রিয়ায় বাদ দেয়া হয়েছে। এখানে দেখা যায় সিয়েনা ব্রুক্‌স চাওয়া মাত্রই নেট থেকে ইনফার্নোর একটি কপি বের করে নিয়ে আসেন তার চুরি করা সেলফোনে। এই অংশটা প্রযুক্তির ব্যবহারের অতিরিক্ত মনে হয়েছে আমার কাছে।



এছাড়াও পালিয়ে বেড়ানোর অনেক অংশে নিয়ে আসা হয়েছে অনেক পরিবর্তন। উপন্যাসে ছুটোছুটির যেসব স্থানে স্থানে এসে প্রায় আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম পাঠক হিসেবে, আবার ঠিক তার পরমুহুর্তে সিয়েনা আর ল্যাংডন সাহেব যেভাবে সেই ঘটনা উৎরে যাবার রসদ খুঁজে বের করে নিচ্ছিল, যেখানে ধাঁধা আউরে বার বার সমাধান বের করার চেষ্টা চলছিল; সেখানে লাইট-ক্যামেরা-রোলিং এর গ্যাঁড়াকলে পড়ে তার প্রায় সব কিছুই বাদ পড়ে গেছে।

এ ছাড়াও চরিত্রায়নে ছিল অনেক বেশি গাফিলতি(!)। ড. সিন্সকিকে উপন্যাসে যেভাবে দেখানো হয়েছে, তার যে বর্ণনা সেখানে পাওয়া গেছে তার ঠিক বিপরীত রূপটাই এসেছে মুভিটিতে। অন্তত এই চরিত্রটিকে বেছে নেয়ার ব্যাপারে আরও একটু স্টাডি করার প্রয়োজন ছিল। একই ব্যাপার ঘটেছে সিয়েনা ব্রুকসের ব্যাপারে। তারপরও সিনেমার খাতিরে সিয়েনাকে মেনে নিয়েছিলাম। তবে চরিত্রায়নের পজিটিভ দিক বলতে গেলে বলতে হবে প্রভোস্টের চরিত্রটির কথা। প্রভোস্ট চরিত্রটি চরিত্রায়ন করেছেন ভারতীয় অভিনেতা 'ইরফান খান' এবং তার অভিনয় বেশ সাবলীল ছিল। এই একটি চরিত্রই মুভিটির জন্যে বেশ নিখুঁত মনে হয়েছে।

এরকম হাজারও পরিবর্তন দেখতে দেখতে মুভিটির প্রায় শেষ অংশে উপস্থিত হয়েছি। উপন্যাসের একদম শেষ দিকে সিয়েনার পালিয়ে যাওয়া, তারপর পুনরায় ফিরে আসা, আত্ম সমর্পণ করা, প্রভোস্টের চোপ-পুলিশ খেলায় নিজেই ধরা খাওয়া আর শেষ পরিস্থিতিতে পুরো ব্যাপারটার উপর নিয়ন্ত্রণ নেবার যে ব্যাপারগুলি উপন্যাসটিতে যে দারুণ সব উত্তেজনার সৃষ্টি করেছিল; মুভিতে সেই একই ব্যাপার গুলির অনুপস্থিতি, নতুন দৃশ্যপট সংযোজন আর বিয়োজনে সেই ব্যাপারগুলি একদম সাদামাটা ঠেকেছে। এখন মুভিটিকে আর ১০ টি সাধারণ এডভেঞ্চার মুভির মতই একটা সস্তা দরের এডভেঞ্চার মুভি মনে হয়েছে।



জানিনা বাকি সবার কাছে পরিবর্তিত এই মুভি কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা পাবে, তবে ব্যক্তিগত ভাবে ১০ এর স্কেলে আমি মুভিটিকে মাত্র ৪ পয়েন্ট দিয়ে রেট করব। টিজার আর ট্রেলার দেখার পর অনেক আশা নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম মুভিটি দেখার জন্যে। কিন্তু মুভিটি দেখার পর মনে হয়েছে, যদি দয়া করে ডাইরেক্টর সাহেব মুভিটিকে সৃষ্টি না করতেন তবেই কেবল ইনফার্নো উপন্যাসটির প্রতি তার সুবিচার করা হতো।






