সোমবার, জুলাই ২৫, ২০১৬

বদি এণ্ড রঞ্জুর কথোপকথন — ৬



বদি ভাইঃ রঞ্জু, তুই মুভি দেখিস?

রঞ্জুঃ দেখি তো বদি ভাই!

বদি ভাইঃ কি কি মুভি দেখিস?

রঞ্জুঃ বাংলা, ইংলিশ কিছু কিছু হিন্দি, কোরিয়ান, জাপানি, থাই সহ প্রায় সব ধরণের মুভিই দেখি। কেন বদি ভাই?

বদি ভাইঃ এই যে এত মুভি দেখেছিস ঐগুলির মাঝে কোন ভাম্পায়ারের মুভি ছিল না?

রঞ্জুঃ হ্যাঁ, ছিল তো। এই তো কিছুদিন আগে ডিজনি'র রিলিজ করা হোটেল ট্রানসিলভেনিয়া-২ দেখলাম। অসাম মুভি একটা।

বদি ভাইঃ হুম, অসাম মুভি। বুঝলাম।

রঞ্জুঃ কেন বদি ভাই! কোন সমস্যা?

বদি ভাইঃ না কোন সমস্যা না। আচ্ছা ঐ যে ভাম্পায়ার ছিল, ওরা কি খেয়ে বেঁচে থাকে বল তো দেখি।

রঞ্জুঃ ইয়ে! মানে... মুভিতে তো দেখায় ভাম্পায়ারেরা মানুষের রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে।

বদি ভাইঃ হুম, ভাম্পায়ার চরিত্রটার চরিত্রায়ন করা হয়েছে এমন ভাবে যেখানে দেখানো হয় ঐগুলি মানুষের রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে। আগে তো ভাম্পায়ার শুধু ভৌতিক সাসপেন্স আর ভায়োলেন্স যুক্ত মুভিতেই ভাম্পায়ারের চরিত্র থাকত। তবে এখন ভাম্পায়ারের চরিত্রের প্রসার ঘটেছে অনেক। রোমান্টিক, কমেডি, যুদ্ধ, কভার্টস্ট্রাইক টাইপের মুভিতেও চলে এসেছে ভাম্পায়ার। আর সাথে ডিজনি তো রয়েছেই তাদের চমৎকার সৃষ্টিশীল কাজ নিয়ে।

রঞ্জুঃ বুঝলাম। কিন্তু আজ আপনি হুট করে ভাম্পায়ার নিয়ে এত কিছু কেন বলছেন ঐটাই শুধু বুঝতে পারি নাই।

বদি ভাইঃ হা হা হা! বুঝিস নাই!
আসলে ভাবিতেছিলাম রঞ্জু, এই যে ভাম্পায়ার গুলিরে ওরা বানাইল। তারপর এত শত ব্যবহার করল। কিন্তু তারপরেও ভাম্পায়ারের খাবারের কিন্তু কোন পরিবর্তন করতে পারলো না। সেই আগের মতই সব ভাম্পায়ার মানুষের রক্তই খাইয়্যা বাইচ্চা থাকে। চিন্তা করে দেখো তো দুনিয়াতে এত এত খাবার থাকতে ভাম্পায়ার গুলিরে নাকি হুদা মানুষের রক্ত খাইয়্যা বাইচ্চা থাকতে হয়!

রঞ্জুঃ হুম, সেইটা তো আসলেই ভাববার মত বিষয়।

বদি ভাইঃ আচ্ছা বলতো রঞ্জু, ভাম্পায়ার গুলির চরিত্র এমন করে কেন তৈরি করেছে, যে সে না চাইলেও বাধ্য তাকে হয়ে মানুষের রক্ত খেতেই হয়?

রঞ্জুঃ কেন বদি ভাই?!

বদি ভাইঃ তোর ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি যারপরনাই হতাশ রঞ্জু! তুই এখনো ওয়াইড মাইন্ডে কিছু বোঝার চেষ্টা করিস না! এমন করে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে যে তোর কি হবে তাই নিয়ে আমি বড়ই শঙ্কায় থাকি মাঝে মাঝে।

রঞ্জুঃ আহ্‌ বদি ভাই! আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে পরে শঙ্কা করলেও চলবে, আগে আপনে বলেন কেন ভাম্পায়ার গুলিকে অনিচ্ছাতেও রক্ত খেতে হয়।

বদি ভাইঃ আচ্ছা শোন মন দিয়ে।
ভাম্পায়ারের মুভিতে তো দেখেছিস, ওরা হাজার হাজার বছর কফিনে বসবাস করে। দিনের বেলাতে ঘুম আর সন্ধ্যার পর জেগে উঠে। তারপর যায় মানুষের রক্তের সন্ধানে।

রঞ্জুঃ হুম দেখেছি।

বদি ভাইঃ আবার এইটাও নিশ্চই দেখেছিস যে ওরা সূর্যের আলো সহ্য করতে পারে না। সূর্যের আলো গায়ে পড়লে হয় ধোঁয়া হয়ে উড়ে যায় কিংবা বালির মত ঝড়ে যায়।

রঞ্জুঃ হ্যাঁ, এটাও দেখেছি। ওদের জন্যে সূর্যের আলো হচ্ছে মৃত্যু স্পর্শের সমতুল্য।

বদি ভাইঃ তাহলে এই থেকে কি প্রমাণ হয়?

রঞ্জুঃ কি প্রমাণ হয় বদি ভাই!!

বদি ভাইঃ আরে গাধা এই থেকে প্রমাণ হয় যে জন্মের পর ওরা আমাদের মত সূর্যের আলো গায়ে মেখে ভিটামিন 'ডি' নিতে পারে না। আর ভিটামিন 'ডি' না থাকলে শরীরের হাড়গোড় শক্ত হয় না। আর হাড়গোড় শক্ত না হলে হাজার হাজার বছর ক্যামনে বেঁচে থাকবে বল?
তাই ওরা শুধুমাত্র ভিটামিন 'ডি' পাওয়ার জন্যে অনিচ্ছাতেও মানুষের রক্ত খেয়ে বেড়ায়! বুঝলি রে আহাম্মক!

রঞ্জুঃ হা হা হা হা!
একেবারে টু দ্যা পয়েন্টে বুঝতে পেরেছি!






রবিবার, জুলাই ২৪, ২০১৬

কমিকঃ নক্ষত্রজ্ঞানী




কমিকটি পিডিএফ হিসেবে ডাওনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন







────────────────────────────
♦ কমিক : নক্ষত্রজ্ঞানী | Stargazer
♦ সংগ্রহ : Stumbleupon.com Stream
♦ জঘন্য অনুবাদে : আমি :p

বুধবার, জুলাই ২০, ২০১৬

অনুবাদ গল্পঃ আত্মমূল্যায়ন



একবার এক যুবক এক জ্ঞানী সন্ন্যাসীর সাথে দেখা করতে গেল। সন্ন্যাসীর সাক্ষাত পেয়ে তাকে বলল-
'আমি আপনার পরামর্শের জন্যে এসেছি। এখন পর্যন্ত আমার অযোগ্যতার জন্যে আমি কোন কিছুই করতে পারি নি। পরিচিত, স্বল্প-পরিচিত আর স্বজনেরা আমার ব্যর্থতার জন্যে আমাকে ভৎর্সনা করে আর আমার বোকামির জন্যে আমাকে ঠাট্টার পাত্র বানিয়ে রেখেছে। আমার এই ব্যর্থ জীবনের নিয়ে আমি বড় কষ্টে রয়েছি। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে এ জীবনের মায়া ত্যাগ করতে। আপনি দয়া করে আমাকে একটু সাহায্য করুন। আমার ব্যর্থতাকে উৎরে যাবার উপায় বলে দিন।"

