ছোট্ট এক গ্রামের ৯ বছর বয়সী এক মেয়ে 'অ্যানা'। গ্রামের এক স্কুল থেকেই সে ৪র্থ শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেছে। এরপর আরও উন্নত শিক্ষার জন্যে শহুরে ভালো স্কুল গুলির ৫ম শ্রেণীতে ভর্তি হবার আবেদন করল, আর তার ভালো ফলাফল এবং মেধার ভিত্তিতে শহরের এক নামকরা স্কুলে সে ভর্তি হবার সুযোগও পেয়ে গেলো। নতুন স্কুলে আজ তার প্রথম ক্লাস, সে রাস্তার ধারে স্কুল বাসের জন্যে অপেক্ষা করছিল। স্কুল বাস পৌঁছোবার সাথে সাথেই সে খুব দ্রুত তাতে উঠে পড়ল। আজকের দিনের তার উচ্ছ্বাসটি ছিল দেখবার মত!
বাসটি স্কুল চত্বরে পৌঁছোবার সাথে সাথেই ছাত্র-ছাত্রীরা যার যার ক্লাসের উদ্দেশ্যে ছুট লাগাল। বাকি সকলের মত অ্যানাও কয়েকজনকে জিজ্ঞাস করে তার ক্লাস রুমের অবস্থান জেনে ক্লাসের দিকে চলে গেলো। ক্লাসে পৌঁছোবার পর তার সাদাসিধা গ্রাম্য পোশাক আর ভেষভুষা দেখে ক্লাসের শহুরে ছাত্র-ছাত্রীরা তাকে নিয়ে উপহাস করা শুরু করল, তাদের সেই উপহাসের মাত্রা আরও বেড়ে গেল যখন তারা জানতে পারল অ্যানা সত্যি সত্যি গ্রাম থেকেই এখানে ক্লাস করতে এসেছে। ক্লাসের সময় হবার সাথে সাথেই ক্লাসে শিক্ষিকা চলে আসলেন এবং সবাইকে শান্ত হয়ে নিজ নিজ ডেস্কে বসতে বললেন। এরপর তিনি অ্যানাকে ডেকে এনে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন, বললেন আজ থেকে অ্যানাও আমাদের সাথে নিয়মিত ক্লাস করবে।
পরিচয়পর্ব শেষে শিক্ষিকা তার ছাত্র-ছাত্রীদের বললেন, এখন তোমরা দ্রুত তোমাদের ক্লাস টেস্টের জন্যে প্রস্তুত হয়ে নাও! তিনি সবাইকে পৃথিবীর সেটা ৭টি আশ্চর্যের কথা লিখতে বললেন। প্রশ্ন শুনে সকলেই খুব দ্রুত নিজ নিজ খাতায় ৭টি আশ্চর্যের নাম লিখতে শুরু করল। অ্যানা কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থেকে শেষে সেও নিজের খাতাটি বের করে ধীরে ধীরে প্রশ্নের উত্তর লিখতে শুরু করল।
যখন অ্যানা বাদে প্রায় সবাই নিজ নিজ উত্তর শিক্ষিকাকে দেখানোর জন্যে জমা দিল তখনও অ্যানা নিজের খাতায় মুখ গুজে লিখতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। এই দেখে শিক্ষিকা এগিয়ে গিয়ে অ্যানাকে জিজ্ঞাস করলেন- "কি ব্যাপার অ্যানা, তুমি কি প্রশ্ন শুনে ঘাবড়ে গেছো? ঘাবড়াবার কিছু নেই, এই অল্প ক'দিন আগেই আমরা পৃথিবীর আশ্চর্য গুলি শিখেছি। তোমার কি এই প্রশ্নটির উত্তর জানা নেই?"
উত্তরে অ্যানা বলল- " আসলে ম্যাম, আমি ভাবছিলাম পৃথিবীতে তো অসংখ্য আশ্চর্য ছড়িয়ে আছে, লিখার জন্যে আমি আসলে কোন ৭টি আশ্চর্যকে বেছে নেব তা নিয়েই ভাবছিলাম" এবং তারপর অ্যানা তার খাতাটি শিক্ষিকার দিকে বাড়িয়ে দিল।
শিক্ষিকা অ্যানার খাতাটি নিয়ে তার ডেস্কে চলে গেলেন, এরপর একে একে সবার খাতা দেখতে শুরু করলেন। ক্লাসের প্রায় সবাই পৃথিবীর ৭টি আশ্চর্য হিসেবে চীনের মহাপ্রাচীর, চিচেন ইতজা, স্ট্যাচু অব ক্রাইট দ্য রিডিমার, মাচুপিছু, পেত্রা নগরী, রোমের কল'সীয়াম, তাজমহল সহ আরও নানা স্থানের নাম লিখেছিল। শিক্ষিকা খুবই খুশি হলেন, কারণ তার শিক্ষার্থীরা প্রায় সকলেই সঠিক উত্তরটি লিখতে পেরেছে। সবশেষে শিক্ষিকা অ্যানার উত্তরটি পড়তে শুরু করলেন।
অ্যানা তার খাতায় ৭টি আশ্চর্য হিসেবে লিখেছে- "দেখতে পারা, শুনতে পারা, অনুভব করতে পারা, হাসতে পারা, ভাবতে পারা, দয়া দেখাতে পরা, ভালবাসতে পারা!"
অ্যানার উত্তরটি পড়ে শিক্ষিকা একদম স্থিরভাবে খাতা হাতে দাড়িয়ে রইলেন, আর ক্লাস একদম নিশ্চুপ হয়ে গেলো। এরপর শিক্ষিকা শান্তকণ্ঠে বললেন- আজকে, গ্রামের একটি ছোট্ট মেয়ে আমাদের মনে করিয়ে দিল ঐ সব মহামূল্যবান উপহারের কথা যা না চাইতেও আমরা ঈশ্বর থেকে পেয়েছি; যার প্রতিটিই এক একটি সত্যিকারের আশ্চর্য! আশা করি তোমরাও তোমাদের এই মূল্যবান উপহার গুলির যথাযথ মূল্যায়ন করতে শিখবে আমাদের ছোট্ট বন্ধু অ্যানার মত করে।
এরপর গ্রামের ঐ পিছিয়ে পড়া মেয়েটিই হয়ে উঠল তাদের আরেক আদর্শ।
⚍⚌⚎⚌⚍⚌⚎⚌⚍⚌⚎⚌⚍⚌⚎ নীতিনিষ্ঠ মূল্যায়ন ⚍⚌⚎⚌⚍⚌⚎⚌⚍⚌⚎⚌⚍⚌⚎
আমাদের সকলেরই উচিৎ ঐ সব জিনিষ গুলোর মূল্যায়ন করা, যা আমাদের আছে, যা আমরা ব্যবহার করতে পারি, যার উপর আমরা আস্থা রাখতে পারি। অনুপ্রেরণার জন্যে সবসময় নতুন কিছুর খোঁজ করার প্রয়োজন নেই। বরং ঈশ্বর আমাদের ঐ সবই দিয়ে পাঠিয়েছেন, যা আমাদের একান্ত প্রয়োজন।
………………………………………………………
মূল লেখকঃ অজ্ঞাত
সোর্সঃ "Moral Stories" via pinterest.com