রকমারি হতে ইনফার্নো উপন্যাসটির হার্ডকপি সংগ্রহ করতে পারেন
কিংবা এই লিংক হতে বইটির সফটকপি ডাওনলোড করতে পারেন।
মুভিটির অনলাইন স্ট্রিম এখানে পাবেন।

মঙ্গলবার, নভেম্বর ২৯, ২০১৬

সোমবার, নভেম্বর ২৮, ২০১৬

কমিকঃ আপন আলয়ের ভিন্নরূপ








────────────────────────────
♦ কমিক : আপন আলয়ের ভিন্নরূপ | A Place Like Home
♦ সংগ্রহ : Stumbleupon.com Stream
♦ জঘন্য অনুবাদে : আমি 😛

শুক্রবার, নভেম্বর ২৫, ২০১৬

উদভ্রান্ত আগন্তুক



          মন খারাপ হলে কিংবা খুব বেশি পরিমাণে একাকীত্ব বোধ জেগে উঠলে আমি প্রায় এখানে আসি। এখানে বলতে এই পার্কটাতে। শহরের এই দালান কোঠার মাঝে অল্প কিছু জায়গা ঘের দিয়ে তৈরি হয়েছে এই শহুরে পার্ক। শহুরে জীবন থেকে কিছুটা সময় ধার নিয়ে আমার মত কিছু মানুষ চলে আসে এখানে তাদের দুরন্ত আর ছটফটে মনটাকে শান্ত করতে। তবে এমন করে ঠিক কতটুকু পরিমাণে মন শান্ত হয় তার হিসেব কখনোই কেউ করতে যায় না।

অবশ্য শুধু দুরন্তপনাকে শান্ত করতেই যে সকলে আসে তাও নয়। অনেকে সকাল বিকেল ওয়াকে আসে, কেউ কেউ সমবয়সীদের সাথে আড্ডা জমাতে একত্রিত হয় এখানে, ছেলেরা আসে নিজেদের মত দৌড়াদৌড়ি করে সময় কাটাতে। কালেভদ্রে ছেলেগুলি একসাথে ফুটবল, ক্রিকেটও খেলে ঘটা করে। আর আসে ভাসমান চা-বিস্কিট-বাদাম আর সিগারেট বিক্রেতারা। এদের কোলাহলেই বুঝি মাঝে মাঝে এই পার্ক নামের মাঠটা তার প্রাণ ফিরে পায়।

একবার এক প্রবীণ ব্যক্তির সাথে দিন কয়েক আলাপ হয়েছিল। অল্প কিছুদিনেই শহুরে এই জীবনে হাঁপিয়ে যাওয়াদের একজন ছিলেন তিনি। চিকিৎসা করানোর নাম করে তার ছেলেমেয়েরা গ্রাম থেকে জোড় করে ধরে নিয়ে এসেছিল এখানে। নিয়ম করে ক'দিন পর পর গাদা গাদা টেস্ট করিয়ে আর ডাক্তার দেখিয়ে রোগ নির্ণয়ের চেষ্টা চালাচ্ছিল। আর এসবের সাথে অত্যাচার হিসেবে যোগ হয়েছিল বাহারি ধরনের ঔষধ; যা তাকে ততোধিক নিয়ম মেনে গিলতে হতো তিন বেলা। একবার তিনি বেশ আক্ষেপ করে বলেছিলেন- "এই যে এত-শত ঝামেলা করছি দু'টো দিন বেশি বেঁচে থাকবার জন্যে, তাতেও কি জীবনের কোন তৃপ্তি আছে?" বড় কঠিন প্রশ্ন ছিল ওটা। তার উত্তর আজও আমি খুঁজে পাই নি। তবে ভদ্রলোক খুব দ্রুতই তার এই 'ঝামেলা' থেকে মুক্ত হয়েছিলেন। আর তার মুক্তিটা ছিল চিরকালের জন্যে। ঐ মুক্তি ছাপিয়ে কখনোই এ দুনিয়ার কোন ঝামেলা আর তাকে বন্দী করতে পারবে না। কষ্ট পাওয়ার বিপরীতে তার জন্যে আমি কিছুটা খুশিই হয়েছিলাম।