জ্ঞানী সন্ন্যাসী যুবকটিকে একটু ভালো করে দেখলেন, তারপর দ্রুত বললেন-
"আমাকে ক্ষমা কর, এই মুহূর্তে আমি এত ব্যস্ত সময় পার করছি যে তোমাকে কোনরূপ সহায়তা করার সুযোগ আমার নেই। আমাকে খুব জরুরী ভিত্তিতে কিছু কাজ করতে হবে..." এতটুকু বলে তিনি একটু থামলেন। তারপর এক মুহূর্ত চিন্তা করে আবার বললেন, "কিন্তু তুমি যদি আমাকে আমার কাজে একটু সহায়তা করতে রাজী থাকো তবে আমি খুব দ্রুতই তোমার সমস্যায় তোমাকে সাহায্য করতে পারব।"

"অবশ্যই...অবশ্যই আমি আপনার কাজে সহায়তা করতে পারব" দ্রুতই উত্তর দিল যুবকটি।

যুবকের কথা শুনে জ্ঞানী সন্ন্যাসী বললেন, 'ভালো'। তারপর তার আঙ্গুলে থাকা একটি পাথর খচিত আংটি খুলে নিয়ে যুবকের হাতে দিলেন। তারপর বললেন, "আমার কিছু ঋণ রয়েছে কারও কাছে, তাই আংটিটি বিক্রি করা খুবই জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে। তুমি আমার ঘোড়াটি নিয়ে দ্রুত বাজারে যাও, আর আমার হয়ে আংটিটি বিক্রি করে আসো। তবে অবশ্যই তোমাকে আংটিটি একটু ভালো মূল্যে বিক্রি করার চেষ্টা করতে হবে। কোন অবস্থাতেই একটি স্বর্ণমুদ্রার কমে আংটিটি বিক্রি করো না, আর বিক্রি করে খুব দ্রুতই আমার কাছে ফিরে এসো।"

যুবকটি আংটিটি নিয়ে দৌড়ে ঘোড়ায় চড়ল এবং খুব দ্রুত স্থানীয় বাজারে গিয়ে পৌঁছল। সেখানে তখন অনেক বনিক ক্রেতাই দ্রব্যাদি ক্রয় বিক্রয়ে ব্যস্ত ছিল। যুবক আংটিটি নিয়ে ঐ বনিকদের নিকট গেল এবং তাদের সেটা দেখিয়ে বিক্রি করার চেষ্টা চালাতে লাগল। সকল বনিকই প্রথমে খুব আগ্রহ  নিয়ে আংটিটি দেখছিল, কেউ কেউ ক্রয় করার ইচ্ছেও প্রকাশ করছিল। কিন্তু যখনই যুবক তাদের বলল অন্তত একটি স্বর্ণমুদ্রা না হলে সে আংটিটি বিক্রি করবে না, তখনই তাদের সব আগ্রহ উবে যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত এক বুড়ো বনিক যুবকটিকে ডেকে বুঝিয়ে বলল যে, এটি অত্যন্ত নিম্নমানের ধাতুর তৈরি আংটি আর আংটিতে থাকা পাথরটিও অনেক পুরানো। কোন বনিকই আংটিটি স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়ে ক্রয় করতে রাজী হবে না। আর এই আংটির জন্যে একটি স্বর্ণমুদ্রা অনেক অনেক বেশি। তবে বৃদ্ধ বনিক বলল, যুবক যদি রাজী থাকে তবে তিনি কিছু তাম্র-মুদ্রা কিংবা অল্প কিছু রৌপ্যমুদ্রার বিনিময়ে আংটিটি ক্রয় করতে ইচ্ছুক।

বৃদ্ধ বনিকের এমন কথা শুনে যুবক আবারও হতাশ হয়ে পড়ল। যেহেতু জ্ঞানী সন্ন্যাসী তাকে এক স্বর্ণমুদ্রার কমে আংটিটি বিক্রয় করতে মানা করেছে তাই সে ভদ্রভাবে বৃদ্ধ বনিককে ব্যাপারটি জানিয়ে বিক্রি করতে পারবে না বলে জানাল। ইতোমধ্যে বাজারের প্রায় সকল বনিকের কাছে আংটিটি দেখানো সম্পন্ন হয়ে গেছে। বৃদ্ধ বনিক ব্যতীত আর কেউই আংটিটি ক্রয় করতে চায় নি। স্বর্ণমুদ্রা ব্যতীত আংটি বিক্রি করতে ব্যর্থ হয়ে যুবক আবারও নিজের ভাগ্যকে মনে মনে গালমন্দ করতে লাগল। ঘোড়া চড়ে ফিরে চলল জ্ঞানী সন্ন্যাসীর কাছে।

"জনাব, আমি আপনার কাজটি করতে ব্যর্থ হয়েছি", জ্ঞানী সন্ন্যাসীর কাছে ফিরে এসে যুবকটি বলল। আরও বলল, 'বাজারে যারাই আংটিটি ক্রয় করতে চেয়েছিল তাদের সকলেই কিছু তাম্র কিংবা রৌপ্য মুদ্রার বিনিময়ে তা ক্রয় করতে চেয়েছে, কিন্তু আপনি আমাকে অন্তত এক স্বর্ণমুদ্রার কমে তা বিক্রি করতে মানা করায় আমি আংটিটি বিক্রি করতে পারিনি। শেষে এক বনিক আমাকে বললেন স্বর্ণমুদ্রার তুলনায় আংটিটি প্রায় মূল্যহীন, তাই কেউ কিনতে রাজী হবে না। এ কারণেই আমি ব্যর্থ হয়ে আপনার কাছে ফিরে এসেছি।'

সব কথা শুনে জ্ঞানী সন্ন্যাসী বলল,
'তুমি যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে এসেছ, তা কি তুমি জানো?
আংটিটি বিক্রি করার আগে তার প্রকৃত মূল্য সম্বন্ধে জানা খুব জরুরী, আর তা যদি তোমার জানা না থাকে তবে তুমি কখনোই সঠিক মূল্যে আংটিটি বিক্রি করতে পারবে না। আর এমন একটি আংটির মূল্য নিশ্চই তুমি শুধুমাত্র বাজারের বনিকের কথায় নির্ধারণ করবে না!
এক কাজ কর, তুমি বরং আংটিটি একজন জহুরির কাছে নিয়ে যাও। তার কাছ থেকে এর প্রকৃত দাম জেনে আসো। তবে এইবারে তুমি তার কাছে আংটিটি এবারে বিক্রি করো না, শুধু আংটিটির প্রকৃত দাম জেনেই আমার কাছে ফিরে আসবে।"

জ্ঞানী সন্ন্যাসীর কথা শুনে যুবক আবারও দ্রুততার সাথে ঘোড়া ছুটাল জহুরির সন্ধানে। পরে এক জহুরির কাছে গিয়ে আংটিটি পরীক্ষা করতে দিল। জহুরি অনেক লম্বা সময় ধরে আতশি কাঁচের নিচে রেখে আংটিটি নিরীক্ষণ করলেন। তারপর খুব সাবধানে আংটিটি একটি তুলাদণ্ডে রেখে ওজন পরিমাপ করলেন। সবশেষে যুবকের নিকট আংটিটি ফেরত দিয়ে বললেনঃ