এরপর আবারও আমি একেলা হয়ে পড়লাম। ঠিক কি কারণে জানা নেই, শহুরে এই লোকগুলি আমাকে এড়িয়েই চলতো সবসময়। আর তা নিয়ে কোনদিনই আমার কোন অভিযোগ ছিল না। বরং তাতেই আমি বেশ স্বস্তি পেতাম। অন্তত ঘেঁটে-ঘেঁটে অতীত মনে করতে হতো না ওসব আলাপের তালবাহানায়। আর আমি নির্বিকারেই আমার মনকে শান্ত রাখার সুযোগ পেতাম তাদের এই অনাকাঙ্ক্ষিত দয়ায়।

একদিন এক উদভ্রান্তকে দেখলাম পার্কের এক কোনায় হাতে এক লাঠি নিয়ে দাড়িয়ে হাসছে। মানসিক ভারসাম্য যে সে হারিয়েছে তা আর আলাদা করে কেউ কাউকে বলল না। কিছু লোক তার এমন কর্মকাণ্ডে কিছু বিনোদিত হল; আর মনে মনে এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল এমন করে মুখোশ ছেড়ে প্রাণ খুলে হাসতে না পারার অপারগতায়। সমাজের এই মুখোশটাও বেশ অদ্ভুত; সামাজিক তো তাকে করে তোলে ঠিকই, কিন্তু কেড়ে নেয় তার প্রকৃতি প্রদত্ত স্বভাব। চাইলেই এই উন্মাদের মত হাতে লাঠি নিয়ে কোন মাঠের কোনায় একাকী বসেও নির্লজ্জ হাসিতে মেতে উঠতে পারে না। সামাজিক মুখোশ তাকে অমন উন্মাদনার স্বাদ আহরণ করার অনুমতি দেয় না।

পরপর কয়েকদিন ঐ উদভ্রান্ত পার্কের ঐ কোনাতেই বসে থাকল। ক্ষণে ক্ষণে আপন ইচ্ছেতে হেসে উঠে কারও কারও বিরক্তির কারণ হল। আবার ঠিক ঐভাবেই হঠাৎ শান্ত হয়ে তাদের বিরক্ত হওয়া থেকে মুক্তি দিল। আমিও আর সবার মতই দূর থেকে তাকে দেখলাম কেবল।

এক বিকেলে পার্কে গিয়ে দেখলাম যে স্থানটাতে বসে আমি সময় কাটাই ঠিক সেখানেই ঐ উদভ্রান্তটা বসে আছে। নিশ্চিত নই, তবে মনে হল সে আমাকে দেখে মিটিমিটি হাসছে। যেন বলছে, দেখো বাপু আমি তোমার জায়গাতে এসেছি এখন তুমি আবার ঝামেলা করতে এসো না, লক্ষ্মী ছেলেটার মত আমার যায়গাতে গিয়ে বস। আমি অবশ্য তার মিটিমিটি হাসির বিপরীতে কোন প্রতিক্রিয়া দেখালাম না; কিংবা তার এমন কাজে বিরক্তও হলাম না। আমি আমার মত হেটে গিয়ে ওখানেই একটু দূরত্ব রেখে একপাশে বসে পড়লাম।

একটু বাদে পাগলটা আমার দিকে মুখ করে বসে জিজ্ঞাস করল, "তোর মনে রাগ ধরেনি?"

নিতান্ত পরিচিত ছাড়া এ শহরের ভদ্র সমাজ কেউ কাউকে 'তুই' বলে সম্বোধন করে না, আর অনভ্যাসে আমিও কিছুটা বিরক্ত হলাম অপরিচিত এক উদভ্রান্তের মুখে 'তুই' সম্বোধন শুনে। তাই আর ও প্রশ্নের জবাব দিতে গেলাম না। তাছাড়া কেন জানি মনে হচ্ছে ঝামেলা করার জন্যেই ব্যাটা এখানে এসে বসেছে। আমি নির্বিকার বসে রইলাম।

জবাব না পেয়ে একটু অপেক্ষা করে বলল, "এবারে তোর মনে রাগ ধরেছে। আর ভদ্রতা করে তুই তোর রাগ লুকাতে চাইছিস। কি চাচ্ছিস না?"

আমি নির্বিকার। কথায় কথা বাড়ে। আমি মোটেও তা করতে চাইছি না। আর এমন উদভ্রান্তের সাথে তো ভুল করেও না।

তবে তাতে ঐ উদভ্রান্তের উৎসাহে কোন ভাটা পড়ল না। নিজে নিজেই কথা চালিয়ে যেতে লাগল। বলল-
"তোর মুক্ত হওয়া নেশা তোরা ছাড়ে না। খাঁচায় আটকা পাখির মত তুই খালি ছটফটাস। ছটফটাশ মনে মনে, আর শান্তি খোজস এই শহরের বনে।"

এইটুকু বলেই সে তার মত চিৎকার করে হাসতে লাগল। যেন চরম কোন রসিকতা করেছে সে এ মুহূর্তে। দূর থেকে ক'জন খুব বিরক্ত নিয়ে একবার তাকাল, তারপর আবার নিজেদের মত আবার আলাপ জুড়ে দিল।

এমন কথার পরেও আমি খুব একটা বিচলিত হলাম না। শহরের হাজার হাজার মানুষের ভীরে এমন কিছু মানুষও আছে যারা মন দুর্বল করা কিছু আবেগী কথার দ্বারা মানুষকে সম্মোহিত করেতে জাল ফেলে। মানুষ তাদের কথার জালে আকটে যায়। যারা আটকে যায় তারাও জানে এটা তাদের ভ্রম। কিন্তু আজব এইসব মানুষের মন সেই ভ্রম কেটে বাইরে বের হয়ে আসতে চায় না। মাঝে মাঝে সর্বোস্ব খুইয়ে তারপর নিজের করে যাওয়া এই বোকামিকে গালমন্দ করতে থাকে। আমি তার সম্মোহনের এমন জালতে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে নিজের মত বসে রইলাম।

এরপর লোকটা উঠে দাড়িয়ে একদম আমার সামনে এসে দাঁড়াল। ঝুঁকে একদম মুখের সামনের দিকে এসে বলল, "যাবি? তোর মুক্তি যেইখানে, ঐখানে যাবি?"

এরকম মুখের সামনে এসে দাড়িয়ে এমন করে বললে সেটাকে আর আমলে না নিয়ে পারা যায় না। লোকটাকে কিছু না বলে চলে যাবার জন্যে উঠে দাঁড়ালাম। দেখাদেখি লোকটাও সোজা হয়ে একদম সামনে দাঁড়াল। এরপর বলল- "পলাইবি? কই পলাইবি? এইখানে পলানির জায়গা কই? আয় আমি তোরে মুক্তি দেখাই, তোরে তোর মুক্তির কাছে লইয়া যাই।"

এরপর আচমকা তার হাতের লাঠিটা বিপদজনক ভাবে খুব দ্রুত মাথার উপর উঠিয়ে মুখে মুখে কিছু একটা বিড়বিড় করতে লাগল। আমি ওসব গ্রাহ্য না করে পাশ কাটিয়ে চলে আসতে যাচ্ছিলাম, কিন্তু হঠাতই লোকটার লাঠি একদম আমার সামনে দিয়ে মাথার উপর হতে নিচের দিকে দ্রুত নামিয়ে নিলো। কাজটা আরও একটু অসাবধানে করলে নির্ঘাত লাঠিটি আমার মাথায় আঘাত করত। এবারে বেশ খানিকটা বিরক্ত হয়ে লোকটিকে একচোট ধমকে দেবার উদ্দেশ্যে ওদিকে ঘুরতেই বুঝলাম কিছু একটা পরিবর্তন হয়ে গেছে এর মধ্যে।

হঠাৎ করেই আমি অনেক পরিচিত একটা স্থানে যেন চলে এসেছি, যে স্থানটাকে শেষ এরকম দেখেছিলাম প্রায় ২৪/২৫ বছর আগে। যে জায়গাটাতে ফিরে যাবার জন্যে আমার মনটা প্রায় ব্যকুল হয়ে থাকে, এটা ঠিক ঐ জায়গাটা। অবাক হওয়ার চেয়েও অনেক বেশি পরিমাণে স্মৃতি-কাতর হয়ে উঠলাম নিমিষেই। বুক ভরে শ্বাস টানলাম, এই নির্মল বাতাস পাবার জন্যে ফুসফুসটাও আকুতি জানাচ্ছিল সেই কত বছর আগ থেকে। চোখ বুজতেও কেন জানি ভয় করছিল। মনে হচ্ছিল চোখ বুজলেই হঠাৎ চোখের সামনে এই স্থানটা যেমন করে উপস্থিত হয়েছে, ঠিক তেমনি হারিয়ে যাবে।