"তুমি আংটির মালিককে গিয়ে বল তিনি যদি এখনই জরুরী ভিত্তিতে আংটিটি বিক্রি করতে চান তবে আমি তাকে এখন সর্বাধিক ৫৮টি স্বর্ণমুদ্রা দিতে পারব। কিন্তু তিনি যদি আমাকে কিছু সময় দিতে রাজী হন, তবে আমার বিশ্বাস এই আংটিটি আমি অন্তত ৯০ টি স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়ে বিক্রি করে দিতে পারব।"

"৯০ স্বর্ণমুদ্রা!" , বিস্ময় নিয়ে যুবকটি চিৎকার দিল!
তারপর আনন্দে হেসে জহুরিকে ধন্যবাদ দিয়ে সেখান থেকে বের হল এবং দ্রুত ঘোড়া ছুটিয়ে জ্ঞানী সন্ন্যাসীর কাছে ছুটল।

যুবক যখন ফিরে এসে জ্ঞানী সন্ন্যাসীকে জহুরির বলা কথাগুলো জানাল তখন সন্ন্যাসী তাকে বলল,
"ছেলে, মনে রেখো, তুমিও এই আংটিটির মত বহু-মূল্যবান এবং অনন্য একজন! বাজারের বোকা বনিকদের মত তুমিও যদি তোমার পরিচিত, অপরিচিত আর আত্মীয়দের কথায় নিজেকে মূল্যায়ন কর আর এভাবে ভেঙ্গে যাও তবে কখনোই নিজের প্রকৃত মূল্য আবিষ্কার করতে পারবে না। তারচেয়ে বড় তোমার মেধা, তোমার বুদ্ধি আর তোমার যোগ্যতাকে আরও নিবিষ্ট ভাবে কাজে লাগাও। আর তা যদি করতে পারো তবে জহুরির মত বিজ্ঞ লোকই তোমার মূল্য বুঝতে পারবে। তাদের কাছেই তোমার নিজের প্রকৃত মূল্যায়ন তুমি বুঝে পাবে।"





বদি এণ্ড রঞ্জুর কথোপকথন — ৫



বদি ভাইঃ বলত রঞ্জু, একজন ভালো লেখক সেটা কিভাবে যাচাই করা যায়?

রঞ্জুঃ কিভাবে বদি ভাই?

বদি ভাইঃ কিভাবে সেইটাই তো আমি তোমাকে জিজ্ঞাস করলাম।

রঞ্জুঃ উম্‌ম, সবাই যখন তার লেখা পড়বে তখন তাকে ভালো লেখক বলা যায়।

বদি ভাইঃ তা তো অবশ্যই যায়।
কিন্তু চিন্তা কর এমন তো অনেক লেখকই রয়েছে যাদের লেখা প্রায় সকলেই পড়ে। তাহলে এই ভালো লেখকদের মাঝেও আরও ভালো লেখক কে, তা কিভাবে বুঝবা?

রঞ্জুঃ ভালো লেখকদের মাঝেও আরও ভালো লেখক থাকে নাকি? ভালো লেখক মানেই তো যে ভালো লিখে। আর সেই কারণেই তো সে ভাল লেখক।

বদি ভাইঃ উহু, এই ভালো লেখকদের মাঝেও আরও ভালো লেখক থাকে রঞ্জু।

রঞ্জুঃ কিভাবে? বুঝিয়ে বলেন না একটু।

বদি ভাইঃ এই হল তোমার সমস্যা। নিজে নিজে ভালো ভাবে কিছুই চিন্তা করবা না, শুরুতেই হাল ছেড়ে দিবা। তোমারে নিয়ে আমি বড়ই হতাশ রঞ্জু।

রঞ্জুঃ আহ! বলেন না। কিভাবে আরও ভালো লেখক যাচাই করে বের করব?

বদি ভাইঃ আচ্ছা শোন।
লেখক কোন লেখা লিখলে অবশ্যই কোন না কোন পাঠক তা পড়বে। আর পাঠকের সংখ্যা যত বাড়বে লেখকের মূল্যায়ন তত বাড়বে, আর মূল্য বাড়ে তার লেখার। কিন্তু সবার লেখার কিন্তু একই মূল্যায়ন সকল পাঠকের কাছে থাকে না। পাঠকের স্বাদের ভিন্নতার কারণে লেখার মূল্যেরও পরিবর্তন হয়।

একটা লেখা যখন কিছু মানুষের কাছে খুব ভালো লাগবে, তখন ঐ একই লেখা অন্য কিছু লোকের কাছে খুবই বাজে মনে হবে। আর যাদের কাছে ঐ লেখাটা বাজে মনে হল তারা কিন্তু লেখকেও বাজে লেখক হিসেবেই ধরে নেবে।

আর সাধারণত কোন লেখকের লেখা খারাপ হলে পাঠক ঐ লেখকের আর কোন লেখা পড়তে যায় না।

রঞ্জুঃ এটাই তো স্বাভাবিক।

বদি ভাইঃ হ্যাঁ, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু যদি এমন হয় যে কেউ একজন লেখক আছে, যার লেখা তোমার মোটেই ভালো লাগে না। কিন্তু তোমার পরিচিত কিংবা অপরিচিত কেউ কেউ ঐ লেখকের লেখায় অনেক মজা পেল। আর তুমিও সেটা জানতে পারলে। তখন তুমি কি করবে?

রঞ্জুঃ কি আর করব? যদি খুব ভালো প্রশংসা শুনি তবে অবশ্যই তার অন্য কোন লেখা পড়ব।

বদি ভাইঃ আচ্ছা। তার অন্য কোন লেখা তুমি পড়লা। কিন্তু লেখা পড়ার পর তোমার কাছে মনে হল এটাও সেই আগের মতই বাজে লেখা, তখন কি করবে?

রঞ্জুঃ তার লেখা পড়া পুরোপুরিই বাদ দিবো।

বদি ভাইঃ হ্যাঁ, এতক্ষণে তুমি লাইনে আসছো রঞ্জু।
কোন একজন লেখকের লেখা তোমার যতই খারাপ লাগুক, তারপরও যখন তার লেখা কত খারাপ এইটা জানার জন্যে তুমি তার অন্য লেখা প্রায় নিয়মিত পড় তাহলে বুঝতে হবে লেখকটি শুধু ভালোই নয়, সমসাময়িক অন্য লেখকদের তুলনায় অনেক বেশি ভালো লিখে।

তেমনি একজন লেখক যত বাজেই হোক না কেন, তার কাজে তুমি যতই বিরক্ত হও না কেন। তাকে ছাপিয়েও যখন তার লেখা তোমার ভালো লাগবে তখনও বুঝবে তুমি একজন চমৎকার লেখকের লেখা পড়ছ।

রঞ্জুঃ আচ্ছা! তাই বলেন।
কিন্তু বদি ভাই, এমন তো অনেক লেখকই রয়েছে যাদের একটা লেখা খারাপ হলেও অন্য লেখাগুলি পরবর্তীতে ভালো লেগেছে।

বদি ভাইঃ হ্যাঁ, এমন লেখকও রয়েছে। তবে তুমি ভালো করে চিন্তা করে দেখো, তাদের মাঝেও কেউ একজন রয়েছে, যাকে নিয়ে মানুষ অনেক খারাপ মনোভাব প্রকাশ করে। কিন্তু হাজার খারাপ হলেও তার লেখা ঠিকই মনোযোগ দিয়েই পড়ে।

রঞ্জুঃ হ্যাঁ, এমন লেখকও রয়েছে।

বদি ভাইঃ তাহলে এখন বুঝছো তো একজন ভালো লেখক কিভাবে যাচাই করা যায়?

রঞ্জুঃ হুম, এবার বুঝতে পেরেছি।







মঙ্গলবার, জুলাই ১৯, ২০১৬

একজন হুমায়ূন আহমেদঃ চন্দ্র কারিগরের জীবন গল্প



হুমায়ূন আহমেদ বিংশ শতাব্দীর বাঙালি জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম। তিনি ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ১৩ই নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত নেত্রকোণা মহুকুমার কেন্দুয়ার কুতুবপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মা আয়েশা ফয়েজ। তাঁর পিতা একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন এবং তিনি ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তৎকালীন পিরোজপুর মহকুমার এসডিপিও হিসেবে কর্তব্যরত অবস্থায় শহীদ হন।

হুমায়ূন আহমেদকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রেষ্ঠ লেখক গণ্য করা হয়। তিনি একাধারে ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার। বলা হয় আধুনিক বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যের তিনি পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও তিনি সমাদৃত। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা দুই শতাধিক। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক। তাঁর বেশ কিছু গ্রন্থ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে, বেশ কিছু গ্রন্থ স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জীবনে একটি নাতিদীর্ঘ উপন্যাস রচনার মধ্য দিয়ে হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্য জীবনের শুরু। এই উপন্যাসটির নাম "নন্দিত নরকে"। ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে উপন্যাসটি প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। ১৯৭২-এ কবি-সাহিত্যিক আহমদ ছফার উদ্যোগে উপন্যাসটি 'খান ব্রাদার্স' কর্তৃক গ্রন্থাকারে প্রথম প্রকাশিত হয়। প্রখ্যাত বাংলা ভাষাশাস্ত্র পণ্ডিত আহমদ শরীফ স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে এ গ্রন্থটির ভূমিকা লিখে দিলে বাংলাদেশের সাহিত্যামোদী মহলে কৌতূহল সৃষ্টি হয়।

সত্তর দশকের শেষভাগে থেকে শুরু করে মৃত্যু অবধি হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন বাংলা গল্প-উপন্যাসের অপ্রতিদ্বন্দ্বী কারিগর। এই কালপর্বে তাঁর গল্প-উপন্যাসের জনপ্রিয়তা ছিল তুলনারহিত। তাঁর সৃষ্ট হিমু ও মিসির আলি চরিত্রগুলি বাংলাদেশের যুবকশ্রেণীকে গভীরভাবে উদ্বেলিত করেছে। তাঁর নির্মিত চলচ্চিত্রসমূহ পেয়েছে অসামান্য দর্শকপ্রিয়তা। তবে তাঁর টেলিভিশন নাটকগুলি ছিল সর্বাধিক জনপ্রিয়। সংখ্যায় বেশী না হলেও তাঁর রচিত গানগুলোও সবিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করে। তাঁর অন্যতম উপন্যাস হলো নন্দিত নরকে, মধ্যাহ্ন, জোছনা ও জননীর গল্প, মাতাল হাওয়া ইত্যাদি। তাঁর নির্মিত কয়েকটি চলচ্চিত্র গুলোর মধ্যে দুই দুয়ারী, শ্রাবণ মেঘের দিন, ঘেঁটুপুত্র কমলা জনপ্রিয়তায় অন্যতম।

হুমায়ুন আহমেদ তাঁর অসংখ্য বহুমাত্রিক সৃষ্টির জন্য নানা পুরস্কারে ভূষিত হন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলি হলো- "বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৮১)", "শিশু একাডেমী পুরস্কার", "একুশে পদক (১৯৯৪)", "জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (শ্রেষ্ঠ কাহিনী ১৯৯৪, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ১৯৯৪, শ্রেষ্ঠ সংলাপ ১৯৯৪)", "লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩)", "মাইকেল মধুসুদন পদক (১৯৮৭)", "বাচশাস পুরস্কার (১৯৮৮)", "হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০)", "জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদক"।

জীবনের শেষভাগে ঢাকা শহরের অভিজাত আবাসিক এলাকা ধানমন্ডির ৩/এ রোডে নির্মিত দখিন হাওয়া ভবনের একটি ফ্লাটে তিনি বসবাস করতেন। খুব ভোর বেলা ওঠা অভ্যাস ছিল তাঁর, ভোর থেকে সকাল ১০-১১ অবধি লিখতেন তিনি। মাটিতে বসে লিখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। কখনো অবসর পেলে ছবি আঁকতেন। জীবনের শেষ এক যুগ ঢাকার অদূরে গাজীপুরের গ্রামাঞ্চলে ৯০ বিঘা জমির ওপর স্থাপিত বাগান বাড়ী 'নুহাশ পল্লীতে' থাকতে ভালোবাসতেন তিনি।

২০১১-এর সেপ্টেম্বের মাসে সিঙ্গাপুরে ডাক্তারী চিকিৎসার সময় তাঁর ক্যান্সার ধরা পড়ে। তিনি নিউইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোয়ান-কেটরিং ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। ১২ দফায় তাঁকে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের পর তাঁর কিছুটা শারীরিক উন্নতি হলেও, শেষ মুহূর্তে শরীরে অজ্ঞাত ভাইরাস আক্রমণ করায় তার অবস্থা দ্রুত অবনতির দিকে যায়। কৃত্রিমভাবে লাইভ সাপোর্টে রাখার পর ১৯ জুলাই ২০১২ তারিখে হুমায়ূন আহমেদ মৃত্যুবরণ করেন। তাকে নুহাশ পল্লীতে দাফন করা হয়। তাঁর মৃত্যুতে সারা বাংলাদেশে সকল শ্রেণীর মানুষের মধ্যে অভূতপূর্ব আহাজারির সৃষ্টি হয়। তাঁর মৃত্যুর ফলে বাংলা সাহিত্য ও চলচ্চিত্র অঙ্গনে এক শূন্যতার সৃষ্টি হয়।





ও কারিগর, দয়ার সাগর,
ওগো দয়াময়!
চাঁদনী পসর রাইতে যেন,
আমার মরণ হয় !