কতটুকু সময় ওভাবে বিমুঢ় হয়েছিলাম তার হিসেব দিতে পারব না, তবে বেশ অনেকটা সময় বিমুঢ় হয়ে ছিলাম তা নিশ্চিত। চোখের কোন দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল তা নিয়ে মোটেই বিচলিত হলাম না। অনা-প্রাপ্তির মরুতে যেন হঠাৎই বৃষ্টির পরশে সবুজ উদ্যান গড়ে উঠেছে মনে। পাশে দাড়িয়ে ঐ উদভ্রান্তটা দাঁত কেলিয়ে হাসছে, কিন্তু এবারে তার হাসিতে উল্লাসের চিৎকার অনুপস্থিত। সে হাসছিল যেমন করে হাসে অভিভাবকেরা তাদের সন্তানকে চমকে দিয়ে। আমি কোনরকম শুধু বলতে পারলাম, 'কিভাবে?'

এবারে আর তার মুখে আর কোন শব্দ নেই, নেই কোন উত্তর। শুধু ঠোটে লেগে আছে এক টুকরো হাসি। সত্যিই সে আমাকে আমার মুক্ত আরণ্যে নিয়ে এসেছে, দিয়েছে মুক্তির স্বাদ। জায়গাটা ঠিক ২৪/২৫ বছর পূর্বে যেমন ছিল, এখনো ঠিক তেমন দেখাচ্ছে। কিন্তু এটা যে সত্যি নয় তা আমি খুব ভালো করেই জানি। এও জানি যে আমি মোহে আটকে গেছি। সত্যিটাকে আমার মন অস্বীকার করে যাচ্ছে, চোখের সামনে যে মায়াজাল দেখছে তাকেই সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে প্রাণপণ।

একসময় লোকটি তার মাথাটা একটু নাড়িয়ে ইশারা দিল। এ ইশারা না বোঝার কিছু নেই। সময় ফুরিয়ে এসেছে, মোহ ভঙ্গ হবে এখুনি। ব্যকুল হয়ে বলতে চাইলাম, 'আর একটু...."। কিন্তু তার আগেই দৃশ্যপট পাল্টে গেল। দেখলাম অনেকগুলি মুখ আমার দিকে তাকিয়ে আতঙ্ক আর উৎসাহ নিয়ে অপেক্ষা করছে। চোখ মেলতেই পাশ থেকে কেউ একজন একটু চিৎকারের মত করেই বলল, "মরে নি! বেঁচে আছে এখনো"। আমি হুড়মুড় করে উঠে বসলাম, আশে পাশে তাকিয়ে খুঁজতে লাগলাম ঐ উদভ্রান্ত লোকটিকে। কিন্তু তাকে দেখলাম না কোথাও।

যে লোকটি বলেছিল আমি এখনো মরি নি সম্ভবত সে এগিয়ে আসল। বলল, 'কি? কিছু দিয়েছিল নাকি আপনাকে খাওয়ার জন্যে?"। আমি তার উত্তর দেবার আগে জিজ্ঞাস করলাম, "ঐ লোকটা কই?"। সে খুব কৃতিত্বের কণ্ঠে বলতে লাগল, "প্রথম দিন থেকেই দেখছিলাম ঐ ব্যাটার নজর আপনার উপর। তারপর আজ যখন আপনাকে দেখলাম হঠাৎ টলে পড়তে তখনই দৌড়ে এসে ধরলাম ব্যাটাকে। দুটো ঘা দিতেই ব্যাটা দিল আমার হাতে একটা কামড় বসিয়ে"। নিজের হাতটা সামনে নিয়ে এসে উৎসুক জনতাকে দেখাতে লাগল। "তারপর দিল এক ভো-দৌড়! এরপর আমার চিৎকার শুনে এরা সবাই এগিয়ে আসল। তা আপনার কিছু খোয়া গেছে নাকি দেখেন তো।"