কথাঃ হুমায়ূন আহমেদ || কণ্ঠঃ এস. আই. টুটুল






▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
≡ ≡  তথ্যসূত্যঃ আন্তঃজালিকা হতে সংগ্রহীত ≡ 
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬

সোমবার, জুলাই ১৮, ২০১৬

শক্তিশালী কিছু স্থিরচিত্র

কথায় আছে, একটা ছবি হাজার হাজার লাইনের গল্প থেকেও বেশি কথা বলে। হাজারও আত্মা একাত্মায় রূপান্তরিত করতে পারে। গল্পের ভেতরের কথা আরও জীবন্ত-রূপে উপস্থাপন করতে পারে।

আজকের পোষ্টটি ঐরকম কিছু ছবি নিয়েই সাজানো।



  • ১৯৬৭ সালে ১৭ বছর বয়সী জান রোজ কাশ্মীর যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভে সৈন্যদের ফুল উপহার দেয়।



  • দুর্নীতি ও পুলিশের নৃশংসতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সময় ব্রাজিলের এক বিক্ষোভকারী বন্দুকের গুলির সামনে দাড়িয়ে যায়।




  • অতিবৃষ্টির ফলে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতিতে ফিলিপাইনে বসবাসকারী এক ছেলে তার কুকুরকে কাঁধে নিয়ে নিরাপদ অবস্থানের জন্যে ছুটছে।




  • কোরিয়ার অস্থায়ী পরিবার পুনর্মিলন অনুষ্ঠানের পর উত্তর কোরিয়ায় বাসিন্দা এক ভাই তার দক্ষিণ কোরিয়ায় বসবাসকারী ভাইকে বিদায় জানাচ্ছে।




  • সন্ন্যাসী এক বাঘের সাথে তার খাবার ভাগ করে নিচ্ছে।




  • ১৯৩৬ সালে গৃহযুদ্ধের সময় একজন সাংবাদিক এক শিশুকে উদ্ধার করতে দৌড়চ্ছেন। 




  • মৃত্যু শিবির থেকে মুক্তি পাবার পর এক রুয়ান্ডান ছেলের মুখে নির্যাতনের চিহ্ন।




  • ছোট্ট বালক তার বাঁশি বাজিয়ে বিড়ালের মনোযোগ ধরে রাখায় চেষ্টায় ব্যস্ত সময় পার করছে।




  • ক্যারোলিন জোয়ান পেক্সোটো, সিটি আর্টস এর ক্লাসিকাল ব্যালে শিক্ষার্থীদের স্থিরচিত্র। এই স্কুলটি কিগালি সম্প্রদায়কে গণহত্যার বিরুদ্ধে আশা সঞ্চারণ করতে কাজ করেছিল।




  • ক্যাপ্টেন ডোনাল্ড স্পিন্ডার ইন্ডিয়ানা অগ্নিকান্ড থেকে ৬ বছর বয়সী আলিয়া ফ্রেজিয়ার নামের এই শিশুকে উদ্ধার করেন।




  • লক্ষাধিক ভিক্ষু একটি উন্নত বিশ্বের জন্যে সমবেত প্রার্থনা করছেন।




  • ৩ বছর বয়সী এক শিশু তার কৃষ্ণাকার চাচাত ভাইয়ের সাথে ঘুমোচ্ছে।




  • এক আইরিশ যুবক উত্তর আয়ারল্যান্ডের অস্থিরতার সময় ব্রিটিশ সৈন্যদের বিরুদ্ধে চিৎকার করে প্রতিবাদ জানাচ্ছে।




  • ১৯৮৭ সালে ডঃ রেলিজা দীর্ঘ ২৩ ঘণ্টা সময় ব্যয়ে একটি সফল হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট অপারেশন করেন। অপারেশনের পর রোগীকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ ও নিরীক্ষণের জন্যে অপেক্ষা করছেন, ছবিতে দেখা যাচ্ছে অপারেশন থিয়েটারের এক কোনায় তার সহকারী ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছে।


ঐ অপারেশন শুধুমাত্র সফলই হয়নি, বরং ঐ রোগী ডঃ রেলিজা থেকেও বেশি সময় বেঁচে ছিলেন।



  • অনাহারী আর পরিপুষ্ট




  • অ্যাশউইচ (Auschwitz) গ্যাস চেম্বারের ভেতরকার চিত্র।




  • এক কৌতূহলী আফগান মেয়ে একজন আমেরিকান সৈনিকের হাত ধরে আছে।




  • ১৯৯২ সালে KKK গ্রুপের অনুসারীর এক শিশু আফ্রিকান-আমেরিকান পুলিশের ঢালে নিজের প্রতিফলন স্পর্শ করে দেখছে।




  • ১৯৯৪ সালে রাশিয়ান একজন সৈন্য চেচনিয়ায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা এক পিয়ানো বাজাচ্ছেন।




  • বেহালাবাদক ন্যান্সি ডিনোভো, ক্রন্দনরত অবস্থায় কেন্দ্রীয় ক্যাথিড্রালিক চার্চে সেপ্টেম্বর ১১'র নিহতদের স্মরণে বেহালা বাজাচ্ছিলেন।



  • দিয়েগো ফ্রাজা র্টোকিটো (Diego Frazão Torquato) নামের এই ১২ বছরের বালক তার শিক্ষকের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় বেহালা বাজিয়ে শোক প্রকাশ করছিল। তার এই শিক্ষকই তাকে সংগীতের মাধ্যমে দারিদ্র্যতার আর সহিংসতার পথ থেকে রক্ষা করেছিল। 




  • দীর্ঘ সাত মাস ইরাকে তার কাজের শেষে দেশে ফিরে মেয়েকে আলিঙ্গন করে কেঁদে ফেলে এই মার্কিন সৈন্য।




  • একজন ব্যক্তি ৯/১১-এ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের দুর্যোগ থেকে বাঁচার জন্যে লাফ দেয়।




  • সহিংসতার বিরুদ্ধে ফুলের শক্তি।




  • ২০১১'র মার্চে এক মহিলা ভূমিকম্প এবং সুনামিতে তার সর্বস্ব হারিয়ে ধ্বংসাবশেষে বসে বিলাপ করছে।




  • ভারতের কাতাক শহরে ২০১১ তে ব্যাপক বন্যা-পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে একজন লোককে কিছু বিড়াল একটি ঝুড়িতে তার মাথায় নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দেখা যায়।




  • পেশোয়ারের এক গাড়ি বোমা হামলার পর পাকিস্তানি এক লোক একটি শিশুকে নিয়ে দৌড়ে নিরাপদ অবস্থান আসেন।




  • পিতা ও পুত্র (১৯৪৯ বনাম ২০০৯)




  • ভাইয়ের খুন হবার খবর শোনার পর অপর সহোদর।




  • ২০০৯ সালে অস্ট্রেলিয়ান একজন দমকলকর্মী উদ্ধারকাজের এক ফাঁকে একটি কোয়ালাকে নিজের পানি খেতে দেয়।






════════════════════════════════════
চিত্র এবং তথ্যসূত্রঃ আন্তঃজালিকা হতে সংগ্রহীত

শুক্রবার, জুলাই ০১, ২০১৬

অদ্ভুতুড়ে 'ঢাকা-একা'



ঢাকা-একা। কথাটা একটু অন্যরকম মনে হলেও বাস্তবতায় একদম হাতে-নাতে মিলে যায় ঢাকা নামের এই শহরটাতে। এখানে দিনের শুরুতে যেমন হাজার মানুষ একসাথে চড়ে বেড়ায় তেমনি দিন শেষেও এক সাথেই ঝগড়া আর বাগড়া বাগাতে বাগাতে নীড়ে ছুটে চলে। এই যে একসাথে ছোটাছুটি আর বাগড়া দেয়ার উৎসব, তবুও এদের মাঝে থেকে যায় যোজন যোজন দূরত্ব। একসাথে বসে যতই হাসি ঠাট্টা আর চিল্লা-পাল্লা করুক না কেন, অর্থহীন ব্যাপার গুলি যে মনে খচখচ করতে থাকে, সে খবর কেউ কাউকে জানাতে পারে না। ঐ যে একটা দূরত্ব তাদের মাঝে, সেটাই তাদেরকে অনুমতি দেয় না এইসব বলে বেড়াবার। 

ঢাকা এবং একা। হ্যাঁ, এই একই সূত্রে সকলের মত আমিও ঐ মালায় গাঁথা। দিন নেই, রাত নেই কারণে-অকারণে আমি ছুটে বেড়াই আত্মীয়ের মত আচরণ করা এই অনাত্মীয়ের শহরে। মেস বাড়ির হাজার হৈ-হুল্লোড়, চিৎকার-চেঁচামেচি কিংবা বিশাল রকমের ঝগড়া অথবা দল বেধে মাঝে মাঝে বাজার করা এই সব কিছুর মাঝে বাদবাকি বাকি সবার মত আমিও একা।

এই যে মন খারাপের সন্ধ্যায় একা এতটা সময় ধরে এই ফুট ওভার ব্রিজটার উপর দাড়িয়ে আছি, কেউ কি আমাকে দেখছে? কেউ কি জানতে এসেছে সেই বিকেল থেকে এই এখানেই কেন দাড়িয়ে আছি? কেউ কি আসবে কেন ফিরে যাচ্ছি না তা জানতে? না, কেউই এসব নিয়ে ভাববে না, কারোই এই নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই। সত্যি করে বলতে আমারও নেই। কে, কেন, কোথায়, কত সময় নিয়ে দাড়িয়ে আছে তা নিয়ে কেন আমি মাথা ঘামাব? আমি তো কেবলই ছুটবো, দায়হীন ভাবে চলবে সেই ছুটোছুটি।

দেখতে দেখতে শহুরে জীবনের ব্যস্ততা অনেকটাই কমে এসেছে, পাল্লা দিয়ে কমছে ছুটোছুটির পরিমাণও। যদিও এই শহর কখনোই ঘুমায় না। কেউ না কেউ, কোথাও না কোথাও, কোন না কোন কারণে ঠিকই ছুটে চলে। আর তার ছুটে চলায় জেগে থাকে শহরটা। মাঝে মাঝে ভাবি, শহরটা যদি একদিন জন্যে বিশ্রাম নিতে পালিয়ে যেত তবে কি হতো এই মানুষ গুলির!

রাস্তার জ্যাম কমতে কমতে শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। মাঝে মাঝে সাই সাই করে কিছু যান ছুটে যাচ্ছে। এই কয়েক ঘণ্টাই এই রাস্তাটার বিশ্রামের সময়। এরপর দিনের আলো ফুটলেই আবার শুরু হবে ছোটাছুটি, তাকে বয়ে বেড়াতে হবে ক্ষুদ্র থেকে দীর্ঘাকার সকল বাহন। আর সাথে করে পোহাতে হবে জ্যামের দাপট। সকলের সাথে রোদে পুড়বে, বৃষ্টি হলে তাতেও ভিজবে কিন্তু তবুও দিন শেষে দোষ সব তার ঘাড়েই চাপবে। অবাক হবার কিছু নেই; আমি, আপনি আর আমরাই বিভিন্ন অজুহাতে রাস্তাগুলির দোষ দিয়ে বেড়াই। বলে বেড়াই- 'ঐ রোডটাতে গেলেই জ্যামে বসে থাকতে হয়, রোডটাই কুফা'; 'আজিব এক রোড, সারাদিনই জ্যাম লেগে থাকে'; কিংবা 'কি এক রোড, এই টুকুন বৃষ্টিতেই হাঁটু পানি!'

চারিদিকেই মোটামুটি একধরণের নীরবতা বিরাজমান। পথচারীও কাউকে নজরে আসছে না। এসব ছাইপাঁশ যখন ভাবছি তখন নজরে পড়ল একজন লোক সিঁড়ি ভেঙ্গে ফুট-ওভার ব্রিজটাতে উঠে আসছে। সাধারণত এত রাতে কাউকে ফুট-ওভার ব্রিজ দিয়ে রাস্তা পার হতে দেখা যায় না। এর অবশ্য দুটো কারণ আছে। প্রথমত, রাতে রাস্তা প্রায় ফাকাই থাকে। যেখানে দিনের বেলা হাজারও ট্রাফিক আর গাড়ির ছুটোছুটির মধ্যে মানুষ রাস্তা পার হতে ফুট-ওভার ব্রিজ ব্যবহার করে না সেখানে রাতে ফাঁকা রাস্তা পেয়েও তা করতে যাবে, অন্তত এ দেশে তেমনটা ভাবাটাও বোকামি। তবে প্রথম কারণটার চেয়েও দ্বিতীয় কারণটা বেশি যুক্তিপূর্ণ। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাতের গভীরতা যত বাড়তে থাকে ফুট-ওভার ব্রিজ গুলি সাধারণ মানুষের জন্যে ততটাই অনিরাপদ হতে থাকে। ছিনতাই, মাদকাসক্তদের খপ্পরে পড়ার মত ঘটনা এখন এখানে নিত্যদিনের রুটিনের মত। মাথা ঘামাবার কেউ নেই, এড়িয়ে চলাই একমাত্র শান্তিপূর্ণ উপায়।

লোকটা প্রায় নিঃশব্দেই উঠে আসল। আড়চোখে দেখতে পাচ্ছি লোকটাকে। খুব ধীরে-সুস্থেই হেটে আসছে সে। এমনটাও সাধারণত হয় না। ফুট-ওভার ব্রিজে দিনে কিংবা রাতে কোন বেলাতেই কোন মানুষ এত শান্ত ভাবে চলাচল করে না। তবে চলাচল করে না তার মানে এই নয় যে করতেও পারবে না। এই যেমন লোকটি করছে। ধীরে ধীরে লোকটির সাথে আমার দূরত্ব কমতে লাগল। এখন তার পদশব্দ আমার কাছে স্পষ্ট। ধীরে ধীরে এগিয়ে আসতে আসতে ঠিক আমার পেছনেই থামল। একটু অপেক্ষা করে জিজ্ঞাস করল- "কি ব্যাপার? এভাবে এখানে দাড়িয়ে কি করছেন?"

আমি অবশ্য এমন প্রশ্নে খুব একটা অবাক হলাম না। এই নগরে বাদ বাকি সবার মত নিরাপত্তা প্রদানে নিয়োজিত এমন মানুষও বসবাস করে। তারাও প্রায়ই নিজেদের পোশাকের বাইরে ঘোরাফেরা করে। ছোটবেলাতে সাদা পোশাকের পুলিশ বলে একটা কথা খুব শুনতাম। শুনতে শুনতে তখন একটা ধারণা হয়েছিল যে, হয়তো ঐ পুলিশের চাকরি করা লোকগুলি পুলিশের পোশাকের বাইরে সবসময় সাদা পোশাক পড়েই ঘোরাফেরা করে। আর তাই হয়তো তাদের 'সাদা পোশাকের পুলিশ' বলে লোকে। ধারণাটা দীর্ঘসময় পর্যন্ত বয়ে বেড়িয়েছি। পরে অবশ্য জানতে পেরেছি কত ভুল ধারণাই না বয়ে বেড়াচ্ছি আমি আমারই এই মস্তিষ্কে। সে যাই হোক, যেভাবে এত সময় এখানে দাড়িয়ে আছি তাতে তাদের চোখে পড়াটা খুব অস্বাভাবিক নয়। তাই ততটা আগ্রহ না দেখিয়ে কিংবা কিছুটা অবহেলা নিয়ে পিছু না ঘুরেই বললাম- এমনিতেই, ভালো লাগছে না। তাই এখানে দাড়িয়ে আছি।

ভাবলাম এবারে বুঝি নাম ঠিকানা জিজ্ঞাস করে সন্দেহভাজন হিসেবে গাড়িতে তুলবে। তারপর হয় সারাটা রাত ঘুরে বেড়িয়ে সকাল সকাল ডিউটি শেষে কিছু কড়া কথা বলে ছেড়ে দিবে কিংবা মায়া করে লক-আপে রেখে দিবে। তারপর পরিচিতদের ডেকে এনে ছুটতে হবে সেই মায়া ভরা খাতিরদারি থেকে। অবশ্য তাদের এই খাতিরদারির হাত থেকে সহজে রেহাই পাবার মত আমার পরিচিত কেউ নেই। না আছে এই শহরে, না আছে অন্য কোথাও। তবুও পিছু ঘুরে প্রশ্নকর্তার দিকে তাকালাম না। ঠায় নিজের অবস্থানেই দাড়িয়ে রইলাম।

কিছুক্ষন অপেক্ষা করে প্রশ্নকর্তাও আমার মত ফুট ওভার ব্রিজটার রেলিং এর উপর হাত ভর করে দাঁড়াল। জিজ্ঞাস করল- সঙ্গে সিগারেট আছে?