কি করে এদের বোঝাই আমার কিছুই খোয়া যায় নি। বরং যা খুইয়েছিল অনেক অনেক বছর আগে তাকেই ফিরে পেয়েছিলাম এক মুহূর্তের জন্যে। আমি জানি আমার এই গল্প এদের বিশ্বাস করানো যাবে না। তাই সে চেষ্টাতেও গেলাম না। লোকটার ব্যাপারে কোন সাফাইও গাইলাম না, আর করলেও সেটা কোন কাজে আসত না। বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। যে লোকটি খুব আগ্রহ নিয়ে ঘটনা বলছিল সবাইকে তাকে ছোট করে একটা ধন্যবাদ দিয়ে বের হয়ে এলাম পার্ক থেকে।


এরপর শুধুমাত্র আর মনকে শান্ত করার জন্যে কখনোই পার্কে যেতে পারি নি। যতবার গিয়েছি, ততবারই গিয়েছি ঐ উদভ্রান্তের খোঁজে। কিন্তু উদভ্রান্তদের কোন ঠিকানা নেই, তারা হুট করেই আসে আর হুট করেই হারিয়ে যায়। হারায়, একদম চিরতরে......






বুধবার, নভেম্বর ১৬, ২০১৬

Jetsons এবং হান্না-বারবারা


ছোটবেলায় কার্টুন নেটওয়ার্ক চ্যানেলে The Jetsons কার্টুন সিরিজটা দেখতাম। অত্যান্ত মজার কার্টুন গুলির মধ্যে সেটি ছিল একটি। কেউ যদি আমাকে তখন বলত নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে সারাদিন কার্টুন দেখতে হবে, সম্ভবত তার সেই শর্ত মেনে নিয়ে আমি সারাদিনই কার্টুন দেখতাম।


এ পৃথিবীতে অনেকেই এখন পর্যন্ত এমন অনেক ধারণা দিয়ে গেছে যার প্রয়োজন এবং বাস্তবায়ন বুঝতে আমাদের শতবছরেরও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। তেমনই দুজন মানুষ হলেন উইলিয়াম হান্না এবং জোসেফ বারবারা।


The Jetsons কার্টুন সিরিজটি যারা দেখেছেন তারা মনে করতে পারবেন কার্টুনে দেখানো তাদের জীবন যাপনের অবস্থা এবং ব্যবস্থা গুলি। সেখানে অত্যাধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা, ভাসমান যান, অটোমেটেড লোকেশন ট্রাকিং ডিভাইস, ভয়েস কমান্ড বেস্‌ড মডিউল, উড়ন্ত ডিসপ্লে সমেত কম্যুনিকেশন মডিউল, রোবট সেক্রেটারি এবং হোমকিপার, রোবট জন্তু সহ নানান ধরণের কাল্পনিক (ঐ সময় এসবের সবই শুধু কাল্পনিক নয়, অতিকাল্পনিক ছিল) জিনিষ দেখানো হয়েছে। অথচ ঐসব কাল্পনিক বস্তু গুলি ধীরে ধীরে আমাদের কাছে টেক-টয়(প্রযুক্তির খেলনা) হিসেবে চলে এসেছে। অল্প ক’দিন বাদেই হয়তো আমরা ঘরের কাজ করার জন্যে ইন্টিলিজেন্ট (অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা/সিদ্ধান্ত নিতে পারে এমন) রোবটও পেয়ে যাবো।


তবে সেখানে দেখানো সবচেয়ে সাধারণ একটা বস্তু ছিল তাদের বাড়ি। আমাদের সাধারণ বিল্ডিং গুলোর মত সেখানে দেখানো বিল্ডিং গুলি একদম গ্রাউন্ড থেকে শুরু হতো না। বরং গ্রাউন্ড থেকে লম্বা দুটো দন্ডের উপর একটি বেস এবং সেই বেসের উপর তাদের বিল্ডিং গুলি দেখা যেত।

হান্না-বারবারা নিশ্চিত ভাবেই দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। আমরা আমাদের এই পৃথিবীটাকে যেভাবে বসবাসের অযোগ্য করে তুলছি দিনকে দিন, তাতে অদূর ভবিষ্যতে হয়তো ভূমির কাছাকাছি কোথাও মানুষের টিকে থাকাটাই অসম্ভব হয়ে উঠবে। আর সেই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্যে আমাদেরও জেটসন কার্টুনের মত বেছে নিতে হবে ভূমি থেকে অনেক উঁচুতে বাড়ির মডেল।