ঢাকা শহরের অর্ধশত সিগারেট খোর রুমমেট আর বন্ধুদের সাথে থেকেও আমি ঐ একটা বস্তু এখনো খেতে শিখলাম না। এটা নিয়েও মাঝে মাঝে লজ্জায় কিংবা বিব্রতকর মুহূর্তে পড়তে হয়। এই যেমন এই মুহূর্তটা। এ শহরে সাধারণত পরিচিত কিংবা অপরিচিত কেউ আপনার কাছে তেমন কিছু না চাইলেও সিগারেট জিনিষটা অবশ্যই চাইবে। তারপর যখন ঐ বস্তু আমি "খাই না" বলে জানাই তখন কিছুটা অবজ্ঞা আর কৃত্রিম বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকবে। সব শেষে কেউ কেউ বাহ্‌বা দিবে আর কেউ কেউ তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে দুটা কথা শুনিয়ে দিবে। 

মনে মনে এমন একটা পরিস্থিতি হবে চিন্তা করেই উত্তর দিলাম- না, সিগারেট খাই না আমি।

লোকটা যেন আমার উত্তরে খুব মজা পেয়েছে এমন ভাব নিয়ে বলল- খেতে বললাম কখন? জিজ্ঞাস করলাম আছে কি না আপনার সাথে।

বিরক্ত নিয়ে এইবার লোকটার দিকে তাকিয়ে বললাম- যে জিনিষ আমি খাই না সে জিনিষ কেন পকেটে নিয়ে কোন লজিকে ঘুরবো আমি? ফাজলামো করেন?

শেষ কথাটা বলেই মনে হল একটু বেশি হয়ে গেছে। এসব নিয়ে অনেকেই মজা করে আমার সাথে। সিগারেট খাই না জেনে মজা নেবার চেষ্টা করে। বেচারাও হয়তো ভেবেছিল তেমন কিছুই করবে। কিন্তু তার বিপরীতে এমনি ভাবে ফাজিল উপাধি পেয়ে যাবে, তা নিশ্চই আশা করেনি। 

কটু কিছু কথার প্রস্তুতি মনে নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলাম। কিন্তু না, লোকটা তেমন কিছুই করল না। পাশেই দাড়িয়ে রইল। সম্ভবত 'ফাজিল' উপাধিটা হজম করতে বেচারার বেগ পেতে হচ্ছে। এমনিতেই মন খারাপ, তার উপর এমন পরিস্থিতি মনটা আরও খারাপ করে দিল। কড়া কথা বলার জন্যে ক্ষমা চাইতে যাবো এমন মুহূর্তেই লোকটা বলল- সরি বলার মত এমন কোন কাজ আপনি করেন নি কায়েস সাহেব। মন খারাপের সময় কেউ যেচে এসে দুষ্টুমি করতে চাইলে এমন কিছু বলাটাই বরং স্বাভাবিক। 

কিছুটা অবাক হলেও তা প্রকাশ করলাম না। অবাক হবার দুটো ব্যাপার ঘটেছে। প্রথমত যতদূর মনে হচ্ছে লোকটাকে আমি সরাসরি চিনি না, সেই হিসেবে আমার নাম তার জানবার কথা নয়। তারপরও ধরে নিলাম কোন না কোন মাধ্যমে সে আমার নাম জানতেই পেরেছে। আর দ্বিতীয় ব্যাপার হল, আমি যে এই মুহূর্তে তাকে সরি বলতে যাচ্ছিলাম সেটা সে কিভাবে আঁচ করল? অবশ্য সেটাও আচ করা খুব কঠিন কিছু নয়, যেহেতু নাম জানে সেই হিসেবে আমার স্বভাব সম্বন্ধে কিছু জেনে নেয়া একেবারে অসম্ভব কোন কর্ম নয়।

এইসব সাত-পাঁচ ভাবার মাঝেই লোকটা আবার বলল- অবশ্য এমন ঘটনা ঘটবার পর মন খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক। 

এবারে কিন্তু বিস্মিত হতেই হল। বিকেলে কি ঘটেছে সেটা একমাত্র আমি ছাড়া এখনো কেউ জানে না। মেসের দিকে যাইনি, কাউকে ফোন করিনি কিংবা এর মাঝে পরিচিত কারো সাথে দেখাও হয়নি যে কাউকে ঘটনাটা বলব। তাহলে এই লোক কিভাবে জানল কি ঘটেছে? নাকি এটাও আন্দাজে বলা কথার মত? গণকেরা যেভাবে হাত দেখে ১০টা আন্দাজে কথা বলবে, আর সেই কথা গুলি এতটাই কমন ব্যাপার হয় যে পৃথিবীর যে কারো সাথেই ঐ ১০ কথার ৪/৫টি মিলেই যাবে। তেমনি মন খারাপ হলে কোন না কোন ঘটনা তো এর পেছনে থাকবেই। লোকটা কি তবে এমন ভেবেই কথাটা বলল?

আমি কেবল কিছু সময় লোকটার দিকেই তাকিয়ে রইলাম। বয়স কত হবে লোকটার? ৩৫? ৪০? নাকি ৫০? কি জানি, নিয়নের আলো লোকটার বয়স অনুমান করতে দিচ্ছে না। আলোটাই যেন কেমন আধার করে রেখেছে জায়গাটাকে। আরও বিভ্রান্ত করছে লোকটার চাহনি। একবার মনে হচ্ছে লোকটা আমার অবস্থা বুঝে হাসছে, আরেকবার মনে হচ্ছে মুখ গম্ভীর করেই চেয়ে আছে। 

লোকটা আবারও বলতে শুরু করল- দেখুন কায়েস সাহেব, জীবনের সময়টা এত ক্ষুদ্র যে মন খারাপ করে কাটানো সময় গুলি এখানে বিলাসিতা করে সময় নষ্ট করা। এই যে আমরা, সময়ের যে স্রোতে ভেসে চলেছি সেটাকে কোনভাবেই পরিবর্তন করতে পারব না। পেছনে ঠেলেও ফিরে যাবার কোন সুযোগ নেই। যদি সম্ভব হতো তবে অনেক পরিবর্তনই করে নেয়া যেতো, শুধরে নেয়া যেতো নিজের অনাকাঙ্ক্ষিত সকল ভুল গুলিকে। অথচ এমনটা করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। আপনি হয়তো বিজ্ঞানের দোহাই দিবেন। বলবেন, লজিক্যালি সময়ের পেছনে ছুটে যাওয়া যায়। কিন্তু সেই আপনিই আবার বলবেন লজিক্যাললি সম্ভব হলেও বাস্তবে তা তা এখনো সম্ভব নয়। তাই বলছিলাম এভাবে অযথাই সময়গুলিকে অপচয় না করে উপভোগ করুন। 

একটানা কথা গুলি বলে গেল লোকটি। আমার বিস্ময়-ভাব তখনও কাটিয়ে উঠতে পারি নি। এরই মাঝে লোকটি আবারও বলতে শুরু করল-

ভালো করে সময় গুলিকে খেয়াল করে দেখবেন। আমরা সবসময়ই চেষ্টা করি নিজের সাধ্যের সর্বোচ্চ ভালো সময়টাকে পেতে, আনন্দময় সময়টাতে ডুবে থাকতে আর প্রাপ্তির আনন্দে মেতে থাকতে। কিন্তু যতই চেষ্টা করি এইসবের মাঝে আমরা ডুবতে পারি না। তবে হ্যাঁ, কাছাকাছি যাবার একটা সুযোগ তৈরি হয়ে যায় বটে। আর যদি কখনো ভাগ্যটা সহায় না হয় তখন ছিটকে পড়ি। তবে সমস্যাটা ছিটকে পড়ে যাওয়াতে নয়। সমস্যাটা হল ছিটকে পড়ে যাবার পর সেখানেই পড়ে থাকাতে। আমরা প্রায় সকলেই খারাপ সময়ে প্রবেশ করার পর ঐ খারাপ সময়টাকে নিয়েই টেনে হিঁচড়ে চলার চেষ্টা করি। কিন্তু এই খারাপ সময়টাকে বয়ে বেড়াবার কিছু নেই। চেষ্টা করলেই নতুন উদ্যম নিয়ে ভিন্ন কোন ভালো সময়ের দিকে ছুটে যাওয়া সম্ভব। পথের দূরত্ব একটু বেশি হতে পারে কিন্তু তাই বলে সেখানে পৌঁছানো অসম্ভব নয়। বরং আমি বলব খারাপ সময়টা আপনাকে ভিন্ন আরেকটা ভালো সময়ে পৌঁছে দেবার একটা পোর্টালের মত কাজ করে। আপনাকে শুধু বুঝতে হবে কোন পোর্টালে আপনি প্রবেশ করতে চান।

আমি একরকম হা করেই লোকটার কথা গিলছিলাম। কোন কথাই মস্তিষ্কে প্রবেশ করছিল না, কিন্তু কথা গুলির গুরুত্ব ঠিকই বুঝে নিতে পারছিলাম। এমন মুহূর্তে হুস করে একটা ট্রাক ছুটে চলে গেল। ট্রাক চালকদের সম্ভবত সবসময় ট্রাফিকে বসে থাকার দরুন কিছুক্ষণ পরপর হর্ন বাজাবার একটা অভ্যাস তৈরি হয়ে যায়। নয়তো এমন ফাঁকা রাস্তায় কোন প্রয়োজন লোকটা ট্রাক ছুটাতে ছুটাতে হর্ন বাজাবে তা আমার বুঝে আসে না। 

এই টুকু সময়ের জন্যেই লোকটার উপর থেকে মনোযোগ ছুটে গিয়েছিল। পাশ ফিরে তাকাতেই দেখলাম লোকটা নিঃশব্দে ফুট-ওভার ব্রিজটার অপর প্রান্তের সিঁড়ির দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। লোকটাকে ডাকতে যেয়েও কেন জানি ডাকতে পারলাম না। মনের ভেতর কে যেন বলছিল- "তোমার যা জানার তা জেনেছ। নতুন করে আর কিছুই জানার নেই"।

দেখতে দেখতে লোকটা সিঁড়ি বেয়ে নেমে গেল। তারপর অল্প সামনে এগিয়ে একটা বিল্ডিং এর মোড়ে একটু থামল। পেছনে ঘুরে একবার একটু তাকাল আমার দিকে। মনে হল আমার দিকে তাকিয়ে মাথাটা একটু ঝাঁকাল, তারপর ধীরে সুস্থেই বিল্ডিং এর মোড়ের পথ ধরে হারিয়ে গেল, হারাল আমার দৃষ্টিসীমার বাইরে।

দূরে কোন মসজিদে মুয়াজ্জিন নামাজের আহ্বানে ডেকে চলেছে। এত দূর থেকে স্পষ্ট না হলেও তার আহ্বানের মাধুর্য বুঝতে কোন কষ্ট হচ্ছিল না। এবারে আমার ফেরা উচিৎ। ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে এই শহরের পথ গুলি আবারও জীবিত হবে। দিক-বিদিক ভুলে দীর্ঘশ্বাস চেপে ছুটবে মানুষ। দেখতে দেখতে মানুষের ব্যস্ততা আর জ্যামের জঞ্জালে শহরটা আবারও তার পরিচিত রূপে ফিরে আসবে।








বৃহস্পতিবার, জুন ২৩, ২০১৬

পথের নির্ণয়...



পথটা দু'দিকেই যায়, সামনে কিংবা পেছনে। আমি বহুদূর হতে এরই উপর ভর করে এসেছি, ভেসে এসেছি। দু'চাকার বাহন আমাকে উড়িয়ে নিয়ে এসেছে এই এখানে। 

এখানে? এটা কোথায়?
জানি না! জানা নেই।
কিংবা উত্তরটা হতে পারে- এটাই ঐ স্থান যেখানে ঠিক এই মুহূর্তে আমার থাকবার কথা। ঠিক এই মুহূর্তটাতেই আমার ভাবার কথা কেন আমি এখানে -এই নিয়ে। কোন ঘটনাই বিচ্ছিন্ন নয়, উদ্দেশ্যহীন নয়। প্রতিটা কাজ আর ঘটনার পেছনেই রয়েছে যুক্তিপূর্ণ আর অর্থবহ কোন কারণ, কোন উদ্দেশ্য। 

আমার কোথায় যাওয়া উচিৎ?
সামনের দিকে? যার সম্পর্কে আমার কোন ধারণা নেই? নাকি পেছনের দিকে? যাকে ছেড়ে ছুড়ে ছুটে এসেছি এই এতদূর, এত ক্রোশ? আর যদি ফিরেই যাই, তবে কেন ফিরে যাবো? আছে কি কোন পিছুটান? ছিল কি কোন অপেক্ষা আমার জন্যে?

পিচ ঢালা পথ কি এক অদ্ভুত বিভ্রম তৈরি করে রেখেছে। দু'প্রান্ত হতেই হাত নেড়ে ডাকছে আমায়। আমি একাকী দুই বিভ্রমের মাঝে আটকে। এগিয়ে যাওয়া যায়, আবার যায় একই ভাবে পিছিয়ে আসা। একঘেয়ে জীবনকে বেঁছে নেয়া যায়, কিংবা যায় প্রতিযোগিতা করে বিপরীত স্রোতকে ঠেলে সামনে এগিয়ে যাওয়া।

ছুটতে আমাকে হবেই, এটাই নিয়তি। 

দু'চাকায় ভর করা সহজ, সহজ ছুটিয়ে চলা। 
যত সমস্যা তা কেবলই দিক নির্ণয়ে। তুমি কেবল একবারই তোমার দিক নির্দিষ্ট করতে পারবে, তারপর যতই চেষ্টা কর সেই নির্ণীত দিক হতে আর পিছু হটতে পারবে না....